৪. তিস্তা ভবনের গেটে

তিস্তা ভবনের গেটে ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে নেমে এল অর্জুন। একটু এগোতেই শুনতে পেল, কে? কী চাই?

দরোয়ান এগিয়ে এসেই চিনতে পারল, ও, আপনি স্যার!

আমার এক বন্ধু এখানে উঠেছেন। নির্মাল্য…

হ্যাঁ। আসুন।

দোতলায় নির্মাল্যর ঘরের দরজায় পৌঁছে দিল লোকটা। নির্মাল্য তৈরি ছিল। বলল, এসে গিয়েছিস? এক মিনিট!

ডিনার করিসনি তো? অর্জুন জিজ্ঞেস করল। হ্যাঁ।

কেন? অবাক হল নির্মাল্য।

কেন করলি? ওদিকে মা তোর জন্য বসে আছেন। কিছু না খেলে দুঃখ পাবেন। বলে অর্জুন দরোয়ানের দিকে তাকাল। সাহেবকে আমার বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। যদি দেরি হয়ে যায়, তা হলে আমার ওখানেই থেকে যাবে।

ঠিক আছে। দরোয়ান মাথা নাড়ল।

.

ট্যাক্সিতে উঠে নির্মাল্য বলল, তুই তো ভাল নাটক করতে পারিস!

না করলে লোকটা ভাবত, কোথায় নিয়ে যাচ্ছি তোকে। এখন কেউ ওর কাছে জানতে চাইলে বলবে, আমার বাড়িতে খেতে যাচ্ছিস।

বাংলায় কথা বলবি?

হ্যাঁ। ওর নাম ভীম, আমার পরিচিত।

ভীম গাড়ি চালাতে চালাতে বাঁ হাত তুলে নাচাল।

ভীমকে নির্দেশ দেওয়াই ছিল। শহর ছাড়িয়ে গাড়ি যখন হাইওয়েতে পড়েছে, তখন নির্মাল্য জিজ্ঞেস করল, আমরা যাচ্ছি কোথায়?

গীতলদহের মুখে কোনও একটা জায়গায়, যেখানে গাড়ি লুকিয়ে রাখা যাবে। গীতলদহ থেকে বেরোবার একটাই রাস্তা। পাগল বর্মনের বাড়িতে যদি আজ রাতে লোক আসে, তাদের নিশ্চয়ই ভোরের আগে ওই রাস্তা দিয়েই নিয়ে আসবে। আমাদের অপেক্ষা করে থাকতে হবে ওদের জন্য। অর্জুন বলল।

যদি না আসে?

দ্যাখ, এটা একটা চান্স নেওয়া। না এলে রাত জাগাই সার হবে।

রাত কেন জাগব! ঘড়ি দেখল নির্মাল্য, কয়েক ঘণ্টা দিব্যি ট্যাক্সিতে বসে ঘুমিয়ে নেওয়া যেতে পারে। নির্মাল্য হাসল, কিন্তু সত্যি যদি ওরা ওখান থেকে বের হয়, তা হলে আমরা কী করব? মুখোমুখি হব?

কখনও না। আমাদের কাছে কোনও আর্মস নেই। অবশ্য তোর কাছে আছে কিনা জানি না। অর্জুন বলল।

না, নেই।

ওদের কাছে থাকবেই। আমরা ওদের অনুসরণ করব। কোথায় শেল্টার নিচ্ছে, সেটা দেখব। তারপর ভাবা যাবে!

মাঝরাতে রাস্তায় কয়েকটা ছুটন্ত লরি ছাড়া অন্য কিছুর দেখা পাওয়া গেল না। যে ধাবায় ওরা বিকেলে গিয়েছিল, তার সামনে বেশ ভিড়। গীতলদহ থেকে আধ মাইল দূরে একটা বাঁকের মুখে এসে গাড়ি দাঁড় করাতে বলল অর্জুন। দু’পাশের জঙ্গলে আজ কালো অন্ধকার। ভীমকে সেটা দেখিয়ে বলল, তোমার ট্যাক্সি এই জঙ্গলের কোনওখানে এমনভাবে নিয়ে যাও যে, রাস্তা থেকে কেউ আমাদের দেখতে পাবে না। কিন্তু আমরা যেন একটু দূর থেকেই গীতলদহ থেকে বেরিয়ে আসা গাড়ি দেখতে পাই।

ভীম ট্যাক্সি থেকে নেমে এপাশ-ওপাশ দেখে এসে বলল, খুব ভাল জায়গা পেয়ে গিয়েছি। ট্যাক্সিটাকে একটু এগিয়ে নিয়ে সে ব্যাক করে রাস্তা ছেড়ে জঙ্গলের ভিতর ঢুকিয়ে দিল। ওইখানে একটা পায়ে চলা পথ থাকায় বেশি গাছপালা ভাঙতে হল না। যদিও এখানে সবই পলকা গাছ, যার আড়ালে চলে গেল ট্যাক্সিটা। হাত লাগিয়ে সামনের কাচ পরিষ্কার করল ভীম।

ভোর হতে এখনও তিন ঘণ্টা। ঘুমোনো যাক। নির্মাল্য বলল।

কাচ তুলে দিন। বহুত মশা এখানে। ভীম সতর্ক করল।

কাচ তুলতে তুলতে নির্মাল্য বলল, কোনও বন্য জন্তু নেই তো?

না সাহেব। তবে সাপ আর হাতি আছে। ভীম জবাব দিল।

ওগুলো বুঝি বন্য জন্তু নয়!

অর্জুন হেসে ফেলল, সাপকে কেউ জন্তু বলেছে বলে শুনিনি!

নির্মাল্য হেলান দিল। অর্জুন সামনে তাকাল। রাস্তাটার অনেকটাই সামনে, যদিও তার পুরোটাই অন্ধকারে ঢাকা। একটা লরি আসছে। হেডলাইটের আলোয় দু’দিক আলোকিত করে গীতলদহের দিকে চলে গেল। অর্জুন বুঝল, গীতলদহ থেকে গাড়ি বেরিয়ে এলে সেটা চোখ এড়াবে না। কিন্তু কোন গাড়িতে রাম-রহিমের লোক মানুষ স্মাগল করছে, সেটা বোঝা সম্ভব নয়।

চারটে বাজল। নির্মাল্য ঘুমোচ্ছে হেলান দিয়ে। ভীম ঢুলছে। অর্জুন তাকে জানাল, একটু নামতে হবে ভীম।

সঙ্গে সঙ্গে সোজা হল ভীম, চলুন।

জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে রাস্তার দু’পাশে তাকাল অর্জুন। তারপর ভীমকে বলল, রাস্তার পাশ থেকে বড় বড় পাথরগুলো তুলে এনে মাঝখানে রাখতে হবে, যাতে এখানে এসে গাড়ি থেমে যায়।

ওই সাহেবকে ডাকব?

না। আমরাই চেষ্টা করি। অর্জুন বলল।

মিনিট দশেকের মধ্যে রাস্তার উপর তিন ফুট দুরত্বে পাথরের স্তূপ বানিয়ে ফেলল ওরা। যে-কোনও গাড়িকে যেতে হলে ওই তূপ সরাতে হবে। নিশ্চিত হয়ে ওরা গাড়িতে ফিরে এল। অর্জুন মনে মনে প্রার্থনা করল, এই পথে যেন অন্য কোনও গাড়ি না আসে। দরজা বন্ধ করার শব্দে ঘুম ভাঙল নির্মাল্যর, কী হল?

