৪. প্রেমের শয্যায় মার্ক গারল্যান্ড

০৪. প্রেমের শয্যায় মার্ক গারল্যান্ড

জন ডোরির প্রকাণ্ড ভিলা পাহাড়ের ওপরে। বিরাট ঝুল বারান্দার মুখ পাহাড়ের দিকে, প্রত্যেকটা জানালার টবে ফুল ফুটেছে, চারপাশে পাইনের ছায়া।

ছজন সোলজার অটোমেটিক রাইফেল হাতে বাড়িটা পাহারা দিচ্ছে। তাদের চীফ সার্জেন্ট প্যাট ওলীয়ারি। প্রকাণ্ড মাংসল চেহারা, লাল মুখ-লোকটার সঙ্গে একটা হিংস্র অ্যালসেশিয়ান কুকুর থাকে।

ডোরির চাকর ডায়ালো গারল্যান্ড, জিনি আর এরিকার সুখ সুবিধের দিকে নজর রেখেছে। ডাক্তার ফরেস্টারকে ফোন করে জিনিরোশ নার্সকে এখানে রাখার জন্য ডোরি অনুমতি নিয়েছে।

গারল্যান্ডের সঙ্গী সিয়া এজেন্ট জ্যাক কারম্যান বিদায় নিয়ে প্যারী যাবার সময় জিনিকে বলেছে :

সিস্টার গারল্যান্ডের দিকে নজর রাখবেন। ওকে বিশ্বাস করা যায় না।

নজর রেখেছে বৈকি জিনি। আমি যদি এরিকার মত সুন্দরী হতাম, ছোট্ট দুটো পাছায় হাত রেখে টেরাসে জিনি বলে, আমি যদি ব্লন্ড হতাম। তুমি আমাকে পছন্দ করতে?

গারল্যান্ডের শক্ত মাংসল কাঁধ, ঋজু, মেরুদণ্ড চামড়ার বাদামী রং পেছন থেকে দেখতে দেখতে জিনি বুঝতে পারে, ভালোবাসা কারে কয়।

জয়ালো তোমাকে নিস শহরে নিয়ে যাবে। কিন্তু তুমি আরামে এখানে থাকো এটাই চাই। ডোরির টাকায় ইচ্ছেমত কেনাকাটা করো। ইচ্ছে হলে একটা ব্লন্ড কিনে দেখতে পারো তোমাকে, কেমন দেখায়। আমার কিন্তু এমনিতেই তোমাকে ভালো লাগে–

.

‘ও’ লীয়ারি, সোভিয়েত আর কমুনিষ্ট চীন দুদেশের স্পাইরাই পেছনে লেগেছে। ওরা যদি একটা বোমা ছুঁড়ে গেটটা উড়িয়ে দেয়।

তাতে কোন ফয়দা হবে না। ড্রাইভের ওই কোনে আমার দুজন এজেন্ট মেসিনগান নিয়ে লুকিয়ে আছে।

আমার সঙ্গে লোডেড পিস্তল থাকলে ভালো হতো।

ইয়া, পয়েন্ট থারটি-এইট ক্যালিবারের পিস্তল আর কার্তুজের তিনটে ক্লিপ গারল্যান্ডের হাতে তুলে দেয় ওলীয়ারি।

গারল্যান্ড নিশ্চিন্তে টেরাসে এসে বসে।

সিনজানো বিটারের ককটে।

 ডিনার?

 অ্যাভোকাদো,কাঁকড়া, রসুন দিয়ে জিগো। দামী মদ। পৎ লেহভে কী। বাতাবী লেবুর সরবৎ।

এই তো জীবন।

হাই!

আগুন লাল স্লীভলেস পোষাক পরা ব্লন্ড যুবতীকে দেখে চমকে উঠে মার্ক।

এক বোতল পেরক্সাইড ঢেলে রং করেছি, জিনি হাসে।

তোমাকে দারুণ দেখাচ্ছে। মার্ভেলাস।

এরিকার থেকেও ।

জিনি ডিয়ার, ও আমার বউ।

তাহলে আমিও তোমার বউ।

নাঃ, বয়েস বড্ড কম। কতো?

আমার উনিশ বছর হলো।

ইয়া, ইয়া, আমার বয়স তো তোমার দ্বিগুণ

চটেমটে ভেতরে চলে যায় জিনি।

রাত সাড়ে নটায় এরিকা ওলসেনের জ্ঞান ফেরে।

আমি কোথায়? তুমি কে?

