০৫.
ক্যারিবিয়ানের নীল জলে সূর্যের আলো এসে ঝলমল করছিল। আমার ছোট প্লেনের কাঁচের ওপর মিঠে রোদের আলো এসে পড়েছিল। দুরন্ত বেগে আমার প্লেনটা আকাশে উড়ছিল। সেই পরিত্যক্ত জাহাজটা খুঁজে বার করতে কোনও অসুবিধে হলো না আমার। একটু দূরে নিকটবর্তী দ্বীপের ওপর প্লেনটা ধীরে ধীরে নামালাম। উদ্দেশ্য সেখান থেকে সাঁতরে সেই জাহাজে গিয়ে আমি উঠবো, আমার অনুসন্ধান কাজ চালাবো। মাথার ওপর ক্যারিবিয়ানের উত্তপ্ত সূর্য। নীচে শীতল জল। আমার ভালো লাগলে ঠাণ্ডা জলে সাঁতার কাটতে। জাহাজের কাছে গিয়ে জাহাজের দেওয়াল বেয়ে ওপরে উঠলাম। ডেকের মাঝপথে এসে হঠাৎ একটা অপরিচিত মেয়েলি কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম। গলার আওয়াজ ডেকের নীচ থেকে এলো বলে মনে হলো।
প্রথমে নজরে পড়লো পয়েন্ট আটত্রিশ পুলিশ মডেলের রিভলবার। তারপর মেয়েটি দৃষ্টিগোচর হলো। হলুদ বেদিংস্যুট তার গায়ে। আমার অনুমান তার বয়স আঠাশের কাছাকাছি হবে। দীর্ঘাঙ্গী। চুলের মতন তার চোখের বাদামী রঙ। সব মিলিয়ে তার চেহারাটা আকর্ষণীয়।
কি চাও তুমি সে জিজ্ঞেস করলো। কেউ সাহায্য চায় কিনা সেটা দেখতে এখানে আমার আসা। আমি মৃদু হেসে বললাম তোমার হাতের রিভলবারটা নামাও।
আমি আমার পরিচয় মেয়েটিকে দিলাম। আমি কমান্ডার কাটার সমুদ্র বিষয়ে গবেষক। সামুদ্রিক অভিযানে আমি কাজ করছি। গবেষণা করার জন্য আমাদের একটা জাহাজ আছে। আমরা সেটাকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছি। মেয়েটি দ্বীপের ওপর অবস্থানরত আমার প্লেনটার দিকে তাকালো। তারপর ধীরে ধীরে রিভলবারটা নামিয়ে রাখলো।
মেয়েটিকে খুব বিষণ্ণ লাগলো। সে নিজের পরিচয় দিল।
আমার নাম জয়সি ট্যানার। মিয়ামি থেকে আসছি। এখানে আমি আমার ছোটবোনকে খুঁজতে এসেছি। জয়সি জোরে নিঃশ্বাস নিল। তার স্তনের বৃন্ত দুটি আবার স্পষ্ট হয়ে উঠলো ব্লাউজের তলা থেকে। ভেবেছিলাম তাকে আমি ঠিক খুঁজে বার করবো কিন্তু এখন আমি জানিনা আমি কি করবো।
মিয়ামিতে একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের আমি ম্যানেজার। আমার বিয়ে হয়েছিল, ডিভোর্স হয়ে গেছে। মিয়ামিতে একটা ভালো অ্যাপার্টমেন্টে থাকি। ছোট বোন জুনি মিচিগান থেকে আমার কাছে বেড়াতে আসে। তার বয়স এখন উনিশ। প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা। মিয়ামির কাগজে একদিন সে একটা চাকরির বিজ্ঞাপন দেখলো। নির্জন দ্বীপে এক বৃদ্ধের সেক্রেটারী কাম সঙ্গিনী হয়ে থাকার চাকরী। অবিবাহিতা হতে হবে। শুধু তাই নয়, চাকরী প্রার্থীর কোন নিকট আত্মীয় বন্ধু থাকলে চলবে না। তাই জুনি আমাকে এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির কাছে তার ল্যান্ডলর্ড হিসাবে পরিচয় দেয়। এই ভাবেই সে ক্যারিবিয়ানের একটা দ্বীপে চাকরি পেয়ে যায়। এজেন্সির নাম হল হ্যামার এজেন্সি।
আমার মনে পড়ল বেটিলাও ওয়াশিংটন এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির কথা বলেছিল। জয়সি আরো বললো, জুনি তাকে চিঠি লিখবে বলেছিল। কিন্তু ছমাস হয়ে গেল, কোন খবর নেই। পুলিশের শরণাপন্ন হতে তারা বলে, লিখিত অভিযোগ না জানালে তারা তাকে এ ব্যাপারে কোনো সাহায্য করতে পারবে না।
ক্যারিবিয়ানের কেউ বলতে পারলো না, এমন কোন ধনী ব্যক্তি নেই যে এখানে তার নিজস্ব দ্বীপ আছে। তবে বোনের খোঁজে এখানে এসে আমার মনে হয়েছে জায়গাটা বোধহয় আমি খুঁজে পাবো। কেন জানিনা বারবার মনে হয়েছে আমার বোন জুনি এখানে কোথাও আছে।
আমি মেয়েটির কথা শুনছিলাম, কিন্তু আমার ভাবনা ছিল অন্য পথে। জুনির ব্যাপারে একটা আসন্ন বিপদের কথা ভাবছিলাম। বেটিলাওয়ের কথা মনে হলো। দুজনের চাকরী দাতা একজন নিঃসঙ্গ ধনী বৃদ্ধ যে একটা অলৌকিক দ্বীপের মালিক। এবং দুটি মেয়েই নিখোঁজ। দুজনের এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সিই লালবাতি জ্বালিয়ে বেপাত্তা।
জয়সির কণ্ঠস্বর শোনা গেল–তুমি আমাকে সাহায্য করতে পারবে?
হ্যাঁ নিশ্চয়ই! আমি জয়সির কাঁধে হাত রেখে গভীর দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকালাম। তুমি যে সব খবর আমাকে দিলে তা যদি সত্যি হয় তাহলে বহু লোক তোমাকে ধন্য ধন্য করবে। তবে আমি প্রথমে নিজে একবার যাচাই করে নিতে চাই।
আমি যাবার জন্য প্রস্তুত হলে জয়সি আমার হাত ধরে আকর্ষণ করলো। চোখ দুটো বড় বড় করে তাকালো। ব্লাউজের নীচে জয়সির স্তন যুগল খাড়া হয়ে উঠেছিল তখন। স্তনের বৃন্ত দুটি যেন ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছিল। পলক পতনহীন চোখে আমি সেদিকে তাকিয়ে রইলাম।
এবার জয়সি তার ব্ৰাহীন স্তন দুটো আমার বুকের ওপর চেপে ধরে বললো, তুমি কথা দাও যে, তুমি আবার আমার কাছে ফিরে আসবে।
আমিও ওর পিঠে হাত বুলিয়ে বললাম, আমি কথা দিলাম আমি আবার তোমার কাছে ফিরে আসবো। বিদায় নিয়ে আমি দ্রুত সেখান থেকে চলে এলাম। একটু পরেই প্লেনটাকে আকাশে উড়িয়ে দিলাম। আমার মাথায় তখন একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল। সত্যি কি বেটিলাও এবং জুনি কোনও নির্জন দ্বীপে এক নিঃসঙ্গ ধনী বৃদ্ধের সঙ্গিনী কাম সেক্রেটারীর চাকরী পেয়েছে? না কি তাদের এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সিগুলো সত্যি সত্যি ভুয়ো! নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে। আর সেই রহস্যটা উদ্ঘাটন করতে পারলেই সন্ধান করার কাজটা সহজ হবে।
জয়সির বর্ণনা মত সেই দ্বীপের খুব নীচু দিয়ে প্লেনটা চালাতে থাকলাম আমি। ওর কথাই ঠিক। অলৌকিক দ্বীপই বটে। ওপর থেকে কিছু বোঝা যায় না। প্রাণের কোনো চিহ্ন দেখা যায় না। আমি দূরবীণ দিয়ে দেখলাম–দ্বীপের মাঝ বরাবর বর্ণনা মত সাদা কংক্রীটের বাড়ি। কতকটা পিলবক্সের মতন। বাড়ির চারপাশে ঘন বন জঙ্গল। দেখা গেল সেখানে কয়েকজন লোক ঘোরাফেরা করছে। তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। খুব সাবধানে নামতে হবে এখানে। হাতে সময় বেশী নেই। খুব তাড়াতাড়ি চূড়ান্ত অভিযানের জন্য তাকে আবার এখানে অবতরণ করতে হবে। এবার সেই দ্বীপটাকে ফেলে প্লেনটাকে ছুটিয়ে দিলাম হাওয়ার গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। আমার মনে হলো এ ব্যাপারে ম্যাকের কাছ থেকে অনেক বেশী খবর নেওয়া প্রয়োজন। এবং সেইসব খবরের ওপরেই আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এই অলৌকিক দ্বীপ এবং ঐ রহস্যময় বাড়িটার সম্বন্ধে অনুসন্ধান করাটা যুক্তিযুক্ত হবে কিনা। সময় যেখানে মূল চাবিকাঠি এই অভিযানের, অতএব আমাকে খুব ভেবেচিন্তেই এগোতে হবে। জয়সির ছোট জাহাজে ফিরে এসে ভাবলাম ও বলেছিলো ওর জাহাজে রেডিও রুম আছে। সেটা যদি ভালো থাকে তবে সেখান থেকেই ম্যাককে বার্তা পাঠানো যাবে।
জয়সি ডেকের ওপর দাঁড়িয়েছিল। আমি তার কাছে গিয়ে বললাম, তুমি সেই বাড়িটার কথা ঠিকই বলেছিলে। যাইহোক এখন তুমি আমাকে তোমার সেই রেডিওরুমে নিয়ে চলল।
বেশ তো চলো আমার সঙ্গে।
আমি অবাক হলাম। অনেকগুলো ট্রান্সমিটারে ভর্তি রেডিওরুম। তার মধ্যে দুটো এতো শক্তিশালী যে ম্যাকের কাছে বার্তা পাঠাবার পক্ষে যথেষ্ট। আমি তাড়াতাড়ি একটা ট্রান্সমিটার চালু করে দিলাম বোতাম টিপে। ম্যাককে বললাম–ওয়ালটন এবং হ্যামার এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সী দুটোর খোঁজ নিয়ে এক্ষুনি জানাতে। ম্যাককে সিগন্যাল দিলাম। এখন অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। রিসিভার চালু করে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
জয়সি ডেকের ওপর বসেছিল। তার পরনে খাটো সাইজের হাফ প্যান্টটা তার হাঁটুর ওপর আঁট হয়ে বসেছিলো। তার গায়ে এখন আগের সেই ব্লাউজ নেই। তার বদলে সেখানে বিকিনি শোভা পাচ্ছিল। আমি তার পাশে গিয়ে বসলাম।
আচ্ছা কমান্ডার, তুমি আমার জন্য এতো সব করছে কেন বলো তো?
আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল জয়সির দেহের সঙ্গে আমার দেহটাকে এক করে ফেলার। কিন্তু কি কারণে যেন সে ইচ্ছাটাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখলাম।
আমি তাকে বললাম, তোমার বোনের মত আমার এক বান্ধবী একই অবস্থায় পড়েছে। আমি নিজে এ ব্যাপারে জানতে খুব আগ্রহী। মনে হয় এখানে কোনো অঘটন ঘটতে চলেছে। এখন আমাকে একটা বিশেষ খবরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
জয়সি বললো, তুমি যে কাজ করছে সত্যি তার প্রশংসা না করে থাকতে পারছি না। আমি তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ডেকের ওপর শুয়ে পড়লাম। হঠাৎ দেখলাম জয়সি আমার বলিষ্ঠ দেহের দিকে তাকিয়ে আছে। তার অশান্ত চোখ দুটি এখন আমার দেহ পরিক্রমায় ব্যস্ত। তার পরনের বিকিনি স্তন দুটোকে খুব অল্পই ঢাকতে পেরেছিল।
জয়সি আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তোমার মধ্যে এমন একটা কিছু আছে যা কোনো মেয়েই বুঝতে ভুল করবে না। বড় বড় কথা বলে তুমি মন জয় করতে চাও না। তোমার স্বভাব হলো কথা কম, কাজ বেশী। মেয়েদের সম্বন্ধে তোমার খুব বেশী কৌতূহল নেই।
আমি গাঢ়স্বরে বললাম, কিন্তু তুমি যে আমাকে কৌতূহলী করে তুলছে জয়সি।
তা তুমি তোমার সেই কৌতূহলটা মেটালেই তো পারো। বলে জয়সি আমার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকলো। আমি অনুভব করলাম জয়সির হাতটা আমার বুকের ওপর বিলি কাটছে। আমি এবার চোখ মেলোম পুরোপুরি। জয়সি তখন আমার বুকের ওপর ঝুঁকে পড়েছে। তার ঠোঁট দুটি থরথর করে কাঁপছে। তার স্তন দুটি প্রায় বিকিনি মুক্ত হয়ে বিস্ফোরণ ঘটাবার অপেক্ষায় সময় গুনছে।
আমি উত্তেজিত হয়ে উঠলেও এই মুহূর্তে ড্যানিয়েলের কথা মনে পড়ে গেল। জয়সি তার দেহের নৈবেদ্য সাজিয়ে তাকে উপহার দিতে চাইছে, সে নিতে পারছে না। অথচ ড্যানিয়েলকে সে পেতে চায় তার আকাঙ্ক্ষার সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে গিয়ে। কিন্তু ড্যানিয়েল সব ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
এই মুহূর্তে আমি ভীষণ ভাবে দেহের ক্ষুধা অনুভব করছিলাম। তাই বাধ্য হয়ে জয়সির আহ্বানে সাড়া দিলাম। ওর পিঠে হাত রেখে ওকে আকর্ষণ করলাম। বিকিনি অপসারিত হলো জয়সির বুকের ওপর থেকে।
জয়সি তার স্তনযুগল আমার বুকের ওপর চেপে ধরলো, তাদের নরম স্পর্শ আমাকে অসম্ভব উত্তেজিত করে তুললো। আপনার থেকেই তার কোমর উত্তোলিত হলো। ডেকের ওপর জয়সিকে আস্তে আস্তে শুইয়ে আমি তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। জিভ দিয়ে আমি সেটাকে বৃত্তাকারে চুম্বন দিতে থাকলাম। অসম্ভব সুখ-তৃপ্তির কান্নার মতো করে ঝাঁকিয়ে উঠলো সে। দুহাত বাড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আমি আর স্থির থাকতে পারছিলাম না। জয়সির শেষ বাধায় টান দিলাম। সে কোমরটা উঁচু করলো। শেষ বাধা নেমে গেলো পায়ের নীচে। সামান্যই পোষাক ছিল আমার পরনে, কয়েক মুহূর্ত সময় লাগলো পোষাক থেকে বেরিয়ে আসতে। ধীরে ধীরে উত্তেজিত হয়ে উঠলাম। জয়সির ঠোঁটে আমার ঠোঁট। আমার তাড়া না থাকায় আমি ধীরে ধীরে তাকে চরম উত্তেজনার মুহূর্তে পৌঁছে দিতে তৎপর হলাম। কিন্তু হঠাৎ অস্বাভাবিক ভাবে দ্রুত জয়সি তার দেহে ক্লাইমেক্স টেনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফেললো। কিন্তু আমি তখনো অপরাজিত। অবশ্য জয়সি আমাকে সাহায্য করে গেল এ ব্যাপারে। এক সময় দুজনেই এক চরম সুখকর অবস্থায় পৌঁছে গেলাম। দুজনেরই চোখ বুজে এলো এক সঙ্গে। আমি তার বুকের ওপর পড়ে রইলাম সেই অবস্থায়।
তারপর একসময় জয়সি শান্ত চোখ মেলে তাকালো আমার দিকে। এত সুখ আমি জীবনে এর আগে কখনও পাইনি।
আমি প্রত্যুত্তরে মিষ্টি হাসলাম ক্যারিবিয়ানের উষ্ণ চাদরের তলায় শুয়ে, সেই মুহূর্তে আমি রেডিও সিগন্যাল শুনতে পেলাম, তাড়াতাড়ি রেডিওরুমের দিকে এগিয়ে গেলাম। ম্যাক তখন আমাকে বার্তা পাঠাচ্ছিল সাংকেতিক ভাষায়। ওয়ালটন এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি নিউইয়র্কে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। লাইসেন্স প্রাপ্ত, একমাস কাজ চালানোর পর সেটা বন্ধ হয়ে যায়। মিয়ামির হ্যামরের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। খুব বেশী মেয়ে এ দুটো এজেন্সির মারফৎ চাকরী পায় নি। ম্যাকের বার্তার শেষ অংশটুকু আমার চোয়াল শক্ত করে তুললো। দাবীপত্র পাওয়া গেছে। সময় ফুরিয়ে আসছে। তুমি যদি কোন সন্ধান করে থাক তাহলে এগিয়ে চল।
হ্যাঁ সন্ধান পেয়েছি বৈকি। সেই অলৌকিক দ্বীপের পাশে প্রবাল দ্বীপের সন্ধান এবং আরো অনেক কিছু। সেই ফরাসী ইন্টেলিজেন্স অফিসার বর্ণিত বৈজ্ঞানিক হ্যারল্ড ফ্রাটকের কথা মনে পড়ে গেল আমার। তারপর মনে পড়লো সেই দাস ব্যবসায়ীর কথা, মেয়ে সংগ্রহই যার প্রধান ব্যবসা ছিল, এখন দেখা যাচ্ছে মেয়েদের চাকরী দেওয়ার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভুয়ো, কারণ জয়সির অনুসন্ধান প্রমাণ করে দেয় যে, নিঃসঙ্গ ধনী বৃদ্ধ বলে এখানে কেউ থাকে না। ওরকম কারোর নিজস্ব কোন দ্বীপ এখানে নেই। আসলে এইসব এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি, কাগজে চাকরীর বিজ্ঞাপন দেওয়া এসবই জুসের কুকীর্তির স্বাক্ষর বহন করছে।
মনে মনে ভাবলাম অত্যন্ত বিপজ্জনক হলেও আর একবার ঐ দ্বীপে অনুসন্ধান কাজ আমি চালাব। জয়সিকে বললাম ও ঐ ছোট জাহাজটিতে অপেক্ষা করে থাকলেই অনেকখানি সাহায্য করা হবে।
আমি জয়সিকে কথা দিলাম কাল সকালের কোন এক সময় আমি তাকে রিপোর্ট করবো।
এরপর আমি জয়সির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে জলে নেমে এলাম, জয়সি হাত নেড়ে বিদায় সম্ভাষণ জানালো, মনে মনে ভাবলাম আমার জন্য আরো অনেক মেয়ে অপেক্ষা করে আছে ঐ.. অলৌকিক দ্বীপটিতে। জুসের সামনাসামনি দাঁড়াতেই হবে। চিরদিনের মতো সেই শয়তানকে খতম করে দিতে হবে।
.
০৬.
ট্রিটনে ফিরে এসে দ্রুত কেবিনে চলে এলাম। স্টুয়ার্টের তৈরী স্কুবা সুটগুলির মধ্য থেকে একটা বিশেষ ধরনের পোশাক টেনে নিয়ে চোরা পকেটগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলাম। স্টুয়ার্ট আমাকে সেই পোশাকটা ব্যাখ্যা করছিল। কোন পকেটে কি আছে বুঝিয়ে দিচ্ছিল, ছোট সিরিশের ক্যাপসুলগুলো হচ্ছে বিস্ফোরক বস্তু। ছোট লাইটারটা সিগারেটের অর্ধেকের থেকেও বিস্ফোরক জিনিসে আগুন লাগানোর পক্ষে যথেষ্ট। ঢাকনা দেওয়া একটা পকেটের ভেতরে রয়েছে জলের নীচে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য রবারের মোড়া তার জাতীয় বস্তু। নাইট্রোলিসারিন মাখানো। স্টুয়ার্ট আমাকে সেটার ব্যবহার বুঝিয়ে দিচ্ছিল। সুটের অপর পকেটে একটা ছোট ট্রান্সমিটার রাখা আছে। মাত্র একটা বার্তা পাঠানোর উপযোগী করে তৈরী করা এই ট্রান্সমিটার। বার্তা পাঠানোর পরেই তার আয়ু শেষ। এসব ছাড়া আরো কতগুলো প্রয়োজনীয় জিনিস সেই বিশেষ ধরণের সুটের বিভিন্ন পকেটে থাকতে দেখা গেল। বিপদের সময় এসবগুলো প্রয়োজন হতে পারে। আমি যখন আমার জিনিসপত্র গোছ–গাছ করতে ব্যস্ত তখন হঠাৎ বিল হেডউইন এসে খবর দিল, ড্যানিয়েল তার সী স্পাইডারের অভিযান শেষ করে ফিরে এসেছে। আমি ব্যস্ত হয়ে তক্ষুনি তার কেবিনে চলে এলাম এবং তখন আমার আর এক দফা অবাক হওয়ার পালা। ড্যানিয়েল আজ সুন্দর করে সেজেছে, তার রূপ যেন ফেটে পড়ছে। সে আজ উঁচু করে চুল বেঁধেছে। পরনে লাল বিকিনি।
তোমাকে আজ খুব সুন্দর দেখাচ্ছে ড্যানিয়েল, আমি তার উদ্ধত বুকের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে সম্ভাষণ করলাম, বিকিনির আড়ালে তার স্তন যুগল অসম্ভব ফোলা দেখাচ্ছিল। যেন লাল গোলাপ ফুটে রয়েছে বুকের মাঝে।
আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম, আমাকে এক্ষুনি বেরোতে হচ্ছে, আজ রাত্রে ফিরছি না। ড্যানিয়েল ঘুরে দাঁড়াল। তা কখন ফিরে আসছে? কাল সকালে। আমার একবার ইচ্ছা হলো ড্যানিয়েলকে সব খুলে বলি, কিন্তু কি ভেবে চেপে গেলাম। আমি ভ্যানিয়েলের কাছে গিয়ে তাকে বুকের মধ্যে টেনে নিলাম। আমি বুঝতে পারলাম ড্যানিয়েল দুহাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল, ড্যানিয়েল সবেমাত্র তার ঠোঁটজোড়া আমার ঠোঁটের সঙ্গে মিশিয়েছিল ঠিক সেই মুহূর্তে জাহাজের ওপর গোলা বর্ষণ হলো। ড্যানিয়েল লাফিয়ে উঠলো। ও দিকে আমি ছুটে গিয়ে চোখ রাখলাম কামানের গোলা ছোঁড়ার গর্তটার ওপর, উঁকি মেরে দেখার জন্য। এক ধরনের অনুসন্ধানকারী জাহাজ দ্রুত বেগে এগিয়ে আসছে। গোলা বর্ষণের অর্থ হলো তারা আসছে, আমাদের জাহাজটাকে সতর্ক করে দিতে চাইছে।
অনুসন্ধানকারী জাহাজটা তখন ট্রিটনের গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। ইউনিফর্ম পরিহিত একজন অফিসার সহ ছজন লোককে দেখতে পেলাম, বাকী পাঁচজন নাবিক। সেই দীর্ঘদেহী অফিসারের ইউনিফর্ম দেখে আমি চিনতে পারলাম, তারা কোথা থেকে আসছে, আর কেনই বা আসছে। তারা হলো ভেনেজুয়েলিয়ান, সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল পাহারা দেওয়া যাদের কাজ। কিন্তু ট্রিটনকে পরীক্ষা করার কোনো কারণ আমি দেখতে পেলাম না। তারা তাদের ছোট ডিঙ্গি ছেড়ে ট্রিটনে উঠে এলো।
লম্বা রোগাটে অফিসার ভদ্র লোকটিকে বেশ বিজ্ঞ পাণ্ডিত্যপূর্ণ বলে মনে হয়। লোকটার উদ্দেশ্য যে কি, ঠিক ত বোঝা যাচ্ছে না। যাইহোক আমি কোনো ঝুঁকি নিতে চাইলাম না। মই বেয়ে নিঃশব্দে জাহাজ থেকে নেমে জলে ভাসতে থাকলাম, জাহাজের দেওয়াল ঘেঁষেই নিজের দেহটাকে জলে ভাসিয়ে রাখলাম। মাঝে মাঝে শুনতে পাচ্ছিলাম অফিসার ভদ্র লোকটির সঙ্গে ড্যানিয়েল এবং বিল হেডউইনের কথোপকথন।
নীচের ডেকগুলো আমি একবার পরীক্ষা করে দেখতে চাই। অফিসারটির ইচ্ছের কথা শুনে চমকে উঠলাম আমি। তাহলে? বিড়াল কি ইঁদুরের গন্ধ পেয়েছে?