এখনও কিছু হয়নি। অর্জুন বলল।

নাঃ। তোর আইডিয়া কাজে লাগল না।

বোধহয়।

বলতে না-বলতেই দূরে গাড়ির হেডলাইট দেখা গেল। গীতলদহ থেকে আসছে। অর্জুন নির্মাল্যকে চাপা গলায় বলল, কথা বলিস না।

ভীম বলল, মারুতি ভ্যান বলে মনে হচ্ছে।

গাড়িটা তীব্র বেগে আসতে আসতে ব্রেক কষে একেবারে সামনে পাথরের স্কুপের কাছে থেমে গেল। এক মিনিট চুপচাপ। কোনও কথা শোনা গেল না। তারপর সামনের সিট থেকে একজন এবং ড্রাইভার নেমে দাঁড়াল। অন্ধকার এখন অনেকটা পাতলা। অর্জুন দেখল, একজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। লোকটা চিৎকার করল, কে পাথর রেখেছে? ডাকাতি করবি? এগিয়ে আয় সামনে।

ভীম মাথা নাড়তেই অর্জুন তাকে ইশারা করল চুপ করে থাকার জন্য। আরও কয়েকবার চেঁচামেচি করে কারও সাড়া না পেয়ে ড্রাইভার বলল, কেউ মজা করেছে।

না। ডাকাতির মতলবে ছিল। কিন্তু রাতে কোনও গাড়ি এ-রাস্তায় যায়নি দেখে শেষ পর্যন্ত কেটে পড়েছে। রাত শেষ হতে দেরি নেই। ওদের ডাকো, পাথর ক্লিয়ার করুক। দ্বিতীয় লোকটা, যার হাতে আগ্নেয়াস্ত্র, হুকুম দিল।

ড্রাইভার ভ্যানের কাছে গিয়ে বলল, নেমে এসো, হাত লাগাও।

অর্জুন অবাক হয়ে দেখল, চারটে ছেলে বেশ ভয়ে ভয়ে নেমে এল ভ্যান থেকে। মিনিট দুইয়ের মধ্যে একটা স্তূপ সরিয়ে ফেলায় ড্রাইভার গাড়িতে উঠতে বলল। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি চালু হল এবং বেরিয়ে গেল সামনে থেকে।

মিনিটখানেক অপেক্ষা করে অর্জুন ভীমকে বলল ভ্যানটাকে অনুসরণ করতে। এই নির্জন শেষ রাতে রাস্তায় ওদের সামনে শুধু ওই ভ্যানটাই থাকবে। দূর থেকে গাড়ির আলো দেখে চলতে হবে, যাতে ওদের মনে সন্দেহ না আসে। রাস্তা ছেড়ে ভ্যান যদি বা ডান দিকে ঢুকে যায়, তা হলেও থেমে যাওয়া চলবে না।

অনুসরণ করতে অসুবিধে হচ্ছিল না। দুটো গাড়ির দূরত্ব অনেকখানি। তাই ওরা সন্দেহ করবে না বলে অর্জুনের মনে হয়েছিল। হঠাৎ ভীম বলল, গাড়িটা থেমে যাচ্ছে। থামল রাস্তার পাশে। কী করব?।

সোজা বেরিয়ে যাও। একটুও স্পিড কমাবে না। অর্জুন বলল।

ভীম যখন ভ্যানের পাশ দিয়ে চলে এল, তখন অর্জুন মুখ ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ভ্যানের জানলার কাচ বন্ধ।

নির্মাল্য এতক্ষণ চুপচাপ ছিল। এখন জিজ্ঞেস করল, তুই কি ভ্যানটাকে সন্দেহ করছিস? ব্যাপারটা ভুল হয়ে যাচ্ছে না তো!

ওদের হাতে আধুনিক অস্ত্র আছে। বহু দূরে আমাদের গাড়ি থাকা সত্ত্বেও যাচাই করে নিল, আমরা অনুসরণ করছি কি না। সন্দেহজনক মানুষই তো এরকম করে।

অর্জুন বলল, ওরা দেখতে চেয়েছিল, ওদের দেখাদেখি আমরাও থামি কিনা!

ভীম জিজ্ঞেস করল, আমরা কি সামনের কোথাও লুকিয়ে ওদের জন্য অপেক্ষা করব? এর পরে অনেকটা রাস্তা জঙ্গল পাব না।

না? সোজা ময়নাগুড়ির মোড়ে চলে যাও। ওরা যদি এই পথে আসে, তা হলে ওই মোড় পেরিয়ে যেতে হবে। অর্জুন বলল।

নির্মাল্য বলল, তুই যদি এত ডেফিনিট হয়ে থাকিস, তা হলে এখনই পুলিশকে ইনফর্ম করে ওদের আটকালে ভাল হয় না?

আর্মসের জন্য লাইসেন্স সঙ্গে রাখতে পারে। যে-ছেলেগুলো পাথর সরাল, তারা স্থানীয় হতে পারে। পুলিশকে তখন কী বলব আমরা? অর্জুন তাকাল।

ময়নাগুড়ির মোড়ে পৌঁছোতে আকাশ ফরসা হয়ে গেল। দোকানপাট এখনও বন্ধ, কিন্তু একটা চায়ের দোকান খুলেছে। অর্জুনের নির্দেশে ভীম তার ট্যাক্সিটাকে একটা বাড়ির আড়ালে রেখে এল। চায়ের দোকানের সামনের বেঞ্চিতে বসল ওরা। অর্জুন তিনটে চায়ের কথা বলতে নির্মাল্য আপত্তি জানাল। সে এখন চা খাবে না।

ইতিমধ্যে আরও কয়েকজন চায়ের খদ্দের এসে গিয়েছে। অর্জুন যখন চা শেষ করছে, তখন ভ্যানটাকে দেখতে পেল। স্বাভাবিক গতিতে এসে লাটাগুড়ির দিকে চলে গেল। দাম মিটিয়ে ভীমকে ট্যাক্সি নিয়ে আসতে বলল সে। নির্মাল্যও লক্ষ করেছিল ভ্যানটাকে। এবার জিজ্ঞেস করল, এখন কী করবি?

আমার অনুমান যদি ঠিক হয়, তা হলে অনেক কিছু করা যেতে পারে।

লাটাগুড়িতে যাওয়ার রাস্তা ধরে বেশ কিছুটা এগিয়ে আসার পর বাঁ দিকে বাঁক নিল ভীম, অর্জুনের নির্দেশে। রাস্তাটা এখনও মসৃণ হয়নি। এই রাস্তা সোজা দোমহনি পেরিয়ে তিস্তা ব্রিজের কাছে হাইওয়েতে গিয়ে মিশেছে। দোমহনি বাজারে গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল ওরা।

আরে! আপনি? এত সকালে এখানে?

অর্জুন মুখ ঘুরিয়ে স্টেশনমাস্টারকে দেখতে পেল। লুঙ্গি-গেঞ্জি পরে বাজারের ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। সে এগিয়ে গেল, নমস্কার। এত তাড়াতাড়ি বাজার করবেন?

