৫. জয়পতাকা সম্পর্কে একটা গুপ্ত খবর

জয়পতাকা সম্পর্কে একটা গুপ্ত খবর কেউ জানে না। তাঁর যখন পেটে খিদে চাগাড় দেয় তখন তিনি বোকা হয়ে যান, ভীতু। হয়ে পড়েন, কী করছেন না করছেন তা তাঁর ভাল জানা থাকে না। পেট ভরা থাকলে তাঁর মাথা ভাল কাজ করে, তখন তিনি বেশ সাহসী হয়ে ওঠেন, এবং কী করছেন না করছেন তা চমৎকার বুঝতেও পারেন। কিন্তু যেদিন তিনি মনের মতো খাবার পরম আহ্লাদ ও তৃপ্তির সঙ্গে খেয়ে ওঠেন, সেদিন জয়পতাকার মাথা প্রায় আইনস্টাইনের সমকক্ষ হয়ে ওঠে, তিনি প্রচণ্ড সাহসী হয়ে পড়েন এবং দূর ভবিষ্যৎ পর্যন্ত দেখতে পান। তবে খাবারটা যতক্ষণ পেটে থাকে ততক্ষণ।

আজ দুপুরে যদি চমৎকার একটি ভোজ না খেতেন, তা হলে কি তিনি কালুর মতো দুরন্ত ও ভয়ঙ্কর ষাঁড়ের মুখোমুখি দাঁড়াতে পারতেন দুঃসাহসে ভর করে?

আবার এই পটাশগড়ের ডাইনিং হল-এ বসে একা যখন ভোজ্যবস্তুর ঢাকনা একে-একে খুলে খেতে শুরু করলেন, তখন খাবারের স্বাদে ও গন্ধে তাঁর গান গাইতে এবং নাচতেও ইচ্ছে করছিল। এত ভাল সব খাবা তিনি জন্মেও খাননি। প্রথমেই চিনেমাটির একটা বাটির ঢাকনা খুলে দেখলেন তাতে রয়েছে আলফাবেট সুপ। সোনালি রঙের সুরুয়ার মধ্যে লাল নীল সবুজ হলুদ মেরুন রঙের এ-বি-সি-ডি, অ-আ-ক-খ সব ভাসছে। চামচ দিয়ে উষ্ণ সুপ থেকে একটা এ-তুলে মুখে দিতেই তাঁর জিভ যেন আনন্দে উলু দিয়ে উঠল। সুপটা শেষ করে তিনি স্বর্গীয় স্বাদের আরও নানা খাবার চেখে এবং খেয়ে যেতে লাগলেন। মুশকিল হল, এসব খাবার তিনি জন্মেও খাননি। এসব কী ধরনের খাবার তাও তিনি বুঝতে পারলেন না। আমিষ না নিরামিষ তাও বুঝবার কোনও উপায় নেই। কিন্তু স্বাদ অতুলনীয়। যতই খেতে লাগলেন ততই ভয় কেটে যেতে লাগল, মাথা পরিষ্কার ও বুদ্ধি ক্ষুরধার হয়ে উঠতে লাগল, এবং তাঁর কী করা উচিত এবং উচিত নয়, তা স্পষ্ট বুঝতে পারলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, এখন তাঁর এক নাগাড়ে খেয়ে যাওয়া উচিত। তিনি কোনওদিকে না তাকিয়ে মাথা নিচু করে খেয়ে যেতে লাগলেন।

প্রায় চল্লিশ মিনিট খাওয়ার পর বুঝলেন, তাঁর পেট খুবই আপত্তি জানাচ্ছে। হাউস ফুল। আর কিছুর ঢুকবার জায়গা নেই। জয়পতাকা একটা বড় একটা মেজো এবং ছোট ঢেকুর পর্যায়ক্রমে তুললেন। তারপর একটা শ্বাস ফেলে বললেন, “না, ব্যবস্থা দেখছি ভালই। এরা খাওয়াতে জানে।”

ডাইনিং হল-এর এক কোণে ঝকঝকে বেসিন, র‍্যাকে ধপধপে তোয়ালে। জয়পতাকা আঁচিয়ে মুখ মুছে একটু তৃপ্তির হাসি হাসলেন। ভয়ডর কেটে গেছে। কৌতূহল বাড়ছে। বুদ্ধিও কাজ করছে।

