মিস্টার দাশগুপ্ত, লোকটিকে কি আপনারা ছেড়ে দিলেন?
না। মিহিরবাবু বেল পেয়েছেন।
বেলই বা পায় কী করে? হি ইজ দি প্রাইম সাসপেক্ট।
সেটা আদালত জানে। আমাদের কিছু করার নেই।
পাবলিক প্রসিকিউটর কি বেল-এর বিরোধিতা করেননি?
বলতে পারব না। আমি আদালতে ছিলাম না। কিন্তু মিহিরবাবুর বেল নিয়ে আপনি অত ভাবছেন কেন? প্রয়োজন হলে তাকে আবার অ্যারেস্ট করা যাবে।
ওকে আপনারা চেনেন না মিস্টার দাশগুপ্ত। যে-কোনও সময়ে ও হাওয়া হয়ে যেতে পারে। এ ব্যাপারে ওর প্রতিভা সাংঘাতিক।
সেক্ষেত্রে কী আর করা যাবে বলুন? পুলিশ তো সর্বশক্তিমান নয়। আদালতের বিরুদ্ধাচরণ তো করতে পারি না।
ব্যাপারটা কিন্তু মোটেই ভাল হল না। খুনটা যে মিহিরই করেছে সে বিষয়ে তো কোনও সন্দেহই নেই!
কে বলল নেই? সন্দেহ অবশ্যই আছে।
সে কী?
পুলিশের হাতে ভদ্রলোককে কনডেম করার মতো যথেষ্ট তথ্য নেই।
এদেশের পুলিশ কি এতই অপদার্থ?
এদেশের পুলিশ এদেশের মতোই। কী আর করা যাবে বলুন?
ডিসগাস্টিং! ভেরি ডিসগাস্টিং।
দুঃখিত মিস্টার বকশি। আপনাকে খুশি করতে পারছি না। বাই দি বাই আপনি কবে এলেন?
কাল রাতে।
আপনি তো মোটে মাসখানেক আগেই আমেরিকায় ফিরে গেলেন!
দেড় মাস। আসতে হল জরুরি প্রয়োজনে। আমার সম্বন্ধী সত্যব্রত আয়রন সাইড রোডের বাড়িটা প্রমোটারকে বিক্রি করার তোড়জোড় শুরু করেছে। ওর কাছে নাকি আমার স্ত্রীর দেওয়া পাওয়ার অফ অ্যাটর্নিও আছে। খবর পেয়ে আসতেই হল।
বাড়িটা বোধহয় আপনি বিক্রি করতে রাজি নন?
পাগল নাকি? বাড়ি বিক্রি করব কেন? সত্যব্রতর সঙ্গে এই নিয়ে ঝামেলা চলছে বলেই আমাকে আসতে হয়েছে।
আমি যতদুর খবর রাখি আপনার স্ত্রীর আরও গোটা দুই বাড়ি আছে এবং ব্যাঙ্কে ক্যাশ এবং অন্যান্য বন্ডে আছে প্রচুর টাকা।
হ্যাঁ। ওদের অবস্থা তো ভালই ছিল।
আপনিই এখন এসবের মালিক তো।
ন্যাচারালি। জিজ্ঞেস করছেন কেন?
না, ভাবছিলাম অন্য কোনও ওয়ারিশান আছে কিনা।
কে থাকবে?
উনি কোনও উইলটুইল করেছিলেন কিনা জানেন?
লুক ম্যান, অরুণিমা ওয়াজ জাস্ট আভার ফটি। এই বয়সে কেউ উইল করতে যায়?
ভাল করে খুঁজে দেখেছেন?
খোঁজার প্রয়োজন মনে করিনি। কিন্তু একথা বলছেন কেন?
প্রিয়ব্রত মজুমদার নামে একজন বিখ্যাত অ্যাটর্নি আছেন, জানেন কি?
না তো!
