॥ ৫ ॥
বিকেলে কথামতো জয়ন্তবাবু ফোন করলেন। পুলিশ সার্চ করে কিছু পায়নি। বাড়ির চাকরদের জেরা করা হয়েছে, তাতেও কোনও ফল হয়নি। ফেলুদা বলল, ‘চল, এবার একবার জয়ন্তবাবুর বাড়ি যাওয়া যাক। এবার ফেলু মিত্তিরের কাজ শুরু। অবিশ্যি পুলিশ তাদের তদন্ত চালিয়েই যাবে, কিন্তু তাতে আমাদের কিছু এসে যাচ্ছে না।’
হোটেলেই ট্যাক্সি ছিল, একটা নিয়ে গুম্তীর ব্রিজ পেরিয়ে জয়ন্তবাবুর বাড়ি গিয়ে হাজির হলাম। আজ বাড়িটাকে গম্ভীর দেখাচ্ছিল, বেশ বোঝা যাচ্ছিল ওখানে একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে।
সুলেমান এসে দরজা খুলে দিল, আমরা তিনজন ভিতরে ঢুকলাম। জয়ন্তবাবু আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বৈঠকখানায়, আমাদের দেখেই সোফা ছেড়ে উঠে এলেন।
‘ওটা পাওয়া গেল না’, প্রথম কথাই বললেন ভদ্রলোক।
ফেলুদা বলল, ‘সেটা অস্বাভাবিক নয়। আমারও মনে হয়েছিল ওটা পাওয়া যাবে না। যে নিয়েছে সে ত আর বোকা নয় যে হাতের কাছে রেখে দেবে জিনিসটা।’
‘আপনিও কি আলাদা করে সার্চ করতে চান?’
‘না,’ বলল ফেলুদা। ‘আমি আপনার বাড়ির লোকজনদের সঙ্গে একটা কথা বলতে চাই। এখন এ বাড়িতে কে কে রয়েছেন?’
‘আমায় স্ত্রী, আমার মেয়ে, ছেলে বোধহয় এখনও ফেরেনি। আর আছেন সোম—যাঁর সঙ্গে কাল আপনাদের আলাপ করিয়ে দিয়েছিলাম।’
‘আমার কিন্তু মিঃ সাল্ডান্হার সঙ্গেও কথা বলা দরকার। আর মিঃ সুকিয়াস।’
‘সেটা কোনও অসুবিধা নেই। আমি আপনাকে ঠিকানা দিয়ে দেব, আপনি ফোনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে চলে যাবেন।’
‘তা হলে আপনাকে দিয়ে শুরু করা যাক।’
‘বেশ ত।’
আমরা সকলেই সোফায় বসলাম।
‘একটু চা খাবেন ত?’ জয়ন্তবাবু জিজ্ঞেস করলেন।
‘তা খেতে পারি।’
জয়ন্তবাবু সুলেমানকে ডেকে চার কাপ চায়ের অর্ডার দিলেন। তারপর ফেলুদা একটা চারমিনার ধরিয়ে তার প্রশ্ন শুরু করল।
‘আপনি বলছিলেন সুকিয়াস আপনার শাশুড়ির হারটা কিনতে চেয়েছিলেন। সেটা কতদিন আগে?’
‘বছরখানেক হবে।’
‘সুকিয়াস জানলেন কী করে এই হারের কথা?’
‘এটার কথা অনেকেই জানে। এককালে খবরের কাগজে বেরিয়েছিল ত। আমার শাশুড়ি মারা যাবার পর তাঁর একটা সংক্ষিপ্ত জীবনী এখানকার “পায়োনিয়ার” কাগজে বেরিয়েছিল। তাতে হারের কথাটা ছিল। সুকিয়াস এমনিতে মানিলেন্ডার, তেজারতির কারবার করে। ভাবলে মনে হয় এমন লোকের শিল্পের দিকে কোনও ঝোঁক থাকবে না। কিন্তু সুকিয়াস এ ব্যাপারে একটা বিরাট ব্যতিক্রম। আমি ওর বাড়িতে গিয়েছি, ওর সংগ্রহ দেখেছি। দেখবার মতো সব জিনিস আছে ওর কাছে। ওর রুচি অনবদ্য।’
‘আপনি যখন হারটা বিক্রি করলেন না, তখন ওর প্রতিক্রিয়া কী হয়?’
