৫৬তম অধ্যায়
যুদ্ধদৰ্শনার্থী দেবগণের অন্তরীক্ষে অবস্থান
বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে রাজন! মহাধনুৰ্দ্ধর কৌরবসেনাসকল তৎকালে বর্ষাকালীন মন্দমারুত-সঞ্চালিত জলধরপটলের ন্যায় শোভা পাইতে লাগিল। তাহাদিগের নিকটে অশ্বারোহিগণ ও তোমরাঙ্কুশ-নোদিত [অঙ্কুশ-তোমরাস্থ্-চিহ্নিত] মহামাত্র [হস্তিপক্ক-মাহুত] -পরিচালিত, বিচিত্ৰকবচবিভূষিত মাতঙ্গ-সমুদয় শ্রেণীবদ্ধ হইয়া রহিল।
ঐ সময় ত্রিদিবনাথ শতক্রতু, কৃপ ও অর্জ্জুনের সংগ্রামসন্দর্শনার্থ বিশ্বদেব, অশ্বিনীকুমার প্রভৃতি সুরগণ-সমভিব্যাহারে বিচিত্র বিমানে আরোহণপূর্ব্বক আকাশপথে অবতীর্ণ হইলেন; দেব, যক্ষ, গন্ধর্ব্ব ও উরগগণের সহস্ৰ সহস্ৰ সুবৰ্ণস্তম্ভবিভূষিত, মণিরত্নখচিত বিমান সমুদয় মেঘবিনির্মুক্ত গ্রহমণ্ডলের ন্যায় শোভা পাইতে লাগিল। তন্মধ্যে দেবরাজের সর্ব্বরত্ন-বিভূষিত কামচার বিমান সমধিক শোভিত হইল। বসু, রুদ্র প্রভৃতি ত্ৰয়স্ত্রিংশৎ আমর, গন্ধর্ব্ব, রাক্ষস, সর্প, মহর্ষি ও পিতৃগণের সমাগমে, নভোমণ্ডল পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল। রাজা বসুমনা, বলাক্ষ, সুপ্ৰতর্দ্দন, অষ্টক, শিবি, যযাতি, নহুষ, গায়, মনু, পুরু, রঘু, ভানু, কৃশাশ্ব, সাগর ও নল, ইঁহারাও তৎকালে গগনমার্গে সমাগত হইলেন। অগ্নি, ঈশ, সোম, বরুণ, প্রজাপতি, ধাতা, বিধাতা, কুবেরা, যম, উগ্ৰসেন; অলম্বুষ ও তুম্বুরুপ্রমুখ গন্ধৰ্ব্বগণের বিমান-সমুদয় যথাস্থানে সন্নিহিত রহিল। ফলতঃ তৎকালে সমুদয় অমর, সিদ্ধ ও মহর্ষিগণ অর্জ্জুনের সহিত কৌরবগণের সংগ্রামসন্দর্শনার্থ তথায় সমুপস্থিত হইলেন।
দিব্য-মাল্যের পবিত্ৰগন্ধে চতুর্দ্দিক আমোদিত হইয়া উঠিল। দেবগণের বসন, ছত্র, ধ্বজ, ব্যজন ও রত্নজাত ইতস্ততঃ শোভমান হইতে লাগিল; পার্থিব ধূলিপটল তিরোহিত এবং চতুর্দ্দিক মরীচিত [কিরণ] দ্বারা অভিব্যাপ্ত হইল। সমীরণ দিব্যগন্ধ আরোহণপূর্ব্বক যোদ্ধাদিগের সেবা করিতে লাগিলেন। সুরোত্তমগণের সমানীত নানা-রত্নসমুদ্ভাসিত বিবিধ বিমান দ্বারা গগনমার্গ অলঙ্কৃত হইয়া অতি বিচিত্ৰ শোভা ধারণ করিল। পদ্মোৎপলমাল্যধারী সুররাজ দেবগণে পরিবৃত হইয়া বিমানে অবস্থানপূর্ব্বক রণস্থলস্থিত স্বীয় পুত্ৰ অর্জ্জুনকে বারংবার অবলোকন করিয়াও পরিতৃপ্ত হইলেন না।