১৯.
ওভাল অফিস, কয়েক মুহূর্ত কেটে গেছে। বাতাসে আলোচনার শব্দ ভাসছে। ডিফেন্স সেক্রেটারি বললেন আর এক মুহূর্ত দেরি করলে ব্যাপারটা আমাদের হাতের বাইরে চলে যাবে। এখনই অনেকটা দেরি হয় গেছে।
জেনারেল স্টেফান বললেন–আমরা কীভাবে কাজ করব? সি. আই. এর সঙ্গে কথা বলতে হবে। এই ব্যাপারে আপনারা কতটা সুনিশ্চিত।
–ঠিক বলতে পারব না। লিবিয়া কিন্তু ইরান আর চিনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে অস্ত্র কিনছে।
অলিভার তার সেক্রেটারি অফ স্টেটের দিকে তাকিয়ে বললেন–লিবিয়া তো এই অভিযোগকে অস্বীকার করেছে।
–হ্যাঁ, চিন এবং ইরানও স্বীকার করতে চাইছে না।
অলিভার জানতে চাইলেন–আরবের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর খবর কী?
সি. আই. এর প্রধান বললেন–আমি যথেষ্ট খবর পেয়েছি মিঃ প্রেসিডেন্ট। ইজরায়েলের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ হবে। সব আরব দেশগুলো জোটবদ্ধ হয়েছে। তারা ইজরায়েলকে পৃথিবী থেকে মুছে দিতে চাইছে।
তারা সকলে অলিভারের দিকে তাকালেন।
অলিভার জানতে চাইলেন–লিবিয়াতে আমাদের গোয়েন্দা আছে কি?
–হ্যাঁ, স্যার।
প্রত্যেককে সজাগ করতে হবে। প্রতি মুহূর্তের খবর আমার কাছে পাঠাবেন। যদি আক্রমণের সম্ভাবনা দেখা যায়, তাহলে আমরা রণক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ব।
মিটিং সমাপ্ত ঘোষণা করা হল।
অলিভারের সেক্রেটারির কণ্ঠস্বর ইন্টারকমে শোনা গেল–মিঃ ট্যাগার আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন, মিঃ প্রেসিডেন্ট।
–তাকে এক্ষুনি আসতে বলুন।
.
মিটিং কেমন হল? পিটার ট্যাগার জানতে চাইলেন।
–যেমন হয়ে থাকে, অলিভার তেতো সুরে বললেন, যুদ্ধ শুরু করতে হবে, আজ অথবা আগামীকাল।
ট্যাগার সহানুভূতির সঙ্গে বললেন–বাইরের দেশের লড়াই।
-ঠিকই বলেছেন।
আমাদের জড়িয়ে পড়তে হচ্ছে।
বসুন।
পিটার ট্যাগার বসলেন ইউনাইটেড আরব সম্পর্কে তোমার কী অভিমত?
–আমি কিছুই জানি না, অলিভার বললেন, কুড়ি বছর আগে পাঁচ-ছটা আরব রাষ্ট্র একসঙ্গে একটা কোয়ালিশন তৈরি করেছিল।
-সাতটা আরব রাষ্ট্র, তারা ১৯৭১ সালে সংঘবদ্ধ হয়। তখন তারা খুব একটা শক্তিশালী ছিল না। কিন্তু এখন এই আমীরশাহী খুবই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তারা খুব উঁচু জীবনযাত্রার মান পালন করে।
অলিভার বললেন একটা ব্যাপারে নজর রাখতে হবে।
–ঠিকই বলেছ, আরবশাহীর লোকেরা তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাইছে।
–আমি আমার প্রতিরক্ষা সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি।
না, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
–আপনি কি ঠিক বলছেন? আমি বুঝতে পারছি না।
–অলিভার, তাদের কাউন্সিল তোমার সঙ্গে কথা বলতে উদগ্রীব। এই কাউন্সিলের প্রভাব সর্বত্র আছে। একে মজলিস বলে। তুমি এখনই কথা বলার চেষ্টা করো।
–আমি কী আর ভালো থাকব? শরীরটা কেমন লাগছে।
–আমি সব ব্যবস্থা করছি।
অনেকক্ষণের নীরবতা–কোথায় কথা বলতে হবে?
–ওদের একটা প্রমোদ তরণী আছে, অ্যানা পোলিসে, তুমি সেখানে শান্তভাবে চলে যাবে এবং গোপনে।
অলিভার বসে থাকলেন, সিলিং-এর দিকে তাকালেন। ইন্টারকমের সুইচ টিপলেন–আজ বিকেলে আমার সব অ্যাপয়ন্টমেন্ট বাতিল করে দাও।
.
২১২ ফুট লম্বা একটা প্রমোদ তরণী। ডকের কাছে নোঙর করা। তারা অপেক্ষা করছিলেন। সদস্যরা সবাই আরব দেশের বাসিন্দা।
স্বাগতম মিঃ প্রেসিডেন্ট, আলি আল খুলানি, সংযুক্ত আরব আমীর শাহীর অন্যতম সেক্রেটারি, বললেন, ভেতরে আসুন।
নৌকোটি এখন এগিয়ে চলেছে।
আমরা কি জলের তলায় যাব?
অলিভার চিন্তা করলেন, কী করব? সেখানে গেলে আমাকে কি অপহরণ করা হবে? নাকি হত্যা করা হবে? ইজরায়েলের ওপর কখন আক্রমণ হানা হবে?
অলিভার আলি আল খুলানিকে অনুসরণ করলেন, নীচের দিকে এগিয়ে গেলেন, অসাধারণ সেলুন। মধ্য প্রাচ্যের শৈলীতে সাজানো। চারজন দীর্ঘদেহী আরবি দাঁড়িয়ে ছিল রক্ষী হিসেবে। কৌচের ওপর একজন বসেছিলেন। অলিভার ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তিনি উঠে দাঁড়ালেন।
আলি আল খুলানি বললেন–মিঃ প্রেসিডেন্ট, ইনি হলেন মহামান্য রাজা হামেদ, আজমানের।
দুজনে করমর্দন করলেন।
মিঃ প্রেসিডেন্ট, আপনি এসেছেন বলে ধন্যবাদ। আপনি কি চা খাবেন?
–না, এখন দরকার নেই।
-আমার মনে হয় এই বৈঠকটা ভালোই হবে, মিঃ প্রেসিডেন্ট। কয়েক শতাব্দী ধরে আমাদের মধ্যে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। দার্শনিক সমস্যা, ভাষাগত সমস্যা, ধার্মিক সমস্যা ইত্যাদি। পৃথিবীর নানা স্থানে অনেক যুদ্ধ হয়েছে। ইহুদিরা প্যালেস্তানীয়দের জায়গা দখল করেছে। কিন্তু কানসাস অথবা ওমাহাতে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। এখানে জীবন একই ছন্দে এগিয়ে চলেছে। জেরুজালেমের সিনাগগে বোমা পড়ে। রোমের ইতালিয়রা এই ব্যাপারে নজর দেন না।
অলিভার বুঝতে পারছেন, যুদ্ধের সঙ্কেত হয়তো বেজে উঠবে।
সারা পৃথিবীতে যে অঞ্চলটি সবথেকে বেশি রক্ত স্নান দেখেছে, সেটি হল মধ্যপ্রাচ্য।
রাজা বলছেন–এখন এই উন্মত্ততা আমাদের বন্ধ করতেই হবে।
অলিভার ভাবলেন, এবার উনি আসল কথাটা বলবেন।
–বিভিন্ন আরব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা আপনার কাছে একটা প্রস্তাব এনেছেন।
কী ধরনের প্রস্তাব?
–শান্তি স্থাপনের প্রস্তাব। আমরা ইজরায়েলের সঙ্গে শান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি করতে চাইছি। আপনি এই ব্যাপারে নজর দিন। দোহাই, ইরানকে আর অস্ত্র দেবেন না। আমরা এই লড়াই শেষ করতে চাইছি। যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এইভাবে অস্ত্র সরবরাহ করে, তাহলে ওখানে কোনো দিন শান্তি স্থাপিত হবে না। আরবের সমস্ত দেশ এই ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এমনকি ইরান, লিবিয়া এবং সিরিয়াও রাজি হয়েছে। আমরা সকলে মিলে আলোচনা করব। যাতে ইজরায়েলের সাথে চিরস্থায়ী শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হতে পারে। সে ব্যাপারে ইতিবাচক আলোচনা হবে।
অলিভার অবাক হয়ে গেছেন, কোনোরকমে তিনি বললেন–এ কাজ আপনারা কেন করছেন?
–ভাববেন না, আমরা ইজরায়েলবাসীদের ভালোবাসি, অথবা আমেরিকানদের স্বার্থে এটা করছি। এটা আমরা করছি, আমাদের নিজেদের স্বার্থে। অনেক সন্তান যুদ্ধক্ষেত্রে মারা গেছে। আমরা চাইছি এর একটা শান্তিপূর্ণ পরিসমাপ্তি ঘটাতে।
অলিভার বললেন কিছু চা হলে ভালো হত।
.
অলিভার পিটার ট্যাগারকে বলছিলেন–আমি সেখানে গেলে ভালো হত। কিন্তু এখন যাওয়াতো সম্ভব নয়। তারা তাদের সোনার খনির তেল পৃথিবীর সর্বত্র দিতে চাইছে। এইজন্য শান্তির উৎসাহ।
ট্যাগার উৎসাহের সঙ্গে বললেন–ব্যাপারটা কিন্তু ভালো। সত্যি সত্যি শান্তিচুক্তি সই হলে সকলে তোমাকে বীর মহানায়কের আসনে বসাবে।
হ্যাঁ, নিজের স্বার্থে আমাকে এটা করতেই হবে। প্রথমে কংগ্রেসে প্রস্তাব উত্থাপন করব। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তাকে সবরকম সাহায্য করতে হবে।
ট্যাগারের দিকে তাকিয়ে অলিভার বললেন সেখানে আমার মনে হয়েছিল, আমাকে বোধহয় কিডন্যাপ করা হবে।
ট্যাগার বললেন–না-না, তোমার কোনো চিন্তা নেই। একটা হেলিকপ্টার সবসময় তোমার ওপর নজর রেখেছিল। আমাদের নৌকাও তৈরি ছিল।
.
-সেনেটর ডেভিস আপনার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন মিঃ প্রেসিডেন্ট, তার কোনো অ্যাপয়ন্টমেন্ট ছিল না। কিন্তু উনি বলছেন, ব্যাপারটা খুবই জরুরি।
–আমার পরবর্তী অ্যাপয়েন্টমেন্টটা একটু বাদে দাও। আর সেনেটরকে পাঠিয়ে দাও।
দরজা খুলে গেল। টড ঢুকলেন।
টড, আপনাকে দেখে খুবই ভালো লাগছে। সবকিছু ঠিক মতো চলছে তো?
সেনেটর ডেভিস চেয়ারে বসে বললেন–সবকিছু ঠিক আছে অলিভার। তোমার সঙ্গে একটু গল্প করতে এলাম।
অলিভারের মুখে হাসি আজ সারাদিন দারুণ কাজের চাপ কিন্তু। আপনি যখন এসেছেন
–আমি মাত্র কয়েক মুহূর্ত সময় নেব। পিটার ট্যাগারের সঙ্গে কথা হল। আরবদের সঙ্গে তোমার কী আলোচনা হয়েছে?
–ব্যাপারাটা ভারী সুন্দর। আমরা বোধহয় মধ্যপ্রাচ্যের চিরস্থায়ী শাস্তির চাবিকাঠি খুঁজে পাব। অনেক বছর পরে, এই জন্য হয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাকে মনে রাখবে।
সেনেটর ডেভিস শান্তভাবে জিজ্ঞাসা করলেন- এটা কি তুমি ঠিকভাবে চিন্তা করেছ, অলিভার?
–কেন? আপনি কী বলতে চাইছেন?
শান্তি কথাটা ছোটো, কিন্তু এর অন্তরালে অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে। এর মানে শুধু অর্থনৈতিক সুবিধা নয়। যুদ্ধের সময় কী হয় বলো তো? কোটি কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি হয়। এই অস্ত্র বিক্রির ওপরেই আমাদের দেশের অর্থনীতিটা নির্ভর করে। শান্তির সময় আমরা কি সেই বাজারটা রাখতে পারব?ইরান আর তার তেল সস্তায় বিক্রি করবেনা। তেলের দাম বেড়ে যাবে। তাতে আমাদের কী উপকার হবে?
অলিভার অবিশ্বাস্য ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকেন টড, আপনি কী বলছেন? জীবনে এমন সুযোগ বার বার আসে না।
–আবেগপ্রবণ হয়ে কী লাভ? অলিভার, ভেবে দেখো তেতা, ইজরায়েল এবং আরবের মধ্যে যুদ্ধ চলতে থাকলেই তো আমরা উপকৃতহব। মনে করলে আমরা এই শান্তি আগে স্থাপন করতে পারতাম না? ইজরায়েল তো একটা ছোট্ট দেশ। যে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্দেশে ইজরায়েল শান্তি স্থাপন করত। কিন্তু কেন তারা ব্যাপারটাকে জিইয়ে রেখেছিলেন? আমাকে ভুল বুঝো না। ইহুদিরা খুব ভালো মানুষ। আমি বেশ কয়েকজন ইহুদি সেনেটরের সঙ্গে কাজ করেছি।
-আপনার কথা আমার মাথায় ঢুকছে না।
অলিভার, শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হলে দেশের স্বার্থ হানি হবে। আমি এটা কখনও করতে দেব না।
–আমি এটা করবই।
–অলিভার রাগ করো না। তুমি ভুলে যেও না, কে তোমাকে এই চেয়ারে বসিয়েছে।
অলিভার শান্তভাবে বললেন–টড, আপনি হয়তো আমার বিরুদ্ধাচরণ করবেন, কিন্তু এই অফিসটাকে তো আপনি শ্রদ্ধা করবেন। যে-ই আমাকে বসিয়ে থাকুন না কেন, আমি তো এদেশের প্রেসিডেন্ট।
সেনেটর ডেভিস উঠে দাঁড়ালেন প্রেসিডেন্ট? তুমি কে, আমি কী তা জানি না? নষ্ট চরিত্রের এক উচ্ছন্নে যাওয়া মানুষ। তুমি হলে আমার ডামি, অলিভার। আমার ইচ্ছে মতো তুমি এখানে থাকবে, ইচ্ছে না হলে তোমাকে আমি ছুঁড়ে ফেলে দেব। দেখি, তুমি কী করে। জিততে পারো?
অলিভার অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন–টড, সত্যি করে বলুন তো, ওখানে আপনি আর আপনার বন্ধুরা কতগুলো তেলের খনি কিনেছেন?
–এটা তোমার দেখার বিষয় নয়। যদি তুমি এই ব্যাপারটা নিয়ে বেশি জেদ করতে যাও, তোমাকে আমি একেবারে শেষ করে দেব। তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছ? চব্বিশ ঘণ্টা সময় দিলাম, তার মধ্যে তোমাকে মত পাল্টাতেই হবে।
.