চারদিকটা একটু সরেজমিনে দেখার জন্য তিনি ডাইনিং হল থেকে বেরিয়ে একটা লম্বা দর-দালানের মতো জায়গায় ঢুকে পড়লেন। ডান দিকে একটা বেশ বড় ঘর। সবুজ কার্পেট দিয়ে মোড়া ঘরখানায় উজ্জ্বল ঝাড়বাতি জ্বলছে। চারদিকে চেয়ার-টেবিল সাজানো, টেবিলে টাটকা ফুলের তোড়াওয়ালা মস্ত রুপোর ফুলদানি। ভিতর থেকে পিয়ানোর ভারী মিষ্টি আওয়াজ আসছে। জয়পতাকা ঘরে ঢুকে একটা কৌচে বসে পড়লেন। পিয়ানোর সামনে একটা টুল পাতা। তাতে কেউ বসে নেই। কিন্তু টুং-টাং করে পিয়ানো বেজে যাচ্ছে। খানিকক্ষণ পিয়ানো শোনার পর তিনি জায়গাটা আরও একটু ঘুরে দেখবেন বলে দর-দালান ধরে এগোলেন। পরের ঘরটা ইনডোর গেমসের ঘর। সেখানে টেবিল টেনিস, ক্যারম, দাবার ছকের বিভিন্ন টেবিল রয়েছে।

জয়পতাকা প্রথমে টেবিল টেনিসের ব্যাট তুলে নিলেন। অমনি শুন্য থেকে একটা পিংপং বল টুক করে টেবিলে এসে পড়ল। জয়পতাকা প্রতিদ্বন্দ্বিহীন। বলটা সার্ভ করলেন আনমনে। কিন্তু চমকে উঠে দেখলেন ওপাশে ব্যাটটা শূন্যে উঠে তাঁর সার্ভটাকে স্ম্যাশ করে ফেরত পাঠাল। কে যেন বলে উঠল, “লাভ ওয়ান।”

জয়পতাকা বেকুবের মতো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বলটা কুড়িয়ে নিলেন। ভজুরাম মেমোরিয়াল স্কুলে তিনি প্রায়ই কমনরুমে গিয়ে টেবিল টেনিস খেলেন। বেশ ভালই খেলেন।

কাজেই তাঁর জেদ চেপে গেল। ওপাশে ব্যাটটা শূন্যে ঝুলছে, দুলছে, খুব হিসেব কষে জয়পতাকা বেশ জুতসই আর-একটা সার্ভ করলেন। বলটা সঙ্গে-সঙ্গে মার খেয়ে বিদ্যুৎবেগে ফিরে এল এবং টেবিল ছুঁয়েই শাঁ করে গিয়ে দেওয়ালে লাগল।

সেই কণ্ঠস্বর বলে উঠল, “লাভ টু।”

জয়পতাকা এবার খুব কোণাচে একটা চমৎকার সার্ভ পাঠালেন ওপাশে। বলটা ফিরে এল বটে, কিন্তু জয়পতাকা সেটাকে ব্লক করলেন। কিন্তু ফেরত আসা চাপটা আর আটকাতে পারলেন না।

“লাভ থ্রি।”

খেলা চলতে লাগল। তবে একতরফা। দশ মিনিটের মাথায় লাভ গেম খেয়ে জয়পতাকা বিরক্তির সঙ্গে ব্যাটটা রাখলেন। ওপাশের ব্যাটটাও টেবিলে শুয়ে পড়ল।

দাবা খেলা তাঁর খুবই প্রিয়। খুঁটি সাজানো আছে দেখে তিনি সাদা খুঁটির দিকে বসে মন্ত্রীর ঘরের বোড়েটা দুঘর এগিয়ে দিলেন। ওপাশ থেকে রাজার ঘরের বোড়ে টুক করে দুঘর এগিয়ে এল। জয়পতাকা মগ্ন হয়ে গেলেন খেলায়। প্রতিপক্ষ অতিশয় শক্ত। মাত্র বারো চাল খেলার পরই তিনি বুঝতে পারলেন, এঁটে উঠছেন না। পরের চালেই প্রতিপক্ষের কালো গজ একটা বোড়ে খেয়ে রাজার সোজাসুজি বসে গেল।

সেই স্বর বলে উঠল, “কিস্তি।”

.

দু’চাল পরে মাত হয়ে উঠে পড়লেন জয়পতাকা। ক্যারমও তিনি ভালই খেলেন। খুঁটি সাজানো আছে দেখে লোভ সামলাতে পারলেন না। কিন্তু শুরুতে স্ট্রাইক নিয়ে গোটা-তিনেক খুঁটি ফেললেও প্রতিপক্ষ একেবারেই একে-একে সব কালো খুঁটি পকেটস্থ করে দিল। তিন বোর্ডেই গেম খেয়ে জয় জয়পতাকা উঠে পড়লেন।

পরের ঘরটা লাইব্রেরি। মেঝে থেকে সিলিং অবধি চমৎকার কাঠের তাকে ঠাসা বই। কোণের দিকে একটা ইজিচেয়ার পাতা। তাতে কেউ নেই বটে, কিন্তু একখানা বই খোলা অবস্থায় শুন্যে ভেসে আছে। ঠিক যেন ইজিচেয়ারে বসে কেউ বইটা পড়ছে। জয়পতাকা ঢুকতেই বইটা ধীরে বন্ধ হয়ে গেল এবং শুন্য দিয়ে ভেসে গিয়ে একটা তাকে বইয়ের ফাঁকে ঢুকে পড়ল।