আমি নিজেকে মনে মনে অপরাধী মনে করলাম। তারা আমার আসল পরিচয় জানেন না। যে কোনো মুহূর্তে বিড়াল একবার যদি ইঁদুরের সন্ধান পেয়ে যায়–আমি পরের কথাগুলো আর ভাবতে পারলাম না। এরপর দড়ির মই বেয়ে আবার ফিরে এলাম ট্রিটনে। আমি তাড়াতাড়ি পোশাক পরিবর্তন করে ট্রান্সমিটারের সামনে বসে ম্যাককে বার্তা পাঠানোর জন্যে তৎপর হলাম।
বার্তাটা হলো এই রকম–
মনে করুন আমি এখন কড়িকাঠের উপর ঝুলছি। চুড়ান্ত অভিযানে আমি এক্ষুনি নেমে পড়ছি। প্রতিটি মিনিট এখন আমার কাছে মূল্যবান সময়।
ট্রান্সমিটার অফ করে রিভলবিং চেয়ারটা ঘোরাতেই আমি দেখলাম, ড্যানিয়েল দরজার সামনে দাঁড়িয়ে।
সত্যি করে বলতে কে তুমি? ড্যানিয়েল শান্তভাবে প্রশ্ন করল। এই রকম এ ঘরে তোমার প্রবেশ করা উচিৎ হয় নি। আমি বললাম, তোমার এ কাজের জন্য দেখবে একদিন তোমায় ব্যথা পেতে হবে।
ড্যানিয়েল বেশ জোরের সঙ্গেই চিন্তা করে বলল, –কিছুদিন থেকে আমি তোমাকে সন্দেহ করছিলাম। এখন আমি একেবারে নিশ্চিত। বল তুমি কে?
আমি ড্যানিয়েলের দিকে স্থির চোখে তাকালাম, আমি ঠিক করলাম এবার ড্যানিয়েলের সঙ্গে একটা বোঝাপড়া করতে হবে।
আমি প্রতারক নই। আমি আরো বললাম–আর জোর দিয়ে আমি এ কথাটা বলতে পারি, ভেনেজুয়েলিয়ানদের সঙ্গে ঐ জাহাজটার কোন সম্পর্ক আদৌ নেই। আমার কথা শুনে ড্যানিয়েল স্তব্ধ হতবাক।
আমি বললাম, আমার নাম টেড, কিন্তু কখনই কমান্ডার ছিলাম না। আমি সিক্রেট এজেন্ট। আমি তোমাকে যা বলবো সব সত্যি। রূপকথার গল্প মনে হলেও খাঁটি সত্য। এই মুহূর্তে তোমাকে আমার এখানে আসার উদ্দেশ্যটা প্রকাশ করলে কিছু এসে যাবে না বলে আমি মনে করি। আমি সংক্ষেপে অতি দ্রুত আমার কাহিনী বলে গেলাম।
আমি কথা শেষ করে ড্যানিয়েলের দিকে তাকালাম। তার নীল চোখ দুটি এখন অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছিল। তার সেই নীল চোখে এখন গভীর বিস্ময়, সমুদ্রের ঐ নীল অতল জলের মতই অবাক করা।
ড্যানিয়েল বললো, যা তুমি খুঁজতে যাচ্ছ সেটা তুমি নিজেই হয়তো জানো না। জুডাস হয়তো সেই দ্বীপে থাকতে পারে, কিন্তু তোমার মুখে শুনলাম লোকটা যে রকম ফন্দিবাজ তাতে তার অন্য কোথাও পালিয়ে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
এখন কেবল একটাই চিন্তা আমাদের, সর্বাধুনিক সাবমেরিনগুলো অক্ষত অবস্থায় কি করে উদ্ধার করা যায়। আমি অনুভব করলাম ড্যানিয়েল আমার হাতটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো দুহাতের আঙুলগুলো দিয়ে, যেন সে আমাকে একা ছাড়তে চায়না। আমি আর দেরী না করে ড্যানিয়েলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ডেকের ধারে এগিয়ে গেলাম। আমার এক হাতে সাঁতারের জন্য ব্যবহৃত পাখীর ডানা।
বাতাসের তীব্রতা এড়ানোর জন্য আমি আমার ঘোট প্লেনটা নীচু দিয়ে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম। জয়সির সেই ছোট জাহাজটির কাছে। সেখান থেকে আমি যাবো আমার অভিযানের মূল ভূ–খণ্ড কম্ব ও নোরেস্টা দ্বীপে রবারের ভেলায় চেপে। আপাততঃ এই আমার পরিকল্পনা।
অপরাহ্নবেলায় জাহাজের ওপর চারপাশে জল আছড়ে পড়ছিল। আমি জাহাজের ওপর প্লেনটা নামিয়ে দৃষ্টি প্রসারিত করে দিলাম, ডেকের চারপাশে। আমি ভাবছিলাম জয়সি দূর থেকে আমায় দেখতে পেয়ে ছুটে আসবে। কিন্তু কোথায় জয়সি? কয়েকবার ওর নাম ধরে ডেকেও কোনো সাড়া পেলাম না। কেবল সমুদ্রের গর্জন ছাড়া আর কিছুই শোনা গেল না।
অনেক দূরে চোখে পড়লো একটা কাঠের ভেলা সামনে দ্বীপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। কি ঘটেছে এরপর আর বুঝতে বাকি রইল না। তাহলে? ট্রিটন থেকে ফেরার পথে ভেনেজুয়েলিয়ানরা কি জয়সির জাহাজটা দেখতে পেয়েছিল, এবং তারা তাকে ধরে নিয়ে গেছে? মুহূর্তের মধ্যে আমি আমার পরিকল্পনার কিছু অদলবদল করলাম। রবারের ভেলার বদলে আমি জয়সির জাহাজটাকেই চালিয়ে নিয়ে যাবো ঠিক করলাম। হয়তো জয়সির জীবন রক্ষা হতে পারে।
দক্ষিণা বাতাস বইছিল। আমার হাতে জাহাজখানি পালতোলা হাল্কা নৌকার মত ছুটে যাচ্ছিল। তখনও বেশ আলো ছিল। প্রবাল বেষ্টিত সেই ছোট্ট দ্বীপটা আমার দৃষ্টিগোচরে এলো। আমি ইতিমধ্যে আমার পরবর্তী কর্তব্য স্থির করে ফেললাম। ছোট বেঁটে খাটো লোকটি জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখলো। প্রথমে সে ভাবল গোধূলী আলোটা তার ওপর বুঝিবা মায়াজাল সৃষ্টি করেছিল। একটা ভৌতিক ধূসর আলোর মধ্যে দিয়ে এগিয়ে আসছিল।
কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সে বুঝতে পারলো সেটা জয়সির ছোট্ট জাহাজখানা। তার বাকী সঙ্গীদের ওপর খুব রাগ হলো। সে প্রথমে সুইচ বোর্ডে হাত দিয়ে লাল বোতামের ওপর চাপ দিল। তার আওয়াজটা হ্যারল্ড, তাতার এবং আরো তিনজন সহচরদের তার চেম্বারে টেনে আনতে বাধ্য করবে। তাদের আসার অপেক্ষায় থাকার সময় সে নিজের ওপর ভীষণ রাগ করল। ট্রিটনে হ্যারল্ডকে পাঠানোই তার ভুল হয়েছে। কিন্তু হ্যারল্ড তাকে ধরে বসলো আর তার অনুরোধেই সে তাকে অনুমতি দিয়েছিল। ফেরার পথে জয়সির সেই ছোট্ট জাহাজটা দেখতে পেয়ে তারা ওখানে হানা দেয় এবং সেই মেয়েটিকে ধরে নিয়ে আসে সেখান থেকে। জুডাস সেই মেয়েটিকে তাদের ধরে আনতে দেখে মনে মনে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল।
দৈত্য সমান মঙ্গোলিয়ানকে অনুসরণ করে হ্যারল্ডই প্রথমে জুডাসের অফিস ঘরে প্রবেশ করল। অপর তিনজন প্রহরী সে সময় ঘরে ঢুকলো। তাদের সবার চোখে একটা অজানা ভয় থিরথির করে কাঁপতে থাকে।
আমি তোমাদের বলেছিলাম ট্রিটন জাহাজে অনুসন্ধান করে ফিরে আসতে, জুডাস চীৎকার করে বললো–অন্য কোথাও কেউ তোমাদের থামতে বলেনি, কিংবা ঐ মেয়েটিকে এখানে নিয়ে আসতে বলেনি।
জুডাস জানলা পথে আবার উঁকি মারল। জয়সির সেই ছোট্ট জাহাজটা দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছিল তখন। জুডাস তার হাতের রিভলবারটা শক্ত করে ধরলো। তারপর তাতারের দিকে। ফিরে বলল–একজন নাবিকের সঙ্গে তুমি এক্ষুনি চলে যাও। জাহাজটাকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দাও। আমি ওটার কোনো চিহ্ন রাখতে চাই না। সে যেই হোক না কেন, তাকে হত্যা করে এসো।
তাতার ডিঙ্গি নিয়ে ছুটে চলেছে। উদ্দেশ্য জয়সির জাহাজটার ওপর তীব্র আঘাত হানা।
ওদিকে আমি আমার কর্তব্য স্থির করে ফেলেছিলাম। আমি আমার পরিকল্পনা মতো জাহাজের একেবারে পিছন দিকে চলে এলাম। জাহাজের ইঞ্জিন চালু রইলো, সেটা তার গতি পথে এগিয়ে চললো। দড়ির মইটা জাহাজের পিছন দিকে আগে থেকেই ঝোলান ছিল। আমি সেই মই বেয়ে জলের ওপর নেমে এলাম।
কিছুক্ষণ সেই অবস্থায় ঝুলে থেকে জলের মধ্যে ঝাঁপ দিলাম। জাহাজটা তীব্র বেগে এগিয়ে যেতে থাকলো, জাহাজটার গায়ে সমুদ্রের জল আছড়ে পড়ছিল। তার ঝাপটা এসে লাগছিল আমার গায়ে।
ওদিকে ডিঙ্গিটা এবার জাহাজের মুখোমুখি এসে দাঁড়াল। আমি জলের নীচ থেকেই শুনতে পেলাম গুলির আওয়াজ। সম্ভবতঃ ওরা মেসিনগানই ব্যবহার করে থাকবে। একবার জলের ওপর ভেসে উঠে দেখে নিলাম জাহাজটার পরিণতি।
খুব সতর্কতার সঙ্গে আমি সাঁতার কাটছিলাম, দেখলাম তাতার ফিরে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাতার তার ডিঙ্গি নৌকো নিয়ে দ্বীপের প্রবেশ পথে ঢুকে পড়েছিল।
হঠাৎ আমার নজরে পড়লো বিরাট বিরাট ড্রেন পাইপ। ভাবলাম এগুলি কি কাজে ব্যবহৃত হয় সে রহস্যটা আগে আমাকে জানতে হবে।