সেদিন সান্ধ্য ভোজের আসর, জ্যান বলল, বাবা আমাকে বলেছে, তোমার সঙ্গে কথা বলতে। অলিভার, বাবাকে দেখে মনে হল, খুবই মুষড়ে পড়েছে।
অলিভার টেবিলের ওপর তাকালেন। বউয়ের দিকে। কিছু বলার চেষ্টা করলেন।
বাবা আমাকে সমস্ত ঘটনা বলেছে।
–সত্যি! সত্যি?
–হ্যাঁ, তুমি যা করছ, তাতে আমার পূর্ণ সমর্থন আছে।
অলিভার কথাটা বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি বললেন, কিন্তু তোমার বাবা এটার বিরোধিতা করছেন।
আমি জানি, বাবার সিদ্ধান্ত সঠিক নয়। সাহায্য করব কি তোমায়? শান্তি স্থাপনে?
অলিভার অবাক হয়ে জ্যানের কথাগুলো শুনছেন। অলিভার ভেবেছিলেন, জ্যান এই দেশে ফার্স্টলেডি হয়ে বোধহয় একেবারে পাল্টে গেছে। সে এখন দাঁতব্য কাজের সঙ্গেই যুক্ত থাকে। কিন্তু এখন তার চরিত্রের অন্য একটা দিক অলিভারের সামনে উন্মোচিত হল।
আজ রাতে কি একটা বিরাট মিটিং আছে?
না, অলিভার বললেন, আমি মিটিংটা ক্যানসেল করব। আমি আজ বাড়িতেই থাকব।
সেই সন্ধ্যায় অলিভার জ্যানকে খুবই ভালো বেসেছিলেন। অনেক সপ্তাহ বাদে একবার। ব্যাপারটা সুন্দর। সকালবেলা তিনি ভাবলেন, পিটারকে বলব, ওই অ্যাপার্টমেন্টটা ছেড়ে দিতে।
.
ডেস্কের ওপর একটা নোট পড়েছিল–তারিখ ১৫ অক্টোবর, মনরো আর্মস হোটেল, গ্যারেজে আমি লুকিয়েছিলাম। তোমাকে সেখানে দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। পরের দিন আমি ওই কিশোরী কন্যা হত্যার ঘটনাটা শুনলাম। আমি জানি, তুমি গিয়েছিলে, এলিভেটরে বোতাম টিপে তোমার হাতের ছাপ পৌঁছে দিতে। আমি জানি, সমস্ত খবরের কাগজ আমার গল্প শোনার জন্য উদগ্রীব। এরজন্য তারা আমাকে অনেক অর্থ দেবে। কিন্তু আমি বলছি, আমি তোমার প্রচণ্ড গুণমুগ্ধ। আমি এমন কিছু করবনা, যাতে তোমার কিংবা তোমার পেশার কোনো ক্ষতি হতে পারে। আমি হয়তো কিছু আর্থিক সাহায্য চাইব, তুমি কি তা আমাকে দেবে?
এটা তোমার আর আমার মধ্যেই থাকবে। বিশ্বাস করো, তৃতীয় ব্যক্তি জানতে পারবে না। কয়েক দিনের মধ্যেই তোমার সঙ্গে কথা বলব। এর মধ্যে তুমি ব্যাপারটা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করো।
ইতি তোমার একজন কাছের মানুষ।
লমবার্ডো শান্তভাবে বললেন–হায় যিশু, অবিশ্বাস্য, এটা কী করে এল?
পিটার ট্যাগার বলেছিলেন- পোস্টে এসেছে, প্রেসিডেন্টের কাছে, লেখা আছে ব্যক্তিগত।
লমবার্ডো বললেন–কেউ হয়তো আমাদের…
–সিন, আমরা সামান্যতম সুযোগ নিতে পারি না। এই ব্যাপারটা প্রেসিডেন্টকে ধ্বংস করে দেবে। তাই এখন থেকেই ব্যবস্থা করতে হবে।
কী করে ব্যবস্থা করব?
–দেখতে হবে চিঠিখানা কে পাঠিয়েছে।
.
পিটার ট্যাগার ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেসটিগেশনের হেড কোয়ার্টারে পৌঁছে গেছেন। পেনসিলভেনিয়া এভিনিউতে অবস্থিত। স্পেশ্যাল এজেন্টের সঙ্গে কথা বলছেন।
-পিটার, আপনি বললেন, এটা খুবই জরুরি। তাই তো?
–হুঁ, পিটার একটা ব্রিফকেস খুললেন। একটা কাগজ নিলেন।
সেই কাগজটা এজেন্ট পড়তে থাকলেন চিৎকার করে।
আমি বলতে চাইছি, আমি আপনার একজন ফ্যান, কয়েক দিনের মধ্যেই আপনার সঙ্গে দেখা করব।
বাকি সব কিছু কেটে দেওয়া হয়েছে।
জ্যাকব তাকিয়ে বললেন–এটা কী?
–এটার মধ্যে দারুণ সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। প্রেসিডেন্ট জানতে চেয়েছেন, কে এই চিঠিখানি পাঠিয়েছে। আপনাকে একটা কাজ করতে হবে। আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করতে হবে।
ক্লে জ্যাকব কাগজটা আবার দেখলেন। চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ- এটা কখনওই করা উচিত হয় না।
-কেন?
এর মধ্যে একটা গণ্ডগোল আছে।
–আপনি কি বের করতে পারবেন না কে এই চিঠিটা পাঠিয়েছে?
–হ্যাঁ, তা হয়তো পারব।
পিটার ট্যাগার মাথা নাড়লেন- তার হাতের ছাপ তো থাকবে।
জ্যাকব বললেন–একটু অপেক্ষা করুন।
ট্যাগার জানলা দিয়ে তাকালেন, চিঠির কথা চিন্তা করছেন। ভয়ঙ্কর পরিণতির কথাও।
সাত মিনিট বাদে ক্লে জ্যাকব ফিরে এলেন।
উনি বললেন–আপনার ভাগ্যটা ভালোই বলতে হবে।
পিটার ট্যাগারের হৃৎস্পন্দন দ্রুততর হয়েছে আপনি কোনো সূত্র পেয়েছেন?
–হ্যাঁ, জ্যাকব ট্যাগারের হাতে একটা কাগজ তুলে দিলেন। যে মানুষটি এই চিঠি পাঠিয়েছে, একবছর আগে তার একটা ট্রাফিক অ্যাকসিডেন্ট হয়েছিল। তার নাম কার্ল গরম্যান। সে মনরো আর্মসের ক্লার্ক।
–আর কিছু?
পিটার ট্যাগার বললেন–না, ঠিক আছে।
.
ফ্রাঙ্ক লরেনগান লাইনে আছেন। মিস স্টুয়ার্ট? ব্যাপারটা খুবই জরুরি।
–আমি দেখছি। লেসলি ফোনটা ধরে বলল, ফ্রাঙ্ক?
–আপনি কি একা?
–ঠিক আছে।
দীর্ঘশ্বাসের শব্দ। আমি আসছি।
দশ মিনিট বাদে কথা শুরু হল।
.
লেসলি স্টুয়ার্ট ম্যাক বেকারের অফিসে ঢুকে পড়েছে।
কথা আছে ম্যাক, অলিভার রাসেল চোলি হাউসটনকে হত্যা করেছেন, আমি আগেই এই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলাম।
-হ্যাঁ, কিন্তু এর অন্তরালে সত্যি কোথায়?
–ফ্রাঙ্ক এক্ষুনি আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি গভর্নর হাউসটনের সঙ্গে কথা বলেছেন। গভর্নরের স্থির বিশ্বাস পল ইয়ারবাই তার মেয়েকে হত্যা করেনি। ফ্রাঙ্ক পল ইয়ারবাইয়ের মা বাবার সঙ্গে কথা বলেছেন। তারাও এটা বিশ্বাস করছে না।
এছাড়া আর কোনো সূত্র?
এখনই এত অধৈর্য হবেন না, এটা তো গল্পের শুরু। ফ্রাঙ্ক মর্গে গিয়েছিলেন। করোনারের সঙ্গে কথা বলেছেন। করোনার বলেছে, পল নাকি বেল্টের ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। বেল্টটা এত শক্তভাবে বসে গিয়েছিল, যে তার গলা কেটে যায়।
তো?
–ফ্রাঙ্ক ইয়ারবাইয়ের জিনিসপত্র খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেছেন। বেল্ট সেখানে পড়ে আছে। এতটুকু দাগ লাগেনি।
ম্যাক বেকারের চোখ এবার বড়ো বড়ো- তা হলে? তাকে জেলখানার মধ্যেই হত্যা করা হয়? এই তো?
–আমারও তাই অনুমান। যা সত্যি তা প্রকাশ করতে হবে। অলিভার রাসেল আমাকে একবার ওই মারাত্মক ওষুধ দিয়েছিল। যখন ও গভর্নর পদের জন্য লড়াই করছিল, তখন ওর সেক্রেটারিকে মেরে ফেলা হয়। যখন ও গভর্নর পদে বসেছিল, তখন ওর সেক্রেটারিকে একটা পার্কে অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া যায়। তার কোমা হয়েছিল। ফ্রাঙ্ক জানতে পেরেছেন, অলিভার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলেছিল, মেয়েটিকে মেরে ফেলতে।
লেসলি আরও বলল–ইমপিরিয়াল সুইট থেকে একটা টেলিফোন এসেছিল, হোয়াইট হাউসে। যে রাতে চোলি হাউসটনের মৃত্যু হয়। ফ্রাঙ্ক হোটেল টেলিফোন রেকর্ড পরীক্ষা করেছেন। ১৫ অক্টোবরের তথ্য লোপাট করে দেওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্টের অ্যাপয়ন্টমেন্ট, সেক্রেটারি বললেন। সেদিন নাকি প্রেসিডেন্টের সাথে জেনারেল হুইটম্যানের জরুরি বৈঠক ছিল। আসলে কোনো বৈঠক হয়নি। ফ্রাঙ্ক গভর্নর হাউসটনের সঙ্গে কথা বলেছেন। ভদ্রমহিলা বলেছেন চোলি হোয়াইট হাউসে গিয়েছিল। তিনি এই ব্যবস্থা করেছিলেন। চোলির ইচ্ছে ছিল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করবে।
দীর্ঘশ্বাস। নীরবতা–ফ্রাঙ্ক এখন কোথায়?
উনি কার্ল গরম্যানের সঙ্গে কথা বলছেন। গরম্যান হলেন সেই হোটেলে ক্লার্ক, যিনি ইমপিরিয়াল স্যুইট বুক করেছিলেন।
.
জেরেমি রবিনসন বললেন, আমি দুঃখিত, আমরা আমাদের কর্মচারীদের ব্যাপারে বক্তিগত খবর দিতে পারব না।
ফ্রাঙ্ক বললেন–আমি শুধু ওনার বাড়ির ঠিকানাটা চাইছি।
কাজ হবে না, গরম্যান এখন ছুটিতে।
–খুব খারাপ, আমার কয়েকটা বিষয় জানার ছিল।
–কী বিষয়ে?
–গভর্নর হাউসটনের কন্যার মৃত্যুর ব্যাপারে কয়েকটা প্রশ্ন। এই হোটেলেই মেয়েটি মারা যায়। গরম্যানের কাছে হয়তো কিছু লুকোনো খবর আছে।
ফ্রাঙ্ক কাগজ কলম বের করে বললেন–কতদিন ধরে এই হোটেলটি এখানে আছে? আমরা সমস্ত জানতে চাইছি।
জেরেমি রবিনসন রেগে গেছেন–একটু অপেক্ষা করুন, ব্যাপারটা কি সত্যি গুরুত্বপূর্ণ? মেয়েটি তো অন্য কোথাও মরতে পারত।
ফ্রাঙ্কের কণ্ঠস্বরে সহানুভূতি–তা তো হয়নি, মৃত্যুটা এখানেই ঘটেছে। আপনার হোটেলটা ওয়াটার গেটের মতো বিখ্যাত হয়ে উঠেছে।
মিস্টার…
–লনেরগান। —
মিঃ লনেরগান, আপনি কি… এই ধরনের প্রচার আমাদের হোটেলের বদনাম করবে। আর কোনো উপায় নেই।
লনেরগান ভাবলেন–হ্যাঁ, যদি আমি মিঃ গরম্যানের সঙ্গে কথা বলতে পারতাম, তাহলে ব্যাপারটা অন্যভাবে বিচার করা যেত।
.
ফ্রাঙ্ক এখন একটু চিন্তিত। ঘটনাটা নির্দিষ্ট দিকে এগিয়ে চলেছে। হ্যাঁ, এটা নিশ্চয়ই হত্যার পরিকল্পনা, হোটেল ক্লার্কের সঙ্গে দেখা করতে হবে। তার আগে একবার অ্যাপার্টমেন্ট হাউসে যাওয়া দরকার। বউ রিটা আছে, নিশ্চয়ই খাবার তৈরি করছে। লাল চুলের সেই মেয়েটি। উজ্জ্বল দুটি সবুজ চোখ। গায়ের রং ধবধবে ফরসা। স্বামীকে আসতে দেখে সে অবাক হয়ে গেছে।
–ফ্রাঙ্ক, এ সময় এলে যে?
–তোমাকে হ্যালো বলতে এলাম।
–কী হয়েছে বলো তো?
–না, কতদিন তুমি তোমার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওনি।
–হ্যাঁ, গত সপ্তাহে দেখা হয়েছে। কেন?
–আজকে আবার যাবে কি সোনামনি?
–কিছু খারাপ খবর?
–খারাপ? না-না, আমরা হয়তো পুলিজার পুরস্কার পেতে চলেছি।
–কী বলছ তুমি?
–আমি এমন একটা খবর দেব, যা বিশ্ববাসীকে স্তম্ভিত করে দেবে। এটা হল আমার জীবনের–সবথেকে উত্তেজক প্রতিবেদন।
-আমাকে মায়ের কাছে পাঠাচ্ছো কেন?
–আমি কোনো বিপদের সম্ভাবনা রাখতে চাইছি না। অনেকে চাইছে, খবরটা যাতে না বেরোয়। তাই বলছি, তুমি কদিন বাইরে থাকো। কয়েকটা দিন, প্লিজ।
-কিন্তু তোমার যদি কোনো ক্ষতি হয়?
–আমার কোনো ক্ষতি হবে না।
–তুমি এতটা নিশ্চিত হলে কী করে?
–হ্যাঁ, নিজের ওপর আমার অনন্ত বিশ্বাস। রাতে তোমায় ফোন করব কেমন?
–ঠিক আছে, রিটা শান্তভাবে বললেন।
লনেরগান ঘড়ির দিকে তাকালেন–আমি কি তোমাকে ট্রেন স্টেশনে পৌঁছে দেব?
.
এক ঘণ্টা কেটে গেছে, লনেরগান একটা সাধারণ ইটের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালেন। হুইটটন অঞ্চলে। তিনি গাড়ি থেকে নামলেন। সামনের দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন। কলিংবেলে হাত রাখলেন। কোনো উত্তর নেই। বারবার বেল বাজালেন। দরজাটা খুলে গেল।
মধ্যবয়স্ক এক ভদ্রমহিলা, দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন। তাকিয়ে আছেন সন্দেহের চোখে বলুন?
