সন্ধেবেলা শিবমন্দিরের চাতালে দুজন বসা। রসময় আর জগাপাগলা। সিঁড়ির নীচে কুকুর ভুল। চারদিকটা অন্ধকারে বড্ড ছমছম করছে।
রসময় বললেন, “ও জগা, শুনেছ তো, গগনবাবুর বাড়ির বাগানে একখানা বোমা পাওয়া গেছে।”
“বোমা! বলেন কী ঠাকুরমশাই?”
“হ্যাঁ গো, যে-সে বোমা নয়, মিলিটারি বোমা। সাঙ্ঘাতিক জিনিস। দেখতে অনেকটা আনারসের মতো।”
জগা একটু হাঁ করে চেয়ে থেকে বলল, “আনারসের মতো দেখতে! সেটা বোমা হতে যাবে কোন দুঃখে? সেটা তো স্বপ্ন তৈরির কল!”
রসময় অবাক হয়ে বললেন, “স্বপ্ন তৈরির কল? সে আবার কী জিনিস?”
জগা একগাল হেসে বলল, “আজ্ঞে পরেশবাবু তৈরি করেছেন। খুব মজার জিনিস।”
রসময় অবাক হয়ে বলেন, “পরেশবাবুটা কে?”
“ভারী ভাল লোক। জিলিপি খাওয়ার জন্য পয়সা দিয়ে গেছেন।”
“তাব সঙ্গে তোমার দেখা হল কোথায়?”
জগা মাথা চুলকে বলল, “বড্ড মুশকিলে ফেললেন। বলা বারণ কি না। তবে আপনি বলেই বলছি। পাঁচ কান করবেন না।”
“পাঁচ কান করব কেন? বলে ফেল।”
“আজ্ঞে, আমি তো কুনকেঁদের কাছারিঘরের বারান্দায় শুই, তা সেখানেই দেখা।”
“ঘটনাটা খোলসা করে বলো।”
“পরশু রাতে শুয়ে আছি মুড়িসুড়ি দিয়ে। একটা ভারী ভাল স্বপ্নও দেখছিলুম। এক রাজবাড়িতে ভোজ হচ্ছে। আর আমার পাতে একজন লোক গরম-গরম জিলিপির পর জিলিপি দিয়ে যাচ্ছে। দিয়েই যাচ্ছে, দিয়েই যাচ্ছে। দিচ্ছে তো দিচ্ছেই। ওঃ সে একেবারে জিলিপির পাহাড় হয়ে গেল।”
“তারপর?”
“ওই সময়েই পরেশবাবু এসে ঠেলে তুললেন, “ও জগা, ওঠো ওঠো! তা উঠে ভারী রাগ হল। বললুম, মশাই, দিলেন তো জিলিপির স্বপ্নটার বারোটা বাজিয়ে! তিন-চারটে খেয়েছি কি
-খেয়েছি অমনই কাঁচা ঘুমটা ভাঙালেন! কত জিলিপি বাকি রয়ে গেল বলুন তো!’ তখন পরেশবাবু খুব হাসলেন। বললেন, “স্বপ্ন দেখতে চাও, তার আর ভাবনা কী? তোমাকে এমন একটা কল দিচ্ছি যা থেকে কেবল রোজ জিলিপির স্বপ্নই বেরিয়ে আসবে। রোজ সারারাত ধরে কত খাবে খাও।”
“বটে।”
“তবে আর বলছি কী! কলটা শুধু মাথার কাছে রেখে শুলেই হবে।”
“তারপর?”
“তা পরেশবাবু একটা নয়, দু-দুটো কল আমার হাতে দিয়ে বললেন, “শোনো জগা, এই বাঁ হাতেরটা তোমার। এটাতে শুধু জিলিপির স্বপ্ন ভরা আছে।”
জগা একটু থামতেই রসময় বলে উঠলেন, “আর একটা?”
