।। ৫ ।।
পরের দিন সকালে একেনবাবুর ফোন, “কী করছেন স্যার, চলে আসুন।”
আমি তো এক পায়েই খাড়া। গিয়ে দেখি প্রমথও এসে হাজির।
“আপনাদের প্রোগ্রেস রিপোর্ট দিই”, বলে ভাস্বতীর সঙ্গে আমার দেখা হওয়ার কথা বললাম।
একেনবাবু মন দিয়ে ভাস্বতী যা যা বলেছে শুনলেন। ব্যক্তিগত অপ্রয়োজনীয় অংশটুকু বাদ দিলাম।
প্রমথ বলল, “কিছু তো লুকোচ্ছিস বুঝতে পারছি। যাক, সব কিছু বলতে হবে না। তোর প্রাইভেট ব্যাপারে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।”
“গো টু হেল!”
একেনবাবুর ফোকাস অন্যদিকে। “বুঝলেন স্যার, এই সমুবাবুকে একটা শাস্তি দেওয়া দরকার। কিন্তু যাকে ব্ল্যাকমেল করে এই দৈহিক অত্যাচারটা করতেন তিনিই তো বেঁচে নেই যে কমপ্লেন করবেন! আর খুনের দায়েও ওঁকে ধরা যাবে না।”
“সেটা কেন বলছেন?”
“পুলিশের সাসপেক্ট লিস্টে উনি ছিলেন, কিন্তু ব্লাড টেস্ট করে ম্যাচ পাওয়া যায়নি।”
“তার মানে?”
“মিস নন্দিতাকে খুনি যখন ছুরি মেরেছিল, তখন ধ্বস্তাধ্বস্তিতে খুনিও জখম হয়। আইডেন্টিফিকেশনের প্রথম স্টেপ হল ব্লাড টাইপ ম্যাচ করা। তারপর পজিটিভ হবার জন্যে ডিএনএ টেস্ট।”
“এবার বুঝেছি। তাহলে তো ওই রাজা নামের লোকটাকে খুঁজে বার করা দরকার।”
“ঠিক কথা স্যার। আমি এখুনি ফোন করছি”, বলে অধীরবাবুকে ফোন করতে গেলেন।
একেনবাবু যখন ফোন করছেন তখন প্রমথ বলল, “ভাস্বতী না হয় ব্যাপারটা চেপে গিয়েছিল, কিন্তু এই সমু ক্যারেক্টারকে পুলিশ যখন জেরা করছিল, তখন সে রাজার কথা বলেনি কেন?”
“বললে তো নিজের কীর্তি ফাঁস হয়ে যেত!”
ইতিমধ্যে চা নিমকি ভাজা এসে গেছে। একেনবউদিও এসে বসেছেন।
একেনবাবু ফোন সেরে এসে দুটো নিমকি মুখে দিয়ে বললেন, “বুঝলেন স্যার, চায়ের সঙ্গে নিমকির কোনো বিকল্প নেই।”
“বিকল্প! কী ব্যাপার মশাই, বেশ কঠিন কঠিন শব্দ ব্যবহার করছেন!” প্রমথ বলল।
“কেন স্যার, ‘বিকল্প’ শব্দটা তো বেশ ভালো। আমাদের উচিত ভালো ভালো বাংলা শব্দ বেশি করে ব্যবহার করা।”
“আমার কী মনে হচ্ছে জানেন? আপনার এই বাঙলা-প্রীতির মূল কারণ হল স্পোকেন ইংলিশ মার্ডার মিস্ট্রির হাতে আপনার ল্যাজে-গোবরে হওয়া।”
“এটা ভালো বলেছেন স্যার। তবে কী জানেন, ইংরেজি বলতে শেখাটা ভালো, কিন্তু তা বলে বাংলায় যখন-তখন ইংলিশ ব্যবহার সাপোর্ট করা যায় না।”
“বলতে চাইছেন ‘সমর্থন করা যায় না। কিন্তু আগে তো সেটাই করতেন! ঠিক আছে, তাহলে এখন ‘স্যার’ ছেড়ে মহাশয়’ বলা শুরু করুন।”
“শুনছেন স্যার, প্রমথবাবুর কথা,” এবার একেনবাবু আমাকে সাক্ষী মানলেন। ‘মহাশয়, মহাশয় বলে কথা বলা যায় নাকি!”
