৫. ইয়াকুব তান্ত্রিক ও বশীকরণ

পাঁচ – ইয়াকুব তান্ত্রিক ও বশীকরণ

ইয়াকুব আলি ঢ্যাঙা সিড়িঙ্গে কালকুট্টে মানুষ। মাথায় প্রচণ্ড জটা। কুচকুচে কালো গোঁফ—দাড়ি। ইয়াকুবের কপালে লাল ত্রিপুণ্ডক। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। ঠোঁট লালরঙা থানের লুঙ্গি হাঁটুঅব্দি পরা। কদাচিৎ সে লালরঙের হাফহাতা মেরজাই চড়ায় গায়ে। বেশিরভাগ সময় খালি গায়ে থাকে। কবজিতে আর বাহুতে অষ্টধাতুর বালা আছে গুটিকতক। তার নাকটা তথাকথিত আর্যসুলভ। দুটি ছোট্ট চোখের পর্দা নিরন্তর লালচে। প্রারম্ভে ইয়াকুবের চোখদুটি নাকি আরও বড়ো ছিল। দিনে দিনে কী অনুসন্ধানের চাপে নাকি ক্রমশ ভিতরমুখী হয়ে যাচ্ছে। ইয়াকুবের কতিপয় বার্তা আছে। তার প্রধান বার্তা এক অন্ধকার বিশ্ব সম্পর্কে। পুরুষরূপী জড় দুনিয়ার বুকের ওপর নারীরূপিণী চৈতন্য হাঁটছেন আর হাঁটছেন। রক্তধারায় তাঁর শক্তির প্রকাশ।…ইয়াকুব নিজে পাঁঠা কাটেন না। কিন্তু কোদলার কালীবাড়ি গিয়ে পাঁঠাবলি দেখে প্রচণ্ড উল্লাসে হাততালি দিয়ে হাসে—নিঃসরিত তরল লালরঙা শক্তি দু হাতে কুড়িয়ে ঢকঢক করে খায়। কোদলার রায়বাবুরা মদে টোর হয়ে থাকলে বিগলিত দৃষ্টে তাকে নিরীক্ষণ করেন। হুঁশে থাকলে খেপে ওঠেন, এই ব্যাটা মোছলমান! খবরদার!…এবং ইয়াকুব কাঁচুমাচু মুখে রক্ত মুছতে মুছতে পালায়।

লোকে বলে, প্রথম—প্রথম পাঁঠার রক্ত খেয়ে ইয়াকুবের হজম হত না। একবার তো হেগে মরার দাখিল। গোরাংবাবুর হোমিয়োপ্যাথি আর গালমন্দে সে—যাত্রা বেঁচে যায়। তবু যেন রক্তের কী স্বাদ আছে! ইয়াকুব রক্ত ভুলল না।

ইয়াকুব ‘তান্ত্রিক’ হবার আগেই তার বউ সান্নিপাতিক জ্বরে মরেছিল। তার ছেলের বয়স তখন ছ’সাত বছর। ছেলের নাম ইসমাইল। এবার কিছু পৌরাণিক রহস্যের অবতারণা করা যাক, কিছু কিঞ্চিৎ ঐতিহাসিক ফোড়নসহ।

মুসলিম ধর্মের এক ‘পয়গম্বর’ বা ঈশ্বরপ্রেরিত পুরুষ হজরত এব্রাহিমের (ইহুদিরা যাকে বলেন আব্রাহাম এবং ইহুদি—খ্রিস্টান—মুসলিম তিনটি ধর্ম মূলত একই মিথকেন্দ্রিক।) একটি ছেলের নাম ইসমাইল। ঈশ্বরের আদেশে এব্রাহিম তাকে বলি দিয়েছিলেন। অবশ্য চকিতে রক্তাক্ত নিহত ছেলেটির লাশ একটি দুমবা নামক প্রাণীতে রূপান্তরিত হয় এবং তার পাশে জীবিত সহাস্য প্রফুল্ল ইসমাইলকে দেখতে পান এব্রাহিম। এই ঘটনা থেকেই মুসলিমদের ‘কোরবানি’ পরবের অনুষ্ঠান।

তান্ত্রিক ইয়াকুবের ছেলের নামও ইসমাইল। পরে সে নাকি রাতারাতি মারা যায়। ইয়াকুব স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে প্রেতসাধক হয়ে উঠেছিল। ছেলের মৃত্যু বিষয়ে তার কৈফিয়ৎ একটু চমকপ্রদ হলেও সেকালের গ্রামে অবিশ্বাস্য নয়। ছেলেটিকে নাকি এক অশরীরী ‘চ্যাড়া’ অর্থাৎ প্রেত ইয়াকুবের অনুপস্থিতির সুযোগে মেরে ফেলে।

