০৪.
রোদে ভরা বারান্দায় বেরিয়ে পা ছড়িয়ে চোখ বন্ধ করে ম্যাগার্থ বসলো। সে বললো এখন আমার ব্রান্ডির সঙ্গে কালো কফি মিশিয়ে খাওয়া দরকার।
ভিডা বলল-কফি তুমি পাবে কিন্তু ব্যাপারটা আমাকে বুঝিয়ে না বলা অবধি তুমি ছুটি পাচ্ছো না।
ওরা ডাক্তার ফ্লেমিংয়ের চোরাকুঠুরীতে মেয়েটাকে আটকে রেখেছিল। আমি এমন কাণ্ড করলাম মেয়েটা যাতে পালিয়ে যেতে পারে। তারপর ওকে জঙ্গলে রেখে গাড়ি আনতে যাই যাতে করে আমরা লারসনের কাছে যেতে পারি কারণ ও আহত অবস্থায় পরে আছে। কিন্তু গাড়ি নিয়ে এসে দেখলাম ক্যারল নেই। তখন আমি একাই লারসনকে খুঁজে তোমার এখানে নিয়ে এলাম।
তুমি ওকে হাসপাতালে নিয়ে না গিয়ে এখানে আনলে কেন?
কারণ ওর সামনে খুব বিপদ। সুলিভ্যানরা ওকে খুঁজছে।
ওরা তো এখানেও খুঁজে পেতে পারে।
না, কারণ তোমার সঙ্গে লারসনের কোন রকম যোগাযোগ নেই।
মেয়েটার কি হলো?
জানিনা, হয়তো আমাকে বিশ্বাস করতে পারেনি। অথবা সুলিভ্যানদের কবলে পড়েছে।
হয়তো তোমার এখানেও পাহারা বসাতে হবে। ক্যাম্পকে কথাটা বলতে হবে।
আচ্ছা মেয়েটা দেখতে কেমন।
খুব সুন্দর, আর ওকে দেখে মনেই হয়না ও পাগল।
এইসব আলেচনার মধ্যেই ডাক্তার কোবার বেরিয়ে এসে বলল গতিক সুবিধার নয়। তিন দিন না কাটলে কিছুই বলা যায় না।
ওকে হাসপাতালে রাখলেই ভাল হত।
না, সেটা সম্ভব নয়, ডাক্তারবাবু লোক দুটো ওকে দেখলে আবার আক্রমণ করতে পারে।
ঠিক আছে। আমি ওকে দিনে দুবার দেখে যাবো আর নার্স ডেভিস রইল ওকে দেখাশুনার জন্য।
এরপর ডাক্তারের সঙ্গে বেরিয়ে গেল ফিল।
.
শেরিফ নিজের অফিসঘরে বসে চুরুট খাচ্ছিল। একটু আগে সাইমন হার্টম্যান এসে ওকে বলল যে মেয়েটাকে ম্যাগার্থ পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
ম্যাগার্থকে ঘরে ঢুকতে দেখেই শেরিফ রেগে বলল, তুমি কিন্তু মেয়েটিকে পালিয়ে যেতে দিয়েছে।
ইচ্ছে করে দিইনি।
হার্টম্যান কিন্তু তোমার উপর খুব রেগে গেছে।
সে তো রাগবেই। কারণ মেয়েটা ওর সম্পত্তি ফিরে পাবে এই ভয়েই লোকটা সিঁটিয়ে আছে। যাই হোক আপনি সুলিভ্যান ব্রাদার্সের নাম শুনেছেন কি?