আমি তার ফোন নম্বর আপনাকে দিচ্ছি। একটু কথা বলে দেখুন।
হোয়াট ডু ইউ মিন? হঠাৎ আমি উটকো একটা লোকের সঙ্গে কথা বলতে যাব কেন?
উনি অরুণিমা দেবীর অ্যাপয়েন্টেড অ্যাটর্নি।
অরুণিমার অ্যাটর্নি! কই জানতাম না তো!
আপনি আপনার স্ত্রীর অনেক কিছুই হয়তো জানতেন না!
তার মানে?
স্ত্রীয়াশ্চরিত্রম।
আপনি ননসেন্স টক করছেন।
আপনি উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন কেন? আমি তো জাস্ট আপনাকে একজনের সঙ্গে একটু কথা বলতে বলেছি। এতে মেজাজ খারাপ করার মতো কিছু তো নেই।
আর ইউ হিন্টিং সামথিং?
আরে মশাই, কথা বলেই দেখুন না। প্রিয়ব্রতবাবু ইজ এ রিনাউন্ড ম্যান ইন দি ফিল্ড অফ ল। আজেবাজে লোক নন।
তিনি আমাকে কী বলবেন?
যা বলবেন তা হয়তো আপনার পছন্দ হবে না। কিন্তু ট্রুথ ইজ অলওয়েজ লাইক দ্যাট। নট প্যালেটেবল।
ঠিক আছে, নম্বরটা দিন।
নোট করে নিন। এখন দশটা বাজে, ঘণ্টাখানেক পরে ওঁকে ওঁর চেম্বারে এই নম্বরে পাবেন।
অরুণিমা কি গোপনে কোনও ডিল করেছিল?
আমার মুখ থেকে শুনবেন কেন? প্রপার অথরিটির কাছ থেকে জেনে নিন।
আপনি আমাকে টেনশনে ফেলে দিলেন।
তা হয়তো দিলাম। কিন্তু সবটা জেনে এবং বুঝেই এগোনো ভাল।
ফোনটা কেটে গেল।
কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল শবর। কলকাতার ক্ষণস্থায়ী শীত বিদায় নিচ্ছে। বাইরে রোদের তেজ বাড়ছে। ফেব্রুয়ারির শেষে কলকাতায় আজকাল রোদের বেশ তাপ, হাঁটলেই ঘাম হয়। বেরোতে ইচ্ছে করছিল না শবরের। কিন্তু একটা মোবাইল নম্বরে বারবার ফোন করেও মিহিরকে ধরা যাচ্ছে না। ফোন সুইচ অফ করা আছে।
শবর অগত্যা উঠল। ফোনটা বেজে উঠতেই ভ্রু কুঁচকে তাকাল যন্ত্রটার দিকে। তারপর তুলে নিল।
শবর দাশগুপ্ত বলছি।
শাহেনশাকে ধরা গেছে স্যার। চালান দেব কি?
আরে না না, চালানফালান নয়। বসিয়ে রাখুন। কয়েকটা প্রশ্ন করেই ছেড়ে দেব।
ওর নাকি ড্রাগ নেওয়ার সময় হয়েছে। খুব রেস্টলেস।
ওকে ড্রাগ নিতে দিন।
আপনি পারমিশন দিচ্ছেন তো?
হ্যাঁ। আমি ওকে নরমাল অবস্থায় চাই।
ঠিক আছে। আপনি কি আসছেন?
হ্যাঁ। আমি এখনই রওনা দিচ্ছি। আধ ঘণ্টায় পৌঁছে যাব।
আধঘণ্টা পর দক্ষিণ কলকাতার একটা ফাঁড়িতে শবর দাশগুপ্ত শাহেনশার মুখোমুখি হতেই সুপুরুষ, দীর্ঘকায় বছর পঁয়ত্রিশ বয়সের শাহেনশা উঠে দাঁড়িয়ে একটা সেলাম করল। শাহেনশার দাড়ি এবং গোঁফ খুব যত্ন করে ট্রিম করা। পরনের পোশাক অবশ্য এলোমেলো। ময়লা জিনসের প্যান্ট আর গায়ে ইস্তিরিহীন সবুজ পাঞ্জাবি।
ভাল আছেন তো সাহেব?
