৪. শেষ পর্ব

নিশি তার বাম হাত দিয়ে কাঁচের গ্লাস থেকে ঈষৎ গোলাপি রঙের পানীয়টুকু চুমুক দিয়ে খেয়ে বলল, দেখেছ? আমি এখন বাম হাতের মানুষ হয়ে গেছি। সব কাজ এখন বাম হাত দিয়ে করতে পারি। ডান হাতে জোর নেই।

ইরন ভুরু কুঁচকে বলল, তুমি বলছ আগে তুমি সব কাজ ডান হাত দিয়ে করতে, এখন বাম হাত দিয়ে কর?

হ্যাঁ।

তুমি বুকে হাত দিয়ে দেখ তো তোমার হৃৎপিণ্ড কোনদিকে, ডানদিকে না বামদিকে।

নিশি হেসে বলল, হৃৎপিণ্ড তো বামদিকেই থাকবে।

তুমি হাত দিয়ে দেখ না কোন দিকে স্পন্দন হচ্ছে!

কী বলছ তুমি ইরন! তুমি ভুলে গেছ আমি জিনেটিক কোডিঙে পৃথিবীর সবচেয়ে নিখুঁত মানুষ? আমার মাঝে কোনো ত্রুটি নেই। আমার হৎপিণ্ড অবশ্যই বামদিকে।

আহা–দেখই না একবার পরীক্ষা করে।

নিশি হাসি চেপে তার বুকে হাত দেয় এবং হঠাৎ করে তার মুখ বিবর্ণ হয়ে যায়। সে ভয় পাওয়া গলায় বলল, সে কী!

ইরন চোখ মটকে বলল, দেখেছ?

নিশি তখনো বিশ্বাস করতে পারে না, কঁপা গলায় বলল, সত্যিই দেখি আমার হৃৎপিণ্ড ডানদিকে।

আমি তাই ভেবেছিলাম।

কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি জানতাম আমার হৃদপিণ্ড বামদিকে। আমি একেবারে নিশ্চিতভাবে জানতাম

আমি তোমার কথা অবিশ্বাস করছি না নিশি। সত্যি তুমি ডান হাতের মানুষ ছিলে, তোমার হৃৎপিণ্ড বামদিকে ছিল–কিন্তু তোমাকে যখন চতুর্মাত্রিক প্রাণীরা তাদের জগতে। নিয়ে গেছে তাড়াহুড়োর মাঝে তোমাকে উল্টো করে ফেরত দিয়েছে! আয়নায় যেরকম প্রতিবিম্ব হয় সেরকমভাবে। কে জানে হয়তো ইচ্ছে করেই এভাবে ফেরত দিয়েছে–একটা প্রমাণ হিসেবে।

আমি বুঝতে পারছি না তুমি কী বলছ। কিছুই বুঝতে পারছি না।

বুঝিয়ে দিচ্ছি–তার আগে চল দেখে আসি স্কাউটশিপটার কী অবস্থা।

চল।

ইরনের পিছু পিছু নিশি মহাকাশযানের করিডোর ধরে হেঁটে যেতে থাকে। একটু পরে পরে সে বুকে হাত দিয়ে নিজের হৃৎপিণ্ডের কম্পন অনুভব করছে। এখনো সে বিশ্বাস করতে পারছে না যে তাকে আয়নার প্রতিবিম্ব হিসেবে ফেরত দিয়েছে। সে আর আগের নিশি। নেই–নিশির প্রতিবিম্ব!

স্কাউটশিপের দরজা খুলতেই দেখা গেল কন্ট্রোল প্যানেলে ঝুঁকে পড়ে শ্রালুস কিছু একটা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে। ইরনকে দেখে বলল, আমি দুঃখিত ইরন, একটু দেরি হয়ে গেল। তুমি চিন্তা কোরো না, আমি কিছুক্ষণের মাঝে সব ঠিক করে দেব।

স্কাউটশিপের পিছনে দাঁড়ানো শুমান্তি খিলখিল করে হেসে বলল, ইরনকে বলবে না কেন তোমার দেরি হল?