আর বলবেন না। মালবাজারে বড়কর্তাদের হুকুমে যেতে হবে সকাল ন’টার মধ্যে। বাজার করে না গেলে, বাড়ির লোক খাবে কী? কিন্তু আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে, সারারাত ঘুমোননি। কী ব্যাপার? স্টেশনমাস্টার জিজ্ঞেস করলেন।

বুনো হাঁসের পিছনে ছুটে বেড়াচ্ছি। ও হ্যাঁ, ওই লোকটাকে লক্ষ করেছেন?

না মশাই। একবারও আমার চোখের সামনে আসেনি। তবে তোকজন আসা-যাওয়া করে।

তাই?

হ্যাঁ, একটু আগে একটা মারুতি ভ্যান বোঝাই লোক ভূতবাংলোর দিকে চলে গেল। ভাবছি, মালবাজারে গিয়ে কর্তাদের ব্যাপারটা জানাব কিনা।

নিশ্চয়ই জানাবেন।

মুশকিল কী জানেন, ওঁরা হয়তো উলটে ধমকাবেন, নিজের কাজ করো। অন্য ব্যাপারে নাক গলিয়ো না। আচ্ছা যাই, বাজার সেরে ফেলি।

ঠিক আছে। এখানে এসটিডি বুথটা কোথায়?

ওই তো। একটু এগোলেই বাঁ দিকে। স্টেশনমাস্টার চলে গেলেন।

এসটিডি বুথ খোলা ছিল। ভিতরে গিয়ে ওসির মোবাইলে ফোন করল অর্জুন। ভদ্রলোক বোধহয় ঘুমোচ্ছিলেন। বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পর ওসির জড়ানো গলা কানে এল, হ্যালো।

আমি অর্জুন। আপনার ঘুম ভাঙালাম বলে দুঃখিত।

আরে না না, বলুন।

এখনই দোমহনির রেলস্টেশনে চলে আসতে পারবেন?

শিয়োর।

একা এলে হবে না। এদের সঙ্গে আর্মস আছে।

ওরা কারা?

যারা ননীগোপালকে খুন করেছে।

কুড়ি মিনিটের মধ্যে আসছি।

দ্বিতীয় ফোনটা সে করল শুভেন্দুশেখরকে। দু’বার রিং হতেই ভদ্রলোক ফোন ধরলেন, হ্যালো।

অর্জুন বলছি। খুব যদি ভুল না হয়ে থাকে, তা হলে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আপনার ছেলের সঙ্গে আমার দেখা হবে। অর্জুন বলল।

ইজ ইট? সে কোথায়?

দোমহনিতে।

আমি ওকে দেখতে চাই। এখানে নিয়ে আসতে পারবে?

কথা দিতে পারছি না, চেষ্টা করব।

আমি ড্রাইভারকে বলছি, নিমাকে ওখানে নিয়ে যেতে।

না। আমার ফোন পেলে তবে ওঁকে পাঠাবেন। রিসিভার নামাল অর্জুন।

তৃতীয় টেলিফোনটির নম্বর ঘুরিয়ে অবাক হল সে। কম্পিউটার ভয়েস বলছে, দি নম্বর ইউ কল্ড, ইজ আউট অফ অর্ডার।

দু’দিন আগে ফোনটা চালু ছিল। নম্বর বাইরের লোক জেনে গিয়েছে বলেই কি আউট অফ অর্ডার করে দেওয়া হল? এসটিডি বুথের ছেলেটিকে নম্বরটা দেখাল অর্জুন, এই নম্বর চেনেন ভাই?

মাথা নাড়ল ছেলেটি, না। এটা তো সরকারি টেলিফোনের নম্বর নয়।

সঙ্গে সঙ্গে খেয়াল হল অর্জুনের, কী আশ্চর্য! এই সাধারণ সত্যিটা সে লক্ষ করেনি? একটা প্রাইভেট কোম্পানি থেকে ফোনটা নেওয়া হয়েছে। ব্যাটারিতে চলে বলে গাড়িতে নিয়ে ঘোরা যায়। তবে ওই কোম্পানির সম্প্রসারণের চৌহদ্দিতে থামতে হবে। এই ফোন নেওয়ার সময় নাম-ঠিকানা জানাতে হয়। নিশ্চয়ই সঠিক নাম-ঠিকানা এক্ষেত্রে দেওয়া হয়নি।

ওসির জিপ দেখা গেল। টেলিফোনের টাকা মিটিয়ে দিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়াল অর্জুন। নির্মাল্য বলল, ও, তুই পুলিশকে খবর দিয়েছিস? শোন, আমার পরিচয় গোপন রাখবি। বলবি, সহপাঠী ছিলাম, বন্ধু।

ওসি নেমে এলেন জিপ থেকে, কী ব্যাপার অর্জুনবাবু?

বলছি। আপনার সঙ্গে ক’জন লোক আছেন?

চারজন। খুব টাফ ওরা।

মিস্টার সাহা জানেন যে, আপনারা এখানে আসছেন?

আপনি বোধহয় ওঁর সম্পর্কে বায়াস হয়ে পড়েছেন। ওসি হাসলেন, উনি গত কাল সন্ধেয় ছুটি নিয়ে শিলিগুড়ি গিয়েছেন। আজ বিকেলে ফিরবেন।

এই সময় স্টেশনমাস্টার বাজারের ব্যাগ হাতে ফিরছিলেন। পুলিশের জিপ দেখে এক মুহূর্ত দাঁড়িয়েই আবার পা চালালেন। অর্জুন ডাকল, মাস্টারমশাই…।

খুব দেরি হয়ে গিয়েছে। সেই মালবাজারে যেতে হবে। স্টেশনমাস্টার বললেন, ঠিক ন’টায় ট্রেনটা আসবে। ন’টা দশে ফিরে যাবে। আমাকেও ওই ট্রেনে যেতে হবে।

ন’টা বাজতে অনেক দেরি আছে। আর আমরা তো আপনাদের কোয়ার্টার্সের পাশ দিয়েই যাব। উঠে আসুন, তা হলে সময়ও বাঁচবে আপনার। আসুন।

তেতো গেলার মতো মুখ করে ট্যাক্সিতে উঠলেন স্টেশনমাস্টার। অর্জুন পুলিশের জিপে ওসির অনুমতি নিয়ে উঠল। কোন দিকে যেতে হবে ড্রাইভারকে জানিয়ে সে ওসিকে সংক্ষেপে ঘটনাগুলো জানাল।

সে কী! এখানে? আমার এলাকায়? অথচ আমি কিছুই জানি না? ওই স্টেশনমাস্টার ঘুমোচ্ছিল নাকি? ও কিছুই জানায়নি আমাদের। ওসি তাঁর প্রতিক্রিয়া দেখালেন।

এখন সকাল। রোদ উঠে গিয়েছে। স্টেশন এলাকায় মানুষজন কম। রেললাইন পেরিয়ে অর্জুন গাড়ি দুটোকে দাঁড় করাল। তারপর স্টেশনমাস্টারকে বলল, আপনাকে একটা অপ্রিয় কাজ করতে হবে মাস্টারমশাই।

