ডোরবেল শুনে দুপুরে যখন দরজা খুলল কাজের লোক মাধবী, তখন সে যাকে দেখল তাকে চিনতে পারল না।
কাকে চাই?
ইরা নেই?
ওঃ, বউদি। না, উনি মার্কেটিং-এ গেছেন।
ও।
আপনি কে?
আমার নাম বরুণ দাস। আমি ইরার জেঠতুতো দাদা।
ও। বসুন তা হলে। বউদি এসে যাবেন।
অনেক দুর থেকে আসছি। একটু কফি খাওয়াবে?
হ্যাঁ, বসুন।
দাড়ি গোঁফ ও কালো চশমা পরা লোকটা বসল। মাধবী রান্নাঘরের দিকে চলে যাওয়ামাত্র লোকটা বেড়ালের মতো উঠে পড়ল। দ্রুত পায়ে ইরার ঘরের সামনে হাজির হয়ে একটা চাবি বের করে দরজাটা খুলে ফেলল। মাত্র দশ সেকেন্ডের মধ্যে বেরিয়ে এল সে। দরজার অটোমেটিক লক বন্ধ হয়ে গেল।
লোকটা লম্বা পায়ে বেরিয়ে অপেক্ষমাণ একটা ট্যাক্সিতে উঠে পড়ল।
একটু বাদে চা নিয়ে এসে মাধবী দেখল, লোকটা হাওয়া।
ইরা ফিরল আরও ঘন্টাখানেক বাদে।
ও বউদি, চোরাচোড় কিনা জানি না। একটা লোক এসেছিল। তোমার নাকি দাদা হয়। বরুণ দাস, চেনো?
ইরা ভ্রু কুঁচকে বলল, বরুণ দাস! যাঃ, জন্মে ও নাম শুনিনি। কীরকম চেহারা?
বেশ লম্বা, দাড়ি গোঁফ আছে, কালো চশমা।
ইরা শঙ্কিত হয়ে বলল, কী চাইছিল?
কফি খেতে চাইল। কফি এনে দেখি লোকটা নেই।
সর্বনাশ! কিছু নিয়ে যায়নি তো।
না। সন্দেহ হওয়ায় সব ভাল করে দেখেছি। কিছু নিয়েছে বলে তো মনে হচ্ছে না।
ফট করে কেন যে লোকের কথা বিশ্বাস করিস! যাকে চিনিস না, তাকে কখনও বসতে দিবি না আমি না থাকলে।
ইরা নিজের ঘরের দরজা খুলল। কাপড় ছাড়তে ছাড়তেই হঠাৎ চোখটা গিয়ে পড়ল বিছানায়। বালিশের পাশে প্লাস্টিক শিটের ওপর রিভলভারটা শান্তভাবে শুয়ে আছে।
ইরা হিম হয়ে গেল। কে এসেছিল ঘরে? কীভাবে এল?
শবর এল আরও দু ঘণ্টা বাদে।
আপনার রিভলভারটা কোথায়?
আমার কাছেই আছে।
লেট মি সি ইট।
কেন বলুন তো!
ইরাদেবী, আপনার রিভলভারটা সিংঘানিয়াকে খুন করার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকতে পারে। সুতরাং বাধা দেবেন না।
ঠিক আছে, দিচ্ছি। কিন্তু ওটা বাজেয়াপ্ত করবেন না।
আমার পক্ষে কথা দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু রিভলভারটা যে কিছুক্ষণের জন্য আপনার কাছে ছিল না সেটা আপনি আমাকে জানাতে পারতেন।
ইরা দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে বলল, ভয়ে জানাইনি।
শুনুন, ওটা হাত দিয়ে ধরবেন না। একটা রুমাল বা ঝাড়ন দিয়ে ধরে নিয়ে আসুন। যদিও জানি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া যাবে না।
ইরা নিয়ে এল রুমালে করেই।
শবর সেটা একটা প্লাস্টিকের ক্যারি ব্যাগে ভরে বলল, কখন কে এটা দিয়ে গেল?
আমার কাজের লোক বলছে বরুণ দাস নামে কে একজন এসে আমার দাদা বলে পরিচয় দিয়ে কফি খেতে চায়।
কীরকম চেহারা?
লম্বা। দাড়ি গোঁফ আর কালো চশমা ছিল।
বাঃ, একেবারে রহস্য উপন্যাস। সে রিভলভারটা কীভাবে রেখে যায়?
আমার ঘরে।
ঘরে? ঘর তো তালা দেওয়া থাকে শুনেছি।
হ্যাঁ। বুঝতে পারছি না। সে ঘরে ঢুকেছিল নিশ্চয়ই।
একটা কথা।
বলুন।
রিগার্ডিং ডেভিড। আপনার সঙ্গে তার কী সম্পর্ক?
কী আবার! কিছু নয়।
লুকিয়ে লাভ নেই।
সুন্দরী ইরা হঠাৎ টকটকে লাল হয়ে গেল লজ্জায়। মাথা নিচু করে বলল, ডেভিড ওয়াজ পারসিসেন্ট।
অ্যান্ড ইউ জাস্ট সারেন্ডারড?
হ্যাঁ।
আপনি কি জানেন ও ড্রাগ অ্যাডিক্ট?
প্রথম প্রথম সন্দেহ হয়েছিল।
রিভলভারটা চুরি যাওয়ার পর পুলিশকে জানাননি কেন?
ভয় পেয়েছিলাম।
কীসের ভয়?
জানি না।
জানেন। রিভলভারটা যে ডেভিড চুরি করেছিল এটা বুঝতে পেরেই রিপোর্ট করেননি। পাছে পুলিশ ডেভিডকে ধরে এবং স্ক্যান্ডালটা প্রকাশ হয়ে পড়ে। ঠিক কিনা!
হ্যাঁ।
ঠিক আছে। আপনি ডেভিডকে কতখানি ভালবাসেন?
এটা ঠিক ওরকম ব্যাপার নয়। ডেভিড জোর করেই রিলেশানটা তৈরি করেছে।
আর আপনি প্রশ্রয় দিয়েছেন?
আমি রাতে ঘুমোতে পারি না, আপনাকে বলেছি তো। ডেভিড ওই সময়ে আমাকে সঙ্গ দিত।
রোজ?
প্রায়ই। সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন।
ডেভিডকে সন্দেহ হত না?
সন্দেহ! কীসের সন্দেহ?
ওর কোনও আলটেরিয়র মোটিভ আছে কিনা।
ওর কোনও মোটিভ বুঝতাম না। ও পাগলের মতো আমাকে ভালবাসত।
চমৎকার।
ডেভিড কি কিছু করেছে? প্লিজ, বলুন।
জানি না। ইনভেস্টিগেশন চলছে। দেখা যাক।