০৫.
সূর্যের আলো ঘরে প্রবেশ করে চারিদিক আলোয় ভরপুর। দরজায় ঘন ঘন কলিংবেলের শব্দ, বিরক্তিতে তার ঘুম ভেঙে গেল। নিজের মনে ভাবল কে এত সকালে এল? গতকাল রাত্রে আরও একটু মদ খেলে ভাল হত। বেল বাজছে। কেন উঠতে গিয়ে দেখল সে নগ্ন। ড্রেসিং গাউনের মধ্যে নিজেরনগ্নতা ঢাকল। তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠতে গেল।কারেনের ঘুম ভেঙেছে বেলের শব্দে। নগ্নশরীর নিয়ে সেবিছানায় উঠেবসল। কেন তখন বিরক্তও উত্তেজিত। তার মনে পড়ল গতরাতের কথা। তার মনে পড়ল সেই সময় কেটির বিছানায় কারেনকে নিয়ে শুতে তার ঘৃণা হয়েছিল। কিন্তু মাতাল কেনতা ভুলে একটি মাত্র গলবল বোতাম পাওয়ার বিনিময়ে কারেনকে দৈহিক সুখ দিতে বাধ্য হয়েছিল। উত্তেজনায় কেন বলে উঠল–দরজার বাইরে কেউ হয়ত অপেক্ষা করছে, দুর হও আমার সামনে থেকে।কারেন বলল–তোমার সেই আতঙ্ক ভাবটা গেল না।
কেন কাঁপা পায়ে করিডোরে এগিয়ে গেল। দরজা খুলে দেখল লেপস্কি ও জ্যাকাবি দাঁড়িয়ে। কেন তাদের দেখে ক্রুদ্ধ স্বরে প্রশ্ন করল-কি চান আপনারা? মিঃ ব্রান্ডন আপনাকে অসময়ে বিরক্ত করবার জন্য দুঃখিত-লেগস্কি নরম গলায় বলল–গলফ বলের বোতাম সম্পর্কে কিছু কথা বলার আছে।
সঙ্গে সঙ্গে কেন সতর্ক হয়ে গেল–আমি বোতামগুলো পেয়েছি, আপনাকে ফোনে জানাব ভাবছিলাম। পেয়েছে সেগুলো?–লেপস্কি তাড়াতাড়ি বলল-দেখতে পারি সেগুলো?
আপনারা একটু অপেক্ষা করুন–সে তার শোবার ঘরে গেল, লেপস্কি তার পেছন পেছন নিঃশব্দে শোবার ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। বিছানার দিকে তাকিয়ে মনে হল রাত্রে দুজনে বিছানায় থেকেছিল। কেন বোম বাক্সটা এগিয়ে দিল লেপস্কির দিকে।
লেপস্কি বোতামগুলো গোণার পর বলল-আপনার সব বোমই রয়েছে। সে আবার জ্যাকেটটা দেখতে চাইল। বোতামগুলো গোণার পর কেনের অনুমতি নিয়ে লেপস্কি জ্যাকেট ও ডুপ্লিকেট বোতামের সেই সঙ্গে নিয়ে গেল।
কেনও বিরক্ত হয়ে বলে উঠল–ওগুলো সঙ্গে নিয়ে এখনি বিদায় হন। আমি আপনার মুখ দেখতে চাই না। ওগুলো আপনি যেখানে খুশী নিয়ে যেতে পারেন, ফেলেও দিতে পারেন। আমি ওগুলোর হাত থেকে রেহাই পেতে চাই। যাবার সময় লেপস্কি মৃদু হেসে বলল-এককাপ স্ট্রং কফি খেয়ে নিন, সব ঠিক হয়ে যাবে।
কেন সজোরে দরজা বন্ধ করে শোবার ঘরে ফিরে গেল। কারেন তখন পোষাক পরে চুল আঁচড়াচ্ছিল। কেটির চিরুণীব্যবহার করতে দেখে তার মাথায় রাগ উঠে গেল। কেন ফুঁসে উঠল আমি তখন মাতাল ছিলাম। আমি…।কারেন তার কথার মাঝেই বলল–ঠিক আছে! তোমার দোষটা আমার ঘাড়ে চাপাবার চেষ্টাকরোনা। ভুলে যেওনা, সারারাত ধরে তুমি আমাকে উপভোগ করেছ। তোমাকে আমি যতবার বলেছি, আমার ছোট্ট রিজারভার ভর্তি হয়ে যাচ্ছে, তখন তোমার খেয়াল নেই। কেনের ইচ্ছা হল ওকে খুন করার। কোন রকমে নিজেকে সংযত করে বাথরুমে গিয়ে ঢুকল। নিজেকে ফ্রেস করে সে যখন শোবার ঘরে এল তখন নটা বাজে। কারেনকে তখন। বসে থাকতে দেখে খিঁচিয়ে উঠল সে–তুমি এখন এখানে রয়েছ?কারেনও পাল্টা চীৎকার করে বলে উঠল–তোমরা পুরুষেরা সকলেই এক। নারীর দেহভোগ করবার পর তোমরা সাধু বনে যাও। তোমার সারা রাতের দুষ্কর্মের চিহ্ন লেগে রয়েছে বিছানার চাদরে। ওটা লীতে পাঠাবার চেষ্টা কর।
কেন জানালার চারিদিকে চোখ রেখে সাবধানে বাংলো থেকে বেরিয়ে এল গ্যারেজ ঘরে। অফিসে এসে কেন ভাবতে শুরু করল–কারেন তার উপর প্রভাব খাটাতে শুরু করেছে। এক অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে তাকে। এমন সময় টেলিফোন বেজে উঠল। রিসিভারটা কানে ধরতেই কেটির কণ্ঠস্বর ভেসে উঠল, কেন চমকে উঠল–কি হয়েছে কেটি?
প্রিয়তম, বাবা ক্রমশঃ মৃত্যুর পথে এগিয়ে যাচ্ছেন কান্নার সুরে একনাগাড়ে কথাগুলো বলে গেল–ডাক্তাররা সব আশা ছেড়ে দিয়েছে, বাবা তোমার খুব খোঁজ করছেন। তুমি একবার আসবে। কেন? কেটির কথা কেনের মনে বেশ দাগ কাটল, কেটির বাবাকে সে নিজের বাবার মতই। ভালবাসে ও শ্রদ্ধা করে। কেটিকে সান্ত্বনা দিয়ে সে বলল–আমি প্রথম ফ্লাইটেই যাবার চেষ্টা করছি। প্রিয়তমা! তুমি চিন্তা করো না। সে দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই কারেনের মুখোমুখি হতে হল-তোমার ছোট্ট বন্ধু লুর কথা ভুলে গেলে। একটু পরেই সে দাবীমত দশ হাজার ডলার নিতে আসবে। চুলোয় যাক সে। চীৎকার করে বলে উঠল কেন। তারপর দ্রুত পায়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল।
.
ফ্যাট কেটি হোয়াইট বুনের জন্য প্রাতঃরাশ তৈরীকরে বালির উপর বসেছিল। কলোনির প্রায় সবাই এখন সমুদ্রে সাঁতার কাটছে। নির্জনতায় বসে বসে সে লুর কথা ভাবছিল। তোমার চাহিদা সব সময়েই থাকবে।কারণ পুরুষকে আকর্ষণ করবার ক্ষমতা তোমার আছে।লুর কথাটা তার মনে বারবার ধ্বনিত হচ্ছিল। এরকম কথা কেউ তাকে শোনায়নি। তার মত কুৎসিত মেয়ের আকর্ষণ থাকতে পারে, সে ভাবতেই পারে নি। হয়ত এমন অনেক পুরুষ আছে যারা মোটা-সোটা মেয়ে পছন্দ করে। বোধহয় লু তাদের মধ্যে একজন। লু যদি তার কেবিনে কেটিকে আমন্ত্রণ জানায়, তার সঙ্গে প্রেমের খেলা খেলতে চায়! উত্তেজনায় চোখ বন্ধ করল কেটি। জীবনে একটি মাত্র পুরুষ তাকে গ্রহণ করেছিল। লোকটি তখন মাতাল ছিল। তবু কেটির মনে আছে প্রথম পুরুষ সঙ্গ লাভের ভয় পাওয়া, এবং অন্তিম লগ্নে এক অদ্ভুত উত্তেজনার কথা।
কেটি ভাবতে থাকে সে যেন লুর বাহুবন্ধনে আবদ্ধ। মিশকালোর ডাকে তার সেই স্বপ্ন দেখায় ছেদ পড়ল। একটু গভীর স্বরে মিশকালো বলল-কেটি, টিভির ঐ লোকটা মানে হ্যামিলটন আমাদের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। লু বুনের সাক্ষাৎকার টিভিতে দেখিয়েছে। হয়ত এর পরে এখান থেকে আমাদের উচ্ছেদ করবে। লু-বুন বলছিল সেচলে যাবে কিন্তু আমরা কি করব বলতো?
