আজব সুর্মা ও বাঁদর পর্ব
মুর্শিদাবাদ পৌঁছতে রাত হয়েছিল। তখন খোঁজা গোরস্তানে যাওয়া নিরর্থক। কর্নেল আগেই নবাবী মহাফেজখানায় পুরনো দলিল আর বইপত্তর দেখার অনুমতি যোগাড় করে রেখেছিলেন। ট্রাস্টি বোর্ডের এক ভদ্রলোকের সাহায্যে সেই রাতেই তিনি মহাফেজখানায় গেলেন। বিশেষ ব্যবস্থা মতো মহাফেজখানার জিম্মাদার তার জন্যে অপেক্ষা করছিলেন। এই জিম্মাদার ভদ্রলোক নবাব বংশীয়। ঐতিহাসিক বিষয়ে মোটামুটি ওয়াকিবহাল। কর্নেল তাকে খোজা নবাব উপাধিধারীদের কোন রেকর্ড থাকলে দেখাতে অনুরোধ জানালেন। জিম্মাদার একটা কাঠের বিরাট বাকসো থেকে কতকগুলো মোটা কেতাব বের করলেন।
পাতা উল্টে কর্নেল দেখলেন, সবই উর্দু-ফারসিভাষায় লেখা। জিম্মাদারের সাহায্যে খোঁজা গোরস্তানে কার কার কবর আছে, নোট করার পর তিনি বললেন, কোন ইংরেজি কেতাব নেই? কিংবা কোন ইংরেজি দলিল-দস্তাবেজ?
জিম্মাদারের নাম নবাব মীর্জা আসমত খাঁ। বয়স প্রায় পঞ্চান্ন থেকে ষাটের মধ্যে। সাদা ঢিলে আচকান পরনে, চুড়িদার পাজামা, মাথায় গোল টুপি। খুব অমায়িক হাসি মুখে লেগে রয়েছে। শীর্ণতার দরুন একটু কুঁজো হয়ে কর্নেলের কথা শুনে মৃদু হেসে বললেন, আংরেজি! সায়েব, খোঁজা লোগোকো আমলমে আংরেজিকা কই জরুরৎ নেহি থা।
কর্নেল বললেন, ঠিক, ঠিক। কিন্তু মীর্জাসায়েব, খোজা নবাব জরজিশ বেন্নার কিছু ইতিহাস আমার যে চাই-ই।
মীর্জাসায়েব একটু ভেবে ভাঙা বাংলায় বললেন, যার গোর থেকে খাজানা। চুরি হোয়েসে?
জি হ্যাঁ, মীর্জাসায়েব!
আচ্ছা, আচ্ছা। হাম হুঁড়কে দেতা। ঠারিয়ে।..বলে মীর্জাসায়েব বাকসোর ভিতর ঝুঁকে কতকগুলো বই বের করলেন। ঘরে যে বাল্ব জ্বলছে, তার আলো প্রখর নয়। চোখের কাছে ধরে একটার পর একটা জীর্ণ পোকায় কাটা কেতাবগুলো তিনি দেখতে আর একপাশে রাখতে লাগলেন। কর্নেল তার পাশে দাঁড়িয়ে কৌতূহলী হয়ে লক্ষ্য করছিলেন।
সমস্ত বই দেখা হয়ে গেলে মীর্জাসায়েব চিন্তিত মুখে ভুরু কুঁচকে কয়েক মুহূর্ত কী যেন ভাবলেন। তারপর হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে কাকে ডাকলেন, ইউনুস! আবে ইউনুস আলি! ইধার আ জলদি।
বেয়ারার পোশাক পরা একটা ফো লোক দৌড়ে এল দরজার বাইরে থেকে। সেলাম দিয়ে বলল, বোলিয়ে নবাবসাব?
ইউনুস, আগলা মাহিনামে কালকাত্তাসে এক সাব আয়া, তেরা খ্যাল। হ্যায়?
