যুধিষ্ঠিরের ভ্রাতা প্রভৃতির সহিত কৃষ্ণদর্শন
বৈশম্পায়ন বলিলেন, এইরূপে ধর্ম্মাত্মা ধৰ্ম্মতনয় কৌরবগণের নিকট উপস্থিত হইয়া দেখিলেন, ঐ স্থানে ভগবান্ বাসুদেব ব্রাহ্মদেহ [ব্রহ্মময় বিগ্রহ] ধারণ করিয়া বিরাজমান রহিয়াছেন। তাঁহার পূৰ্ব্বদৃষ্ট আকৃতির কিছুমাত্র বৈলক্ষণ্য হয় নাই। চক্র প্রভৃতি ঘোরতর দিব্যাস্ত্রসমুদয় পুরুষরূপধারণপূৰ্ব্বক তাঁহার চতুর্দ্দিক্ পরিবেষ্টন করিয়া তাঁহার স্তব করিতেছে এবং মহাবীর অর্জ্জুন তাঁহার উপাসনায় নিযুক্ত রহিয়াছেন। মহাত্মা যুধিষ্ঠির স্থলে উপস্থিত হইবামাত্র সেই দেবপূজিত বাসুদেব ও ধনঞ্জয় তাঁহার যথোচিত পূজা করিলেন। তখন ধর্ম্মপরায়ণ মহাত্মা যুধিষ্ঠির অন্যান্য ব্যক্তিগণের সহিত সাক্ষাৎকার করিবার মানসে ইতস্ততঃ পরিভ্রমণ করিতে করিতে দেখিলেন, একদিকে শস্ত্রধরাগ্রগণ্য মহাত্মা কর্ণ দ্বাদশ আদিত্যের ন্যায় দিব্যমূৰ্ত্তিধারণপূর্ব্বক অবস্থান করিতেছেন। আর একদিকে মূর্ত্তিমান পবনের পার্শ্বে দিব্যরূপধারী মহাত্মা ভীমসেন মরুদগণে পরিবৃত হইয়া পরম শোভা ধারণ করিয়া রহিয়াছেন। অন্যদিকে অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের নিকট মহাত্মা নকুল ও সহদেব তেজঃপুঞ্জকলেবরে উপবিষ্ট হইয়াছেন এবং তাঁহাদের অনতিদূরে উৎপলমালাধারিণী দ্রৌপদী স্বীয় রূপলাবণ্যে স্বর্গলোক আলোকময় করিয়া অবস্থান করিতেছেন।
ইন্দ্রকর্ত্তৃক দ্রৌপদী প্রভৃতির পরিচয়প্রদান
ধৰ্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির তাঁহাদিগকে দর্শন করিয়া ইন্দ্রকে তাঁহাদের ও অন্যান্য ব্যক্তিগণের সবিশেষ বৃত্তান্ত জিজ্ঞাসা করিতে ইচ্ছা করিলেন। তখন দেবরাজ তাঁহার অভিপ্রায় অবগত হইয়া তাঁহাকে সম্বোধনপূৰ্ব্বক কহিলেন, “মহারাজ! তুমি যে পুণ্যগন্ধযুক্তা রূপলাবণ্যবতী দ্রৌপদীকে দর্শন করিতেছ, ইনি অযোনিসম্ভূতা লক্ষ্মী। পূৰ্ব্বে ভগবান্ শূলপাণি তোমাদিগের প্রীতির নিমিত্ত ইঁহাকে সৃষ্টি করাতে ইনি মহারাজ দ্রুপদের গৃহে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। এই পাবকের ন্যায় প্রভাসম্পন্ন পাঁচজন গন্ধৰ্ব্ব তোমাদিগের ঔরসে দ্রৌপদীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। তুমি ঐ যে গন্ধৰ্ব্বরাজ মহাত্মা ধৃতরাষ্ট্রকে দর্শন করিতেছ, উনি তোমার জ্যেষ্ঠতাত ধৃতরাষ্ট্র। ঐ দেখ, তোমার জ্যেষ্ঠভ্রাতা সূৰ্য্যপুত্র কর্ণ সূর্য্যের ন্যায় গমন করিতেছেন। পূৰ্ব্বে ইঁহারই নাম রাধেয় বলিয়া বিখ্যাত হইয়াছিল। ঐ দেখ, বৃষ্ণি, অন্ধক ও ভোজবংশীয় সাত্যকি। প্রভৃতি মহাবলপরাক্রান্ত বীরগণ সাধ্য, দেবতা ও বিশ্বদেবগণের মধ্যে অবস্থান করিতেছেন এবং সুভদ্রাগৰ্ভস্যুত মহাত্মা অভিমন্যু ভগবান চন্দ্রের সহিত একত্র সমাসীন রহিয়াছেন। ঐ দেখ, তোমার পিতা মহারাজ পাণ্ডু কুন্তী ও মাদ্রীর সহিত একত্রিত হইয়া অবস্থান করিতেছেন। উনি দিব্যবিমানে সমারূঢ় হইয়া সতত আমার নিকট আগমন করিয়া থাকেন। ঐ দেখ, মহাত্মা ভীষ্ম বসুগণের সহিত মিলিত হইয়াছেন; তোমার গুরু দ্রোণাচাৰ্য্য বৃহস্পতির পার্শ্বে অবস্থিত রহিয়াছেন এবং অন্যান্য ভূপাল ও যোধগণের মধ্যে কেহ কেহ গন্ধৰ্ব্ব ও যক্ষগণে পরিবৃত হইয়া অনুপম সুখ অনুভব আর কেহ কেহ গুহ্যকদিগের গতিলাভ করিয়া উৎকৃষ্ট লোকসমুদয় পরিভ্রমণ করিতেছেন।”