জয়পতাকা তাক থেকে একখানা বই টেনে নিয়ে খুলে পড়তে লাগলেন। এবং পড়তে পড়তে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। এয়ারোডাইনামিক্সের ওপর যে এত সাঙ্ঘাতিক বই আছে তা তাঁর জানা ছিল না। কিন্তু দুটো পাতা ভাল করে পড়তে-না-পড়তেই কে যেন হাত থেকে বইখানা কেড়ে নিল। সেটা শূন্যে ভেসে ওপরের একটা তাকে গিয়ে সেঁধোল। জয়পতাকা আবার একখানা বই টেনে নিলেন। খুলে দেখলেন, সেটা মহাকাশতত্ত্বের ওপর অতি উন্নত গবেষণাধর্মী রচনা। কিন্তু এটাও দু-একপাতা পড়তে-না-পড়তেই বইটা তাঁর হস্তচ্যুত হল। কিন্তু যেটুকু পড়লেন তাতে তাঁর মাথা ঘুরে গেল। মহাকাশবিজ্ঞানের প্রায় অকল্পনীয় সব তত্ত্ব আর তথ্য রয়েছে বইটাতে। জয়পতাকা পাগলের মতো গিয়ে আর-একটা বই খুললেন। এটা শারীরবিদ্যার বই। কিন্তু যাদের শরীর নিয়ে লেখা তারা নিশ্চয়ই অতি মানুষ। বইটা হস্তচ্যুত হলে আর-একখানা বই খুলে জয়পতাকা দেখলেন, অঙ্কের বই। তবে সাধারণ অঙ্কের নয়, এই পৃথিবীর অঙ্কও নয়। এ একেবারে ধরাছোঁয়ার বাইরের সব অঙ্ক। যা দেখছেন জয়পতাকা তার কোনওটাই তাঁর বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। এই পৃথিবীতে বিজ্ঞান বা অঙ্ক এত উন্নতি করেনি আজও। তা হলে এই বইগুলো কে লিখল? কোথা থেকে জঙ্গলের মধ্যে এক ভুতুড়ে বাড়িতে এসে জুটল বইগুলো?

ভাবতে ভাবতে মাথা গরম হয়ে গেল জয়পতাকার। হাত-পা থরথর করে কাঁপতে লাগল উত্তেজনায়। এতক্ষণ যা কিছু ঘটেছে তাতে ভয় বা উত্তেজনার কারণ ছিল বটে, কিন্তু জয়পতাকা তা গ্রাহ্য করেননি। কিন্তু এই লাইব্রেরিতে ঢুকে যা অভিজ্ঞতা হল, তাতে তাঁর আবার মাথা গুলিয়ে গেল। মাথা গুলিয়ে গেলেই তাঁর খিদে পায়। এবং খিদে পেলেই তিনি অগ্র-পশ্চাৎ বিবেচনা শূন্য হয়ে পড়েন।

তিনি বড় বড় চোখে চারদিকে চেয়ে অস্ফুট গলায় বললেন, “ভূত! ভূত! ভূত ছাড়া এসব আর কিছুই নয়। এসবই মায়া? চোখের ভুল! ভীমরতি? পাগলামি? চালাকি? ধোঁকাবাজি? জোচ্চুরি?”

আর-একটা বই তাক থেকে নিয়ে তাড়াতাড়ি খুললেন জয়পতাকা। জীবজন্তুবিষয়ক বই। অনেক ছবি। কিন্তু একটাও জীবজন্তু তিনি চিনতে পারলেন না। সবচেয়ে বড় কথা, জন্তুগুলি যে-সব বনভূমিতে বিচরণ করছে, তার গাছপালাও জয়পতাকার চেনা নয়। জন্তুদের নামগুলোও অদ্ভুত বলে মনে হল তাঁর।

বইটা যখন তাঁর হাত থেকে নিয়মমাফিক কেড়ে নেওয়া হচ্ছিল তখন জয়পতাকা সবলে বইটা চেপে ধরে বললেন, “দেব না! কিছুতেই দেব না!”

