যাবতীয় ধনপণে যুধিষ্ঠিরের পরাজয়
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “হে শকুনে! তুমি কেবল ক্রীড়া দ্বারা আমার নিকট জয় প্রাপ্ত হইলে। আইস, পরস্পর পণপূর্ব্বক ক্রীড়া করিতেছি; আমার এক লক্ষ অষ্ট সহস্ৰ সুবর্ণপরিত কুণ্ডী, অক্ষয় কোষ ও রাশীকৃত হিরণ্য আছে, তাহাই আমার পণ রহিল।”
শকুনি ‘আমি ত’ এই জিতিলাম’ বলিয়া অক্ষবিক্ষেপ করিলে তাহারই জয় হইল।
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “যে সকল রথ আমাদিগকে বহন করিয়াছে এবং কুমুদের ন্যায় কান্তিবিশিষ্ট রাষ্ট্রসম্মত অষ্ট অশ্ব যাহা বহন করে, সেই ব্যাঘ্রচর্ম্মাবৃত, সুচক্ৰশোভিত, কিঙ্কিণীজালজড়িত, মেঘসাগরনিঃস্বন, জয়শীল, সহস্র রাজরথ আমার পণ রহিল।”
শকুনি যুধিষ্ঠিরের বাক্য শ্রবণানন্তর ‘এই জিতিলাম’ বলিয়া ছলপূর্ব্বক অক্ষবিক্ষেপ করিবামাত্র তাঁহারই জয় হইল।
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “আমার শত সহস্র তরুণী দাসী আছে, তাহারা নানাপ্রকার সুবৰ্ণালঙ্কারে ও অপূর্ব্ব মাল্যদানে বিভূষিত, নৃত্যগীতাদি চতুঃষষ্টি কলায় সুশিক্ষিত, সেবাকুশল ও আজ্ঞানুবর্তিনী হে রাজন্! আমি এইবার সেই সকল দাসীরূপ ধন পণ করিলাম।”
শকুনি যুধিষ্ঠিরের বাক্যশ্রবণানন্তর ‘এই জিতিলাম’ বলিয়া ছলপূর্ব্বক অক্ষবিক্ষেপ করিলে তাঁহারই জয় হইল।
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “আমার সহস্র দাস আছে, তাহারা প্রাজ্ঞ মেধাবী, দান্ত, যুবা এবং দিবারাত্রি অতিথিভোজন করাইতে সমর্থ; হে রাজন্! এইবার আমার সেই দাসরূপ ধন পণ হইল।”
শকুনি যুধিষ্ঠিরের বাক্যশ্রবণানন্তর ‘এই জিতিলাম’ বলিয়া ছলপূর্ব্বক আক্ষবিক্ষেপ করিবামাত্র সৌবলেরই জয় হইল।
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “হে সৌবল! আমার সহস্ৰ মত্ত মাতঙ্গ আছে, তাহারা অতীব দান্ত, দীর্ঘকায়, রাজবহনোচিত, রণপরিচিত ও সুবর্ণালঙ্কৃত, তাহাদিগের মস্তক, কুসুমমালায় সুশোভিত, দন্ত সুদীর্ঘ বর্ণ নবীন মেঘের সদৃশ এবং সকলেই পুরভেদ করিতে পরাগ। হে রাজন্! আমি এইবার সেই সকল গজরূপ ধন পণ করিলাম।”
শকুনি যুধিষ্ঠিরের বাক্যশ্রবণানন্তর হাসিতে হাসিতে ‘এই জিতিলাম’ বলিয়া ছলপূর্ব্বক অক্ষবিক্ষেপ করিলে তাঁহারই জয় হইল।
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “আমার যে সমস্ত হেমদণ্ড পতাকাশোভিত, বিনীতা-অশ্বসংযোজিত, যোধোপবিষ্ট, বিচিত্র রথ ও রথী আছে, সেই সকল রথীরা যুদ্ধ করুক বা নাই করুক, প্রত্যেকে মাসিক সহস্ৰ মুদ্রা বেতন প্রাপ্ত হইয়া থাকে, হে রাজন। এইসব আমার সেই ধন পণ রহিল।”
যুধিষ্ঠির এইরূপ কহিলে কৃতবৈর দূরাত্মা শকুনি ‘এই জিতিলাম’ বলিয়া ছলপূর্ব্বক আক্ষবিক্ষেপ করিবামাত্র সুবলনন্দনেরই জয় হইল।
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “গন্ধর্ব্বরাজ চিত্ররথ যুদ্ধে পরাভূত হইয়া প্রীতিপূর্ব্বক অর্জ্জুনকে যে সকল উৎকৃষ্ট ঘোটক প্রদান করিয়াছিলেন, এইবার সেই সকল আমার পণস্বরূপ।”
শকুনি যুধিষ্ঠিরের বাক্যশ্রবণানন্তর ‘এই জিতিলাম’ বলিয়া ছলপূর্ব্বক অক্ষবিক্ষেপ করিবামাত্র তাঁহারই জয় হইল।
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “আমার নানাপ্রকার বাহনসংযুক্ত অযুত শকট ও রথ রহিয়াছে এবং মহাবল পরাক্রান্ত বিপুলবাক্ষাঃ ষষ্টিসহস্ৰ বীরপুরুষ রহিয়াছে, হে রাজন্! আমি তৎসমুদয় পণ রাখিলাম।”
শকুনি যুধিষ্ঠিরের বাক্য শ্রবণানন্তর ‘এই জিতিলাম’ বলিয়া ছলপূর্ব্বক অক্ষবিক্ষেপ করিলে তাঁহারই জয় হইল।
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “হে সৌবল! তাম্রপাত্র ও লৌহপাত্ৰপরিবৃত চারি শত নিধি এবং পঞ্চােদ্রাণিক সুবর্ণ আছে, এবার তাহাই আমার পণ্য হইল।”
শকুনি যুধিষ্ঠিরের বাক্যশ্রবণানন্তর ‘এই জিতিলাম’ বলিয়া ছলপূর্ব্বক অক্ষবিক্ষেপ করিবামাত্র শকুনিরই জয় হইল।