ইরন হাত নেড়ে বলল, বলতে হবে না। তোমাদের দুজনের আসলে সাতখুন মাপ! সত্যি বলতে কী সাত নয়, সাত–সাতে উনপঞ্চাশ খুন মাপ।

কেন?

কারণ, তোমাদের জীবন্ত ফিরে আসার কথা ছিল না। চতুর্মাত্রিক প্রাণীরা যদি শেষ মুহূর্তে তোমাদের হাত থেকে বিস্ফোরকটা নিয়ে না নিত–তোমরা এখানে থাকতে না! এখনো আমি যখন ব্যাপারটা চিন্তা করি আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।

শুমান্তি নরম গলায় বলল, আমারও বিশ্বাস হচ্ছে না।

ত্রালুস হেসে বলল, আমার কিন্তু বেশ ভালোই বিশ্বাস হচ্ছে। জীবনের প্রথম সত্যিকার জুয়া খেলা, সেই জুয়ায় জিতে গেলাম!

ইরন মাথা নেড়ে বলল, এটাই যেন তোমার প্রথম এবং শেষ জুয়া হয়!

স্কাউটশিপের দরজা খুলে বের হতে গিয়ে ইরন আবার থেমে গেল, বলল, তোমরা জান নিশির কী হয়েছে?

শুমান্তি এবং ত্ৰালুস এগিয়ে জিজ্ঞেস করল, কী?

নিশি মুখ কালো করে বলল, আমি উল্টে গেছি। আমার ডান হাত ডান পা–বাম হাত বাম পা হয়ে গেছে। আমার হৃৎপিণ্ড উল্টোদিকে

কী বলছ তুমি?

হ্যাঁ, আমার কোনো অসুবিধে হচ্ছে না, কিন্তু সত্যি সত্যি আয়নার প্রতিবিম্বের মতো হয়ে গেছি।

ত্রালুস ভুরু কুঁচকে বলল, কেমন করে হল?

চতুর্মাত্রিক জগতে।

আমি বুঝতে পারছি না, ভ্রালুস মাথা নাড়ল, আমি বুঝতে পারছি না মানুষ কেমন করে তার প্রতিবিম্ব হয়ে যায়!

আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি। বলে ইরন একটা টেবিলের কাছে এগিয়ে যায়। পকেট থেকে একটা পাতলা কার্ড বের করে টেবিলের উপর রেখে বলল, মনে কর টেবিলের উপরটা হচ্ছে। দ্বিমাত্রিক জগৎ আর এই কার্ডটা হচ্ছে দ্বিমাত্রিক জগতের প্রাণী। ইরন কার্ডটাকে ডানে বামে নাড়িয়ে বলল, এই প্রাণীটা দ্বিমাত্রিক জগতে যেখানে ইচ্ছে যেতে পারে, কিন্তু কখনো একটা জিনিস করতে পারে না–সেটা হচ্ছে উল্টে যাওয়া। তাকে উন্টাতে হলে– ইরন কার্ডটিকে উপরে তুলে উল্টে নিয়ে টেবিলের উপর রেখে বলল, ত্রিমাত্রিক জগতকে ব্যবহার করতে হয়।

শুমান্তি মাথা নাড়ল, বলল, বুঝেছি। ঠিক সেরকম ত্রিমাত্রিক জগতে মানুষ কখনো তার প্রতিবিম্বে পাল্টাতে পারে না কিন্তু চতুর্মাত্রিক জগতে সেটা পানির মতো সোজা।

ত্রালুস চোখ মটকে বলল, তার মানে নিশিকে আবার সোজা করতে হলে চতুর্মাত্রিক জগতে ফেরত পাঠাতে হবে?