জগা মাথা চুলকে বলল, “আপনাকে বলেই বলছি। পাঁচ কান করবেন না। আর-একটা কলে ভূতের স্বপ্ন পোরা ছিল। পরেশবাবু বললেন, ‘জানো তেতা, দু’পাতা সায়েন্স পড়ে নাস্তিকরা আর ভূতপ্রেত মানে না। ওই গগনবাবু আর তার ছেলে গোবিন্দ ভারী নাস্তিক। এই তো সেদিন বাতাসা দ্বীপের ঢ্যাঙা ভূতের কথা বলতে গিয়েছিলাম, তা এমন হাসিঠাট্টা করল যে, বলার নয়। তাই ওদের একটু শিক্ষা দেওয়ার জন্য এই কলটা বানিয়েছি। চুপিচুপি গিয়ে গগনবাবুর ঘরে রেখে আসলেই হবে। রাখার আগে কলের গায়ে একটা জিনিস কামড়ে ছিঁড়ে দিতে হবে। দেখবে প্রতি রাতে বিটকেল সব ভূতের স্বপ্ন দেখে বাপ-ব্যাটা কেমন চেঁচামেচি লাগায়।”
“তারপর?”
“তা আজ্ঞে, গগনবাবুর ওপর আমারও একটু রাগ আছে। মেয়ের বিয়েতে ভোজ খেতে গিয়েছিলুম। তিনবার লাইন থেকে তুলে দিল, বলল, পরের ব্যাচে বসিস। তা শেষে বসলুম বটে, কিন্তু ঘ্যাঁটম্যাট ছাড়া কিছুই জুটল না। শেষ পাতে লালমোহনটা অবধি দিলেন না। কী অবিচার বলুন তো!”
“তা অবশ্য ঠিক।”
“তাই আমি পরেশবাবুর কথামতো কলটা রেখে আসতে গিয়েছিলুম। কিন্তু ওদের কুকুরটা এমন তাড়া করল যে, ভয়ে বাগানে ফেলে আসি।”
“অ। তা তোমার কলটা কই?”
“কেন, এই যে আমার ঝোলার মধ্যে!” বলতে বলতে জগা তার ঝোলায় হাত পুরে কালো আনারসটা বের করে এনে রসময়কে দেখিয়ে একগাল হেসে বলল, “রোজ শিয়রে নিয়ে শুই। কাল রাতেও খুব জিবেগজা খাওয়ার স্বপ্ন দেখেছি মশাই। মনে হয় পরেশবাবু ভুল করে একটা জিবেগজার কলই দিয়ে গেছেন। তা জিবেগজাই বা খারাপ কী বলুন!”
জিনিসটা দেখে রসময়ের ভিরমি খাওয়ার জোগাড়! তবে তিনি মাথাটা ঠাণ্ডা রেখে বললেন, “ঠিক আছে, ওটা ঝোলায় রেখে দাও সাবধানে। বেশি নাড়াচাড়া করা ভাল নয়। ওতে জিবেগজার খুব ক্ষতি হয়।”
জগা সাবধানেই জিনিসটা পুরে রাখার পর রসময় বললেন, “এবার বলো তো, পরেশবাবুটা কে?”
জগা জুলজুল করে চেয়ে বলে, “আজ্ঞে পরেশবাবু খুব ভাল লোক। আমাকে জিলিপি খেতে পাঁচটা টাকাও দিয়েছেন। বলেছেন, স্বপ্নের জিলিপি খাওয়া ভাল, আবার জেগে খাওয়াও ভাল।”
“সে তো বুঝলুম। কিন্তু লোকটা থাকে কোথায়?” মাথা নেড়ে জগা বলে, “তা জানি না।”
“দেখতে কেমন?”
“আজ্ঞে, বেঁটেমতো। মাথায় টাক আছে।”
“ঠিক তো! পরে আবার গুলিয়ে ফেলো না। বামাচরণকে নিয়ে যা করলে সেটা তো যাচ্ছেতাই ব্যাপার।”
“আজ্ঞে না, এবার আর গণ্ডগোেল পাবেন না। বেশ গাঁট্টাগোট্টা চেহারা। এই আপনার মতোই নাটা মানুষ!”
রসময় ভারী অবাক হয়ে বলে, “আমি আবার নাটা হলাম কবে থেকে? সবাই তো বলে আমি একজন লম্বা মানুষ।”
“অ্যাাঁ, আপনি বেঁটে নন?”