–আমি ইন্টারনাল রেভোনিউ সার্ভিস থেকে আসছি। পরিচয় পত্র বের করলেন ফ্রাঙ্ক। আমি কার্ল গরম্যানের সঙ্গে কথা বলতে চাইছি।
–আমার ভাই তো এখন এখানে নেই।
–উনি কোথায় আছেন?
–আমি জানি না।
ব্যাপারটা খুবই খারাপ। ঠিক আছে, আমি দেখব।
–কী ব্যাপার? কীসের কথা বলছেন?
–আপনার ভাই কিছু বলেনি?
কী বিষয়ে?
–ওনার ভীষণ বিপদ।
–কী ধরনের বিপদ?
–আমি ঠিক বলতে পারছি না, আমার তো মনে হচ্ছে ভদ্রলোকের স্বভাবটা ভালোই।
–হ্যাঁ, কার্ল খুব ভালো ছেলে।
–আমারও তাই ধারণা। কিন্তু ওনাকে তো অবিলম্বে ডেকে পাঠানো হবে। বেশ কিছু প্রশ্ন করা হবে।
ভদ্রমহিলার চোখে মুখে বিপদের আশঙ্কা–কী বিষয়ে প্রশ্ন?
-উনি আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন। ব্যাপারটা খুবই খারাপ। আমি কিছু কিছু সূত্র ধরিয়ে দিতাম। কিন্তু উনি যখন এখানে নেই, তখন তো তা করা যাবে না।
–একটু অপেক্ষা করুন। আমার ভাই যেখানে আছে সেখানকার ঠিকানা দেব কি? কাউকে বলবেন না কিন্তু।
-ঠিক আছে।
–এটা হল সানসাইন ফিসিং লজ, রিচমন্ড লেকের ধারে, ভার্জিনিয়াতে।
–ঠিক আছে, আমি ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করছি।
ব্যাপারটা খুবই ভালো, আপনি সব সামাল দিতে পারবেন তো?
–হ্যাঁ, আপনি চিন্তা করবেন না।
.
ফ্রাঙ্ক দক্ষিণ দিকে এগিয়ে চললেন। রিচমণ্ড একটা ছোট্ট শহর। দেড়শো মাইল দূরে। কয়েক বছর আগে ফ্রাঙ্ক সেখানকার লেকের জলে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন।
সেবার ভাগ্য তার সহায় ছিল। কিন্তু এবার?
টিপটিপ করে বৃষ্টি হচ্ছে, কার্ল গরম্যান কিছুই মনে করেননি। এখনই মাছেরা চার খায়। তিনি কয়েক বছর ধরেই মাছ ধরছেন। বুদবুদ দেখা দিচ্ছে, ঢেউয়ের ছোটো ছোটো নাচন। ভারী সুন্দর পরিবেশ। না, ধৈর্যের পরীক্ষা, ঠিক জায়গায় ঠিক মাছকে পাকড়াও করতে হবে। মনে পড়ল, মনরো আর্মসের সেই ঘটনার কথা। জ্যাকেটটা ফেলে এসেছিলেন, গ্যারেজের দিকে এগিয়ে গেলেন। প্রাইভেট এলিভেটরের দরজা খুলে গেল। কে বেরিয়ে এলেন? কার্ল অবাক হয়েছেন। বেশ কিছুক্ষণ চলতে ফিরতে পারেননি। সেই মানুষটি আবার ফিরে এলেন। পাগলের মতো হাতের ছাপ নিচ্ছেন। তারপর গাড়ি করে বেরিয়ে গেলেন।
পরের দিন সকালবেলা। কিশোরী কন্যার হত্যা রহস্য। দুয়ে দুয়ে চার, আহা, ভদ্রলোকের জন্য দুঃখ হচ্ছে। সত্যি, আমি তার একজন অনুগামী। সমস্যাটা শুরু হয়েছে। বিখ্যাত হওয়ার এই এক জ্বালা। আপনি কোথায় যাচ্ছেন, সকলে তার খবর রাখবে। না, কত টাকায় বাজিটা জেতা যেতে পারে? একবার টাকা বের করতেই হবে। তারপর? অনন্তকাল ধরে শুধু দোহনের পালা।
এবার? এবার মনে হচ্ছে, মাছ চার খেয়েছে। নাঃ, খেলিয়ে তুলতে হবে।
একটা স্পিডবোট এগিয়ে আসছে। কার্ল চিৎকার করলেন–আঃ, এত কাছে আসবেন না।
স্পিডবোটটা আরও কাছে এগিয়ে এসেছে।
–একী? একী? হায়-হায়।
স্পিডবোটটা আক্রমণ করল। গরম্যানের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।
গরম্যান বাঁচার জন্য চেষ্টা করলেন। সম্ভব হচ্ছে না। স্পিডবোটটা তখনও ঘুরছে। কার্ল গরম্যানের মনে হল, মাথার খুলিটা বুঝি ভেঙে গেছে। চোখের সামনে তখন ঘন অমানিশার অন্ধকার।
.
যখন ফ্রাঙ্ক এলেন, পুলিশের গাড়ি এসে গেছে। ফায়ার ইঞ্জিন এবং অ্যাম্বুলেন্স। অ্যাম্বুলেন্সটা নীল আলো জ্বালিয়ে বেরিয়ে গেল।
ফ্রাঙ্ক গাড়ি থেকে নামলেন। জিজ্ঞাসা করলেন এত উত্তেজনার কারণ কী?
–লেকে একটা দুর্ঘটনা, আহা এক হতভাগা মরে গেল।
লনেরগান সবকিছু বুঝতে পারলেন।
.
মধ্যরাত, ফ্রাঙ্ক তাঁর কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করছেন। অ্যাপার্টমেন্টে তখন তিনি একা। এমন একটা গল্প যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে শেষ করে দেবে। তাকে বহু আকাঙ্খিত পুলিৎজার পুরস্কার দেবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। উডওয়ার্ড এবং বার্নস্টাইনের থেকেও তার খ্যাতি বেশি হবে। এটি হবে শতাব্দীর সেরা কাহিনী।
দরজায় কার আঘাত? উনি উঠলেন। দরজা খুলে দিলেন।
-কে?
লেসলি স্টুয়ার্টের কাছ থেকে একটা খবর।
নতুন কোনো খবর?
উনি দরজা খুললেন। ধাতব পরশ! অসম্ভব যন্ত্রণা। হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে গেল।
তারপর? তারপর শুধুই সীমাহীন শূন্যতা।
.
২০.
ফ্রাঙ্কের লিভিং রুম দেখে মনে হল, সেখান দিয়ে বুঝি ঝড় বয়ে গেছে। ড্রয়ার ক্যাবিনেট সবকিছু তছনছ করা হয়েছে। জিনিসপত্র টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘরের ভেতর ফেলে রাখা হয়েছে।
নিক রিস ফ্রাঙ্কের মৃতদেহটা দেখলেন। সেটা সরিয়ে দেওয়া হল। তিনি ডিটেকটিভ স্টিভ ব্রাউনের দিকে তাকালেন।
–কী দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বুঝতে পারলেন?
–না।
পড়শিদের সঙ্গে কথা বলেছেন?
–এই অ্যাপার্টমেন্ট বাড়িটা বোধহয় একটা বিচিত্র চিড়িয়াখানা। বাঁদররা এখানে বসবাস করে। তারা কেউ কিছু দেখেনি। কিছু শোনেনি। কোনো ব্যাপারে কথা বলতে চায় না। শ্ৰীমতী যে কোনো মুহূর্তে এখানে এসে পড়বেন। তিনি রেডিওতে এই সংবাদটা শুনেছেন। গত ছমাসে এখানে অনেকগুলো ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
–আমি সুনিশ্চিত এটা ডাকাতির ঘটনা নয়।
–আপনি কী বলতে চাইছেন?
লনেরগানকে হেডকোয়ার্টারে দেখা গেছে। পল ইয়ারবাইয়ের জিনিসপত্র পরীক্ষা করতে গিয়েছিলেন। আমি জানতে চাইছি, লনেরগান কী বিষয় নিয়ে কাজ করছিলেন? দেখুন তো ড্রয়ারে কোনো কাগজ আছে কিনা?
-না, কোনো কাগজ নেই।
–কোনো নোট?
না।
হয় উনি খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ছিলেন। অথবা কেউ সবকিছু নিয়ে চলে গেছে।
নিক টেবিলের দিকে হেঁটে গেলেন। একটা কেবল ঝুলছে, কোনো কিছুর সঙ্গে তার সংযুক্তি নেই। তিনি বললেন–এটা কী?
ব্রাউন বললেন–ওটা কম্পিউটারের পাওয়ার কেব। হয়তো একসময় এটা চালু ছিল। ব্যাকআপটা কোথাও হয়তো আছে।
তার মানে কম্পিউটারটা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কপিগুলো কী ফাইলে সেট করা নেই? দেখা যাক।
.
ব্যাকআপ ডিস্কটা পাওয়া গেল। অটোমোবাইলের ব্রিফকেসে পড়ে আছে। রিস সেটা ব্রাউনের হাতে তুলে দিলেন।
আমি এটাকে হেডকোয়ার্টারে নিয়ে যাব।হয়তো কোনো পাশ ওয়ার্ড পাওয়া যেতে পারে, ক্রিশ কলবির সঙ্গে কথা বলতে হবে। উনি এব্যাপারে একজন বিশেষজ্ঞ।
অ্যাপার্টমেন্টের সামনের দরজা খুলে গেল। রিটা ঢুকলেন। বেশ বুঝতে পারা যাচ্ছে, খবরটা তিনি বিশ্বাস করতে পারেননি। তার শরীর বিধ্বস্ত। তিনি এগিয়ে এলেন সামনের দিকে।
আপনি কি শ্রীমতী লনেরগান?
–আপনারা কে?
–আমি ডিকেটটিভ নিক রিস, উনি হলেন ব্রাউন।
তার মানে?
–আপনার স্বামীর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা অত্যন্ত দুঃখিত। আমরা বুঝতে পারছি, সময়টা খুবই খারাপ। কয়েকটা প্রশ্ন করতে পারি কি?
শ্ৰীমতীর চোখে জল। মনে উত্তেজনা এবং ভয়। কীসের ভয়?
–আপনার স্বামী কোনো একটা ব্যাপার নিয়ে কাজ করছিলেন, তাই তো?
স্বামীর কণ্ঠস্বর মনে পড়ল–আমি এমন একটা প্রতিবেদন পেশ করব রিটা, সেটা পৃথিবীর সকলকে স্তম্ভিত করে দেবে। জীবনে আমি এত উত্তেজক ঘটনার পিছনে কখনও ছুটে যাইনি।
শ্ৰীমতী লনেরগান?
না-না, এব্যাপারে আমাকে কোনো প্রশ্ন করবেন না। আমি কিছুই জানি না।
–আপনি কি জানেন, উনি কী বিষয় নিয়ে কাজ করছিলেন?
–ফ্রাঙ্ক কখনও এবিষয় নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করেনি।
রিটা মিথ্যে বলছেন, গোয়েন্দারা বুঝতে পারলেন।
-কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে, এবিষয়ে আপনার কোনো অনুমান?
রিটা পরিষ্কারভাবে দেখলেন, চারদিকে তাকালেন। বললেন–মনে হচ্ছে ডাকাতদের কাজ।
ডিটেকটিভ নিক এবং ব্রাউন পরস্পরের দিকে তাকালেন।
আমাকে একটু একলা থাকতে দেবেন কী?
আমরা আপনাকে কোনো সাহায্য করব?
–না-না, শুধু একটু একলা থাকতে দিন।
–ঠিক আছে, আমরা ফিরে আসব, সময় এবং সুযোগ হলেই।
নিক রিস বললেন।
.
নিক পুলিশ হেডকোয়ার্টারে ফিরে গেলেন। ম্যাক বেকারকে ফোন করলেন। পরিচয় দিলেন। বললেন–আমি ফ্রাঙ্ক লনেরঞ্জন হত্যাকাণ্ডের সমাধান করতে চাইছি। আপনি কি বলবেন যে, উনি কী বিষয় নিয়ে কাজ করছিলেন?
-হ্যাঁ, ফ্রাঙ্ক চোলি হাউসটনের হত্যারহস্য নিয়ে কাজ করছিলেন।
–কোনো প্রতিবেদন কি পেশ করা হয়েছে?
–না, যে কোনো মুহূর্তে সেটা আসতো।
ধন্যবাদ মিঃ বেকার।
-কোনো খবর থাকলে আমাকে জানাবেন কিন্তু।
-হ্যাঁ, আপনাকে নিশ্চয়ই জানাব। নিক বললেন।
.
পরের দিন সকালবেলা। ডানা ইভান্স টম হকিন্সের অফিসে গেছে–আমি ফ্রাঙ্কের মৃত্যু। সম্পর্কে একটা রির্পোট লিখতে চাইছি। আমি তার বিধবা পত্নীর সাথে কথা বলতে চাইছি।
–ঠিক আছে, আমি তোমাকে ক্যামেরা ক্রু ব্যবস্থা করছি।
.
সন্ধ্যেবেলা। ডানা ইভান্স এবং তার ক্যামেরা ক্রু ফ্রাঙ্ক লনেরগানের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং এ পোঁছে গেছে। ডানা বেলে হাত রাখল। এই ধরনের ইন্টারভিউ নিতে ডানা খুবই ভয় পায়। টেলিভিশনে এই খবরগুলো দেখানো উচিত নয়। কিন্তু দুঃখটাকে ভাগ করতে হবে।
দরজা খুলে গেল। রিটা দাঁড়িয়ে আছেন।
-আপনি কে?
–আপনাকে রিবক্ত করার জন্য আমার খারাপ লাগছে। আমি ডানা ইভান্স, ডবলিউ টি ই-র পক্ষ থেকে আসছি। আপনি কি এই ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া জানাবেন?
রিটা ভয়ে বিমর্ষ হয়ে গেছেন। চিৎকার করে উঠলেন- তোমরা, তোমরাই আমার স্বামীকে হত্যা করেছ।
তিনি অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যে ছুটে গেলেন।
ডানা ক্যামেরাম্যানের দিকে তাকাল। বলল–এখানে অপেক্ষা করুন।
ডানা ভেতরে ঢুকে গেল। রিটাকে বেডরুমে দেখতে পেল।
মিসেস লনেরগান?
বেরিয়ে যান, এক্ষুনি বেরিয়ে যান, আপনি আমার স্বামীকে হত্যা করেছেন।
ডানা অবাক আপনি কী বলতে চাইছেন?
আপনারা আমার স্বামীকে এমন একটা কাজ দিয়েছিলেন, সে প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিল। আমাকে পর্যন্ত শহর থেকে বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছিল। সে ভেবেছিল, আমার জীবনে একটা ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে যাবে।
ডানা তাকাল–কী? কী বলছেন? কোন বিষয় নিয়ে উনি কাজ করছিলেন?