জী হাঁ জরুর। তো উসকো সাথ এক ঔরৎভি থী। উও ঔরৎ বাহার মে বৈঠকী থী। ঘুমকর সব দেখ রহী থী। ঔর সাব কেতাব পড়তা।
মীর্জাসায়েব কর্নেলের দিকে তাকিয়ে উদ্বিগ্নমুখে যা বললেন, তার মোদ্দা। কথা এই :
গত মাসের মাঝামাঝি কলকাতা থেকে এক ভদ্রলোকে আসেন সস্ত্রীক। কীভাবে অনুমতি যোগাড় করে মহাফেজখানায় ঢোকেন। মীর্জা তাকে ঘুরে-ঘুরে যখন সব ঐতিহাসিক কেতাব আর দলিলপত্রের বিরাট সংগ্রহশালা দেখাচ্ছে, হঠাৎ ভদ্রলোক বলেন, খোজা নবাবদের সম্পর্কে তিনি একটি বই লিখছেন। কিছু উপকরণ দরকার। মীর্জাসায়েব যদি তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেন, সাধ্যমত বখশিশ দেবেন। বখশিশ কথাটা অপমানজনক। কিন্তু যে জামানা পড়েছে, প্রবল প্রতাপান্বিত শাসকবংশের এক হতভাগ্য সন্তান মীর্জাসায়েবকে মাত্র মাসিক ষাটটি টাকার চাকরি করতে হচ্ছে। বাড়িতে অনেক পুষ্যি। কেল্লাবাড়ির ভিতর বস্তিবাড়ির মতো একটা কুঁড়েঘরে ঠাসাঠাসি বাস করতে হচ্ছে। কী করা যায়। অগত্যা তিনি রাজি হন। প্রায় চারঘণ্টাব্যাপী সেই অথর ভদ্রলোককে তিনি খোঁজাদের সম্পর্কে অনেক ফারসী বই ঘেঁটে তথ্য অনুবাদ করে দেন। ভদ্রলোক বাঙালি–কিন্তু ইংরিজিতেই সব টুকছিলেন। বিকেল হয়ে যায়। তখন ভদ্রলোক চলে যান। তারপর কেতাব-দলিলপত্র বাকসে ভরে যথারীতি তালা আটকান মীর্জাসায়েব। তারপর আজ অব্দি খোলেননি। কিন্তু অবাক কাণ্ড, খোজা নবাব জরজিশ বেন্নার নিজের হাতে লেখা ফারসী। রোজনামচাটি গেল কোথায়? কেতাবটির মধ্যে চমৎকার কতকগুলো বয়েৎ বা পদ্য ছিল জরজিশ বেন্নার রচিত। কয়েকটা মুখেমুখে অনুবাদ করেছিলেন মীর্জাসায়েব। ভদ্রলোক তার ইংরেজি করে টুকছিলেন–মীর্জাসায়েব লক্ষ্য করছিলেন। মোটামুটি ইংরিজি জানেন বলে এসব টের পাচ্ছিলেন।
কর্নেলের মুখ গম্ভীর হয়ে উঠল। কিন্তু হঠাৎ সেই আগন্তুক ভদ্রলোক– তিনি যেই হোন, খোঁজাদের সম্পর্কে উৎসাহী হয়ে উঠলেন কেন? এও কি নিতান্ত আকস্মিক যোগাযোগ? যদি ধরা যায়, তার সঙ্গে খোঁজা জরজিশের কবরের গুপ্তধন চুরির বা পাহারাওলা দম্পতির হত্যার কোন যোগাযোগ থাকে–তাহলে প্রশ্ন ওঠে : খোঁজাদের কারো কবরে গুপ্তধন আছেই–এ তথ্য আগে না জানা থাকলে তিনি কেন মহাফেজখানায় দলিল খুঁজতে আসবেন? এবং সেটাই মূল প্রশ্ন : তিনি কীভাবে কার কাছে জানলেন যে ওখানে কবরে গুপ্তধন আছে?
কর্নেল বললেন, সেই ভদ্রলোকের নাম-ঠিকানা কোথায় পাব বলতে পারেন?
মীর্জাসায়েব ততক্ষণে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। তাঁর মুখের অমায়িক হাসিটি মিলিয়ে গেছে। চাপা গলায় আর্তস্বরে বললেন, সাব, আব ম্যায় ক্যা করু? মেরা নোকরি খা লেগা জরুর! বালবাচ্চাকো ক্যায়সে বাঁচাউঙ্গা হাম?
কর্নেল বললেন, মীর্জাসায়েব, আমার পরামর্শ শুনুন। কেতাব চুরির ব্যাপারটা আপনি এক্ষুনি পুলিশ আর ট্রাস্টি বোর্ডকে জানিয়ে দিন। আসুন, আপনাকে থানায় নিয়ে যাচ্ছি।
মীর্জাসায়েব খুব ভালো করে তালা আটকে কাঁপতে কাঁপতে কর্নেলের সঙ্গে বেরোলেন। তখন রাত প্রায় সাড়ে দশটা। থানার অফিসার-ইন-চার্জ মিঃ ভদ্র কর্নেলের পরিচিত। সেখানে মীর্জাসায়েবের ডায়েরি লেখানোর পর ভদ্রলোক মনমরা হয়ে চলে গেলেন। কর্নেল ফোন করলেন ট্রাস্টি বোর্ডের সেই ভদ্রলোকের বাড়িতে–যিনি মহাফেজখানায় যাবার অনুমতি দিয়েছিলেন।
ভদ্রলোক নবাববংশীয় কেউ নন। স্থানীয় মানুষ এবং মিউনিসিপ্যালিটির সদস্য। পেশায় উকিল। বাড়িতে ফোন থাকায় সুবিধে হয়েছিল যোগাযোগ করার। কর্নেল বললেন, হ্যালো মিঃ আচার্য! নমস্কার। এইমাত্র মহাফেজখানা থেকে ফিরলুম।
কোন সূত্র পেলেন স্যার?