স্টেশনমাস্টার বললেন, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।

বুঝিয়ে বলছি। আপনি এখন ভূতবাংলোয় যাবেন। যে লোকটা বেরিয়ে এসে আপনার সঙ্গে দেখা করবে, তাকে বলবেন, হেডকোয়ার্টার্স থেকে অর্ডার এসেছে, এখনই বাংলো খালি করে দিতে হবে। ওরা কী বলে শুনবেন। কিন্তু কিছুতেই আপনার পয়েন্ট থেকে সরবেন না।

দ্রুত মাথা নাড়লেন স্টেশনমাস্টার, অসম্ভব। লোকগুলো সুবিধের নয়। আমার মতো একজন ছাপোষা মানুষকে কেন বিপদের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন বলুন তো? বলেই ভদ্রলোক দ্রুত হাঁটতে লাগলেন তাঁর কোয়ার্টার্সের দিকে।

ওসি হেসে ফেললেন ওঁর হাঁটার ধরন দেখে, বুঝলেন অর্জুনবাবু, গাধাকে যতই পেটান, সে কিছুতেই ঘোড়া হতে চাইবে না। তার চেয়ে চলুন, আমরা সবাই একসঙ্গে ওই বাংলোয় যাই। কী যেন নাম, ও, ভূতবাংলো।

আমি চাইছিলাম, ওরা বেরিয়ে আসুক। অর্জুন বলল। তারপর ট্যাক্সিতে বসা নির্মাল্যকে বলল, তোকে একটু অভিনয় করতে হবে। তুই ভীমকে নিয়ে ভূতবাংলোয় যা। বলবি, এন জে পি থেকে এসেছিস। রেলের বড়কর্তারা পাঠিয়েছেন ওই বাংলোর ব্যাপারে। ওরা যেন এখনই খালি করে দেয়।

নির্মাল্য একটু ভাবল। তারপর বলল, আমার কি এসবের সঙ্গে জড়ানো উচিত হবে! আই অ্যাম নট সাপোজড টু…

অর্জুন মাথা নাড়ল। কেন্দ্রীয় সরকার নির্মাল্যকে গোপনে তদন্ত করতে পাঠিয়েছে। যদি ওরা নির্মাল্যকে মারধর করে, তা হলে ওকে সরকারের কাছে জবাবদিহি দিতে হবে। ওসি চুপচাপ শুনছিলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ইনি কে?

অর্জুন চটপট বলল, কলকাতার রিপোর্টার।

ও।

এই সময় ভীম এসে জানাল, মারুতি ভ্যানটা ফিরে আসছে। অর্জুন খুশি হল, যাক, একটা সুযোগ পাওয়া গেল।

নীল মারুতি যে চালাচ্ছে, তার পাশে কেউ নেই। এই লোকটাই গাড়িটা চালিয়ে নিয়ে এসেছে। রেললাইনের পাশে পুলিশের জিপকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লোকটা গাড়ির গতি কমিয়েই বাড়িয়ে দিল। কিন্তু ওসি রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে হাত তুলে ওকে থামতে বলায় ভ্যানটা থামতে বাধ্য হল।

ওসি বললেন, নেমে এসো।

কেন? ড্রাইভার জিজ্ঞেস করল।

ওসি কড়া চোখে তাকাতে লোকটা নেমে এল।

এই ভ্যান কার?

মালিকের।

কোথায় থাকে? কী নাম?

গীতলদহের বাবুরাম শেঠ।

কী নাম তোমার?

বাচ্চু।

কেন এসেছিলে এখানে?

প্যাসেঞ্জার নিয়ে এসেছি, ভাড়ায়।

কারা প্যাসেঞ্জার ছিল?

আমি চিনি না।

কে ভাড়া করেছিল?

একটা অচেনা লোক।

কখন বেরিয়েছ গীতলদহ থেকে?

ভোরবেলায়।

তোমার প্যাসেঞ্জারের হাতে বন্দুক ছিল? অর্জুন প্রশ্নটা করল।

আমি জানি না। লোকটা বলামাত্র ওসি সপাটে চড় মারলেন লোকটার গালে। অনেকটা ছিটকে গেল লোকটা। ওসি এগিয়ে গেলেন, সত্যি কথা বলো।

আমি, আমি …!

অর্জুন বলল, রাস্তার মাঝখানে পাথরের স্তূপ সরানোর সময় তোমার সঙ্গে যে প্রথমে নীচে নেমেছিল, তার হাতে কী ছিল?

লোকটা খুব অবাক হয়ে গেল।

অর্জুন বলল, তারপর লোকটার হুকুমে ভ্যান থেকে চারটে ছেলে নেমে এসে ওই পাথর সরায়নি? মনে পড়ছে?

লোকটা এবার ভেঙে পড়ল, বিশ্বাস করুন, আমি ওই দলে নেই। মাঝে মাঝে ভাড়া করে আমার ভ্যান। আমি পৌঁছে দিই।

কাদের পৌঁছেও? ওসি জিজ্ঞেস করলেন।

ছেলেদের।

কোন ছেলে?

আমি জানি না।

ওসি হাসলেন, রাম সিংহ, যতক্ষণ ও সত্যি কথা না বলছে, ততক্ষণ ওকে এমনভাবে আড়ং ধোলাই দেবে, যাতে রক্ত বেরোবে না, কিন্তু দাঁড়াতে পারবে না এ জীবনে। নিয়ে যাও।

পুলিশের জিপ থেকে বিশাল চেহারার একজন বেরিয়ে এল লাঠি হাতে। তাকে দেখেই ড্রাইভার মাটিতে বসে পড়ল, স্যার, মুখ খুললে ওরা মেরে ফেলবে।

তা হলে হাড়গোড় ভেঙে বেঁচে থাকো।

রাম সিংহ এসে লোকটার হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিতেই সে ককিয়ে উঠল, ছেলেগুলো বাংলাদেশের। কিন্তু সত্যি বলছি, কেন এখানে নিয়ে আসে জানি না। শুধু বুঝতে পারি, ওদের কাছে কাগজপত্র নেই।

ওসি রাম সিংহকে বললেন, ওকে হাতকড়া পরিয়ে জিপে তোলো।

লোকটার হাতে হাতকড়া পরাতেই সে বলে উঠল, আমাকে ওদের ওখানে নিয়ে যাবেন না স্যার।

কেন?

ওরা ভাববে, আমি বেইমানি করেছি।

ওরা কারা? কী নাম?

বিশ্বাস করুন, আমি কারও নাম জানি না। আমার সামনে ওরা নিজেদের নাম করে না।

ঠিক আছে।

ভীম ট্যাক্সিটা নিয়ে ওখানেই অপেক্ষা করবে, নির্মাল্য ট্যাক্সিতে থাকবে। অর্জুন পুলিশের গাড়িতে উঠল। মিনিট তিনেকের মধ্যে ভূতবাংলোর সামনে গাড়ি পৌঁছে গেল। ড্রাইভারকে হর্ন বাজাতে বললেন ওসি। হর্নের শব্দ শুনে একটা লোক উপর থেকে নেমে এল। অর্জুন চিনতে পারল। এই লোকটাই শেষ রাতে ভ্যান থেকে আর্স হাতে নেমেছিল।

ওসি নামলেন, এই বাংলোয় কে থাকে?

আমরা।

আপনারা কি রেলের কর্মচারী?

না, কিন্তু থাকার পারমিশন পেয়েছি, লোকটা বলল।

ক’জন এখানে থাকেন?

