শিরে পঞ্চঝুঁটি রাম বিষ্ণু-অবতার।
মুগ্ধ হইলেন মুনি রূপেতে তাঁহার।।
পূর্ণিমার চন্দ্র যেন উদয় আকাশে।
মুনি বলিলেন রাম চল মোর দেশে।।
জানিলেন মহারাজ রামের গমন।
লক্ষ্মণ সহিত রামে করেন অর্পণ।।
বলিলেন বিশ্বামিত্র রাজার গোচর।
রাম লাগি চিন্তা না করিহ নরেশ্বর।।
তুমি নাহি জানহ রামের গুণলেশ।
রাক্ষস বধিতে অবতীর্ণ হৃষীকেশ।।
শ্রীরাম লক্ষ্মণে লয়ে আমি দেশে যাই।
স্থির হও মহারাজ কোন চিন্তা নাই।।
রাজারে কহিয়া এই প্রবোধ বচন।
মুনি বলিলেন চল শ্রীরাম লক্ষ্মণ।।
শ্রীরাম বলেন মুনি যদি বল তুমি।
মাতৃস্থানে বিদায় লইয়া আসি আমি।।
মায়ে না কহিয়া যাব মিথিলা-নগর।
কান্দিবেন অন্ন জল ছাড়ি নিরন্তর।।
গেলেন শ্রীরামচন্দ্র মায়ের মন্দিরে।
প্রণাম করিয়া পদে বলেন মায়েরে।।
আইলেন বিশ্বামিত্র লইতে আমারে।
মিথিলায় যাই আমি যজ্ঞ রাখিবারে।।
শুদ্ধমনে মাতা মোরে আশীর্ব্বাদ কর।
যুদ্ধে জয়ী হই যেন প্রসাদে তোমার।।
প্রথম যুদ্ধেতে যাত্রা করিতেছি আমি।
আমার লাগিয়া শোক না করিহ তুমি।।
কৌশল্যা শুনিয়া তাহা করেন রোদন।
ভিজিল নয়ন-নীরে নেতের বসন।।
কাতর কৌশল্যা কোলে করিয়া রামেরে।
আশীর্ব্বাদ করিলেন কর দিয়া শিরে।।
মায়েরে কহেন রাম প্রবোধ বচন।
নেত্রনীর নেত্রেতে হইল নিবারণ।।
মাতৃ-পদধূলি রাম বন্দিলেন মাথে।
শুভযাত্রা করিলেন ধনুর্ব্বাণ হাতে।।
শ্রীরাম লক্ষ্মণে লৈয়া বিশ্বামিত্র যান।
মহারাজ নেত্রনীরে ধরণী ভাসান।।
কতদূরে গিয়া রাম হন অদর্শন।
ভূমিতে পড়িয়া রাজা করেন ক্রন্দন।।
রাজাকে প্রবোধ করে যত পাত্রগণ।
কে করে অন্যথা যাহা বিধির লিখন।।
রামে দেখি মুনিবর আনন্দিত মন।
রামের বিবাহ হবে দৈবের ঘটন।।
আগে মুনিবর যান পাছে দুই জন।
ব্রহ্মার পশ্চাতে যেন অশ্বিনী-নন্দন।।
কান্দিতে কান্দিতে সবে গেল নিজ বাসে।
রামে লয়ে বিশ্বামিত্র বনেতে প্রবেশে।।
আগে মুনি যান, পিছে শ্রীরাম লক্ষ্মণ।
আতপে হইল ম্লান দোঁহার আনন।।
তাহা দেখি বিশ্বামিত্র অন্তরে চিন্তিত।
এত দিনে শ্রীরামের দুঃখ উপস্থিত।।
রবির আতপেতে মুখে হইল ঘাম।
বহুকাল কি মতে ভ্রমিবে বনে রাম।।
বিশ্বামিত্র এই মত ভ্রমিবে ভাবিয়া অন্তরে।
করাইল মন্ত্রদীক্ষা শ্রীরামচন্দ্রেরে।।
বিশ্বামিত্র বলেন শুনহ রঘুবীর।
স্নান কর গিয়া জলে সরযূ নদীর।।
যত রাজা পূর্ব্বে সূর্য্যবংশে হয়েছিল।
এই স্থানে প্রাণ ছাড়ি স্বর্গবাসে গেল।।
এই পুণ্যতীর্থে রাম স্নান কর তুমি।
তোমারে সুমন্ত্র দীক্ষা করাইব আমি।।
শোক দুঃখ কখন না পাইবে অন্তরে।
ক্ষুধা তৃষ্ণা না হইবে সহস্র বৎসরে।।
করিলেন রামচন্দ্র সে মন্ত্র গ্রহণ।
রামেরে কহিতে তাহা শিখিল লক্ষ্মণ।।
দৃঢ় করি শিখিলেন ভাই দুইজন।
আনন্দিত হইল দেখিয়া দেবগণ।।
বহুকাল অনাহারে থাকিবে লক্ষ্মণ।
এতকালে হৈবে ইন্দ্রজিতের মরণ।।
কৃত্তিবাস পণ্ডিতের কবিত্বের শিক্ষা।
আদিকাণ্ডে লিখিল রামের মন্ত্রদীক্ষা।।