আমি তোমার স্বামী মার্ক। তুমি আমার বাড়িতে।

স্বামী? বাড়ি? আমার তো কিছু মনে নেই,ব্লন্ড রূপসী চোখ বুজে বলে।

সুন্দর, কালো, আঙুরের মতো।

কি বললে? জিনিষটা কি? চমকে বলে গারল্যান্ড। সুন্দর আঙুরের মতো জিনিষটা কি?

আবার চোখ খুলে, জানি না তো। তুমি কে বললে?

ডার্লিং এরিকা, তোমার স্বামী মার্ক।

মার্ক? তোমার নাম! আমার নাম এরিকা? ঘরে ফিরেছি? বেশ তো–আবার ঘুমিয়ে পড়ে।

সেদিন রাতে…

 দূরে আলোর মালা। টেরাসে মার্কের পাশে এসে দাঁড়ায় জিনি।

এরিকা ঘুমুচ্ছে। কালকের পরে ওর আর নার্সের দরকার হবে না। আমি হাসপাতালে ফিরে যাবো। তুমি এরিকার স্বামীর ভূমিকায় অভিনয় করবে

জিনি, এটা আমার কাজ, পয়সা নিয়েছি

আমি শুতে যাচ্ছি। গুড নাইট।

গারল্যান্ড শোবার আগে বাথরুমে ঢুকে ঠাণ্ডা জলে স্নান করে নগ্ন শরীরে পোষাক হাতে বেডরুমের দরজা খোলে।

মার্ক,

মেয়েলী গলায় ফিস ফিস শব্দ

 প্লীজ…আলো জ্বেলো না…

 জিনি!

আর তোমাকে পাবো না। মেয়েটা সেরে উঠলে তুমি আর আমার দিকে তাকাবে না।

চাঁদের আলোয় দেখা যাচ্ছে, জিনি চাদরটা জড়িয়ে বিছানায় বসে

প্লীজ মার্ক তুমি আমাকে ঘেন্না করো না।

জিনি ডার্লিং, আমি তোমাকে কোনদিন ঘেন্না করবো না, উদোম উলঙ্গ পুরুষ জিনির শরীর থেকে চাদরটা সরিয়ে স্লীম তরুণীর শরীর আলিঙ্গনে বাঁধে।

কিন্তু এই কি তুমি চাও?

তোমাকে চাই বলেই আমি লজ্জা ভুলেছি-না চাহিতে যারে পাওয়া যায়–সেই অপরূপ উপহার মার্ক বুকে তুলে নেয়।

*

 সোভিয়েত রাশিয়ার স্পাই। ইয়র্ক পোস্টের সাংবাদিক হ্যারী হোয়াইটল বছরে তিনবার প্যারীতে আসে। সিয়ার প্যারী শাখার সর্বেসর্বা জন ডোরির পারসোন্যাল অ্যাসিস্টান্ট মার্সিয়া ডেভিস তার পুরনো দিনের বান্ধবী।

ওরা লা ত্যুর দ্যারজে রেস্তোরাঁয় ডিনার খেয়েছে। ফলে দ্য সল্ কার্দিনাল এবং সুফলেই ভালতেইস-ডিনারের দুটো পদই ওরা চমৎকার রান্না করে।

মার্সিয়া তুমি বিয়ে করছো না কেন?লম্বা স্মার্ট দীঘল চেহারার যুবক হ্যারী ট্যাক্সিতে ওঠার সময় বলে, ক্রিস্টমাসে আসছে তো?

জানো, আম নিজেকেই প্রশ্ন করি, আমি কেন বিয়ে করছি না?

হ্যারী বিয়ে করতে চায়? ট্যাক্সিটা যাবার পর মার্সিয়া ভাবে। ডোরির অফিসের চাকরী ক্লান্তিকর। কিন্তু ইয়র্কে নিজের দেশে ঘরসংসার পাততে ভালো লাগবে।

খুশী হয়ে গানের সুর ধরে অন্ধকার লবি দিয়ে লিফটে ওঠে মার্সিয়া। চারতলার ঘরে।

তালাটা টেনে চাবিতে চাপ দিতে তবে খোলে। তালাটা কাল সারাতে হবে। এখন সে মিনিট কুড়ি শুয়ে বই পড়বে, তারপর ঘুমুবে।