এক সময় আমি বুঝতে পারলাম যে প্রবাল দ্বীপ এবং উপহ্রদের মাঝপথে এসে আমি উপস্থিত হয়েছি। লম্বা করিডোরের মত চ্যানেল। আমি খুব সাবধানে এগিয়ে যেতে থাকলাম। প্রথমে কিছুই চোখে পড়লো না। কিন্তু দ্বীপের গভীরে প্রবেশ করার পর দেখলাম দূরে দ্বীপের ঠিক মাঝখানে একটা ডিম্বাকৃতি অট্টালিকা দাঁড়িয়ে রয়েছে। সম্ভবতঃ বাড়িটা দোতলার সমান উঁচু। ঠিক প্রবেশ পথে স্টীলের বিরাট দুটি আধার দেখতে পেলাম। মনে মনে ভাবলাম ও দুটো বোমার সাহায্যে উড়িয়ে দেবো। বিশেষভাবে তৈরী প্যান্টের পকেটে রয়েছে সেই ভয়ঙ্কর বিস্ফোরক দ্রব্য। কিন্তু আপাততঃ সেটা পকেটের মধ্যেই রেখে দিলাম। কারণ, আমাদের সাবমেরিনগুলো এবং নাবিকরা সেখানে নিরাপদে আছে কিনা তা না জানা পর্যন্ত হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হবে।
আমি এখানে এসেছি সাবমেরিনগুলো এবং নাবিকদের উদ্ধার করতে কিন্তু ধ্বংস করতে নয়। যেভাবে হোক সমুদ্রের তীরভূমি খুঁজে বার করতেই হবে। এবং সমুদ্রের ফাঁদ খোলার পথ। আমাকে খুঁজে দেখতেই হবে।
হঠাৎ আমার চোখে পড়লো কতগুলো সুস্পষ্ট কালো ছায়ামূর্তি আমার দিকে এগিয়ে আসছে। হঠাৎ আমার কাঁধের পাশ দিয়ে কয়েকটা ধারালো অস্ত্র ছুটে বেরিয়ে গেলো।
মনে হয় জলের তলায় কোথাও টিভি ক্যামেরা বসানো আছে নিশ্চয়ই সমুদ্রের ফাঁদের প্রহরায়। এবং এখানে আসামাত্র সেটা আমার আসার খবর পাঠিয়ে থাকবে হয়তো।
এখন একমাত্র উপায় হলো নিজেকে তাদের দৃষ্টির আড়াল করা। স্টুয়ার্টের কথা আমার মনে পড়ে গেলো। প্রকৃতির কাছে আমরাই ঋণী, যখন, যে কোনো প্রয়োজনে। স্টুয়ার্ট আমাকে একটা শিশি দিয়ে বলেছিলো, বিপদের সময় এটা কাজে লাগতে পারে। আমি সেই শিশিটা পকেট থেকে বার করে তার শেষ প্রান্তে চাপ দিলাম। হাতটা অসম্ভব কেঁপে উঠে সেটা ফেটে পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে আমার চারপাশ ঘনকালো মেঘের মত হেঁয়ে গেলো। শিশি থেকে সেই তরল জাতীয় পদার্থ। জলের ওপর পড়ে একটা কালো পর্দা সৃষ্টি করলো। আমার দেহটা ঢাকা পড়ে গেলো সেই কালো পর্দার আড়ালে।
কিছুক্ষণ পরেই বীচের উপর দাঁড়িয়ে স্কুবা স্যুটটা খুলে বালির ওপর ফেলে দিলাম। পকেটগুলোর ভেতর হাত ঢুকিয়ে দিলাম। হাতে উঠে এলো বিস্ফোরক তার, একটা ছোট ট্রান্সমিটার তার। এগুলো আমি অতি সাবধানে বালির নীচে চাপা দিয়ে রাখলাম। আমি আমার সঙ্গে রাখলাম কেবল সিগারেট লাইটারের আকারের ছোট একটা রিভলবার এবং দুটি ছোট সিরিস ক্যাপসুল। তারপর নীচু হয়ে ছুটে চললাম দ্বীপের প্রবেশপথের দিকে।
ওদিকে তখন সেই রহস্যময় বাড়ির একটি ঘরে কুৎসিত দেখতে ছোটখাটো বেঁটে লোকটা রাগে উত্তেজনায় লাফাতে শুরু করে দিয়েছিল। সব দৃশ্য সে দেখে ফেলেছে। জলের নীচে রাখা টি, ভি, ক্যামেরা তাকে প্রতিটি দৃশ্যের ছবি পাঠিয়ে ছিল।
লোকটি চীৎকার করে উঠলো, বিপদসূচক ঘণ্টা বাজাও।
আমি হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটছিলাম। হঠাৎ একটা সংকেতধ্বনি শুনতে পেলাম। সঙ্গে সঙ্গে রাত্রির নিস্তব্ধতা এবং অন্ধকার উধাও হয়ে গেল। সারা দ্বীপ নীলাভ আলোয় আলোকিত হয়ে উঠলো।
আমি একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়েছিলাম। একদল সশস্ত্র প্রহরী আমার মাথা লক্ষ্য করে গুলি করতে উদ্যত। আমি তাড়াতাড়ি দেহটাকে গাছের আড়ালে নিয়ে গেলাম। পরপর তিনটি গুলি এসে গাছটিতে বিদ্ধ হলো। আমি এবার পজিসন নিলাম। পরপর তিনবার গুলি ছুঁড়লাম। অব্যর্থ লক্ষ্য। তিনজনই রক্তাক্ত কলেবরে মাটির ওপর লুটিয়ে পড়লো।
আমি তখন দ্বীপের প্রবেশ পথের মুখে দাঁড়িয়েছিলাম। সেই পথ দিয়েই আমি ছুটে চললাম। আমার চোখে পড়লো সত্যিকারের একটা বিরাট জেটি। সেখানে একটা জাহাজের অস্তিত্ব দেখতে পেয়ে ছুটে গেলাম সেদিকে। তারপর একরকম লাফ দিয়ে উঠলাম গিয়ে সেই জাহাজটায়। এখানে আমি অস্ত্রের ভাণ্ডার আবিষ্কার করলাম। দুটি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, একটি মেসিনগান। অস্ত্রগুলোর দিকে উজ্জ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভাবলাম-এরপর আমার হাত থেকে এই দ্বীপের আর কেউ রক্ষা পাবে না।
জেটির দিকে লোকগুলো তখন এগিয়ে আসছিল। আমি ডেকের উপর স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে আমার হাতের রাইফেল গর্জে উঠলো। জলে ভারী জিনিস পতনের শব্দ হলো। সঙ্গে সঙ্গে আর্তচীৎকার। বাকীরা সবাই প্রাণ হাতে নিয়ে পালাবার চেষ্টা করলো। আমি উল্লাসে ফেটে পড়লাম। আমি আর দেরী না করে ডেকের ওপর থেকে ব্যাপ দিলাম।
কিছুক্ষণ পর সেই রহস্যময় বাড়ির প্রবেশ পথে পৌঁছলাম। কয়েকজোড়া পায়ের শব্দ শুনতে পেলাম। পিছন ফিরে তাকাতেই দেখলাম আধডজন প্রহরী আমার দিকে ছুটে আসছে। আমার হাতে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল আবার গর্জে উঠলো। গুলির মুখে পড়ে তারা পিছু হটে গেল। এবার আমি সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠতে থাকলাম। সিঁড়ির শেষ ধাপে পৌঁছবার আগেই দেখলাম একেবারে শেষ ধাপে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিশাল দেহী একটা লোক। আমি তাকে চিনতে পারলাম, মঙ্গোলিয়ান। আমার মাথার ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে দানব মঙ্গোলিয়ান, নীচে তার সহচর। আমি তাদের ফাঁদে জড়িয়ে পড়লাম। উপায় না দেখে আমার হাতের ছোরাটা তাতারকে লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারলাম। একটু পরেই আমার ঘাড়ের ওপর একটা প্রচণ্ড আঘাত অনুভব করলাম। আমার পায়ের তলার মাটি সরে যেতে থাকলো। চোখের সামনে অন্ধকার ঘনিয়ে এলো।
জ্ঞান ফিরে আসতেই আমার পিঠের ওপর অসম্ভব ঠাণ্ডা অনুভব করলাম। উঠেবসতেই কানে কর্কশ কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। চোখ মেলে তাকাতেই দেখলাম, অদ্ভুত হাস্যকর চেহারার এক হোট খাটো লোক দাঁড়িয়ে আছে। বিরাট চেহারা সর্ব মঙ্গল দাঁড়িয়ে ছিল জুডাসের পাশে। তার হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা। আমার মনে হলো এই লোকটাই সেই যুদ্ধ জাহাজের ওপর দাঁড়িয়েছিল। সে অফিসার র্যাঙ্কের। সেখান থেকেই সে হুকুম দিচ্ছিল তাদের জাহাজটা মার্চ করার জন্য। রোগাটে লম্বা চেহারা, চোখে চশমা।
হ্যারল্ড, তোমার সঙ্গে আমাদের এক পুরোনো বন্ধুর পরিচয় করিয়ে দিই। জুডাস তাকে উদ্দেশ্য করে বললো। আমি তখন নিজের পায়ে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছিলাম। তারা একটা বিরাট রেকট্যাঙ্গুলার জাহাজের ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়েছিল। ঘরের ঠিক মাঝখানে একটা লম্বা টেবিল। তার ওপর সাজানো রয়েছে ট্রান্সমিটার, স্পীকার, ডায়াল, সুইচ, নব ইত্যাদি।
ইনি হলেন সেই বিখ্যাত টেড। জুডাস পরিচয় করিয়ে দিল। তারপর আমার দিকে এগিয়ে এলো সে। তার ঠোঁটে বিদ্রুপের হাসি।
হয়তো আমি একটু ভাবপ্রবণ হয়ে উঠেছি, জুডাস আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো, অবশ্য আমি এমন কিছু চাইনি যা আমাদের পরিকল্পনার বাইরে ভুল হতে পারে।
আমি বললাম, তাহলে কি আপনি সুখী নন? এই যে আপনি আমাকে আপনার বিরাট কাজে লাগাবার কথা ভাবছেন, কিন্তু একবারও কি ভেবে দেখেছেন, আমি আপনার উপকারে লাগার চেয়েও দ্বিগুণ বিপজ্জনক।
মুহূর্তের জন্যে জুডাসের চোখে একটা কালো ছায়া ঘনিয়ে উঠতে দেখা গেলো। আমাকে বললো, হ্যাঁ, আমি স্বীকার করছি আপনি আমার কাছে সত্যি বিপজ্জনক বটে! কিন্তু এখন নয়। হয়তো আপনি আপনার বুদ্ধিবলে আমার চোখকে ধুলো দিয়ে গা ঢাকা দিতে পারেন, কিন্তু আমাদের এই দুর্ভেদ্য দ্বীপ ছেড়ে আপনি কিছুতেই পালাতে পারবেন না। হ্যারল্ড এখানে আমার হাতে হাত মিলিয়ে এই দ্বীপটাকে নিচ্ছিদ্র করে রেখেছে, পালাবার কোন পথই খোলা নেই।
আমি মন্তব্য করলাম, আপনাদের ঐ লোহার বেষ্টনীর কথা বলছেন তো?