‘ও খুবই হতাশ হয়েছিল। ও দু’ লাখ টাকা অফার করেছিল। আমি নিজে হলে কী করতাম জানি না, কিন্তু আমার স্ত্রী হারটার প্রতি বিশেষভাবে অনুরক্ত। কোনও মতেই ওটা হাতছাড়া করবে না। আর সেই হারই…’
জয়ন্তবাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
‘আপনি কাউকে সন্দেহ করেন এই ব্যাপারে?’
‘আমি সম্পূর্ণ হতভম্ব। চাকরবাকর কাউকেই আমার সন্দেহ হয় না। ওরা বেইমানী করবে এটা আমি বিশ্বাস করি না। অথচ তার বাইরে কে যে এটা নিতে পারে, এবং কেন, সেটা বোঝার সাধ্যি আমার নেই।’
‘আপনি ত ব্যবসাদার’, ফেলুদা বলল।
‘ব্যবসাদার মানে আমার একটি ইমপোর্ট-এক্সপোর্টের আপিস আছে।’
‘কেমন চলে আপিস?’
‘ভালোই। আমাদেরই কোম্পানি। আমার একজন পার্টনার আছে।’
‘কী নাম?’
‘ত্রিভুবন নাগর। এখানকারই লোক। আমার প্রথম জীবনে আমি ব্যবসায় ছিলাম না, একটা সওদাগরী আপিসে চাকরি করতাম। নাগর ছিল আমার বন্ধু। ত্রিশ বছর আগে নাগর আর আমি মিলে আমাদের ব্যবসা শুরু করি।’
‘আপনাদের কোম্পানির নাম কী?’
‘মডার্ন ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট।’
‘কোথায় আপনাদের আপিস?’
‘হজরতগঞ্জে।’
ইতিমধ্যে আমাদের চা এসে গেছে, আমরা খেতে শুরু করে দিয়েছি। ফেলুদা বলল, ‘আরেকটা প্রশ্ন আছে।’
‘কী?’
‘কাল যখন ফিল্মটা চলছিল তখন আপনি কাউকে চলাফেরা করতে, কিংবা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেছিলেন?’
‘উঁহু।’
‘আপনার ছেলে কোনও চাকরি করে?’
‘এখনও না। ওকে আমার আপিসে ঢোকানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু ও রাজি হয়নি।’
‘ওর বয়স কত?’
‘পঁচিশ।’
‘ওর কোনদিকে ঝোঁক?’
‘ঈশ্বর জানেন।’
‘থ্যাঙ্ক ইউ স্যার। একবার আপনার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা যায় কি?’
‘নিশ্চয়ই। ও খুবই ডিপ্রেস্ড হয়ে পড়েছে, বুঝতেই পারেন।’
‘আমি বেশি বিরক্ত করব না ওঁকে?’
চা খাবার পর জয়ন্তবাবু গিয়ে তাঁর স্ত্রীকে ডেকে আনলেন। ভদ্রমহিলা কান্নাকাটি করেছেন সেটা এখনও দেখলে বোঝা যায়। দিনের বেলা দেখে আরও বেশি করে মনে হল যে শকুন্তলা দেবীর সঙ্গে এঁর আশ্চর্য চেহারার মিল। ভদ্রমহিলা চাপা গলায় বললেন, ‘আপনি আমাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাইছিলেন…?’
ফেলুদা বলল, ‘হ্যাঁ। বেশিক্ষণ আপনাকে কষ্ট দেব না। সামান্য কয়েকটা প্রশ্ন।’
‘বলুন।’
‘আপনার মা যে হারটা আপনার দিদিকে না দিয়ে আপনাকে দিলেন তাতে আপনার দিদির কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?’
তিনি বোধহয় এ ব্যাপারটা আগে থেকেই আন্দাজ করেছিলেন।’
‘কেন?’
‘দিদি ছিল আমার বাবার ফেভারিট, আর আমি ছিলাম মা-র। মা মারা যাবার তিন বছর আগে হারটা আমাকে দেন। দিদির মনের অবস্থা কী হয়েছিল বলতে পারব না, কারণ এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কখনও কোনও আলোচনা হয়নি।’
‘আপনার দিদির সঙ্গে আপনার সদ্ভাব আছে?’
‘হ্যাঁ। যত দিন যাচ্ছে আমরা দু’জনে তত আরও কাছাকাছি এসে পড়ছি। যখন ইয়াং ছিলাম তখন দু’জনের মধ্যে একটা রেষারেষির ভাব ছিল।’
‘আপনি ত অভিনয় করতে খুব ভালোবাসেন?’