সামান্য। আচ্ছা মিঃ আচার্য, গত মাসের মাঝামাঝি কাকেও কি মহাফেজখানা দর্শনের অনুমতিপত্র দিয়েছিলেন?
একটু ভেবে মিঃ অবনী আচার্য বললেন, কাকে যেন দিয়েছিলুম। খাতাপত্র না দেখে বলা মুশকিল স্যার। বুঝতেই পারছেন–সবসময় মামলা আইন-কানুন। নিয়ে এত ব্যস্ত থাকতে হয়। অবশ্য মহাফেজখানার অনুমতি সচরাচর আমরা কাকেও দিই না। তবে ব্যতিক্রম অর্থাৎ স্পেশাল কেস সবক্ষেত্রেই থাকে। কর্নেল, প্লিজ–একমিনিট। ধরে থাকুন।
একটু পরে মিঃ আচার্য বললেন, পেয়েছি। দিয়েছিলুম। নাম শুনলেই চিনতে পারবেন স্যার। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ডঃ দীননাথ হোড়। নবাবী আমলের বাংলার ইতিহাস নতুন করে লেখার জন্যে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সংস্থা ওঁকে দায়িত্ব দিয়েছেন। সে-সব কাগজপত্র অবশ্য উনি সঙ্গে এনেছিলেন। জনৈক মন্ত্রীর সুপারিশও ছিল। তবে ওঁর মতো প্রখ্যাত পণ্ডিত ব্যক্তির কাছে ওসব আমি খুঁটিয়ে দেখার দরকার মনে করিনি–জাস্ট অ্যাট এ গ্ল্যান্স দেখেছিলুম। কিন্তু কেন একথা জানতে চাইছেন কর্নেল?
খোজা নবাব জরজিশ বেন্নার রোজনামচা অর্থাৎ ডাইরিটি চুরি গেছে।
সে কী! সে কী!
শুনুন প্লিজ! এর জন্যে হঠাৎ বেচারা জিম্মাদারের ওপর ক্রুদ্ধ হবেন না। সম্ভবত ব্যাপারটা ওঁর অজান্তে ঘটেছে।
কী সর্বনাশ!
মীর্জাসায়েব কেমন লোক, মিঃ আচার্য?
ভেরি ভেরি অনেস্ট অ্যান্ড জেন্টলম্যান। ধর্মভীরু। খুব সিনসিয়ার প্রকৃতির।
অ্যান্ড এ ভেরি সিম্পল ম্যান। ওঁর সরলতার সুযোগ নিয়েছে কেউ।
কে নিতে পারে সুযোগ? আর কাকেও তো অনুমতি দেওয়া হয়নি। আর মহাফেজখানায় যাবার একটিমাত্র পথ। সে-পথে তিন জায়গায় তিনটি রীতিমতো অফিস পেরিয়ে অর্থাৎ তিনটি জায়গায় একাধিক লোকের চেকিং-এর পর, ঢুকতে দেওয়া হয়। তা আশা করি লক্ষ্য করেছেন।
না। কারণ, আমি অসময়ে গেছি। তখন তিনটি অফিসেই কেউ ছিল না।
স্যরি। তাই তো। আমার ভুলো মন স্যার। আইন আমাকে খেল!
মিঃ আচার্য, আগে কখনও ডঃ দীননাথ হোড়কে আপনি দেখেছিলেন?
না তো! না না হ্যাঁ, দেখেছিলুম। খবরের কাগজের ছবিতে।
চেহারাটা মনে ছিল?
আবছা ছিল।
সেই ভদ্রলোককে ডঃ হোড় মনে হয়েছিল কি?
দেখুন কর্নেল, খুব মিলিয়ে অবশ্য দেখার কথা ভাবিনি। কারণ, ওইসব কাগজপত্র, সুপারিশ ওঁর সঙ্গে ছিল। তাছাড়া, উনি নিজে পরিচয় দিলেন যখন–আর অবিশ্বাস করার মতো অভদ্রতা আমার মাথায় আসেনি। স্যার, আফটার অল…আমি তো পুলিস নই যে সব সময় সন্দেহ রাখব মনে!
কিন্তু আপনি আইনের কারবারী।
স্যার, সব সময় আইন নিয়ে থাকা কি..।
কিন্তু আপনি বলছিলেন, আইন আপনাকে খেল!
কর্নেল, আপনি আশা করি রসিকতাই করছেন?
মিঃ আচার্য, আপনি, মহাফেজখানার মতো একটা ভীষণ মূল্যবান জায়গার অনুমতিপত্র দেবার অধিকারী। আপনার সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।
কেন স্যার? কেন স্যার?
ডঃ হোড় কি একা ছিলেন?
না–সস্ত্রীক!
ডঃ হোড়ের স্ত্রীর বয়স অনুমান করতে পারেন?
