নবীনকে যেদিন জেলখানায় পাঠাল, তার পরদিন সকালেই নগেন পাকড়াশি ভোলারাম আর চণ্ডীচরণকে ডেকে বলল, “এবার টাকাটা যে উদ্ধার করে আনতে হয় বাপু। দেরি করলে বেহাত হয়ে যেতে পারে।”
ভোলারাম বলে, “ও নিয়ে ভাববেন না। আমাদের লোকেরা আগাগোড়া নজর রেখেছে। নবীনের পাতানো এক পিসি আছে, ননীবালা। অনেক বয়স। টাকাটা তার হেফাজতেই আছে।” নগেন ঠান্ডা গলায় বলল, “আজই উদ্ধার করা চাই।” নগেনকে সমঝে চলে না, এমন লোক তল্লাটে নেই। ভোলারাম একবার বিচালিঘাটের এক মহাজনের কাছে নগেন পাকড়াশির দশ লাখ টাকা পৌঁছে দিতে যাচ্ছিল। এত টাকা হাতে পেয়ে তার একবার মনে হয়েছিল, টাকাটা নিয়ে পালিয়ে যায়। চিরতরে ভিনদেশে পালিয়ে গেলে নগেন তার নাগাল পাবে না।
আর সেদিনই হঠাৎ টাকার বান্ডিলটা তার হাতে দিয়ে নগেন ভারী আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করল, “হ্যাঁ রে ভোলা, এই যে তুই মাঝে-মাঝেই এত এত টাকা একে-ওকে পৌঁছে দিয়ে আসিস, তা তোর কখনও লোভ হয় না? ইচ্ছে হয় না, টাকাটা গাপ করে পালিয়ে যেতে?”
ভোলারাম কেঁপে-ফেঁপে অস্থির। বলল, “আজ্ঞে না।”
“না হলেই ভাল। আজ পর্যন্ত আমার পয়সা কেউ হজম করতে পারেনি কিনা।”
আর ওই যে গুন্ডা চণ্ডী, তার ভয়ে সবাই থরহরি। কিন্তু চণ্ডীও নগেনের চোখে চোখ রেখে কথা কওয়ার সাহস পায় না। নিশিন্দাপুরে নগেনের বাগানবাড়িতে কালোেচরণ দাসের মতো সাংঘাতিক হেক্কোরকে বেয়াদবির জন্য ডান হাতের কবজি মুচড়ে ভেঙে দিয়েছিল নগেন। অথচ কালো একজন পালোয়ান লোক। সেই থেকে চণ্ডী কখনও নগেনের সঙ্গে পাঙ্গা নেওয়ার কথা ভাবেও না।
টাকাটা উদ্ধার করা শক্ত কিছু ছিল না। ভোলারাম আর চণ্ডী এক রাতে গিয়ে বুড়ির উপর চড়াও হল। বেশি কিছু করতেও হয়নি, গলায় একখানা দা চেপে ধরতেই বুড়ি হাউমাউ করে বলে দিল, “উঠোনে পুবধারে কাঁঠাল গাছের তলায় পোঁতা আছে বাবা। প্রাণটা রক্ষে করো, ও তোমরা নিয়ে যাও।”
কাঁঠাল গাছের তলা বেশি খুঁড়তেও হয়নি। হাতখানেক গর্তের নীচেই পিতলের ডাবরখানা ছিল। তাতে পাঁচ লাখ নগদ টাকা।
সুতরাং সব দিক দিয়েই সুষ্ঠু সমাধান হয়ে গিয়েছিল। পল্টুকে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনে নামধাম পালটে অনেক দূরে কোথাও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার বদলে ফাঁসি যাওয়া একরকম ঠিকই হয়ে ছিল নবীন দাসের। পাঁচ লাখ টাকাও উদ্ধার হয়ে গিয়েছে। সুতরাং নগেন নিশ্চিন্ত ছিল। ফঁসিটা মানে-মানে হয়ে গেলেই হল।