“কস্মিনকালেও না।”
ঘ্যাঁস-ঘ্যাঁস করে মাথা চুলকোতে-চুলকোতে জগা বলল, “তা হলে তো বড্ড মুশকিলে ফেললেন ঠাকুরমশাই। আমি যে আপনাকে বেঁটে বলেই জানতুম। আপনি বেঁটে, মহেশবাবু বেঁটে, ফটিকবাবু বেঁটে, খাসনবিশ বেঁটে।”
রসময় বললেন, “তুমি যে মুড়ি-মিছরির এক দর করে ফেললে হে! ফটিকবাবু বেঁটে হলেও মহেশবাবু বেশ লম্বা। আর খাসনবিশ মাঝারি।”
জগা জুলজুল করে চেয়ে বলল, “বড্ড ভাবনায় ফেললেন ঠাকুরমশাই। এখনও খিচুড়ির ব্যাপারটাই মেটেনি, মাথায় আবার নতুন একটা ভাবনা ঢুকল।”
“ভাল করে ভেবে বলো তো, পরেশবাবু বেঁটে, না লম্বা।”
জগা খুব লজ্জিত মুখে বলে, “লম্বাই হবেন বোধ হয়।”
“গোঁফ আছে?”
“থাকার কথা নাকি ঠাকুরমশাই? তা হলে আছে।”
“নাঃ, তোমাকে নিয়ে আর পারা যায় না দেখছি।”
“এইজন্যই তো আমি একটা চশমা চাইছি। চশমা চোখে দিলে বাহারও হয়, আর লম্বা না বেঁটে, কালো না ধলো তাও ঠাহর হয়। কিন্তু কেউ চশমা দিচ্ছে না মশাই। ফটিকবাবুকে বললুম, “আপনার মা তো গত হয়েছেন, তাঁর চশমাজোড়া আমাকে দিন।’ তা তিনি খ্যাঁচ করে উঠলেন, “সোনার চশমা তোমাকে দিই আর কি! মহেশবাবুকেও বলেছিলুম, আপনার তো দুজোড়া চশমা, দিলেনই না হয় আমাকে একজোড়া।’ তা ভ্যাল ভ্যাল করে চেয়ে থাকেন, কথা কানেই তোলেন না। এরকম হলে তো আমার চলে না মশাই। চশমা ছাড়া বড়ই অসুবিধে হচ্ছে।”
রসময় লণ্ঠনটা হাতে নিয়ে উঠে পড়লেন। বললেন, “চলো হে জগা, ঝোলাটা সাবধানে কাঁধে ঝুলিয়ে নাও। দেখো, পড়ে টড়ে না যায়। স্বপ্নের কলে চোট লাগা ভাল নয়।”
জগা ঝোলা নিয়ে উঠল। বলল, “চশমার কথাটা একটু খেয়াল রাখবেন ঠাকুরমশাই।”
“খুব রাখব। হ্যাঁ, ভাল কথা। আজও কি কুনকেঁদের বারান্দাতেই রাতে শোবে নাকি?”
ঘনঘন মাথা নেড়ে জগা বলল, “না মশাই, না। রোজ-রোজ এক বাড়িতে শুলে কি আমার চলে! আমার পাঁচজনকে দেখতে হয় যে। আজ ভাবছি ফটিকবাবুর বারান্দায় শোব।”
“বেশ, বেশ।” জগা খুশি হয়ে বলল, “ফটিকবাবুর বারান্দা বেশ জায়গা। উলটো দিকে ফলসা বনে নিশুত রাতে জ্যোৎস্না উঠলে পরিরা আসে। উড়ে-উড়ে ঘুরে-ঘুরে বেড়ায়। তারা লোকও খুব ভাল।”
“তাই নাকি? ভাল, ভাল।”
বাঁশবনের ভেতরকার নির্জন কাঁচা রাস্তাটা পেরিয়ে জগা বাঁ দিকে ফটিকবাবুর বাড়ির মুখো রওনা হল। রসময় ডান দিকে ফিরে তাড়াতাড়ি হাঁটতে লাগলেন।
মদন দারোগা তাঁকে দেখে ভারী খুশি হয়ে বললেন, “আরে, আসুন, আসুন রসময়বাবু, ভাল কথা, কিছু মনে পড়ল নাকি? আপনার কাছে ভাল-ভাল কথা শুনব বলেই বসে আছি। তা বলুন তো মশাই, কয়েকটা মোক্ষম ভাল কথা।”
রসময় প্রথমে মাথা চুলকোলেন, তারপর হাত কচলে বললেন, “আজ্ঞে বড়বাবু, ভাল কথা কিছুই মনে আসছে না।”
“আহা, একটু বসুন, একটু ভাবুন, ঠিক মনে পড়ে যাবে।”
“যে আজ্ঞে। তবে কিনা বসার একটু অসুবিধে আছে।”
“কেন বলুন তো! ফোড়া-টোড়া হয়েছে নাকি? কিংবা হাঁটুতে বাত?”