আলো জ্বেলেই সে চমকে উঠে। ইস্পাতের ধারালো ফলা তার গলা ছুঁয়ে যায়।

ইউ বীচ! হিংস্ব চিতার মতো গর্জে ওঠে স্মারনফ। টু শব্দ করলে তোর গলা কেটে ফেলবো।

মালিক আর্মচেয়ারে বসে রাশিয়ান সিগারেট খাচ্ছে। বসুনমিস ডেভিস, মালিক ভদ্রভাবে বলে, আমাদের সময় খুব কম। এরিকা ওলসেন কোথায় আছে? ব্যক্তিগতভাবে মেয়েদের শারীরিক নির্যাতন আমি পছন্দ করিনা। কিন্তু আমার সঙ্গীর মত অন্যরকম। আপনি ঠিকঠাক উত্তর না দিলে আমার সঙ্গীর হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য হবো। ডোরি এরিকা ওলসেনকে কোথায় রেখেছে? বলুন–

মার্সিয়া সিয়ার অনেক ফাইলেই সোভিয়েত রাশিয়ার সব থেকে বিপজ্জনক স্পাই মালিকের ছবি দেখেছে। চট করে ভেবে নেয়, গারল্যান্ড তো আগেই মালিককে বলেছে, এরিকাকে মার্কিন দূতাবাসে রাখার প্ল্যান করেছে ডোরি।

এরিকাকে মার্কিন দূতাবাসে রাখা হয়েছে।

মুশকিলটা কি জানেন? আমাদের এক এজেন্ট, সিয়ার স্পেশাল এজেন্ট জ্যাক কারম্যানকে নিস্ এয়ারপোর্ট দেখেছে। কারম্যান ডোরির স্পেশাল এজেন্ট। ডোরি কারম্যানকে পাঠিয়েছিল গারল্যান্ডকে নজর রাখতে। সুতরাং এরিকা কোৎ দ্য আজীর-এর কোথাও আছে। ঠিক কোথায় আছে এরিকা?

গো টু হেল। কাঁচের অ্যাসট্রে ছুঁড়ে কাঁচের জানালা ভেঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছিল মার্সিয়া। ঘাড়ে প্রচণ্ড চোট লেগে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।

ওর ধান্দা খারাপ দেখে স্মারনফ ওর ঘাড়ে হাতের তালুর ধার দিয়ে ক্যারেটে চপ মেরেছে।

মালিক ঘুরে ঘুরে ঘরটা দেখে, সুন্দর ঘর। এই ঘরটা যদি আমার হতো। বিশেষ করে ম্প্রিংগারের আঁকা ওই স্কেচটা। পাখীরা উড়ছে। মস্কোয় নিজের বিশ্রী ফ্ল্যাটের কথা মনে হতেই ঘেন্না হয়।

ততক্ষণে পকেট থেকে সিরিঞ্জ বার করে মার্সিয়ার শিরায় চড়া ডোজে স্কোপোলামিন ইনজেকশন স্মারনফ দিয়েছে।

আধঘণ্টা পরে মার্সিয়া ঘুমের মধ্যে কথা বলে। এরিকা আর মার্ক গারল্যান্ড এজ-এ ডোরির বাগান বাড়িতে আছে। বাড়িটার নাম ভিলা হেলিয়স। ওহ্যালোরানের ছজন সান্ত্রী বাড়িটা পাহারা দিচ্ছে–

এবার তোমার দুঃখের কথা তাই না? মেয়েটা দেখতে ভাল—

অন্ধকারে সব বেড়াল আর সব মেয়েমানুষই এক দেখায়। স্মারনফ বলে, পৃথিবীতে একটা মেয়েমানুষ কমলে কিছুই হয় না।

পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করো,বলে, মালিক লিফটে নেমে এদিক ওদিক তাকিয়ে গাড়িতে স্টার্ট দেয়।

স্মারনফ মার্সিয়াকে দাঁড়াতে সাহায্য করে। তোমার একটু ঠাণ্ডা হাওয়া দরকার।

-খোলা ফ্রেঞ্চ উইন্ডো দিয়ে মার্সিয়াকে ব্যালকনিতে নিয়ে যায়।

ওষুধের ঘোরে ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে মার্সিয়া রেলিং ধরে দাঁড়ায়।

স্মারনফ দেখে, আশে পাশের অন্য কোন ব্যালকনিতে কেউ নেই। নীচে রু দ্য লা তুরে এর জনশূন্য পথ।

মার্সিয়ার পিছনে স্মারনফ দাঁড়িয়ে ওর পায়ের গোছ দুটো ধরে ওপর দিকে টান দেয়।

চারতলা থেকে যখন সেনীচে দাঁড় করানো গাড়ীর ছাদে পড়ে–তখন লাশটার ঘাড়, মেরুদণ্ড ও ডান হাতের হাড় ভেঙে গেছে।