কেটির মুখে নিরুদ্বেগের ছায়া। নির্লিপ্ত ভাবে বলল-অতো চিন্তার কি আছে? আমরা কি কোনদিনও ভাবতে পেরেছিলাম এখানে আসব। আমরা হয়ত এমন কোন জায়গায় যেতে পারব, সেটা এখানকার চেয়ে অনেক ভাল।
মিশকালোর সঙ্গে কথা বলার মাঝে সে সময়টা জেনে নিল,। দশটা বেজে পাঁচ মিনিট। সে লুর ব্রেকফাস্ট ট্রেতে গোছাতে থাকে। আজ সে মরিয়া। তার ইচ্ছে সে লুকে সন্তুষ্ট করে তার মনের কথা খুলে বলবে। তারপর আজ রাতে লু আর সে…।মিশকালো সাঁতার কাটতে চলে গেল। এরপর কেটি ট্রে হাতে লুর কেবিনের সামনে এসে দাঁড়ায়। কেটি তার নাম ধরে ডাকল, তারপর দরজাটা ঠেলে ঘরের মধ্যে উঁকি মারতেই এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য দর্শনের অনুভূতিতে তার হাতের ট্রে টা দূরে ছিটকে পড়ল। টেবিলের উপর মুখ গুঁজে পড়ে রয়েছে লু। তার সর্বাঙ্গে চাপ চাপ রক্ত। সেই রক্ত গড়িয়ে পড়েছে, শুকিয়ে কালচে হয়ে গেছে। কেটির চীৎকার শুনে ছুটে এল মিশকালো। সে ধরে নিয়েছিল কোন অঘটন ঘটে থাকবে। সোজা নুর কেবিনে ছুটে গেল সে।
.
পুলিশ ফটোগ্রাফার টেরি ডাউন লুবুনের ক্ষত বিক্ষত দেহের প্রচুর ফটো তুলে কেবিনের বাইরে চলে এল। পুলিশ অফিসার বেইগলার, লেপস্কি, হেস সকলের মুখেই স্বস্তির চিহ্ন। তারা সকলে ডাঃ লুইসের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছিল।
বেইগলার তার ঘামে ভেজা মুখ রুমাল দিয়ে মুছতে মুছতে বলল–আমাদের আততায়ীকে সেক্স ম্যানিয়াক হিসাবে চিহ্নিত করলে ভুল হবে। লোকটি হোমোতেও বিশ্বাসী। এধরনের লোক আরও বিপজ্জনক।
গতকাল টিভিতে আলোচনাটা শুনেছ?-বেইগলারের দিকে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিয়ে বলল লেপস্কি–আমার মনে হয়সেই আলোচনার কথা শুনেই আততায়ী অনুমান করে লু-বুন তাকে কুকর্মের সময় লক্ষ্য করে থাকবে। তাই বুনকে সে সরিয়ে দিল।
কথা বলতে বলতে তারা দেখল ডঃ লুইস, লুর কেবিন থেকে বেরিয়ে আসছে। কাছে এসে লুইস বললেন-কেসটা খুবই জটিল। বোধহয় রাত দুটো নাগাদ তাকে খুন করা হয়েছে। সম্ভবতঃ আততায়ী দরজায় প্রথম নক করে। বুন দরজা খুলতে আততায়ী তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, ছুরি জাতীয় ধারাল অস্ত্র দিয়ে বারবার তাকে আঘাত করে থাকবে। দেহ থেকে মাথাটা বিচ্ছিন্ন করবার চেষ্টায় ছুরি চালায়। স্বীকার করতে হবে–সেই ছুরিটা ক্ষুরের মতই ধারাল ছিল।
কেটি বুনের মৃতদেহ দেখে সেই যে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে, এখনও জ্ঞান ফেরেনি।নজর রাখতে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে অ্যাম্বুলেন্স এল ঘটনাস্থলে।
বালির উপর বসেছিল মিশকালো। লেপস্কি তার দিকে এগিয়ে গেল–পাশে গিয়ে বসল, ধীরে ধীরে প্রশ্ন করল–রাত দুটো নাগাদ বুন খুন হয়েছে, তোমরা কেউ কোন শব্দ শুনতে পেয়েছ? মিসকালে ভারাক্রান্ত স্বরে বলল–না, আমি তখন ঘুমোচ্ছিলাম।..বেচারা কেটি…কথা বলতে বলতে তার গলার স্বর কান্নায় বুজে এল। পাশেই একদল যুবক দাঁড়িয়েছিল। তাদেরকে লেপস্কি একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করল।
পাতলা, রোগাটে চেহারার একটি যুবক এগিয়ে গেল। তার চুলগুলো খাড়া খাড়া, বলল সে, হ্যাঁ আমি শুনেছি
ডাস্টি লুকাস পকেট থেকে একটা নোট বুক বের করে যুবকটির জবানবন্দী লিখে রাখল। লেপস্কি তার নাম জিজ্ঞাসা করাতে সেবলল–বোওয়াকার। আমি এখন ছুটিতে রয়েছি। গতকাল রাত দুটো পঁয়তাল্লিশ, বাথরুম করতে বাইরে বেরিয়েছিলাম, দেখলাম লুর কেবিনে আলো জ্বলছে। বিস্ময়বশতঃ আমি উৎসুক হয়ে তার কেবিনের কাছে কান পেতে শুনলাম, মাংস কাটার চপারের মত ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোন কিছু কাটার শব্দ।
লেপস্কির পাল্টা প্রশ্ন–তুমি জানলে কি করে শব্দটা মাংস কাটার মতন?আমার বাবা ছিলেন কষাই। লেপস্কি তার মুখ দেখে বুঝল সে সত্য কথা বলছে। তাকে সাবধান করে দিল-টি. ভি বা প্রেসের কাছে কোনভাবেই মুখ খুলবে না, তাহলে তোমার অবস্থা বুনের মতই হতে পারে। কোথাও গেলে পুলিশের অনুমতি ও ঠিকানা জানিয়ে যেতে ভুলো না। তারপর লুকাস লেপস্কির। নির্দেশে যুবকটির ঠিকানা লিখে রাখল।
সেই সময় হোমিসাইড স্কোয়াডের ডিটেকটিভ হেস লুর কেবিন থেকে বেরিয়ে এল। তার হাতে ছিল দুটো খাম। হেসের হাতে দিয়ে বলল–এ দুটো লুবুনের ব্যাগ থেকে পাওয়া গেছে। একটি মিঃ জেফারসন স্টার্নউড ও অপরটি মিসেস কেন ব্রান্ডনের নামে। হেস ও লেপস্কি চিঠি দুটো পড়ল। তার মানে লোকটা তাদের ব্ল্যাকমেল করছিল? খামের মধ্যে চিঠিটা পুরে রাখতে গিয়ে হেস বলল–এর মধ্যে খুনের মোটিভ লুকিয়ে আছে। হু–একটা মশা মেরে লেপস্কি বলল-দেখ, ফ্রেড আমার মনে হয় যা, ব্রান্ডনের মত একজন সম্মানিত ব্যক্তি একাজ করতে পারে না। এমন কি জীনকেও সে খুন করতে পারে না। একাজ একজন দুষ্কৃতকারীর, আর ব্রান্ডন সেরকম দুষ্কৃতকারী নয়।
ঘটনাস্থল থেকে মিনিট কুড়ি বাদে ডিটেকটিভ হেড কোয়ার্টারে ফিরল। জ্যাকবির কাছ থেকে সংবাদ পেল টেলর লেভিন তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। লেপস্কি জানতে চাইল–চীফ কোথায়? মেয়রের সঙ্গে। ডেস্কে বসে লেভিনের সঙ্গে যোগাযোগ করল লেপস্কি।
দূরভাষে টেলর জানায়–আজ সকালে একজন গলফ বোম দেওয়া জ্যাকেট কিনতে আসে। র্যাক থেকে একটা জ্যাকেট বার করে নিয়ে এসে দেখি কাউন্টারের ওপর রাখা অন্য একটা গল বোতাম নেই, উধাও। লেপস্কির মুখ কঠিন হল। মিঃ লেভিন, বোতামটা হয়ত পড়ে গেছে। না, তা হতে পারে না, বোধহয় কেউ কেটে নিয়ে গেছে–জোর দিয়ে লেভিন বলল। লেপস্কি জ্যাকেটটা দেখতে চাইল প্রত্যুত্তরে লেভিন-দুঃখিত মিঃ লেপস্কি, নগদ টাকায় সেটা আমি এক খদ্দেরকে বেচে দিই। তার নাম ঠিকানাও আমার কাছে লেখা নেই। আচ্ছা মিঃ লেভিন, কেউ যদি ওই ধরনের বোম কেটে নিয়ে তার পুরান জ্যাকেটে লাগায় কিংবা আপনার দেওয়া ডুপ্লিকেট সেটের মধ্যে রেখে দেয় আপনি কি দেখলে বুঝতে পারবেন কোনটা আসল বা কোনটা জ্যাকেট থেকে কাটা হয়েছে।
লেভিন জানাল–তা ধারনা করা অসম্ভব। লেপস্কি এবার ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন নমিয়ে রাখল। সে ম্যাক্সের দিকে ফিরে প্রশ্ন করল–ব্রান্ডনের জ্যাকেট ও ডুপ্লিকেট বোম সেটটা ল্যাবরেটরিতে পাঠাও আর জিজ্ঞাসা কর সেগুলো একই ধাঁচের ও একই দিনে তৈরী হয়েছিল কিনা?