ভারী বিনয়ের সঙ্গে রসময় বললেন, “আজ্ঞে, সে বরং ভাল ছিল। এ তার চেয়েও মারাত্মক। জগাপাগলা তার ঝোলার মধ্যে একখানা বোমা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
“সর্বনাশ! আবার বোমা! এই কি আপনার ভাল কথা? বোমা সে পেল কোথায়?”
“আজ্ঞে, পরেশবাবু বলে কে একজন মাঝরাতে তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে গছিয়ে গেছে।”
মদন হাজরা আতঙ্কিত হয়ে বললেন, “সর্বনাশ? আবার এগারোজন পরেশবাবুকে ধরে আনতে হবে নাকি! এ তো বড় ঝামেলাই হল দেখছি! জানেন মশাই, এগারোজন বামাচরণ আমার নামে মানহানির মামলা করবে বলে উঁকিলের চিঠি দিয়েছে। শুধু কি তাই? সবুজ চেক লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরা, গালে খোঁচা-খোঁচা দাড়িওলা সাতটা লোক রোজ এসে ক্ষতিপূরণের জন্য ঘ্যানঘ্যান করছে।”
“খুবই দুঃখের কথা বড়বাবু, আপনাদের জীবনটাই তো এরকম। পরের জন্য এত করেন, তবু কেউ গুণের কথা বলে না। কেবল দোষ খুঁজে বের করে।”
“বাঃ! এই তো একটা ভাল কথা বললেন! বাঃ বাঃ! এ তো চমৎকার কথা! শুনে মনটা ভাল হয়ে গেল মশাই। হ্যাঁ, কী যেন বলছিলেন!”
“আজ্ঞে, জগাপাগলার ঝোলার মধ্যে একখানা মিলিটারি বোমা ফাটো-ফাটো করছে। এই ফাটে কি সেই ফাটে অবস্থা।”
মদন হাজরা লাফ দিয়ে উঠে বললেন, “কোথায় জগা? অ্যাাঁ! কোথায় সে? ওরে গুলবাগ সিং, সেপাই-টেপাই নিয়ে যা তো বাবা, ব্যাটাকে একেবারে হাতকড়া দিয়ে ধরে আন।”
রসময় হাত কচলে বললেন, “আজ্ঞে বড়বাবু, জগাকে ধরে আনলে তেমন কাজ হবে না। বরং কাজটা কেঁচে যাবে।”
মদন হাজরা ধপ করে বসে পড়ে বললেন, “আপনি বোধ হয় আরও একটা ভাল কথা বলতে চাইছেন! তা হলে বলেই ফেলুন।”
“আজ্ঞে, ভাল কিনা জানি না। আমাদের মাথায় যা আসে বলে ফেলি। তা ভাল না মন্দ সেটা আপনার মতো দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা বিচার করবেন।”
মদন হাজরা খুশি হয়ে বললেন, “বাঃ এটাও ভাল কথা। এবার বলুন।”
“বলছিলাম কি, ধরপাকড় না করে বরং জগার ওপর নজর রাখলে ওই পরেশবাবু বা বামাচরণ যে-ই হোক, তাকে ধরে ফেলা যাবে। জগা নির্দোষ, বোমা বন্দুক সে চেনে না। তাকে পাগল পেয়ে কেউ আড়াল থেকে এসব করাচ্ছে।”
মদন হাজরা ভাবিত হয়ে বললেন, “হুম, তা লোকটা কে?”