ওদের কোন অস্তিত্ব নেই, শেরিফ বলল।
ম্যাগার্থ বলল, ওদের অস্তিত্ব আছে। গতকাল রাত্রে ওরা স্টিঙ লারসনের ভাইকে খুন করেছে। স্টিঙও ওদের গুলিতে আহত।
কিন্তু লারসনের কোন ভাই আছে বলে তো জানতাম না।
আপনি যদি সব জানতেন তাহলে তো আপনি প্রেসিডেন্টই হয়ে যেতেন।
লারসনের সঙ্গেই ছিল মেয়েটা। গতরাত্রে আমি লারসনের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি। সুলিভ্যানরা তার ওখানে গিয়ে হাজির হয়ে রয়কে খুন করে মেয়েটাকে নিয়ে কেটে পড়েছিল। কিন্তু তার আগেই লারসন আর মেয়েটা ওদের হাত থেকে বেঁচে নিজেরা ওদের গাড়ি করে পালিয়েছিল সেই সময়ে স্টিঙের গায়ে গুলি লাগে। আর তাকে বাঁচাতেই ক্যারল ডাক্তার ফ্লেমিং এর কাছে যায়। পরের ঘটনা তো আপনার জানা।
পরে মেয়েটার কি হলো?
সম্ভবত ও সুলিভ্যানদের পাল্লায় পড়েছে। ম্যাগার্থ ক্যারলের সঙ্গে সাক্ষাঙ্কার ও আকস্মিক ভাবে উধাও হয়ে যাওয়ার কথা বলল। আমি মিস ভিডার বাড়িতে একটু নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে চাইছি। মনে হয় ওরা খোঁজ পাবে না। তবুও আমাদের পক্ষে ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না।
ঠিক আছে ম্যাগার্থ, এটা তুমি আমার ওপরে ছেড়ে দাও। স্টামের সঙ্গে আরও কয়েকজন সহকারীকে আমি মিস ভিডার ওখানে পাঠাবো। তারপর এক বিশাল জাল ছড়িয়ে সুলিভ্যানদের সেই জালে টেনে তুলবো।
.
হাইওয়েতে এক জায়গায় এসে প্যাকার্ড গাড়িটা দাঁড়াল। গাড়ির চালক ম্যাক্স আর তার পাশে বসে আছে ফ্র্যাঙ্ক। গাড়ির পিছনের সীটে ক্যারল পড়েছিল। ওর হাত পা বাঁধা, মুখে প্লাস্টার লাগানো।
দীর্ঘ আট ঘণ্টা ধরে গাড়ি চালিয়ে এখানে থামলো ওরা। ওরা ভাবল এখন প্রথম কাজ মেয়েটাকে কোন নিরাপদ জায়গায় লুকিয়ে স্টিঙকে খুঁজে বের করা। তারপর স্টিঙকে হত্যা করা কারণ সে তাদের পাপের সাক্ষী।
এরপর আরও খানিকটা এগিয়ে ওরা একটা বড় ধ্বংসপ্রায় বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো।
সুলিভ্যানরা গাড়ি থেকে নামতেই একটা লোক ভেতরের অন্ধকার ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। লোকটি শীর্ণ ও বয়স্ক।
সুলিভ্যানরা যে ভ্রাম্যমান সার্কাস দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল, সেই সার্কাসেই এই টেক্স শেরিল বাঘ সিংহের খেলা দেখাতো।
শেরিল সার্কাস ছেড়ে দিয়ে এখানে বসে অবৈধ চোলাই মদের ব্যবসা করে সুখেই দিন কাটাচ্ছিল। প্রয়োজন হলে শেরিলের খামার বাড়িটা ব্যবহার করতে পারবে এই ভেবে ম্যাক্স ও ফ্র্যাঙ্ক এই খামার বাড়িটা শেরিলের কাছ থেকে টাকা দিয়ে ভাড়া নেয়।
শেরিলের এই খামার বাড়িটা আদর্শ হবে। ছটা দিন ওকে এখানে লুকিয়ে রাখলেই সমস্ত সম্পত্তি মেয়েটার হাতে এসে যাবে। এখন ক্যারলকে শিখণ্ডি করে সুলিভ্যানরাই সে সম্পত্তির ভোগদখল করতে পারবে।
শেরিল বলল–এখানে কি মনে করে?