*

কম্যুনিষ্ট চীন বনাম কমুনিষ্ট রাশিয়া

 ডোরির ফোন।

আমার সেক্রেটারী মিস মার্সিয়া ডেভিস আধঘণ্টা আগে খুন হয়েছে। তার ফ্ল্যাটের জানলা দিয়ে তাকে কেউ রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। তার হাতের শিরায় ইনজেকশনের দাগ। সম্ভবতঃ আমাদের শত্রুরা তাকে কোপোলামিন ইনজেকশন দিয়ে এরিকা ওলসেনের ঠিকানা জেনেছে।

এটা বোধ হয় সোভিয়েত স্পাই মালিকের কাজ।

আমারও তাই মনে হয়। এরিকাকে তুমি টের্যাসে যেতে দিও না। পাহাড়ের ওদিক থেকে কেউ গুলি করতে পারে।

আমি ওদিকে একজন গার্ড রাখবো। ভালো কথা, এরিকা কালো আঙ্গুরের মত কি একটা জিনিষের কথা বলছে, তুমি কুং-এর ফাইলটা পাঠাও তো–

ফোন রেখে গারল্যান্ড সার্জেন্ট ওলীয়ারিকে ডাকে।

সার্জেন্ট, পাহাড়ের ওধারে একজন লোক আর একটা কুকুরকে পাহারায় রাখো

তুমি তো জানো গারল্যান্ড, পাহাড়ে ওঠার কোন রাস্তা নেই। পেছনের রাস্তা ও ভিলার মধ্যে পাহাড়। আমাদের পেছনের দিকটা সম্পূর্ণ নিরাপদ

‘ও’ লীয়ারী। এটা আমার অর্ডার। ওখানে একটা লোক আর একটা কুকুর থাকবে।

ঠিক আছে।

ইতিমধ্যে…

সমুদ্রের ধারের একটা ছোট ভিলায় ডোরির ভিলার ম্যাপের সামনে ঝুঁকে পড়েছে মালিক। স্মারনফ ও স্থানীয় সোভিয়েত এজেন্ট পেট্রোভকা।

পেট্রোভকা বলে, সামনের গেট ছাড়া কোন রাস্তা নেই, ছজন সশস্ত্র সান্ত্রী আছে—

 মালিক বলে, পেছনের এই উঁচু রাস্তাটা থেকে পাহাড়ে নামার কোন সুঁড়িপথ নেই?

ম্যাপে তো নেই—

ম্যাপে না থাকলে, আছে কিনা খোঁজ নাও।

.

একটু পরে…

এস্টেট এজেন্ট এনরি ঘুমের অফিসে পেট্রোভকা। আপনি মঁসিয়ে ডোরির ভিলার পিছন দিকে জমি কিনতে চান? জমি আছে, তবে জল নেই।

সে হবে এখন। কিন্তু পেছন দিক থেকে পাহাড়ে নামার রাস্তা আছে কি?

রাস্তা একটা ছিল, পুরনো স্কেচ ম্যাপ দেখায় মে, তবে এখন কেউ ব্যবহার করে না। অতএব, এবড়ো খেবড়ো, পিছল, আলগা মাটি…

এরই মধ্যে…

 নিসের ভিঙ্গ ফ্রোঁসে গিরিবর্ত পেরিয়ে ছোট একটা হোটেলে পৌঁছেছে কমুনিস্ট চীনের তিন স্পাই–পার্ল কুও, সাদু মিচেল, জো জো চ্যানডি। হোটেলউলি রুবি কুও পার্লের মাসী।

জো জো চ্যানডি খোঁজ নিল যে আর্মি পাহারা দিচ্ছে। কি করে ঢোকা যাবে, মার্কিন ফৌজের লোক আছে। অ্যালসেশিয়ান কুকুরও আছে। সামনে উঁচু দেয়াল। মেয়েটা ভিলা থেকে না বেরোলে কিছু করা যাবে না। বাড়ির পেছন দিকটায় পাহাড়। সামনের গেট থেকে ভিলাটা ভালো দেখাই যায় না।…

তুমি আমাদের গ্রুপের সবচেয়ে বুদ্ধিমান লোক। এখন তুমি ঠিক করো, কি করতে হবে…

পার্ল গিয়ে রুবির সঙ্গে কথা বলে। ফিরে এসে বলে,

মাসী বলছে পাহাড়ের পেছনের উঁচু রাস্তা থেকে পাহাড়ে উঠে ভিলার পিছনদিকে যাবার; একটা সঁড়িপথ আছে। এখন ওটা ব্যবহার হয়না ।

কিন্তু ওরা যদি রাস্তাটার কথা জেনে থাকে?যদি পেছনের রাস্তায় ওদের সান্ত্ৰীবাকুকুর থাকে?

