গান্ধারী কহিছে, রাজা কর অবধান।
শিশুর বচনে কেন হও হতজ্ঞান।।
যখন জন্মিল এই দুষ্ট দুর্য্যোধন।
বিপরীত শব্দেতে কম্পিত সর্ব্বজন।।
বিদুর কহিল, এরে করহ সংহার।
ইহা মারি রাখ রাজ বংশ আপনার।।
পাপিষ্ঠের স্নেহে না শুনিলা ক্ষত্তাবাণী।
সেই কাল উপস্থিত হৈল নৃপমণি।।
সর্ব্বনাশ হেতু রাজা উদ্ভব ইহার।
পুত্ররূপে আছে সব করিতে সংহার।।
ইহার বচন না শুনিহ কদাচন।
নিবৃত্ত হইল অগ্নি, না জ্বাল এখন।।
বৃদ্ধ হৈয়ে তুমি কেন হও অন্য মতি।
আপনি জানহ তুমি দুষ্টের প্রকৃতি।।
এখন ত্যজহ কুলাঙ্গার-দুর্য্যোধন।
ইহা ত্যজি নিজ বংশ রাখহ রাজন।।
মম বাক্য নাহি শুনি পুত্র-বশ হবে।
আপনি আপন বংশ সকল মজাবে।।
ধনে বংশে বৃদ্ধি হইয়াছ হে রাজন্।
সর্ব্বনাশ কর প্রভু কিসের কারণ।।
সম্প্রতি সুখের হেতু কর হেন কাজ।
পশ্চাতে কি হৈবে, নাহি ভাব মহারাজ।।
অধর্ম্মে অর্জ্জিত লক্ষ্মী সমূলেতে যায়।
মহা দুঃখ পায় দুষ্টের আশ্রয়।।
চরণে ধরিয়া প্রভু কহি যে তোমারে।
পুনঃ আজ্ঞা না হয় আনিতে পাণ্ডবেরে।।
ধৃতরাষ্ট্র বলে, শুন সুবল-নন্দিনী।
আমার বুঝাহ কিবা, সব আমি জানি।।
কুরু-অন্তকাল জানি হইল নিশ্চয়।
আমার শক্তিতে দ্যূত নিবৃত্ত না হয়।।
যে হউক সে হউক পাছে, দৈবের লিখন।
আসিয়া খেলুক পুনঃ পাণ্ডুর নন্দন।।
শুনিয়া স্বামীর এত নিষ্ঠুর বচন।
গৃহে গেল গান্ধারী যে মলিন-বদন।।
আজ্ঞা পেয়ে প্রতিকামী গেল ততক্ষণে।
পথেতে ভেটিল পঞ্চ পাণ্ডুর নন্দনে।।
যুধিষ্ঠিরে প্রতিকামী কহে যোড়হাতে।
জ্যেষ্ঠতাত আজ্ঞা তব বাহুড়ি যাইতে।।
পুনঃ পাশা খেলাইতে বলে কুরুবীর।
শুনিয়া বিস্মিত হইলেন যুধিষ্ঠির।।
ধর্ম্ম বলে, দৈববশ শুন ভ্রাতৃগণ।
মম শক্তি নাহি লঙ্ঘি অন্ধের বচন।।
বিশেষে আমার ধর্ম্ম জান ভ্রাতৃগণ।
আহ্বানিলে দ্যূতে যুদ্ধে না ফিরি কখন।।
চল সর্ব্ব-ভ্রাতৃগণ, যাইব নিশ্চয়।
বংশ-ক্ষয়-কাল বিধি করিল নির্ণয়।।
এত বলি ভ্রাতৃগণে লইয়া সংহতি।
পুনঃ আসি সভাস্থলে বসে নরপতি।।
শকুনি বলিল, শুন ধর্ম্মের নন্দন।
অন্ধরাজ আজ্ঞা করে, খেল করি পণ।।
যে হারিবে দ্বাদশ বৎসর বনে যাবে।
অজ্ঞাত বৎসর এক গুপ্তবেশে রবে।।
অজ্ঞাত-বৎসর-মধ্যে ব্যক্ত যদি হয়।
পুনরপি বনবাস অজ্ঞাত উভয়।।
ত্রয়োদশ বৎসর হইবে যদি পাব।
পুনরপি লইবেক রাজ্য যে যাহার।।
এই ত নিয়ম করি দ্যূত আরম্ভিল।
যতেক সুহৃদগণ বারণ করিল।।
যুধিষ্ঠির বলেন, বারণ কি কারণ।
সম্মত না হৈবে কেন আমা হেন জন।।
একে ত আহ্বান, আর গুরুর আদেশ।
ধার্ম্মিক না ছাড়ে ধর্ম্ম যদি পায় ক্লেশ।।
এত বলি যুধিষ্ঠির দ্যূত আরম্ভিল।
দৈবের নির্ব্বন্ধ দেখ, শকুনি জিতিল।।
আসন্ন বিপদকালে বুদ্ধি সুনির্ম্মল।
কাশী কহে, হয়ে পড়ে বিষম সকল।।
হারিলেন ধর্ম্মপুত্র কপট পাশায়।
সভাপর্ব্ব সুধারস কাশীদাস গায়।।