ম্যাক্স ক্যারলকে গাড়ি থেকে বার করে বলল, একে আগে কোথাও নামিয়ে রাখতে দাও।
ক্যারলকে একটা চেয়ারে বসিয়ে ফ্র্যাঙ্ক শেরিলকে নিয়ে বারান্দার উল্টো দিকে চলে গেল।
বললো, মেয়েটা ব্লানডিশ। ও পাগলা গারদ থেকে পালিয়ে এসেছিল। ও নিজেই যাতে নিজের ক্ষতি করতে না পারে, সেজন্য ওকে আমরা আগলে রেখেছি। ওর টাকাগুলো ওকে শিখণ্ডি করে আমরা ভোগ করবো। তবে তার জন্য ওকে ছদিন লুকিয়ে রাখতে হবে। শোনো তুমি আর মিস ললি ওকে দিব্যি সামলাতে পারবে।
মিস ললি আজকাল একটু অন্যরকম হয়ে গেছে। ও কতটা সহায়তা করবে জানি না।
এবার ক্যারলের সামনে এসে বলল বল লারসন কোথায়? ওকে কোথায় রেখে এসেছে।
বলবো না।
বলতে তোমাকে হবেই।
চলো তোমাকে ওপরের ঘরে নিয়ে গিয়ে একটু দাওয়াই দি।
এর মধ্যেই একজন মেয়েদের পোশাক পরে এগিয়ে গেলো। সে মেয়েমানুষ হলেও প্রকৃতির খেয়ালে ওর মুখেরনীচে ঘন লম্বা রেশমীদাড়ির আড়ালে ওর মুখেরনীচদিকটা ঢাকা পড়ে আছে।
ওকে দেখে ক্যারল চেঁচিয়ে উঠল।
ফ্র্যাঙ্ক হেসে বলল, তোমার মুখটা ওর বোধহয় পছন্দ হয়নি মিস ললি।
এরপর ওরা দুজন টেনে হিঁচড়ে ক্যারলকে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে তুলতে লাগল। এই দেখে মিস ললির চোখে জল এসে গেল। সে ভাবল মেয়েটা সত্যি কি সুন্দর।
সে শেরিলকে বলল, মেয়েটা কে?
সেই ব্লানডিশ বাড়ির মেয়ে। যার কথা তুমি সকালে বলেছিলে।
তার মানে সেই পাগলী যাকে সবাই মিলে খুঁজছে। তা ওই ছেলেদুটো মেয়েটাকে নিয়ে কি করছে।
এর মধ্যেই এক ভয়াবহ আর্তনাদে বাড়িটা চমকে উঠল। মিস ললির রক্ত যেন জমে উঠলো। সে এগিয়ে দেখতে গেল।
শেরিল তার হাত ধরে বলল, যেয়ো না। ওদের কাজে বাধা দেবার কি ফল হতে পারে তুমি জান না।
কিন্তু তাই বলে ওরা ওকে মারবে?
তুমি বাগানে চলে যাও তাহলে আর কিছু শুনতে পাবে না। আর তোমার মনে কষ্টও হবে না।
একটু পরেই ওরা দেখলো সুলিভ্যানরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছে।
শেরিল বলল-এখনি যাচ্ছো নাকি?
–হ্যাঁ।
শেরিল বলল, মেয়েটা কি মুখ খুলেছে।
না খুলে কোথায় যাবে। তাতেই তো জানতে পারলাম স্টিঙ কোথায় আছে।
একটু পরেই একটা গাঢ় নীল রঙের ঢাউস বুইক করে ম্যাক্স আর ফ্র্যাঙ্ক বেরিয়ে গেল।
ওঁরা যাওয়ার আগে শেরিল বললো, তোমরা কবে আসবে?
দুতিন দিনের মধ্যেই ফিরে আসবো।
শেরিল মেয়েটার দিকে নজর রেখো। ফিরে এসে যদি মেয়েটাকে না দেখি তাহলে তুমি আর এখানে থাকবে না।
ওরা চলে গেলে মিস ললি ওপরে ক্যারলের সঙ্গে দেখা করতে গেল।
শেরিল বলল, কোথায় যাচ্ছো?