–ফ্রাঙ্ক কখনও আমাকে বলে না, মনে হল বিকারে বোধহয় হিস্টিরিয়া হয়েছে। সে বলেছিল, ব্যাপারটা সাংঘাতিক এবং বিপজ্জনক। এই প্রতিবেদনটা প্রকাশিত হলে সে হয়তো পুলিৎজার। পুরস্কার পাবে।
রিটা কাঁদতে শুরু করেছেন।
ডানা এগিয়ে গেলেন। গায়ে হাত রাখলেন–আমি খুব দুঃখিত। উনি কি আর কিছু বলেছেন?
–না, ও আমাকে চলে যেতে বলেছিল। আমাকে ট্রেন স্টেশনে পৌঁছে দেয়। তারপর কোনো, একজন হোটেল ক্লার্কের সঙ্গে দেখা করার জন্য বেরিয়ে যায়।
–কোথায়?
–মনোরা আর্মস হোটেলে।
.
–মিস ইভান্স, আপনি কেন এখানে এসেছেন বুঝতে পারছি না। জেরেমি রবিনসন বাধা দেবার চেষ্টা করলেন। লনেরগান বলেছিলেন যদি আমি সাহায্য করি, তাহলে এই হোটেলের কোনো খারাপ খবর বেরোবে না।
মিঃ রবিনসন, লনেরগান বেঁচে নেই, আমরা এখন কিছু খবর চাইছি।
জেরেমি বললেন না, এ বিষয়ে আমি কোনো খবর দিতে পারব না।
–আপনি মিঃ লনেরগানকে কী বলেছিলেন?
উনি কার্ল গরম্যানের ঠিকানা চাইছিলেন। হোটেলের ক্লার্ক। আমি ঠিকানাটা দিয়েছিলাম।
লনেরগান কি দেখা করতে গিয়েছিলেন?
এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।
–ওই ঠিকানাটা আমার চাই।
–হ্যাঁ, ওই ভদ্রলোক তার বোনের সঙ্গে থাকেন।
কয়েক মিনিট কেটে গেছে। ডানা ঠিকানাটা পেয়েছেন। রবিনসন দেখল, ডানা হোটেল থেকে চলে গেল। সঙ্গে সঙ্গে তিনি হোয়াইট হাউসে ফোন করলেন।
রবিনসন বুঝতেই পারছেন না, সকলেই এই ঘটনাটা নিয়ে এত উৎসাহী কেন?
.
ক্রিশ কলবি, ডিপার্টমেন্টাল কম্পিউটার এক্সপার্ট। ডিটেকটিভ রিসের অফিস ঘরে চলে গেলেন, তাঁর হাতে একটা ফ্লপি ডিক্স। তিনি উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছেন।
ডিটেকটিভ নিক জানতে চাইলেন কী দেখলেন?
ক্রিশ কলবি বললেন–এই ব্যাপারটা জানতে পারলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। দেখুন প্রিন্ট আউটে কী লেখা আছে।
নিক পড়তে শুরু করলেন। একটা অদ্ভুত অভিব্যক্তি তার মুখে ফুটে উঠেছে। তিনি চিৎকার করলেন- হায় ভগবান, এটা তো এক্ষুনি ক্যাপ্টেন মিলারকে দেখাতে হবে।
.
ক্যাপ্টেন অটো মিলার প্রিন্ট আউটটা পড়লেন। তিনি ডিটেকটিভ রিসের দিকে তাকালেন এই ধরনের প্রিন্ট আউট আমি কখনও দেখিনি।
–হ্যাঁ, এখন কী করা উচিত? ডিটেকটিভ রিস বললেন।
ক্যাপ্টেন মিলার শান্তভাবে বললেন আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
.
অ্যাটর্নি জেনারেল বারবারা কার্টলিন। তার ঘরে অনেকে এসেছেন। ফেডারেল ব্যুরো ইনভেসটিগেশন থেকে এসেছেন ওয়াশিংটন পুলিশের প্রধান। সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্সের ডিরেক্টর, সুপ্রিম কোর্টের চিফ জাস্টিস।
বারবারা কার্টলিন বললেন–আপনাদের এখানে কেন ডাকা হয়েছে, জানেন তো? আমি আপনাদের পরামর্শ চাইছি। সত্যি কথা বলতে কী, ব্যাপারটা কীভাবে সমাধান করা উচিত, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। ফ্রাঙ্ক লনেরগান ছিলেন ওয়াশিংটন ট্রিবিউনের একজন রিপোর্টার। যখন তাঁকে হত্যা করা হয়, তখন তিনি চোলি হাউসটনের মৃত্যু রহস্য সমাধানের চেষ্টা করছিলেন। পুলিশ তার ডিস্কের একটা ট্রান্সকিপ্ট বের করেছে। এই দেখুন সেই প্রিন্ট আউটটা। আমি পড়ে সেটা আপনাদের শোনাচ্ছি।
…আমাকে বিশ্বাস করতে হচ্ছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহামান্য প্রেসিডেন্ট অন্তত একটা হত্যার সঙ্গে যুক্ত। তিনি আরও চারটি হত্যার অন্তরালে কাজ করেছেন।
চিৎকার করে উঠলেন পুলিশ প্রধান- কী বলছেন?
ভদ্রমহিলা বললেন–এখনও শেষ হয়নি, আমাকে পড়তে দিন। আমি বিভিন্ন সূত্র থেকে নিম্মলিখিত খবরগুলি পেয়েছি। লেসলি স্টুয়ার্ট, ওয়াশিংটন ট্রিবিউন পত্রিকার প্রকাশক এবং মালিক, আমাকে জানিয়েছেন, অলিভার রাসেল তাকে উত্তেজক পানীয় খেতে বাধ্য করেছিলেন।
… অলিভার রাসেল যখন কেনটাকির গভর্নর পদের জন্য লড়াই করছিলেন, তখন তার সেক্রেটারি লিসা পারনেটিকে ধর্ষণ করেন।
পরের দিন ওইহতভাগ্য মহিলার দেহ পাওয়া যায় কেনটাকিনদীতে। পরীক্ষার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, তাকে তরল উত্তেজক পদার্থ খাওয়ানো হয়েছিল।
…গভর্নর হয়ে অলিভার রাসেল আর একটি মারাত্মক ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। তার সেক্রেটারি মিরিয়াম ফ্রেডল্যান্ডের অচেতন দেহটা একটা পার্কের বেঞ্চের নীচে পাওয়া যায়, ভদ্রমহিলা কোমাতে চলে যান। তাকেও ওই উত্তেজক পানীয় দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ অপেক্ষায় ছিল। কিছুদিন বাদে হয়তো ওনার জ্ঞান ফিরত। অলিভার রাসেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ফোন করেন। তিনি বলেন, এখনই যেন মেয়েটিকে মেরে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়। মিরিয়াম ফ্রেডল্যান্ড আর কোমা থেকে ফিরে আসতে পারেননি।
…চোলি হাউসটনকে আবার উত্তেজক পানীয় দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যে রাতে মেয়েটি মারা যায়, সেই রাতে হোটেল সুইট থেকে হোয়াইট হাউসে ফোন করা হয়েছিল। হোটেলের টেলিফোন রেজিস্টার পরীক্ষা করেছিলাম, ওই পাতাটা ছিঁড়ে নেওয়া হয়েছে।
… আমাকে বলা হয়েছিল, প্রেসিডেন্ট ওদিন রাতে বিশেষ মিটিং-এ ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু আমি দেখেছি, মিটিংটা বাতিল হয়েছিল, ওই রাতে প্রেসিডেন্ট কোথায় ছিলেন, তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
..পল ইয়ারবাইকে এই ব্যাপারে গ্রেপ্তার করা হয়। ক্যাপ্টেন অটো মিলার বলেছিলেন, ইয়ারবাইকে আটকে রাখা হয়েছে। পরদিন সকালে ইয়ারবাইকে তার সেলে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল। বলা হয় সে নাকি গলায় বেল্ট জড়িয়ে মারা গেছে। কিন্তু আমি যখন পুলিশ স্টেশনে গিয়ে তার জিনিসপত্র পরীক্ষা করলাম, দেখলাম, সেখানে বেল্টটা অক্ষত অবস্থায় আছে।
.. এফ বি আই-তে আমার একজন বন্ধু আছে, তার কাছ থেকে আমি একটা খবর পেয়েছি। আমি শুনেছি হোয়াইট হাউসে একটা ব্ল্যাকমেল চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রেসিডেন্ট রাসেল এফ বি আই-কে বলেছেন চিঠির ওপর আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করতে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটা করা সম্ভব হয় না। কিন্তু ইনফাস্কোপ নামক যন্ত্রের সাহায্যে এফ বি আই আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করতে পেরেছে।
…এই চিঠির ওপর যে আঙুলের ছাপ ছিল, সেটা কার্ল গরম্যানের। উনি হলেন মনরো আর্মস হোটেলের একজন ক্লার্ক। উনি হয়তো হত্যাকারীকে দেখেছিলেন। ওনাকে একটা ফিশিং ক্যাম্পে পাওয়া গেল। ওনার নামটা হোয়াইট হাউসের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। আমি যখন ক্যাম্পে পৌঁছোলাম, দেখলাম গরম্যানকে মেরে ফেলা হয়েছে। বলা হচ্ছে, এটা নেহাতই একটা অ্যাকসিডেন্ট।
…তাহলে? এইসব ঘটনা পরম্পরা থেকে আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি প্রেসিডেন্ট অনেকগুলো হত্যার অন্তরালে কাজ করেছেন। আমি এই তদন্তের কাজটা আরও চালিয়ে যাব। কিন্তু, আমার ভয় হচ্ছে, তবে এ রেকর্ড রইল, যদি আমার কোনো ক্ষতি হয়, এই রেকর্ড থেকে যেন সকলে সত্যিটা জানতে পারে।
এফ বি আই-এর প্রধান চিৎকার করে উঠলেন–অসম্ভব, অসম্ভব।
ঘরের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল কার্টলিন বললেন–লনেরগান এটা বিশ্বাস করেছেন, তাই হয়তো তাকে। হত্যা করা হয়েছে।
চিফ জাস্টিস প্রশ্ন করলেন প্রেসিডেন্ট যদি ছজনকে হত্যা করে থাকেন, তাহলে কীভাবে তার বিচার হবে?
হ্যাঁ, তাঁকে ইমপিচ করতে হবে? গ্রেপ্তার করতে হবে? জেলে পুরতে হবে?
সবকিছু করার আগে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্টলিন বললেন–এই ট্রান্সকিপ্টটা প্রেসিডেন্সের কাছে দেওয়া উচিত। দেখা যাক, তিনি এ বিষয়ে কী মন্তব্য করেন?
মৃদু গুঞ্জন।
এর মধ্যে আমি বলছি, তার অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট বের করা উচিত, ব্যাপারটা খুবই জরুরি। ঘরে উপস্থিত একজন ভাবলেন, এখনই পিটার ট্যাগারকে খবর দিতে হবে।
.
পিটার ট্যাগার টেলিফোনটা নামিয়ে রাখলেন। যে কথা শুনলেন, তা বিচার করতে বসলেন। তিনি উঠে গেলেন, ডাবরো কানারের অফিসে।
–এখনই প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলতে হবে।
উনি এখন মিটিং-এ ব্যস্ত আছেন।
–ডাবরো, ব্যাপারটা খুবই জরুরি।
ডাবরো বললেন–এক মুহূর্ত অপেক্ষা করুন। টেলিফোন নিলেন, বোম টিপলেন–স্যার, আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত।মিঃ ট্যাগার এখানে এসেছেন। উনি এখনই আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন।
রিসিভার নামিয়ে রেখে ভদ্রমহিলা বললেন পাঁচ মিনিট।
.
পাঁচ মিনিট কেটে গেছে। ওভাল অফিসে ট্যাগার এবং প্রেসিডেন্ট রাসেল ছাড়া আর কেউ নেই।
–এত গুরুত্বপূর্ণ, কী ব্যাপার পিটার?
–অ্যাটর্নি জেনারেল এবং এফ বি আই-এর প্রধান মনে করছেন, তুমি ছটা হত্যার সঙ্গে যুক্ত।
অলিভারের মুখে হাসি ব্যাপারটা হাসির বিষয়, তাই তো?
-না, ওদের স্থির বিশ্বাস তুমি চোলি হাউসটনকে হত্যা করেছ।
অলিভারের মুখ বিবর্ণ আর কী?
–হ্যাঁ, যা বলা হয়েছে, সমস্ত সাক্ষ্য প্রমাণ আছে। তথ্য একেবারে নিখুঁত। আমার মনে হয় না তুমি নিজেকে বাঁচাতে পারবে। ওই রাতে তুমি কোথায় ছিলে? যেদিন মেয়েটি মারা যায়।
অলিভার নিশ্চুপ।
পিটার ট্যাগার অপেক্ষা করলেন–অলিভার, তাড়াতাড়ি বলল, তুমি কি উত্তর দিতে পারবে?
অলিভার আমতা আমতা করছে না, আমি বলতে পারব না।
–তোমাকে বলতেই হবে।
অলিভার বললেন–পিটার, আমাকে একটু একা থাকতে দিন।
.
পিটার সেনেটর ডেভিসের সঙ্গে দেখা করলেন।
–পিটার, এত তাড়ার কী আছে?
–এটা প্রেসিডেন্টের ব্যাপারে একটা সমস্যা।
–তাই নাকি?
–অ্যাটর্নি জেনারেল এবং এফ বি আই-এর প্রধান মনে করছেন, অলিভার একজন হত্যকারী।
সেনেটর ডেভিস উঠে দাঁড়ালেন–তুমি কী বলছ?
–ওঁরা এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত যে, অলিভার একাধিক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। আমি এফ বি আই-এর এক বন্ধুর কাছ থেকে খবরটা পেয়েছি।
ট্যাগার সব কথা বললেন।
সেনেটর ডেভিস শান্তভাবে বললেন–কুকুরির বাচ্চা, এর মানে কী, তুমি বুঝতে পারছ?
–হ্যাঁ, আমি বুঝতে পারছি।
–অলিভারের নিকুচি করেছে। এত লক্ষ কোটি ডলার আমি বিনিয়োগ করেছি, এখন কী হবে? আমার হাতে সমস্ত ক্ষমতা, আমি এ ব্যাপারটা করতে দেব না। দেখা যাক, কী হয়?
–আপনি এখন কী করবেন?
–হ্যাঁ, তুমি তো বলছ, সাক্ষ্যপ্রমাণ যথেষ্ট আছে?
–হ্যাঁ, এমন প্রমাণ যা সহজে নষ্ট করা যাবে না। কিন্তু অ্যালিবাই নেই।
প্রেসিডেন্ট এখন কোথায়?
উনি এখন ওভাল অফিসে আছেন।
–ঠিক আছে, আমি কিছু ভালো খবর নিয়ে যাচ্ছি।
.