 সে রাতটা ছিল অমাবস্যার। ডাবকই গ্রামে একটি ভূতগ্রস্তা মেয়ের ভূত ছাড়াচ্ছিল ইয়াকুব। মেয়েটির মুখ দিয়ে ভূতটা কথা বলছিল। বলতে বলতে ভূতটা এক ভয়ঙ্কর শর্তের অবতারণা করে। সে বলে, এই সুন্দরী বউটিকে ছেড়ে যেতে তার ইচ্ছে ছিল না—কিন্তু ইয়াকুব যখন বলছে, তখন না হয় রাখছে কথাটা কিন্তু তার বদলে সে ইয়াকুবের প্রিয়তম জিনিস চায়।

ইয়াকুব বলল, বেশ—তাই নিস। কিন্তু বউমাকে ছেড়ে দে বাবা।

নিচ্ছি তাঁহলে; ভূত হি হি করে হেসে বলল। (আহা, সেই ঢলঢল চাঁদবরনি মেয়ের এলোচুল আর রাঙা ঠোঁটের হাসি ইয়াকুব আজও ভোলেনি—ভোলেনি কারণ সে ছিল সর্বনাশী।)

ইয়াকুব মহানন্দে বলল, নে নে। কোনো ‘আপিত্য’ (আপত্তি) নাই। যা খুশি নে তুই।

রূপসী বউ পিড়ির আসন থেকে ‘মুর্চ্ছো’ গেল। ভূত ছাড়ল। ইয়াকুব ওঝা রাতদুপুরে এককাঁদি পাকা কলা, একসের মেঠাই—সন্দেশ, আর পাঁচ আনা পয়সা নতুন গামছায় বেঁধে নিয়ে ঠুক ঠুক করে বাড়ি পৌঁছল। তারপর, হা সর্বনাশ! ছেলেকে ডাকে সে। কলা খাবে, সন্দেশ খাবে বাছা ইসমাইল। বরাবর ঘুম ভেঙে উঠে হাঁ হাঁ করে এইসব খায় সে। তা, ছেলে লাশ। হাঁ—লাশ, সুমসাম কাঠ। অশরীরী তাকে মেরে রেখে গেছে।

 সেই রাতে তাকে কবর দিল ইয়াকুব—ঘরের মেঝেতেই। সেই কবরে বসে সে দিনরাত ‘সাধনা’ করত। নিশিরাতে পড়শিরা তার কাতর ডাক শুনেছে, ইসমাইল! বাপ ইসমাইল! ওঠো, জাগো! ওঠো, জাগো!

অজ পাড়াগাঁ, তখনও রেললাইন হয়নি, সভ্য পৃথিবীর সঙ্গে সব যোগাযোগ তেরোশো বছর আগেই হারিয়ে ফেলেছিল রাঙামাঠি—কানাসোনা। বৌদ্ধ শ্রমণদের, গম্ভীর স্তোত্র টিলার নিচে তলিয়ে গেছে। অসীম শক্তি রাখে প্রকৃতি। নগরবন্দরকে ঢেকে ফেলেছে তার রোমশ আরণ্য হাতের প্রকাণ্ড ধূসর তালু। রাজা শশাঙ্কের সেই সব দুর্ধর্ষ সেনা আর নগররক্ষী—যারা নাকি কয়েক হাজার বৌদ্ধের লাশ পুঁতে ব্রাহ্মণ্যধর্মের পতাকা উড়িয়েছিল মহাবিহারের মাথায়, তারাও হায়, কে কোথায় নিরুপদ্রব অনন্ত ঘুমে লীন!

পাঠান—মোগল বাদশাহ উজির—নাজির কর্ণসুবর্ণের ঠিকানা জানত না। জানত না সুবে বাংলার হর্তাকর্তা মোরশেদ কুলে খাঁ, মহামতি আলিওয়ার্দি, দুরন্ত বালক সেরাজ—উ—দ্দৌলা, ধুরন্ধর গোরা কেরানি ক্লাইভ সাহেব। মুরশিদাবাদ—যা ছিল ‘লন্ডন অপেক্ষা সমৃদ্ধিশালী’, মাত্র ন’ মাইল দূরে কর্ণসুবর্ণের সমাধি থেকে। তবু কোনো ঘোড়সওয়ার এদিকে ঘোড়া হাঁকায়নি আর। কবর খুঁড়ে কে আর বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!