জুডাস মাথা নেড়ে বললো, দেখছি আপনি তাহলে ওটার সাক্ষাৎ পেয়েছেন। কিন্তু সেটার সম্বন্ধে আমি আপনাকে আরো অনেক তথ্য জানাতে পারি। সেটা আরো ভয়ঙ্কর, আরো মর্মান্তিক শোনাবে আপনার কাছে। যাইহোক এখন আমার বা আপনার হাতে সময় বেশী নেই। মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই আমি আমার সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করতে চলেছি। অপর দিকে, আপনার জীবনের অন্তিম মুহূর্ত ঘনিয়ে আসতে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকী রয়েছে হয়তো। এ সময় যথাসম্ভব ভালো ব্যবহার আমি করবো, অবশ্য আপনার কাছ থেকে অনুরূপ ব্যবহার পেলে। ঠিক এই মুহূর্তে আপনাদের দেশের প্রেসিডেন্ট কিংবা তার দূত মারফৎ আমাদের নির্দেশ মতো একশ মিলিয়ন ডলার দেবার ব্যবস্থা করেছেন শুনেছি। আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, যদিও আপনি আমাদের সন্ধান করে পেয়ে গেছেন, কিন্তু সেটা বড়ো দেরী হয়ে গেছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম সত্যি কি এক্স-৮৮ আপনাদের কাছে বন্দী হয়ে আছে?
হা নিশ্চয়ই। তাদের সেই লোহার বেষ্টনির ভিতর রাখা হয়েছে। আর তাদের সেই নাবিকগুলো সাবমেরিনের ভিতর দিব্যি বেঁচে আছে। তাদের জন্য আপনাকে কিছু ভাবতে হবে না। এখানে আপনি আপনার নিজের কথা চিন্তা করুন।
জুডাস একটা বিরাটকায় টেলিভিশন সেটের সামনে গিয়ে সুইচ অন করে দিল। টি, ভি.র পর্দায় সেই লোহার বেষ্টনী দেওয়া অংশের ছবি ভেসে উঠতে দেখলাম আমি।
দেখলাম ধীরে ধীরে সমুদ্রের ফাঁদ খুলে যাচ্ছে। লোহার বেষ্টনীটা পুরোপুরি উম্মুক্ত হয়ে যেতে দেখা গেলল। তাদের সাবমেরিনটা অক্ষত অবস্থায় সেখানে বন্দী হয়ে রয়েছে। কি অদ্ভুত প্রযুক্তি বিদ্যার নিদর্শন। মনে মনে ভাবলাম প্রযুক্তিবিদ্যার সব কলকাঠি নস্যাৎ করে দিয়েছে হ্যারল্ডের এই অভিনব আবিষ্কার। আবার সুইচ টিপে যে কোনো মুহূর্তে ঐ লোহার বেষ্টনীটার ওপর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা যায়। তাতে বাঁচার চেয়ে মরণ ফাঁদে পা দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আমার স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, এর জন্য সব প্রশংসাই হ্যারল্ডের প্রাপ্য হওয়া উচিৎ।
হ্যারল্ডের দিকে ফিরতে দেখা গেল তার ঠোঁটে বিজয়ের হাসি। এটা আমাদের ঐ লোহার দুর্গের একটা আলাদা বৈশিষ্ট্যও বলতে পারেন। সবই দুর থেকে যন্ত্রের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। জলের নীচে টি, ভি, ক্যামেরা আছে। আর এখানে ঐ টি. ভি সেটটা তো দেখতেই পাচ্ছেন। কোনো বিপদের ছবি ঐ টি, ভি, সেটে ধরা পড়লেই আমরা সুইচ টিপে সেইসব বিপদগুলোর মোকাবিলা করে থাকি। সত্যি কথা বলতে কি জানেন, আমাদের এখানকার প্রহরীরা সমুদ্রের ঐ ফাঁদের কথা আদৌ জানেই না। তারা শুধু জানে, এই দ্বীপটাকে পাহারা দেওয়ার জন্যেই তাদের এখানে চাকরী দেওয়া হয়েছে।
তাই বুঝি! আমি অবাক ভাবটা কাটিয়ে উঠে এবার জিজ্ঞেস করলাম আগের দুটো সাবমেরিনের খবর কি?
জুডাস উত্তরে বললো, তারা দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। যান্ত্রিক গোলোযোগের দরুন সে দুটোর এই পরিণতি ঘটে থাকে। দুর্ভাগ্যজনক।
আমি মন্তব্য করলাম, এসব দেখেশুনে মনে হচ্ছে আপনারা এখানে প্রযুক্তিবিদ্যায় যথেষ্ট উন্নতি করেছেন।
জুডাস বললো–আমাদের উদ্দেশ্য হল নিজেদের প্রয়োজনে আরো কিছু মূলধন হাতে পেলে আমরা হয়তো আরো উন্নত ধরনের যন্ত্র আবিষ্কার করতে পারতাম। এখন কথা হচ্ছে এ ব্যাপারে আরো গবেষণা এবং পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্যে আমাদের অনেক অর্থের প্রয়োজন। আর সেই জন্যই তো আপনাদের কাছে ঐ মুক্তিপণের দাবী করা হয়েছে। অতঃপর হ্যারল্ড তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা সবিস্তারে ব্যাখ্যা করতে বসল।
এদিকে আমি সাবমেরিনের ভেতর অবস্থানরত মানুষগুলোর কথা গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবছিলাম। সাবমেরিনের সমস্ত যন্ত্রপাতি ওরা অচল করে দিয়েছে। তারা এখন অসহায় জীবন যাপন করছে। মনে মনে ভাবলাম যে ভাবেই হোক ওদের বন্দীদশা ঘোচাতেই হবে।
জুডাস এবার হারল্ডের দিকে ফিরে বলল–আমার ঐ বন্ধুটির আর একটা ভালো গুণ আছে জানেন কার্টার? মেয়েদের যৌন সুখ দিতে ওর মতো বোধহয় কেউ নেই। কীলমাস্টার কার্টার, শুনেছি আপনি তো আপনাদের দেশের একজন দুর্ধর্ষ এজেন্ট তা আপনাদের জন্যে এরকম আনন্দ উপভোগের কোন ব্যবস্থা নেই? যাইহোক এ ব্যাপারে হ্যারল্ডের জন্য আপনার কিছু ভাবা উচিৎ।
হ্যারল্ডের চোখে কামনার হাসি। জুডাস সংলগ্ন ঘরের দরজা খুলে দাঁড়াতেই তাতার আমাকে সজোরে সেই ঘরের মধ্যে ঠেলে দিল। চারিদিকে সাদা টালিতে মোড়া। ঘরের দুদিকে সারিবদ্ধ ছোট্ট কক্ষ। সেই সব কক্ষের ভেতর থেকে বীভৎস কান্না এবং গোঙানির আওয়াজ আসছিল। আমি দেখলাম, প্রতিটি কক্ষে এক একটি নগ্ননারী। নারীবলতে যা বোঝায় তাদের কারোর দেহেই নারী সুলভ বস্তুগুলো ছিল না বললেই চলে। অসংখ্য অত্যাচারের চিহ্ন তাদের দেহের প্রতি অঙ্গ প্রত্যঙ্গে, দেহ ক্ষত বিক্ষত। প্রায় প্রতিটি মেয়েরই স্তনযুগল কেটে নেওয়া হয়েছে। সত্যি কি নিষ্ঠুর অত্যাচারের স্বাক্ষর বহন করছে তারা। একটি মেয়ের স্তন জোড়ার ওপর রক্তচোষা জোঁক বসান হয়েছে। দেখে মনে হয় ব্লটিং পেপার দিয়ে তার দেহের সব রক্ত চুষে নেওয়া হয়েছে। কাছে গিয়ে ভালো করে দেখতে গিয়ে চমকে উঠলাম। সে জয়সি। আমি সেইসব অসহায় মেয়েদের দিকে তাকাতে গিয়ে দেখলাম, তাদের মুখে কি পরিমাণ ক্ষোভ, যন্ত্রণা থিকথিক করছিল। আমি তাদের সেই বীভৎস দৃশ্য সহ্য করতে পারছিলাম না।
অবশেষে তারা শেষ কক্ষের সামনে এসে দাঁড়ালো। যেই কক্ষটা খালি ছিল সেই কক্ষের ভিতর আমাকে ঢোকানো হলো। আমি বদ্ধ কক্ষের মধ্যে পায়চারি করতে থাকলাম।
হ্যারল্ড সেখান থেকে চলে যাওয়ার আগে আমার কক্ষের সামনে এসে অবজ্ঞা করার মতো করে বললো, এখানে তোমার বিশেষ ব্যবস্থা করার কথা আমি ভেবে দেখবো।
গুহার গরাদগুলো বেশ ফাঁক ফাঁক অবস্থায় বসানো ছিল। দুটো গরাদের মধ্যেকার ফাঁকটুকু দিয়ে আমি হাত গলিয়ে হ্যারল্ডকে কিছু বুঝতে দেওয়ার আগেই তার মুখের ওপর ঘুষি চালিয়ে দিলাম। দু হাতে মুখ ঢেকে মেঝের ওপর বসে পড়লো সে।
প্রহরীরা ছুটে এলো, জুডাস রক্তচক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আমি দেখবো যাতে করে তোমাকে তিলে তিলে মৃত্যুবরণ করতে হয়। যদি হারল্ডের চোখের কোনো ক্ষতি হয়–কথাটা অসমাপ্ত রেখে সে চলে গেল।
আমি ঘরের একটা কোণায় গিয়ে বসলাম। আমার মাথায় এখন অনেক চিন্তা ভিড় করে আসছে। এখানে এসে আমার কিছু বাড়তি অভিজ্ঞতা হয়েছে।
ভোর হয়ে এলো। আরো এক ঘণ্টা কিংবা দু ঘণ্টা পরে জুডাসকে মুক্তিপণ দিয়ে দেওয়া হবে। তার আগেই লোহার বেষ্টনীর সামনে গিয়ে হাজির হতে হবে এবং সাবমেরিনটাকে মুক্ত করে দিতে হবে। কিন্তু জুডাসের প্রহরীদের সঙ্গে সামনা সামনি যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে মন চাইলো না আমার। তাই ভাবলাম যে করেই হোক প্রহরীদের অন্য কাজে নিয়োগ করে রাখতে হবে। আর সেই সুযোগেই অনায়াসে আমি সমুদ্রের ধারে চলে যেতে পারবো। বালির নীচে পুঁতে রাখা আগ্নেয়াস্ত্রগুলো তুলে ফেলতে হবে। তারপর সাবমেরিন এক্স-৮৮ টাকে মুক্ত করে দিয়ে আবার ফিরে আসবো জুডাসের কাছে। তার সঙ্গে শেষ বোঝাপড়া করতে হবে, যে এতগুলো মানুষকে পরাধীন করে রেখে অমানুষিক অত্যাচার চালায়, তাকে স্বাধীন ভাবে বাইরে চলাফেরা করতে দেওয়া উচিৎ নয় বলে আমার মনে হয়। তবে তার আগে এই বিকলাঙ্গ নারীগুলোকে মুক্ত করে দিতে হবে।
