৫. নাম না জানা উত্তেজনা

০৫.

সুলিভ্যানরা অনুভব করল যে পয়েন্ট ব্রিজে এক নাম না জানা উত্তেজনা ছড়িয়ে আছে।

বড় রাস্তা দিয়ে গাড়িটা ঘুরিয়ে কয়েদখানার পাশ দিয়ে হোটেলের দিকে যেতে গিয়ে, কয়েদখানার পাশে একটা ছোট জটলা দেখে ফ্রাঙ্ক গাড়ির গতি কমিয়ে আনল।

ফ্রাঙ্ক বলল, কি ব্যাপার বলো তো?

যাইহোক আমাদের মাথা ঘামানোর কিছু নেই।

হোটেলে ঢুকলে রিসেপশনের লোকটি জানতে চাইল কেমন ঘর চাই।

দু-খাটের একখানা, আর কাল সকাল সাড়ে আটটার সময় কফি আর গরম রোলের সঙ্গে ঘরে খবরের কাগজ পাঠিয়ে দেবেন।

ওরা লিফটে করে হোটেলের ওপরদিকে উঠতে লাগল ঠিক তখনি হাতুড়ি পেটানোর ভীষণ শব্দে হোটেলের নীরবতা ভেঙ্গে খানখান হয়ে গেল।

ওদের সঙ্গে যে লোকটি ঘর দেখাতে যাচ্ছিল সে বলল, ফাঁসিকাঠ বানানো হচ্ছে।

ফ্র্যাক বলল, কেন বানাচ্ছে? উত্তরটা অবশ্য জানত।

ফাঁসিতে ঝোলাবে বলে।

কার ফাঁসি?

এর মধ্যেই ওদের ঘরটা এসে গেল। খুব সাধারণ ঘর।

কার ফাঁসি বললে না তো?

 ওয়ালটনভিলের সেই খুনেটার।

এবার কেটে পড়ো।

ফ্র্যাঙ্ক ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে হাতুড়ি পেটার আওয়াজ শুনছিল সে বলে উঠল, ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে কেমন লাগে কে জানে। কখনো ভাবিনি।

ফ্রাঙ্ক বলল, কিন্তু আমাদের ভাগ্যেও এমন হতে পারে।

ম্যাক্স বলল, এবার শুয়ে পড়ো আমাদের ঘুমের দরকার।

ফ্রাঙ্ক বলল, আমার যে ঘুম আসছেনা।

 ম্যাক্স চোখ বুজে ফ্র্যাঙ্কের কথা চিন্তা করছিল।

সে বেশ কয়েকদিন ধরে ওকে লক্ষ্য করছিল। ফ্র্যাঙ্ক যদিও মুখে কিছু বলেনি কিন্তু ম্যাক্সের সন্দেহ দিনের পর দিন ফ্র্যাঙ্কের স্নায়ুগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে। হয়তো আর বেশিদিন ফ্র্যাঙ্ক তার কাজে লাগবে না। কিন্তু এটা ভাবতে তার ভাল লাগল না। সেই স্কুলে পড়ার দিন থেকে তাদের দুজনের পরিচয়। একসঙ্গে তারা ছুরি খেলা শিখেছিল।

কিছুক্ষণ পরে ওরা দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম ভাঙল সকাল সাড়ে আটটায়। যখন কফি আর রোলের সঙ্গে উত্তেজনা নিয়ে পরিচারিকা ওদের ঘরে ঢুকল।

ফ্র্যাঙ্ক চায়ের কাপটা বিছানার পাশে টেবিলে রেখে বলল, হয়তো আর কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওরা লোকটাকে ফাঁসিকাঠে ঝোলাবে।

ম্যাক্স কলঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, রোলগুলো খুব একটা গরম নেই।

ম্যাক্সের দাড়ি কামানো মাত্র শেষ হয়েছে, ঠিক এমন সময় ফাঁসিকাঠ থেকে একটা তীব্র আওয়াজ শোনা গেল। ম্যাক্স তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হল না। সে নিজের ক্ষুরটা পরিষ্কার করতে লাগল। তারপর জানলা দিয়ে নীচে তাকিয়ে দেখল বিশাল জমায়েত।

ম্যাক্স ভাবল শালা মড়া খেকো শকুনের দল।

এরপর শোবার ঘরে ঢুকে ম্যাক্স দেখল যে ফ্র্যাঙ্ক চা বা রোল স্পর্শও করেনি।

 ম্যাক্স পোশাক পরে নিল। তারপর ফ্র্যাঙ্ককে বলল, আমি এখুনি আসছি। তুমি এখানেই আমার অপেক্ষায় থাকো।

ফ্র্যাঙ্ক তার দিকে তাকিয়ে আছে সে কোনও উত্তর দিল না।

.

শেরিফের নোংরা অফিসঘরে ঢুকে ম্যাগার্থ বলল–কি খবর আছে নাকি কিছু?