মিস ললি বলল, এখন ওর একটু যত্ন দরকার মেয়ে মানুষের যত্ন।
তোমাকে দেখেই ও ভয় পাবে।
তবু আমি যাবো।
বেশ যাও তবে। বোকার মতো কিছু করো না।
ঘরের চাবি খুলে মিস ললি দেখলো ক্যারল বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে আছে।
ললি তার সামনে দাঁড়ালে ক্যারল শিউরে উঠল। সে বলল, দয়া করে চলে যান।
মিস ললি বললো, আমি তোমাকে ভয় দেখাতে চাই নি।
ক্যারল বলল, আমি আপনাকে দেখে ভয় পাইনি। আমি একটু একা থাকতে চাই। আপনি কে? কি চান?
কিছু না, আমি তোমাকে মেয়ে হিসেবে সাহায্য করতে পারি। তোমাকে সান্ত্বনা দিতে পারি।
ক্যারল বিছানায় লুটিয়ে পড়ে বলল, আমি ওদের বলে দিয়েছি যে স্টিঙ কোথায় আছে।
মিস ললি বলল, অত উত্তেজিত হয়ো না। আমি ওদের বলতে শুনেছি, ওরা তাকে সেখানে পাবে বলে মনে হয় না। দাঁড়াও তোমার জন্য চা নিয়ে আসছি।
ক্যারল বললো, আপনি আমাকে এখান থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করুন।
তা হয় না। আমি তোমাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারি না। ওর চোখে আতঙ্ক ফুটে উঠল।
আপনি নিশ্চয়ই আমার অবস্থা বুঝতে পারছেন। আমি যাকে ভালবাসি তার যখন সাহায্যের দরকার তার কি অর্থ হতে পারে। আপনি বলেছেন আপনার একজন প্রেমিক ছিল।
আহা বেচারী। তুমি ওকে খুব ভালবাসো বুঝি। আমি তোমার জন্য চা নিয়ে আসি, এছাড়া বড় রাস্তায় যেতে অনেকটা হাঁটতে হবে। হলঘরের তাকে টাকা থাকবে। এই বলে নীচে নেমে গেল।
কিছুক্ষণ ক্যারল দরজার দিকে তাকিয়ে থাকলো। চাবি লাগাবার শব্দ শুনলো না। তখন সে উঠে দাঁড়িয়ে দৌড় লাগাল।
সে নিশ্বাস বন্ধ করে দুরুদুরু বুকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগল।
.
ব্লু মাউন্টেন সামিটের পরিত্যক্ত কাঠগোলায় একটা ভাড়া কুঁড়েঘরে এক বুড়ো বাস করতো। সে খুড়ো হামফ্রে নামেই পরিচিত। লোকটা অতি দরিদ্র ও নোংরা।
সে ঘুমিয়ে ছিল। ম্যাগার্থ এসে তাকে তুললো। সে বুড়ো হামফ্রের পরিচিত লোক। সে দেখলো ম্যাগার্থ লারসনের অচেতন দেহটা গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে গেল।
পরের দিন সন্ধেবেলায় সে যখন রুটি তৈরীকরছিল তখন হঠাৎ তার কুঁড়েঘরের দরজা ঠেলে সুলিভ্যানদের প্রবেশ করতে দেখল। কারণ তারা ভেবেছিলো স্টিঙকে এখানে না পাওয়া গেলেও বুড়ো হামফ্রে হয়তো আভাস দিতে পারবে যে সে কোথায় আছে। কে তাকে উদ্ধার করল।
সুলিভ্যানদের দেখে বুড়ো হামফ্রের মুখখানা শুকিয়ে গেল। তার রাতের খাবার চাটুর মধ্যেই পুড়ে গেল।
ম্যাক্স বুড়ো হামফ্রেরকাছে গিয়ে বসল। তারপর একটু মুচকি হেসে বলল, আমরা একটা অসুস্থ লোককে খুঁজছি লোকটার কি হল বলতে পারো?
বুড়োর হৃদপিণ্ড উত্তেজিত হয়ে উঠলো সে ইনিয়ে বিনিয়ে বলল, কই না, আমি তো তেমন কোন লোকের কথা জানি না?