“আপনি ছাড়ন ওর কথা। এখন বলুন তো কালকে সারাদিন আপনি কোথায় ডুব মেরেছিলেন?”
“ডুব মারব কেন স্যার, অধীরের এক কলিগের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম।”
“কী ব্যাপারে?”
“মিস নন্দিতার আগে স্যার আর একটি মেয়ে প্রায় একইভাবে খুন হয়েছিল। কাল তারই খবরাখবর নিচ্ছিলাম।”
“কী জানলেন?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।
“বিশেষ কিছু জানতে পারলাম না। ইনভেস্টিগেটিং অফিসার ছুটিতে আছেন। ফাইলগুলো তালাবন্দি। যেটুকু জানতে পারলাম, তা হল মেয়েটির নাম ছিল মিস শর্মিলা দত্ত। ট্র্যাভেল এজেন্সিতে কাজ করতেন।”
“দাঁড়ান দাঁড়ান, এর কথাই তো সেদিন মনোজবাবু বললেন!”
“হ্যাঁ, স্যার। শর্মিলা থাকতেন গোলপার্কে একটা মেয়েদের হস্টেলে। হস্টেলটা মিস নন্দিতার হস্টেল থেকে খুব দূরেও নয়। একইভাবে গলা টিপে ধরে গলায় দড়ির ফাঁস দেওয়া। তবে সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু হয়নি। আততায়ী আধমরা অবস্থায় ফেলে রেখে গিয়েছিল। কিন্তু জ্ঞান আর ফেরানো যায়নি। আর একটা মিল, মিস শর্মিলাকেও মলেস্ট করা। হয়েছিল, কিন্তু রেপ নয়।”
আমি বললাম, “আপনি কি দুটো খুনের মধ্যে লিঙ্ক খুঁজছেন? মোডাস অপারেন্ডি তো এক নয়, নন্দিতাকে তো ছুরিও মারা হয়েছিল!”
“হয়তো খুনি দ্বিতীয়বার চান্স নিতে চায়নি।” প্রমথ বলল।
“এটা ভালো বলেছেন স্যার। তবে যেটা মোস্ট ইনটারেস্টিং সেটা হল এই মেয়েটিও আইডিয়াল স্পোকেন ইংলিশ ইনস্টিটিউশনে পড়েছিল।”
“ওয়েট এ মিনিট, আপনি কী বলতে চাচ্ছেন? একজন খুনি শুধু একটা বিশেষ স্কুলের মেয়েদের খুন করছে!”
“সম্ভাবনাটাকে তো উড়িয়ে দেওয়া যায় না স্যার।”
“কিন্তু কেন?”এবার প্রমথ প্রশ্নটা করল।
“আই হ্যাভ নো ক্লু স্যার।”
“তাহলে কাল সারা দিন ধরে করলেনটা কী?”
একেনবাবু উত্তর না দিয়ে পা নাচাতে লাগলেন। উনি কিছু একটা ভাবছেন, কিন্তু সেটা ঠিক কী– জানাতে এখনও রাজি নন!
আমি মনে মনে ভাবছিলাম, এই দু’টো খুনের সঙ্গে স্পোকেন ইংলিশ স্কুলেরই কোনো একটা লোকের যোগাযোগ থাকতে হবে। সেদিন যে অভদ্র লোকটা মিলনী কাফেতে চা পাচ্ছি না বলে চ্যাঁচামেচি করছিল, সে যদি হয় আশ্চর্য হব না। লোকটা যে বদ সে তো জানিই, চেহারাটাও ক্রিমিন্যাল টাইপের। জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা, ওদিন মিলনী কাফেতে স্কুলের যে মালিককে দেখলাম, তার সম্পর্কে কোনো খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে?”
“অধীর তো বলল হয়েছে। লোকটার অ্যালিবাইও আছে।”
“ওখানকার ছাত্রদের জেরা করেছে?”