শেরিফ উত্তর দিল এই মাত্র একটা লোককে ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে এলাম। তারপর বিকৃত মুখে বলল, একটা খবর পেয়েছি, গতকাল দুপুরবেলা প্যাকার্ড ক্লিপারটাকে কিস্টন থেকে ক্যাম্পভিলের দিকে এগিয়ে যেতে দেখা গেছে। কিন্তু তারপর আর কোনও খবর নেই, মেয়েটারও কোন পাত্তা নেই। তবে ক্যাম্পভিলের শেরিফ লক্ষ্য রাখছে, তেমন কিছু হলে আমরা খবর পেয়ে যাবো।

 ম্যাগার্থ টেবিলের ধারে বসে উদ্বিগ্নসুরে বলল, আমি ভাবছি মেয়েটা সত্যিই সুলিভ্যানদের খপ্পরে পড়ল কিনা। ওরা লারসনকে খতম করার জন্য একটা চেষ্টা করবেই, অবশ্য মেয়েটাকে যদি ওরা পাকড়াও করে তাহলে ওকে বিশেষ কোন জায়গায় লুকিয়ে রেখেই স্টিঙের খোঁজে বেরোবে। আচ্ছা আপনার কি মনে হয় না, যে ক্যাম্পভিলের আশেপাশের সমস্ত জায়গাগুলো আমাদের তন্ন তন্ন করে খোঁজা উচিৎ।

সেই ব্যবস্থা তো করেছি। ওরা যদি প্যাকার্ডটা নিয়ে আবার এখানে ফিরে আসতে চেষ্টা করে, সে জন্য পয়েন্ট ব্রিজে ঢোকার প্রতিটি রাস্তার দিকে কড়া নজর রাখা হয়েছে।

খুব ভালো এছাড়া এখন আর আমাদের তেমন কিছু করার নেই।

ম্যাগার্থ বলল, আমি এখন ওদিককার খোঁজ খবর নিতে মিস ব্যানিঙের বাড়ি যাচ্ছি। ডাক্তার কোবারের সঙ্গে এই মাত্র দেখা করে এলাম তিনি বললেন লারসন হয়তো এ যাত্রায় বেঁচে যাবে।

শেরিফ বিকৃত মুখে বলল, শোনো ওই হার্টম্যান কিন্তু আবার এখানে এসেছিল।

ভালো কথা মনে করেছেন ম্যাগার্থ বললো, আমি আপনাকে আগেই বলেছিলাম, আমরা হার্টম্যানের অতীত সম্বন্ধে খবরাখবর সংগ্রহ করেছি। তা সে সব খবর আমাদের হাতে এসে পোঁছেছে। লোকটা খোলা বাজারে ফাটকা খেলে প্রচুর লোকসান করা সত্ত্বেও বরাবর এক বিচিত্র উপায়ে টাকা মিটিয়ে দেয়। আমি বুঝেছি এই টাকা ও ক্যারলের তহবিল থেকেই ভেঙ্গেছে। এই ব্যাপারে আরও কিছু অনুসন্ধান চালাতে পারলে হার্টম্যানকে বেশ কিছুদিনের জন্য জেলে পুরে দেওয়া যাবে।

শেরিফ বলল, ওঃ তোমরা অর্থাৎ খবরের কাগজের লোকেদের মতো সন্দেহবাই পৃথিবীতে আর নেই। তবে মেয়েটাতো সত্যি ভয়ানক ওকে আমাদের তাড়াতাড়ি খুঁজে বার করতে হবে।

ম্যাগার্থ বলল, আমার কিন্তু তা মনে হয় না। মেয়েটার সঙ্গে কথা বলে ওকে আমার স্বাভাবিক বলেই মনে হয়েছে।

সে ব্যাপারটা ডাক্তার ট্রেভার্স আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আসলে ওর মনের দুটো ভাগ। কয়েক সপ্তাহ ও খুব স্বাভাবিক হয়েই থাকে, কিন্তু রোগের আক্রমণ হলেই একেবারে ভয়ানক হয়ে ওঠে।

আমি কিন্তু সেটা ভাবি না, বুঝলেন শেরিফ কারণ আমি ওর সঙ্গে কথা বলে দেখেছি আপনি তা দেখেননি।

কয়েদখানার সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসার সময় পাশের মোটরগ্যারেজ থেকে মালিক জেডসন। ম্যাগার্থকে ডাকল।

জেডসনের সঙ্গে সামান্য বাক্যবিনিময় করে ম্যাগার্থ গাড়িতে উঠে পড়ল।

ম্যাক্স হোটেলের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে সব শুনল সে এগিয়ে এসে জেডসনকে বলল, আচ্ছা ওই ভদ্রলোকটি কি ম্যাগার্থ? মানে খবরের কাগজের লোক?

হ্যাঁ।

আমার কপালটা খুব খারাপ আমার ওকে খুব দরকার। আচ্ছা উনি কোথায় থাকেন জানেন কি?

জেডসন মাথা নেড়ে বলল, বোধহয় মিস ব্যানিঙের বাড়িতে।

আচ্ছা ওই মিস ব্যানিঙটি কে?

গ্রাস হিলে ওর একটা কমলালেবুর বাগান আছে, এই বলে জেডসন চুপ করে গেল।

 ম্যাক্স বলল, গ্রাস হিল? আচ্ছা ধন্যবাদ। এই বলে দ্রুত সে হোটেলে ঢুকে পড়ল।

হোটেলের বিছানায় শুয়ে সুলিভ্যানরা যখন ঘুমানোর চেষ্টা করছিল তখন স্যাম গারল্যান্ড অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে নিরবিচ্ছিন্ন অন্ধকার পথ ধরে পয়েন্ট ব্রিজের দিকে এগিয়ে চলছিল।

সে আনন্দ আর উত্তেজনায় অধীর হয়ে উঠেছিল। কারণ সে ক্যারলকে ধরতে পেরেছে। অতএব, পাঁচ হাজার ডলারের পুরস্কারটা তার ভাগ্যেই ঝুলছে। টাকাটা সম্পূর্ণ তার হয়ে যাবে। সে ইচ্ছেমতো খরচ করতে পারবে।