ম্যাক্স চলে যাবার পরে সে আবার লেভিনকে ফোন করে জানতে চাইল–এতদিনের মধ্যে কোন দিন ব্রান্ডন কি তার দোকানে এসেছিল? লেভিন জানাল সেব্রান্ডনকে সপ্তাহখানেক দেখেনি।
এগারোটার সময় পুলিশ চীফ টেরেল হেডকোয়ার্টারে ফিরে এসে বেইগলার, হেস ও লেপস্কির সঙ্গে মিলিত হল।
প্রথমে টেরেল ফ্রেডের কাছে জানতে চাইল তার কাজ কতদূর এগিয়েছে? ঠিক কোন সময়ে লুবুনের মাথাটা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয় সেটা আগে জানতে হবে, জানাটা খুবই জরুরী। কেবিনের সর্বত্র হাত ও পায়ের ছাপ। আমরা সবাইকে তল্লাশী করেছি। মনে হচ্ছে লুকে খুন করবার পূর্বে আততায়ীনগ্ন হয়, যাতে তার পোষাকে কোন দাগ না লাগে। দারুন চতুর সে। কেবিন থেকে দুটো চিঠিও পাওয়া গেছে। হয়ত, কেনই বুনের মুখ বন্ধ রাখবার জন্য এ কাজ করেছে।
টেরেল লেপস্কির দিকে ফিরে তার মতামত জানতে চাইল। লেভিনের কাছ থেকে সদ্য পাওয়া খবরটি সে টেরেলকে জানাল এবং আরো বলল–সম্ভবতঃ ব্রান্ডনই লেভিনের ব্যস্ততার সময়ে দোকানে ঢুকে এ কাজটি করে থাকবে। এরপর টেরল সকলের উদ্দেশ্যে বলল–তোমাদের আমি কিছু বলতে চাই। মেয়র নির্দেশ দিয়েছেন মিঃ স্টার্নউডকে যেন কোনমতেই চান না হয়। তিনি শহরের উন্নতির জন্য আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন, এবং ভবিষ্যতেও করবেন। কেন ব্র্যান্ডন ও কারেনস্টার্নউড সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনার পর তিনি রায় দেন, একেবারে সঠিক প্রমাণনা পাওয়া পর্যন্ত উভয়েরই কেশাগ্র যেন স্পর্শ না করা হয়। কিন্তু স্যার হেস বলল–ব্রান্ডনের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে একটা জোরাল মোটিভ আছে।
টেরেল প্রতিবাদ করে বলল-তোমরা ভুলে যাচ্ছ, হ্যামিলটনের সাক্ষাৎকারই আততায়ীকে দিয়ে এই দ্বিতীয় খুনটি করিয়েছে। তার নিজের গোপনীয়তা রক্ষার তাগিদে।তাহলে কি আমরা আবার স্কোয়ার এতে ফিরে চলেছি?
টেরেল তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিল–সিরাস গ্রেগের জ্যাকেটটার হদিশ পাওয়া যায়নি। হতে পারে সংগ্রাহক দুজনের মধ্যে কেউ একজন জ্যাকেটটা ব্যবহার করে থাকবে এবং তা কোন না কোন ব্যক্তির নজরে পড়বে–লেপস্কির দিকে ফিরে নির্দেশ দিলেন–লেভিনের জ্যাকেটটা হ্যামিলটন যেন টেলিভিশনে দেখাবার ব্যবস্থা করে সে ব্যবস্থা তুমি কর। সেই সঙ্গে সকল খবরের কাগজগুলোর দপ্তরে একটা করে কপি পাঠিয়ে দাও। হয়ত, এ থেকে কোন তথ্য পাওয়া যেতে পারে যা সমাধানে সাহায্য করবে।
লেপস্কির মুখের ভাবটা পাল্টে গেল। সত্যিই যদি টিভির ক্যামেরায় ব্রান্ডনের জ্যাকেট সমেত তাকে হ্যামিলটন টিভির পর্দায় প্রতিফলিত করতে পারে, সেটাই হবে তার কাছে বিরাট কৃতিত্ব ও গৌরবজনক।
পুলিশ ল্যাবরেটারী ইনচার্জ লেফটেনান্ট দাঁভে উইলেনস্কি ব্যঙ্গ করে বলল লেপস্কিকে– তোমরা হেডকোয়ার্টারের লোকেরা তোমাদের চোখ কখন ব্যবহার করনা। লেপস্কি বলল-কি, কি বললে? চোখ বড়বড় করে তাকাল।
উইলেনস্কি বিদ্রুপের সুরে বলল–তোমরা কেবল তোমাদের পা-গুলো ব্যবহার কর, যেমন এক্ষেত্রে তুমি যদি তোমার চোখ দুটো খুলে রাখতে তাহলে ঠিক দেখতে পেতে প্রত্যেকটি বোতামের ওপর ক্রমিক নম্বর দেওয়া রয়েছে।
লেপস্কি অবাক হয়ে তাকায়। উইলেনস্কি বলল-হ্যাঁ, বললাম তো, ভাল করে দেখে বলল মিথ্যে আমার সময় নষ্ট করবে না।
লেপস্কি জ্যাকেটটা ফেরৎ চাইল। তবে একটা বোতাম ব্রাভেনের জ্যাকেটের কিংবা ডুপ্লিকেট সেটেরও নয়। তাই আমি বলি কি, লেভিনের দোকানের জ্যাকেটের বোতামের ক্রমিক সংখ্যার সঙ্গে সেই বোতামটার নম্বর মিলিয়ে দেখতে পার।
লেপস্কি বলল–তাহলে এর থেকে প্রমাণ করা যায়, ব্রান্ডন কিংবা অন্য কেউ জ্যাকেট থেকে বোতামটা কেটে এনে ডুপ্লিকেট সেটের মধ্যে চালান করে দিয়ে থাকরে।
উইলেনস্কি ঠোঁটে রহস্যময় হাসি ফুটিয়ে বললেন–তা, হতে পারে। তবে ব্রান্ডনকে তুমি তোমার খুনী হিসাবে প্রমাণ করতে পারবেনা।-একটু থেমে সেবলতে শুরু করল–খুন হওয়ার জায়গা থেকে পাওয়া যে বোতামটা হেস আমাকে দেয়, সেটা অন্য ক্রমিক নম্বরের। সেটার সঙ্গে এই বোতমটির কোন মিল নেই। লেপস্কির মনে তখন অন্য চিন্তা কখন সে নিজেকে প্রকাশ করতে পারবে। সে ব্যস্ত হয়ে বলল-সময় চলে যাচ্ছে, জ্যাকেটটা আমায় দাও।
উইলেনস্কি কিছু কথা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু লেপস্কির তাড়ার চোটে সে আলমারি থেকে তাড়াতাড়ি করে জ্যাকেট ও বোতামের সেটটা নিয়ে এসে টেবিলের উপর রাখল। লেপস্কি দ্রুত হস্তক্ষেপে সেগুলো নিয়ে দরজার দিকে পা চালাতে শুরু করল। কোনরকমে মুখ ফিরিয়ে বলল–চললাম পরে দেখা করব।
রাস্তায় নেমে সে টেলিফোন বুথ থেকে ক্যারলকে ফোন করল, উদ্দেশ্য তাকে জানিয়ে দেওয়া যে, আজ রাত নটার সময় হ্যামিলটনের টিভির পর্দায় ফার্স্ট গ্রেড ডিটেকটিভ, ভাবী পুলিশ চীফ লেপস্কিকে দেখা যাবে। ওদিকে ক্যারল ফোন তুলেই প্রথমেই জিজ্ঞাসা করল–মেথিটেবল-এর সেই সূত্রগুলো তুমি কি করলে। লেপস্কি কথাগুলো আওড়াল রক্ত রঙের চাঁদ, কাল আকাশ, কমলালেবু রং এর সী বীচ? ক্যারল সন্তুষ্ট হল এই ভেবে যে লেপস্কি তার কথাগুলো মাথায় রেখেছে। লেপস্কি তার গুরুত্বপূর্ণ খবরটা জানাল ক্যারলকে এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে প্রচার করে দিতে বলল। প্রত্যুত্তরে ক্যারল বলল–তুমি তাড়াতাড়ি ফিরে এস। আজ রাতে আমরা দুজনে সেলিব্রেট করব। বেশ তো, বিছানাটা ভাল করে সাজিয়ে রাখ।
দুষ্টু কোথাকার রিসিভার নামিয়ে রেখে সে দ্রুত হ্যামিলটনের টি. ভি সেন্টারের দিকে ধাবিত হল।
বেইগলার আগেই ফোনে হ্যামিলটনের সঙ্গে যোগাযোগ করে রেখেছিল। তাই লেপস্কি স্টুডিওতে পৌঁছাতেই রিসেপশনিস্টবলল, আপনি মিঃ লেপস্কিঃমিঃ হ্যামিলটন আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন তিনতলার চার নম্বর ঘরে। লেপস্কি ধন্যবাদ জানিয়ে বলল আমার কি মেক আপের প্রয়োজন হবে? ওঁরা তার ব্যবস্থা করে দেবেন। আপনার কোন সমস্যাই হবে না।
লেপস্কিকে দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল হ্যামিলটন হাই লেপস্কি! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল-বেইগলার আমাকে সব বলেছে। তুমি ঠিক সময়েই এসে গেছ। এবার তাহলে শুরু করা। যাক। ক্যামেরাম্যান রেডি। সাউন্ড বক্স আগে থেকেই চালু ছিল।
তাকে মেকআপ নিতে হবে কিনা প্রশ্ন করল। এমনিতেই তুমি রাজপুত্তুররসিকতা করে হ্যামিলটন বলল–কেন যে তুমি এই নীরস পুলিশের চাকরীতে এলে, ভাবতে অবাক লাগে! ঠাট্টা রাখ। গম্ভীর স্বরে লেপস্কি বলল, আর টুপিটা?