শুধু এক বাঙালি পণ্ডিত রাখালদাস বাঁড়ুয্যে হঠাৎ যেন স্বপ্ন দেখে একদা চিৎকার করে উঠলেন—ওখানে, ওখানে! সবাই চমকে তাকাল রাঙামাটির সবুজ টিলার দিকে।…

যাই হোক, ইয়াকুব সে কারণে একটুও উপদ্রুত হল না। আজ লোকে বলে সে ছেলে ইসমাইলকে আসলে হজরত এব্রাহিমের মতনই বলি দিয়েছিল—তার ঈশ্বর (ঈশ্বরী বলাই ভালো) সন্তুষ্ট হবেন বলে।

এ ঘটনার কে তদন্ত করবে? রাঙামাটি কানাসোনায় ইতিহাসের সমাধি—শ্মশান। এখানে স্বভাবত ভূতপ্রেত অশরীরী আত্মাদের আনাগোনা আছে। ‘মোহেন—জো—দোড়ো, কথাটার মানে যেমন মৃতদের ভূমি! এও তো এক মোহেন—জো—দোড়ো।

তবে এ সবই ইয়াকুবের সেই রক্তদোষঘটিত। রক্তে শক্তির নিঃশব্দ মহানাদ—তার মাকালীর ওই ভাষা। ইয়াকুব বলে, আমার দোষ নাই। মা যা করান তাই করি।

কোদলার ঘটকঠাকুর একদিন সন্দেহবশে বলেছিল, ‘ইয়াকুব, কিছু পেলি?’

ইয়াকুব জবাব দিয়েছিল, ‘পেয়েছি ঠাকুরমশাই—পেচণ্ড দিয়েছেন মা।’

ঘটকের যা স্বভাব—চোখ পিট পিট করে ফিসফিসিয়ে ভুরু নাচিয়ে জিগ্যেস করেছিল ‘কী, কী পেলি?’

ইয়াকুব বলেছিল ‘আন্ধার!’

‘আঁধার!’

‘আজ্ঞে হ্যাঁ, আন্ধার।’

‘সে কী রে বাবা?’

‘ঠাকুরমশাই, দুনিয়ায় ওই এক আন্ধার। থমথমে চাদ্দিক। আশমানে রক্তসন্ধের রাঙাপানা মেঘ উঠেছে। আর তিনি আসছেন। ঠাকুরমশাই প্রথম—প্রথম ডর পেতাম! তরাস বাজত। সে কী রক্তের দরিয়া উথালপাথাল! সে কী রূপ চোখের সামনেতে! দিগম্বরী, ‘বেভঙ্করী’ (এই শব্দটা ইয়াকুবরচিত—একটা ভয়ঙ্কর কিছুর দ্যোতক) হাঁ হাঁ, খাঁ খাঁ রূপ…উঃ, বাসরে!…’

পাড়ার লোকে পচা লাশের গন্ধে একদা উত্যক্ত হল। দলবেঁধে মার—মার করে হাজির। ওরা সবাই মুসলমান। কেমন মুসলমান? জুহা মৌলবির মতে—’নামে মুসলমান, চলনে হেঁদু।’ হ্যাঁ, রাঙামাটির মুসলমানরা হজরত আলি এবং মা কালী উভয়েই বিশ্বাস রাখত। একবার ইজুশেখের বউ—সেই নির্লজ্জ পাড়াবেড়ানি ধুঁদুল গড়ন চ্যাপটামুখী ফুলন বিবি—যার প্রকাণ্ড ‘কদ্দু’ অর্থাৎ লাউয়ের সদৃশ্য স্তনের দরুন সবাই আড়ালে ‘কদুওয়ালি’ বলে ডাকত, তার সঙ্গে চরণ চৌকিদারের মেয়ে বিন্নির বেজায় তর্কাতর্কি হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে সেটা উল্লেখযোগ্য। ফুলনের মতে মাকালীর পায়ের তলায় ধবধবে সাদা যে মরদটা চিৎপাত ন্যাংটো পড়ে থাকে, সে হচ্ছে মাকালীর ভাসুর। ভাসুরের বুকে পা দিয়ে লজ্জা পেয়েছিল বলেই না মেয়েটা লাজশরমে একহাত জিব কেটে ফেলেছে!

বিন্নি বলে, ‘যাঃ! ভাসুর কেন হবে? ও তো শিব—মাকালীর বর।’

ফুলন বিন্নির চেয়ে তেজি। সে বলে, ‘তোর মাথা লো ছুঁড়ি! ভাসুরকে ভাতার করা তোর অব্যেস নাকিন রে?’

কথা শুরু হয়েছিল মজা ভাগীরথীর ঝিলে। এককোমর জলে দুজনে ‘মাখনা ফল’ তুলছে। শুকোলে পেষাই করে আটা হবে। রুটি বানাবে।

একসময় লেগে গেল তুমুল ঝগড়া। বিন্নি বলে, ‘ও টে (‘লো’—এর বিকল্প) ভাসুরভাতারি ‘—খাকি’, (বিন্নি মুসলমানি ফুলনকে বোঝাতে চাইছিল যে তার স্বামী ইজুসেখের Circumcision অর্থাৎ ‘খতনা’ ঘটিত মাংসের টুকরো ভক্ষণ করেছে—কিংবা আরও অশ্লীল কিছু। ও টে মোছলমানি! ও টে গোরুখাকি!’