স্ত্রীলোকের বয়স অনুমান করা কি আমার পক্ষে সম্ভব কর্নেল? তা–ত্রিশ বত্রিশ হতে পারে–এইটুকুই বলা যায়।
চেহারার বর্ণনা দিতে পারেন?
ছিপছিপে গড়ন–বেশ সুন্দরীই বটে। চোখে চশমা ছিল। বৃদ্ধস্য তরুণী ভার্যা হলে যা হয়–খুব চঞ্চল আর সৌখিন মনে হচ্ছিল।
ঠিক আছে। বিরক্ত করার জন্যে কিছু মনে করবেন না আশা করি।
কী যে বলেন স্যার। আমি সামান্য জনসেবক মাত্র।
মিঃ ভদ্রর দিকে তাকিয়ে কর্নেল ফোন রেখে বললেন, ডঃ দীননাথ হোড় তিনমাস আগে রাশিয়া গেছে। বিশ্ব-ঐতিহাসিকদের একটা সেমিনার উপলক্ষে। এখন উনি ইংলন্ডে আছেন। এরপর ফের রাশিয়া হয়ে সামনে সেপ্টেম্বরের শেষে ফেরার কথা।
কী কাণ্ড! মিঃ ভদ্র বললেন।–তাহলে সেই ভদ্রলোক জাল পণ্ডিত?
ঠিক তাই।
কিন্তু তিনিই বা খোঁজাদের ব্যাপারে উৎসাহী হলেন কেন? কোত্থেকে জানলেন যে…
কর্নেল বাধা দিয়ে বললেন, সে প্রশ্নই তো আমার মূল প্রশ্ন। অন্তত খোঁজা গোরস্তানে কোন কবরে গুপ্তধন আছে, এ খবর কীভাবে সে পেল?
আচ্ছা কর্নেল, ইয়াকুব খান পাহারাওলা পুরুষানুক্রমে ওখানে বাস করছিল। ধরুন, এমনও হতে পারে–এ বিষয়ে সে কিছু জানত।
কর্নেল হাসলেন। কিন্তু তার কাছে আর কোন খবর তো জানা যাচ্ছে না। এমন কি তার বিবির কাছেও না।
সেই সময় ফোন বেজে উঠল। মিঃ ভদ্র ফোনটা ধরে বেশ জোরে কথা বলছিলেন–হ্যালো! হা-মুর্শিদাবাদ কোতয়ালি। কে? জয়ন্তবাবু? আমি ভদ্র বলছি। না–গুপ্ত বহরমপুরে আছেন–সকালে আসবেন। কর্নেল? হ্যাঁ–আছেন। এখানেই আছেন। যা বাবাঃ! বলছি প্যালেস হোটেলে নয়–এখানেই আছেন। দিচ্ছি।
কর্নেলের দিকে ফোনটা এগিয়ে মিঃ ভদ্র বললেন, লালবাজার থেকে ট্রাঙ্ককল। জয়ন্ত চ্যাটার্জি।
কর্নেল ফোন ধরে বললেন, হ্যালো জয়ন্ত। হঠাৎ কী ব্যাপার?
প্যালেস হোটেলে একবার চেষ্টা করেছি ঘণ্টাখানেক আগে। ম্যানেজার বলল, এসেই বেরিয়েছেন। একবার ভাবলুম ভদ্রর কাছে একটা রেডিও মেসেজ পাঠিয়ে দিই–পরে ট্রাঙ্ককলই করে ফেললুম।
বেশ করেছ, বলো।
সোমনাথ ভট্টের গাড়ি নিয়ে সমস্যায় পড়া গেছে।
তার মানে?
সোমনাথ ভট্ট আজ পুলিসে জানিয়েছেন–তাঁর গাড়িটা গ্যারেজে আটকে রেখে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে পাচ্ছেন না।
সে কী! তিনি গাড়ি নিয়ে যাননি সঙ্গে?
না। একা গিয়েছিলেন প্রতাপগড়ে লোকেশন দেখতে।
কী আপদ! প্রতাপগড়? আমি যেখানে যাচ্ছিলুম?