মৃদু হেসে হ্যামিলটন বলল বেশ তো, তুমি ওটা মাথায় পরতে পার, পুলিশের মাথায় তো আবার টুপী ছাড়া মানায় না।
একটু পরেই ক্যামেরা চালু হয়ে যায়। ডাইরেক্ট টেলিকাস্ট তারপরেই হ্যামিলটনের কণ্ঠস্বর–এই জ্যাকেটটা পুলিশের কাছে সনাক্ত করতে হবে। কিংবা এটার ব্যাপারে কোন খবর জানা থাকলে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
এর পরেই ক্যামেরার দিক পরিবর্তন ঘটে। একটি যুবকের ইশারাতে লেপস্কি বুঝতে পারল প্রোগ্রাম শেষ হয়ে গেছে। জ্যাকেটটা গুটিয়ে নিয়ে সে একটা তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলল। হঠাৎ তার। মনে হল এই কয়েক মিনিটে তার বুকটা অনেকখানি ফুলে গেছে। একটা পাবলিক বুথ থেকে ফোন করল সেক্যারলকে। হাই বেবী! কেমন লাগল তোমার? তোমার কথা শুনে আমি লিপম কোম্বস, ওয়ানস আর মেসিকদের আমন্ত্রণ জানাই–বিরক্তির স্বরে কথাগুলো বলতে থাকে ক্যারল–তারা আমার সঙ্গে হ্যামিলটনের প্রোগ্রাম দেখেছে আর জিনের সবকটা বোতলই শেষ করেছে। ছাড় ওদের কথা!–লেপস্কি চীৎকার করে উঠল।–আমি জানতে চাইছি আমাকে কেমন দেখাল? তা আমি কি করে জানব?–তার কণ্ঠস্বর শুনে মনে হল সে যেন টিভির অনুষ্ঠানটি দেখেনি।
কেন, হ্যামিলটনের শশা তুমি দেখনি? নিশ্চয়ই দেখেছি কিন্তু তোমাকে দেখতে পাইনি।
ক্রুদ্ধ লেপস্কি দাঁতমুখ খিঁচিয়ে বলল–তোমরা কি সবাই স্কচের নেশায় বুঁদ হয়েছিলে?
আবোল-তাবোল কথা বলল না লেপস্কি ক্যারল মৃদু প্রতিবাদ করে বলে উঠল–আমরা কখনও মাতাল হইনি, জ্যাকেটের সঙ্গে কেবল তোমার হাতটা প্রতিফলিত হয়েছে, তোমার চেহারা নয়, আর ঐ হাত দুটো যদি তোমার হয়, তাহলে এখনি ধুয়ে ফেল, বড় কুৎসিত দেখাচ্ছিল।
স্রেফ দুটো হাত!–বিস্ময়ে প্রশ্ন করল লেপস্কি।
হা, বললাম তো ক্যারলের বিপজনক মন্তব্য।
রিসিভার নামিয়ে রাখল লেপস্কি। ভাবতে লাগল,–হ্যামিলটন টুপির ব্যাপারে অমন শ্লেষের হাসি হাসল কেন? তাকে আজ টুপি পড়িয়ে ক্যারলের কাছে বে-ইজ্জত করে ছাড়ল। সে জন্যই তার মেক-আপের ব্যাপারে কোন আগ্রহ দেখান হয়নি।
লেপস্কি সেখান থেকে ডিটেকটিভ রুমে ফিরে এল। হোমিসাইডের তিন প্রধান এখানে বসে রয়েছে। তাদের সঙ্গে জ্যাকবি ও ডাস্টিও ছিল।
বেইগলার তার হাত থেকে জ্যাকেটটা নিয়ে হাসতে হাসতে বলল-হ্যামিলটনের শোটা রীতিমত সাড়া জাগিয়েছে শহরে। সকলেই জ্যাকেটটা সম্পর্কে কিছু বলতে চায়। মনে হচ্ছে সারাটা রাত তথ্য সংগ্রহের জন্য এখানেই থাকতে হবে।
এমন সময় লেপস্কির ডেস্কের টেলিফোনটা বেজে উঠল। দূরভাষে একটি মহিলার কণ্ঠস্বর শুনতে পেল সে।–আমি মিসেস অ্যাপলেব্যাম। এইমাত্র হ্যামিলটনের শোতে জ্যাকেটটা দেখলাম। মিঃ হ্যামিলটন বলেছেন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে…তাই তো? প্রত্যুত্তরে লেপস্কি–হ্যাঁ ম্যাডাম। আগামীসপ্তাহে আমার স্বামীর জন্ম দিন। উপহার দেবার জন্য আমি এই জ্যাকেটটা দিতে চাই, কোথায় কিনতে পাওয়া যাবে বলতে পারেন?
লেপস্কি এমন এক শব্দ করল যে হায়না সামনে থাকলে নিশ্চয়ই ভয় পেত। প্রচণ্ড শব্দের সঙ্গে রিসিভারটা নামিয়ে রাখল সে।
.
০৬.