ফুলনও পালটা চালিয়ে যায়। অবশ্য তাতে সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা কস্মিনকালেও ঘটে না পাড়াগঁয়ে।…

 সে কথা থাক। পড়শিদের এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হল ইয়াকুবের ঘরে। কবর কোথায়? মাটির বেদিতে তেলহলুদ আর কী মশলামাখানো একটা লাশ দেখল তারা। তার বুকের ওপর ইয়াকুব বসে রয়েছে। হ্যাঁ, লাশটা তার ছেলে ইসমাইলের।

ক্ষিপ্ত জনতা ইয়াকুবের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিল। মারও দিল প্রচণ্ড। তবে এসব মোটেও ধর্মের কারণে নয়। ছেলেকে খুন করে ইয়াকুব মড়াসাধনা করছে—এক। মড়ার পচা গন্ধে টেকা যাচ্ছে না—দুই এবং আগাগোড়া সমস্তটাই বিদঘুটে—তিন। এই তিনটি কারণে তারা খেপে গিয়েছিল।

তারপর থেকে ইয়াকুব বসতি থেকে দূরে বহতা ভাগীরথীর পাড়ে নির্জনে তার ঘর বেঁধেছিল। ওই দেড়কাঠা পরিমাণ জায়গা তাকে দিয়েছিলেন বহরমপুর—সৈদাবাসের এক জমিদার চক্রবর্তীবাবু। ইয়াকুব তান্ত্রিকের ওপর কী কারণে তাঁর আস্থা জেগেছিল।

জায়গাটা চমৎকার! ওখানে ভাগীরথী মৃদু বাঁক নিয়ে উত্তর—পূর্ব থেকে এসে দক্ষিণবাহিনী হয়েছে। নদীমুখো দাঁড়ালে বাঁয়ে দূরে কর্ণসুবর্ণ টিলা নজরে পড়ে। ডাইনে ডাবকই, কোদলা ইত্যাদি এবং পিছনে রাঙামাটি। খাঁ—খাঁ মাঠ চারপাশে। সামান্য দূরে ডাইনে শম্ভু ঘেটেলের ঘর এবং খেয়াঘাট। বাঁয়ে কয়েক পা এগোলেই শ্মশান। বাবলা গাছ আছে। গুটিকয় ঝাউগাছ—আর আছে এক মহা বটবৃক্ষ। মা—জাহ্নবীর গায়ে শ্মশান আর এহেন মহাবট সুন্দর গয়নার প্রতীক।

ইয়াকুব তান্ত্রিকের যিনি গুরু, তিনি এক হিন্দু সন্ন্যাসী—ওই বটতলায় একদা ‘উদাসী’ ইয়াকুব আলি তাঁর সাক্ষাৎ পেয়েছিল। প্রচুর গাঁজা খাওয়া হয়েছিল গুরু শিষ্যে। যাবার সময় কিছু ‘তত্ত্ব’ দিয়ে গিয়েছিলেন—ইয়াকুব মাথায় তাতেই জটা গজিয়ে যায়।…

ইয়াকুব বেশ কয়েক বছর একনাগাড়ে কাটানোর পর ভূত সাধনায় সিদ্ধিলাভ করলে, লোকসমাজে তার প্রতিষ্ঠা হল। তারপর সে সবার সঙ্গে মেশে। সব জায়গায় ঘোরে। আর তার লাঞ্ছনার ভয় নেই।…

সে—রাতে জোর বর্ষা নেমেছে। চাঁদঢাকা ঘন বৃষ্টিমেঘ আকাশজোড়া কালো ছায়ার মধ্যে গলে পড়ছে। গঙ্গায় সবে নতুন ঢলটি আসতে লেগেছে ক’দিন থেকে। কাজলা জল ঘোলা করে দূরের পাহাড়ের ময়লা বয়ে আসছে। মহাবটের লম্বা শেকড় ধরে ঘোলা জল উঠছে কিনারার দিকে। তিনটে মড়ার মাথার খুলিতে নারকেল মালাই চাপিয়ে বিজোড়সংখ্যক চাল ফুটোচ্ছিল ইয়াকুব। মাথার ওপর বিশাল বটের ডালপালা। গুঁড়িতে বাজপড়ার ফলে একটা খোঁদল সৃষ্টি হয়েছে। সেখানেই ইয়াকুব তন্ত্র চালনা করছিল। কিন্তু বৃষ্টি বাধ সাধছিল দফায়—দফায়। চাল ফুটবে কী—জল গরম হতেই চায় না। এই তান্ত্রিক প্রক্রিয়ার নাম ‘ছিটেবান’। যে ভাতগুলো ফুটতে ফুটতে ছিটকে পড়বে, শূন্যে লুফে নিতে হবে। ওই সিদ্ধ সর্বনেশে ভাতটা যাকে খাওয়ানো যাবে, সে একেবারে বশ—বিবশ। সরা বাউরি লখা—মরার ছোট ভাই। জোয়ান ছেলে। দেড় কাঠা চাল আর সওয়া পাঁচ আনা পয়সা দিয়েছে তান্ত্রিককে। চরণের মেয়েকে বশ করে দিতে হবে। এসব প্রক্রিয়া করেনি ইয়াকুব। গতবছরের খরায় তল্লাটে মানুষের পেটের ধান্দা অস্থিরভাবে বেড়েছে। ইয়াকুবেরও বেড়েছে। এ দুঃসময়ে বাউরি ছোঁড়াটার যৌবন উথলে উঠেছে! তবে মর শালা! একবার নাকি আফতাব দারোগা মধুপুরের সরেস লম্পট গয়েশকে হাজতে রেখেছিল বিনিভাতে তিনদিন। তারপর বলেছিল, কী রে শালা? এখন ভাত ‘কুরকুরায়’, না যৌবন ‘কুরকুরায়’? গণেশ কেঁদেকেটে চিঁচিঁ করে বলে ভাঁত! এই বাউরি ব্যাটার যৌবন ‘কুরকুরিয়েছে’। তবে মর।