সেনেটর টড ডেভিস বললেন। সেনেটর ডেভিস অলিভারের মুখোমুখি বসে আছেন, ওভাল অফিসে।
-খুব খারাপ খবর শুনলাম, অলিভার। ব্যাপারটা আমি বিশ্বাস করছি না। কেউ বোধহয় তোমাকে ফাঁসাতে চাইছে।
–আমিও না। আমি কোনো খারাপ কাজ করিনি, টড।
–তুমি করোনি, কিন্তু এ ধরনের কাজ হল কী করে? এটা তোমার পেশাকে কতখানি প্রভাবিত করবে, তুমি বুঝতে পারছ?
নিশ্চয়ই। কিন্তু…
–দুটি বিষয় জানতে হবে। এই অফিসটা সারা পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করে, অলিভার, তুমি কি ছেড়ে দেবে?
–টড, আমি কোনো খারাপ কাজ করিনি।
-হ্যাঁ, চোলি হাউসটনের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তোমার কী সম্পর্ক থাকতে পারে? তুমি সেদিন কোথায় ছিলে, বলো দেখি?
কিছুক্ষণের নীরবতা। তারপর একটি তীক্ষ্ণ উত্তর–না।
সেনেটর ডেভিস হাসলেন–কী হল তোমার স্মৃতির জগতে? সেই সন্ধ্যায় তুমি কোথায় ছিলে? কোথায় কাটিয়েছিলে?
অলিভার তাকালেন–কী জিজ্ঞাসা করছেন?
–হ্যাঁ, তোমার অ্যালিবাই, আর কোনো প্রশ্ন আমি জানতে চাইছি না। আমি তোমাকে বাঁচাতে চাইছি।
অলিভার বললেন–এর বিনিময়ে আপনি কী চান, টড?
সেনেটর ডেভিস বললেন–আমরা মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি সম্মেলনটা শুরু করব। আমাদের অনেকগুলো পরিকল্পনা আছে। এখনই সব নষ্ট করতে দিচ্ছি না।
–আমি শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করব।
–তুমি কী বলবে?..
–হ্যাঁ, আমি ওই চুক্তিটা সম্পাদন করবই।
–তুমি কী করতে চাইছ?
–আমি জানি।
সেনেটর ভালোভাবে বসলেন। অলিভারের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন–তোমাকে মার্ডার চার্জের আসামি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, অলিভার। তুমি কি বুঝতে পারছ, এর ফলশ্রুতি কী হবে? বাকি জীবনটা তোমার জেলের অন্ধকারে কাটবে।
ইন্টারকমে একটা শব্দ শোনা গেল–মিঃ প্রেসিডেন্ট, কয়েকজন আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্টলিন, এফ বি আই থেকে মিঃ ব্রান্ডন, চিফ জাস্টিস গ্রেটস এবং…
–ওঁদের পাঠিয়ে দিন।
সেনেটর ডেভিস বললেন–আমি কি একটা ভুল করলাম অলিভার? তুমিও তোমার জীবন নিয়ে খেললে, আমি তোমাকে ধ্বংস করে দেব।
দরজা খুলে গেল, সকলে প্রবেশ করলেন।
জাস্টিস গ্রেটস বললেন–সেনেটর ডেভিস?
টড ডেভিস মাথা নাড়লেন। ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। বারবারা কার্টলিন ঘরটা বন্ধ করলেন। তিনি ডেস্কের দিকে এগিয়ে গেলেন।
–মিঃ প্রেসিডেন্ট, আপনাকে প্রশ্ন করতে খারাপ লাগছে, কিন্তু কয়েকটা প্রশ্ন করতেই হবে।
অলিভার বললেন আমি জানি, আপনারা কেন এখানে এসেছেন? কিন্তু আবার বলছি, ওই সব মৃত্যুর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।
–আমরা এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত, স্কট ব্রান্ডন বললেন, আমরা কেউই বিশ্বাস করছি না। কিন্তু হাতে তথ্য প্রমাণ থাকা চাই। এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
–আমরা বুঝতে পারছি।
–মিঃ প্রেসিডেন্ট, আপনি কি কখনও উত্তেজক পানীয় ব্যবহার করেছেন?
না।
সকলে মুখের দিকে তাকালেন।
পনেরোই অক্টোবর তারিখে আপনি কোথায় ছিলেন, দয়া করে বলবেন কি? যে সন্ধ্যায় চোলি হাউসটনের মৃত্যু হয়েছে?
একটু নীরবতা।
মিঃ প্রেসিডেন্ট?
–আমি দুঃখিত, বলতে পারব না।
–মনে করার চেষ্টা করুন। ওই সন্ধ্যায় আপনি কী করেছিলেন?
আবার নীরবতা।
–মিঃ প্রেসিডেন্ট?
–আমি ঠিক মনে করতে পারছি না। পরে বলব।
কত পরে? একজন জানতে চাইলেন।
–রাত্রি আটটার সময়।
ওঁরা চলে গেলেন। অলিভার ছোট্ট সিটিং রুমে গিয়ে বসলেন। জ্যান সেখানে কাজ করছিল। জ্যান দেখল, অলিভার ঢুকছেন।
অলিভার বললেন–আমাকে একটা স্বীকারোক্তি করতে হবে।
.
সেনেটর ডেভিস খুবই রেগে গেছেন। আমি এত বোকা? একটা ভুল লোককে নির্বাচিত করলাম? লোকটা আমার সর্বনাশ করে দেবে। লোকে আমার দিকে আঙুল তুলবে। বলবে, আমি নাকি এই ষড়যন্ত্রের অন্তরালে আছি।
–মিস স্টুয়ার্ট, ফোন তুলে নিয়ে সেনেটর ডেভিস বললেন, তুমি বলেছিলে, তোমাকে বেশি কিছু দেবার থাকলে যেন তোমাকে ফোন করি।
ইয়েস, স্যার।
-তোমাকে একটা কথা আমি পরিষ্কার বলতে চাইছি, ট্রিবিউনের পুরো সমর্থন আমার দরকার। শুরু হবে তীব্র প্রচার অভিযান। একটার পর একটা বিস্ফোরক সম্পাদকীয়। •
–এর বিনিময়ে আমি কী পাব?
-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পদ। অ্যাটর্নি জেনারেল এই মাত্র একটা ওয়ারেন্ট বের করেছেন, একজনকে গ্রেপ্তার করা হবে, অনেকগুলো হত্যার অপরাধী হিসেবে।
–আপনি বলুন, আমি শুনছি।
.
লেসলি অত্যন্ত দ্রুত কথা বলছে। ম্যাক বেকার বুঝতে পারছেন না।
বেকার বললেন–চুপ করো, তুমি কী বলতে চাইছ?
–প্রেসিডেন্ট, শেষ পর্যন্ত তাঁকে ফাঁদে ফেলা সম্ভব হয়েছে। এই মাত্র সেনেটর টড ডেভিসের সঙ্গে কথা হল। সুপ্রিম কোর্টের চিফ জাস্টিস, পুলিশের প্রধান ডিরেক্টর, এফ বি আই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল, সকলেই প্রেসিডেন্টের অফিসে বসে আছেন। একটা ওয়ারেন্ট বের করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট অনেকগুলো মার্ডারের সঙ্গে যুক্ত। সাক্ষ্য প্রমাণের পাহাড় জমে গেছে। ম্যাক, প্রেসিডেন্টের কোনো অ্যালিবাই নেই। এই গল্পটা শতাব্দীর সেরা ঘটনা, কী বলেন?
–এটা কিন্তু আমরা ছাপতে পারব না।
লেসলি অবাক–কেন?
–লেসলি, প্রত্যেকটা তথ্য প্রমাণকে ভালোভাবে পরীক্ষা করতে হবে।
-হ্যাঁ, শেষ অব্দি এটা আমরা ছাপব। ওয়াশিংটন পোস্টে হেডলাইন হিসেবে। এই খবরটা আমরা কখনও হাতছাড়া হতে দেব না।
যথেষ্ট সাক্ষ্য না থাকলে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে হত্যার অপরাধে অপরাধী করতে পারি না। সে কথা জানো তো?
লেসলির মুখে হাসি ম্যাক, আমি তো তা করব না। আমরা খালি লিখব, তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে। এটাই তার রাজনৈতিক ভাগ্যকে একেবারে শেষ করে দেবে।
–সেনেটর ডেভিস?
উনি এখন জামাইয়ের বিরুদ্ধাচারণ করছেন। উনি বিশ্বাস করেন যে, প্রেসিডেন্ট সত্যি সত্যি দোষী।
–ব্যাপারটা এখানেই শেষ করা উচিত নয়। দেখো, এই ঘটনাটা সত্যি কিনা।
ক্যাথেরিন গ্রাহামকে মনে আছে? তাকে কি ভুলে গেছেন? আমরা এই খবরটা ছাপব কী ছাপব না?
–না, এখনই বলতে পারছি না।
–আর কার সঙ্গে কথা বলতে হবে? এটা আমার কাগজ, আমি যেটা ভালো বুঝব, তাই করব।
না, এটা অবিবেচকের কাজ হবে। আমি কখনও চাইব না, এই খবরটা ছাপা হোক।
–আমি নিজেই এই প্রতিবেদনটা লিখব।
–লেসলি যদি তুমি তাই করো, আমি কিন্তু চিরদিনের জন্যে অফিস ছেড়ে চলে যাব।
–ম্যাক আপনি আর আমি পুলিৎজার পুরস্কার ভাগ করে নেব।
.
লেসলি ইন্টারকমের বোম টিপল। ডোলটেয়ারকে এখানে আসতে বলো তো।
ডোলটেয়ারের মুখের দিকে তাকিয়ে লেসলি প্রশ্ন করলন–আগামী চব্বিশ ঘণ্টা, আমার ভাগ্যে কী লেখা আছে, একবার দেখবেন?
পকেট থেকে একটা ছোট্ট পাঁজি বের করে ডোলটেয়ার বলতে থাকলেন-খুব ভালো একটা ঘটনা ঘটবে। দেখুন, মঙ্গল প্রবেশ করছে নবম ঘরে, প্লটো আরও তিনদিন বাদে আসবে। এমন একটা ঘটনা, যা সারা জীবন আপনি মনে রাখবেন। আপনাকে আরও বিখ্যাত করে তুলবে। সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে আপনার নাম পৌঁছে যাবে।
লেসলির মনের মধ্যে একটা উত্তেজনা জেগেছে সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে আমার নাম পৌঁছে যাবে?
চোখ বন্ধ করল সে, মনে পড়ল, পুলিৎজার পুরস্কার, স্পিকার ঘোষণা করছেন এবছরের পুলিৎজার পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে মিস লেসলি স্টুয়ার্টের হাতে। হাততালির শব্দ।
মিস স্টুয়ার্ট?
লেসলি স্বপ্নের জগত থেকে আবার বাস্তবে ফিরে এল।
–আর কিছু শুনবেন?
না, আপনাকে ধন্যবাদ ডোলটেয়ার, আপনি অনেক কিছু বলে দিয়েছেন।
.
সন্ধ্যে সাতটা, গল্পটা ভালোই হয়েছে। শিরোনাম দেওয়া হয়েছে প্রেসিডেন্ট রাসেলের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে ছটা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে।
লেসলি গল্পটা আর একবার দেখে নিল। তার কপিটা ব্যানিস্টারের হাতে দিল। ব্যানিস্টার তার ম্যানেজিং এডিটর।
সে বলল–এটা এক্ষুনি ছাপবার ব্যবস্থা করুন। এক ঘণ্টার মধ্যে খবরটা যেন সমস্ত দেশে ছড়িয়ে পড়ে। একই সময়ে ডবলিউ টি ই থেকে এই ব্যাপারটা ব্রডকাস্ট করতে হবে।
ব্যানিস্টার রাজী হচ্ছেন না ম্যাক বেকারের সঙ্গে কথা বলেছেন তো?
–এটা ওনার কাগজ নয়, এই কাগজের মালিক আমি। আমি যা চাইব, তাই ছাপা হবে।
-ইয়েস ম্যাডাম, টেলিফোনের দিকে এগিয়ে গেলেন ব্যানিস্টার, একটা নাম্বারে ফোন করলেন- বললেন, আমরা কাজটা করতে চলেছি।
.
সেদিন সন্ধ্যেবেলা, সাতটা বেজে তিরিশ মিনিট। বারবারা কার্টলিন এবং অন্যান্য সকলে হোয়াইট হাউসে ঢুকে পড়েছেন। বারবারা শান্তভাবে বললেন–মনে হচ্ছে এটা ব্যবহার করতে হবে না। তবে তৈরি থাকতে হবে। আমি প্রেসিডেন্টের ওয়ারেন্টটা নিয়ে এসেছি।
.
তিরিশ মিনিট কেটে গেছে, অলিভারের সেক্রেটারি বলল–অ্যাটর্নি জেনারেল কার্টলিন এবং অন্যান্যরা এসেছেন।
–ওঁদের আসতে বলুন।
অলিভার ঘড়ির দিকে তাকালেন, মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। ওরা ওভাল অফিসে এসে ঢুকলেন, জ্যান অলিভারের পাশে বসেছিল। একটা হাত দিয়ে অলিভারের হাতটা চেপে ধরেছে।
বারবারা কার্টলিন প্রশ্ন করলেন- মিঃ প্রেসিডেন্ট, আপনি এখন আমাদের প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন তো?
অলিভার ঘাড় কাত করে বললেন–হ্যাঁ, আমি তৈরি।
মিঃ প্রেসিডেন্ট, চোলি হাউসটনের সঙ্গে কি আপনার একটা অ্যাপয়ন্টমেন্ট ছিল? পনেরোই অক্টোবর তারিখে?
–হ্যাঁ, ছিল।
–চোলির সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছিল?
না, আমি অ্যাপয়ন্টমেন্টটা ক্যানসেল করেছিলাম।
অলিভারের হঠাৎ মনে পড়ে গেল, তিনটের সময় একটা গোপন টেলিফোন এসেছিল, ডার্লিং, আমি বলছি, আমি বড্ড একা, আমি মেরিল্যান্ড লজে আছি। পুলের ধারে নগ্ন হয়ে বসে আছি।
–আচ্ছা, আমি ভেবে দেখছি, কী করা যায়।
–কখন তুমি আসতে পারবে?
–আমি এক ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাব।
অলিভার সকলের দিকে তাকালেন–আমি ব্যাপারটা বলতে চাইছিলাম না, হয়তো ভেবেছি, এই ঘটনাটা প্রকাশিত হলে দেশের ক্ষতি হয়ে যাবে। অন্য দেশের সাথে আমাদের সম্পর্কের অবনতি হবে। কিন্তু এখন আমাকে বলতেই হবে।
সকলে অবাক হয়ে অলিভারের দিকে তাকালেন।
অলিভার ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলেন। একটা দরজা খুলে দিলেন। সিলভা বিকোনো ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলেন।
–ইনি হলেন সিলভা বিকোনো, ইতালিয়ান রাষ্ট্রদূতের স্ত্রী। পনেরোই অক্টোবর তারিখে শ্ৰীমতী বিকোনো এবং আমরা একসঙ্গে ওনার লজ মেরিল্যান্ডে ছিলাম। বিকেল চারটে থেকে রাত্রি দুটো পর্যন্ত। চোলি হাউসটনের হত্যা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। অন্য কোনো হত্যার সাথেও আমার কোনো সম্পর্ক নেই।
.