হঠাৎ গারল্যান্ডের মনে হলো মেয়েটাকে স্টেচারের সঙ্গে বেঁধে রাখাই উচিৎ ছিল। কারণ পাগলদের মাথায় যে কখন কি খেয়াল চাপবে কেউ বলতে পারে না। কিন্তু শেষ অবধি অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে কোন শব্দ না পেয়ে সে ভাবল এখন বৃথা সময় নষ্ট না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্লেনভিতে ফিরে যাওয়াই উচিৎ। কিন্তু সে তখন জানতো না, অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে দুটি মেয়ে নিজেদের মধ্যে মিনমিনে গলায় কথা বলছিল।

হেটি সামার্স ক্যারলের সহযাত্রী মহিলা বেশ কয়েকবছর অন্য একটা হাসপাতালে ভর্তি ছিল। প্রথম দিকে ভাল থাকলেও এখন ওর খুন খারাপির দিকে মন হয়েছে।

ক্যারল হেটি সামার্সের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারল সে একটা পাগলীর সঙ্গে একসঙ্গে বন্দী হয়ে আছে।

হেটি ফিসফিসে গলায় হেসে বলল, ওরা তোমাকেও ধরে ফেলেছে। না, লোকটা চালাক আছে ঠিক চিনে নিয়েছে।

হেটি বলল, ওরা তোমাকে গ্রেভিউতে নিয়ে গিয়ে বন্ধ করে রেখে দেবে।

গ্লেনভিউ নামটা ক্যারলের স্মৃতির এক সুদূর অতীতে গিয়ে আঘাত করলো। নিজের মনে মনে বলল, আমাকে পালাতেই হবে। তারপর ছুটে গিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের দরজা খুলতে চেষ্টা করল।

হেটি হেসে বলল, ওরা তোমাকে পালাতে দেবে না। তুমিও যে আমার মতো পাগল।

আমি পাগল না।

 দ্যাখো বোকা মেয়ে এভাবে তুমি পালাতে পারবেনা। তুমি কি সত্যিই পালাতে চাও।

ক্যারল হেটির দিকে তাকিয়ে বলল,আমি পালাবোই।আমরাদুজনমিলে চেষ্টাকরলে সেটা হয়।

 কিন্তু আমার বাধনগুলো। তোমাকে খুলে দিতে হবে।

না ক্যারল সিউরে উঠে বলল।

তুমি আমাকে ভয় পাচ্ছো আরে আমরা দুজনেই তো এক দলের। একজন আর একজনকে মারবো কেন?

দয়া করে আমাকে পাগল বলো না। আমি পাগল নই। ক্যারল বলল, এছাড়া তোমাকে খুলে দিলেই বা আমি বেরবো কি করে।

হেটি ফিসফিসিয়ে বলল, আমাকে খুলে দিয়ে তুমি দরজায় ধাক্কা মারতে মারতে চেঁচাতে শুরু করবে। ব্যাপারটা বোঝার জন্য লোকটা তখন এখানে আসবে,কারণ এখানে কি হচ্ছে সেটা দেখার দায়িত্ব ওর। তারপর ও যখন তোমার সঙ্গে কথাবার্তা বলবে আমি তখন এগিয়ে যাবো ওর দিকে। তারপর দুজনে মিলে অতি সহজেই ওকে কাবু করে ফেলবো।

পয়েন্ট ব্রিজে পৌঁছুতে যখন আর মাত্র মাইল খানেক বাকি, তখন অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর থেকে দরজা পেটানোর আওয়াজ আর সেই সঙ্গে প্রচণ্ড চীৎকার শুনতে পেল স্যাম। সে চাইছিল না ক্যারল আহত হোক। ওকে অবিকৃত অবস্থায় ডাক্তার ট্রেভার্সের হাতে তুলে দেওয়াই ওর উদ্দেশ্য যাতে করে পাঁচ হাজার ডলার পুরস্কার পেতে কোনো অসুবিধা না হয়।

সে খিস্তি দিতে দিতে গাড়ি থেকে নেমে এসে অ্যাম্বুলেন্সের দরজা খুলে ভেতরে উঁকি দিল।

সে স্বল্প আলোয় দেখলো ক্যারল উল্টোদিকের দেওয়ালে ঝাঁপিয়ে পড়ে চীৎকার করছে। হেটি সার্মাস তেমনি শুয়ে কম্বলের নীচ থেকে ওর দিকে তাকিয়ে অর্থহীনভাবে হাসতে লাগলো। গ্যারল্যান্ড ভাবলো ওদিক থেকে চিন্তার কিছু নেই এই ভেবে সে ক্যারলকে ধরে পেছন থেকে হাত মুচকে দিল। তারপর তাকে স্টোরের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো।

ঠিক সেই মুহূর্তে হেটি কম্বল সরিয়ে উঠে দাঁড়াল। গ্যারল্যান্ড পিছনে ফিরে দেখলো হেটি নেমে পড়েছে।

গ্যারল্যান্ড ভাবলো যে দুজনের সঙ্গে একা পারা যাবে না, সে নেমে গাড়ির দরজা বন্ধ করতে গেল কিন্তু হেটি তার গলা প্রাণপন জোরে পেঁচিয়ে ধরল। এই সুযোগে ক্যারল গাড়ি থেকে নেমে সামনের রাস্তা ধরে ছুটতে লাগলো।

গ্যারল্যান্ড ভাবল যে হেটি পালালে কোনো ক্ষতি নেই তখন সে হেটিকে কোনমতে ছাড়িয়ে ক্যারলের পিছনে দৌড়ে ক্যারলকে ধরতে গেল।

যেই সে ক্যারলের দিকে ছুটে গেল তখনি হেটি রাস্তা থেকে একখণ্ড বড় পাথর তুলে গ্যারল্যান্ডের মাথা লক্ষ্য করে সবেগে পাথরটা ছুঁড়ে দিল।

.