ফ্রাঙ্ক বললবাপধন তুমি সবই জানো। বলল, না বলে কেন মিছিমিছি নিজের বিপদ ডেকে আনবে।
তখন বুড়ো বলল, খবরের কাগজের লোক ম্যাগার্থ এসে ওকে নিয়ে গেছে। এই লোকটা আগেও আমাকে একবার মুশকিলে ফেলেছিলো। কেন এই বুড়োটাকে কি একটু শান্তিতে থাকতে দেওয়া যায় না।
আর কেউ কখনো তোমাকে মুশকিলে ফেলবে না এই বলে ফ্রাঙ্ক বুড়োকে গুলি করে মেরে ফেললো।
.
সিঁড়ির পথে মাঝ রাস্তায় ঝোলানো ঘড়িটা বেজে উঠতেই ক্যারল থমকে দাঁড়াল। মুহূর্তের জন্য মনে হল ওর আত্মাটা যেন দেহ থেকে ছিটকে বেরিয়ে গেল। তারপর ধাতস্থ হলে একটু পরেই সে সিঁড়ি বেয়ে হলঘরে নেমে এল সেখানে একটা ওক কাঠের তাকের ওপরে একটা দশ ডলারের নোংরা নোট রাখা দেখল। নোটটা তুলে নিয়ে ক্যারল দরজাটা ধরে টান দিল। দেখল মিস ললি চায়ের ট্রে হাতে করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। দুজনের মধ্যে সহানুভূতি আর আতঙ্কের এক বিচিত্র সেতু।
কিন্তু এর পর বাগানে গিয়ে বড় রাস্তার দিকে যেতে গিয়ে ক্যারল বাধা পেল। শেরিল ওর পথ আটকে দাঁড়াল।
নিজের ঘরে ফিরে যাও।
ক্যারল বলল, আমি যাবোই।
কিন্তু শেরিল ক্যারলের ঘাড়ে ঘুসি দিয়ে ওকে প্রায় অচেতন করে ফেলল।
কিন্তু মিস ললি একটা বন্দুক হাতে করে দাঁড়াল। শেরিলকে বলল, ওকে ছেড়ে দাও নয়তো আমি গুলি চালাতে বাধ্য হব।
শেরিল ওকে ছেড়ে দিল বলল, তোকে বিশ্বাস করে আমি ভুল করেছি। এর ফল দুজনকেই ভুগতে হবে।
এদিকে ক্যারল সংকীর্ণ পথ ধরে অবিশ্রান্ত ছুটে চলল। এখান থেকে পয়েন্ট ব্রিজের দূরত্ব কতটা হবে সে বিষয়ে তার কোন ধারনা নেই। তবু তার মনে হল জায়গাটা বেশ দূরেই হবে। সুলিভ্যানরা তার চেয়ে কয়েক মিনিট আগে বেরিয়েছে। কিন্তু ক্যারলের বিশ্বাস ম্যাগার্থ স্টিকে নিশ্চয়ই এর মধ্যে নিরাপদ কোন জায়গায় সরিয়ে দিয়েছে। সুলিভ্যানরা স্টিঙকে খুঁজে পাবার আগেই ও যেন পয়েন্ট ব্রিজে গিয়ে পৌঁছতে পারে এটাই ক্যারলের একমাত্র কামনা।
শেরিল দুহাতে মাথা টিপে বসেছিল। সে খানিকক্ষণ এভাবে থেকে মনে মনে ম্যাক্সের কথা ভাবছিল। ম্যাক্স বলে গেছে যে, যদি মেয়েটাকে এসে এখানে দেখতে না পাই তাহলে নিজের ভাল চাও তো তুমিও এখানে থেকো না।
প্রাতঃরাশের চেয়ারে আতঙ্কিত মুখে মিস ললি বসেছিল। একটু পরেই শেরিল ঘর থেকে বেরিয়ে এল। শেরিলের গায়ে বাইরে বেরুনোর পোশাক। সে বলল ললি তুমিও বরং জিনিসপত্র গুছিয়ে নাও। আমাদের এখান থেকে চলে যেতে হবে।
একটু পরেই যখন গ্যারেজ থেকে গাড়ি বার করে শেরিল ললিকে গাড়িতে উঠতে বলল তখন ললি বলল, আমি কোথাও যাব না। এটা আমার বাড়ি।
জানি তোমার বাড়ি। কিন্তু ছেলেদুটোকে তো চেন।
তুমি যাও, হয়তো দুএকদিনের বেশী থাকা যাবে না। কিন্তু আমি এখানেই থাকবো। এখানে থেকে আমার বড় সুখ।
তাহলে আমি চললাম, ওরা বলেছিল দু-তিনদিনের মধ্যেই ওরা আবার ফিরে আসবে।
.