ইয়াকুব একবেলায় একসের চালের ভাত খায়। এখন বৃষ্টি এসে বাঁচিয়ে দিল তাকে। সরা পিছনে কুকুরের মতো লেজ গুটিয়ে ভিজছে চুপচাপ। তার গা শিউরে উঠছে। বিন্নিরে, বিন্নি! তোকে না ছুঁতে পেলে এ ভরা যৌবন ‘ব্রেথা’ যাবে! সেই যে গানে বলে—

এ ভরা যৌবন জোয়ারে

মানে না মন বঁধূয়ারে।…

কত চাঁদনি রাত, কত ঝিমন্ত দুপুর, ধুলোউড়ির মাঠে কী ঝিলের জলে ওই গান বিন্নির দিকে ছুঁড়ে দিয়েছে সরা! বিন্নি হেসেছে—কিন্তু ওইটুকুই। স্বামীর ভাত এই মহাদুর্দিনেও খেতে যাবার নাম নেই বিন্নির, তা বোঝা যাচ্ছিল। তাই সরার আশা বাড়ছিল। কিন্তু বিন্নি পাত্তা দিচ্ছে না। সরা গায়,

 পীরিতে ও সুন্দরী

 রঙ্গ (অঙ্গ) কি তোর ক্ষয়ে যাবে?

 (একদিন) চিত হয়ে ভাসবি জলে

 ডাল কয়োতে (দাঁড়কাকে) ঠুকরে খাবে।

এমনতরো শাসানি বিন্নি কানে নেয় না। অতএব সরা শেষঅব্দি তান্ত্রিকের পায়ে সাধাসাধি করেছে। দেড় সের চাল, সওয়া পাঁচ আনা পয়সা দক্ষিণা। তাতেই রাজি সরা।

বৃষ্টি সব ভণ্ডুল করে দিল। তখন ইয়াকুব বলল, ‘আজ আর হবে না বাপ। তোর বরাত মন্দ। আসলে হয়েছে কী, যখন তখন এ কর্ম করলেই তো হয় না। তিথি নক্ষত্তর আছে। বললাম, কদিন সবুর কর। অমাবস্যা ছাড়া এসব হয় না। সামনে অমাবস্যায় নির্ঘাৎ ফলবে। আজ, বাড়ি যা।’

অগত্যা সরা প্রায় কান্না চেপে বাড়ি গেল ভিজতে ভিজতে। ইয়াকুব মুণ্ডুগুলো গাছের ওপর দিকের খোঁদলে রেখে নিজের ঘরে ফিরল।

এসেই চমকাল সে। তার ঘরে তালাচাবি দেবার দরকার হয় না। শেকল তুলে রাখে মাত্র। এখন ঘরটা খোলা। ভিতরে একটা বেদি মতো আছে। ওর ওপর একটা মড়ার মাথা, মাকালীর পট, জড়িবুটির দঙ্গল, সিঁদুর, তেলের পিদিম কত কীসব রয়েছে। তার একপাশে মেঝেয় চিত হয়ে পা তুলে শুয়েছে হেরু ডাকাত! পিদিম জেলে রেখেই গিয়েছিল ইয়াকুব। এখনও জ্বলছে। ইয়াকুবের বুকের ভিতর শুকিয়ে গেল। কিন্তু সে চকিতে তার তান্ত্রিক ভাবভঙ্গিতে ভয়ানক এক হাঁক মেরে বসল। অব্যক্ত একটা গর্জন সেটা। ভূত—প্রেত ছাড়াতে গিয়ে এই হাঁক মারে সে। বুক কাঁপিয়ে দ্যায় লোকের। চেহারাও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। সে হাঁকে—হাঁ—উ—ম! পরক্ষণে—কালীকালী—ক্কালী—ক্কালী…হাঁ—উ—ম…! (ওঁ—এর অপভ্রংশ)।