তখন দুপুর হয়ে গেছে। পাহাড়ের সোনালি কমলা বাগান রোদে স্নান করছে। ডেপুটি সাহেব জর্জ স্টাম টুপিটা মাথার ওপরে ঠেলে দিয়ে মুখে সিগারেট ঝুলিয়ে সাদা চত্বরে বসে ছিল। ভাবছিল গ্রাসহিলের মতো জায়গায় পাহারা দেওয়া খুব সহজ। বিশেষ করে গৃহলক্ষী যদি ভিডা ব্যানিঙের মতো সুন্দরী আর অতিথি পরায়না হন। এছাড়া কাজও কিছু নেই। শুধু বন্দুক হাতে নিয়ে সূর্যস্নান করা। কি আরামের কাজ। সুলিভ্যানদের উপর নজর রাখা। যদিও সে নিজে মনে করে যে আসলে সুলিভ্যানদের কোনও অস্তিত্ব নেই।

স্টাম যদি ঘুণাক্ষরেও টের পেত যে মাত্র দুশোগজ দূরেই লম্বা ঘাসের আড়ালে শরীর ডুবিয়ে সুলিভ্যানরা গত আধঘণ্টা ধরে উদগ্র দৃষ্টিতে এ বাড়ির প্রতিটা কার্যকলাপের দিকে নজর রাখছে।

ম্যাক্স বলল, মনে হয় লোকটা এখানেই আছে। না হলে এখানে পাহারা থাকবে কেন?

আমি দেখব এখানে কজন পাহারাদার আছে।

বাড়ির ভেতরের অংশ বেশ ঠাণ্ডা সেখানে একটা হুইস্কির গ্লাস হাতে নিয়ে ম্যাগার্থ বসেছিল।

 ভিডা ওর সামনে এসে বলল, এত সকালে তুমি এখানে আসবে ভাবতেই পারিনি।

ভেবেছিলাম ভেতরে গিয়ে রোগীকে দেখে আসবো। নার্স বলল, রাতটা ভালই কেটেছে।

 ক্যারল ব্লানডিসের কোনও খবর নেই?

নাঃ সুলিভ্যানদেরও কোনও খবর নেই।

 ভিডা বলল সুলিভ্যানরা আছে বলে স্টাম বিশ্বাস করে না।

ওরা হাজির হলে, অবশ্য আশা করি আসবে না তখন সবই বিশ্বাস করবে।

 টেলিফোন বাজলে ম্যাগার্থ ফোন ধরে বলল, হ্যালো।

 শেরিফ বলল, ম্যাগার্থ চলে এসো এখনি।

 ভিড়া বলল, যখন তোমায় কাছে পাই তখনি তোমার ডাক আসে।

আবার একটা পাগলী পালিয়েছে তাই খবর জোগাড় করতে হবে। কি করব যেতে ইচ্ছে করে না কিন্তু রুটির জোগাড় তো করতে হবে।

বাইরে এসে ম্যাগার্থ স্টামকে বলল, কি খুব মজায় আছেন তো?

হ্যাঁ।

তোমার কাজ তো সুলিভ্যানদের ওপরে লক্ষ্য রাখা।

সুলিভ্যানরা ম্যাগার্থের চলে যাওয়া স্থির দৃষ্টিতে লক্ষ্য করলো। এরপর এক বোতল লেমনেড বার করে ম্যাক্স চুমুক দিতে লাগলো। তারপর বোতলটা ফ্র্যাঙ্কের হাতে দিল।

ম্যাক্স বলল, লোকটি যদি এখানে থাকে তাহলে ওকে খুন করতেই হবে। অবশ্য তুমি যদি জেলে বসে কঁসিকাঠের আওয়াজ শুনতে চাও তাহলে অন্য কথা।

ফ্র্যাঙ্ক মুখ কুঁচকে বলল–অনেক পয়সা জমে গেছে, এখন কাজ ছেড়ে দিতে চাই।

ম্যাক্স বলল–এখনও আমরা এ কাজ ছাড়ার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত নই।

পাহাড়ী রাস্তা ধরে দ্রুতবেগে পয়েন্ট ব্রিজের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে ম্যাগার্থ শিস্ দিচ্ছিল। সহসা তার মনে হল ভিডার কমলালেবুর বাগানের ম্যানেজার হলে তো দিব্যি সবসময় ওর কাছাকাছি থাকতে পারবে।

ব্লানডিশ বাড়ির মেয়েটাকে খুঁজে পেলে ওকে স্থিতু করার পর প্রস্তাবটা ভিডার কাছে রাখবে মনে করল।

হঠাৎ ম্যাগার্থ অতর্কিতে ব্রেক চাপতেই রাস্তা থেকে পিছলে গিয়ে একটা খাদের সামনে এসে গাড়িটা থেমে গেল। এবং পরক্ষণেই সে দেখল ক্যারল ছিন্নভিন্ন পোশাকে তার দিকে এগিয়ে আসছে।

ওর কাছে এসে ক্যারল বলল, স্টিঙ কোথায়? ও ভাল আছে তো?

ভালোই আছে। অবশ্য ও এখনও অসুস্থ।

ক্যারল কেঁদে ফেলল। তাকে গাড়িতে বসিয়ে ম্যাগার্থ খুব জোরে গ্রাস হিলের দিকে গাড়ি ঘুরিয়ে দিল।

.