ঠিক এই সময়ে খবর এল যে, নবীন পালিয়েছে। বিনা মেঘে বজ্রাঘাত! নবীন পালিয়েছে মানে বিপদ। যদি ধরা পড়ে, তা হলে সব ষড়যন্ত্রটাই ফাঁস হয়ে যাওয়ার কথা। পুলিশ এসে নগেনের বাড়ি রোজ তছনছ করতে লাগল পলু পাকড়াশির খোঁজে।
নগেন ঠান্ডা মাথার লোক। মোটেই উত্তেজিত হল না। চণ্ডীকে ডেকে বলল, “নবীন পালিয়েছে বটে, কিন্তু ওর লোকবল বা অর্থবল নেই। বড় জোর ছুটে আর হেঁটে কোথাও গিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। বেঁচে থাকলে আমাদের বিপদ। কারণ, ধরা পড়ে অনেক কথা কইবে। সুতরাং পুলিশ ওকে জেরা শুরু করার আগেই নিকেশ করা চাই। এমন ব্যবস্থা করে আসবি, যাতে লাশ শনাক্ত করা না যায়।”
দু’জন সঙ্গী নিয়ে চণ্ডী বেরিয়ে পড়ল।
পল্টুর পালানোর খবর পেয়েছিল শিবতলার ভুবন মণ্ডলও। ভুবন মণ্ডলকে দৈত্য বললেও বলা যায়। যেমন তাল গাছের মত ঢ্যাঙা, তেমনই পালোয়ানি চেহারা। ভয় বস্তুটি কী, তা তার জানা নেই। সে যদি ষণ্ডামি-গুন্ডামির পন্থা নিত, তা হলে গোটা পরগনায় তার জুড়ি কেউ থাকত না। কিন্তু ভাগ্যক্রমে ভুবন মণ্ডল ধর্মভীরু মানুষ। মেজাজও ঠান্ডা। কিন্তু একটা মুশকিল হল, যদি কোনও কারণে সে হঠাৎ রেগে যায়, তা হলে চারপাশে কুরুক্ষেত্র বাধিয়ে ছাড়ে। তখন আর তার কাণ্ডজ্ঞান বলে কিছু থাকে না। বছর দুই আগে তার সহোদর ভাই গগন মণ্ডল যখন বাজিতপুরে খুন হয়, তখনও একবার মাথায় খুন চেপেছিল তার। কিন্তু খুনিটা কে, তা জানা ছিল না বলে সে কয়েকটা মোটাসোটা গাছ দু হাতে উপড়ে আর কয়েকটা পাথর কিলিয়ে ভেঙে রাগটা প্রশমিত করে। তারপর যখন খুনি পল্টু পাকড়াশি ধরা পড়ে, তখন সে পল্টুকে গলা টিপে মারবে বলে প্রথমে আদালতে, পরে লকআপেও হানা দেয়। কিন্তু পুলিশের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারেনি। তবে শেষ পর্যন্ত পল্টুর ফাঁসির হুকুম হওয়ায় সে খানিকটা ঠান্ডা হতে পেরেছিল।
পল্টু পালিয়েছে শুনে ভুবন মণ্ডলের শান্ত মাথাটায় আবার দপ করে আগুন জ্বলে উঠল।
তবে সে তাড়াহুড়ো করল না। এটা সে জানে যে, কলেবরটা বিরাট হলেও এবং গায়ে অসুরের জোর থাকলেও তার বুদ্ধি খুব একটা বেশি নয়। এর আগে গোঁয়ার্তুমি করতে গিয়ে সে বিস্তর ঝামেলায় পড়েছে। তাই মাথা ঠান্ডা রাখার জন্য বড় একখানা বগিথালায় একথালা পান্তাভাত, একছড়া তেঁতুল আর আখের গুড় দিয়ে সাপটে মেরে দিল সে। তারপর অনেকক্ষণ ধরে তার প্রিয় কুড়ুলখানা পাথর আর শিরীষ কাগজে ঘষে ভাল করে ধার তুলল। খাটো ধুতিখানা আঁট করে মালকোচা মেরে পরে ফেলল। গায়ে খাটো পিরানখানা চাপিয়ে মা কালীকে পেন্নাম ঠুকে বেরিয়ে পড়ল।