হেরু নির্বিকার। মিটিমিটি হাসছে।

তখন ইয়াকুব তার বেদিতে লাফ দিয়ে উঠল। একটা মড়ার মাথা তুলে তার দিকে নাড়তে নাড়তে অদ্ভুত কীসব বলে গর্জাতে লাগল—ঝাঁ ঝাঁ ঝাঁ ঝাঁ হাঁ হাঁ হাঁ হাঁ…

হেরু হাসতে লাগল।

তখন ইয়াকুব আচমকা বেদির পাশ থেকে একটা ঝলসানো খাঁড়া বের করল। সেটা নাচাতে লাগল। মুখে সেই বুলি। ঝাঁ ঝাঁ ঝাঁ ঝাঁ…

 কোনো কাজ হল না তাতে। হেরু বলল, ‘আরে যা যা!’

তখন ইয়াকুব খাঁড়ার কোপ বসাতে গেল। একেবারে সত্যি সত্যি কোপ। হেরু তার আগেই হাত বাড়িয়ে খাঁড়াটা ধরে ফেলল। তারপর ইয়াকুবের একটা হাত ধরে একটানে বসিয়ে দিল মেঝেয়। ইয়াকুব জানাল, এ হেরু সে হেরু নয়—যাকে গত মাসে ঝিলে দেখেছিল, যে বলেছিল—একদিন যাব চাচা তোমার কাছে।

এ হেরু ডাকাত। ইয়াকুব ঝিম মেরে বসে রইল।

হেরু বলল, ‘চাচা ক্ষ্যাপামি করো না—শোনো। আমি তোমার ঘরে রাত্তিরে শোব।’

ইয়াকুব লাল চোখে তাকায় ও মুখের দিকে।

‘হ্যাঁ, শোব। তার বদলে তোমাকে মালকড়িও দোব। বিনি পয়সায় শোবে না হেরু’।

ইয়াকুব ঘড়ঘড় করে বলল, ‘এ ঘরে তুই শুতে পারবি না বাপ। চ্যাড়ার উপদ্রব হবে।’

‘সে আমি দেখব হে!’

‘পারলে শুস।’

‘রোজ এসে শোব।’

‘হুঁ।’

‘তোমাকে অনেক সোনা—রূপোর গয়না দোব, চাচা। বুঝলে?’

‘হুঁ।’

‘হুঁ, নয়। সত্যি সত্যি দোব।’

‘গয়নায় আমার কী কাজ?’

‘বেচে পয়সা পাবে। নিকে করে মাগ আনবে ঘরে।’ হেরু হাসতে থাকে। ‘বলে, সোনা—রূপোর কী কাজ? ন্যাকা!’

খানিক পরেই অবশ্য দুজনে বেশ মিলমিশ হয়ে গেল। ইয়াকুব খেজুরতালাই পেতে দিল। তারপর হেরু বলল, ‘চাচা খুব খিদে পেয়েছে! কিছু আছে ঘরে?”

ইয়াকুব জবাব দিল, ‘দেড় সের চাল রেঁধেছি ওবেলা। সকালের পান্তা হবে—এখনও যা আছে, খাবি তো তাই খা। শালুন—টালুন কিন্তু নাই বাপ!’

‘খাব। পেঁয়াজ আছে তো?’

‘পেঁয়াজ? উঁহু।’

‘হেরু অগত্যা নুন দিয়ে মাটির প্রকাণ্ড গামলায় ভাত খেতে বসে। তখন হঠাৎ ইয়াকুব বলে, ‘আরে শালা চোট্টা! ওখেনে তোর তো মাগ আছে শম্ভু ঘেটেলের ঘরে। সেখানে গেলে তো মাগের পাশে শুতিস। রাঙি আজ ‘পেচণ্ড’ জালমাছ (চিংড়ি) ধরে এনেছে। শালুন পেতিস।’

হেরু চুপচাপ গোগ্রাসে গিলে চলে।

ইয়াকুব লাফিয়ে ওঠে। ‘বাপ হেরু! একদণ্ড থামবি? আমি যাব আর আসব। তোর মাগের কাছ থেকে শালুন এনে দিই।’

 হেরু গর্জায়।…ন্না!…এবং তার মুখের ভাত ছিটকে পড়ে। সে দম নিয়ে বলে, ‘ও মাগির হাতে আমি এ জন্মেতে আর খাব না চাচা। মাগির জাত নাই।’

ইয়াকুব মিটি মিটি হাসে। তার তো কিছু অজানা নেই।

কিন্তু শিউরে উঠেছিল ইয়াকুবসাধু। তার ঘরে রাতের আশ্রয় চাইছে, এর পিছনে কী কুটিল ইচ্ছে যেন রয়ে গেছে হেরু ডাকাতের। একবার ভাবল, সাবধান করে দেবে রাঙিকে—আবার ভাবল, দুচ্ছাই! আমি কি গেরস্থ মানুষ? ওসব পরের ঝামেলা বওয়া আমার কর্ম নয়। ইয়াকুব পাগলাটে মানুষ হলেও মাঝে মাঝে বেশ হুঁশিয়ার হয়ে চলতে পারে। সে হুঁশিয়ার হল। মনকে লক্ষ্য করে বলল, চোপরাও ব্যাটা! কত লোকের কত গোপন কথা চেপে রেখেছ—এটাও ঝুলিতে ভরে রাখো। হুঁশিয়ার!