পয়েন্ট ব্রিজের শহরতলী অঞ্চলের একটা শুড়িখানা থেকে বেরোতে গিয়ে ওই দিনই হেটি সামার্স ধরা পড়ে।

 ঘটনাস্থলে উপস্থিত শেরিফ ক্যাম্প ম্যাগার্থের খোঁজে চারিদিকে তাকাচ্ছিলেন। তিনি ভাবলেন যে লোকটাকে কখনো দরকারের সময় পাওয়া যায় না। আমার একটা ছবি তুলিয়ে রাখবো ভেবেছিলাম এরমধ্যে ডাক্তার ট্রেভার্স একটা গাড়ি থেকে নেমে শেরিফের কাছে এসে বললেন যে হেটি সামার্স ক্যারলকে বাঁচানোর জন্য গ্যারল্যান্ডকে খুন করেছে। ও ক্যারলের যা বর্ণনা দিয়েছে তা একেবারে সঠিক। তার মানে মেয়েটা আবার পয়েন্ট ব্রিজেই ফিরে এসেছে।

তাহলে তো এক্ষুনি কাজে নেমে পড়তে হয়। এরমধ্যে হার্টম্যান এসে হাজির হল বলল-শুনলাম একটা পাগলী ধরা পড়েছে। ক্যারল নাকি?

না, অন্য মেয়ে রোগী ধরা পড়েছে।

শুনে হার্টম্যান রেগে বলল, তা ক্যারলকে ধরার চেষ্টা করুন।

চেষ্টা তো করছি।

.

ম্যাগার্থ বিরাট চত্বরের মধ্যে পায়চারি করছিল। ভিডা এগিয়ে এসে বলল, মেয়েটাকে কিন্তু আমার বেশ ভাল লাগল।

ম্যাগার্থ বলল, মেয়েটা কেমন আছে?

ভাল করে বিশ্রাম নিলে সব ঠিক হয়ে যাবে। ও এখন স্নান করছে। আচ্ছা ওকে একটু ডাক্তার কোবারকে দেখালে হয় না। উনি হয়তো ওর ঘুমের বন্দোবস্ত করে দিতে পারেন।

সুলিভ্যানরা দেখলো, ম্যাগার্থ চত্বরে বেরিয়ে এসে স্টামের পাশে বসলো; স্টিঙ এ বাড়িতেই আছে সে সম্বন্ধে তারা নিঃসংশয়। কারণ তিনতলার একটা ঘরে তারা একজন নার্সকে জানলার সামনে মাঝে মাঝে বসতে দেখেছে।

ম্যাক্স বলল, চলো এখন কিছু খেয়ে নিই। অন্ধকার হলেই বাড়িতে ঢুকে পড়বো।

সন্ধ্যাবেলায় ক্যারলের ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘুম ভাঙতেই একটা অস্বস্তিকর অনুভূতি ওর মনে ছড়িয়ে পড়ল। ম্যাগার্থ বলেছে এবাড়িতে যে লারসন আছে তা সুলিভ্যানরা আবিষ্কার করতে পারবে না এছাড়া দিনরাত পাহারার ব্যবস্থা আছে।

সে উঠে জানালার কাছে গেল। মনে হল দূরের ঝোঁপের মধ্যে বিপদ ওত পেতে আছে। এর মধ্যে ভিডা ঘরে ঢুকল, বলল একি ক্যারল তুমি উঠে পড়েছে।

তারপর ভিডাও জানালার সামনে গেলে ক্যারল বাইরে হাত দেখিয়ে বলল, ওখানে বিপদ ওত পেতে আছে। ওই যে ওই গাছগুলোর কাছে।

ঠিক আছে আমি ফিলকে বলছি। তারপর বাড়ির মাথায় এসে ডাকল ফিল।

ফিল বলল–কি ব্যাপার কিছু ঘটেছে নাকি?

হা ক্যারলের মনে হচ্ছে সুলিভ্যানরা এসে গেছে।

ঠিক আছে আমি পাহারাদারকে বলতে যাচ্ছি তুমি আর ক্যারল নীচে এসো।

এমন সময় রান্নাঘরের দরজা ঠেলে ম্যাগার্থকে ভেতরে ঢুকতে দেখে স্টাম কুর্সিতে সোজা হয়ে বসল। বলল, কি ব্যাপার কিছু হয়েছে নাকি।

হতে পারে চলুন আপনি আর আমি বাইরেটা ঘুরে দেখে আসি।

সে বলল, আমি আপনার কথামতো চলবে না। ম্যাগার্থ বলল তাহলে শেরিফকে জিজ্ঞেস করি ও কি বলে, কিন্তু টেলিফোন তুলে দেখলো লাইন কাটা।

সে বলল, মনে হয় সুলিভ্যানরা লাইন কেটে দিয়েছে। এছাড়া এইমাত্র মিস ব্যানিঙ ক্ষেতের মধ্যে দুটো লোককে দেখতে পেয়েছে।

একথা আগে বলেননি কেন?

এদিকে চত্বরের একমাত্র প্রহরী, ম্যাসন, হাতের কাছে আলাদাভাবে বন্দুক রেখে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছিল।

স্টাম তাকে বলল, এর মধ্যে কাউকে দেখতে পেয়েছে।

না।

 ম্যাগার্থ তাকে বলল–আর একজন পাহারাদার কোথায়?