আজ্ঞে হ্যাঁ। কিন্তু তার চেয়ে যেটা জরুরী খবর, সেটা এবার শুনুন। সোমনাথবাবু প্রতাপগড় যান তেরই জুলাই–দা আনলাকি থারটিন। গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওখানে এক আত্মীয়বাড়ি ছিলেন বরাবর। ফিরেছেন চব্বিশে জুলাই-আজ সন্ধ্যায়।
বলো কী।
যে সোমনাথ ভট্ট মুর্শিদাবাদ যান, তিনি জাল সোমনাথ।
আমরা এখানে আরেক জাল ডঃ দীননাথ হোড়ের খবর পেলুম। তিনি নবাবী মহাফেজখানার একখানি কেতাব হাতিয়েছেন। ডিটেল্স পরে বলবখন। এখন তোমার সোমনাথ ভট্টের খবর বলো।
আসল মিঃ ভট্ট পার্ক স্ট্রিটের বাসিন্দা নন। থাকেন হীরেন বোস রোডে। ফ্ল্যাটের নিচের তলায় গ্যারেজ আছে। গাড়ি আটকে রেখে গিয়েছিলেন। কাকেও কিছু বলে যাননি গাড়ির ব্যাপারে। বাড়িতে কোন দরোয়ানও নেই। নিচের তলায় গ্যারেজের পাশে একটা ঘরে একটি গরিব অ্যাংলো পরিবার থাকে। পুরনো ভাড়াটে। বাড়িটা যখন একতলা ছিল, তখন থেকেই তারা আছে। বাড়িওলা তাড়াতে না পেরে তাদের ওপর একটা দায়িত্ব চাপিয়ে রেখেছে। সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা তিনবার করে পাম্প চালিয়ে ছাদের ট্যাঙ্কে জল তোলবার। গ্যারেজ আছে চারটে! চারটেতেই গাড়ি থাকে। অদ্ভুত ব্যাপার। চারটে গাড়িরই কোন ড্রাইভার নেই। মালিকরা নিজেরা চালান। অ্যাংলো ভদ্রলোককে কেউ কেউ বলেন অবশ্য রাত্রে গ্যারেজগুলো লক্ষ্য রাখার জন্যে। কিন্তু তার দায় কিসের? সে বেদম মদ খেয়ে বউ ঠ্যাঙায়। তারপর দুজনে কান্নাকাটি করে ঘুমোয়। এসব গরিব ফ্যামিলিতে যা হয়ে থাকে।
তারপর?
অ্যাংলো ভদ্রলোক আর তার বউ বলে, ষোল জুলাই সন্ধ্যা অব্দি গাড়িটা তারা দেখেছিল। তারপর আর দ্যাখেনি। ভেবেছিল মিঃ ভট্ট ফিরে এসে নিয়ে গেছেন কোথাও। মাঝে মাঝে উনি কিছুদিন ধরে গাড়ি নিয়ে বাইরে কাটান– ওরা দেখেছে। অন্য ফ্ল্যাটেরও সবাই দেখেছে। তাই কারো মনে কোন সন্দেহ হয়নি।
জাল ভট্টসায়েব কলকাতা ফেরেন কবে? কখন?
উনিশে জুলাই সকালবেলা। মুর্শিদাবাদ থানা থেকে ওঁদের জেরা করে ছাড়তে রাত দশটা বেজে গিয়েছিল। গাড়িতে শান্ত, সায়ন্তন, শ্রীলেখা আর। স্মিতা ছিলেন। ওদের সবাইকে শ্যামবাজার মোড়ে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।
শান্তর সঙ্গে আবার জাল ভট্টর দেখা হয়েছিল, তুমি জানো?
একটু আগে শান্তর কাছে গিয়েছিলুম। শুনলুম।
গাড়িটার জন্যে তোমরা নিশ্চয় সবখানে লক্ষ্য রেখেছ?
তা আর বলতে?
ঠিক আছে জয়ন্ত। ছাড়ছি। সময় মতো ডেভেলপমেন্টগুলো জানিও। আপাতত–আমি অবশ্য পাহারাওলা দম্পতির মৃত্যুর কারণ খুঁজতে একটু ব্যস্ত থাকব। উইশ ইউ গুড লাক। ছাড়লুম।…
.
সকালে কর্নেল মিঃ ভদ্রকে নিয়ে পায়ে হেঁটে শহর ছাড়িয়ে একটা বড় রাস্তায় পৌঁছলেন। খোঁজা গোরস্তান মোটামুটি তার পরিচিত জায়গা। পাহারাওলা দম্পতির মৃত্যুর পর ট্রাস্টি বোর্ড এবং পুলিসের কড়া পাহারা মোতায়েন করা হয়েছে। আর কোন্ কবরে যে গুপ্তধন নেই, তা কে বলতে পারে? কর্নেল পৌঁছে দেখলেন বাইরের ছোট্ট মাঠে একটা সশস্ত্র পুলিসবাহিনীর তাঁবু পড়েছে। ফটকের কাছে দুজন দরোয়ান, আর দুজন কনস্টেবল পাহারা দিচ্ছে। মিঃ ভদ্রর হুকুমে ওরা গেট খুলে দিল।