ভাল। তুমি কেমন?
সব ঠিক হ্যায়। কুছ মুসিবত হল নাকি সাহেব?
সাউথ ক্যালকাটার আয়রন সাইড রোডে অরুণিমা বকশি মার্ডার হয়েছিল জানো তো!
জানি সাহেব।
কে জানো?
না সাহেব।
তোমাকে না জানিয়ে কে কাজ করবে এখানে? তুমি না ডন?
আজকাল বহুত মস্তান উঠছে সাহেব। আপনি তো সব জানেন।
উঠতি মস্তান?
হা সাহেব।
এরকম ছক কষে কি ওরা কাজ করবে? মনে হয় না।
খোঁজ নিয়ে বলব সাহেব।
তোমার তো কখনও ভয়ডর বা জানের পরোয়া ছিল না।
ও বাত তো ঠিক সাহেব।
কিন্তু তোমার চোখ দেখে মনে হচ্ছে আজকাল তোমার ভয়ডর হয়েছে।
শাহেনশা মাথাটা নিচু করে বলল, দিনকাল খারাপ আছে সাহেব। বহুত কম্পিটিশন, বহুত পলিটিক্স, বহুত টেনশন।
সেটা আমি জানি তোমার চেলা মিল্টন কি আলাদা হয়ে গেছে?
জি সাহেব। মিল্টন তিলজলায় ডেরা করেছে।
তোমার দলে কে আছে এখন?
বাচ্চু, ঘিয়া, পাগলু। সব নতুন আছে সাহেব।
তুমি কেস করো না?
না সাহেব। বখরা পাই।
অরুণিমা বকশিকে যে খুন করেছে সে পুরনো লোক।
আমার লোক করেনি সাহেব।
সেটা আমি জানি। কিন্তু কে করেছে সেটা তোমার না জানার কথা নয়।
জানি না সাহেব।
তুমি ভয় পাচ্ছ শাহেনশা!
শাহেনশা পায়ে পায়ে একটু ঘষাঘষি করল। মুখটা একটু বিবর্ণ।
কন্ট্রাক্ট মার্ডার, বুঝলে?
হ সাহেব।
খুনটা হয়েছে তোমার এলাকায়। তোমাকে সেলামি না দিয়ে কাজটা কি কেউ করতে পারে?
সাহেব, আজকাল এলাকা কেউ মানে না। পয়সার লালচ বাড়ছে তো। পুরানা জমানা তো আর নেই।
সেটা আমার চেয়ে ভাল কেউ জানে না। লোকটাকে আমার চাই শাহেনশা।
খবর নিয়ে জানাব সাহেব।
আজ বিকেলে?
আর একটু টাইম লাগবে।
টাইম লাগার কথা নয় শাহেনশা, তুমি আসলে ভয় পাচ্ছ। ড্রাগ ধরার পর কি এসব হচ্ছে?
না সাহেব। সিচুয়েশন বদল হয়ে গেছে।
কাকে ভয় পাও?
কাউকে না। টাইমটাকে ভয় পাই সাহেব। আজকাল সব উলটোপালটা ব্যাপার হয়।
ঝেড়ে কাশো শাহেনশা, চুপ করে থাকার জন্য কত টাকা পেয়েছ?
শাহেনশা মাথা নিচু করে চুপ করে থাকে।
তোমার বিরুদ্ধে তো কোনও কেস দিচ্ছি না, তোমাকে ধরাও হবে না, শুধু একটা ইনফর্মেশন চাইছি। মনে পড়ে তোমাকে আমি এর আগে তিনবার বাঁচিয়ে দিয়েছি?