বাড়ির পেছন দিকে।

এই মুহূর্তে বাড়ির পেছন দিকে একটা ঘটনা ঘটছিলো।

সুলিভ্যানরাইতিমধ্যেই চত্বরে পৌঁছেগিয়েছিল। ম্যাক্সেরহাতে একটা লম্বাইস্পাতের ডাণ্ডাতার শেষপ্রান্তেপিয়ানোর তারে তৈরীএকটা ফাস।ফ্র্যাঙ্কেরবাহুস্পর্শ করল ম্যাক্স। ফ্র্যাঙ্ক থমকে দাঁড়িয়ে আলগা ভাবে ভারি ৪৫টা ধরে রইলে। ম্যাক্স গুঁড়ি মেরে এগিয়ে প্রহরীর পিছনে এসে দাঁড়াল তারপর লোকটার গলায় ফাঁসটা গলিয়ে দিয়ে তারের শেষ প্রান্তটা টেনে ধরলো। গলায় ফাঁস জড়িয়ে যাওয়ায় লোকটা কোনরকম শব্দ করতে পারছিল না, কিন্তু বড়জোর মাত্র সেকেন্ড দশেকের পরেই ওর শরীরটা নেতিয়ে পড়লো, মুখ দিয়ে ঝলকে ঝলকে রক্ত বেরিয়ে এল।

একটু পরেই মোড় বেঁকে পেছনের চত্বরের দিকে এগিয়ে এলো ম্যাগার্থ আর স্টাম।

ম্যাগার্থ বলল কই লোকটাকে তো দেখতে পাচ্ছি না। ও বোধহয় শুতে চলে গেছে।

স্টাম গলা চড়িয়ে ডাকল ও’ব্রায়েন–এই ও’ব্রায়েন।

কোনও সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না।

স্টামকে উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল, ওর তো এখানেই থাকার কথা।

ম্যাগার্থ বলল–ওকে মনে হয় রান্নাঘরে পাওয়া যাবে। ওরা ফিরে আসার মধ্যেই সুলিভ্যানরা ম্যাসনকেও সরিয়ে দিল। কিন্তু ওর রাইফেল আর টুপিটা কুড়িয়ে নিতে সময় পায়নি।

এবার ম্যাসনকেও না দেখে ম্যাগার্থ বলল এবারে দেখছি ম্যাসনও পালিয়েছে।

স্টাম তখন টর্চ জ্বালিয়ে উঠোনে ফেলল। দেখলো ম্যাসনের টুপি আর রাইফেল পড়ে আছে।

ম্যাগার্থ বলল, আলোটা নিভিয়ে দিন। জলদি ভেতরে চলুন।

ম্যাগার্থ বলল, আমি তো বলেই দিলাম সুলিভ্যানরা এসে গেছে। আরও প্রমাণ চান কি?

 এবার আপনি এখানে থাকুন। আমি ওপরে যাচ্ছি। সিঁড়ির মুখেই ভিডার সঙ্গে দেখা হল।

ভিডা বলল, সব ঠিক আছে তো?

ম্যাগার্থ বলল না ঠিক নেই। ওরা এখানেই ছিল পাহারাদার দুটোকে সরিয়ে দিয়েছে। টেলিফোনের তার কেটে দিয়েছে। এখান থেকে বেরুতে না পারলে কিচ্ছু হবে না।

আমি যাবো ক্ষেত পেরিয়ে ওভারসিয়ারের সঙ্গে দেখা করে লোকজন নিয়ে আসব।

এখন না, কারণ ওরা তোমাকে ধরে ফেললে আমরা সবশুদ্ধ ডুবে যাবো।

তারপর বলল, ক্যারল কোথায়?

 ভিডা বলল–স্টিঙের কাছে।

ম্যাগার্থ ও ভিডা স্টিঙের ঘরে ঢুকুল। দেখল ক্যারল ওর পাশে বসে আছে।

 লারসন বলল, ম্যাগার্থ তোমাকে ধন্যবাদ। আমি ক্যারলকে দেখেই অনেকটা ভাল হয়ে গেছি।

 নার্স বলল, স্টিঙের কিন্তু এখন কথা বলা উচিৎ নয় উনি এখনও খুব দুর্বল।

ম্যাগার্থ ক্যারলকে বাইরে ডেকে বলল, তুমি ঠিকই বলেছিলে। ওরা বাইরেই আছে। পাহারাদারদের মেরে ফেলেছে।

ক্যারল ফ্যাকাশে মুখে বলল, না ওরা কিছুতেই ওকে পাবে না।

ভিডা বলল, তাহলে আমি বরং যাই।

ম্যাগার্থ বলল, আমি চাই না তুমি বাইরে যাও।

 আমি যাচ্ছি।

সুলিভ্যানরা ঠিক এমনই কোনো সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। ফ্র্যাঙ্ক আর ম্যাক্স খিড়কির দরজার কাছে গা ঢেকে অপেক্ষা করছিল। ওরা জানত ম্যাগার্থ সাহায্যের জন্য কাউকে পাঠাবে।

ভিডা তুমি কিন্তু প্রাণপণে ছুটবে।

ভিডা বাইরে বেরিয়ে যেতেই অন্ধকারে মিশে গেল।

সুলিভ্যানরা দেখে মুচকি হাসল।

ক্যারলকে স্টিঙের দিকে নজর রাখতে বলে নার্সটা ওর পাশের ঘরে চলে গেছে। স্টাম সিঁড়ির নীচে বসে আছে।

স্টিঙ ঘুম থেকে উঠে ক্যারলের দিকে তাকাল। ক্যারলের দিকে তাকিয়ে হাসল।

স্টিঙ কথা বোলো না, তুমি অসুস্থ।

ক্যারল বলল, আমি কি পাগল

না তুমি পাগল নয়, স্টিঙ বলল।

 তুমি কিছু ভেবো না, সব ঠিক হয়ে যাবে।

.

শেরিফ কাম্প বলল, আর একবার টেলিফোন করে দেখো, আমি জানি, কেউ না কেউ ওখানে আছে।

কিন্তু অপারেটর বলল, কারো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। লাইনটা বিকল।

ডেপুটি লফটি বললো, কিছু গণ্ডগোল হয়েছে বলে মনে করছেন নাকি?