‘হ্যাঁ। তাই ত মা আমাকে নিয়ে এত প্রাউড ছিলেন। এ ব্যাপারে দিদির কোনও শখ ছিল না।’
‘আপনার মেয়ের?’
‘শীলা স্কুলে কলেজে অ্যাকটিং করেছে, ক্লাবে-ট্লাবেও দু’-একবার করেছে। তার বেশি নয়। ও ফিল্মে অফার পেয়েছে, কিন্তু নেয়নি।’
‘ও কী করতে চায়?’
‘ও ওয়ার্কিং গার্ল হতে চায়। আপিসে কাজ করবে, নিজে রোজগার করবে। ও ত সবে বি-এ পাশ করেছে। এর মধ্যে কিছু জার্নালিজ্ম করেছে, খবরের কাগজে ওর দু’-একটা লেখা বেরিয়েছে।’
‘আপনি কি এই চুরির ব্যাপারে কাউকে সন্দেহ করেন?’
‘কাউকেই না। এ ব্যাপারে আমি আপনাকে একেবারেই সাহায্য করতে পারব না।’
‘কাল যখন ফিল্ম দেখানো হচ্ছিল তখন কাউকে হাঁটাচলা করতে দেখেছিলেন?’
‘না। মনে হল সকলেই তন্ময় হয়ে ছবিটা দেখছে।’
‘ঠিক আছে, মিসেস ‘বিশ্বাস। আপনার ছুটি।’
মিসেস বিশ্বাস ধন্যবাদ দিয়ে উঠে চলে গেলেন।
ফেলুদা জয়ন্তবাবুর দিকে ফিরল।
‘আমি একবার মিঃ সোমের সঙ্গে কথা বলতে চাই।’
‘বেশ ত, আমি তাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’
জয়ন্তবাবু ভিতরে চলে গেলেন।
‘দু মিনিটের মধ্যে সুদর্শন সোম এসে হাজির হলেন। আজ তিনি দাড়ি কামিয়েছেন কোনও একটা সময়, তাই তাঁকে একটু ভদ্রস্থ লাগছে। তিনি ফেলুদার সামনের সোফায় বসলেন, তাঁর মুখে চুরুট। কাল পার্টিতেও এঁকে চুরুট খেতে দেখেছি। কড়া গন্ধে ঘরটা ভরে গেল।
ফেলুদা প্রশ্ন শুরু করল।
‘আপনি কত দিন এ বাড়িতে রয়েছেন?’
‘বছর পনেরো হল। শকুন্তলা দেবীই আমাকে এ বাড়িতে থাকতে বলেন।’
‘আপনি এক কথায় রাজি হয়ে যান? পরের আশ্রিত হতে কোনওরকম দ্বিধা-সংকোচ বোধ করেননি?’
‘তখন আমার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে আসছে। এখন আমার বয়স সাতষট্টি। তখনই আমি পঞ্চাশের উপর। ডান হাতের বুড়ো আঙুলে আরথ্রাইটিস, তাই ছবি আঁকতে পারছি না। শকুন্তলা দেবীর অনুগ্রহে আমার তবু এটা সংস্থান হল। তা না হলে আমি যে কী করতাম জানি না। আমায় না খেয়ে মরতে হত। অবশ্য পরের চ্যারিটি ভোগ করছি এই নিয়ে অনেকদিন খুব সচেতন ছিলাম, মনটা খচ্খচ্ করত। কিন্তু এঁরাও আমার উপস্থিতি মেনে নিয়েছিলেন, শীলা আর প্রসেনজিৎ আমাকে খুব ভালোবাসত, তাই ব্যাপারটা ক্রমে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল।’
‘আপনার নিজের রোজকার বলে ত কিছুই নেই।’
‘দু’ একটা পুরানো ছবি মাঝে মাঝে অল্প দামে বিক্রি হয়। সে তেমন কিছুই না। সত্যি বলতে কি, আই অ্যাম পেনিলেস। জয়ন্তবাবু আমাকে প্রতি মাসে হাত খরচের জন্য কিছু টাকা দেন, আর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাটা রয়েছে। চুরুটের অভ্যাসটা অনেক চেষ্টা করেও ছাড়তে পারিনি। তবে অনেক কমিয়ে দিয়েছি।’
‘এই চুরির ব্যাপারে আপনার কাউকে সন্দেহ হয়?’
মিঃ সোম একটু ভেবে বললেন, ‘চাকরদের কাউকে হয় না।’
‘তবে কাকে হয়?’