কর্নেল প্রথমে গেলেন সেই গুপ্তধনের কবরটার কাছে। কবরটায় আবার পাথরের কবাট চাপা দেওয়া হয়েছে। ফাটলগুলো সিমেন্ট দিয়ে মেরামত করাও হয়েছে। খোজা নবাব জরজিশ বেন্নার ফারসি অক্ষরে পরিচিত লেখা ফলকটা রয়েছে যথাস্থানে। কর্নেল খুঁটিয়ে কবরের চারপাশে লক্ষ্য করলেন। কিন্তু তেমন কিছু নজরে এল না। বললেন, মিঃ ভদ্র, ইয়াকুব খাঁ কোথায় মরে পড়েছিল– সেই জায়গাটা একটু দেখতে চাই।
মিঃ ভদ্র বেন্নার কবর থেকে প্রায় পাঁচ মিটার দক্ষিণে একটি কবরের কাছে এসে বললেন, এখানে।
কর্নেল সেখানে বসে পড়লেন। এ কবরটা সাদা পাথরের। মাথার কাছে যথারীতি ফরাসি লিপিতে মৃতের পরিচয় রয়েছে। হঠাৎ কর্নেলের চোখে পড়ল, কবরের মাথার দিকে স্ক্রিপ্টটার তলায় একটা ঢ্যারা চিহ্ন রয়েছে। খুব ছোট্ট চিহ্ন। সহজে চোখে পড়ে না। কোন ছুঁচলো জিনিস দিয়ে চিহ্নটা খোদাই করা হয়েছে।
কর্নেল মিঃ ভদ্রকে কিছু বললেন না সে সম্পর্কে। গতরাত্রে মহাফেজ খানায় গিয়ে জিম্মাদারের কাছে কবর ও মৃত খোঁজাদের বিষয়ে যে নোট নিয়েছিলেন, পকেট থেকে বের করে মিলিয়ে দেখলেন। পরক্ষণে অবাক হয়ে গেলেন। তৃতীয় সারির এই চতুর্থ কবরটি খোজা নবাব দ্বিতীয় জরজিশ বেন্নার!
তার মনে পড়ল, ইয়াকুব খাঁর পাশে একটা শাবল পড়েছিল। তাহলে কি সে-রাতে ইয়াকুব নিজেই দ্বিতীয় জরজিশ বেন্নার কবর খুঁড়তে এসেছিল? কবরের খাঁজে খাঁজে প্রচুর শ্যাওলা আর আবর্জনা জমে রয়েছে। কর্নেল সেগুলো সরাতেই তার অনুমান সঠিক প্রমাণিত হল। এক জায়গায় শক্ত পাথরের জোড়ের মুখে শাবলের দাঁতের দাগ খুব স্পষ্ট।
মিঃ ভদ্র সেটা দেখতে পেয়ে শুধু বললেন, আরে, কী কাণ্ড!
কর্নেল চিন্তিত মুখে বললেন, সম্ভবত ইয়াকুব খাঁ এই কবর খুঁড়তে এসেই কিছু ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে হার্টফেল করে। মর্গের রিপোর্ট যদি নির্ভুল হয়, তাহলে এই সিদ্ধান্তই সঠিক বলে গণ্য করা যেতে পারে। কিন্তু আজীবন যে কবরখানায় কাটিয়েছে, সে এমন কী দেখে ভয় পেতে পারে? যাক গে, চলুন–এবার সিতারা বিবি যেখানে পড়ে ছিল সে জায়গাটা দেখি।
সিতারা পড়েছিল দক্ষিণের দালানটার খুব কাছে। শেষ তিনটি কবরের মাঝামাঝি জায়গায়। কর্নেল খুব খুঁটিয়ে দেখলেন। কিন্তু তেমন কিছু খুঁজে পেলেন না।
এবার দুজনে ইয়াকুব খাঁর ঘরে গেলেন। ঘরে জিনিসপত্র বিশেষ কিছু নেই– কিছু হাঁড়ি ও বাসনপত্র, বাঁশের আলনায় কিছু কাপড়-চোপড়, খাঁটিয়ার নিচে একটা তোরঙ্গ। পুলিস সব সেদিনই তন্ন তন্ন খুঁজে দেখেছে কিছু সূত্র যদি মেলে, পায়নি। তারপর সিল দিয়ে তালা আটকে দেওয়া হয়েছে গোয়েন্দা অফিসার মিঃ গুপ্তর নির্দেশে। কর্নেল প্রত্যেকটি জিনিস খুঁটিয়ে দেখলেন। তারপর বললেন, ইয়াকুব বা তার বউয়ের এসব জিনিসপত্র কেউ দাবি করতে আসেনি?
মিঃ ভদ্র বললেন, একজন দরখাস্ত করেছে। সিতারার দাদা। সে লোকটা আবার নবাববংশীয়। ভীষণ গরিব। হেকিমি চিকিৎসা করে সংসার চালায়। থাকে আস্তাবল এলাকার একটা বস্তিতে। আমরা তদন্ত শেষ না হলে জিনিসগুলো ওকে দিতে পারব না–জানিয়ে দিয়েছি।
কর্নেল অন্যমনস্কভাবে একটা তাকে শিশি-বোতলগুলো দেখছিলেন। একটা সুরমাদানি তুলে নিয়ে বললেন, খান্দানি মুসলিমদের মধ্যে এখনও চোখে সুরমা লাগানোর রেওয়াজ প্রচুর। লক্ষ্ণৌ অঞ্চলে দেখেছি। এরাও লাগাতে দেখছি!