ক্লড কেনড্রিক তার দোকানের ভারী অ্যান্টিক চেয়ারের উপর হেলান দিয়ে বসল। দীর্ঘশ্বাস ফেলছিল সে, চোখে মুখে বিষাদের ছাপ। বিরাট রিসেপশনরুম। পেন্টিং-এ ভর্তি অত্যন্ত উঁচু মানের ছবিগুলো। নায্য দাম দিলে যে কেউ কিনে নিতে পারে।
ওয়াটার ফ্রন্টের ডীন অল বার্নি এক সময় ক্লড কেনড্রিকের চেহারার বিবরণ দিয়েছিলেন এই রকম–দীর্ঘদেহী, বিরাট ভারিক্কী চেহারা। বয়স ষাটের কাছাকাছি। ফিকে কমলালেবু রং-এর পরচুলা ব্যবহার করে থাকে সে। তার মাথার একটা চুলও অবশিষ্ট নেই। কোন মহিলা মক্কেল দেখলে সে তার পরচুলাটা তুলে ধরে যেমন করে কোন লোক তার মাথায় টুপি খুলে অতিথিকে সৌজন্য প্রকাশ করে থাকে…এ এক অদ্ভুত চারিত্রিক দৃষ্টান্ত যেন। বেটপ চেহারার জন্য তার পাতলা নাকটা না দেখতে পাওয়ারই মতন। খুঁজে খুঁদে সবুজ চোখ। সব মিলিয়ে তাকে ঠিক ডলফিনের মত দেখতে। যদিও তাকে ভাঁড়ের মত দেখতে, এমন কি সে ভঁড়ের অভিনয় করলেও অ্যান্টিক, জুয়েলারীও আধুনিক শিল্পকলার সে একজন বিশেষজ্ঞ বটে। প্যারাডাইস অ্যাভিনিউতে তার একটা গ্যালারী আছে। প্রচুর টাকা তার।
সে মাঝে মাঝে মক্কেলদের চাহিদা মেটানোর জন্য মূল্যবান ও দুষ্প্রাপ্য পেইন্টিং, মূর্তি ইত্যাদি চুরি করে আনার জন্য ভাড়াটে কাজের লোক ঠিক করে রেখেছে। সূর্যস্নাত সকালে কেনড্রিক তার আয় ব্যয়ের হিসাব মিলিয়ে দেখছিল আর বারবার হতাশ হচ্ছিল যে, আধুনিক যুগের ছেলে-মেয়েরা পেইন্টিং-এর প্রতি আকৃষ্ট হয় না। এখন এদের আকর্ষণ সেক্সি মহিলা, ড্রাগ, মদ্য পান এবং দামী গাড়ির প্রতি।
মক্কেলদের তালিকায় চোখ রাখতে গিয়ে হঠাৎ গ্রেগের নামটা চোখে পড়ায় মনে পড়ল–লোকটা সমঝদার ছিলেন, প্রকৃত শিল্পের-পূজারী। পিকাসোর কত দামী দামী ছবি যে সে তার কাছ থেকে কিনেছিল তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না। লোকটা অসময়ে মারা যাওয়াতে তার কারবারে একটা বড় অঙ্কের লেন-দেন বন্ধ হয়ে যায়।
এমন সময়েই তার হেড সেলম্যান লুইস ডি মার্নি দরজা ঠেলে ঘরে এসে ঢুকল,-ক্রিমপিন গ্রেগ এসেছে। অয়েল পেইন্টিং কিনতে চায়।
কেনড্রিক চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল–হ্যাঁ আমি ওর সঙ্গে দেখা করব, চলো।
বিরাট গ্যালারী। গ্যালারীর ভেতর পা দিয়ে কেনড্রিক ক্রিমপিনকে দেখল, জো জো তাঁকে সাহায্য করছে ছবি নির্বাচনের ব্যাপারে।
মিঃ গ্রেগ-রোগা লম্বাটে চেহারার সেই যুবকটি সঙ্গে সঙ্গে পিছন ফিরে তাকাল। তার চোখ দুটো ভাসা ভাসা। ঘোলাটে চোখ, চোখের মনি দুটো অসম্ভব চঞ্চল। তার সোনালী চুল ছোট ছোট করে ছাঁটা। একটা ক্লান্ত ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে তার মুখে। এবার সে নিজের পরিচয় দিয়ে বলল–এক সময় আপনার মৃত বাবার সেবা করতে পারলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করতাম। আজও তেমনি আমি আপনাকে বলুন কি করতে পারি?
ক্রিমপিন গ্রেগ শুধুমাত্র মাথা নাড়ল। শুভেচ্ছা বিনিময়ের কোন তাগিদ তার মধ্যে নেই। এরকম স্বভাবের অনেক মক্কেলের সঙ্গেই তার আলাপ হয়েছে, যারা প্রথমে নীরস থাকলেও পরে তারই ছবির পেছনে বহু টাকা ব্যয় করেছে।
ক্রিমপিন বলল-আমি কিছু অয়েল পেইন্টিং খুঁজছিলাম।আশা করি আমার এখানে আপনার প্রয়োজন মত সব কিছুই পাবেন-এক গাল হেসে বলল কেনড্রিক।এরপর ক্রিমপিন জো জো র দিকে ফিরে নির্দেশ দিল নির্বাচিত জিনিসগুলো প্যাক করে দিতে।
জো-জো প্রায় ডজন খানেক অয়েল পেইন্টিং তুলে নিয়ে কাউন্টারের একেবারে শেষ দিকে এগিয়ে গেল, সেগুলো প্যাক করবার জন্য। মিঃ গ্রে-খুশি হয়ে বলল কেনড্রিক–আমি জানি আপনি একজন শিল্পী, কিন্তু আগে তো আপনি এখানে আসেননি।
রুক্ষস্বরে ক্রিমপিন বলল–অন্য শিল্পীদের আঁকা ছবিতে আমার কোন আগ্রহ নেই, আমি কেবলমাত্র আমার নিজের ছবিকে ভালবাসি।
নিশ্চয়ই…নিশ্চয়ই–মৃদু হেসে কেনড্রিক এবার বসল। মাছ শিকারের প্রত্যাশায় ডলফিনের। মত তাকাল বলল-সত্যি,প্রকৃত শিল্পীর মতই আপনি কথাবলছেন।সম্প্রতি সমালোচক হারম্যান লোয়েনস্টেইন আপনার মায়ের অনুরোধে আপনার ছবিগুলো পরীক্ষা করেছেন এবং প্রশংসাও করেছেন। এই মন্তব্যটি অবশ্য নিন্দার ছলে স্তুতি। হারম্যানের বক্তব্য–ক্রিমপিনের আঁকা অস্বাস্থ্যকর ও অস্বাভাবিকতার লক্ষ্মণ। কর্মাশিয়াল আর্টিস্ট সে কোনদিনই হতে পারবে না।-কেনড্রিক বলতে থাকে–প্যাসিফিক কোস্টে আপনার শিল্পের উপর একটা ফাইন আর্টের একজিবিশন করতে চাই। এ এক দারুন সুযোগ। দয়া করে যেন আপনি না করবেন না।
আমার কাজে একটা বিশেষত্ব আছে ক্রিমপিন বলল বটে, তবে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করল না, কিন্তু নিজের কাজের প্রশংসা শুনে মনে মনে বেশ দুর্বল হয়ে পড়ল।
তাকে ইতক্ততঃ করতে দেখে পুনরায় কেনড্রিক বলল–মিঃ গ্রেগ, আপনি একজন আধুনিক শিল্পকলার স্রষ্টা। লোয়েনস্টাইন কখনও পছন্দে ভুল করতে পারেন না। আমার প্রদর্শনীতে যদি নিজের শিল্পকে লজ্জায় প্রকাশ না করেন, তাহলে তা বিশ্বেরই ক্ষতি। আপনি আমার কথাগুলো একবার ভেবে দেখুন।
ক্রিমপিনের হাব-ভাব দেখে বুঝতে পারল বঁড়শিতে সে মাছ প্রায় গেঁথে ফেলেছে। ক্রিমপিন ততক্ষণে নিজের শিল্পকলা সম্পর্কে মনস্থির করে ফেলেছিল। খুব ভাল কথা–ক্রিমপিন বলল–আমার ভিলায় কাউকে পাঠিয়ে দিন। আমি তাকে আমার ল্যান্ডস্কেপগুলো থেকে যে কোন একটা দিয়ে দেব। তবে পেইন্টিং-এর উপর আমার স্বাক্ষর যেন না থাকে। প্রথমে দেখতে চাই পাবলিকের প্রতিক্রিয়া কি হয়? ভাল প্রশংসা পেলে আপনাকে আমি তখন নিজের থেকে অনুরোধ করব আরও একটি প্রদর্শনীর জন্য।
প্যাকেটটা জো-জো তার হাতে তুলে দিল, এক বাক্স রংও উপহার দিল।
হঠাৎ ক্রিমপিনের নজর পড়ল গ্যালারির শেষ প্রান্তে একটা শো কেসের উপর। কাঁচের শো কেসের মধ্যে ভেলভেটের উপর একটা জিনিস রয়েছে।
তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে কেনড্রিক বলল–আঃমিঃ গ্রেগ! ঐ অদ্ভুত ধরনের অলঙ্কারটা দেখবার জন্য আপনি দাঁড়িয়ে পড়লেন?
এক অজানা আকর্ষণে সে জিনিসটা তারিয়ে তারিয়ে দেখছিল। জিনিসটা কয়েক ইঞ্চি মাত্র লম্বা, সুন্দর রুবি ও মুক্তোখচিত ছোরা জাতীয় একটা অস্ত্রের মত এটি দেখতে। ক্রিমপিন জানতে চাইল–এটা কি?