“হয় বামাচরণ, নয় তো পরেশবাবু।” গগনবাবুর বাড়ির বোমাটা যে জগাপাগলাই রেখে এসেছিল তা আর রসময় ভাঙলেন না। তা হলে জগার কপালে দুঃখ ছিল।
মদন হাজরা দুলে-দুলে কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, “খুবই চিন্তার কথা। কিন্তু বোমাটা যে ওর কাছে রয়েছে, সেটা যে সরানো দরকার। গ্রেফতার না করলে–”।
রসময় ঘাড় চুলকে ভারী বিনয়ের সঙ্গে বললেন, “আজ্ঞে, জগা আজ ফটিকবাবুর বারান্দায় শুয়েছে। আমাকে যদি দশ মিনিট সময় দেন তা হলে আমি গিয়ে বোমাটা সরিয়ে ফেলব। অবশ্য যদি আপনার মত থাকে।”
মদন হাজরা একগাল হেসে বললেন, “খুব মত আছে। খুব মত আছে। বোমাটোমা থানায় রাখা বড্ড ঝকমারি মশাই। আপনি বরং বেরিয়ে পড়ুন। আমরা আধঘণ্টা বাদে যাচ্ছি।”
“যে আজ্ঞে,” বলে রসময় বেরিয়ে পড়লেন।
বেশ জোর কদমেই হেঁটে যাচ্ছিলেন রসময়। ফটিকবাবুর বাড়ির কিছু আগে হাপু ডাইনির মোড়। জায়গাটা খুব নির্জন। চারদিকে ঝোঁপঝাড়।
হঠাৎ কে যেন অন্ধকার থেকে বলে উঠল, “ঠাকুরমশাই নাকি?”
রসময় বললেন, “হ্যাঁ।”
“একটু উপকার করতে হবে যে ঠাকুরমশাই। আমার বাড়িতে
নাকি?
আজ লক্ষ্মীপুজো, দুটো ফুল-পাতা ফেলে দিয়ে যেতে হবে যে!”
“পাগল নাকি? আমি আজ বড় ব্যস্ত। জীবন-মরণ সংশয় হে বাপু, ওই পাঁচালি-টাঁচালি পড়ে চালিয়ে নাওগে যাও। আমার আজ সময় হবে না।”
লোকটাকে দেখা যাচ্ছে না। লণ্ঠনের আওতার বাইরে একটা ঝোঁপের আড়ালে দাঁড়ানো। বলল, “তাই কি হয়? আমার বউ যে সকাল থেকে নির্জলা উপোস করে বসে আছে। পুজো না হলে জলটুকুও খাবে না।”
রসময় বললেন, “তা সেটা আগে বলোনি কেন? হঠাৎ করে এসে পথ আটকালে তো হবে না! আমি জরুরি কাজে যাচ্ছি।”
“আজ্ঞে, এ কাজটাও কম জরুরি নয়। মালক্ষ্মী কূপিত হলে তো শুধু আমাদের ওপরেই হবেন না, পূজারীর ওপরেও হবেন। ঠাকুরমশাইয়ের কি সর্পভয়ও নেই নাকি?”
“ওঃ, জ্বালালে দেখছি!”
“আজ্ঞে, বেশিক্ষণ তো নয়। পাঁচটা মিনিট একটু অংবং বলে দুটো ফুল ফেলে চলে আসবেন।”
“ঠিক আছে বাপু, চলো। তা তোমার বাড়িটা কোথায়?”
“এই যে এদিকে।”
লণ্ঠনের আলোটা বড়ই কমজোরি। তাতে লোকটাকে ভাল দেখা যাচ্ছিল না। আগে-আগে হাঁটছে। পথ ছেড়ে একেবারে মাঠঘাট দিয়ে চলেছে।
“কই হে? কোথায়?” রসময় হাঁক মারলেন। “এই যে আর একটু।” হাঁটতে-হাঁটতে হঠাৎ রসময় থমকে দাঁড়ালেন। “সর্বনাশ!”