মিঃ ভদ্র হেসে বললেন, হ্যাঁ। ইয়াকুব আর তার বউয়ের চোখেও সুরমা দেওয়া ছিল। মর্গের রিপোর্টে উল্লেখ আছে, নিশ্চয় দেখেছেন?
দেখেছি। আমি জানি, অনেকে শুতে যাবার আগে চোখে পুরু করে সুরমা লাগিয়ে নেয়। এতে নাকি সুনিদ্রা হয়। আমার এক মুসলিম বাবুর্চি ছিল। তাকে তো প্রতিরাতে শোবার সময় দেখতুম, বিছানায় বসে আয়না নিয়ে চোখে সুরমা লাগাচ্ছে!
কর্নেল একটু হেসে সুর্মাদানিটা পকেটে ভরে নিলেন। তারপর কাঞ্চনফুলের গাছটার দিকে চললেন। মিঃ ভদ্র সকৌতুকে বললেন, কর্নেল কি সুরমা লাগাবেন চোখে!
কর্নেল গম্ভীর মুখে বললেন, আমার সুনিদ্রার খুব দরকার।
গাছটার তলায় একদিকে কবর, অন্যদিকে মাটির চত্বর। কাদায় গাড়ির চাকার দাগ রয়েছে। কর্নেল সেখানটা লক্ষ্য করছিলেন। হঠাৎ মুখ তুলে বললেন, আচ্ছা মিঃ ভদ্র, এদিকে ভীষণ বাঁদরের উপদ্রব আছে–তাই না?
মিঃ ভদ্র বললেন, না বাঁদর কোথায়? হনুমান। প্রচুর হনুমান দেখতে পাওয়া যায় এ অঞ্চলে। কেন স্যার?
কর্নেল এক জায়গার মাটি লক্ষ্য করে বললেন, ওগুলো কি হনুমানের পায়ের দাগ?
মিঃ ভদ্র কয়েকমুহূর্ত দেখার পর বললেন, হ্যাঁ–সেই রকমই? মনে হচ্ছে।
কর্নেল হেসে উঠলেন। কিন্তু কোন কথা বললেন না।
মিঃ ভদ্র কৌতূহলী হয়ে বললেন, হঠাৎ হাসলেন যে কর্নেল?
শান্ত নামে সেই ছেলেটির কথা মনে পড়ল।
কী কথা বলুন তো?
তার মাথায় নাকি অনেক পোষা বাঁদর আছে। মাঝে মাঝে ছেড়ে দিয়ে মজা উপভোগ করে সে। সতেরই জুলাই রাতে ও সেগুলো এই গোরস্তানে ছেড়ে দিয়েছিল অন্ধকারে। বুঝুন কাণ্ড।
মিঃ ভদ্র বিস্মিত হয়ে বললেন, অদ্ভুত তো?
হ্যাঁ–শান্ত ছেলেটিই আসলে অদ্ভুত! আমার ধারণা ও এখনও অনেক কথা আমাদের বলেনি–যা আমাদের ভীষণ কাজে লাগতে পারে।
তাহলে তো ওকে ফের…
কর্নেল হাত তুলে বললেন, আমি ওকে আসতে বলে এসেছি। আজ বিকেলের ট্রেনেই এসে পড়বে।
আরো কিছুক্ষণ দেখাশোনা করে দুজনে বেরোলেন। বাইরে এসে কর্নেল বললেন, এবার আপনি নিজের জায়গায় এগোন মিঃ ভদ্র। আমি একটা রিকশা করে একটা বিশেষ জায়গায় যেতে চাই।
মিঃ ভদ্র জিপ আনেননি। বড়রাস্তায় গিয়ে দুজনে দুটো আলাদা রাস্তায় বাঁক নিয়ে শহরে ঢুকলেন।
কর্নেল গেলেন আস্তাবল নামক বস্তি এলাকায়। আগে ওখানে বাংলা বিহার-ওড়িশার শাসনকর্তাদের বিশাল ঘোড়াশালা ছিল। এখন কোথাও-কোথাও দুএকটা পাঁচিল দাঁড়িয়ে আছে মাত্র। অজস্র খোলার ঘর গড়ে উঠেছে। খোট্টাই উর্দুভাষীরা ওখানে বাস করে। অনেক খুঁজে সিতারা বিবির সেই হেকিম ভাইয়ের বাড়ি পাওয়া গেল। বাড়িটার দেয়াল মাটির। একটা ছোট্ট ঘরের মাথায় সাইনবোর্ড রয়েছে। ভিতরে তাকে ও তক্তাপোশে অজস্র হেকিমি ওষুধের শিশিবোতল আর বয়েম। ছেঁড়া-খোঁড়া একটা খুব পুরনো গালিচার ওপর বসে এক দাড়িওলা জোব্বাধারী ভদ্রলোক আলবোলায় ধূমপান করছিলেন। কর্নেলকে দেখে সসম্ভ্রমে উঠে দাঁড়ালেন। কর্নেল দুহাত সামনে ছড়িয়ে একটু ঝুঁকে (নবাব বংশের ব্যক্তিবর্গের প্রতি যে রীতিতে কুর্নিশ জানাতে হয়) সেলাম করে চোস্ত উর্দুতে বললেন, হুজুর নবাবসায়েবের দরবারে বান্দা এক আজব ব্যাধির চিকিৎসার জন্যে সুদূর কলকাতা থেকে হাজির হয়েছে।