বিশু গায়েনের সঙ্গে যে গোখরো সাপের খুব মিল আছে, এটা অনেকেই মানে। হিলহিলে পাকানো চেহারা, চোখে হিমশীতল চাউনি আর প্রখর বুদ্ধি।
কালীপদ নস্কর ছিল বিশুর জামাই। কালীপদ পল্টুরই বয়সি, ইয়ারবন্ধুও বটে। ব্যাবসাও করত একসঙ্গে। সেই ব্যাবসা নিয়েই একদিন বচসা হল, ঝগড়াঝাটি হল। মুখ দেখাদেখিও বন্ধ হয়ে গেল। তারপর কী হল কে জানে, একদিন ভোরবেলা এসে ঘুমন্ত অবস্থা থেকে তুলে কালীপদকে উঠোনে টেনে নিয়ে গিয়ে তার বউয়ের সামনেই খুন করে রেখে গেল পল্টু। বিশুর ওই একটাই সন্তান, মেয়ে মানময়ী। মাত্র আঠেরো বছর বয়সেই বিধবা মানময়ী এখনও হাহাকার করে রোজ কাঁদে। বিশুর সহ্য হয় না। পল্টুর ফাঁসির খবরে মেয়েটা একটু দম ধরেছিল।
বিশু অবশ্য কখনওই ভোলেনি। এখন পল্টুর জেল থেকে পালানোর খবর পেয়ে সে সকালবেলাতেই বেরিয়ে পড়ল। আশপাশের সব গাঁয়েই তার চেনা লোক আছে। তার ধান আর শস্যবীজের গাহেক সর্বত্র। লোকে তাকে ভয় পায়, খাতিরও করে।
লাটপুরের গন্ধর্ব সেনাপতি বলল, “পাকা খবর জানি না, তবে অষ্টপুর থানায় একজন ফেরারি আসামি ধরা পড়েছে বলে কানাঘুষো শুনেছি। দেখোগে যাও।”
গোখরো সাপের সঙ্গে বিশু গায়েনের একটু তফাতও আছে। সাপ জাতটার বুদ্ধি নেই। তাই কখনও পোষ মানে না, স্মৃতি বলে কিছু কাজও করে না। কিন্তু বিশু বুদ্ধিমান। সে যা করবে, তাতে নাটুকেপনা থাকবে না। হাল্লাচিল্লা বা হাঙ্গামা থাকবে না, নিঃশব্দে কাজ হয়ে যাবে।
মোটরবাইকের মুখ ঘুরিয়ে বিশু অষ্টপুর রওনা হয়ে পড়ল।
অষ্টপুরের হরেন চাটুজ্যের মা মৃদুভাষিণী দেবী ভোররাতে স্বপ্ন দেখলেন, যিশুবাবার হাত আর পায়ের ক্ষতস্থান থেকে নতুন করে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। প্রণাম করে উঠেই এই দৃশ্য দেখে তিনি “ও মাগো,” বলে আর্তনাদ করে তাড়াতাড়ি বেদিতে উঠে আঁচল দিয়ে ক্ষতস্থান মুছিয়ে দিতে দিতে বললেন, “পেরেকগুলো এবার খুলে নিলেই তো হয় বাবা! এতদিন হয়ে গিয়েছে, এখনও পেরেকগুলো আছে কেন বলো তো?”
যিশুবাবা ভারী সুন্দর করে হেসে বললেন, “ও কি আজকের পেরেক রে! যতবার খুলবি, ততবারই মানুষ ফের পেরেকে গেঁথে দেবে আমায়। আমার ক্ষত তো সারবার নয়।”
“কেন বাবা, কেন এত কষ্ট তোমার?”
“আমার কোনও কষ্ট নেই। মানুষের কষ্টই পেরেক হয়ে আমাকে কষ্ট দেয়। ওই যে ছেলেটাকে ওরা কত মারল, সব মার এসে লাগল আমার গায়ে। জুড়োই কী করে বল তো?”
“তাই তো বাবা! মানুষের কষ্টই তো তোমার কষ্ট। ছেলেটাকে বড্ড মেরেছিল ওরা। মানুষের কি আর মায়াদয়া আছে!”