পার্ল বলে, একজন সান্ত্রী বা একটা কুকুরে কিছু হয় না, জো-জোর কাছে পয়েন্ট টোয়েনটি টু টেলিস্কোপিক রাইফেল আর সাইলেন্সার আছে–

ভায়োলিনের কেসের ভেতরে টেলিস্কোপিক রাইফেলকে খোলা দুভাগে পার্টস আর সাইলেন্সার রাখা আছে। দুটোই জাপানী ব্রান্ডের সকাল ৪টা ৫৫র ফ্লাইটে নিয়ে এসেছে সস্তা ফুলকাটা ফ্ৰকপরা এক চাইনিজ যুবতী। ভায়োলিনের কেসের ভেতরে রাইফেলের পার্টস। পুলিশ কোন সন্দেহ-ই করেনি।

রাইফেলের পার্টসগুলো ফিট করে সাইলেন্সার লাগিয়ে দুরের একটা গাছের দিকে নিশানা ঠিক করতে করতে চ্যান্ডি বলে, ধরে নাও, মেয়েটা মরেই গেছে।

এরই মধ্যে…

.

মার্ক গারল্যান্ডের কথা মাফিক বাধ্য হয়ে ভিলার পিছনদিকের পাহাড়ের পেছনের যে রাস্তাটা গ্রাদ কার্নিশের দিকে গেছে, সেখানে পাহারা দিতে একজন সান্ত্রী পাঠিয়েছে সার্জেন্ট ওলীয়ারি।

ট্যুরিস্ট বাসগুলো দুপুরবেলা একের পর এক আঁকাবাঁকা রাস্তা বেয়ে পাহাড়ের চড়াইয়ে উঠছে। ফটো তোলার জন্য মাঝে মাঝে থেমে থেমে চলেছে।

সান্ত্রী ডেভ ফেয়ারফ্যাক্স জীপে বসে বিরক্ত চোখে ট্যুরিস্টদের দেখছে। তার অ্যালসেশিয়ান কুকুরটা জীপের পেছনের সীটে। কড়া রোদে পাহারা দিতে না হলে এতক্ষণে সে তার ইয়ার দোস্তদের সঙ্গে জুয়া খেলে সব টাকা জিতে নিতে পারতো।

টাকাটা ওর দরকার। কদিন আগেই ভিইফ্রাস বন্দরে এক ফরাসী যুবতীর সঙ্গে তার আলাপ হয়েছে। কিন্তু নেভীর ছোকরাদের সঙ্গে মেয়ে পটানোর ব্যাপারে প্রতিযোগিতায় নামা খুব শক্ত ব্যাপার। ওরা জাহাজ থেকে নামলেই খুপসুরৎ মেয়েগুলো ওদের ঘিরে ধরে।

তিনটে ট্যুরিস্ট বাস রাস্তা দিয়ে চলে গেল। একটা লোক পুরু কাঁচের পাসনে চশমাওলা, পাচার মত মুখ বাসের জানলা থেকে ঘাড় উঁচিয়ে জীপের ফটো তুললো। ওকে মুখ ভ্যাঙায় ফেয়ারফ্যাক্স।

অসহ্য গরমে জীপ চলছে। বাড়ির সামনের ছায়াঢাকা বাগানটা কতো ঠাণ্ডা। লাইন দিয়ে টুরিস্ট বাস চলছে। ওভারটেক করতে পারছে না।

কালো রঙের ৪০৪ মডেলের একখানা গাড়ি শ্লথ ট্রাফিকের স্রোতের মধ্যে, এক সুন্দরী ভিয়েনামী মেয়ে ড্রাইভ করছে। ওর পাশে সেই রোগা ছোট কুকুতে চোখ লোকটা। পেছনের সীটে নোংরা অগোছালো পোষাকে তরুণ বীটনিক সঙ্গে একটা ভায়োলিন।

পার্ল ফিসফিস করে বলে, বাঁদিকে।

সাদু আর জো জো ফৌজী জীপ দেখে চমকে ওঠে, তবে কি ইয়াঙ্কিরা সঁড়ি পথটার কথা জেনে গেছে।