২১.
ডানা টম হকিন্সের অফিসে প্রবেশ করল।
টম, আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ খবর শোনাব। ফ্রাঙ্ক লনেরগানকে হত্যা করার আগে তিনি কার্ল গরম্যানের বাড়িতে গিয়েছিলেন। ওই ভদ্রলোক মনরো আর্মসের ক্লার্ক ছিলেন। গরম্যানকে একটা বোটিং অ্যাকসিডেন্টে মেরে ফেলা হয়েছে। উনি ওনার দিদির সঙ্গে থাকতেন। আমি এক ক্রু-এর সঙ্গে দেখা করেছি। এই খবরটা আজ দশটার সময় প্রচার করতে চাইছি।
–তোমার কি মনে হচ্ছে, এটা অ্যাকসিডেন্ট নয়?
–না, এর ভেতর হত্যার ছায়া আছে।
টম হকিন্স বললেন–দেখি কী করা যায়।
-ধন্যবাদ, এই হল ঠিকানা, আমি ক্যামেরাম্যানকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম। এখন কাজটা শুরু করতে হবে।
.
ডানা অ্যাপার্টমেন্টে ফিরল, হঠাৎ তার মনে হল, কোথাও একটা গোলমাল হয়েছে। সারাজেভোতে যে মৃত্যুর আবহাওয়া, বিপদের অঙ্গীকার, এখানেও তেমনটা মনে হচ্ছে। কেউ এখানে ঢুকে পড়েছে। সে অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরে ধীরে ধীরে ঢুকে গেল। ক্লোসেট পরীক্ষা করল। না, কিছুই তো মনে হচ্ছে না। তবে এটা কি আমার কল্পনা? ডানা নিজেকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করল। তবুও তার মনে হচ্ছে, কিছু একটা হবে।
.
ডানা সেই বাড়িতে গেল, যেখানে কার্ল গরম্যানের বোন থাকতেন। ক্যামেরাম্যান এসে গেছে। বিরাট একটা ভ্যান এসেছে, অ্যান্টেনা এবং অন্যান্য আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে।
মিল প্রশ্ন করলেন কোথায় ইন্টারভিউটা হবে?
–আমি বাড়ির মধ্যে যেতে চাইছি, আপনাদের ডেকে নেব।
–ঠিক আছে।
ডানা বেল বাজাল, মারিয়ান গরম্যান দরজা খুলে দিলেন। বললেন–আসুন।
-আমি—
আমি জানি, আপনি কে, টেলিভিশনে আপনার ছবি দেখেছি।
–আপনি ঠিকই বলেছেন, আপনার সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে পারি কি?
মারিয়ানা গরম্যান একটু ভেবে বললেন–ভেতরে আসুন।
ডানা তাকে অনুসরণ করে লিভিং রুমে পৌঁছে গেল।
মারিয়ানা গরম্যান একটি চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বললেন–আমার ভাই সম্পর্কে তো?
…হ্যাঁ, তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমি সুনিশ্চিত।
-কে তাকে মেরেছে? আপনার কোনো অনুমান?
দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে- না, আমি বলতে পারব না।
ফ্রাঙ্ক লনেরগান কি এখানে এসেছিলেন আপনার সঙ্গে দেখা করতে?
মহিলার চোখ ছোটো হয়ে এল, সে আমাকে ভুল বুঝিয়েছে। এখন একথা বলে কী লাভ? সে তো মরেই গেছে?
চোখে জল।
লনেরগান কী বলেছিল? আপনার ভাই সম্পর্কে?
–উনি বলেছিলেন যে, উনি ট্যাক্স বিভাগ থেকে আসছেন।
ডানা বসল, কথাগুলো শোনার চেষ্টা করল। তারপর প্রশ্ন করল- আমি কি একটা ছোট্ট টেলিভিশন ইন্টারভিউ নিতে পারি? কয়েকটা কথা বলতে হবে আপনার ভাইয়ের হত্যা সম্বন্ধে। আপনি এই শহরের পরিস্থিতি সম্পর্কেও দু-চার কথা বলবেন।
মারিয়ানা গরম্যান বললেন–ঠিক আছে, আমি রাজী আছি।
ধন্যবাদ। ডানা সামনের দরজার দিকে এগিয়ে গেল।দরজা খুলল। তার ক্যামেরাম্যানদের ভেতরে ডেকে নিল।
–আমি এ ধরনের ইন্টারভিউ কখনও দিইনি। কেমন ভয় লাগছে। মারিয়ানা বললেন।
ডানা বলল ভয় পাবার কিছু নেই। মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগবে।
ক্যামেরাম্যান ভারনন ভেতরে ঢুকে পড়েছেন ক্যামেরা নিয়ে আমরা এখানে শুট করব?
উনি বললেন, এটাই তো লিভিং রুম। আপনারা ওইখানে ক্যামেরা রাখতে পারেন।
ভারনন ক্যামেরা রাখলেন, ডানার দিকে এগিয়ে গেলেন। তিনি মাইক্রোফোনটা ঠিক জায়গায় রেখে দিলেন। ওই মহিলার জ্যাকেটের নীচে।
–আপনি যেমন খুশি বলতে পারেন, কোনো অসুবিধা নেই।
মারিয়ানা গরম্যান বললেন–না, একটু অপেক্ষা করুন, আমি এটা করতে পারব না।
-কেন?
ডানা জিজ্ঞাসা করল।
ব্যাপারটা সাংঘাতিক, আমি কি আপনার সঙ্গে একা কথা বলতে পারি?
ডানা ভারননের দিকে তাকাল–ক্যামেরাটা থাক, আপনাকে ডেকে নেব।
ভারনন প্রশ্ন করলেন- আমরা ভ্যানে থাকব কী?
ডানা মারিয়ানার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল কেন টেলিভিশনে ইন্টারভিউ দিলে কী হতে পারে?
মারিয়ানা শান্তভাবে বললেন–আমি চাই না, ওরা আমাকে দেখে ফেলুক।
–আপনি কাদের কথা বলছেন?
মারিয়ানা বলতে চেষ্টা করলেন–কার্ল কিছু একটা করছিল, এটা করা উচিত হয়নি। তাকে এই কারণে হত্যা করা হয়েছে। যে তাকে মেরেছে, সে কিন্তু আমাকেও মেরে ফেলবে।
ভয়ে থরথর করে মারিয়ানা কাঁপছেন।
কার্ল কী করেছিলেন?
–হায় ঈশ্বর, মারিয়ানার গোঙানি, আমি এটা না করতে বলেছিলাম।
–কী না করতে? ডানার প্রশ্ন।
–ও একটা চিঠি লিখেছিল, কাউকে ব্ল্যাকমেল করে।
ডানা অবাক হয়ে গেছে–ব্ল্যাকমেল করে লেখা চিঠি?
-হুঁ, আমাকে বিশ্বাস করুন। কার্ল কিন্তু অত্যন্ত ভালো মানুষ। এটা হঠাৎ উত্তেজনার বশে করে ফেলে। সামান্য বেতনে বেচারী চালাতে পারছিল না। তাই কিছুটাকা আয় করতে চেয়েছিল। এই চিঠিটার জন্য ওকে মরতে হয়েছে। ওরা চিঠিখানা পায়, তারপর জানতে পারে সবকিছু। আমাকেও মেরে ফেলা হবে। আমি জানি না, কী করে বাঁচব।
–এই চিঠি সম্পর্কে আপনি কিছু জানেন কি?
মারিয়ানা গরম্যান দীর্ঘশ্বাস ফেললেন–আমার ভাই ছুটিতে এসেছিল। সে তার জ্যাকেটটা আনতে ভুলে যায়। সে জ্যাকেটটা আনতে হোটেলের পেছন দিকে চলে গিয়েছিল। জ্যাকেটটা নিয়ে সে গ্যারেজে চলে আসে। ইমপিরিয়াল সুইটের এলিভেটরটা খুলে যায়। কার্ল একজন মানুষকে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিল। ওই ভদ্রলোককে দেখে সে অবাক হয়ে যায়। ওই ভদ্রলোক এলিভেটরে হাতের ছাপ মুছছিলেন। কার্ল বুঝতে পারেনি, ওখানে কী হয়েছে। পরের দিন সে ওই কিশোরী কন্যার মৃত্যুর খবরটা শুনতে পায়। সে বুঝতে পারে, ওই ভদ্রলোকই মেয়েটিকে হত্যা করেছেন। তারপর কার্ল হোয়াইট হাউসে চিঠিখানা পাঠিয়েছিল।
ডানা জানতে চাইল হোয়াইট হাউসে?
-হ্যাঁ।
কাকে চিঠিখানা লেখা হয়েছিল?
–যে মানুষটিকে কার্ল ওই গ্যারেজে দেখে, তার নাম পিটার ট্যাগার।
.
২২.
পেনসিলভেনিয়া এভিনিউ দিয়ে গাড়ি ছুটে চলেছে। হোয়াইট হাউসের পাশের রাস্তা, যন্ত্রযানের শব্দ দেওয়াল ভেদ করে এখানে আসছে। উনি সব ব্যাপারটা পর্যালোচনা করার চেষ্টা করছেন। হ্যাঁ, এখন উনি বোধহয় সম্পূর্ণ নিরাপদ। অলিভার রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হবে, যে হত্যা তিনি করেননি, তার জন্য। ভাইস প্রেসিডেন্ট মেলভিন উইকস হবেন প্রেসিডেন্ট। সেনেটর ডেভিসের কোনো সমস্যা হবে না। আহা, ভাইস প্রেসিডেন্ট উইকস, হাতের পুতুল। কোনো মৃত্যুর সাথেই আমার সম্পর্ক নেই, ট্যাগার মনে মনে ভাবলেন।
প্রতি সন্ধ্যায় একটি করে প্রার্থনার অনুষ্ঠান। পিটার ট্যাগার সেই অনুষ্ঠানে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছেন। উপস্থিত সকলে তার ভাষণ শুনে অবাক হয়ে যান। তিনি সুন্দরভাবে ধর্ম এবং শক্তি সম্পর্কে আলোচনা করেন। চোদ্দো বছর বয়স থেকে পিটার ট্যাগার মহিলাদের প্রতি অত্যন্ত আকর্ষণ বোধ করতেন। ঈশ্বর তাকে এক অসামান্য উপহার দান করেছেন। অত্যন্ত শক্তিশালী অনুভূতি। পিটারের কেবলই মনে হত, তিনি বোধহয়, অনাকর্ষণীয়, বিশেষ করে বিপরীত লিঙ্গে র কাছে, তবে মেয়েরা কিন্তু তার চোখের তারায় এক অদ্ভুত দ্যুতি দেখতে পেত। ঈশ্বর পিটারকে অনেক কিছু দিয়েছেন, দিয়েছেন মানুষকে চট করে জয় করার ক্ষমতা। সেই শক্তি কাজে লাগিয়ে তিনি অনেককে প্রলুব্ধ করেছিলেন, কখনও গাড়ির পেছনের সিটে, কখনও হোটেলে, আবার কখনও শয্যাতে। একজন গর্ভবতী হয়ে পড়ে, পিটার তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হন, এই ভাবেই দুটি সন্তানের জনক হয়েছেন তিনি। এখন সমস্যাটা আকাশ ছুঁয়েছে, প্রতি মুহূর্তে তাকে বিব্রত অবস্থার সাথে লড়াই করতে হয়। একবার ভেবেছিলেন, মন্ত্রীসভায় যোগ দেবেন, তখনই সেনেটর টড ডেভিসের সঙ্গে দেখা হয়। জীবনটা একেবারে পাল্টে যায়। তিনি এখন রাজনীতি নামের এক নিরাপদ অঞ্চলে প্রবেশ করেছেন।
.
প্রথমে কোনো সমস্যা হয়নি, এই গোপন গভীর সম্পর্ক। এক বন্ধু তার হাতে একটি উত্তেজক পানীয় তুলে দিয়েছিলেন। পিটার এই পানীয়টা অনেকের সঙ্গে ভাগ করে খেয়েছেন। যেমন, লিসা বারনেট্টি, ফ্রাঙ্কফুর্টের এক সদস্যা। কিছু একটা খারাপ হয়েছিল। মেয়েটি মারা যায়। কেনটাকি নদীতে তার মৃতদেহটা পাওয়া যায়।
এরপর আর একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে যায়। মিরিয়াম ফেইথল্যান্ড, অলিভার রাসেলের সেক্রেটারি, তার ওপরেও খারাপ প্রভাব পড়ে। সে কোমাতে চলে যায়। নাঃ, এটা আমার কোনো ত্রুটি নয়, পিটার ট্যাগার ভাবলেন। আমি তো ওর কোনো ক্ষতি করিনি। মিরিয়াম হয়তো আরও অনেক ড্রাগ নিত, এভাবেই সে…
হায় হতভাগ্য চোলি হাউসটন, করিডরে মেয়েটির সঙ্গে তার দেখা হয়ে গিয়েছিল। হোয়াইট হাউসে, মেয়েটি রেস্টরুমের খোঁজ করছিল।
মেয়েটি তাকে চিনতে পারে, তাকে দেখে খুবই খুশি হয় সে।
সে বলে- আপনি পিটার ট্যাগার? সব সময় টেলিভিশনের পর্দায় আপনার মুখ ভেসে ওঠে।
–হ্যাঁ, আমি তোমাকে দেখে খুবই খুশি হয়েছি। তোমাকে কোনো ব্যাপারে সাহায্য করতে পারি?
–লেডিস রুমটা কোথায়?
পিটার ট্যাগারকে মেয়েটি জিজ্ঞাসা করেছিল।
পিটার ট্যাগার দেখেছিলেন, কিশোরী এবং অত্যন্ত রূপবতী।
-হোয়াইট হাউসে তো পাবলিক রেস্টরুম নেই, মিস।
–তাহলে?
উনি সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলেন–মনে হচ্ছে, আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারব। তুমি আমাকে অনুসরণ করো।
মেয়েটিকে নিয়ে তিনি ওপরতলায় চলে গিয়েছিলেন। একটা প্রাইভেট বাথরুমের সামনে। বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মেয়েটি বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল।
পিটার ট্যাগার জানতে চেয়েছিলেন- তুমি কি ওয়াশিংটনে প্রথম এলে?
–হ্যাঁ।
–আমি তোমাকে আসল ওয়াশিংটন শহর দেখাব। তোমার তা ভালো লাগবে।
পিটার ট্যাগারের মনে হল, মেয়েটি তাকে দেখে আকর্ষিত হয়েছে।
–আমি জানি না, এটা সত্যি হবে কিনা, আপনার তো কষ্ট হবে।
-তোমার মতো এক সুন্দরী কন্যার জন্য আমি অনেক কষ্ট স্বীকার করতে পারি। আজ রাতে আমরা একসঙ্গে ডিনার খাব, কেমন?