প্রাণপণে বইখানা বুকে আঁকড়ে দুহাতে চেপে ধরে রইলেন জয়পতাকা। কিন্তু বইটা নিজেই যেন তাঁর হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য পাখির মতো ডানা ঝাঁপটাতে লাগল। ডানা বলতে আসলে দুটো মলাট। বইয়ের সঙ্গে কুস্তি করতে হবে একথা জয়পতাকা স্বপ্নেও কখনও ভাবেননি। কিন্তু সেই অমন কুস্তি আজ তাঁকে করতে হচ্ছে। প্রাণপণে চেপে ধরা সত্ত্বেও বইটা নিজেই যেন গোঁত খেয়ে একসময়ে ঠিকই বেরিয়ে গেল। আর তার ধাক্কায় মেঝের ওপর ছিটকে পড়ে গেলেন জয়পতাকা।

কোমরে বেশ ব্যথা পেয়েছেন। তবু ধীরে ধীরে তিনি উঠে দাঁড়ালেন। লাইব্রেরির চারদিকে অবিশ্বাসের চোখে চেয়ে দেখতে লাগলেন। বই তাঁর সাঙ্ঘাতিক প্রিয় জিনিস। বিশেষ করে অঙ্ক আর বিজ্ঞানের বই। যিনি বই এত ভালবাসেন, তাঁর সঙ্গে বই কখনও কুস্তি করে? আবার ধাক্কা মেরে ফেলেও দেয়? ভারী দুঃখ হল তাঁর।

আর এই দুঃখেই তিনি লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে করিডোরে পড়লেন। পরের ঘরটা কিসের?

দরজা ঠেলতেই নিঃশব্দে খুলে গেল। বাঃ, চমৎকার শোয়ার ঘর। মস্ত খাটে নরম বিছানা পাতা। পাশে একটা টুলের ওপর সযত্নে ঢেকে রাখা এক গেলাস জল।

জয়পতাকা জলটা এক চুমুকে খেয়ে নিয়ে গেলাসটা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই গেলাসটা আবার জলে ভরে গেল, ঢাকনাটা আপনা থেকেই উঠে গেলাসটাকে ঢাকা দিয়ে দিল। জয়পতাকা আবার জলটা খেয়ে ফেললেন। আবার গেলাস জলে ভরে উঠল। ঢাকনা আপনা থেকেই ঢাকা দিল গেলাসের মুখ। তিনবারের বারও একই ঘটনা ঘটায় জয়পতাকা হাল ছেড়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে ঘুমোবেন বলে তৈরি হতে লাগলেন। জামাকাপড় সবই তাঁর কাদামাখা এবং নোংরা। লাল সালুটা এখনও কোমরে গোঁজা। শোওয়ার ঘরের লাগোয়া একটা বাথরুম রয়েছে দেখে জয়পতাকা গিয়ে ঢুকলেন। কল খুলতেই এই শীতে ভারী আরামদায়ক জল পড়তে লাগল। আর সাবানখানার যা মনমাতানো গন্ধ, তা আর বলার নয়। বেশ করে মুখ-হাত-পা ধুয়ে তোয়ালে দিয়ে মুছে ঘরে আসতেই দেখলেন শুন্যে একটা পাজামা আর পাঞ্জাবি ভাসছে। জয়পতাকা জামা কাপড় পালটে নিলেন। তারপর বিছানায় শুয়ে সিলিং-এর দিকে চেয়ে রইলেন। যথেষ্ট ধকল গেছে। তাঁর তখন ঘুমনো উচিত। কিন্তু ঘুম আসছে না।

জয়পতাকা একটু এপাশ-ওপাশ করলেন। হঠাৎ তাঁর মনে হল, ঘুম তাঁর আর মোটেই আসবে না। শরীর যথেষ্ট ঝরঝরে। তাঁর মনে হচ্ছে, কোনও এক ফাঁকে তিনি অন্তত সাত-আট ঘণ্টা ঘুমিয়ে নিয়েছেন। শরীর যথেষ্ট বিশ্রাম পেয়েছে। আর শুয়ে থাকার মানেই হয় না। কিন্তু কখন ঘুমোলেন তা তিনি মোটেই ভেবে পেলেন না। তবে তিনি বিছানা থেকে উঠে চটিজোড়া পায়ে দিয়ে বেরোতে গিয়েই থমকে দাঁড়ালেন। চটিজোড়া এল কোত্থেকে? অবশ্য ভেবে লাভ নেই। সব কিছুই তো শূন্য থেকেই আসছে। কোনও উপকারী ভূত নিশ্চয়ই। আর ভূত যদি উপকারীই হয় তবে তাকে খামোকা ভয় পাওয়ারও মানে হয় না।

কিন্তু চটিজোড়া পায়ে দিয়ে তাঁর একটু মুশকিল হল। তিনি পরিষ্কার বুঝতে পারলেন, তাঁর চটি দুটি একটু অবাধ্য এবং একগুঁয়ে। তিনি করিডোর দিয়ে ডান দিকে যেতে চাইছেন। কিন্তু চটি দুটি তা হতে দিল না। তাঁকে অন্য দিকে হাঁটতে বাধ্য করতে লাগল। এ বাড়ির কিছুই জয়পতাকা চেনেন না। চটি যদি তাঁকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায়, তো ক্ষতি কী? তিনি প্রথমে কয়েকবার চটি দুটিকে নিজের মতো চালানোর চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিলেন। চটি তাঁকে তাদের ইচ্ছেমতো নিয়ে যেতে লাগল। দর-দালান থেকে বেরনোর একটা দরজা খোলা রয়েছে। চটি তাঁকে সেই দরজা দিয়ে আর-একটা গলির মতো জায়গায় এনে ফেলল। গলিটা বেশ মসৃণ। একটা বাঁক খেয়ে ওপর দিকে উঠে গেছে। উঠতে বিশেষ পরিশ্রম করতে হল না। জয়পতাকাকে। চটিজুতোই তাঁর পরিশ্রম ভাগাভাগি করে নিল।