জানি না, জর্জকে বলেছিলাম দুঘণ্টা অন্তর টেলিফোন করতে। আসলে মিস ব্যানিঙের কিছু হলে আমার মোটেই ভাল লাগবে না। মেয়েটি ভারী সুন্দর।

লফটি বলল, একবার গিয়ে দেখবেন নাকি।

চলুন দেখা যাক ওখানে কোনোও গণ্ডগোল হল নাকি। এই বলে টেবিলের পেছনের তাক থেকে একটা রাইফেল নামিয়ে ক্যাম্প আর লফটি রওনা হল।

ক্ষেতের ভেতরের সরু পথ দিয়ে যেতে যেতে ভিডার মনে হচ্ছিলো, ও যেন ভুগর্ভের এক গুহাপথ দিয়ে এগিয়ে চলেছে। ও পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো একটা নিঃশব্দ ছায়ামূর্তি ওর দিকে এগিয়ে আসছে। ও প্রাণপণে ছুট দিল। কিন্তু মাত্র কয়েক গজ পথ যেতে না যেতেই ফ্রাঙ্ক ওর কাঁধের কাছটা খিমচে ধরল।

বাঁ হাত বাড়িয়ে ফ্রাঙ্ক ভিডার মুখ স্পর্শ করল। ভিডা কিছু দেখতে পাবার আগেই ক্ষিপ্রতম বেগে তার ডান হাতটা ওপরের দিকে উঠে এলো। তারপর রবার জড়ানো একটা ভারি অস্ত্র প্রচণ্ড বেগে ভিডার মাথার উপর নেমে এলো।

জর্জ স্টম হাত পা ছড়িয়ে নেবার জন্য উঠে দাঁড়াল। চৌকিদার দুটো যেমন নিঃশব্দে মসৃণভাবে উধাও হয়ে গেলে তাতে যে কোনও মুহূর্তেই দেওয়াল ফুড়ে সুলিভ্যানরা ঘরে ঢুকে পড়বে বলে তার আশঙ্কা হচ্ছিল।

সিঁড়ির মাথায় ম্যাগার্ধের পায়চারি করবার শব্দ শুনতে পাচ্ছিল স্টাম। মাঝে মাঝে ওকে ম্যাগার্থ সতর্ক করে দিচ্ছিলো। স্টামের এখন মনে হচ্ছিলো, এ কাজটা সেনা নিলেই ভালো করতো, এর চাইতে নিরাপদে শেরিফের অফিসে বসে থাকা অনেক ভালো।

 মাত্র কয়েক ফুট দূরে বৈঠকখানার দরজার ফাঁক দিয়ে স্টামকে লক্ষ্য করছিলো ম্যাক্স। আর ফ্র্যাঙ্ক দেওয়ালের সঙ্গেশরীর মিশিয়ে অন্ধকার বারান্দা ধরে ধীর পায়ে এগিয়ে আসছিল ওর দিকে।

সহসা স্টাম বাতাসে বিপদের গন্ধ পেল। হঠাৎ ইঁদুরে আঁচড়ানোর মতো শব্দ শুনে স্টাম ভাঙ্গা গলায় চেঁচিয়ে উঠলো। কে ওখানে?

সমস্ত বাড়িটা অন্ধকারে তলিয়ে গেছে। ম্যাগার্থ ওপর থেকে বলল–স্টাম আপনি ঠিক আছে তো। কিন্তু সে নিজের জায়গা থেকে বিন্দুমাত্রও নড়লো না।

সহসা স্টামের হাঁপ ধরার আওয়াজ শোনা গেল। তার পরেই সেই বীভৎস অন্ধকার থেকে এক হতভাগ্যের নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার আওয়াজ ভেসে এলো।

ম্যাগার্থ বুঝলো যে এবার তার পালা। কারণ স্টিওকে পেতে হলে এই সিঁড়ি বেয়েই সুলিভ্যানদের উঠে আসতে হবে।

আলো নিভে যেতে ক্যারল আর স্টিঙ দুজনে গল্প করছিল কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই ঘটনার তাৎপর্য উপলব্ধি করে ক্যারলের মনে হল ও বুঝি জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে। কিন্তু স্টিঙকে রক্ষা করার কথা মনে করে সে নিজেকে সজাগ করে তুললো।

স্টিঙ বলল মনে হয় ফিউজ তারটা ছিঁড়ে গেছে তবে ওরা এখুনি সব ঠিক করে দেবে বলে মনে হয়।

ক্যারলের মনে হলো আসল কথাটা এবার স্টিঙকে জানিয়ে দেওয়া উচিৎ। সে তাই স্টিকে জড়িয়ে ধরে বলল, ফিউজ নয় সুলিভ্যানরা। ওরা এবাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়েছে।

তুমি এতক্ষণ সেটা জানতে।

হ্যাঁ, তবে ম্যাগার্থ ও শেরিফের ডেপুটি বাইরে পাহারায় রয়েছে।

 ক্যারল বলল, স্টিঙ আমার ভীষণ ভয় করছে।

এদিকে ম্যাক্স ফ্র্যাঙ্ককে বলল, তুমি ম্যাগার্থ দেখো। আমি বাড়ির পেছন দিকে যাচ্ছি।

ক্যারল চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলে ম্যাগার্থকে ডাকল।

ম্যাগার্থ বলল–আর এগিয়ো না। ওরা এখানেই হলঘরে রয়েছে। স্টামকেও সরিয়ে দিয়েছে।

আপনি কিছুতেই ওদের স্টিঙের কাছে আসতে দেবেন না। ক্যারল মিনতি করে বলল।

না, ভিডা সাহায্য আনতে চলে গেছে।

ওদিকে সিঁড়ি দিয়ে ওঠার মতো অতি সহজে ধূম-নালীরা গা বেয়ে নিচু ছাদটায় উঠে এলো ম্যাক্স। তারপর কয়েক ফুট ওপরে জানলার কাঠে হাত রেখে শরীরের ভারসাম্য ঠিক করে অবলীলাক্রমে ভেতরের দিকে নিজেকে গলিয়ে দিল।