জুডাস এবং হ্যারল্ড তাদের যা ক্ষতি করেছে তা কখনো পূরণ হবে না। হ্যারল্ড এইসমস্ত নারীদের যৌন ক্ষমতার ওপরও ছুরি চালিয়েছে নির্দয়ভাবে। মনে হয় এখানে প্রায় পঞ্চাশটি মেয়ে বন্দী অবস্থায় আছে। তাছাড়া সাত আটজন প্রহরী, জুডাস হ্যারল্ড এবং মঙ্গল। তাদের হাতে কোনো অস্ত্র না থাকলেও তারা বেশ শক্তিশালী। এখন কথা হচ্ছে শেষ পর্যন্ত এখান থেকে সে বের হতে পারবে কিনা, কারণ প্রহরীদের চোখে পড়লে আর রেহাই নেই। প্রথমে প্রহরীকে খতম করতে হবে। আমি পকেট থেকে একটা জিলেটিন ক্যাপসুল বার করে অপেক্ষা করে থাকলাম। আর এক হাতে মিনিলাইটার।
প্রহরী টহল দিচ্ছে। আমি আর দেরী না করে জিলেটিন ক্যাপসুলে আগুন ধরালাম। ক্যাপসুলের চারপাশ দিয়ে আগুনের কপোলী শিখা ঝরে পড়ছে। লোহার গরাদের ফাঁক দিয়ে জ্বলন্ত ক্যাপসুলটা ছুঁড়ে ফেলে দিলাম প্রহরীর পা লক্ষ্য করে। সঙ্গে সঙ্গে একটা আর্ত চীৎকার। তারপরই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।
এবারে আমি দ্বিতীয় ক্যাপসুলটায় আগুন ধরালাম। জ্বলন্ত ক্যাপসুলটা এবার লোহার দরজা সংলগ্ন তালাটার ওপর স্থাপন করলাম। মুহূর্তের মধ্যেই দরজা ভেঙে পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে আমি ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে এলাম। এরপর একটা কক্ষ থেকে আর একটা কক্ষে ছুটে যেতে থাকলাম। প্রতিটি কক্ষের তালামুক্ত করে দিলাম কিন্তু দরজা খুললাম না। সে কাজটা তারা নিজেরাই করে নিতে পারবে। শেষ পর্যন্ত আমি সব কক্ষের দরজাগুলো খুলে দিলাম। তারপর কয়েকটি কক্ষের দরজা চকিতে খুলে দিয়েই ছুটে চলে এলাম বাইরে বের হবার দরজা পথে।
সেখান থেকে লক্ষ্য করলাম মেয়েরা একে একে যে যার কক্ষ থেকে ছুটে বেরিয়ে আসছে। হৈ চৈ চীৎকার, সব মিলিয়ে একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা।
যাইহোক আমার উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল হয়েছে, এখন এখান থেকে পালিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। বেরিয়ে আসার মুখে এক প্রহরীর সামনে পড়লেও তাকে কাবু করতে বেশী সময় লাগেনি। নিরাপদ দূরত্বের ব্যবধানে এসে শুনতে পেলাম গুলির আওয়াজ। সেই সঙ্গে অসহায় মেয়েগুলোর কান্নার শব্দ। প্রহরীরা এখন ভীষণ ব্যস্ত। ঠিক এইরকমটি আমি চাইলাম।
আমি হঠাৎ দেখলাম নগ্ন নারীরা ছুটে আসছে রোগাটে দীর্ঘদেহী সেই লোকটার পিছনে।
লাউড স্পীকারে জুডাসের কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছিল। না, ও পথে নয় হ্যারল্ড বাড়ির অপর দিকে ঘুরে এসো। দুজন প্রহরী তোমাকে সাহায্য করবে। হ্যারল্ড থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করলো, কিন্তু পারল না। মাটিতে পড়ে গেল। এবার নগ্ন মেয়েগুলো তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। এতদিন তারা অত্যাচারিত হয়ে এসেছে, সেই অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে বদ্ধ পরিকর তারা। মেয়েগুলো যেন হ্যারল্ডকে জীবন্ত খেয়ে ফেলছে।
জুডাসের কণ্ঠস্বর আবার শোনা গেল লাউডস্পীকারে। এবার সে প্রহরীদের উদ্দেশ্য করে বলছে, তোমরা ওখানে ছুটে যাও। ওকে রক্ষা কর, ওকে রক্ষা কর।
আমি এবার তাতারকে এগিয়ে আসতে দেখলাম। ওদিকে তাতারকে ছুটে আসতে দেখে নগ্ন মেয়েগুলো এবার উঠে দাঁড়ালো হ্যারল্ডকে ছেড়ে দিয়ে। তারা এখন রক্তের স্বাদ পাওয়া বাঘিনীর মতো হিংস্র হয়ে উঠেছে। জ্বলন্ত চোখ নিয়ে তারা তাতার-এর দিকে এগিয়ে গেল। হ্যারল্ড-এর মতো তাতারকেও তারা জীবন্ত ছিঁড়ে খেতে চায়। কোনো সন্দেহ নেই জুডাস এ দৃশ্য দেখে নিশ্চয়ই কোনো নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিয়ে থাকবে।
আমি এবার সমুদ্রের দিকে এগিয়ে চললাম। বিশেষ ধরনের ট্রান্সমিটার এবং বিস্ফোরক বস্তুগুলো একটা গাছের আড়ালে রেখে দিয়ে জলে ঝাঁপ দিলাম। ওদিকে সেই রহস্যময় বাড়ির ভিতর থেকে রাইফেলের গুলির আওয়াজ ভেসে আসছিল। ততক্ষণে আমি আমার উষ্ণ দেহটাকে সমুদ্রের জলে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম।
.
০৭.
সমুদ্রের ফাঁদটা বড় গভীর। আমি অনুভব করলাম, জলের চাপ এতো বেশী যে, হাত পা ছুঁড়তে গিয়ে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, ফলে আমাকে ঘন ঘন অক্সিজেন ব্যবহার করতে হচ্ছিল।
অবশেষে আমি আমার অভিযানের শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছলাম। সামনেই সেই বিরাট আকারের লোহার পাতে মোড়া আঁধার। সমুদ্রের ফাঁদ। এটাকে এবার ধ্বংস করতে হবে। আমি এবার প্রস্তুত হলাম। আমার হাতে বিস্ফোরক তার, ডিসচার্যের অপেক্ষায়। কিন্তু ক্ল্যামসেলগুলো এমনি মসৃণ এবং শক্ত করে জোড়া লাগানো রয়েছে যে, কোন উপায়েই সেখানে এক্সপ্লোসিভ তার রাখার জায়গা করে নেওয়া যাচ্ছে না! আমি শেষ চেষ্টা করে দেখলাম জলের একেবারে নীচে যেখানে ক্ল্যামসেলের ভীত গাঁথা সেখানে ডুব সাঁতার দিয়ে। উদ্দেশ্য সেখানে থেকে যদি একবার বিস্ফোরণ ঘটানো যায়।
হঠাৎ আমার বুকের যন্ত্রণাটা বাড়তে থাকলো। একবার মনে হলো আমার ইস্পিত বস্তু আমি পেয়ে গেছি, কিন্তু প্রক্ষণেই আবার সেটা হারিয়ে ফেললাম।
এখনকার মতো অভিযানটা পরিত্যক্ত মনে করে ওপরে উঠে এলাম।
হঠাৎ সমুদ্রের নীচে বিস্ফোরণ ঘটে গেল। কাদা, বালি এবং পাথরের টুকরো উপরে উদঘাটিত হলো।
সঙ্গে সঙ্গে আমার ব্রেন আবার কার্যকরী হয়ে উঠলো। আমি দেখলাম সেই লোহার বন্ধনীটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে পড়লো। মুখ খুলে গেলো, জয়ের চাবিকাঠি এখন আমার হাতের মুঠোর মধ্যে। কিন্তু তখন আমার বমি পাচ্ছিল। বুকের যন্ত্রণাটা যেন চরমে পৌঁছে গেছে। এখন আমার করার কিছুই নেই। নিজেকে ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই। ক্লান্ত, অবসন্ন দেহ। শেষে একসময় দেখতে পেলাম আমার দেহটা এসে ঠেকেছে সেই মিনি উপহ্রদের সামনে। চারপাশ ঘিরে রয়েছে সেই অলৌকিক দ্বীপটা। তখনও রাইফেলের গর্জন শোনা যাচ্ছিল। সেই সঙ্গে মানুষের আর্তচীৎকার। তার মানে জুডাস এখনও বেঁচে আছে। সম্ভবতঃ তার কিছু প্রহরী এবং দৈত্য সমান মঙ্গলকে সঙ্গে নিয়ে নিঃসন্দেহে সে তার বাড়ির কন্ট্রোলরুমে বসে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে এখনও। আমি ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালাম। সোনার থালার মতো মাথার ওপর সূর্যটা তখন জ্বলজ্বল করছিল।
আমার মাথায় তখন কেবল একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল। লোহার বন্ধনীটা বিস্ফোরণের পর কি করে ভেঙে চৌচির হয়ে গেল! মনে হয় কাজটা জুসের, পাছে আমি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তিবিদ্যার খুঁটিনাটি সব কিছু জেনে ফেলি সেই কারণে জুডাস হয়তো সেটা ধ্বংস করে ফেলতে চাইল নিজের থেকে। কথাটা ভাবা মাত্র আমার চোখের সামনে অন্ধকার ঘনিয়ে এলো। হয়তো এর পিছনে জুডাসের কোন উদ্দেশ্য থাকলেও থাকতে পারে।
আমি আবার সমুদ্রে ঝাঁপ দিলাম। পাহাড় ঘেরা সমুদ্র। আমি পাহাড়ের গায়ে মৃদু আঘাত করে সাংকেতিক ভাষায় বলতে থাকি, এখন শোন, এখন শোন–স্বর্গ প্রবর্তিত সংকেত পদ্ধতি বিশেষ।
সাবমেরিন এক্স-৮৮র ভেতরে একটা চাপা উত্তেজনা প্রকাশ পেল। আমার সংকেত ধ্বনি প্রথম শুনতে পেল জাহাজ ধ্বংসকারী লোকটা। সঙ্গে সঙ্গে বার্তাপ্রেরক লোকটাকে খবর পাঠানো হলো। পরে লোকটা তাদের ক্যাপ্টেনের সঙ্গে যোগাযোগ করল।
এটা স্বর্গ প্রবর্তিত সংকেত পদ্ধতি বিশেষ। বার্তাপ্রেরক ঘোষণা করল। আমি জলের ওপর ভেসে উঠে আবার সেই সাংকেতিক বার্তা পাঠালাম। এবার পর পর দুবার। এবার সাবমেরিনের প্রতিটি মানুষ অধীর আগ্রহে বার্তা শুনতে থাকলো। তারা সবাই জেগে উঠেছে।
আমি জানালাম, তোমরা নিজেরাই তোমাদের উদ্ধার করতে পারো। আধুনিক যন্ত্রগুলো সব ব্যবহার কর। চেষ্টা কর, চেষ্টা কর
খানিক পরেই সাবমেরিনের ভেতর থেকে একটা প্রচণ্ড শব্দ উঠলো, বিস্ফোরণের মতন। বোয় ইঞ্জিন চালু হল এবার। এরপর প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ। আমি দেখলাম লোহার প্রাচীর ঘেরা বন্ধনী সম্পূর্ণ ভেঙে পড়লো এবার। সমুদ্রের ফাঁদ মুক্ত হয়ে এক্স-৮৮ নড়তে শুরু করল। এক্স-৮৮ এবার সামনের দিকে এগোতে শুরু করল। আমি এবার জল থেকে উঠে বীচের ওপর এলাম। সাবমেরিনের ট্রান্সমিটার চালু হয়ে গেছে। ম্যাক এক্ষুনি বার্তা পাবেন জানতে পারবেন এক্স-৮৮র মুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু এদিকে জুডাস এখনও বেঁচে আছে।