বহুত মেহেরবানি। সাহেব, আমি ভুলিনি।
তা হলে আমার ঋণ একটু শোধ করো।
ছোকরা অ্যারেস্ট হয়ে গেলে বহুত হুজ্জত হবে সাহেব। রায়ট হয়ে যাবে। আমি খতম হয়ে যাব।
অ্যারেস্ট করব না। যে খুনটা করে সে-ই তো আর আসল খুনি নয়, যে খুনটা করায় সে-ই আসল খুনি। আমি তাকে ধরতে চাইছি।
কথা দিচ্ছেন স্যার?
হ্যাঁ। তবে আমি জানতে চাই পেমেন্ট কে করেছে।
বকশি মেমসাহেবকে খুন করেছে লম্বুর দল। খাটো আর সেলিম ছিল অপারেশনে।
পেমেন্ট কে করেছে?
এজেন্সি।
কোন এজেন্সি?
সার্ভিস টু দি পিপল।
খাটো কি কলকাতায়?
না সাহেব। অপারেশনের পর সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওটাই নিয়ম।
জানি। এজেন্সির মালিক জনি, তাই না?
জি সাহেব। জনি ইনফর্মেশন পায় টেলিফোনে। টাকা ওর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যায়।
তার মানে খুনটা কে করিয়েছে তা জনি জানে না?
না সাহেব।
কাকে সন্দেহ হয় শাহেনশা?
আমরা কাউকে সন্দেহ করি না। টাকা পাই, কাজ করি।
বুঝলাম। টাকার অ্যামাউন্ট জানো?
না সাহেব। আমি দশ হাজার পেয়েছি।
সেটা কত পারসেন্ট?
জানি না সাহেব। নিট দশ হাজার। নো বারগেন।
ঠকে গেছ। আমার হিসেবে পাঁচ থেকে দশ লাখের মধ্যে কন্ট্রাক্ট হয়েছে। তার কম নয়।
হতে পারে সাহেব। আমার কাছে তো এটা ফালতু টাকা। তাই আমি আর খোঁজখবর নিইনি।
ঠিক আছে শাহেনশা, তুমি যেতে পারো।
জি সাহেব।
লম্বুর মোবাইল নম্বর জানো?
জানি সাহেব।
দাও।
নম্বরটা ডায়াল করতেই ওপাশ থেকে কেউ বলল, বোলো।
শবর গম্ভীর গলায় বলল, ফোনটা লম্বুকে দাও।
তুমি কে?
তোর বাপ। লম্বুকে দে।
ওপাশটা কিছুক্ষণ চুপ। তারপর একটা গমগমে গলা বলে উঠল, কৌন হ্যায় বে?
বলেছি তো তোর বাপ। আমি শবর দাশগুপ্ত।
আরে স্যার, আপনি! নমস্কার স্যার। আমি লম্বু।
শোন, কথা আছে।
বলুন স্যার।
আয়রন সাইড রোডের অরুণিমা বকশিকে খুন করানোর কন্ট্রাক্ট তোমাকে কে দিয়েছিল জানো?
স্যার, এসব কী বলছেন!
আকাশ থেকে পড়লে যে! অ্যাকটিং ছাড়ো। তুমিও সেয়ানা, আমিও সেয়ানা।
সে কথা তো ঠিক, কিন্তু স্যার, পার্টিকে তো চিনি না।
খবর নিতে পারবে?
জনি কাজটা দিয়েছিল। জনিও জানে না।
কত টাকার কন্ট্রাক্ট?
পাঁচ।
জনি কোথায়?
এখানে আছে স্যার। আমি জনির এজেন্সি থেকেই বলছি।
ভারী মিষ্টি মোলায়েম একটা গলা বলল, নমস্কার স্যার। আমি জনি।
কন্ট্রাক্টটা কত টাকার ছিল জনি?
ছয়।
কে তোমাকে ফোন করেছিল?
নাম বলেনি।
পুরুষ না মহিলা?
মহিলা।
শিয়োর?
হ্যাঁ স্যার। শিয়োর।
বয়স কীরকম হবে?