ক্যারল ফিরে এসে স্টিকে বলল, ম্যাগার্থ ওখানে একা কিন্তু ও বলেছে ওরা এখানে উঠে আসতে পারবে না।

কিন্তু আমার হয়ে ম্যাগার্থ লড়াই করবে তা আমি কিছুতে হতে দেব না। এই বলে কম্বল সরিয়ে ও উঠে বসল।

না তুমি যেও না, তুমি এখনও অসুস্থ।

 আমি জানি ওরা আমাকে চায়, কিন্তু যদি আমার কিছু হয়ে যায় তাহলে তুমি জেনে রাখো ক্যারল আমি তোমাকে খুব ভালবেসেছিলাম। আমার জীবনে আর কিছু নেই, কেউ নেই। ক্যারল বলো তুমি আমাকে ভালবাস।

হ্যাঁ বাসিই তো। ক্যারল ফুঁপিয়ে উঠল।

ম্যাগার্থ কিছু বোঝার আগেই একতীব্র আঘাতে ম্যাক্স ওকে অচেতন করে ফেলল। তারপর ফ্লাশলাইট জ্বালিয়ে ইঙ্গিত করতে ফ্র্যাঙ্ক দ্রুত সিঁড়ি টপকে উপরে উঠে এল।

পাহাড়ী পথ ধরে তীব্র বেপরোয়া গতিতে সগর্জনে এগিয়ে যাচ্ছিল ফোর্ড গাড়িটা।কাম্পবলল, আরে একটু সাবধানে চলো হে। ওখানে পৌঁছবার আগে শরীরটা টুকরো হয়ে যাক আমি চাই না।

কিন্তু আমাদের তাড়াতাড়ি পৌঁছতে হবে। না হলে মিসবানিঙের কিছুহয়ে যেতে পারে। সেটা নিশ্চয়ই আপনি চান না।

.

সহসা ক্যারলের পাদুটো যেন শরীরের বোঝা বইতে অসমর্থ হয়ে উঠল।বিছানার ওপর লুটিয়ে পড়ল ও। মস্তিষ্কটা যেন ফুলে ফেঁপে উঠে আবার কুঁচকে যাচ্ছে। সে দেখলো অতি ধীরে ধীরে পা ফেলে স্টিঙ দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

দরজার বাইরেই সুলিভ্যানরা অপেক্ষা করছিল। মুহূর্তের মধ্যে ম্যাক্সের টর্চ এক ঝলকা নিষ্ঠুর আলো ফেললো স্টিঙের বুকের ওপর।

পরক্ষণেই পর পর কয়েকটা গুলি চালিয়ে ম্যাক্স স্টিঙকে চিরদিনের মতো ঘুম পাড়িয়ে দিল।

 ফ্রাঙ্ক সামান্য শিউরে বলল, এই আমাদের শেষ কাজ ম্যাক্স।

ম্যাক্স বলল, আগে এখান থেকে বের হই চলল। তাড়াতাড়ি এসো।

ফ্র্যাঙ্ক ওকে অনুসরণ করতে যেতেই অন্ধকার থেকে একখানা অদৃশ্য হাত বেরিয়ে এসে ওর বাহু চেপে ধরল। সে ভাবল লারসন বুঝি আবার জীবিত হয়ে উঠেছে।

ফ্র্যাঙ্ক ঘুরে তাকালো। ঘন অন্ধকারে তার কিছুই চোখে পড়ছিল না। কিন্তু সে খুব কাছেই কার যেন নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছিল।

সে কর্কশ কণ্ঠে চীৎকার করে ডাকলো, ম্যাক্স।

এক ঝলক বাতাসের মতো দ্রুত অথচ লঘু ছন্দে ক্যারলের আঙুলগুলো তার সমস্ত মুখগুলোকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেল।

ম্যাক্স এখানে কে যেন রয়েছে।

 নীচে নেমে এস বুদ্ধ কাহিকা, ম্যাক্স তীক্ষ্ণ স্বরে বলল।

এর পরেই ফ্র্যাঙ্কের আকস্মিক রক্ত জমাট করা আর্তচিৎকার শুনে সে একেবারে আড়ষ্ট হয়ে। উঠল।– মুহূর্তের জন্য ম্যাক্সের লৌহকঠিন স্নায়ুগুলোও যেন বিবশ হয়ে রইলো। সহসা কে তার কাঁধ ঘেঁষে চলে যেতে আত্মরক্ষার সহজাত প্রবৃত্তি বশে সে পেছনের দিকে লাফ দিল।

কিন্তু ততক্ষণে সাড়াশির মতোকতগুলোআঙুল আলতোভাবে তার ঘাড়ের কাছে আঁচড় কেটে দিয়েছে। সে অন্ধের মতো গুলি চালাল। হঠাৎ নিচের সিঁড়িতে হালকা পায়ের শব্দ শুনে সে আবার গুলি চালাল।

ম্যাক্স ফ্র্যাঙ্ককে পিঠের উপর তুলে নিয়ে বারান্দা দিয়ে বেরিয়ে এলো।

অর্ধ-অচেতন অবস্থায় ফ্র্যাঙ্ক তখন ঝাঁকিয়ে উঠেছিলো, আমি অন্ধ হয়ে গেছি ম্যাক্স। মেয়েটা আমার চোখ দুটো খুবলে নিয়েছে।