এখন আমার একমাত্র কাজ হলো জুডাসকে খতম করা। আমি সেই গাছটার সামনে ছুটে এসে লুকোনো সেই বিশেষ ধরনের মিনি ট্রান্সমিটার হাতে তুলে নিলাম।
আমি বার্তা পাঠালাম, দ্বীপটাকে ধ্বংস করে দিন। আপনারা আপনাদের সবরকম অস্ত্র ব্যবহার করুন। দ্বীপটাকে ধ্বংস করে দেওয়া চাই। ট্রান্সমিটার বন্ধ হয়ে যাওয়ার শব্দ হলো। এই একটি মাত্র বার্তায় ম্যাক বুঝে যাবেন, ধ্বংস করতে বলার অর্থটা কি। এরপর তিনি নিশ্চয়ই দেশ থেকে বড় বড় জেট বিমান পাঠাবেন, সঙ্গে মারাত্মক পারমাণবিক অস্ত্র সম্ভবতঃ। জেট বিমানের যা গতি তাতে মনে হয় মিনিট পয়তাল্লিশের মধ্যে তারা এখানে পৌঁছে যাবে। আমি এবার বাড়ির দিকে পা বাড়ালাম। আমেরিকা থেকে উদ্ধারকারী দল এখানে এসে পড়ার আগেই আমি জুভাসের সঙ্গে মোকাবিলা করে নিতে চাই। এখন সারা দ্বীপে এক অদ্ভুত নীরবতা বিরাজ করছে।
হঠাৎ লাউডস্পীকারে জুডাসের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। কার্টার, আমি তোমাকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। চিন্তা কর না, আমি আমার এই ছোট্ট ঘর থেকে তোমাকে খতম করতে পারবো না। আর তুমিও আমাকে হত্যা করতে পারবে না। এই দ্বীপে কেবল তুমি আর আমি বেঁচে আছি।
আমি সামনের গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলাম একটা গাছের ডালে টেলিভিশন ক্যামেরা ঝুলছে। আমি সেটা লক্ষ্য করে পাথরের টুকরো ছুঁড়লাম। ক্যামেরার লেন্স ভাঙার শব্দ হলো।
এটা তোমার মুখতার পরিচয় কার্টার। আবার জুসের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।
আমি খুব সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে চললাম। নগ্ন দেহের ভূপ। বেশীর ভাগ মেয়েদের, তবে প্রহরীদেরও মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখলাম। আমি এগিয়ে চললাম। ঘরটা খালি, পাশেই কন্ট্রোলরুম, তালা বন্ধ। সেখানে জুডাসকে দেখা গেল না। আমি ভাবতে লাগলাম কন্ট্রোলরুমে প্রবেশ করার পথ খুঁজে বার করতে হবে। জুডাসকে সামনা সামনি না পাওয়া পর্যন্ত আমি থামবো না। আবার জুসের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, এসো আমরা দুজনে একটা চুক্তি করি। তুমি আমাকে মুক্ত করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে আমি তোমাকে এই দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুমতি দেবো।
সঙ্গে সঙ্গে আমি প্রতিবাদ করে উঠলাম, তোমার সঙ্গে আমি কোনো চুক্তিতে আবদ্ধ হতে চাই না। এখনই আমি সমুদ্র পাড়ি দিতে যাচ্ছি। যদি তোমার সাহস থাকে তবে আমার সামনে এসে তুমি আমাকে বাধা দাও। জুডাস পুনরাবৃত্তি করল, জীবিত অবস্থায় এই দ্বীপ ছেড়ে তুমি চলে যেতে পার না কার্টার।
হঠাৎ ঘণ্টা বেজে উঠলো। বিপদসংকেত। কাছেই কার যেন ভারী নিঃশ্বাস পড়ার শব্দ শুনতে পেলাম। আমি সতর্ক দৃষ্টি নিয়ে তাকাতে গিয়ে দেখি শিকারীদের বিরাট একটা ছুরি দেওয়ালে গিয়ে আঘাত করলো। ঠিক সেই মুহর্তে দম্য আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। আমি ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রচণ্ড আঘাত হানলাম তাতারের ওপর। তাতারও পিছিয়ে থাকলো না। পাল্টা আঘাত সেও হানলো। আমি ধীরে ধীরে তাতারের অগোচরে হিপ পকেট থেকে স্টিলেটোটা বার করলাম, তারপর অতর্কিতে সেটা আমূল বসিয়ে দিলাম তাতারের পেটের ভিতর। একটা আর্ত চীৎকার করে মেঝের উপর লুটিয়ে পড়লো সে।
আবার জুসের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, দাঁড়াও কার্টার। আমি তোমাকে ছেড়ে দেবো না।
ঠিক আছে, তুমি যেখানেই থাক সেখান থেকে বেরিয়ে এসে আমাকে বাধা দাও। আমি দরজার বাইরে এসে তাকে আহ্বান করলাম। আমি এখন ভাবছি, সেই বিমানগুলো যে কোন মুহূর্তে এখানে এসে পড়তে পারে। হাঁটতে হাঁটতে আমি প্রায় জলের ধারে এসে পড়েছিলাম।
জুডাসের কণ্ঠস্বর আবার শোনা গেল। তুমি এখন ফাঁদে পড়ে গেছে বুঝলে? আমার সঙ্গে তোমাকে চুক্তিতে আসতেই হবে।
আমি বিদ্রুপের হাসি হেসে বললাম, একটু পরেই বুঝতে পারবে কে কাকে ফাঁদে ফেলেছে।
টেড, এবার তার কণ্ঠস্বর একটু নরম শোনালো। যাওয়ার আগে জলের দিকে তাকিয়ে দেখ।
চকিতে আমি সমুদ্রের দিকে তাকালাম। দেখলাম, ডাইনে বাঁয়ে যেদিকে দু চোখ যায় শুধু লাল, লাল হয়ে গেছে সমুদ্রের জল। তবে কি রক্ত–দ্বীপের চারপাশ রক্তে ভেসে যাচ্ছে।
জুডাস আমাকে সম্বোধন করে বললো, তুমি কি জানো কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এগুলো কাদের ডেকে আনতে পারে।
আমি স্তব্ধ হতবাক, বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে রইলাম সমুদ্রের লাল জলের দিকে। জলের নীচে সেই বিরাট বিরাট ড্রেনের পাইপগুলো দেখেছিলাম। এখন বুঝতে পারছি, কিসের প্রয়োজনে ওগুলো রাখা ছিল। কিন্তু এসব সত্ত্বেও মনে হয় এখনও সময় আছে।
.
০৮.
আমি জুডাস এবং হ্যারল্ডকে অভিশাপ দিলাম তাদের অমন অমানুষিক কাজের জন্য। সত্যি কি নির্মম নিষ্ঠুর তাদের পরিকল্পনা। সমুদ্রের জলে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়ে জুডাস হাঙ্গর ডেকে আনছে। আমি জানি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তারা এসে পড়বে। ঠিক এই মুহূর্তে সেই সব হিংস্র জলজীবগুলো এসে পৌঁছনোর আগেই আমি যদি রক্তাক্ত জলের সীমানা ছাড়িয়ে যেতে পারতাম। এসব কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখলাম একটা বিরাট আকৃতির হাঙর আমার দিকে ছুটে আসছে। আমি তাড়াতাড়ি জল থেকে উঠে আসতে বাধ্য হলাম।
হঠাৎ একটা অদ্ভুত শব্দ কানে এলো। শব্দটা যেন অতি পরিচিত। আকাশ ভরা জেট বিমানের ছায়া। প্রথম বোমা বর্ষণের আওয়াজ হলো। তারপর দ্বিতীয়বার আরো বেশী আওয়াজ তুলল। আবার সারা দ্বীপটা কেঁপে উঠলো।
আমি দেখলাম ম্যাক আমার নির্দেশ মতো নিউক্লিয়ার বোমা বর্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তৃতীয় বোমাটা বিস্ফোরিত হলো দ্বীপের পশ্চিম প্রান্তে। তারপর একের পর এক জেট বিমান থেকে বোমা বর্ষিত হতে থাকলো দ্বীপের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। আমার চোখদুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। আমার মিশন সফল হতে চলেছে এবার তাহলে।
লাউডস্পীকার আবার গর্জে উঠলো। শেষ পর্যন্ত জুডাস বুঝতে পারলে আমি কি ব্যবস্থা নিয়েছি।
আমি সমুদ্রের দিকে তাকালাম। তখনও ক্ষুধার্ত হাঙ্গরগুলো রক্তলাল জলের মধ্যে তাদের খাদ্য খুঁজে ফিরছিল। অসংখ্য হাঙরের দল গিজগিজ করছে।
জুডাসের কণ্ঠস্বর আবার শোনা গেল, তোমারি জয় কার্টার তোমারি জয়। ওদের ডেকে নাও। তুমি ওদের আমার ট্রান্সমিটারের সামনে নিয়ে আসতে পারো। ওরা তোমার কথা অবশ্যই শুনবে।
আমি বাড়ির দিকে ছুটে গেলাম। জুডাস ঘরের এক কোণায় কাঠের ডেস্কের পাশে পড়েছিল। দেখে মনে হচ্ছিল বোমার আঘাতে সে যেন আহত। বাড়িটা তখনও কাঁপছিল।
আমি ট্রান্সমিটারের সামনে এগিয়ে গিয়ে সুইচে হাত দিতে যাওয়া মাত্র থমকে দাঁড়ালাম। ঠিক সেই মুহূর্তে জুভাসের হাতের রিভলবার গর্জে উঠলো।
সামান্য ব্যবধানের জন্য এ যাত্রায় আমি বেঁচে গেলাম।
গুলি শেষ, বোধহয় জুডাস এবার মরিয়া হয়ে উঠেছে। তার হাতে অস্ত্র বলতে শুধু একটা ধারালো ছুরি। অতঃপর সে ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার ওপর। আমিও প্রস্তুত ছিলাম। আমার চোখে তখন প্রতিশোধ নেওয়ার আগুন জ্বলছিল।
জুডাস হঠাৎ আমার হাতের ওপর দাঁত বসিয়ে দিল। আমি আর দেরী না করে তাকে টানতে টানতে নিয়ে গেলাম দেওয়ালের দিকে। জুডাস টাল সামলাতে না পেরে মেঝের ওপর পড়ে গেল। সেই সঙ্গে আমার ভারী দেহটাও তার ওপর গিয়ে পড়লো। জুডাসের মাথাটা বোধহয় ফেটে গেল। রক্তের ধারা নামল তার ব্রহ্মতালু দিয়ে। সেই সঙ্গে তার হাতের ছুরিটাও অসাবধানবশতঃ নিজের বুকে আমূল বসে গেলো। চীৎকার করে উঠলো সে, তারপরই সব শেষ।