গির্জার পাঁচধাপ সিঁড়ি, তারপর একটু বাঁধানো জায়গা, সেটা পেরিয়ে দরজা। ওই দরজার বাইরেই শুয়ে ছিল উদ্ধব খটিক। শোওয়ার পক্ষে দিব্যি জায়গা। উপরে ছাউনি আছে, বৃষ্টি-বাদলায় কষ্ট নেই।
ভোরবেলা একজন উটকো লোককে দরজা আটকে শুয়ে থাকতে দেখে মৃদুভাষিণী অবাক আর বিরক্ত হয়ে বললেন, “কে রে অলপ্পেয়ে লক্ষ্মীছাড়া! দরজা আটকে শুয়ে আছিস? এটা কি জমিদারি পেয়েছিস হতভাগা? মুলুকে আর কোথাও শোওয়ার জায়গা জুটল না তোর?”
উদ্ধব আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে বলল, “আমার জন্য কে আর বিছানা পেতে রেখেছে বলুন! হা গো ঠাকুমা, লোকে যে বলে আপনি যিশু ভজনা করে খিরিস্তান হয়েছেন, সে কি সত্যি?”
“হলে হয়েছি, তাতে তোদের কী রে মুখপোড়া? বেশ করব খিরিস্তান হব, জুতোমোজা পরব, পাউরুটি খাব। তাতে তোর গায়ে ফোঁসকা পড়ে কেন? এখন পথ ছাড় তো বাপু, ভিতরে আমার কাজ আছে।”
“হুঁটপাট করা কি ঠিক হচ্ছে ঠাকুমা, ভিতরে ঝটপাট হচ্ছে যে!”
মৃদুভাষিণীর একগাল মাছি! বলে কী রে ছোঁড়া!
“গির্জায় আবার ঝটপাট দেবে কে? কার গরজ? কার মাথাব্যথা?”
উদ্ধব মাথা নেড়ে বলে, “তা জানি না, তবে রোজ সকালে গির্জার ভিতরে ঝটপাটের আওয়াজ শুনতে পাই।”
মৃদুভাষিণী থমকালেন, তাই তো! গির্জাটা সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কী করে থাকে, তা তো তিনি কখনও ভেবে দেখেননি। তিনি বললেন, “তা হ্যাঁ রে উদ্ধব, ঝটপাট কে দেয়, তা উঁকি মেরে দেখিসনি?”
উদ্ধব ফের মাথা নেড়ে বলে, “না ঠাকুমা, ওসব অশৈলী কাণ্ড। কাজ কী ওদের ঘাঁটিয়ে? মাঠে-ঘাটে, আনাচেকানাচে পড়ে থাকতে হয় আমাদের, কত অশৈলী কাণ্ডই চোখে পড়ে। কিন্তু ঘটাতে যাই না। যা হচ্ছে হোক, কাজ কী আমার খতেন নেওয়ার, না কী বলুন!”
মৃদুভাষিণী চিন্তিত মুখে বলেন, “তা তো বুঝলুম বাছা, কিন্তু আমার যে একটু কাজ ছিল।”
“এত ভোরে কী কাজ গো ঠাকুমা, আপনি তো মোমবাতি জ্বালাতে সেই সন্ধেবেলাটিতে আসেন!”
“ভোররাতে একটা খারাপ স্বপন দেখেছি রে বাপু, যিশুবাবার হাত-পায়ের ক্ষত দিয়ে রক্ত গড়াচ্ছে। তাই বড় দুশ্চিন্তা হল, ভাবলুম সত্যি কিনা গিয়ে দেখে আসি।”
উদ্ধব কিছুক্ষণ হাঁ করে থেকে বলল, “তাই আপনার হাতে ডেটলের শিশি, তুলো আর গজ দেখছি বটে! এঃ হেঃ, লোকে যে হাসবে ঠাকুমা! পাথরের যিশুর গা থেকে রক্ত বেরোবে কী গো! তবে আপনার ভক্তি আছে বটে। যিশুবাবাকে আপনি বড্ড ভালবাসেন দেখছি।”
“তা সত্যি। যিশুবাবাকে কেমন গোপালঠাকুরের মতো লাগে রে।”
“ও যিশুই বলুন আর গোপালঠাকুরই বলুন, মা কালীর কাছে কেউ লাগে না। যিশুবাবার ধরনধারণ তো মোটেই পছন্দ হয় না আমার, মেনিমুখো মিনমিনে পুরুষ, ধরেবেঁধে নিয়ে পেরেকে গেথে দিল আর উনিও অমনি গা এলিয়ে ঝুলে রইলেন! আর শিষ্যগুলোই বা কেমন ধারা, বাবা বারণ করল বলেই বাবাকে রক্ষে করতে কেউ এগোলি না! গোপালঠাকুরের কথাও আর কবেন না, সারাটা জীবন তো বাঁশি বাজিয়ে আর ফস্টিনস্টি করেই কাটিয়ে দিলেন, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে একটা তিরও ছোড়েননি। আর মা কালীকে দেখুন, কচাকচ মুন্ডু কেটে অসুরব্যাটাদের কেমন সবক শেখাচ্ছেন! দেখলে ভয়ও হয়, ভক্তিও হয়।”
“দূর পোড়ারমুখো, ঠাকুর-দেবতা নিয়ে কি ওসব বলতে আছে! আমাদের কালী ভাল, গোপালও ভাল, যিশুও ভাল। এ্যা রে, দেওয়ালের পেরেকে ঝোলানো চাবিটা দিয়ে দরজার তালাটা খুলবি তো! বসে আছিস কেন হাঁ করে? সৃষ্টির কাজ ফেলে এসেছি যে!”