তিন জন।

ডাকুন ওদের। চলুন, আমি আপনার সঙ্গে যাচ্ছি।

লোকটা দোনামনা করল। ওসি বললেন, আমি লোকাল থানার ওসি।

লোকটা হাসল, আসুন স্যার।

ওসি ইশারা করতে অর্জুনও ওদের সঙ্গে এগোল। ওসি বললেন, আমাদের কাছে কমপ্লেন এসেছে, কেউ এই বাংলো দখল করে আছে। তাই বাধ্য হলাম রুটিন চেকে আসতে।

বারান্দায় পড়ে থাকা চেয়ারগুলো দেখিয়ে লোকটা বলল, বসুন।

আপনার নামটা কী যেন?

কমল। লোকটা ভিতরে চলে গেল।

ওসি বললেন, লোকটা বাংলাদেশের নয়, বাচনভঙ্গি এদেশের।

অর্জুন চারপাশে তাকাচ্ছিল। বহুকাল অব্যবহৃত বাড়িটাকে একটু বাসযোগ্য করে নেওয়া হয়েছে। কমল বেরিয়ে এল যাকে নিয়ে, তাকে চিনতে পারল অর্জুন। শিবরামের খবর নিয়ে এখানে এসে ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। লোকটার তাকে চেনা উচিত। চেনামাত্র যে প্রতিক্রিয়া হবে, তার জন্য তৈরি হল অর্জুন।

ওসি জিজ্ঞেস করলেন, আপনার নাম?

জন।

জন কী?

আমাকে সবাই জন বলে।

বাবা তো একটা টাইটেল দিয়েছিলেন?

সেটা জেনে কী হবে আপনার? এই নিন, এখানে থাকার পারমিশন।

ওসি কাগজটা নিয়ে দেখলেন, এন এস রায়। ইনি কে?

উনি একজন এন আর আই। এদিকে ইন্ডাস্ট্রি করবেন বলে এসেছেন। নর্থ বেঙ্গলের বেকার ছেলেদের চাকরি হবে সেখানে।

আচ্ছা। ওসি বললেন, উনি কোথায়?

উনি খুব অসুস্থ। এখানকার জল সহ্য হচ্ছে না ওঁর।

ডাক্তার দেখিয়েছেন?

এখানে ভাল ডাক্তার কোথায়? ওঁর সঙ্গে ওষুধ ছিল, তাই দিয়ে …।

আজ দুপুরের ফ্লাইটে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।

তা হলে অসুখটা খুব বড় ধরনের?

হ্যাঁ। এখন ঘুমোচ্ছেন। একেবারে যাওয়ার সময় ডাকব।

জন কথা বলে যাচ্ছিল। এবার কমল বলল, এখানে তো কিছুই পাওয়া যায় না। তবু স্যার যদি চান, একটু কফি খাওয়াতে পারি।

জন বলল, তোমার কিছুই মনে থাকে না। কফি শেষ হয়ে গিয়েছে, আজ কিনে আনার কথা ছিল!

ওঃ হো! তাই তো! আচ্ছা স্যার, কে কমপ্লেন করেছে আমাদের বিরুদ্ধে?

সেটা আপনাদের জেনে কী লাভ হবে? রাম সিংহ…! চিৎকার করে ডাকলেন ওসি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে রাম সিংহ এবং আর একজন সেপাই উপরে উঠে এল। ওসি বললেন, এটা রুটিন চেকিং। রাম সিংহ, ভিতরে গিয়ে দেখে এসো। একজন সাহেব অসুস্থ, ঘুমোচ্ছেন। তাকে ডিসটার্ব করবে না।

জন চেঁচিয়ে উঠল, আপনার কাছে সার্চ ওয়ারেন্ট আছে?

ওসি হাসলেন, এতক্ষণ বেশ চলছিল। আপনি হঠাৎ আইনের প্রশ্ন। তুললেন। তার মানে, এতক্ষণ যা বলছিলেন, তা সত্যি নয়?

সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়া আপনি ওদের ভিতরে যেতে বলতে পারেন না।

সেটা আমি বুঝব। রাম সিংহ!

রাম সিংহ এগোতেই জন দু’হাতে দরজা আগলে দাঁড়াল। রাম সিংহ তাকে ধাক্কা মারতেই সে কোমরে গুঁজে রাখা রিভলভার জামার ভিতর থেকে দ্রুত বের করল। কিন্তু রাম সিংহের হাত চলল আরও দ্রুত গতিতে। তার আঘাতে রিভলভার ছিটকে গেল জনের হাত থেকে।

মাটিতে পড়ামাত্র ওসি একটা রুমাল বের করে সেটা দিয়ে অস্ত্রটাকে তুলে নিয়ে পকেটে রাখলেন। রাম সিংহ ততক্ষণে পেড়ে ফেলেছে জনকে। কমল হাত জোড় করল, স্যার, ও খুব রগচটা, ওকে মাপ করে দিন।

ওসির নির্দেশে দু’জনকে দুটো চেয়ারে বসানো হল। রাম সিংহ ডাকতে পুলিশের জিপ থেকে আর-একজন সেপাই হাতকড়া নিয়ে উপরে চলে এল। লোকটা দু’জনকে হাতকড়া পরিয়ে দিতেই, ওসি অর্জুনকে নিয়ে ভিতরে ঢুকলেন। প্রথম ঘরে কেউ নেই। দ্বিতীয় ঘরটিও খালি। তৃতীয় ঘরে একটা তাপোশে বিছানা পাতা। কয়েকটা জামাপ্যান্ট পড়ে রয়েছে। একটা সুটকেসও। কিন্তু কেউ নেই। ওসি বললেন, অসুস্থ লোকটার তো এখানেই থাকার কথা!

অর্জুন পিছন দিকে হাঁটতেই একটা ঘোরানো মরচে পড়া সিঁড়ি দেখে চেঁচিয়ে উঠল, এখান দিয়ে পালিয়েছে?

ওসি ছুটে এলেন। নীচের কঁচা মাটিতে জুতোর ছাপ। দু’রকমের জুতো। তার মানে একজন নয়, দু’জন লোক পালিয়েছে এখান থেকে। একটা নর্থস্টার, অন্যটা সাধারণ।

এই সময় রাম সিংহের গলা পাওয়া গেল, সাহাব, সাহাব, মিল গিয়া। ইধার আইয়ে।

অর্জুন ছুটে গেল আগে। ওপাশের বারান্দা থেকে চারটে ছেলেকে টেনে নিয়ে আসছে রাম সিংহ এবং তার সঙ্গী। এই ছেলেগুলোই কাল পাথর সরিয়েছিল। তা হলে নভেন্দু কোনও সঙ্গীকে নিয়ে পিছনের সিঁড়ি দিয়ে পালিয়েছে? পালাতে হলে ওদের দোমহনির বাস স্ট্যান্ডে যেতে হবে। সেখান থেকে ওরা ট্যাক্সিও পেয়ে যেতে পারে। এখনই ওদের অনুসরণ করা দরকার।