মিঃ সোম আবার চুপ করে গেলেন। ফেলুদা বলল, ‘আপনি ইতস্তত করলে কিন্তু আমার কাজটা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। আপনি নিশ্চয়ই চান যে শকুন্তলা দেবীর হারটা আবার উদ্ধার হোক।’
‘তা ত বটেই।’
‘তা হলে বলুন আপনার কাউকে সন্দেহ হয় কি না।’
‘একজনকে হয়।’
‘কে সে?’
‘প্রসেনজিৎ।’
‘কেন এ কথা বলছেন?’
‘প্রসেনজিৎ আর আগের মতো নেই। সে অনেক বদলে গেছে। আমার ধারণা সে কুসঙ্গে পড়েছে। হয়তো জুয়া খেলে, নেশা করে, তার জন্য তার টাকার দরকার পড়ে। চাকরি-বাকরি ত কিছুই করে না। বাপ তাকে যা দেন তাতে তার চলে না। সে আমার কাছ থেকে পর্যন্ত টাকা ধার চায়। আমি তাকে অনেক বুঝিয়েছি, কিন্তু আমার কথায় সে কানই দেয় না।’
‘আই সী…। কাল যখন সিনেমা হচ্ছিল তখন কাউকে নড়াচড়া করতে বা জায়গা পরিবর্তন করতে দেখেছিলেন?’
‘আজ্ঞে না। আমি পর্দায় ছবি ছাড়া আর কিছুই দেখিনি।’
‘ঠিক আছে, মিঃ সোম। অনেক ধন্যবাদ। এবার আপনি যদি শীলাকে একটু পাঠিয়ে দেন।’
মিঃ সোম শীলার খোঁজে চলে গেলেন।
অল্পক্ষণের মধ্যেই শীলা এসে পড়ল। তার পরনে সালওয়ার কামিজ, গায়ে কোনও গয়না নেই। একেবারে আধুনিকা।
‘কী করছিলে, শীলা?’ শীলা সোফায় বসার পর ফেলুদা প্রশ্ন করল।
‘একটা আর্টিক্ল লিখছিলাম।’
‘খবরের কাগজের জন্য?’
‘হ্যাঁ।’
‘কী বিষয়?’
‘ঘর কী করে সাজাতে হয় তাই নিয়ে।’
‘তুমি কি ইনটিরিয়র ডেকোরেশনে ইন্টারেস্টেড নাকি?’
‘হ্যাঁ। ওটাকেই আমার প্রোফেশন করার ইচ্ছে আছে।’
‘ও বিষয় শিখেছ কিছু?’
‘এমনি কিছু শিখিনি, কিন্তু ও বিষয় অনেক বই পড়েছি।’
‘আঁকতে পার?’
‘মোটামুটি। ছেলেবেলায় সুদর্শনকাকু আমাকে খুব এনকারেজ করতেন। যখন আমার বারো-তেরো বছর বয়স।’
‘তোমার দাদার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক কিরকম?’
‘আগে দু’জনে খুব বন্ধু ছিলাম। এখন দাদা বদলে গেছে। আমার সঙ্গে প্রায় কথাই বলে না।’
‘তাতে তোমার খারাপ লাগে না?’
‘আগে লাগত, এখন অভ্যাস হয়ে গেছে।’
‘কাল রাত্রে হারটা আমাদের দেখিয়ে আবার ঠিক জায়গায় রেখেছিলে ত?’
‘নিশ্চয়ই। চাবিও ঠিক জায়গায় রেখেছিলাম।’
‘তারপর সেটা কী ভাবে উধাও হল সে বিষয়ে তোমার কোনও ধারণা আছে?’
‘আমার কী করে থাকবে?’ শীলা একটু হেসে বলল। ‘বরং আপনার থাকা উচিত। আপনি ত ডিটেকটিভ।’
‘ডিটেকটিভরা ত প্রশ্ন করেই তাদের তদন্ত করে, সেটা নিশ্চয়ই তুমি জান।’
‘তা জানি।’
এই কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গেই দরজায় বেলের শব্দ হল। সুলেমান দরজা খুলে দিতে প্রসেনজিৎ ঢুকল। সে আমাদের দেখে যেন একটু হকচকিয়ে গেল, কিন্তু তার পরেই সামলে নিয়ে বলল, ‘ডিটেকটশন চলছে বুঝি?’