“সন্দেহের তালিকায় যে ক’টা ছেলে ছিল সবাইকেই করা হয়েছে। কিন্তু আমি ভাবছি স্যার,খুনি তো পুরুষ মানুষ নাও হতে পারে।”
“এটা কেন বলছেন?”
“মলেস্ট করা হয়েছে, কিন্তু রেপ করা হয়নি।” একটু অন্যমনস্ক ভাবে একেনবাবু বললেন।
“ভেরি ইনটারেস্টিং, প্রমথ বলল। “খুনি মেয়ে হলে হস্টেলের দারোয়ানদের চোখ এড়িয়ে যাওয়াটাও সহজ।”
“কিন্তু মোটিভটা কী?” আমি প্রশ্ন করলাম।
“কি স্টুপিডের মতো কথা বলছিস! লাভ ট্রায়াঙ্গেল। প্রেমের প্রত্যাখ্যানও হতে পারে।”
“প্রেমের প্রত্যাখ্যান বলতে কী বলতে চাইছিস, লেসবিয়ান কোনো সমস্যা?”
“সেটা হতে অসুবিধা কি!” প্রমথ সবজান্তার ভাব করল।
“তাহলে নেক্সট স্টেপটা কি?” আমি একেনবাবুকে প্রশ্নটা করলাম।
“সেটাই ভাবছি স্যার। মুশকিল হচ্ছে হাতে আমাদের সময় বেশি নেই। আমাকে একবার অধীরের কাছে যেতে হবে। আপনারা আসতে চান?”
“নিশ্চয়,” আমি প্রমথ দুজনেই একসঙ্গে বলে উঠলাম।
“অধীর স্পোকেন ইংলিশ স্কুলের স্টুডেন্ট অ্যাডমিশন রেকর্ডগুলো কোর্ট অর্ডার দিয়ে আনিয়েছে। আজকের রাতটা পুলিশের হেফাজতে ওগুলো থাকবে। আমরা এখন গেলে দেখতে পারব।”
“ওগুলো দেখে কী লাভ হবে? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
“জানি না স্যার। তবে শুক্তির মধ্যে থেকেই তো হঠাৎ করে মুক্তো বেরিয়ে পড়ে।”
বুঝলাম, একেনবাবু কিছু একটা খুঁজছেন।
পুলিশ থানায় অধীরবাবু আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। একেনবাবু আমাদের পরিচয় একটু বাড়িয়ে বাড়িয়েই করলেন, যেমন সাধারণত করেন।
“আসুন স্যার, এই ঘরেই ফাইলগুলো আছে।” ওঁর অফিসের পাশে ছোট্ট একটা ঘরে আমাদের নিয়ে গেলেন। “যা দেখার আজকেই দেখতে হবে, কাল সকালে সব ফেরত চলে যাবে।”
অধীরবাবুর বোধ হয় কোথাও যাবার ব্যাপার ছিল, ওঁর এক জুনিয়র অফিসার বিজয়বাবুকে রেখে গেলেন। বিজয়বাবু মনে হল একেনবাবুকে প্রায় দেবতা জ্ঞান করেন।
.
প্রত্যেকটা বছরের জন্য এক একটা করে চারটে ফাইল ফোল্ডার। প্রত্যেকটা ফোল্ডারের প্রথম পাতায় নামের একটা লিস্ট। লিস্টে যাদের নাম আছে, তাদের ভর্তি হবার অ্যাপ্লিকেশনগুলো ফোল্ডারের ভেতর আছে। প্রতিটি ফোল্ডারে প্রায় একশোটার মতো অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম। ছাত্রছাত্রীর ছবি, ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ফোন নম্বর, হাবিজাবি অনেককিছু সেখানে রয়েছে। ছাত্রীদের সংখ্যাই মনে হল বেশি।
একেনবাবু চট করে লিস্টগুলিতে চোখ বুলিয়ে একটা ফর্ম বার করলেন। তারপর প্রায় নিজের মনেই বললেন, “ছবিটা তো দেখছি মিসিং!”