শশব্যস্তে উঠে দরজায় কান পেতে উদ্ধব খানিকক্ষণ শুনে নিয়ে বলল, “ঝাড়পোঁছের শব্দ বন্ধ হয়েছে।”
তালাটা খুলে দরজা হাট করে দিয়ে বলল, “এবার যান ঠাকুমা।”
ভিতরে ঢুকে দেখা গেল যিশুবাবার মূর্তি যেমন কে তেমনই আছে। তবু মৃদুভাষিণী ভারী মায়াভরে পা আর হাতের ক্ষতস্থানগুলো তুলো দিয়ে পুঁছে দিলেন। চোখে জল আসছিল, মৃদু স্বরে বললেন, “তোমার বড় কষ্ট বাবা। ইচ্ছে হয় পেরেকগুলো উপড়ে ফেলে দিই।”
“কী যে বলেন ঠাকুমা, পেরেক ওপড়ালে আর যিশুবাবার থাকে কী? পেরেক না হলে কি যিশুঠাকুরকে চেনা যায়?”
মৃদুভাষিণী ফঁৎ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, “হ্যাঁ রে উদ্ধব, লোকে বলে তুই নাকি চোর?”
উদ্ধব মাথা চুলকোতে চুলকোতে সেঁতো হাসি হেসে বলে, “এই প্রাতঃকালটায় দিব্যি তো ঠাকুর-দেবতার কথা হচ্ছিল ঠাকুমা, হঠাৎ আবার ওসব কথা কেন?”
“লোকের কাছে শুনি তোকে নাকি হাতকড়া পরালে চোখের পলকে খুলে ফেলিস, গারদে পুরলে এক লহমায় তালা খুলে পালিয়ে যাস। হয়রান হয়ে হয়ে নাকি শেষ পর্যন্ত প্রাণপতি দারোগা হাল ছেড়ে দিয়েছে!”
“লোকের কথা ধরবেন না ঠাকুমা। তারা সব বাড়িয়ে বলে।”
“স্বপনে কী দেখলুম জানিস বাবা! ওই যে ছোঁড়াটাকে হাটুরে মার দিয়ে সবাই আধমরা করে তারপর ফাটকে পুরে রেখেছে, ওর জন্য যিশুবাবার বড় কষ্ট। তা বাপু, তোর যদি এতই হাতযশ, তা হলে ছোঁড়াটাকে চুপিচুপি বের করে দে না বাবা। পালিয়ে বাঁচুক।”
উদ্ধব মাথা নেড়ে বলে, “লাভ নেই গো ঠাকুমা, ছোঁড়া ফাঁসির আসামি। সদর থেকে পুলিশের দল আসছে নিয়ে যেতে। ফাঁসিতে ঝোলাবে। ছেড়ে দিলেও পালাতে পারবে না। ছোঁড়া তেমন পাকাঁপোক্ত মানুষ নয় কিনা।”
“আহা, ছোঁড়ার মা না জানি কত কান্নাকাটি করছে। দেখ না বাবা কিছু করতে পারিস কি না।”