বেশি নয় স্যার। ছুকরির গলা।
তোমার অ্যাকাউন্ট নম্বর জেনে নিয়েছিল?
হ্যাঁ স্যার। অনেকে তো নিজে কন্ট্রাক্ট করে না। ভয় পায়।
ক’বার ফোন করেছিল?
দু’বার।
গলা চিনতে পারবে?
পারব। আমার ভয়েস মেমারি ভাল।
হয়তো দরকার হবে না। শোনো। এখন কয়েকদিন তোমার ফোন এলে ধরবে না। অ্যানসারিং মেশিনে রেকর্ড করে রাখবে। তোমাকে যেন মোবাইলে ফোন করে।
স্যার, আপনি কি আমাদের ওপর অ্যাকশন নেবেন?
আপাতত নয়। কিন্তু এ লাইনটা ছাড়ো। যেদিন ধরব সেদিন ঝুলিয়ে দেব। পার পাবে না।
জানি স্যার। কিন্তু এটা তো প্রফেশন, নাথিং এলস।
ফিলজফি ঝেড়ো না।
দোষ ধরবেন না স্যার, পুলিশের বখরাও দিয়েছি।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনটা নামিয়ে রাখল শবর।
আরও চল্লিশ মিনিট বাদে মিহিরের গ্যারাজে হাজির হয়ে গেল শবর।
মিহির তার ট্রাকের ইঞ্জিনে কাজ করছিল। কালিঝুলি মাখা অবস্থায় নেমে এল।
আরে আপনি?
মোবাইলটা তো সুইচ অফ করে রেখেছেন, তাই আসতে হল।
কাজ করছিলাম বলে ফোন অফ রেখেছি। বলুন কী খবর।
অ্যাটর্নি প্রিয়ব্রত মজুমদারকে চেনেন?
না। কে তিনি?
আপনাকে ফোনটোন করেননি?
আজ্ঞে না।
অরুণিমা বকশি আপনাকে কত টাকা অফার করেছিল?
ওঃ সে অনেক টাকা। কোয়াইট এ ফরচুন। অ্যামাউন্ট বলেনি।
আপনি কি জানেন যে তিনি একটা উইল করে রেখে গেছেন?
উইল! না, আমি জানব কোত্থেকে?
ইন কোর্স অফ টাইম আপনি জানতে পারবেন।
কী জানব?
জানবেন যে উনি ওঁর কলকাতার বিষয়সম্পত্তি আপনার নামে ট্রান্সফার করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
আমার নামে! হোয়াই মি?
বোধহয় ওঁর ভালবাসার নিদর্শন।
পাগল নাকি? ভালবাসা নয়, ওটা ছিল ওর ইগোজনিত পাগলামি। আমাকে উনি দখল করতে চেয়েছিলেন, লাইক এ ট্রফি।
আপনি তো এখন বিপুল সম্পত্তির মালিক হতে যাচ্ছেন।
শবরবাবু, আমাকে আপনি কী ভাবেন বলুন তো!
কী আবার ভাবব?
আমি কি লোভী! নাকি ল্যালা! আমাকে মিসেস বকশি যদি সব দিয়ে গিয়েও থাকেন ওঁর এক পয়সাও আমি ছোঁব না।
আপনার ইগোও তো কম নয়।
এটা আত্মমর্যাদার প্রশ্ন। ইগো নয়। আমার টাকার কোনও অভাব নেই এবং খুব বেশি বড়লোক হওয়ারও ইচ্ছে নেই। মধ্য পন্থাই আমার ভাল লাগে।
তা হলে কী করবেন?
কিছুই করব না। উইলটা ছিঁড়ে ফেলে দেব।
শুধু উইল নয়, উনি অলরেডি আপনার নামে সবকিছু ট্রান্সফার করেছেন।
তাতেও কিছু নয়। আবার ট্রান্সফার করে দেব।
কাকে?
ওঁর হাজব্যান্ডকে।
এত টাকা ছেড়ে দেবেন?