ওসি ততক্ষণে ছেলে চারটের সঙ্গে কথা শুরু করেছেন। সত্যি কথা বলতে, বেশি চাপ দিতে হল না। এরা চারজনই আমেরিকায় চাকরি করতে যেতে চায়। বাংলাদেশ থেকে আমেরিকান কনসুলেট ওদের ভিসা দেয়নি। বাংলাদেশি দশ লক্ষ টাকা মাথাপিছু দিলে, তাদের আমেরিকায় পৌঁছে দেওয়া হবে প্রতিশ্রুতি দেওয়ায়, ওদের বাবারা জমি বিক্রি করে, ধার নিয়ে টাকাটা জোগাড় করে দিয়েছে। রাম-রহিমের সঙ্গে ডেভিড নামের একটি লোক এর আগেও কয়েকবার ছেলেদের পৌঁছে দিয়েছে আমেরিকায়। তাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে বিশ্বাস হয়েছে এদের। কলকাতা থেকে তাদের পাসপোর্ট দেওয়া হবে ছবিসমেত। টিকিটও হয়ে গিয়েছে। তবে নামতে হবে মেক্সিকোতে। সেখান থেকে স্থলপথে ওরা পৌঁছে দেবে আমেরিকায়।

ওসি খুব উত্তেজিত। খুব বড় কেস পেয়ে গিয়েছেন তিনি। এদের নিয়ে থানায় যেতে চান। সেখানে গিয়ে পুরো কেস লিপিবদ্ধ করে উপরওয়ালাকে জানাবেন।

অর্জুন ব্যস্ত হল। সে বলল, এত লোককে নিয়ে আপনার গাড়ি যেতে পারবে না। আমি আপনার গাড়ি নিয়ে রেল ক্রসিং-এর কাছে যাচ্ছি। যদি কেউ গাড়ি চালাতে পারে, তা হলে তাকে সঙ্গে দিন। ভ্যানটাকে নিয়ে আসবে।

প্রস্তাব পছন্দ হল ওসির। সেপাইদের উপর ছ’জনের দায়িত্ব দিয়ে ওখানেই অপেক্ষা করতে বলে তিনি অর্জুনের সঙ্গে গাড়িতে উঠলেন। সঙ্গে একজন সেপাই, যে গাড়ি চালাতে জানে।

অর্জুন বলল, যে করেই হোক নভেন্দুকে আটকাতে হবে। যদি ও দোমহনির বাজারে গিয়ে ট্যাক্সি পেয়ে যায়, তা হলে হাওয়া হয়ে যাবে।

ওহো। তাই তো! ওকেই তো অসুস্থ বলে আড়াল করতে চাইছিল লোকগুলো।

আমার ধারণা নভেই বেআইনিভাবে আমেরিকায় লোক পাচার করে।

কিন্তু বাংলাদেশ থেকে কেন? এখান থেকেই তো ছেলে জোগাড় করতে পারত।

মাথা নাড়ল অর্জুন, এখানকার ছেলেরা বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে তেমন উদ্যোগী নয়। অন্তত দশ লক্ষ টাকা খরচ করে তো নয়ই। বাংলাদেশের বেশিরভাগ ছেলে ভাবে, বিদেশে না গেলে আরামে থাকা যাবে না। এরা সেই সুযোগটা নিচ্ছে।

ট্যাক্সির পাশে দাঁড়িয়ে ছিল নির্মাল্য। তাকে সংক্ষেপে ঘটনাটা বলতেই তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, আমি ছেলেগুলোর সঙ্গে কথা বলতে চাই।

ওসি বললেন, আপনি ভ্যানে উঠুন। ড্রাইভার, তোমরা ওখানে গিয়ে ওদের নিয়ে থানায় চলে এসো। আমি একটু পরেই আসছি। পুলিশের গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন তিনি। পুলিশের গাড়ি এবং ভ্যান ফিরে গেল।

ট্যাক্সিতে উঠলেন ওসি। ভীম গাড়ি চালু করলে অর্জুন জিজ্ঞেস করল, আপনি নিজের গাড়ি ছেড়ে দিলেন যে!

পুলিশের গাড়ি দেখলেই তোক চিনতে পারে। মনে হল, লোকটাকে ধরতে ট্যাক্সিতে গেলে সুবিধে হবে। ওসি বললেন।

নভেন্দু একা নয়, সঙ্গে আর-একজন আছে।

ও হ্যাঁ। জুতোর ছাপ তো তাই বলছে। লোকটাকে দেখেছেন?

না।

কী করে চিনবেন?

বর্ণনা পেয়েছি। চিনতে পারব।

দোমহনির বাজার তখন জমজমাট। বাস স্ট্যান্ডে ট্যাক্সি পঁড় করাতেই, একটা লোক এসে সেলাম করল ওসিকে, আপনি স্যার! ট্যাক্সিতে?

বেড়াতে বেরিয়েছি। আর বদমাইশি করছিস না তো!

কানে হাত দিল লোকটা, না স্যার। একদম না।

গুড। একটা খবর আন তো। আধঘণ্টার মধ্যে দুটো লোক এখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে গিয়েছে কিনা! ওসি বললেন।

না স্যার। আজ একটাই ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে এসেছে। ওই তো, দাঁড়িয়ে আছে।

অচেনা দুটো লোককে চোখে পড়ছে?

না স্যার!

খোঁজ নে, আর কেউ দেখেছে কিনা।

কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ট্যাক্সির চারপাশে ভিড় হয়ে গেল। সবাই হলফ করে বলতে লাগল, ভোরের আগে নাকি দুটো লোক ট্যাক্সি করে এসেছিল। তারা চলে যাওয়ার পর এখানে নতুন কেউ আসেনি। একটি লোক সাইকেলে চেপে আসছিল। ভিড় দেখে দাঁড়িয়ে গেল কী হয়েছে জানতে। শুনে সে চেঁচিয়ে উঠল, দু’জন লোককে তিস্তা ব্রিজের দিকে হাঁটতে দেখেছি। একজনের মুখ রুমালে ঢাকা ছিল।

অর্জুন চিৎকার করল, গায়ের রং কেমন?

একজন, যার মুখ রুমালে ঢাকা, সে শ্যামলা। অন্যজন সাহেবের মতো।

অর্জুন বলল, ভীম, তাড়াতাড়ি…।

ভীম গাড়ি চালু করল।

দোমহনি ছাড়িয়ে দু’পাশে চাষের মাঠের মধ্যে দিয়ে রাস্তাটা চলে গিয়েছে হাইওয়ের দিকে। অনেকটা দূর থেকেই দেখা যাচ্ছে, কোনও মানুষের চিহ্ন নেই।

অর্জুন বলল, তা হলে কি ওরা রাস্তা ছেড়ে মাঠের মধ্যে নেমেছে?

মাঠেও তো আড়াল নেই। দাঁড়ান, একটা সাইকেল আসছে। ওসি বললেন।

ততক্ষণে ট্যাক্সি থেকেই তিস্তা ব্রিজ দেখতে পেয়েছে অর্জুন। জুতোর ছাপ দেখামাত্রই যদি ওদের পিছনে ছোটা যেত, তা হলে পালানোর সুযোগ পেত না। খুব আপশোস হচ্ছিল তার।

ওসি হাত বাড়িয়ে সাইকেল আরোহীকে দাঁড় করালেন, আপনি কোত্থেকে আসছেন ভাই?