নিশি মাথা নেড়ে বলল, দোহাই তোমাদের আমাকে ফেরত পাঠিও না। আমি প্রতিবিম্ব হয়েই খুব ভালো আছি। কোনো সমস্যা নেই আমার।

সবাই হো হো করে হেসে উঠল। ইরন নিশির মাথার কালো রেশমের মতো চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলল, আমারও তাই ধারণা।

ইরন স্কাউটশিপ থেকে বের হয়ে আসে, তাদের পিছু পিছু ত্ৰালুস এবং শুমান্তিও বের হয়ে আসে। ত্রালুস তার নিও পলিমারের পোশাকে নিজের কালিমাখা হাত মুছতে মুছতে বলল, আর্কাইভ ঘরের ভন্টে কী রেখেছি দেখবে না?

ইরন ভুরু কুঁচকে বলল, ভন্টে কিছু রেখেছ?

রাখব না? ত্ৰালুস হাসি চেপে রেখে বলল, এত কোটি কোটি ইউনিট খরচ করে এত মানুষজনকে খুন করে, জীবন ধ্বংস করে একটি মহাকাশ অভিযান পাঠিয়েছে ভন্টে করে চতুর্মাত্রিক জগৎ থেকে কিছু আনার জন্য–সেটা খালি রাখি কেমন করে?

কী রেখেছ?

আমাদের এই মহাকাশযানে দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আছে জান?

জানি।

জিনেটিক কোডিং দিয়ে একটার সাথে আরেকটা জুড়ে দেওয়া যায়। আমি প্রায় সতেরটা হাত, ছয়টা পা, পঞ্চাশটার মতো চোখ, কিছু যকৃৎ, কয়েকটা হৃৎপিণ্ড, কিডনি একসাথে জুড়ে দিয়েছি–

ইরন চোখ কপালে তুলে বলল, কী করেছ? একসাথে জুড়ে দিয়েছ?

হ্যাঁ! সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় সেগুলো কিলবিল করে নড়তে থাকে, কাছাকাছি যেটাই পায় হাত সেটাকেই ধরে ফেলে, পা–গুলো সবচেয়ে ভয়ঙ্কর, দমাদম লাথি কষিয়ে দিচ্ছে! চোখগুলো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। থলথলে যকৃৎ, নড়তে থাকা হৃৎপিণ্ড, সব মিলিয়ে একটা ভয়ানক জিনিস!

ইরন অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে ত্ৰালুসের দিকে তাকিয়ে থাকে, তালুস হা হা করে হেসে বলল, পৃথিবীর ঐ বদমাইশ মানুষগুলো যখন আর্কাইভ ঘরের ভল্ট খুলবে তখন সেখান থেকে ওটা কিলবিল করে বের হয়ে আসবে। কী মজা হবে বুঝতে পারছ?

ইরন মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ, বুঝতে পারছি।

শুমান্তি খিলখিল করে হেসে বলল, সবচেয়ে মজার ব্যাপার কী জান?

কী?

মানুষগুলো মনে করবে সত্যিই ওটা চতুর্মাত্রিক প্রাণী। ওটা নিয়েই হয়তো বছরের পর বছর গবেষণা করবে!

ঠিকই বলেছ। আমরা যদি ধরা পড়ে যাই তা হলে অন্য কথা।

ত্ৰালুস মাথা নেড়ে মুখ শক্ত করে বলল, আমরা ধরা পড়ব না। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢোকার সময় বাতাসের ঘর্ষণে পুরো মহাকাশযান ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে–এর নানা অংশ পৃথিবীতে ছিটিয়ে পড়বে। স্কাউটশিপটার মাঝে থাকব আমরা কেউ জানবে না!

হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ, ভাগ্য যদি নেহায়েৎ আমাদের বিপক্ষে না থাকে, আমাদের কেউ ধরতে পারবে না।

শুমান্তি একটু হেসে বলল, যদি ভাগ্যের কথা বল, তা হলে কেউ অস্বীকার করবে না যে আমাদের মতো ভাগ্য পৃথিবীতে কারো নেই।

নিশি মাথা নাড়ল, বলল, ঠিকই বলেছ তোমরা। বিশেষ করে আমার ভাগ্য। পুরোপুরি উল্টে গিয়েও বেঁচে আছি!

সবাই হঠাৎ হো হো করে হেসে ওঠে। ত্ৰালুস হাসি থামিয়ে বলল, ভাগ্যের কথাই যদি বল তা হলে সম্ভবত আমি আর শুমান্তি সবার উপরে! ক্লোন হিসেবে আমাদের ব্যাকটেরিয়ার মতো মারা যাবার কথা ছিল! অথচ আমরা চেষ্টা করেও মারা যেতে পারছি না!

শুমান্তি মাথা নাড়ল, বলল, বেঁচে থাকাটা আমার সেরকম ভাগ্যের ব্যাপার মনে হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে তোমাদের মতো চমৎকার মানুষের সাথে পরিচয় হওয়াটা আমার সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য!

ইরন নরম গলায় বলল, সেই সৌভাগ্য আমাদের সবার। ইরনের গলায় কিছু একটা ছিল যে কারণে সবাই হঠাৎ চুপ করে যায়। খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে ইরন হেঁটে হেঁটে একটা জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। দূরে নীল পৃথিবীকে দেখা যাচ্ছে। যখন সেখানে ছিল বুঝতে পারে নি, দূর থেকে সেটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ করে সে এই গ্রহটার জন্য, এই গ্রহের মানুষের জন্য গভীর ভালবাসা অনুভব করে। সে একটা নিশ্বাস ফেলে অন্যদের দিকে ঘুরে তাকাল, বলল, আমরা পৃথিবীর কাছাকাছি চলে আসছি। সবার মনে হয় প্রস্তুত হওয়া দরকার।

শেষ কথা

চতুর্মাত্রিক প্রাণীদের জগৎ থেকে ফিরে আসা মহাকাশযানটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সময় বিধ্বস্ত হয়ে যায়। মহাকাশযানটির মাঝামাঝি রেখে দেওয়া বিস্ফোরকগুলো বিস্ফোরিত হয়ে সেখানে একটা বড় গর্ত তৈরি করেছিল। মহাকাশযানের বাতাস বের হওয়ার সময় গতিপথ পরিবর্তন করে ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া মহাকাশযানের নানা অংশ পৃথিবীর নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে, স্কাউটশিপটি বিধ্বস্ত হয়েছিল দক্ষিণের পার্বত্য এলাকায়। উদ্ধারকারী দল স্কাউটশিপটিকে উদ্ধার করতে পারে নি, সেটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। উদ্ধারকারী দল সেই নির্জন পার্বত্য এলাকায় চার জনের ছোট একটি ভ্রমণকারী দলকে দেখতে পায়। প্রত্যক্ষদর্শী সেই ভ্রমণকারীরা বলেছে, স্কাউটশিপটিতে সম্ভবত কেউ ছিল না–কারণ সেটি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় পাহাড়ে আঘাত করে ধ্বংস হয়ে গেছে। ভ্রমণকারী ছোট দলটি এত বড় একটি বিস্ফোরণ দেখেও বিশেষ বিচলিত হয় নি। পার্বত্য এলাকায় তারা আরো কিছুদিন সময় কাটানোর জন্য রয়ে গেছে। উদ্ধারকারী দল ঘুণাক্ষরেও সন্দেহ করে নি, দুজন তরুণ–তরুণী একজন অপরূপ সুন্দরী কিশোরী এবং তাদের দলনেতা এই স্কাউটশিপে করে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অন্য পাশ থেকে ঘুরে এসেছে। সত্যি কথা বলতে কী, এ ধরনের কোনো সম্ভাবনা থাকতে পারে সেটি জানার মতো মানুষও পৃথিবীতে তখন কেউ নেই।

