৬২তম অধ্যায়
অভিমন্যু-শোকে ব্যাসের যুধিষ্ঠিরাদি-সান্ত্বনা
বৈশম্পায়ন বলিলেন, ভগবান্ হৃষীকেশ এইরূপে অভিমন্যুবধের আদ্যোপান্ত সমুদয় বৃত্তান্ত বর্ণন করিলে মহাত্মা বসুদেব তাঁহার বাক্য-শ্রবণে শোক পরিত্যাগ করিয়া দৌহিত্রের উদ্দেশে শ্রাদ্ধকাৰ্য্য নির্ব্বাহ করিলেন। মহাত্মা বাসুদেবও পিতার প্রিয়পাত্র স্বীয় ভাগিনেয়ের ঔদ্ধদেহিক কার্য্য সম্পাদনপূর্ব্বক ব্রাহ্মণগণকে অত্যুৎকৃষ্ট বিবিধ ভোজ্যদ্রব্য ভোজন করাইয়া বস্ত্র ও অভিলষিত ধন প্রদান করিতে লাগিলেন। সুবর্ণ, গাভী, শয়নীয় ও পরিধেয় বস্ত্রাদি লাভ হওয়াতে ব্রাহ্মণগণ মহা আহ্লাদিত হইয়া “আপনার ঐশ্বৰ্য্য সমধিক পরিবর্দ্ধিত হউক” বলিয়া বাসুদেবকে আশীৰ্ব্বাদ করিতে লাগিলেন। তৎপরে বলদেব, সাত্যকি ও সত্যক ইঁহারা সকলেই অভিমন্যুর শ্রাদ্ধ সমাপনপূর্ব্বক দুঃখে নিতান্ত অভিভূত হইলেন।
এ দিকে হস্তিনানগরে পাণ্ডবগণ অভিমন্যু-বিয়োগজনিত শোকে একান্ত অধীর হইয়া উঠিলেন। বিরাটনন্দিনী উত্তরা স্বামিশোকে নিতান্ত কাতর হইয়া বহুদিন অনাহারে কালাতিপাত করাতে তাহার গর্ভস্থিত বালকের বিঘ্ন হইবার বিলক্ষণ সম্ভাবনা হইল। তখন মহর্ষি বেদব্যাস স্বীয় জ্ঞানচক্ষুঃ প্রভাবে ঐ বৃত্তান্ত সবিশেষ অবগত হইয়া হস্তিনানগরে আগমনপূৰ্ব্বক কুন্তীকে সান্ত্বনা করিয়া উত্তরাকে কহিলেন, “ভদ্রে! শোক পরিত্যাগ কর। ভগবান্ বাসুদেবের প্রভাবে এবং আমার বাক্যানুসারে তুমি অচিরাৎ পুত্রমুখ-নিরীক্ষণে সমর্থ হইবে। তোমার ঐ পুত্র পাণ্ডবদিগের পরলোকগমনের পর অনায়াসে পৃথিবী প্রতিপালন করিবে।”
মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন উত্তরাকে এইরূপে সান্ত্বনা করিয়া ধৰ্ম্মরাজ যুধিষ্ঠিরের সমক্ষে অর্জ্জুনের প্রতি দৃষ্টিপাতপূৰ্ব্বক কহিলেন, “ধনঞ্জয়! অচিরাৎ তোমার এক পৌত্র জন্মিবে। উহার প্রভাবে এই সসাগরা ধরিত্রী ধর্ম্মানুসারে রক্ষিত হইবে। অতএব তুমি অবিলম্বে শোক পরিত্যাগ কর। আমি যাহা কহিলাম, ইহাতে অণুমাত্র সন্দেহ করিও না। পূৰ্ব্বে বৃষ্ণিবীর মহাত্মা মধুসূদনও তোমাকে এই কথা কহিয়াছিলেন। তাঁহার বাক্য কখনই মিথ্যা হইবার নহে। বিশেষতঃ মহাবীর অভিমন্যু নিশ্চয়ই দেবগণসেবিত অক্ষয়লোকে গমন করিয়াছে; সুতরাং তাহার নিমিত্ত তোমার ও অন্যান্য কৌরবগণের শোক করা কখনই বিধেয় নহে।”
মহর্ষি বেদব্যাস ধনঞ্জয়কে এইরূপ সান্ত্বনা করিলে তিনি শোক পরিত্যাগ করিয়া সুস্থচিত্ত হইলেন। তখন মহর্ষি বেদব্যাস যুধিষ্ঠিরকে অশ্বমেধযজ্ঞানুষ্ঠানের আদেশ করিয়া তথা হইতে প্রস্থান করিলেন। ধৰ্ম্মরাজ, যুধিষ্ঠিরও তাঁহার আদেশানুসারে যজ্ঞানুষ্ঠানোপযোগী ধন আহরণার্থ একান্ত সমুৎসুক হইলেন।