একটা পেন্ডেন্ট আজকের দিনে দারুন চল হয়েছে। কেনড্রিক তাকে ব্যাখ্যা করে বোঝায়–সুলেমান দ্য গ্রেটের জীবনের ভীষণ আশঙ্কা ছিল, তাই তিনি এটি নিজের কাছে রাখতেন আত্মরক্ষার অস্ত্ররূপে। সন্দেহ নেই এ ধরনের সুইচ ব্লেড ছুরি প্রথম আবিষ্কার।
ক্রিমপিনের চোখ দুটো ছোট হয়ে যায়–সুইচ ব্লেড ছুরি? কেনড্রিক পেনডেন্টটা ভেলভেটের উপর থেকে তুলে নিয়ে নিজের হাতের তালুর উপর রাখল।
সুলেমান এর আসলটা ব্যবহার করেন ১৫৪০ সালে। চমৎকার জিনিস এটা। এর কলাকৌশলও অনেক। জো জোর হাতে পেনডেন্টটা তুলে দিয়ে কেনড্রিক বলল–এর ব্যবহারটা দেখিয়ে দাও।
ছুরির একেবারে ওপরের রুবিতে চাপ দিতেই, চার ইঞ্চি লম্বা একটা ধারাল ব্লেড বেরিয়ে এল। সঙ্গে সঙ্গে একটা প্রচণ্ড যৌন-উত্তেজনা অনুভব করল ক্রিমপিন।
বিশ্বের প্রথম স্যুইচ ব্লেড ছুরি।–এটি ক্ষুরের থেকেও ধারাল। সত্যি মিঃ কেনড্রিক এটা একটা অদ্ভুত জিনিস। এর জন্য আপনি কত দাম চান, বলুন?
কিছুক্ষণ ইতস্ততঃ করবার পর কেনড্রিক বলল–এটা সত্যিই একটা অপূর্ব জিনিস, মিউজিয়ামে রাখবার মতই। এর জুড়ি আপনি বিশ্বের কোথাও পাবেন না। এর দাম পঞ্চাশ হাজার ডলার হলেও আপনাকে চল্লিশ হাজার ডলারে ছেড়ে দিতে পারি।
ক্রিমপিন জো জোর কাছ থেকে সেটা নিয়ে রুবিটার উপর হাত দিতেই ধারাল ছুরির মত ব্লেডটা বের হয়ে এল। আর একবার যৌন-উত্তেজনা অনুভব করল ক্রিমপিন। তারপর ক্রিমপিন সেটি চল্লিশ হাজার ডলার দিয়ে কিনল, কিন্তু সে জানতে পারল না এটি সুলেমান পেন্ডেন্টের নকল। রুবির মুক্তোগুলোও নকল। সর্বমোট খরচ হয়েছিল তিন হাজার ডলার। এতে মোট সাঁইত্রিশ হাজার ডলার লাভ করেছে কেনড্রিক।
অপসৃয়মান ক্রিমপিনের দিকে তাকিয়ে লুইস বলল–স্যার, আজ আপনি বেশ একটা বড় দাও মারলেন।
লোকটি সাধারণ লোক নয় হে–মন্তব্য করেই কেনড্রিক লুইসকে নির্দেশ দিল আজই তুমি গ্রেগের বাংলোয় গিয়ে পেইন্টিংকয়েকটা নিয়ে এস। আমরা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করব। লোইনস্টেইন এর মতামত ভুলও হতে পারে। হাজার হোক উনি আমাদের একজন মক্কেলও বটে।
এদিকে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে একশো সাতাত্তরটা টেলিফোন কলের পর ও সেখানে প্যারাডাইস সিটির মানুষের যাতায়াতের ফলে তারা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারে।
ঘড়ির কাঁটা সকাল আটটা নির্দেশ করছে। লেপস্কি, জ্যাকবি ও ডাস্টিলুকাস তাদের ডেস্কের সামনে বসেছিল। গতকাল লেপস্কি প্রায় একুটার সময় শুতে যায়। ভাল ঘুম হয়নি, সাড়ে সাতটার সময় তার ঘুম ভাঙ্গে এবং তড়িঘড়ি অফিসে ছুটে আসে। জ্যাকবি, লুকাস ও সে আলোচনা করতে থাকে গতকাল গলফ বল বোতামের উপর টিভি রিপোর্ট নিয়ে।
শেষ পর্যন্ত সকাল প্রায় দশটার সময় তারা এই সিদ্ধান্তে এল, কেনব্রান্ডন,হ্যারী বেন্টলি, ও সাম ম্যাক্রীর পূর্ণ বিবরণ পেলেও চতুর্থ জ্যাকেটটির কোন হদিশ পায় না। তারা এ বিষয়ে খুবই আগ্রহী।
লেপস্কিলুকাসকে নির্দেশ দিল সে যেনস্যালভেসনআর্মির সেই দুজন লোকসম্বন্ধে খবরআনে। লুকাসঘর থেকে বেরিয়ে গেলে লেপস্কি তার স্ত্রীর কথা ভাবতে বসল।তার স্ত্রীর জন্মদিন, কিন্তু স্থির । করতে পারলনাঠিক কোন তারিখটা। তার ভাবগম্ভীর মুখখানা থেকে জ্যাকবি জিজ্ঞাসাকরল–কি ব্যাপার লেপস্কি? কোন সন্দেহজনক চিন্তা? লেপস্কি তার ভাবনাটা খুলে বলল জ্যাকবিকে, একটুও ইতস্ততঃনাকরে জ্যাকবি সেই মুহূর্তে বললআগামী পরশু,দশতারিখে। লেপস্কিমৃদু প্রতিবাদকরল তার বক্তব্যের বিরুদ্ধে। জ্যাকবি তখন পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিল সে পরিচিত সকলের জন্মদিনের তারিখ একটা নোট বইতে রেকর্ড করে রাখে, এটা সে পিতার সূত্রেই পেয়েছে। জ্যাকবি আরও জানাল–ক্যারলকে দেবার জন্য সে একটা মিনি পারফিউম কিনে রেখেছে।
টাইটা আলগা করে দিতে দিতে লেপস্কি বলল–আমি ওকে কি উপহার দেব বলতো? জ্যাকবি বিবাহিত না হলেও প্রচুর মেয়ে বন্ধু থাকবার দরুন সে এসকল বিষয়ে অভিজ্ঞ। চটপট বলে ফেলল–হাতব্যাগ, পোষাক কিংবা অলঙ্কার!
হাতব্যাগ দেবার কথাটা লেপস্কির মনে ধরল। সে স্থির করে নিল ক্যারলকে সে হাতব্যাগ উপহার দেবে। এমন সময় একটি মেয়েলী কণ্ঠস্বর শোনা গেল–আপনারা যদি একটু চুপ করেন, তাহলে আমি কিছু বক্তব্য রাখতে চাই। চারিদিকে তাকিয়ে দেখল তারা।
ডিটেকটিভ রুমে আসতে হলে একটি কাঠের বেড়া ডিঙিয়ে আসতে হয়। ঐ বেড়াটার সামনে এগিয়ে এসে লেপস্কি দেখল এক নিগ্রো যুবতীদাঁড়িয়ে। মেয়েটির দেহের গড়ন একনজরেই সকল পুরুষের নজর কাড়ে। এরকম মেয়ের কাছে সকল পুরুষেরই প্রত্যাশা অনেক।
লেপস্কির মনে সে বেশ উত্তেজনার সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। তাঁর কালো চোখ দুটির উপর দৃষ্টি স্থির রেখে লেপস্কি জিজ্ঞাসা করল-হা মিস?