ইস্টিশন থেকে।

দুটো লোককে দেখেছেন? হাঁটছিল। একজনের মুখে রুমাল, আর অন্যজন খুব ফরসা? চোখে পড়েছে? ওসি জিজ্ঞেস করলেন।

সাহেবদের মতো ফরসা? লোকটি মাথা নাড়ল, দেখেছি। গাড়িতে উঠল।

গাড়িতে? কার গাড়িতে?

এদিকের গাড়ি নয়। পিছনে একটা মেয়ে ছিল।

অর্জুন জিজ্ঞেস করল, আপনার সঙ্গে মোবাইল আছে?

হ্যাঁ।

নম্বরটা ধরুন তো!

মোবাইলের বোতাম টিপলেন ওসি। রিং হতেই এগিয়ে দিলেন অর্জুনের দিকে। অর্জুন কানে চাপতেই শুভেন্দুশেখরের গলা পেল, হ্যাল্লো!

আমি অর্জুন বলছি।

পেয়েছ?

না। কিন্তু নিমাকে কি আপনি পাঠিয়েছেন?

হ্যাঁ। একটু দেরি হল। জলপাইগুড়িতে এলে একটি ছেলে আমাকে ভাড়ায় গাড়ি দেয়। তাকে ফোন করে আনতে যেটুকু সময়। মনে হয়, পৌঁছে গিয়েছে।

কী গাড়ি?

সাদা অ্যাম্বাসাডর।

লাইন কেটে দিল অর্জুন। সাইকেল আরোহী তখনও দাঁড়িয়ে ছিল। অর্জুন তাকে জিজ্ঞেস করল, যে গাড়িতে ওরা উঠল, সেটা কি সাদা অ্যাম্বাসাডর?

হ্যাঁ, হ্যাঁ।

কোন দিকে গেল?

হাত বাড়িতে তিস্তার ওপার দেখিয়ে দিল লোকটা। অর্জুন বলল, ভীম, চলো। যে করেই হোক গাড়িটাকে ধরতে হবে।

গাড়ি চলতে শুরু করলে ওসি জিজ্ঞেস করলেন, মহিলাটি কে? তিনি ওই নভেন্দুকে চিনলেন কী করে?

বিরাট কাহিনি। কিন্তু আমি খুব ধন্দে পড়ে গিয়েছি। নিমা তার শত্রুকে গাড়িতে তুললেন কেন? বুঝতে পারছি না। অর্জুন নিজের মনে বলল।

তিস্তা ব্রিজ পেরিয়ে গাড়ি যখন জলপাইগুড়ির মোড়ে এল, তখন ভীম জিজ্ঞেস করল, কোন দিকে যাব?

অর্জুন দ্বিধায় পড়ল। ওরা কি শহরে যাবে? কোথায় যাবে? শুভেন্দুশেখরের বাড়িতে কি নিমা নভেন্দুকে নিয়ে যাবে? অসম্ভব। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ল, আর একটি লোক ওদের সঙ্গে আছে। সেই লোকটি যদি স্থানীয় হয়, তা হলে শহরে না গিয়ে শিলিগুড়ির দিকে যেতে পারে। শিলিগুড়ির নাম মনে আসতেই বাগডোগরা এয়ারপোর্টের কথা মনে এল। ওরা এয়ারপোর্টে যাচ্ছে না তো প্লেন ধরতে? নিমা কি ওর পাসপোর্ট নিয়ে বেরিয়েছে?

অর্জুন বলল, না শহরে নয়, সোজা চলো।

ভীম গাড়ির গতি বাড়াল। ফাটাপুকুর ছাড়াতেই দূরে একটি লোককে হাত নাড়তে দেখা গেল। ভীম বলল, আরে! লছমন এখানে কী করছে। গাড়ি থামাচ্ছি একটু।

গাড়ি থামিয়ে ভীম জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে লছমন?

ও! তুই। ওরা আমাকে জোর করে সরিয়ে দিয়েছে গাড়ি থেকে?

কারা?

দু’জন লোক, আর একটা মেয়ে।

অর্জুন বলল, ভীম, ওকে গাড়িতে উঠতে বলো।

ভীম বলতেই লছমন সামনের সিটে উঠে বসল, আমাকে তুই থানায় নামিয়ে দে ভীম।

অর্জুন জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে?

লছমন তাকাল, আমাকে বুড়োবাবু বললেন, ভদ্রমহিলাকে দোমহনির বাজারে নিয়ে যেতে। তাই যাচ্ছিলাম। বুড়োবাবু যখনই জলপাইগুড়িতে আসেন, আমার গাড়ি নেন। তিস্তা ব্রিজ পার হতেই দেখলাম, দু’জন লোক আসছে। তাদের দেখে ভদ্রমহিলা চেঁচিয়ে গাড়ি থামাতে বললেন। দুজনের মধ্যে একজন সাহেবের মতো দেখতে। তার সঙ্গে ভদ্রমহিলা উত্তেজিত হয়ে ইংরেজিতে কী সব বলে আমায় বললেন গাড়ি ঘোরাতে।

ইংরেজিতে বললেন?

না। হিন্দিতে। ততক্ষণে ওই দু’জনের একজন পিছনে, আর-একজন সামনে উঠে বসেছে। সামনে বসা লোকটার মুখ রুমালে ঢাকা। আমি ভাবলাম, ওরা বুড়োবাবুর বাড়িতে ফিরে যাবে। কিন্তু সাহেবটা বাংলায় বলল, সোজা চলো। বুড়োবাবু সেকথা বলেননি। আমি আপত্তি জানিয়েও এত দূরে চলে এসে গাড়ি থামালাম। ওরা কোথায় যেতে চায় জানতে চাইলাম। দু’জনে আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে ঘুসি মেরে ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেল। এখন থানায় গিয়ে ডায়েরি করতে হবে। ওরা যদি গাড়ি নিয়ে হাওয়া হয়ে যায়, তা হলে মালিক আমাকে মেরে ফেলবে। লছমন বলল।

তোমার কোনও ভয় নেই। শুভেন্দুবাবুকে আমি বলব সব।

আপনি বুড়োবাবুকে চেনেন?

হ্যাঁ। অর্জুন বলল, ওরা কোথায় যেতে চাইছিল?

কিছু বলছিল। রুমালবাঁধা লোকটা বলছিল বাংলায়, সোজা চলো।

অর্জুন বলল, ভীম, তুমি বাইপাস হয়ে এয়ারপোর্টের রাস্তা ধরবে।

গাড়িতে তেল বেশি নেই। ওদের তেল নিতে থামতে হবেই।

ওসি চুপচাপ শুনছিলেন। বললেন, থ্যাঙ্ক গড!

মিনিট দশেক পরে একটা পেট্রল পাম্প দেখে গাড়ি থামিয়ে লছমনকে পাঠাল অর্জুন। সে উত্তেজিত হয়ে ফিরে এসে জানাল, পাঁচ মিনিট আগে দশ লিটার তেল ভরে ওরা চলে গিয়েছে। আমাকে থানায় নিয়ে যান স্যার।

ভীম তাকে ধমকাল, চুপ কর। পিছনে কে আছেন জানিস? ওসি সাহেব।

লছমন ঘুরে নমস্কার করল, স্যার, আমাকে বাঁচান।

ওসি কিছু বললেন না।

বাগডোগরা এয়ারপোর্টে ফোন করে জানা গেল, পরের ফ্লাইট ঘণ্টা দু’য়েক পরে। দিল্লি যাবে। তারপর কলকাতা এবং গুয়াহাটি ফ্লাইট।

ওসি বললেন, সময় আছে। চলুন, থানায় যাই। লোকাল থানার সাহায্য চাই।

দেরি হয়ে যাবে না?