ধরার যখন প্রশ্নই নেই।
আপনি চান বা না চান, অরুণিমা বকশি আপনাকে তার সবকিছু দিয়ে গেছেন। সেই সঙ্গে আপনাকে একটু বিপদেও ফেলে গেছেন।
বিষয়সম্পত্তি মানেই তো বিপদ।
ঠিক কথা। কিন্তু আপনি যে অর্থে বলছেন তা ছাড়াও বিপদ আছে।
সেটা কীরকম?
মরটাল ডেনজার।
তার মানে কী?
আপনি খুন হয়ে যেতে পারেন।
মাই গড! কেন?
কারণ আছে বলেই।
কিন্তু আমি তো ওসব চাইছি না।
সেটা সবাই বুঝবে না।
আমাকে কে খুন করবে?
ভাড়াটে খুনি।
সর্বনাশ!
আপনি তো বাহাদুর লোক, ভয় পাচ্ছেন কেন?
ভয়ের কথাই বলছেন যে!
আরে, নার্ভাস হলে চলবে কেন?
নার্ভাস নই মশাই, আমি ঝুটঝামেলা পছন্দ করি না।
পিসফুল লাইফ চান তো!
হ্যাঁ।
তা হলে কো-অপারেট করুন।
করছি তো।
করছেন না। সেদিন অরুণিমা বকশি আপনাকে আরও কিছু বলেছিলেন যা আপনি আমার কাছে চেপে গেছেন।
আমার যা মনে পড়েছে বলেছি।
উনি সুব্রত বকশির একজন বান্ধবীর কথাও বলেছিলেন।
মাথা নেড়ে মিহির বলে, না, বলেননি। বিশ্বাস করুন।
সুব্রত বকশির কি কোনও বান্ধবী নেই?
থাকলেও আমি জানি না। সুব্রতদার সঙ্গে আমার বিজনেস রিলেশন ছিল, ইন্টিমেসি ছিল না। মিসেস বকশি সুব্রতদাকে এতই তাচ্ছিল্যের চোখে দেখতেন যে ওঁকে নিয়ে ওঁর মাথাব্যথাই ছিল না।
শবরের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ল একটু। সামান্য চুপ করে থেকে বলল, সত্যি কথা বলছেন?
হ্যাঁ, সত্যি কথা বলছি।
তা হলে তো জটিলতা বাড়ল।
কিন্তু তার জন্য তো আমি দায়ী নই।
প্যাটার্নটা ঠিকঠাক মিলছে না। সুব্রত বকশির একজন বাঙালি বান্ধবী থাকা উচিত। তা হলে প্যাটার্নটা মেলে। নইলে আবার নতুন করে ভাবতে হবে। আপনি কি বলতে পারেন সুব্রতবাবু সম্পর্কে অরুণিমার এত রিপালশনের কারণ কী?
রিপালশন নয়। রিপালশনও একরকমের রি-অ্যাকশন। অরুণিমা সুব্রতদাকে ঘেন্না করতেন বলে মনে হয় না। তেমন কোনও রাগেরও প্রকাশ দেখিনি। জাস্ট ইগনোর করতেন।
সুব্রত বকশি কি ওঁর আজ্ঞাবহের মধ্যে ছিলেন?
পুরোপুরি তাও নয়। কাজের সুত্রে ওঁদের কো-অপারেশন ছিল। দু’জনেই পরিশ্রমী। পরস্পরের মধ্যে কাজ নিয়ে শলাপরামর্শও হত। গুড কলিগস। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বোধহয় ক্লোজ ছিলেন না। ভেরি স্ট্রেঞ্জ রিলেশন।
সুব্রত বকশির অ্যাটিটিউড কীরকম ছিল?
সেও আপনাকে বলেছি। উনি স্ত্রীকে তোয়াজ করতেন। ডার্লিং, ডিয়ার, সুইটহার্ট বলতেন সবসময়। কিন্তু সেগুলো মিথ্যে।
হু। ভাবিয়ে তুললেন মিহিরবাবু।