হেকিম বিনয়ে গলে বললেন, আসন গ্রহণ করুন, জনাব।
ভ্যাপসা কুচ্ছিত গন্ধের সঙ্গে তামাকের সুগন্ধ অস্বস্তির সৃষ্টি করছিল।
কর্নেল বললেন, একদিন হুজুর নবাববংশীয়দের সামনে ইংরেজরাও কেঁচো হয়ে থাকত। আজ নাফরমান যুগের পাপী বেমারিতে সব সৌভাগ্য কবরে চলে গেছে। তাহলেও মানীর ইজ্জত কখনও নষ্ট হবার নয়। সে হল কিনা হীরেমোতির জেল্লা। অন্ধকারেও জ্বলজ্বল করে।
হেকিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ঠিকই বলেছেন জনাব। আপনি পণ্ডিত ব্যক্তি।
ইত্যাদি প্রচুর কথাবার্তার পর কর্নেল বললেন, আমার এক ভাই কিছুদিন আগে আপনার কাছে এসেছিল। সঙ্গে তার স্ত্রীও ছিল। নিশ্চয় মনে আছে হুজুর হেকিমসায়েবের–তো, তাদের মুখে আপনার গুণপনা শুনে আমি আসতে বাধ্য হলুম। আমার একেবারে ঘুম হয় না। রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে খুব অশান্তি আর হজমের গোলমাল হয়। শুনলুম আপনার কাছে কী সুর্মা পাওয়া যায়…
পলকে হেকিমসায়েবের মুখের ভাব বদলে গেল। সাপের মত ফোঁস করে ফণা তুললেন!…কৌন বোলা? কে বলেছে আপনাকে? ইয়ে বিলকুল ঝুট বাত। এরকম কোন সুর্মা আমি বানাই না। এক্ষুনি চলে যান আপনি। দিগির আর জায়গা পাননি?
কর্নেল হতভম্ব হবার ভান করে তক্ষুনি কেটে পড়লেন। দ্রুত একটা রিকশা চেপে থানার দিকে এগোলেন। ঠিক এই প্রতিক্রিয়াই আশা করেছিলেন সিতারার দাদার কাছে। কর্নেলের অনুমানে ভুল হয়নি।
মিঃ ভদ্র আর মিঃ গুপ্ত থানায় গল্প করছিলেন। কর্নেল হেকিমের ব্যাপারটা বলার পর শেষে বললেন, ডঃ ফিরোলভের একটা বই পড়েছিলুম। তার নাম দেশে দেশে প্রাচীন চিকিৎসাপদ্ধতি। সেখানে এক সুরমার কথা ছিল। মধ্যপ্রাচ্যের হেকিমরা এই সুরমা বানাতে জানতেন। কতকটা সাম্প্রতিক এল এস ডির মতো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করত। হ্যালুসিনেশান দেখা যেত। দৃষ্ট বস্তুর আয়তন অসম্ভব বেড়ে গেছে দেখতে পেত সুর্মা ব্যবহারকারী। আমার ধারণা, ইয়াকুব ও তার বউয়ের মৃত্যুর কারণ এই সুর্মা। কিন্তু নিছক হ্যালুসিনেশান দেখে কেউ মারা পড়েছে, এটা নির্ভর করে তার মানসিক অবস্থার ওপর। যাই হোক, আরো কিছু প্রমাণ আমার দরকার। আমি এখন শান্তর জন্যে অপেক্ষা করছি।
মিঃ গুপ্ত বললেন, রঞ্জিতবাবু একটু আগে রেডিও মেসেজ পাঠিয়েছেন। মিঃ সোমনাথ ভট্টের গাড়িটা পাওয়া গেছে বি টি রোডের ধারে। গাড়ির পিছনের খোলে বাঁদরজাতীয় জীবের কিছু লোম পাওয়া গেছে। সেটাই আশ্চর্য।
মিঃ ভদ্রের দিকে তাকিয়ে কর্নেল বললেন, কী মনে হচ্ছে, মিঃ ভদ্র?
ব্রিলিয়ান্ট স্যার।
এখন শুধু শান্তর পথ চাওয়া ছাড়া আমার আর কিছু করার নেই। বলে কর্নেল ঘড়ি দেখলেন। তারপর চুরুট ধরালেন।