এরই ফাঁকে সে নিজের মনে মনে মেয়েটির গড়ন সম্পর্কে একবার আওড়ে নিল। মেয়েটির গায়ের রং কফির মত। পরনে আঁটো সাদা সূতীর স্ন্যাক্স। রক্ত লাল জার্সি টপ। লেপস্কির মনে হল–সব দিক থেকে এমন নিখুঁত একটি যুবতীর দেহ সে দেখেনি। মেয়েটির স্তন দুটি একটা বড় আকারের আনারস দুভাগ করে তার বুকের উপর বসিয়ে দেওয়ার মত দেখাচ্ছিল। সরু কোমর, লম্বা-সুডৌল পা দুটির গড়ন রীতিমত উত্তেজনার খোরাক জোগানোর মত।
লেপস্কি সেই বেড়ার গেটটা খুলে দিল। মেয়েটি নৃত্যের ভঙ্গিমায় লেপস্কির ডেস্কের ঠিক বিপরীত দিকের একটা চেয়ারে এসে বসল। লেপস্কি তার স্তনযুগলের ওপর থেকে চোখ সরাতে পারছিল না। মেয়েটি লেপস্কির উদ্দেশ্যে বলল–গতকাল রাত্রে টেলিভিসনে যে জ্যাকেটটার প্রদর্শনী দেখেছিলাম, সে ব্যাপারে আমি কিছু বক্তব্য রাখতে এসেছি। লেপস্কি তার নাম জানতে চাইল-ডোরালসহারনানভেজ।নিজের পরিচয় প্রসঙ্গে সেবলল–আমিক্যামল এভিনিউতে বাসকরি।অ্যাপার্টমেন্টনং১৬৫।একটাকারখানার মালিক একজনস্প্যানিশআমার মাকেউপভোগ করে, আমি তাদের ফসল। আমি সেই স্প্যানিশ লোকটির নাম ব্যবহার করছি,–শ্বেত-শুভ্র দাঁতগুলোমুক্তেরহাসিছড়িয়ে নিজেদের প্রকাশকরল, মিঃডিটেকটিভ–এইহলআমার পরিচয়।
মনে মনে শিস দিয়ে উঠল। ক্যামল এভিনিউ হকারদের আস্তানা তা সে জানে। সে ভাবে বিবাহিত না হলে সেও হয়ত সেখানে অর্থাৎ ১৬৫ নং অ্যাপার্টমেন্টে যেত।
কয়েক মুহূর্তে নিজেকে সংযত করে নিয়ে প্রশ্ন করল-মিস হারনানভেজ, আপনি বলছেন আপনার কিছু খবর দেওয়ার আছে।
মেয়েটি ধীরে ধীরে বলতে লাগল–হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। সাধারণতঃ টিভির কোন অনুষ্ঠান দেখিনা, তবে ঐদিন ব্যস্ত না থাকার দরুন টিভি দেখছিলাম।
একটু মনোলোভা হাসি ফুটিয়ে মেয়েটি পুনরায় বলতে থাকে–আমি তখন একা, হাতে ছিল মরর্টিনি, সাঁতারের খোঁজে উদগ্রীব
লেপস্কি মেয়েটির প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ল, সে ভাবছিল, নিরাবরণ অবস্থায় মেয়েটিকে না জানি কত সুন্দর লাগে।
গত বাইশ তারিখে ঐ জ্যাকেট পরিহিত এক যুবককে দেখেছি।
-কখন, কোথায়?
জোরে চেয়ারে হেলান দিতে গিয়ে তার ভারী স্তন দুটো উত্তেজনায় দুলে উঠল, লেপস্কি ও জ্যাকবি দৃশ্যটি তারিয়ে তারিয়ে দেখছিল। কঠিন মুখে লেপস্কি বলল–পাঁচ তারিখেই তো জেনি ব্যান্ডলার খুন হয়? এই তারিখ সম্পর্কে আপনি নিশ্চিত?-মেয়েটি বলল-ঐদিন আমার প্রিয় কুকুর জেমির জন্মদিন। ব্ল-স্কাই রেস্তোরাঁয় নিয়ে গিয়েছিলাম তাকে। তখন লাঞ্চের সময়। বাড়ি ফিরে দেখলাম–একটি লোক আমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে আমার উপর প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ল। সে ছিল দারুণ সুন্দর দেখতে। একটু স্মিত হেসে সে বলল–জানেন মিঃ ডিটেকটিভ পুরুষেরা সব সময় আমার কাছে আসে।
লেপস্কি ভাবল, কথাটা সে মিথ্যে বলে নি। সে যদি বিবাহিত না হত, তাহলে সে হয়ত যেত। মেয়েটি সিগারেট ধরাল, লেপস্কি বলে উঠল–ঐ লোকটি কি গলফ্ বোম লাগান জ্যাকেট পরেছিল?
ডোয়োলস চোখ ছোট করে বলল–আমার সব কথাটা মন দিয়ে ধৈর্য ধরে শুনুন। ঐ লোকটি পঞ্চাশ ডলারের প্রস্তাব দিচ্ছিল মাত্র এক ঘণ্টার জন্য। ঐ বাদানুবাদের সময়ই ঐ জ্যাকেট পরিহিত একটি দীর্ঘদেহী পুরুষ আমাদের পাশ দিয়ে চলে গেল।
কৌতূহলী লেপস্কি, জিজ্ঞাসা করল–লোকটি কেমন দেখতে ছিল? ডোরোলস বলল–লোকটার মুখ দেখিনি। তবে লোকটা ছিল বেশ লম্বা।
তারপর লেপস্কির একগোছা প্রশ্নের উত্তরে সেবলল–লোকটি লেপস্কির থেকেও লম্বা, বিরাট চওড়াকাঁধ, মাথার টুপীটার ছিল ভুট্টারবীজের মত রং, পায়ে নীল রং-এর স্ন্যাক্স আর গুচ্চি জুতো। দেখলে মনে হয় লোকটি বেশ সৌখিন আর লোকটির হাতের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য আমার নজরে পড়েছে আর তা হল লোকটি শিল্পী হয়ে থাকবে। আমি অনেক পুরুষের হাত নিয়ে খেলা করেছি আর তাই এক পলক দেখেই বুঝতে পেরেছি লোকটির লম্বা হাতের আঙুল গুলো শিল্পীর না হয়ে পারে না। আপনি আমাদের এতসব খবর দিয়ে অনেক উপকার করলেন। তবে, সেই লোকটিকে আপনি দেখলে চিনতে পারবেন তো?নিশ্চয়ই সে জ্যাকেট না পরলেও আমি চিনতে পারব।
এবার উঠে দাঁড়াল ডোয়োলস। তার সমস্ত শরীরটা নৃত্যের ভঙ্গিমায় দুলে উঠল। জ্যাকবি এতক্ষণ মেয়েটির শরীরের দিকে তাকাতে গিয়ে চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেছিল।
যাবার পূর্বে লেপস্কি তাকে সাবধান করে দিয়ে বলল–আপনি আমাকে যে সব কথা বললেন তা অন্য কারোর কাছে প্রকাশ করবেন না। এই লোকটি ভয়ঙ্কর-বিপজ্জনক।
মেয়েটি ভয় পেয়ে বলল–আপনার কি ধারণা, বেচারী জেনির মত আমার অবস্থা হতে পারে? হ্যাঁ সেই সম্ভাবনার কথা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।—-তাহলে মিঃ ডিটেকটিভ আপনারা যতক্ষণ না তাকে ধরবার ব্যবস্থা করছেন, ততক্ষণ আমি নিজেকে নিরাপদ মনে করছি না। আপনার কি মনে হয়, আমার একজন দেহরক্ষী দরকার?–চীফ মনে করলে তার ব্যবস্থা আমি অবশ্যই করব?তাহলে আমি চলি!চলে যেতে গিয়ে জ্যাকবির দিকে স্থির চোখে তাকাল সে। তাঁর গমন পথের দিকে লেপস্কি ও জ্যাকবি তাকিয়েছিল। লেপস্কির ডাকে সম্বিৎ ফিরে পেল সে ওর মত হুঁকারকে পেতে হলে কম করেও দুশ ডলার খরচ পড়বে তোমার ম্যাক্স। তোমার মত থার্ড গ্রেডের পুলিশের পক্ষে এটা অনেক বেশি, তাই না?
.
তখন বাজে দশটা। হ্যামিলটনের টিভির প্রোগ্রাম শেষ হতেই রেনল্ডস সুইচ অফ করে দিল। একটু ইতস্ততঃ করে অ্যামেলিয়ার দিকে তাকাল সে। তারা দুজনেই লুবুনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ বলছিল।হ্যামিলটনের বলার ভঙ্গিমা এতই গভীর ছিল যে, তারা যেন খুনের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করছে। হ্যামিলটন তার বক্তব্য শেষ করে বলল-শহরবাসী, আপনারা সকলেই সাবধানে থাকবেন। যতক্ষণ না সে ধরা পড়ছে, কেউ নিরাপদ নন।
অ্যামেলিয়া বন্য চীৎকার করে বলে উঠল-এ-আমি বিশ্বাস করি না। ক্রিমপিন কখনই খুন করতে পারে না।…
ম্যাডাম, একটু ব্রান্ডি দেব?