একটা ভোলা ছাদে এসে তিনি একটা পুরনো আমলের লম্বা ও সরু দূরবীনের সামনে থামলেন। বলা ভাল সেখানেই তাঁকে থামানো হল। এরকম দূরবীন আগেকার দিনে জাহাজের ক্যাপ্টেনরা ব্যবহার করতেন। জয়পতাকা দূরবীনে চোখ রাখলেন। চারদিকে ম্লান জ্যোৎস্নায় ভুতুড়ে বালিয়াড়ি, তার পরে ঘন জঙ্গল। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, তিনি দূরবীনের ভিতর দিয়ে স্পষ্ট এবং পরিষ্কারভাবে সব দেখতে পাচ্ছেন।

এই সামান্য আলোয় গাছপালা সব কালো দেখার কথা। কিন্তু জয়পতাকা গাছের সবুজ রংও দেখতে পাচ্ছিলেন। খুঁটিনাটি অনেক কিছুই তাঁর নজরে পড়ল। একটা হনুমান বসেবসে ঘুমোতে-ঘুমোতে নিজের পেটটা খসখস করে চুলকে নিল। একটা কালো সাপ পাখির বাসায় ঢুকে পাখির ছানা গিলে ফেলল। একটা বাঘ নানা কথা ভাবতে ভাবতে একটা শিমুল গাছে গা ঘষটে নিয়ে একটা ঢেকুর তুলল।

দূরবীনটা খুবই শক্তিশালী তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু পৃথিবীতে যে এরকম দূরবীন আবিষ্কৃত হয়েছে সেটাই জয়পতাকার জানা ছিল না। অন্ধকারে দেখার জন্য ইনফ্রা রেড দূরবীন তৈরি হয়েছে, জয়পতাকা জানেন। কিন্তু তা দিয়ে এরকম পরিষ্কার দেখা সম্ভব নয়। অথচ এই দূরবীনটা দেখতে দাঁড়টানা জাহাজে ব্যবহৃত দূরবীনের মতো।

জঙ্গলের নানা দৃশ্য দেখতে দেখতে হঠাৎ জয়পতাকার চোখে পড়ল তিনজন বুড়ো মানুষ গুঁড়ি মেরে-মেরে ঝোঁপঝাড় ভেঙে এদিকেই আসবার চেষ্টা করছে। তিনজনকেই এক লহমায় চিনে ফেললেন জয়পতাকা। একজন তাঁর দাদু জয়ধ্বনি, একজন পুরপিতা ব্যোমকেশবাবু, তৃতীয়জন শ্যাম লাহিড়ী। সবার আগে

শ্যাম লাহিড়ী, তাঁর পিছনে ব্যোমকেশ, তাঁর পিছনে জয়ধ্বনি এবং জয়ধ্বনির পিছনে একটা ডোরাকাটা বাঘ। বাঘটাকে জয়ধ্বনি দেখতে পাননি।

জয়পতাকা আতঙ্কিত হয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন, “দাদু-উ।”

আশ্চর্যের বিষয় জয়ধ্বনি এই চিৎকার শুনতে পেলেন এবং চমকে উঠে বললেন, “ওই তো আমার নাতি।”

শ্যাম লাহিড়ীও শুনতে পেয়েছেন। তিনিও থমকালেন। ব্যোমকেশ একগাল হেসে বললেন, “তা হলে তো সমস্যা মিটে গেল। কালই দু-দুটো মিটিং।”

জয়পতাকা ফের চেঁচাল, “দাদু? পিছনে বাঘ?”