মেয়েটির মুখে হাসি আপনার কথা আমাকে উত্তেজিত করছে।
–আমি কথা দিচ্ছি, তুমি এটা কিন্তু কাউকে বলো না। এটা গোপন থাকবে।
–ঠিক আছে, আমি প্রতিজ্ঞা করলাম।
–আমার একটা মিটিং আছে, মনরো আর্মস হোটেলে।
চকিতে পিটার মেয়েটির চোখের দিকে তাকালেন- হা, মেয়েটি পটে গেছে। আমরা ইমপিরিয়াল সুইটে ডিনার খাব। তারপর? তারপর কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়াব, কেমন? তুমি সন্ধ্যা সাতটার সময় আসতে পারবে তো?
মেয়েটি পিটারের দিকে তাকিয়ে বলেছিল- ঠিক আছে, আমি নিশ্চয়ই যাব।
পিটার বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, কীভাবে সুইটে ঢুকতে হবে।
–কোনো সমস্যা হবে না। ওখানে পৌঁছে আমাকে জানিয়ে দিও, কেমন?
মেয়েটি কথা মতো কাজ করেছিল।
.
শুরুটা হয়েছিল এইভাবে। চোলি হাউসটন প্রথমে রাজী হয়নি। পিটার তাকে জড়িয়ে ধরে ছিলেন।
মেয়েটি বলেছিল–না-না, আমি কিন্তু এখনও একেবারে কুমারী।
এই কথাটা পিটারকে আরও উত্তেজিত করে তোলে।
পিটার বলেছিলেন- আমি তোমার কোনো ক্ষতি করব না। তুমি না চাইলে আমি জোর করব না। আমরা বসে বসে গল্প করব, কেমন?
–তুমি কি দুঃখ পেয়েছো?
পিটার মেয়েটির হাতে হাত রেখেছিলেন, ছোটো ছোটো মোচড় না, প্রিয়তমা, আমি মোটেই দুঃখ পাইনি।
উনি এক বোতল উত্তেজক পানীয় বের করেছিলেন। দুটি গ্লাসে ভরতি করেছিলেন।
–এটা কী? চোলির প্রশ্ন।
–এটা এক ধরনের উত্তেজক পানীয়। চিয়ারস।
গ্লাসে গ্লাস ঠেকে গিয়েছিল, মেয়েটি এক ঢেকে সবটা পানীয় খেয়ে ফেলল।
চোলি বলেছে- বাঃ, বেশ ভালো লাগছে তো।
পরবর্তী আধ ঘণ্টা তারা দুজন গল্প করেছিলেন। পিটার বসেছিলেন, এক্ষুনি ওই মারাত্মক ওষুধটা কাজ করতে শুরু করবে। শেষ পর্যন্ত তিনি চোলিকে গভীরভাবে আকর্ষণ করেছিলেন। এখন আর কোনো বাধা নেই।
জামাকাপড় খুলে ফেলো, পিটারের কণ্ঠস্বরে ব্যক্তিত্ব এবং আদেশ একসঙ্গে ঝরছে।
–হ্যাঁ, এখনই খুলছি।
পিটার দেখলেন, মেয়েটি বাথরুমে ঢুকে পড়েছে। তিনি নিজেকে উলঙ্গ করতে শুরু করলেন। কিছুক্ষণ বাদে পরিপূর্ণ নগ্ন হয়ে চোলি বেরিয়ে এল। মেয়েটিকে দেখে পিটার অত্যন্ত উত্তেজিত, আহা, এমন সৌন্দর্য! রূপকথা বুঝি স্পষ্ট হয়েছে। চোলি বিছানাতে উঠে বসল। পিটারের পাশে গুটিসুটি হয়ে। শুরু হল ভালোবাসার খেলা। মেয়েটি একেবারে অনভিজ্ঞ। কিন্তু সে যে কুমারী, অচুম্বিতা এবং অস্পর্শিতা, এই শব্দগুলো পিটারকে তখন ভীষণভাবে আকর্ষণ করছে। একটা উত্তেজনা, একটা আকর্ষণ, একটা আবেগ। পিটার তখন একেবারে উন্মাদ হয়ে গেছেন।
চোলির ঘুম পেয়েছিল। হঠাৎ মাথাটা ঘুরছিল তার। সে নিষ্কৃতি চাইছিল।
–ডিয়ার, তুমি ঠিক আছে তো?
–আমি ঠিক আছি, কিন্তু কেমন যেন লাগছে।
মেয়েটি বিছানাতে শুয়ে পড়েছিল একটু ঘুমিয়ে নিই, তাহলেই ঠিক হবে।
একটু বাদে মেয়েটি উঠে দাঁড়াল। পিটার তাকিয়ে আছেন, তার পা টলছে। সে হাঁটতে পারছে না। লোহার টেবিলের কোণাতে তার মাথা লেগে গেল। রক্তধারা ফিনকি দিয়ে ছুটে আসছে।
পিটার চিৎকার করছেন ভয়ে–চোলি! চোলি!
নাঃ, মেয়েটি মরে গেছে। হায় ঈশ্বর, এটা কী করে হল? এটাও তো আমার কোনো দোষ নয়, মেয়েটা পড়ে গেছে, এটা নেহাতই একটা দুর্ঘটনা।
তিনি চারদিকে তাকালেন। এই ঘটনার কোনো চিহ্ন রাখা যাবে না। তিনি পোশাক পরে নিলেন। বাথরুমে গেলেন। তোয়ালে ভেজালেন। সব জায়গা থেকে হাতের চিহ্ন মোছা শুরু করলেন। চোলির পার্সটা নিয়ে নিলেন। না, এই ঘরে হত্যার কোনো চিহ্ন নেই। এলিভেটরে চড়ে গ্যারেজে চলে গেলেন। আর একটা কাজ করা বাকি রয়ে গেছে। এলিভেটরের বোতামের ওপর হাতের ছাপ আছে। তার মানে? চোলির মৃত্যুর সাথে কেউ আমাকে যুক্ত করতে পারবে না পরিতৃপ্ত পিটার ট্যাগার, শেষ পর্যন্ত এটাই ভেবেছিলেন।
এবার ওই ব্ল্যাকমেল করা চিঠিখানা এসেছে- কার্ল গরম্যান, হোটেলের ক্লার্ক। তাকে দেখতে পেয়েছে। পিটার সাইলকে পাঠিয়েছিলেন, গরম্যানকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবার জন্য।
বলা হয়েছিল, প্রেসিডেন্টকে বাঁচাবার জন্য এটা করা হচ্ছে। এভাবেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল।
ফ্রাঙ্ক লনেরগান নতুনভাবে প্রশ্ন করতে শুরু করেছিলেন- ফ্রাঙ্ককেও সরিয়ে দেওয়া হল। এখন আর কেউ নেই, হৈ-হল্লা কে করবে?
দুটো জায়গা থেকে রিপোর্ট আসতে পারে, মারিয়ানা গরম্যান এবং ডানা ইভান্স।
সাইলকে কাজে লাগানো হয়েছে। এই দুজনকে অবিলম্বে পৃথিবী থেকে চিরদিনের মতো সরাতে হবে।
.
২৩.
মারিয়ানা গরম্যান আবার বললেন–হ্যাঁ, ওনার নাম পিটার ট্যাগার।
ডানা হতভম্ব হয়ে গেছে- আপনি কি ঠিক বলছেন?
-হ্যাঁ, ভদ্রলোকের চেহারায় একটা আলাদা ছাপ আছে। চোখের ওপর কাটা দাগ আছে।
আমি কি আপনার ফোনটা ব্যবহার করতে পারি? ডানা অত্যন্ত দ্রুত টেলিফোনের দিকে ছুটে গেল। ম্যাক বেকারের নাম্বারে ফোন করল।
সেক্রেটারি উত্তর দিলেন, মিঃ বেকারের অফিস।
–আমি ডানা কথা বলছি। এক্ষুনি বেকারের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
–একটু খানি ধরুন প্লিজ।
এক মুহূর্ত কেটে গেছে। ম্যাক বেকারকে ফোনে পাওয়া গেল ডানা, কোনো কিছু খারাপ ঘটনা?
ডানা বলল–ম্যাক, এইমাত্র আমি জানতে পেরেছি, চোলি হাউসটনের হত্যাকারী কে ছিলেন?
–আমরা জেনেছি, তিনি হলেন
পিটার ট্যাগার।
কী?
ম্যাক প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করছেন।
আমি কার্ল গরম্যানের দিদির ঘরে বসে আছি। কার্ল গরম্যান হলেন সেই হোটেল ক্লার্ক, যাকে হত্যা করা হয়েছে। কার্ল গরম্যান ট্যাগারকে দেখেছিলেন, ট্যাগার হাতের ছাপ মুছে দিচ্ছিলেন, এলিভেটরের নব থেকে। ওই রাতে চোলি হাউসটনের মৃত্যু হয়। গরম্যান ট্যাগারকে একটা ব্ল্যাকমেল করার চিঠি পাঠিয়ে ছিলেন। এই কারণেই গরম্যানকে মরতে হয়েছে। আমার সাথে ক্যামেরা ক্রু আছে। আপনি কি চাইছেন, এটা আমি আজ প্রকাশ করি?
না, এখনই কিছু করো না। ম্যাকের আদেশ। আমি এটা দেখব। দশ মিনিটের মধ্যে আমাকে ফোন করো।
তিনি রিসিভারটা নামিয়ে রাখলেন। হোয়াইট টাওয়ারের দিকে এগিয়ে গেলেন। লেসলি অফিসে ছিল।
লেসলি, এটা ছাপা যাবে না।
লেসলি তাকাল–কেন? প্রেসিডেন্ট রাসেলের বিরুদ্ধে মার্ডার ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে।
লেসলির কণ্ঠস্বরে অস্বাভাবিক উত্তেজনা ম্যাক এদিকে তাকিয়ে দেখুন।
–লেসলি–অন্য একটা খবর আছে।
–এটাই একমাত্র খবর, যা আমি চাইছি। আমি তো আপনাকে আগেই বলেছি, আপনি চলে যেতে পারেন। আমার তাতে কিছু আসে যাবে না। এই খবরটা আমি প্রকাশ করবই ম্যাক।
ম্যাক দাঁড়িয়ে আছেন, তাকিয়ে আছেন লেসলির দিকে। আঃ, বুঝতে পারা যাচ্ছে না, তিনি বারবার ডাকার চেষ্টা করছেন- লেসলি?
আমাকে বিরক্ত করবেন না। আপনার কিছু বলার আছে কি?
ম্যাক বেশ কিছুক্ষণ লেসলির মুখের দিকে তাকালেন। তারপর বললেন–আমি তোমাকে চিরদিনের মতো গুডবাই জানাচ্ছি।
লেসলি দেখল, ভদ্রলোক দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলেন।
.
২৪.
মারিয়ানা গরম্যান জানতে চাইলেন–এখানে কী হচ্ছে? আমার কোনো বিপদ হবে না তো?
ডানা বলেছিল- আপনি ভয় পাবেন না, আপনাকে সব রকমের সাহায্য করা হবে।
সঙ্গে সঙ্গে সে একটা সিদ্ধান্ত নিলো–মারিয়ানা, আমরা একটা জীবন্ত ইন্টারভিউ নেব। আমি টেপ চালিয়ে দেব, এটা এফ বি আই-এর হাতে দেওয়া হবে। যে মুহূর্তে ইন্টারভিউটা শেষ হবে, আমি আপনাকে এই ঘর থেকে তুলে নিয়ে যাব।
বাইরে একটা গাড়ির শব্দ পাওয়া গেল।
মারিয়ানা জানলা দিয়ে তাকালেন, বললেন–হায় ঈশ্বর।
ডানা তার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে- কী হয়েছে?
সিম লমবার্ডো গাড়ির থেকে নামছেন। তিনি বাড়িটার দিকে তাকাচ্ছেন। দরজার দিকে এগিয়ে আসছেন।
মারিয়ানা চিৎকার করলেন এই মানুষটা, এই মানুষটা আমার কাছে কার্লের কথা জানতে চেয়েছিল। যেদিন কার্লের মৃত্যু হয়। আমি জানি, আজ সে আবার সেই কাজটাই করতে এসেছে।
ডানা ফোনটা নিল, দ্রুত একটা নাম্বার ডায়াল করল।
–মিঃ হকিন্সের অফিস?
তার সঙ্গে এখনই কথা বলতে হবে।
–তিনি এখানে নেই। কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরবেন।
ন্যাট এরিকসন কি আছেন?
ন্যাট এরিকসন হকিনসের সহকারী। তিনি ফোন ধরলেন–ডানা।
–আমি আপনার সাহায্য চাইছি। তাড়াতাড়ি। একটা সাংঘাতিক খবর আছে, আপনি অত্যন্ত দ্রুত আসুন।
এরিকসন বাধা দেবার চেষ্টা করেছিলেন–এ ব্যাপারটা টম দেখছেন।
ডানা বললেন–এখন আর সময় নেই।
জানলার দিকে ডানা তাকাল, দেখতে পেল সিম লমবার্ডো ধীরে ধীরে সামনের দরজার দিকে এগিয়ে আসছে।
.
নিউজ ভ্যানে ভারনন মিল বসে আছেন। ঘড়ির দিকে তাকালেন। মনে মনে বললেন, না আজ আর ইন্টারভিউটা হবে না বোধহয়। এটা কি বাতিল করতে হবে?
.
ঘরের ভেতর ডানা বলছে–এটা জীবন এবং মৃত্যুর প্রশ্ন ন্যাট, আমাকে বাঁচিয়ে রাখতেই হবে। ঈশ্বরের অনুগ্রহ, এটা এখনই করতে হবে।
সে রিসিভারটা নামিয়ে রাখল। টেলিভিশন সেটের দিকে এগিয়ে গেল। চ্যানেল সিক্সটা খুলে দিল।
একটা সোপ অপেরা এগিয়ে চলেছে। এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক এক তরুণীর সাথে কথা বলছেন।
–তুমি আমাকে বুঝতে পারো না কেন ক্রিস্টিন?
–সত্যিটা হল, আমি কাউকে বুঝতে পারি না। তাই আমি ডিভোর্স চাইছি জর্জ।
আর কিছু আছে কী?