ইরন, ত্রালুস, শুমান্তি এবং নিশি পৃথিবীতে আবার তাদের জীবন শুরু করেছে। পৃথিবীর হিসেবে তারা তিন–চার দিনের জন্য অনুপস্থিত ছিল, আবার জীবন শুরু করার কোনো সমস্যা হয় নি। ত্রানুস এবং মান্তি সৌরশক্তির একটি কারখানায় কাজ নিয়েছে। পরিচয়হীন দুজন মানুষের রেজিস্ট্রেশনের জন্য কিছু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে, কিন্তু যেটুকু সমস্যা হওয়ার কথা ছিল সেটুকু হয় নি। কারণটি এখনো কারো জানা নেই। ত্ৰালুস এবং শুমান্তি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা করে নি, কিন্তু ইরন মোটামুটি নিশ্চিত তারা জীবনের সঙ্গী হিসেবে একজন আরেকজনকেই বেছে নেবে।

ইরন আবার তার গবেষণা কেন্দ্রে যোগ দিয়েছে। তার যেসব কাজ পুরোপুরি ব্যর্থতা বলে পরিচিত হয়েছিল হঠাৎ করে সেগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে বিবেচিত হচ্ছে। ওয়ার্মহোলের ওপর তার গবেষণাটি কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান একাডেমি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নিয়েছে। গবেষণাটি পরীক্ষা করে দেখার জন্য প্রয়োজনীয় ইউনিট বরাদ্দ করা হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

ইরন প্রজেক্ট আপসিলন নিয়ে তথ্য কেন্দ্রে একটু খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু বিশেষ কোনো তথ্য পায় নি। তবে বিজ্ঞান একাডেমিকে প্রতারণা করে একটি অনৈতিক বেআইনি এবং মহাকাশ অভিযান পরিচালনা করার জন্য মহাকাশ কেন্দ্রের দুজন বড় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে একটি বুলেটিন চোখে পড়েছে। একজন বৃদ্ধ এবং অন্য একজন মধ্যবয়স্ক কর্মকর্তা ঠিক কী ধরনের অনৈতিক অভিযান পরিচালনা করেছে সে সম্পর্কে কিছু লেখা হয় নি, কিন্তু ইরন মোটামুটি নিঃসন্দেহ তারা প্রজেক্ট আপসিলনের সঙ্গে জড়িত। ব্যাপারটি নিয়ে একটি তথ্য–অনুসন্ধান কমিটি কাজ শুরু করেছে। ইরন লাল তারকাযুক্ত একটি চিঠি পেয়েছে যেখানে তার কাছ থেকে সহযোগিতা আহ্বান করা হয়েছে। ইরন তথ্য–অনুসন্ধান কমিটিকে জানিয়েছে তাদেরকে সহযোগিতা করার মতো কোনো তথ্য তার জানা নেই।

ইরন সম্ভবত পুরো ব্যাপারটি প্রকাশ করে দিত কিন্তু একটি বিশেষ কারণে সেটি গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণটির সাথে নিশির একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

পৃথিবীতে ফিরে আসার কিছুদিন পর ইরন নিশির সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। তাকে দেখে নিশি অত্যন্ত খুশি হয়ে ছুটে এসেছিল। ইরন তার জন্য উপহার হিসেবে জেড পাথরের তৈরি হরিণের একটি ছোট মূর্তি এনেছিল। পকেট থেকে বের করে সে যখন মূর্তিটা নিশির দিকে এগিয়ে দিল, নিশির চোখ বিস্ময়ে বিস্ফারিত হয়ে যায়। ইস্! কী সুন্দর বলে মূর্তিটা নেওয়ার জন্য নিশি তার হাত বাড়িয়ে দিল।

ইরন চমকে উঠল। কারণ নিশি তার যে হাতটি বাড়িয়ে দিয়েছে সেটি ছিল তার ডান হাত।