“কার ছবি?” প্রমথ জিজ্ঞেস করল।
উত্তরে কাগজটা আমাদের দিকে এগিয়ে দিলেন একেনবাবু। শর্মিলা দত্তর অ্যাপ্লিকেশন। তারপর ফোল্ডার থেকে আরেকটা ফর্ম বার করে বিজয়বাবুকে জিজ্ঞেস করলেন, “এ দুটো ফর্ম কি কপি করা যাবে?”
বিজয়বাবু একটু কাচুমাচু মুখে বললেন, “কপি মেশিনটা স্যার খারাপ হয়ে বসে আছে। কালকে মিস্ত্রি আসবে।”
“ঠিক আছে, তাহলে হাতেই ঢুকতে হবে।” বিজয়বাবুকে কথাটা বলে প্রমথের হাতে দ্বিতীয় ফর্মটা দিলেন। ফর্মটা নন্দিতার। আমাকে ধরিয়ে দিলেন শর্মিলার ফর্মটা।
“এ দুটো থেকে নাম ঠিকানা কোথায় পড়াশুনো করেছেন–যা যা আছে সেগুলো একটু টুকে নেবেন স্যার?”
বিজয়বাবুর কাছ থেকে দুটো সাদা কাগজ নিয়ে আমরা আমাদের কাজে লাগলাম।
একেনবাবু দেখলাম ঝড়ের বেগে অন্য ফর্মগুলোর ওপর চোখ বুলিয়ে যাচ্ছেন। কী দেখছেন, ভগবান জানেন। আমাদের কাজ শেষ। ওঁর জন্য অপেক্ষা করছি।
“আপনাদের কাজ শেষ স্যার?” ফর্মগুলোর ওপর চোখ বোলাতে বোলাতেই জিজ্ঞেস করলেন।
“আমাদের কাজ তো শেষ। কী দেখছেন এত?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।
“এখনও জানি না স্যার। মনে হচ্ছে অন্ধকারে হাতড়াচ্ছি!” ফর্মগুলো ফোল্ডারে পুরতে পুরতে বললেন। গলার স্বর শুনে মনে হল একটু যেন নিরাশ।
“আচ্ছা মিস শর্মিলার পার্মানেন্ট অ্যাড্রেসটা কি?”
প্রমথ উত্তর দিল, “বারুইপুর। পুরো ঠিকানাটা জানতে চান?”
“তার দরকার নেই স্যার, বারুইপুর তো কাছেই।” তারপর একটু মাথা চুলকে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “কালকে কি ওখানে একবার যাওয়া যায় স্যার?”
এখানে গাড়িধারী বলতে আমি। বারো বছরের পুরোনো গাড়ি। বাবা কিনেছিলেন, কিন্তু এখনও মোটামুটি চলছে।
“তা নিশ্চয় যাওয়া যায়, কিন্তু কারণটা কী?”
“দেখি স্যার, একটু কথা বলে আসি।”
.
রাত্রে বাড়ি ফিরে কী হল জানি না ফেসবুক খুলে বসলাম। ভাস্বতী যখন ফেসবুকে আছি কিনা জিজ্ঞেস করেছিল, তখন পুরো সত্যি কথা আমি বলিনি। ফেসবুকে আমার একটা অ্যাকাউন্ট আছে ‘দে দে’ নামে, কিন্তু সেটা নামে মাত্র। কালেভদ্রে সেখানে ঢুকি, বন্ধুবান্ধব সেখানে বিশেষ নেই। ফেসবুকে ঢুকে আমি ভাস্বতীর খোঁজ করলাম। কার্ডে ওর নাম ইমেল দুটোই ছিল। অনেকগুলো ভাস্বতী মিত্র আছে, তারমধ্যে একটাতে কোনো মুখই নেই, আরেকটাতে একটা কুকুরের ছবি। সেটাকেই খুললাম। দেখলাম বেশ কিছু বন্ধুর ছবি, বেশির ভাগই ওর বয়সি মেয়েদের। নন্দিতার কোনো ছবি দেখলাম না। হয়তো ও ফেসবুকে ছিল না। কয়েকটা মাত্র ছেলের ছবি। ফেসবুক একজনের বন্ধু-বান্ধব কারা, নিজের ওয়ালে সে কী লেখে, অন্যের লেখায় কী