এবার আমি নিশ্চিত হয়ে ট্রান্সমিটারের দিকে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু দেখলাম সেই যন্ত্রটি তার প্রভুর মতই মৃত। আমি ধীরে ধীরে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
বাইরে তখন আকাশ পথে জেট বিমানের দাপাদাপি। তারা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। দ্বীপটা সম্পূর্ণ ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত তারা থামছে না।
আমি সমুদ্রের দিকে তাকালাম। হঠাৎ আমার চোখে পড়লো উজ্জ্বল হলুদ রঙের ডিম্বাকৃতি বস্তু ভেসে আসছে সমুদ্রতটের দিকে। প্রথমে ভাবলাম বুঝি আমার দেখার ভুল, মনের কল্পনা। না তা নয়। আমি ঠিকই দেখেছি। একটা রবারের ভেলা, ভেলাটা তখন সমুদ্রতট থেকে তিরিশ গজ দূরে। ভেলার আরোহীকেও চিনতে পারলাম। আসলে ওটা রবারের ভেলা নয়, ওটা সী স্পাইডার। তখন মাথার ওপর জেট বিমানগুলো শেষ বোমা বর্ষণ করতে ব্যস্ত। নীচে জলের মধ্যে হিংস্র হাঙরের দাপাদাপি। মৃত্যু মুঠোর মধ্যে অনিবার্য। আমি চমকে উঠলাম।
আমি ঠিক করে ফেললাম, যে ভাবে হোক তাকে বাঁচাতে হবে। ভাবলাম জলে ঝাঁপ দেবো। হিপ পকেট থেকে ধারালো ছুরিটা আমি বার করলাম। এখন এটাই আমার একমাত্র সম্বল, হিংস্র হাঙ্গরগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্যে। তবেসবই আমার ভাগ্যের ওপর নির্ভর করছে। আমি খুব সতর্ক দৃষ্টি নিয়ে সাঁতার কাটছিলাম। আমার প্রখর দৃষ্টি ছিল ভাসমান হাঙ্গরগুলোর দিকে।
এদিকে ড্যানিয়েল ততোক্ষণে আমাকে দেখে ফেলেছে। সে দ্রুত গতিতে তার সী স্পাইডারটাকে আমার কাছে নিয়ে আসতে চাইল। অবশেষে সী স্পাইডারটা আমার দেহ ঘেঁষে দাঁড়ালো। স্পাইডারের দরজা খুলে ড্যানিয়েল আমাকে আহ্বান করলো। স্পাইডারে প্রবেশ করে আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম অতঃপর। আকাশে বোমা বর্ষণের শব্দ। নীচে জলের ওপর হিংস্র হাঙ্গরের দাপাদাপি। ড্যানিয়েল এবার সীস্পাইডারটাকে জলের অনেক নীচে নামিয়ে নিয়ে এলো। এখন আর কোনো শব্দ শোনা গেল না। আমি তার পাশে শান্ত হয়ে বসে ছিলাম। তখনও হাঁপাচ্ছিলাম, কথা বলতে পারছিলাম না। চোখ দুটো আমার ক্লান্তিতে বুজে এলো। দীর্ঘ বার ঘন্টা আমার ওপর দিয়ে প্রচণ্ড ঝড় বয়ে গেছে। বহুবার আমি মারাত্বক বিপদে পড়েছি কিন্তু এবারের অভিযানের মত নয়। বার বার এমন নিষ্ঠুর আক্রমণ আমাকে এর আগে সহ্য করতে হয়নি। তাই আমি আর কথা বলে ক্লান্তি বাড়াতে চাইলাম না।
তারপর একসময় জেট বিমানে যখন আমি উঠে এলাম তখন নিজেকে প্রায় সুস্থ মনে হচ্ছিল। চোখ মেলে তাকালাম। আমার পাশে উপবিষ্ট মেয়েটির দিকে তাকালাম। ড্যানিয়েল লাল বিকিনি পড়েছিল। সে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো, আমি আবার চোখ বন্ধ করলাম আনন্দে, এই মুহূর্তটা আমার খুব ভালো লাগছিল। শান্ত পরিবেশ। ড্যানিয়েলের স্পর্শে শান্তির আমেজ পাওয়া গেল আমি চোখ বুজে সেই সুন্দর মুহূর্তটা উপভোগ করতে থাকলাম।
.
০৯.
আমি চোখ মেলে তাকালাম। দেহে আমার শীতল পরশ লাগলো। ড্যানিয়েল আমার দেহের ওপর ঝুঁকে রয়েছে। আমার বুকের ওপর সে হাত দিয়ে বিলি কাটছিল।
আমি তার দিকে তাকিয়ে হাসলাম। তোমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আর ছোট করবো না। তোমাকে অসময়ে কাছে পেয়ে আমি যে কত খুশি তোমাকে বোয়াতে পারবো না।
ড্যানিয়েল আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি যখন সব কিছু বলে চলে এলে তখন আমি ভাবলাম আমাকে তোমার জন্য কিছু করতে হবে। ট্রিটনকে গতিময় করে তুলে সারা রাত আমি অপেক্ষা করে থাকলাম অধীর প্রতীক্ষায়। আমি যে এখন তোমার কাছে এসেছি সে কথা আমি কাউকেই বলে আসিনি। সবাই জানে আমি আমার রুটিন মাফিক কাজে বেরিয়েছি।
আমি মনে মনে ভাবলাম, তাহলে ম্যাক জানতে পারবে না মুক্তির কথা। ড্যানিয়েল নেই, ট্রিটনও সঠিক উত্তর দিতে পারবে না রেডিও মারফত জানতেচাইলে, এ একরকম ভালোই হলো।
হঠাৎ লক্ষ্য করলাম ড্যানিয়েল আমার দিকে পলকহীন চোখে তাকিয়ে রয়েছে। আমি ধীরে ধীরে হাত রাখলাম তার বুকের ওপর। ড্যানিয়েল আমার দিকে কামার্ত চোখ নিয়ে তাকালো, তার ব্রা–হীন বুক যেন পাপড়ি মেলে দিল সেই মুহূর্তে, এরপর আমি তার ঠোঁটের সঙ্গে আমার ঠোঁট দুটি মিলিয়ে দিলাম। চুম্বন দীর্ঘায়িত হতে থাকলো।
এবারে আমি ধীরে ধীরে তাকে শুইয়ে দিলাম এবং নিজেকে তার দেহের সঙ্গে মিশিয়ে দিলাম।
ড্যানিয়েল তার নগ্ন বুকের মাঝে আমার মাথাটা চেপে ধরলো। ড্যানিয়েলের নগ্ন দেহটা তখন থরথর করে কাঁপছিল।
এবার ড্যানিয়েল আমাকে তার বুকের ওপর থেকে নামিয়ে পাশে শুতে দিল এবং আমার বুকের ওপর সে উঠে এলো।
আমার দুহাতে তখন তার দুটি স্তন শোভা পাচ্ছিল। ড্যানিয়েলের ঠোঁটে অসমাপ্ত তৃপ্তির ছোঁয়া। আমাকে ছাড়তে তার মন চাইছিল না, তবুও ছাড়তে হলো, সে বলল, ট্রিটন আমার সময় হয়ে এলো বোধহয়।
আমাকে ছেড়ে ড্যানিয়েল এবার তার নগ্ন দেহটা আবার বিকিনির মধ্যে আবদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হলো। তার নগ্ন দেহের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার মনে হলো, সেই সব সামান্য কয়েকজন মেয়েদের মধ্যে ড্যানিয়েল হচ্ছে একজন, যাকে সর্বক্ষণ নগ্ন অবস্থায় দেখতে ভালো লাগে।
আমি তাকে কাছে টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কয়েকদিন পরেই আমাকে নিউইয়র্কে ফিরে যেতে হচ্ছে। তুমি আমার সঙ্গে ফিরে যাবে?
ড্যানিয়েল অনেকক্ষণ ধরে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো, তার সুন্দর দুটি ঠোঁটে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠলো। ড্যানিয়েল আমার মাথাটা তার বুকের মধ্যে চেপে ধরে বললো, ঠিক আছে আমি তোমার সঙ্গে যাব।
আমি ড্যানিয়েলকে সঙ্গে নিয়ে ম্যাকের অফিসে এলাম। টান টান পোশাক ড্যানিয়েলের দেহের প্রতিটি ভৌগোলিক রেখাকে ফুটিয়ে তুলেছিলো। ম্যাকের চোখে বিদ্যুতের ঝিলিক খেলে গেল। আমি খুশি হলাম ড্যানিয়েল ম্যাককে খুশি করতে পেরেছে বলে, আমি ম্যাকের সঙ্গে ড্যানিয়েলের পরিচয় করিয়ে দিলাম।
আমি ওর চেহারা দেখেই বুঝতে পেরেছি। আমি অবাক হয়ে বললাম, আপনি কি করে অনুমান করলেন?
কেন, তুমি রেডিও মেসেজে বললে ডঃ ফ্রেশারকে সঙ্গে নিয়ে নিউইয়র্কে ফিরে আসছ, তখনি আমি ওর চেহারার একটা মোটামুটি ধারণা করে নিয়েছিলাম।
ম্যাক এবার হাসতে হাসতে বললো, শোন এবারে কাজের কথায় আসা যাক। তোমরা দুজনে এক সঙ্গে ফিরছে শুনে শেরী–নেদারল্যান্ডে আমার অতিথি হিসেবে তোমাদের দুজনের ডিনারের ব্যবস্থা করেছি। আর আমার দিকে তাকিয়ে বললো, নিক, তুমি আমাদের অনেক উপকার করেছে। তোমাকে আমাদের এখনও অনেক প্রয়োজন আছে বুঝলে।
ড্যানিয়েল আমার দিকে গকিয়ে বললো, সত্যি তোমার বস অপূর্ব লোক।
আমি মদের অর্ডার দিতে গিয়েও চিন্তা করলাম, ড্যানিয়েলের দিকে তাকালাম, তার নীল চোখেনীল বিদ্যুৎঝিলিক দিয়ে উঠলো। তার মুখেশান্তহাসি। সে বললো, আমি তোমাকে নিজের থেকেই জয়ের সুযোগ করে দিয়েছিলাম।
আমিও তার দিকে তাকিয়ে হেসে বললাম, আমিও তোমাকে খুশি করার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তুমি খুশি হতে পারনি। আমাদের যৌথ মিলনে তোমার যে কেবল পরিশ্রম হয়েছিল আমি জানি।
ড্যানিয়েল চমকে উঠলো। আমি তাকে বললাম, তুমি একজন ভালো জীববিদ্যাবিশারদ হতে পার, কিন্তু তুমি ভালো অভিনেত্রী নও।
তবু ড্যানিয়েলের ভাবতে ভালো লাগলো সেদিনের রাত্রিবাসের কথা। আমার স্পর্শে একটা আলাদা আমেজ, একটা আলাদা মাদকতা সে অনুভব করেছিল। আমাকেই সে সঠিক পুরুষ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। সে কখনই জয়ের জন্য চেষ্টা করেনি। তার চোখে ব্যর্থতার কোন গ্লানি কখনও প্রকাশ পায়নি।