ডানা অত্যন্ত দ্রুত বেডরুমে চলে গেল। সেটটা সেখানে রাখল।
সিম লমবার্ডো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি দরজায় হাত দিয়ে আঘাত করলেন।
–এটা খোলা হবে না। ডানা মারিয়ানাকে সাবধান করল।
ডানা দেখল, তার মাইক্রোফোনটা ঠিক আছে কিনা।
দরজায় হাতের আওয়াজ ক্রমশ বাড়ছে।
–আমরা এখান থেকে চলে যাব, পেছনের দরজা দিয়ে। মারিয়ানা ফিসফিসিয়ে বলল।
তখনই সামনের দরজাটা হঠাৎ খুলে গেল।সিম ভেতরে ঢুকে পড়েছেন।তিনি হাসতে হাসতে সামনের দিকে এগিয়ে এলেন। দরজাটা ভেতর দিয়ে কোনোরকমে বন্ধ করে দিয়েছেন।
তিনি বললেন–দুটো শিকারকেই হাতের কাছে পেয়ে গেছি।
ডানা টেলিভিশন সেটের দিকে তাকিয়ে আছে। উদ্বিগ্ন চোখে।
–এটা তোমার দুর্ভাগ্য জর্জ।
—হ্যাঁ, হয়তো আমি মেনে নিচ্ছি।
সিম লমবার্ডো একটা পয়েন্ট বাইশ ক্যালিবার সেমিঅটোমেটিক পিস্তল হাতে নিয়েছেন। সাইলেনসার লাগানো।
না, ডানা বলতে থাকে, আপনি এটা করতে পারবেন না।
সিম চিৎকার করছেন চুপ করো, চুপ করো, বেডরুমে চলে যাও।
মারিয়ানার কণ্ঠে আর্তনাদ- হায় ভগবান!
–শুনুন, ডানা বলতে থাকে।
–আমি এক্ষুনি তোমার গলা চিরদিনের মতো স্তব্ধ করে দেব।
ডানা টেলিভিশন সেটের দিকে তাকিয়ে আছে।
–আমি দ্বিতীয় সুযোগে বিশ্বাস করি ক্রিস্টিন, আমি তোমাকে হারাতে চাইছি না। আমরা কী আবার আগের মতো হতে পারব না।
একই শব্দ শোনা যাচ্ছে বেডরুমের টেলিভিশন সেট থেকে।
সিমের কণ্ঠে আদেশ–এক্ষুনি চলে যাও। ওই ঘরে।
দুজন আতঙ্কিত মহিলা, ধীরে ধীরে বেডরুমের দিকে এগিয়ে চলেছে। ক্যামেরার লাল আলো হঠাৎ জ্বলে উঠেছে। ক্রিস্টিন এবং জর্জের ছবি ক্রমশ আবছা হয়ে যাচ্ছে। ঘোষকের কণ্ঠস্বর শোনা গেল
ঘোষক বলল–আমরা হুইটন অঞ্চলের একটা লাইভ অনুষ্ঠান দেখাতে চলেছি।
সোপ অপেরা শেষ হয়ে গেছে। গরম্যানের লিভিং রুম স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে। ডানা এবং মারিয়ানাকে দেখা যাচ্ছে। সিম পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন। সিম অবাক হয়ে গেছেন। হতভম্ব। টেলিভিশনে নিজেকে দেখতে পেয়েছেন।
–এটা কী হচ্ছে? এটা কী?
ভ্যানে টেকনিশিয়ানরা সবকিছুর ওপর নজর রেখেছেন। ভারনন মিল বললেন, এ কী, আমাদের ছবি দেখানো হচ্ছে কী করে?
ডানা স্ক্রিনের দিকে তাকাল, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করল। সে ক্যামেরার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়েছে। সে বলল, আমি ডানা ইভান্স, কার্ল গরম্যানের বাড়ি থেকে কথা বলছি। কার্ল গরম্যানকে কদিন আগে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এমন একজন মানুষের সঙ্গে কথা বলতে চাই, যিনি এই হত্যা সম্পর্কে অনেক কথা জানেন।
ডানা সিমের দিকে মুখ ঘোরাল বলল, আপনি বলুন তো কী ঘটেছিল?
লমবার্ডো অবাক হয়ে গেছেন। মনে হচ্ছে তার যেন পক্ষাঘাত হয়েছে। টেলিভিশনের পর্দায় তার মুখ। তিনি জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটছেন। কিছু বলতে পারছেন না।
টেলিভিশন সেটে শোনা যাচ্ছে তার আর্তনাদ। নিজের ছবির দিকে তাকিয়ে তিনি একেবারে হতভম্ব হয়ে গেছেন। তিনি ডানার দিকে ফিরলেন–এটা? এটা তোমরা কী করছ? এটা কী ধরনের ম্যাজিক?
–এটা কোনো ম্যাজিক নয় মশাই, আমাদের সকলকেই টেলিভিশনে দেখা যাচ্ছে, একেবার জীবন্ত অবস্থায়। কুড়ি লক্ষ লোক আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এটা মনে রাখবেন।
লমবার্ডো দেখতে পেলেন তার সব কাজই ধরা পড়ছে টেলিভিশনের পর্দায়। তিনি চট করে বন্দুকটা পকেটে ঢুকিয়ে দিলেন।
ডানা, মারিয়ানা গরম্যানের দিকে তাকিয়ে আছে, তারপর তাকাল সিম লবামাৰ্ডোর দিকে পিটার ট্যাগার এই ঘটনার অন্তরালে, তাই না?
.
ডালি বিল্ডিং, নিক তার অফিসে বসে আছেন। একজন সহকারী ছুটে এলেন–তাড়াতাড়ি এর দিকে তাকান। এটা হল গরম্যানের বাড়ি।
তিনি টেলিভিশন সেটটা ঠিক করে দিলেন- চ্যানেল ছয়। ছবিটা ফুটে উঠেছে স্ক্রিনের ওপর।
পিটার ট্যাগার কি আপনাকে বলেছিলেন কার্ল গরম্যানকে হত্যা করতে?
–আমি বুঝতে পারছি না, তুমি কার কথা বলছ? এই টেলিভিশন সেটটা এখনই আমার চোখের সামনে থেকে সরিয়ে দাও।
–সে কী? আর আপনি কুড়ি লক্ষ মানুষের সামনে আমাদের হত্যা করবেন, তাই তো?
–হা ঈশ্বর, নিক রেসি চিৎকার করছেন, এখনই পেট্রল গাড়ি ওখানে পাঠাও। তাড়াতাড়ি।
.
হোয়াইট হাউসের ব্লুরুম, অলিভার এবং জ্যান ডবলিউ টি ই-র স্টেশনটা দেখছেন। তারা অবাক হয়ে গেছেন।
অলিভার চিৎকার করলেন–আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। পিটার-পিটার।
.
পিটার ট্যাগারের সেক্রেটারী অত্যন্ত দ্রুত ঘরে ঢুকে পড়েছেন।
–মিঃ ট্যাগার, আপনি এক্ষুনি চ্যানেল সিক্সটা দেখুন।
ভদ্রমহিলাকে দেখে বুঝতে পারা যাচ্ছে, কোনো একটা অভাবিত দৃশ্য দেখে তিনি একেবারে উত্তেজিত এবং উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। তিনি আবার কিছু বলার চেষ্টা করলেন।
পিটার ট্যাগার রিমোটটা নিলেন, বোম টিপলেন। টেলিভিশন স্ক্রিনে চ্যানেল সিক্স ফুটে উঠেছে।
ডানা বলছে পিটার ট্যাগার চোলি হাউসটনকে হত্যা করেছেন, তাই তো?
–আমি জানি না কিছু। আপনি ট্যাগারকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করুন।
পিটার ট্যাগার টেলিভিশন সেটের দিকে তাকিয়ে আছেন–বিশ্বাস করতে পারছেন না এটা কী করে হল। ভগবান! তিনি লাফিয়ে উঠলেন। দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন। না, আমি কিছুতেই ধরা দেব না। আমাকে লুকোতে হবে। তারপর ভাবলেন, কোথায় আমি যাব? তিনি ডেস্কের ওপাশে চলে গেলেন। চেয়ারে বসে রইলেন। অপেক্ষা করতে থাকলেন।
.
অফিসে বসে লেসলি স্টুয়ার্ট এই ইন্টারভিউটা দেখছিল। পিটার ট্যাগার? না-না, লেসলি ফোনটা তুলে নিল একটা নাম্বারে ফোন করল। লাইলি, গল্পটা বন্ধ করো। এটা যেন প্রকাশিত না হয়। তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো?
মিস স্টুয়ার্ট আধ ঘণ্টা আগে খবরের কাগজ স্ট্যান্ডে পৌঁছে গেছে। আপনিই তো বলেছিলেন।
ধীরে ধীরে লেসলি রিসিভারটা নামিয়ে রাখল। সে হেডলাইনটার দিকে তাকাল ওয়াশিংটন ট্রিবিউন, প্রেসিডেন্ট রাসেলের বিরুদ্ধে হত্যার ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে।
তারপর ফ্রন্ট পেজের দিকে তাকাল। লেখা আছে, অন্য কোনো খবর।
এখন তুমি যতটা বিখ্যাত তার থেকেও অনেক বেশি খ্যাতি তুমি পাবে। সারা পৃথিবীতে তোমার নাম পৌঁছে যাবে।
সত্যি সারা পৃথিবীর কাছে কাল আমি এক হাসির পাত্রীতে পরিণত হব।
.
গরম্যানের বাড়ি। সিম লমবার্ডো শেষবারের মতো চেষ্টা করছে নিজেকে বাঁচাবার। তিনি বললেন আমি এখান থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বাইরে বেরিয়ে এলেন, দরজাটা খুললেন। দেখলেন, পুলিশের অনেকগুলো গাড়ি চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে।
.
২৫.
জেবকনারসকে দেখা গেল, ডালাস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে, সঙ্গে ডানা কামালের প্লেন যে কোনে মুহূর্তে আসবে।
–ওকে নরক থেকে তুলে আনা হয়েছে। ডানা বলতে থাকে। ও কিন্তু অন্য কোনো ছেলের মতো নয়। তুমি দেখলেই বুঝতে পারবে।
ডানা আন্তরিকভাবে চাইছে, জেব যেন কামালকে মেনে নেয়।
জেব ডানার উদ্বিগ্নতা বুঝতে পারেন। বলেন, ভয় পেও না, ডারলিং, আমি জানি সে খুব ভালো ছেলে।
–ওই দেখো ও আসছে।
হ্যাঁ, দেখা যাচ্ছে, সেই উড়ানপাখি, ৭৪৭।
ডানা জেবের হাত ধরল- ও এসে গেছে।
.
প্যাসেঞ্জাররা ধীরে ধীরে প্লেন থেকে নেমে আসছে। কিন্তু সে কোথায়?
অবশেষে কামালকে দেখা গেল। ডানা সারাজেভোতে তার জন্য যে পোশাক কিনেছিল, সেটাই পরেছে। মুখটা পরিষ্কার। সে র্যাম্পের ওপর হেঁটে এল। যখন ডানাকে দেখল, সে থমকে থেমে গেল। তারা দুজনে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কোনো কথা বলতে পারছে না। একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর তারা ছুটে এল। ডানা তাকে শক্ত করে ধরল। বুঝতে পারল, ছেলেটি তাকে পেয়ে আনন্দেউন্মাদ হয়ে গেছে। তারপর তাদের দুজনের চোখে জল এসে গেছে।
ডানা তার কণ্ঠস্বর ফিরে পেয়েছে। সে বলল তোমাকে আমেরিকা স্বাগত জানাচ্ছে।
কামাল ঘাড় কাত করল, কথা বলতে পারছে না।
কামাল, আমি তোমাকে আমার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করাব। এ হল জেব কনারস।
জেব নীচু হলেন- হ্যালো কামাল, আমি তোমার সম্পর্কে অনেক কথা শুনেছি।
কামাল তখনও ডানাকে আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
–তুমি এখানে আমার সঙ্গে থাকবে। ডানা বলল, তুমি তা পছন্দ করবে তো?
কামাল ঘাড় কাত করল, সে আর কোথাও যাবে না।
ডানা তার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল–এখনই যেতে হবে, হোয়াইট হাউসে একটা স্পিচ কভার করতে হবে।
.
দিনটা চমৎকার। আকাশ পরিষ্কার নীল। শীতল হাওয়া বইছে কোটোম্যাক নদী থেকে।
তারা রোজ গার্ডেনে দাঁড়িয়ে আছে। আরও অনেক রিপোর্টারকে সঙ্গে নিয়ে। ডানার ক্যামেরা প্রেসিডেন্টের দিকে তাক করা। উনি একটা উঁচু বেদির ওপর দাঁড়িয়ে আছেন। জ্যান পাশে।
প্রেসিডেন্ট অলিভার রাসেল বলছেন- আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। সংযুক্ত আরব আমীরশাহী, লিবিয়া, ইরান এবং সিরিয়া একটা শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনা করবে। তারা ইজরায়েলের সঙ্গে আর শত্রুতা বজায় রাখবে না। আমি তাদের কাছ থেকে কথা পেয়েছি। ভালোভাবে কথা এগিয়ে চলেছে। দুই-একদিনের মধ্যে এই চুক্তিটা সম্পাদিত হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস এই চুক্তিটাকে সমর্থন করবে বলে কথা দিয়েছে।
অলিভার তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্রলোকের দিকে তাকালেন। উনি হলেন সেনেটর টড ডেভিস।
এবার সেনেটরকে কিছু বলতে হবে। উনি মাইক্রোফোনের দিকে এগিয়ে গেলেন। সাদা স্যুট পরা। সাদা লেহন হ্যাট, উনি জনতার দিকে তাকিয়ে বললেন–এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে । এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। অনেক বছর ধরেই আমরা শান্তির কথা বলেছি। বিশেষ করে আরব ও ইজরায়েলের সাথে। এটা খুব শক্ত কাজ, এখন আমরা শেষ পদক্ষেপ ফেলেছি। আমাদের মাননীয় প্রেসিডেন্টের সাহায্য এবং সহযোগিতা ছাড়া এই ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পাদন করা সম্ভব হত না।
উনি অলিভারের দিকে তাকালেন–আমরা আমাদের প্রেসিডেন্টকে এর জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি এই গ্রহে শান্তি ফিরিয়ে এনেছেন।
ডানা ভাবছিল, তাহলে? একটা যুদ্ধ শেষ হয়ে গেল। আর একটা যুদ্ধ শুরু হল কি? আমরা এমন একটা পৃথিবীর বাসিন্দা হব, যেখানে ভালোবাসাই বাঁচবে, যেখানে ছোটো ছোটো ছেলেরা আতঙ্ক আর আশঙ্কার মধ্যে দিন কাটাতে বাধ্য হবে না। বোমের শব্দে রাতের ঘুম ভেঙে যাবে না। মেশিন গান থেকে আগুন উৎক্ষিপ্ত হবে না। আহা, এদিন কবে আসবে?
সে কামালের দিকে তাকাল, কামাল জেবের সঙ্গে কথা বলছে। ডানার মুখে হাসি। জেব ইতিমধ্যেই ডানাকে বিয়ের প্রস্তাব করেছে। কামাল একজন বাবা পাবে, আহা, আমরা একটা পরিবার পাব। আমি কী খুবই ভাগ্যবতী! ডানা ভাবল।
ভাষণ শেষ হয়ে গেছে।
ক্যামেরাম্যান ক্যামেরা বন্ধ করে দিল। আর পিডিয়ামকে দেখানো হচ্ছে না। এখন ডানার ছবি ফুটে উঠেছে। ডানা তাকাল। লেন্সে তার গলা। হাসতে হাসতে সে বলল–আমি ডানা ইভান্স, ডবলিউ টি ই ওয়াশিংটন ডিসির তরফ থেকে আপনাদের এই খবর শোনাচ্ছি।…