জো জো নিজের পয়েন্ট থারটি এইট পিস্তলটা সাদুকে দেয়। সাদু তাড়াতাড়ি ট্রাউজারের ওয়েস্ট ব্যান্ডে পিস্তলটা লুকিয়ে রাখে।

সে ভয় পাচ্ছে।

ইয়াঙ্কি সান্ত্রীর নজরের আড়ালে রাস্তার বাঁকের মোড়ে পৌঁছে পার্ল গাড়ীর বাইরে হাত দেখিয়ে সিগন্যাল দেয়। সে গাড়ি থামাতেই পেছনে ট্রাফিকের ধীরবহমান স্রেত থামে।

পার্ল বলে, তাড়াতাড়ি–আধঘণ্টা পরে আসবো, ক্যামেরাটা নিতে ভুলো না।

সাদু ১৬ মিলিমিটার মুভি ক্যামেরা নিয়ে নামে। তার সঙ্গী জো জোর কাছে একটা ভায়োলিন আর একটা হ্যাঁঙারস্যাকের ভেতরে খাবার আর মদ।

দীর্ঘদিন অব্যবহারে পাহাড়ী সঁড়িপথ ঘাস আর ঝোঁপঝাড়ে ঢাকা। জীপ যেখানে দাঁড়িয়েছে, সেখান থেকে কয়েকশ মিটার দূরে সঁড়িপথের মুখ।

ফেয়ারফ্যাক্স এক লহমার জন্যে চোখ খুলে দেখলো, দুটো লোক–ওদের একজন মুভি ক্যামেরা নিয়ে পাহাড়ের ওপর থেকে নীচের ফটো তুলছে। সে ভাবে, ট্যুরিস্ট।

আর একটা ট্যুরিস্ট বাস এসে সাদু ও জীপের মাঝখানে যেই আড়াল করেছে, তখন সেই রাস্তা বদলে সঁড়িপথে ঢুকে পড়ে সাদু ও জো জো। ফেয়ারফ্যাক্স দেখেনি কিন্তু অন্য ট্যুরিস্টরা তাদের দেখেছে।

ট্যুরিস্ট বাস যাচ্ছে, ফেয়ারফ্যাক্স রেডিওর নব ঘোরাচ্ছে, ক্যামেরা আর ভায়োলিন হাতে লোক দুটোর দিকে কোন খেয়ালই করেনি।

ডোরির ভিলা দেখতে পেয়ে সাদু নিশ্চিন্ত হয় যে কোনও সান্ত্রী নেই, আবার বড় রাস্তায়। ফিরে আসে।

এরই মধ্যে জো জো এমন জায়গায় পৌঁছেছে যেখান থেকে নীচে ডোরির ভিলার ওপর তলার সমতল ঝুল বারান্দা দেখা যাচ্ছে। টেলিস্কোপে দেখে সে, টেরাসের প্রত্যেকটা পাথর স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

.

বেলা ১টা-৩০মিনিট..

..স্থানীয় সোভিয়েত স্পাই পেট্রোভকা জানে। এতক্ষণে মালিক অধৈর্য হয়ে উঠেছে। পেছনের বড় রাস্তা থেকে সঁড়িপথ পাহাড় বেয়ে গেছে। সে ম্যাপে দেখেছে। কিন্তু কোথায়! বড় রাস্তার মোড়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে সে দেয়াল ডিঙিয়ে পাহাড় বেয়ে নামছে। মাঝে মাঝে পা পিছলে যাচ্ছে, শেষ পর্যন্ত সে পুরনো দিনের পায়ে চলা সরু পাহাড়ী রাস্তাটা খুঁজে পায়।

একটা নুড়ি পাথর গড়িয়ে পড়ে। নিঃশব্দে ঝোঁপের মধ্যে ঢুকে হামাগুড়ি দিয়ে বসে জো জো। এদিকে কে যেন আসছে। রাইফেলের ট্রিগারে আঙ্গুল স্থির করল।

হাতে সাত পয়েন্ট তেষট্টি মিলিমিটার ক্যালিবারের মসার পিস্তল : সরু পাহাড়ী রাস্তা দিয়ে সোভিয়েত রাশিয়ার স্পাই পেট্রোভকা নামছে। কনিষ্ট চীনের পেশাদার খুনী জো জো চ্যানডির রাইফেলের পয়েন্ট টোয়েনটি টু বুলেটে পেট্রোভকার কপালের হাড় চুরচুর হয়ে যায়।