জয়ধ্বনি ভারী অবাক হয়ে পিছনে তাকিয়ে একেবারে বাঘটার মুখোমুখি পড়ে গেলেন। বাঘ ও জয়ধ্বনি দুজনেই একটু অপ্রস্তুত। কিন্তু বাঘটার বোধহয় ডিনার জোটেনি। প্রথমটায় লজ্জায় মাথা নামিয়ে ফেললেও পরমুহূর্তেই সে গা ঝাড়া দিয়ে লাফানোর জন্য গুঁড়ি মারল। শ্যাম লাহিড়ী পকেট থেকে রিভলভারটা বের করে ওপর দিকে একটা গুলি ছুঁড়লেন। সেই শব্দে বাঘটা বিরক্ত হয়ে একবার জয়ধ্বনিকে একটু মুখ ভেঙচে সামান্য খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ছুটে পালাল। এমনিতে বাঘ নরখাদক নয় বটে, কিন্তু আহত বা অক্ষম হলে তারা বাধ্য হয়ে সর্বভুক হয়।

বাঘ দেখে এবং পিস্তলের শব্দ শুনে ব্যোমকেশবাবু শ্যাম লাহিড়ীকে এমন চেপে ধরেছিলেন যে, আর ছাড়বার নামটি নেই।

শ্যাম লাহিড়ী বিরক্ত হয়ে বললেন, “করো কী হে ব্যোমকেশ। অমন চেপে ধরলে যে বাঘটাঘ এলে আর গুলিও চালাতে পারব না।”

ব্যোমকেশ লজ্জিত হয়ে ছেড়ে দিয়ে বললেন, “না না, আপনার মতো বীর পুরুষ সঙ্গে থাকলে আর ভয় কী? তবে কিনা ইনফ্যাক্ট বাঘটা জয়ধ্বনিদাদাকে প্রায় সাবাড় করে ফেলেছিল। কী বলেন, অ্যাঁ?”

জয়ধ্বনি একটু খেচিয়ে উঠে বললেন, “তাতে তোমার ভালই হত। বাঘ আমাকেই চিবোতে থাকত, তোমরা বেঁচে যেতে।”

ব্যোমকেশ বিষণ্ণ হয়ে বললেন, “আমার মরারও জো নেই কিনা। কাল দু-দুটো মিটিং।”

“মিটিং-এর কথা যদি ফের উচ্চারণ করো তো এই লাঠি তোমার মাথায় পড়বে।”

“যে আজ্ঞে।” বলে ব্যোমকেশ চুপ করে গেলেন।

জয়ধ্বনি শ্যাম লাহিড়ীর দিকে তাকিয়ে বললেন, “কিন্তু আমি যে আমার নাতির গলা শুনলুম! কী হল বলো তো?”

শ্যাম লাহিড়ী বললেন, “আমিও শুনেছি।” ব্যোমকেশ বললেন, “আমিও।”

জয়পতাকা চেঁচিয়ে উঠে হাত নেড়ে বললেন, “এই যে আমি এখানে। “

জয়ধ্বনি চমকে উঠে বললেন, “ওই আবার! এই যে দাদুভাই, আমি যাচ্ছি তোমার কাছে। ভয় পেও না। চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকো।”

কিন্তু জয়পতাকা বুঝতে পারছিলেন, কাছে দেখালেও–তাঁর দাদু এবং তাঁর সঙ্গীরা এখনও অনেকটা দূরে। জলার ওধারে। কী করে যে অত দূরের কথা শোনা যাচ্ছে তা জয়পতাকা বুঝতে পারলেন না। তবে দেখলেন, তিন বুড়ো জলার কাছে এসে দাঁড়িয়ে গেছেন।

তিনজনেই জলার সামনে এসে পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগলেন। জলে নামা এবং জলা পার হওয়া তাঁদের পক্ষে একটু শক্ত।

জয়পতাকা হঠাৎ লক্ষ করলেন, তাঁর দূরবীন থেকে হঠাৎ যেন সার্চলাইটের মতো একটা আলো ছুটে গিয়ে তিনজনের পায়ের কাছে পড়ল। দেখা গেল, জলার মধ্যে একটা সরু আলোকিত পথ ফুটে উঠেছে। আগুপিছু হয়ে অনায়াসে চলে আসা যায়।

তিনজনেই একটু স্তম্ভিত হয়ে রইলেন। তারপর শ্যাম লাহিড়ী চাপা স্বরে বললেন, “জয়ধ্বনি, বলেছিলুম কিনা এই জঙ্গলে অনেক কিছু হয়!”

জয়ধ্বনি বললেন, “দেখতেই পাচ্ছি ভায়া। কিন্তু না এগিয়েও তো উপায় নেই।”

ব্যোমকেশ কথাটার সায় দিলেন, “যথার্থ বলেছেন। ইনফ্যাক্ট জয়পতাকাকে পাওয়া না গেলে কালকের দু-দুটো মিটিং-ই বরবাদ হয়ে যাবে। ইনফ্যাক্ট আমি তো সংবর্ধনার বদলে শোকসভা করব বলে একরকম ঠিক করেই ফেলেছিলাম।”

জয়ধ্বনি লাঠিটা তুলে নামিয়ে নিয়ে বললেন, “না, তোমাকে এখন মারব না। আগে জয়পতাকার সঙ্গে দেখা হোক, তারপর তোমার ব্যবস্থা।”