হু, এক জ্যোৎস্নারাতে ব্রহ্মডাঙার নির্জন টিলায় রাঙি বাউরানের সঙ্গে দানেশ ব্যাপারীর মস্তানি এখন মনে আছে ইয়াকুবের। রাতচরা তান্ত্রিক সাধুফকির মানুষেরা কত কী দেখবার সুযোগ পায়! সেই শ্বাসপ্রশ্বাস, সেই চাপা কামনাদ, উত্থালপাতাল জড়াজড়ি! ছিঃ ছিঃ!

তবু অবাক লাগে, ও রাঙিই না কেঁদে মাথা ভেঙেছিল—এখানে টিশিন দিলে ক্যানে, টিশিন? টিশিন না দিলে লোকটা মোট বইতে যেত না—আর ডাকাতও হত না! বাহারে সতীলক্ষ্মী, বাহা বাহারে!… হেরু যখন নাক ডাকাচ্ছে, ইয়াকুব তুড়ি দিয়ে এইরকম বিড়বিড় করে বাহাধ্বনি দিচ্ছে।

আর দানেশের ওপর ইয়াকুবের রাগ আছে প্রচণ্ড। দানেশ ব্যাপারি পাটের কারবার করে এলাকায়। এখান থেকে কিনে বেচে আসে গঙ্গা পেরিয়ে বেলডাঙার বাজারে। একখানে ভূত ছাড়ানো দক্ষিণাবাবদ ইয়াকুব সের দশেক পাট পেয়েছিল গত বছর কার্তিক মাসে। ব্যাপারি পাটটুকুর দাম দিতে যা ভুগিয়েছিল কহতব্য নয়। তবে শুধু সেজন্যে নয়; ব্যাপারি তাকে বিদ্রূপ করে বলেছিল, তুমি তো হেঁদুতে জাত দিয়েছ চাচা—তোমার আবার ভাবনা? মাকালী কোলে লিয়ে দুধ খাওয়াবে। পয়সা তুমি কী করবে?… ব্যাপারির লোকজন আছে। পয়সাকড়ি আছে। ইয়াকুব তা জেনেও খেপে ওর দুগাছা দাড়ি উপড়ে নিয়ে এক দৌড়ে পালিয়ে এসেছিল নিজের ‘থানে!’ ব্যাপারির লোকেরা ওকে তাড়া করে এলে চকচকে এই খাঁড়াটা নিয়ে ইয়াকুব খুব লম্ফঝম্প করে ভাগিয়ে দেয়। অবশ্য তারপর ঝামেলাটা আর এগোয়নি। এলাকার মেয়েগুলোকে এবেলাওবেলা পটাপট ভূতে ধরে। ইয়াকুব ছাড়া উপায় নেই। তাই ওদের রাগ পড়ে গেলেও ইয়াকুবের রাগটা সমানে জ্বলেছে। ইচ্ছে আছে, বাগে পেলে দানেশ ব্যাপারিকে মায়ের উদ্দেশ্যে বলি দেবে।

সুতরাং হেরু যা করতে চায়, করুক। ইয়াকুব লেলিয়ে দিতে ত্রুটি করবে না। এবং এইসব ভেবে কয়েকটা দিন তার মাথাটা গরম হয়ে রইল।

ক’রাত পরে হেরু ইয়াকুবের সামনে তার প্রতিশ্রুত সোনাদানা এনে হাজির করল। ইয়াকুব হতভম্ব হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে গনগনে চোখে তাকিয়ে রইল। মেঝেয় ঝকঝক করছিল লম্ফের আলোয় সেই সাতগেরস্থর ধন। রুদ্ধশ্বাসে সাধু চেঁচিয়ে উঠল—’এ কার সর্বনাশ করে এলি হেরু—’ ঠিক গোরাংবাবুর মতনই।

হেরু মিটিমিটি হেসে বলল, ‘অত খবরে তুমার কাজ কী হে? দিলাম, লুকিয়ে রাখো। সময় মতন ঝেড়ে আসবে—হয় কাটোয়া, লয় তো বর্ধমান। সাবোধান চাচা, বহরমপুরবাগে বেচতে যেয়ো না।’

কাতর ইয়াকুব বলল, ‘এ আমাকে সইবে না বাপ, সইবে না! আমার চোখ জ্বলে গেল রে! তুই লিয়ে যা, তোর পায়ে পড়ি হেরু।’

হেরু গোঁ ধরে বলে, ন্যাকা! সোনা দিয়ে কী হয় জানো না! তাই লোকের বাড়ি সওয়া পাঁচ আনা দরে ভূতের চিকিচ্ছে করে বেড়াও!