জো জো. রাইফেলটা আবার লোড করে। তারপর পেট্রোভকার লাশটা ঝোঁপের মধ্যে লুকিয়ে রাখে।

সমুদ্র সৈকতের ছোট্ট ভিলায় তখনো পেট্রোভকারের জন্যে অপেক্ষা করছে দুই সোভিয়েত স্পাই মালিক আর স্মারনফ।

*

 যখন ভাঙলো মিলন মেলা

 মার্ক গারল্যান্ডের খুব ভোরে ঘুম ভাঙে।

আমি নিজের ঘরে যাচ্ছি, প্রেমের শয্যায় উঠে বসেছে নার্স জিনি রোশ। কাল সে চুলে পেরক্সাইড ঢেলেছে। এখন বহু চুল অগোছালো। তার নগ্ন পিঠ, কোমর ও নিতম্ব পেছন থেকে গারল্যান্ড দেখে। জিনিকে জড়িয়ে ধরে সে ওকে বুকে টেনে নেয়।

এখনই যেয়ো না।

না, প্লীজ, জিনি উঠে দাঁড়ায়, তোমার বয়স আমার দ্বিগুণ।

আমার সয়ে যাবে, যদি তুমি সইতে পারো

 ভেবে দেখবো

আবার কবে দেখা হবে

হাসি চেপে জিনি বলে, আমি তো হাসপাতালেই থাকবো। হাসপাতালটা তো পালিয়ে যাচ্ছেনা।

ব্রেকফাস্টে কফি, অরেঞ্জ জুস, ডিম, হ্যাম, ব্লু ট্রাউট মাছ। ডোরির পয়সায় ব্রেকফাস্ট মন্দ লাগেনা গারল্যান্ডের।

জিনি এসে খবর দেয়, এরিকার ঘুম ভেঙেছে। ও টেরাসে যেতে চাইছে।

সুইডিস রূপসীর পরনে আজ নীল পোক।

হ্যালো মার্ক, চলো, সমুদ্রে সাঁতার কাটবো

না ডার্লিং, ডাক্তার বলেছে, চড়া আলোয় বেরোনো একদম বারণ, তাহলে তোমার স্মৃতি ফিরবে না।

মার্ক, সত্যিই তুমি আমার স্বামী?

ম্যারেজ সার্টিফিকেট দেখবে?

আমাদের কবছর বিয়ে হয়েছে?

তিন বছর।

বাচ্চা হয়নি কেন?

এখনো আমরা ঠিকমতো সংসার পাতার সুযোগ পাইনি।

তোমার বিজনেস?

হ্যাঁ, আই, বি, এম-এর হয়ে কম্পুটারের ব্যবসা করি।

তাহলে তোমার বাগানে ফৌজী পাহারা কেন?

দু একদিনের মধ্যে ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী এখানে আসছে। গতমাসে কে যেন ওঁকে বোমা ছুঁড়ে মারতে চেয়েছিল। ওরই নিরাপত্তার জন্যে..পিকিং-এর কথা তোমার মনে পড়ে এরিকা?

পিকিং? এরিকার হাত দুটো মুঠো করা, না পিকিং আমার ভালো লাগেনি, হ্যাঁ ভালো লেগেছিল…কালো আঙ্গুর…সোনালী ড্রাগন…আমার কাছে ছিল…আমার আর কিছুমনে পড়ছেনা।

অনেকক্ষণ পরে…

গারল্যান্ড একা ঘরে বসে চীনা রকেট বিজ্ঞানী ফেং হো কুং-এর ফাইল পড়ছে। ফাইলের শেষের দিকে…দ্য আর্ট অ্যান্ড দ্য কন্যাসার ম্যাগাজিনের কাটিং,…কুং পরিবারের মূল্যবান পাথর ও অলঙ্কারের সংগ্রহশালায় আছে পৃথিবীর একমাত্র কালো মুক্তো। তৃতীয় শতাব্দীতে এই মুক্তোর মালিক ছিল চীনের প্রাচীর যে তৈরী করেছে সেই শি হুয়াং তি। ১৭৫৩ খৃঃ এই মুক্তো কুং পরিবারের দখলে আসে। সেই থেকেই মুক্তোটা ওদের দখলেই রয়েছে…

তাই কালো আঙুরের কথা বলছিল এরিকা?

একটু পরেই…

মতেকার্লোর বুলেভার্দ দ্য মূল্যায় জুয়েলারীর ব্যবসায়ী জ্যাক ইউ-কে এক কালে ব্ল্যাকমেলের হাত থেকে বাঁচিয়েছিল মার্ক।

ইউ, আঙুরের মতো দেখতে কালো মুক্তোর ব্যাপারে কিছু বলতে পারো?