ব্যোমকেশ সভয়ে জয়ধ্বনির কাছ থেকে সরে এলেন এবং সকলের আগেই আলোকিত পথটি ধরে হাঁটা দিলেন।

জলা পার হতে তাঁদের তিনজনের মোটেই সময় লাগল না। তারপর জঙ্গলের ভিতর দিয়ে হেঁটে তিজন খাদের ধারে এসে দাঁড়ালেন। কিন্তু খাদ তাঁদের পথ আটকাতে পারল না। আলোর রশ্মি গিয়ে সোজা পড়ল খাদের ওপরে, ওপার-এপার জুড়ে পড়ে থাকা একটা গাছের ওপরে। গাছটা কোত্থেকে এল কে জানে। তবে তিন বুড়ো খাদটা ওই গাছের ওপর দিয়ে হেঁটে পার হওয়ার পরই গাছটা আবার সোজা হয়ে দাঁড়াল এবং অন্যান্য গাছের সঙ্গে মিশে গেল। কাণ্ডটা দেখে জয়পতাকা হ করে রইলেন।

চোরাবালির ওপরেও আলোটা গিয়ে পড়ে তিন বুড়োকে পথ দেখাল। তিনজনে দিব্যি হেঁটে চোরাবালি পেরিয়ে এলেন।

“দাদুভাই, তুমি কোথায়?”

“এই যে এখানে!” বলে জয়পতাকা আত্মবিস্মৃত হয়ে আনন্দে লাফিয়ে উঠলেন।

উঠলেন বটে, কিন্তু নামলেন না। তাঁর বেয়াদব চটিজোড়া লাফ দেওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে তাঁকে একেবারে শূন্যে তুলে ছাদের কার্নিশ পার করে নিচের বাগানের মধ্যে নামিয়ে আনল। তবে নামাল খুব সাবধানে। ধরে।

জয়পতাকাকে দেখে জয়ধ্বনি এসে জড়িয়ে ধরে আনন্দে কেঁদে ফেললেন, “বেঁচে আছিস দাদুভাই? ভাল আছিস তো?”

“ইনফ্যাক্ট বাঘের পেটে যে যাওনি বাবা, সেটাই যথেষ্ট। গেলে খুব বিপদ ছিল। কাল তোমাকে নিয়েই দু-দুটো মিটিং। স্বয়ং ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট আসছেন সভাপতি হয়ে।”

শ্যাম লাহিড়ীর মুখোনা খুবই গম্ভীর। তিনি চারদিকটা টর্চ ফেলে দেখবার চেষ্টা করছিলেন, তার দরকার হল না। হঠাৎ একঝাঁক উজ্জ্বল আলোয় চারদিকটা ভারী স্পষ্ট হয়ে উঠল।

জয়ধ্বনি চোখের জল মুছে বললেন, “এটা কীরকম জায়গা দাদুভাই? জঙ্গলের মধ্যে কার এমন সুন্দর বাড়ি?”

শ্যাম লাহিড়ী একটা শ্বাস ফেলে বললেন, “এই সেই পটাশগড় হে জয়ধ্বনি। জায়গাটা ভাল নয়।”

“ভাল নয় মানে? দিব্যি জায়গা।”

“যা দেখছ এসব কিছুই সত্যি নয়। ভ্রান্তি মাত্র।”

“তোমার মাথা, চলো দাদুভাই, বাড়ির মালিকের সঙ্গে কেটু আলাপ করে আসি।”

জয়পতাকা ব্যাজার মুখ করে বলেন, “তার সঙ্গে আমার যে দেখাই হয়নি।”

“তা এত বড় বাড়ি দেখাশুনো করছে কে?”

“কেউ নয়।”

শ্যাম লাহিড়ী বললেন, “এখানে কেউ থাকে না জয়ধ্বনি। এটা একটা ধ্বংসস্তূপ। যা দেখছ সেটা শুধু দেখানো হচ্ছে।”

জয়ধ্বনি দার্শনিকের মতো বললেন, “ওরে বোকা, জলে যে চাঁদের ছায়া পড়ে সেটাও তো মিথ্যে, তবে ছায়াটা পড়ে কেন জানো? ওই আসল চাঁদটা আকাশে আছে বলেই।”

ব্যোমকেশককেও এই প্রসঙ্গে কিছু বলতে হয়, নইলে তিনি আলোচনা থেকে বাদ পড়ে যান। তাই বললেন, “ইন ফ্যাক্ট চাঁদটা আমাদের খুবই উপকারে লাগে। জ্যোৎস্না রাতে আমরা শহরের রাস্তার আলোগুলো নিবিয়ে দিয়ে অনেক কারেন্ট বাঁচাই।”

জয়ধ্বনি কটমট করে ব্যোমকেশের দিকে চেয়ে বললেন, “যা বোঝো না তা নিয়ে কথা বলবে না বলে দিচ্ছি।”