কমেন্ট করে –এসব থেকে তার চরিত্রের কিছুটা পরিচয় পাওয়া যায়। কাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে ভাস্বতী? একটা ছেলের ছবি ক্লিক করে মনে হল এয়ারলাইনের কোনো বন্ধু। আরেকটা ছেলে আর্টিস্ট। আরেকটা ছেলে কী করে বুঝলাম না, কিন্তু তার ফেসবুক পাতায় একটা ছবি দেখে চমকে উঠলাম। শান্তিনিকেতনের বিখ্যাত বইয়ের দোকান ‘সুবর্ণরেখা’-র সামনে তোলা ছবি। ভাস্বতীর ফেসবুকের বন্ধুর পাশে যে মেয়েটি দাঁড়িয়ে, তাকে দেখতে অনেকটা নন্দিতার মতো! ছবির কোয়লিটিটা ভালো নয়। জোর করে কিছু বলা অসম্ভব। ছেলেটির নাম বীর, বীর রায়। মুখটা চেনা চেনা, কিন্তু প্লেস করতে পারলাম না।
দেখামাত্র একটা অশুভ চিন্তা আমাকে গ্রাস করল। একেনবাবু বলেছিলেন, খুনি। পুরুষমানুষ নাও হতে পারে। বীর রায় কি আগে ভাস্বতীর প্রেমিক ছিল? ভাস্বতাঁকে ডাম্প করে সে নন্দিতার কাছে যাওয়ার জন্য ভাস্বতী নন্দিতাকে খুন করেছিল? কিন্তু ভাস্বতাঁকে দেখে তো… ও মাই গড!
রাত্রি হয়ে গেছে পরের দিন সকালেই একেনবাবুকে ফোন করলাম। সব শুনে একেনবাবু বললেন, “ভেরি ইন্টারেস্টিং স্যার। আমি একবার ছবিটা দেখতে চাই, কিন্তু আমার এখানে তো ইন্টারনেট নেই।”
“নো প্রব্লেম, আমি আজ মোবাইলে ছবিটা আপনাকে দেখাব। অন্য পসিবিলিটি হল, এই বীর রায়ও নন্দিতাকে খুন করতে পারে।”
“এটা কেন বলছেন স্যার?”
“নন্দিতার সঙ্গে শোবার পর ও বুঝতে পারে নন্দিতা ভার্জিন ছিল না। তখনই একটা তীব্র ঘৃণা জন্মায়। সেই ঘৃণাবশত পরে এসে খুন করে! আরও সম্ভবনা আছে। ধরুন, একাধিক যৌন-সঙ্গী থাকার ফলে নন্দিতার যৌনরোগ হয়েছিল। সেটা বীর রায়ের মধ্যেও সংক্রমিত হয়েছিল। ঘৃণা হবার তো নানা কারণ থাকতে পারে!”
“সবই সম্ভব স্যার, সবই সম্ভব। বারুইপুর যেতে যেতে এ নিয়ে আলোচনা করা যাবে।”
বারুইপুর যাবার সময়ে আমি আমার আই-ফোনে ফেসবুক খুলে একেনবাবুকে বীর রায় আর নন্দিতার ছবি দেখালাম। একেনবাবু ভালো করে ছবিটা দেখে জিজ্ঞেস করলেন “ঠিক বোঝা যাচ্ছে না, মিস নন্দিতা কি না, তবে মিল আছে ঠিকই। আর কোনো ছবি আছে এঁদের দুজনের?”
আনফচুনেটলি ফেসবুক ফোল্ডারে বীর রায়ের বেশ কিছু সেলফি ছিল, কিন্তু নন্দিতার ছবি ছিল না। বীর রায়ের ছবিগুলো মন দিয়ে দেখলেন একেনবাবু।
“কী বুঝলেন?”
“আমি একটু কনফিউজড স্যার।”
“তার মানে?”
“তার মানে আপনি যা বলছেন, তা হতে পারে আবার নাও হতে পারে।”
প্রমথ বিরক্ত হয়ে বলল, “প্রোফাউন্ড স্টেটমেন্ট –হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে!” বলে পেছনের সিটে বসে একটা বই পড়ছিল তাতে মন দিল।