না না। কাছেই থানা।

পনেরো মিনিট পরে দুটো গাড়ি এয়ারপোর্টের মুখে এসে দাঁড়াল। ভীম তার লাইসেন্স রাখতে গিয়ে জেনে এল, অ্যাম্বাসাডর গাড়ির নম্বর খাতায় লেখা আছে। তার মানে, অর্জুনের অনুমান নির্ভুল।

নতুন এয়ারপোর্ট বিল্ডিং-এর সামনে বেশি গাড়ির ভিড় নেই। লছমন চিৎকার করল, ওই তো, আমার গাড়ি!

ভীম ট্যাক্সি থামাতেই সে ছুটে গিয়ে দরজা টেনে দেখল, লক করা আছে। উঁকি মেরে চাবি দেখতে না পেয়ে হতাশ হল, চাবি নিয়ে গিয়েছে।

অর্জুন তাকে বলল, তুমি আর ভীম এখানে অপেক্ষা করো। কেউ এলে তাকে আটকাবে।

বাগডোগরা থেকে ওসি এসেছেন দু’জন সেপাইকে নিয়ে। ভদ্রলোক অর্জুনের নাম শুনেছেন। তাঁকে সংক্ষেপে ব্যাপারটা বলেছে অর্জুন। ভিতরে ঢোকার টিকিট কাটার দায়িত্ব নিলেন তিনি। যদিও সরকারি প্রয়োজন দেখিয়ে ওঁরা চারজন বিনা টিকিটে যেতে পারতেন। টিকিট কাউন্টারে গিয়ে নিজেদের পরিচয় দিয়ে অর্জুনকে দেখিয়ে দিলেন, উনি যা জানতে চান, তা যদি দয়া করে জানান।

অর্জুন জিজ্ঞেস করল, এই একটু আগে তিনজন কি টিকিট কিনেছে?

কোথাকার?

তা জানি না। ওদের দুজনের নাম জানি। নিমা, নভেন্দু…!

ইয়েস। তিনজন নয়। দু’জন টিকিট কিনেছে।

দু’জন? অর্জুন হতাশ হল।

হ্যাঁ। দিল্লির টিকিট। উপরের লাউঞ্জে পাবেন।

সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠে এল। কিছু যাত্রী ইতিমধ্যে এসে গিয়েছেন। এখনও সিকিউরিটি চেকিং শুরু হয়নি। একটি সোফায় নিমাকে বসে থাকতে দেখল অর্জুন। সোজা এগিয়ে সামনে দাঁড়াল সে, নিমা?

আপনি এখানে?

প্রশ্নটা আমি করেছি।

এখনই দেশে ফিরে যাচ্ছি।

শুভেন্দুশেখর জানেন?

কারও অনুমতি নিয়ে যখন আসিনি, তখন জানানোর প্রয়োজন নেই।

আপনার লাগেজ?

ওগুলো বয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনও মানে হয় না।

নভেন্দু কোথায়?

নভেন্দু! আমি কী করে বলব? আপনি খুঁজুন।

আপনার আর ডলার দরকার নেই তা হলে?

ওয়াইল্ড গুজকে চেজ করার কোনও মানে হয় না।

এয়ারপোর্টে এলে কীভাবে?

ট্যাক্সিতে।

ও। কিন্তু আপনার যে যাওয়া হবে না। অন্তত আজ তো নয়ই।

হোয়াট? আমি একজন আমেরিকান সিটিজেন। আমাকে বাধা দিতে পারেন না। চিৎকার করে উঠল নিমা। দু’জন ওসি এগিয়ে এলেন। দোমহনির ওসি নিজের কার্ড বের করে দেখালেন, ম্যাডাম, আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন আছে। থানায় যেতে হবে।

আমি, আমি কনসুলেটকে ফোন করব।

অবশ্যই করবেন। থানায় চলুন। সেখানে ফোন আছে।

অর্জুন ততক্ষণে মুখ ঘুরিয়ে নভেন্দুকে খুঁজছিল। তাকে চারপাশে দেখা যাচ্ছে না। সে বলল, শুভেন্দুশেখর যে-গাড়িতে আপনাকে পাঠিয়েছিলেন, সেটা বাইরের পার্কিং লটে পঁড়িয়ে আছে। যে ড্রাইভারকে আপনারা মেরে নামিয়ে দিয়েছেন, সেও সঙ্গে আছে। আপনি তো কোনও অন্যায় করেননি। নভেন্দু কোথায়?

এবার ভেঙে পড়ল নিমা। দু’হাতে মুখ ঢেকে বলল, টয়লেটে।

আপনি কি সত্যি ডলারের জন্য এসেছিলেন?

মাথা ঝাঁকাল নিমা, হাতে মুখ চেপে বলল, আই লাভ হিম।

.

টয়লেট থেকে বেরোতেই ধরা পড়ে গেল নভেন্দু। প্রতিবাদ, ধস্তাধস্তিতে কাজ হল না। তার হাতে হাতকড়া পরিয়ে নীচে নামাতেই অর্জুন দেখল, লছমনের গাড়ির পাশে ভিড় জমেছে। ভীম ছুটে এল, ধরা পড়েছে। লোকটাকে আটকেছি।

ভিড় সরিয়ে কাছে যেতে দেখা গেল, লোকটা উপুড় হয়ে পড়ে আছে। আর তার পিঠে বসে আছে লছমন। অর্জুনকে দেখে লছমন বলল, স্যার, চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলে পালাচ্ছিল। দুজনে মিলে কাত করেছি!

ওসির নির্দেশে দু’জন সেপাই লোকটাকে তুলতেই দোমহনির ওসি বলে উঠলেন, আরে! সাহা? তুমি?

দোমহনি থানার এস আই মাথা নিচু করলেন।

ওসির কাছ থেকে মোবাইল চেয়ে নিয়ে অর্জুন শুভেন্দুশেখরকে ফোন করল, নভেন্দুকে পাওয়া গিয়েছে। ও এখন পুলিশের হাতে।

আমি ওকে দেখতে চাই।

তা হলে আপনাকে থানায় যেতে হবে।

ওকে আমার বাড়িতে আনা যাবে না?

এখনই না।

নিমা কোথায়?

ওঁকেও আটকানো হয়েছে। উনি আপনার ছেলের শত্রু নন। উলটে সাহায্য করতে এসেছেন। ওরা বাংলাদেশের যে-চারটে ছেলেকে আমেরিকায় পাচার করতে চেয়েছিল, তাদেরও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খারাপ লাগছে। ওদের জন্য। বেচারারা লোভে পড়ে সর্বনাশ ডেকে আনল। রাখছি।

তুমি কোথায়? শুভেন্দুশেখর জিজ্ঞেস করলেন।

বাগডোগরা এয়ারপোর্টে। অর্জুন উত্তর দিল।

ওয়েল। ফেরার পথে আমার বাড়ি হয়ে যাবে। তোমার চেক তৈরি করে রাখছি। লাইন কেটে দিলেন শুভেন্দুশেখর।