হ্যাঁ, ওটা কুং পরিবারের সম্পত্তি, পিকিং-এ আছে।

কুং-এর মুক্তোটাই পৃথিবীর একমাত্র কালো মুক্তো। পারস্য উপসাগরের তৃতীয় শতাব্দীতে কোন জেলে এই মুক্তো পেয়ে শি হুয়াং তি-কে বিক্রী করে। একটা থিওরী আছে। মুক্তোটা কালো হওয়ার কারণ অক্টোপাসের কালো থুতু ঝিনুকের মধ্যে ঢুকেছিল। কুং পরিবার মুক্তোটার মালিক হওয়ার পর ১৮৮৭তে ফেং হো কুং-এর বাবা ওদের পাথর ও জুয়েলারীর একটা ছবিওলা ক্যাটালগ ছাপায়।

ইউ অনেক খোঁজার পর ক্যাটালগটা বার করে। এই দেখো, কালো মুক্তোর ফটো

বড় আঙুরের মত সাইজের কুচকুচে কালো মুক্তো সোনার তৈরী ড্রাগনের পিঠে বসান।

ফটোটা খুঁটিয়ে দেখে গারল্যান্ড বলে, ধরো কুং এটা গোপনে বিক্রী করতে চায়। তোমার কোন খদ্দের আছে, যে কিনতে পারবে? কতো দাম দেবে?

অন্ততঃ তিরিশ লাখ ডলার। কিন্তু গারল্যান্ড, ব্যাপারটা কি? কুং কি সত্যিই ওটা বেচতে চায়?

এখন না পরে বলবো।

গারল্যান্ড ভেবেছে, ডোরির কাছে কালো মুক্তোর ব্যাপারে কিছু বলবে না।

গারল্যান্ড ডোরির ভিলায় ফিরে ডোরির ফোন পায়।

তোমার কথামত অ্যাস্টের্গ হোটেলে খোঁজ নিয়ে জানলাম, সেখানে মেয়েটা নাওমি হিল নামে ঘর ভাড়া নিয়েছিল। কিন্তু দুটো সুটকেসের মধ্যে একটা পাওয়া গেছে, আর একটা কোথায় গেল?

গারল্যান্ড ভাবলো, কালো মুক্তো…নিখোঁজ দুনম্বর স্যুটকেস…

জিনি, তুমি টের্যাসে রোদ পোয়াবে না?

যাচ্ছি। এরিকা খুব সুন্দরী তাই না?

তুমি ও সুন্দরী, ওকে জড়িয়ে তোমার এমন কিছু আছে ওর যা নেই

 জিনিষটা কি?

আজ রাতে বলবো।

বেশ, ফ্রেঞ্চ উইনডো দিয়ে টেরাসে যায় জিনি।

ঠিক তখনই…।

ভিলার পেছনে টেরাসের মুখোমুখি পাহাড়ের ওপরে কম্যুনিস্ট চীনের ফরাসী স্পাইচক্রের পেশাদার খুনী জো জো চ্যানডি গরমের চোটে কোট খুলেছে। শার্টের হাতা গুটিয়েছে। হ্যাঁভারস্যাক থেকে মদের বোতল বার করে আধ বোতল মদ গিলেছে। আরও গরম লাগছে; মদের বদলে কোকাকোলা আনা উচিত ছিল। চার ঘণ্টার মধ্যে কেউ আসেনি। সে রুটি বার করে কামড় দেয়, হঠাৎ তার শরীর শক্ত হয়ে ওঠে। রুটি ফেলে সে রাইফেল তোলে।

এতোক্ষণে

মাথায় ব্লন্ড চুল, পরনে বিকিনি,–মেয়েটা টের্যাসে দাঁড়িয়ে চামড়ায় সানট্যান স্প্রে করছে রাইফেলের টেলিস্কোপিক সাইটে দেখা যাচ্ছে। নার্স জিনির চুল কালো। এরিকা ওলসেনের চুল সোনালী। অতএব–এই এরিকা।

টেলিস্কোপিক সাইটের ক্রশসেকশন মেয়েটার কপালের মাঝখানে স্থির হয়।

মেয়েটা নিশ্চল দাঁড়িয়ে আছে।

 নিঃশব্দে, নিশ্বাস বন্ধ করে জো জো ট্রিগার টেপে।