ইয়াকুব এবার বুক ফেটে কেঁদে ওঠে।…’আমাকে ক্ষ্যামা দে বাপ! আমার সব্বাঙ্গ হু হু করে জ্বলে গেল! হেরু, এগুলো তোর বউকে দেগে বরং—মাগি বড় কষ্টে আছে রে!’

অমনি হেরু তার জটা ধরে ফেলে। মাটিতে নামিয়ে আনে প্রকাণ্ড মাথাটা। হাঁসফাস করে বলে, ‘শালার বুজরুকি এবারে না ভাঙলে চলছে না। যেচে পড়ে দিতে চাইছি, আর আমাকে ধম্মোজ্ঞান শোনাচ্ছে! বল শালা, লিবি কি না লিবি?’

ইয়াকুবের ভর উঠে পড়েছে অমনি। প্রথমে তার দেহের নিচের দিকটা মাটিতে ঝটপট করতে থাকে। তারপর কী এক অমানুষিক শক্তিতে সে মাথা তোলে। হেরু ছিটকে পড়ে একপাশে। এমন হতভম্ব হয়ে পড়ে যে মুখে রাবাক্যি সরে না। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ইয়াকুব সাধুর কাণ্ড দ্যাখে। ইয়াকুবের মাথাটা প্রচণ্ড দুলচে চক্রাকারে। জটাগুলো সটসট করে আওয়াজ তুলছে। মুখে ফেনা জমেছে। সে গোঁ গোঁ করে বলছে কালীক্কালীক্কালী…. আর সেই সময় বাইরে শনশন করে হাওয়া এল ভরা গঙ্গার দিক থেকে। গাছপালাগুলো যেন গেঙিয়ে উঠল সঙ্গে সঙ্গে। ঝরঝর করে বৃষ্টি শুরু হল। ঘরের খড়ের চাল কাঁপতে লাগল; হেরুর মনে হল, চারপাশ থেকে কারা যেন ঘরটার ওপর ভীষণ চাপ দিচ্ছে। হেরুর বুক অমনি কেঁপে উঠল। সে কোণের দিকে সরে এসে বসল। ইয়াকুব অনর্গল কী সব বলে যাচ্ছে, বোঝা যায় না। হেরু কানখাড়া করে শোনা ও বোঝার চেষ্টা করল। ক্রমশ তার মনে হতে থাকল যে আজ রাতে যেখানে হানা দিয়ে এইসব সোনার গয়না সে এনেছে, সেখানে ঠিক যা যা ঘটেছে—খুঁটিনাটি বলে যাচ্ছে ইয়াকুব। এই ধারণা মাথায় ঢোকামাত্র হেরুর শরীর অবশ হয়ে গেল। সে নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে সাধুর দিকে।…

কতক্ষণ পরে ইয়াকুব শান্ত হয়। উপুড় হয়ে বেদিতে মাথা রেখে চুপচাপ পড়ে থাকে। তখন হেরু ডাকে, ‘চাচা, চাচা হে! ওহে সন্নেসীচাচা!’

ইয়াকুবের সাড়া নেই। হেরু আরও দুচারবার ডেকে আড়ষ্ট হাতে ভয়ে ভয়ে গয়নাগুলো গামছায় বেঁধে নেয়। তারপর বেরিয়ে যায়।

তার অনেক পরে ইয়াকুব ওঠে। লম্ফটা নিভে আসছে। বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। দরজা খোলা। সে গম্ভীরমুখে তাকায় দরজার দিকে। কী ঘটেছিল, স্মরণ করতে থাকে।

আর পরদিন সকালে রাঙির লাশটা দেখা যায় গঙ্গার একটা খোঁদলে! তার ছেলেটা ট্যা ট্যা করে কাঁদে শম্ভু ঘেটেলের ঘরে। রাজ্যের লোক এসে ভিড় করে। আর সেই ভিড় সরিয়ে হঠাৎ এগিয়ে আসে ইয়াকুব তান্ত্রিক। শম্ভুর দিকে লাল চোখে তাকিয়ে বলে, ‘আমাকে ছেলেটা দিবি ঘেটেলদাদা?’

শম্ভু চোখ কটমট করে বলে, ‘ক্যানে? বলি দিবি?’

‘না।’…লোভী চোখে ইয়াকুব তাকায় রাঙির ছেলের দিকে।…’না হে ঘেটেলদাদা, পুষব। তুই নৌকা নিয়ে বাইতে যাবি—তখন ইটাকে শ্যালে লিয়ে পালাবে। ‘তুই ছেলেটা আমায় দে।’

ভিড়ের হিন্দুমুসলমান একস্বরে বলে, ‘দিয়ে তাও—ভালো হবে।’