ব্যোমকেশ জয়ধ্বনির লাঠিটার দিকে সভয়ে চেয়ে দুপা পিছিয়ে দাঁড়ালেন। তারপর জয়পতাকার দিকে চেয়ে গদগদ স্বরে বললেন, “তুমি আমাদের গৌরব যে কী পরিমাণে বাড়িয়ে দিয়েছ, তা বলে শেষ করা যায় না। সামনের বছর ভজুরাম মেমোরিয়াল স্কুলে হুড়হুড় করে ছেলেরা ভর্তি হবে। কাল তোমাকে আমরা বিরাট করে নাগরিক সংবর্ধনা দিচ্ছি। বাঘা যতীনের পর বাঙালি আর এরকম বীরত্ব দেখাতে পারেনি। ইন ফ্যাক্ট তোমাকে আমরা বৃষবিলাসী উপাধিও দেব। বৃষবিলাসী জয়পতাকা–চমৎকার হবে। কী বলল আঁ? তবে কাজটা যে তুমি খুব ভাল করেছে এমনও বলা যায় না। শত হলেও কালু হচ্ছে শিবের বাহন। তার পিঠে চাপাটা তোমার পক্ষে একটু বাড়াবাড়িই হয়ে গেছে।

ভবিষ্যতে এব্যাপারে তোমাকে সতর্ক হতে হবে। ঘোড়ার পিঠে চাপো, মোষের পিঠে চাপো, গাধার পিঠে চড়তেও বাধা নেই। কিন্তু ষাঁড় নেভার। অনেক ধর্মপ্রাণ নরনারী ভয়ঙ্কর চটে গেছে। আমি হচ্ছি পুরপিতা, সোজা কথায় শহরের বাবা, সকলেরই বাবা। আমাকে সকলের প্রতিই পক্ষপাতশূন্য হয়ে নজর রাখতে হয়…”

জয়ধ্বনি তেড়ে এসে লাঠি উচিয়ে বললেন, “থামবে কি না?”

“যে আজ্ঞে। তবে সত্যি কথা বলতে আমি কখনও ভয় খাই না।”

“নিকুচি করেছে তোমার সত্যি কথার।” দু’জনের মধ্যে দিব্যি একটা তর্কাতর্কি বেধে গেল।

শ্যাম লাহিড়ী জয়পতাকাকে একটু দূরে টেনে নিয়ে গিয়ে বললেন, “ব্যাপারটা কী বলো তো? এ বাড়িতে কারা আছে?

“কেউ নেই।”

“তবে আলোটালো জ্বলছে কী করে?”

“অনেক ভেবেও কিছু বুঝতে পারছি না। ভিতরে এমন বন্দোবস্ত যে, মনে হয় মানুষের বসবাস আছে। কিন্তু কেউ নেই। অথচ…”।

“অথচ কী?”

“সবকিছু আপনা থেকেই হয়ে যাচ্ছে।”

“তুমি ভয় পাওনি?”

“ভয়ও পেয়েছি। আবার ভয়টা একসময়ে কেটে গেছে। আমার মনে হচ্ছে, কিছু একটা দেখানোর জন্যই যেন আমাকে এখানে টেনে আনা হয়েছে।”

শ্যাম লাহিড়ী চোরাবালির পরিখার দিকে অন্যমনস্কভাবে চেয়ে থেকে বললেন, “ফিরে যাওয়ার পথ জানো?”

জয়পতাকা মাথা নেড়ে বললেন, “না, একটা শেয়াল আমাকে পথ দেখিয়ে এনেছিল।”

“আমরা এলাম একটা আলোকে অনুসরণ করে।”

“হ্যাঁ। ছাদ থেকে দূরবীন দিয়ে আমি সবই দেখেছি।”

শ্যাম লাহিড়ী গম্ভীর গলায় বললেন, “এই জায়গা সম্পর্কে আমার ধারণা ভাল নয়। তুমি যে এখানে এসেও নিরাপদে আছ দেখে নিশ্চিন্ত হচ্ছি আবার অন্য দিকে দুশ্চিন্তাও হচ্ছে। আজ অবধি পটাশগড় থেকে কেউ ফেরেনি।”

“বলেন কী?”

“আমি বেশ কয়েকজনকে জানি।”

ঠিক এই সময়ে হাহা করে সেই দুষ্টু বাতাসটা বালিয়াড়ির ওপর দিয়ে বয়ে এল, “কেউ ফিরবে না। কেউ ফেরবে না।”

শ্যাম লাহিড়ী স্তব্ধ হয়ে গেলেন, জয়ধ্বনি আর ব্যোমকেশের ঝগড়াও থেমে গেল। সবাই চারিদিকে তাকাতে লাগলেন।

আবার বাতাস বইল, বলল, “ফিরবার পথ নেই, ফিরবার পথ নেই।”