ফেলুদা বলল, তোমার বোনকে প্রশ্ন করছিলাম কালকের ব্যাপার নিয়ে। এবার ভাবছি তোমাকে করব, যদি তোমার আপত্তি না থাকে।’
‘আপত্তি আছে বই কী। পুলিশও আমাকে জেরা করার চেষ্টা করেছিল। আমি কোনও কথার জবাব দিইনি।’
‘কিন্তু আমি ত পুলিশ নই।’
‘ইট মেক্স নো ডিফারেন্স। কোনও কথার জবাব আমি দেব না।’
‘তা হলে কিন্তু তোমার উপর সন্দেহ পড়তে পারে।’
‘পড়ুক। আই ডোন্ট কেয়ার। শুধু সন্দেহে ত আর কিছু হবে না। প্রমাণ চাই, সেই হারটা খুঁজে পাওয়া চাই।’
‘বেশ, তুমি যখন কো-অপারেট করবে না তখন আমাদের দিক থেকেও বলার কিছু নেই। আমরা তোমাকে ফোর্স করতে পারি না।’
ফেলুদা উঠে পড়ল, আর সেই সঙ্গে আমরা দু’জনও।
কিন্তু ফেলুদার কাজ শেষ হয়নি। সে বলল, ‘আমি এবার বাড়ির প্ল্যানটা দেখতে চাই।’
শীলা বলল, ‘চলুন, আমি আপনাকে ভিতরে নিয়ে যাচ্ছি।’
যা দেখলাম তা মোটামুটি এই—বৈঠকখানার পরেই খাবার ঘর, তারপর জয়ন্তবাবু আর সুনীলা দেবীর বেডরুম, তার সঙ্গে বাথরুম। এই বেডরুমের দু’পাশে আরও দুটো বাথরুম সমেত বেডরুম, সে দুটোর একটাতে থাকে শীলা, অন্যটায় প্রসেনজিৎ। জয়ন্তবাবুর ঘর থেকে দুটো ঘরে যাবার জন্য দরজা আছে। প্রসেনজিতের ঘরের পাশে একটা ছোট্ট গেস্টরুম আছে তাতে থাকেন মিঃ সোম।
প্ল্যানটা দেখে বৈঠকখানায় ফিরে এলে শীলা ফেলুদাকে বলল, ‘আমি কিন্তু দু-একদিনের মধ্যেই অটোগ্রাফের খাতা নিয়ে আসছি।’
‘আমি ত বলেইছি।’ ফেলুদা বলল, ‘যখন ইচ্ছে এস—তবে একটা ফোন করে এস। আমি ত এখন তদন্তে জড়িয়ে পড়েছি—কখন কোথায় থাকি বলতে পারি না। ভালো কথা—তোমার বাবাকে একবার আসতে বলবে? একটু দরকার ছিল।’
শীলা জয়ন্তবাবুকে পাঠিয়ে দিল।
‘হল আপনার কোয়েশ্চনিং?’ ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন।
‘তা হল, তবে আপনার ছেলে কোনও প্রশ্ন করতে দিল না।’
জয়ন্তবাবু আক্ষেপের ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বললেন, ‘প্রসেনজিৎ ওরকমই। ওর আশা আমি প্রায় ছেড়ে দিয়েছি।’
‘যাই হোক্—আপনাকে ডাকার কারণ—মিঃ সাল্ডান্হা কি এখনও দোকানে থাকবেন?’
‘এখন ত সাড়ে পাঁচটা—এখনও নিশ্চয়ই থাকবে।’
‘তা হলে ওঁর দোকানের ঠিকানা আর টেলিফোন নম্বরটা যদি দেন।’
জয়ন্তবাবু তখনই টেলিফোনের পাশে রাখা প্যাড থেকে একটা পাতা ছিঁড়ে ঠিকানা আর ফোন নম্বর লিখে ফেলুদার হাতে দিলেন।
‘এখান থেকেই ফোন করে নিই?’ বলল ফেলুদা।
‘সার্টেনলি।’
ফেলুদা ফোন করতেই ভদ্রলোককে পেয়ে গেল। উনি তখনই ফেলুদাকে চলে আসতে বললেন।
‘আরেকজনের সঙ্গে কথা বলা বাকি থেকে যাচ্ছে’, বলল ফেলুদা, ‘তিনি হলেন আপনার শালা রতনলালবাবু। মিঃ সুকিয়াসকে কাল প্রশ্ন করব।’
‘রতনলাল থাকে ফ্রেজার রোডে একটা ফ্ল্যাটে। তার ঠিকানা আর টেলিফোন নম্বরও আপনাকে দিয়ে দিচ্ছি। তাকে পাবার ভালো সময় হচ্ছে সন্ধ্যা সাতটার পর।’