—হু
লিকার ক্যাবিনেটের দিকে এগিয়ে যেতে রেনল্ডস দেখল ক্রিমপিন তার রোলস গাড়ি হাঁকিয়ে নিয়ে চলে যাচ্ছে কেনড্রিকের গ্যালারীর উদ্দেশ্যে।
রেনল্ডস খবরটা অ্যামেলিয়াকে দেওয়ামাত্রই অ্যামেলিয়া তাকে নির্দেশ দিল স্টুডিও তে গিয়ে দেখে এস ওর লেটেস্ট ছবিটা।
রেনল্ডস ঘর থেকে বেরিয়ে গেল, একটু পরেই ফ্যাকাশে মুখ নিয়ে ফিরে এল। অ্যামেলিয়ার সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় হতেই আঁতকে উঠে বলল–কি হয়েছে, আমার দিকে অমন করে তাকিয়ে থেকো না, কি হয়েছে বল? ফিসফিসিয়ে ওঠার মত সে বলল–উনি একটা মানুষের মাথা আঁকছেন, রক্ত মাখা ছিন্ন মস্তক।
ছেলের ব্যাপারে নিশ্চিত হলেও এই কথাগুলো তার কানে রোম কাঁটার মত শোনাল। চোখ বন্ধ করে চেয়ারে গা এলিয়ে বলল- রেনল্ডস, আমাকে ব্রান্ডি দাও।ঠিক আছে ম্যাডাম, এক্ষুনি দিচ্ছি।ব্রান্ডি খাওয়ার পর কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেয়ে সে বলল–আমার সঙ্গে এখন কথা বলোনা। রেনল্ডস আবার ডাকল–ম্যাডাম, তিনি আবার কাউকে খুন করতে পারেন? করুকগে,–খেঁকিয়ে উঠল অ্যামেলিয়া, এসব লোক কারা? কে ওদের তোয়াক্কা করে? কিন্তু ম্যাডাম, আমরা কিছুই জানি না–তার দিকে তাকিয়ে চীৎকার করে উঠল অ্যামেলিয়া–আজ যাঁরা আমাকে খাতির করছে, যে মুহূর্তে এই অশুভ খবরটা সকলে জানবে, তারা আমাকে সমাজ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। সেই সঙ্গে অ্যামেলিয়া রেনল্ডস এর চাকরী চলে যাবার ভয়ও দেখাল। কিন্তু ম্যাডাম, উনি যে এখন বিপজ্জনক ও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছেন। তিনি হয়ত আপনাকেও আক্রমণ করতে পারেন। ক্রুদ্ধ স্বরে খানিকটা দাবড়ি দিয়ে বলল অ্যামেলিয়া-আমাকে? আমি ওর মা, এসব বাজে কথা না বলে তোমার কাজে যাও। আর মনে রেখ, আমরা কিন্তু জানি না, আর কাউকে কিছু বলবও না।
এদিকে হেড কোয়ার্টারে টেরেল তার আসনে উপবিষ্ট আর তার সামনে বসে রয়েছে লেপস্কি, হেস ও বেইগলার। কথা বলার ফাঁকে ক্লান্তি দূর করবার জন্য সকলেই কফি পান করছিল। এই পাগল খুনীকে আমরা এবার ধরতে পারব। চতুর্থ জ্যাকেটটার হদিস করা আমাদের এখন খুবই জরুরী। অন্য তিনজন মালিকের চেহারার সঙ্গে খুনীর চেহারার মিল নেই। কথা বলতে বলতে টেরেল এবার লেপস্কির দিকে তাকিয়ে প্রশংসার সুরে বলল–মেয়েটি সত্যিই তোমাকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছে দেখছি। লেপস্কি উত্তরে বলল–হ্যাঁ। টেরেল বলতে থাকে–এই জ্যাকেটটা সত্যিই বোধহয় মিসেস গ্রেগ স্যালভেসন আর্মিতে দান করে থাকবেন। কিন্তু অত দামী গুচ্চি জুতো যে ব্যবহার করতে পারে, সে নিশ্চয়ই এরকম একটা জ্যাকেট নিজেই কিনে ব্যবহার করতে পারে। এবার হেসবলে উঠল–এখানে অনেক দুনম্বরী ধান্দাবাজ লোক আছে, সেহয়ত জ্যাকেট সমেত গুচ্চি জুতো চুরি করতে পারে অথবা দোকান থেকে জোর করে কম দামে সংগ্রহ করতে পারে। এমন সময় ডাস্টিলুকাস হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকল, জানাল–সে এক ছোকরাকে সঙ্গে করে এনেছে, সে ট্রাকচালক, নাম জো-হাইনি, সে তার বাবাকে কিছু পোষাক বিক্রী করতে দিয়েছিল। তারপর টেরেলের নির্দেশে লেপস্কির সহযোগিতায় হেস জো-হাইনিকে বেশ কয়েক মুহূর্ত ধরে । জিজ্ঞাসাবাদ করে, কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোন তথ্য তার কাছ থেকে পেলনা। তারপর লেপস্কি হেসের কথামত সীকোম্ব শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিল, তার লক্ষ্য ছিল সিড হাইনি, জো-হাইনির বাবার দোকানে অতর্কিতে হানা দেওয়া।– সিড হাইনি তার ছেলের মতই লম্বা, ক্ষুদে ক্ষুদে চোখের ধূর্ত চাহনি। দেখলেই মনে হয়, এ লাইনে পোড় খাওয়া লোক সে। লেপস্কি নিজের পরিচয় দিয়ে বলল –একটা খুনের তদন্ত করতে এসেছি। তারপরে সে গলফ বোম লাগান জ্যাকেটটার কথা বলল।
সিড হাইনি জানাল কিছুদিন পূর্বে গল বোম লাগান একটা জ্যাকেট বিক্রী করেছে কিন্তু নীল জ্যাকেট সে চোখে দেখেনি। লেপস্কির পরবর্তী প্রশ্ন–ঠিক আছে, তুমি কখন কাউকে গুচ্চি জুতো জোড়া বিক্রী করেছিলে?
মানে সেই দামী ইতালিয়ান জুতো? অবাক হয়ে সে বলল-ও রকম দামী জুতো এখানে পাবেন না, অন্য ভাল জুতো দেখাতে পারি…। তার কথা শেষ না হতেই লেপস্কি তাকে ধমক দিয়ে বলল–ও কথা ভুলে যাও। তোমার ছেলেকে পুলিশী ঝামেলায় জড়াতে পারি, স্যালভেসন আর্মির পোষাক চুরির অপরাধে।
না, না ঝামেলায় জড়িয়ে পড়বার মত কাঁচা ছেলে জো নয়।–দাঁত বের করে সে হাসল। অগত্যা দোকান থেকে বেরিয়ে আসল লেপস্কি। রাস্তায় নামতেই তার কারেন স্টার্নউডের সঙ্গে দেখা।
হাই মিস স্টার্নউড লেপস্কি জিজ্ঞাসা করল–মিঃ ব্রান্ডনের খবর কি? ওঁর শ্বশুর মহাশয় অসুস্থ, দেখতে গেছে, ফিরতে সোমবার হয়ে যাবে। তা আপনার সেই খুনের তদন্তের খবর কি মিঃ লেপস্কি? চলছে–তারপর লেপস্কি তাকে অনুরোধ করল তার সঙ্গে দোকানে যাবার জন্য। উদ্দেশ্য ক্যারলের জন্য একটি হাতব্যাগ কেনা এবং কারেনের সাহায্যে তা নির্বাচন করা। (বেশ তো,) আপনার জন্য সময় আমার হাতে থাকে সব সময়! মোহিনী হাসি হেসে বলল কারেন, প্যারাডাইস স্টোর্সে লেডীজ হাত ব্যাগের স্টক আছে, চলুন সেখানেই যাওয়া যাক।
পথে কেনড্রিকের গ্যালারির পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে ক্রিমপিনের ল্যান্ডস্কেপ চোখে পড়তে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল লেপস্কি। তার গায়ের লোমগুলো এবং মাথার চুল খাড়া হয়ে উঠল।
রক্ত লাল চাঁদ! কালো আকাশ! কমলালেবুর রঙের সী বীচ… জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে আবার সেই পেইন্টিংটা ভাল করে দেখল সে, ক্যারেলের সেই বৃদ্ধা সঙ্গিনীর কুর কথা মনে পড়ে গেল তার। এর আগেও সেই ভদ্রমহিলার কুটা সত্যে পরিণত হয়েছিল। তারপরেই লেপস্কির মনে পড়ল ডোরোলসের কথা তার হাত দুটো শিল্পীর মত দেখতে ছিল–
তাহলে এই ল্যান্ডস্কেপের শিল্পীই কি খুনী? যাকে তারা খুঁজছে। দীর্ঘ সময় ইতস্ততঃ করে ইচ্ছাকৃত ভাবেই কেনড্রিকের গ্যালারির ভেতরে প্রবেশ করল সে এক সময়।