এদিকে পয়েন্ট ব্রিজের পঁচিশ মাইলের মধ্যে পৌঁছে ভাগ্য বিরূপ হয়ে উঠলো ক্যারলের। রাত নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত গাড়িগুলোই যেন ক্যারলকে লাজুকভাবে এড়িয়ে যেতে লাগল। কেউ তাকে তুলতে রাজী হল না।
এতক্ষণে ক্যারল ক্লান্ত হয়ে উঠেছিল। প্রথমদিকে ওকে কয়েকজন তুলে কিছুটা কিছুটা পৌঁছে। দিয়েছিল।
বড় রাস্তার ধারে একটা দোকানে কফি খেতে ঢুকে শুনলো চারঘন্টা আগে সুলিভ্যানরা এখানে এসেছিল। সেখান থেকে জানতে পারলো এখান থেকে পয়েন্ট ব্রিজের দূরত্ব পঁয়তাল্লিশ মাইল। কিন্তু কোন বাসই সরাসরি সেখানে যায় না। এরমধ্যে একজন যুবক, সে ক্যারলের সামনে বসে কফি খাচ্ছিল বলল সেও পয়েন্ট ব্রিজে যাচ্ছে যদি ক্যারল যায় তাহলে সে পৌঁছে দিতে পারে কারণ তার সঙ্গে গাড়ি আছে।
লোকটার সঙ্গে যেতে রাজী হল ক্যারল, কিন্তু কিছুটা গিয়ে একটা নির্জন জায়গায় লোকটা গাড়ি থামাল। তারপর ক্যারলকে অতর্কিতে জড়িয়ে ধরল। তারপর ক্যারল দরজা খুলে নেমে এলো। লোকটা একাই গাড়ি চালিয়ে চলে গেল। তারপর আবার একই ব্যাপার। কোনও গাড়িই আর তার সামনে দাঁড়ায় না। সে হাত নেড়ে নেড়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ল।
একটু পরে ও রাস্তার একপাশ দিয়ে হাঁটতে লাগল, কিছুক্ষণ পরে একটা ওয়াগন ওর কাছে ব্রেক কষে দাঁড়াল।
ড্রাইভার বলল, উঠবেন নাকি।
এই বলে ক্যারলের পাশে দাঁড়াল। তারপর বলল, আজ দেখছি দিনটা দারুণ। এই বলে ক্যারলকে চেপে ধরে গাড়িতে ওঠাল। বলল, শোন ভেতরে আর একটা পাগলী আছে তবে দড়ি দিয়ে বাধা, দুটোতে মিলে আবার মারামারি করিস না যেন।
ক্যারল জানত না লোকটা গ্লেনভিউ মেন্টাল স্যানাটোরিয়ামের স্যান গারল্যান্ড। সে কিস্টন থেকে রোগী নিয়ে যাবার জন্যই এখানে এসেছিল।
গাড়ি চলতে শুরু করলে ক্যারল চীৎকার করতে শুরু করল। কিন্তু আচমকা তার চীৎকার বন্ধ হয়ে গেল। সে দেখল একটা স্টোরে এক মহিলা নিস্পন্দ হয়ে শুয়ে আছে। দেখতে শুনতে অতি স্বাভাবিক।
মহিলা উজ্জ্বল বন্য চোখ জ্বেলে ক্যারলের দিকে তাকাল।