‘ডেলী ঈগ্ল্’, ২৭ ফেব্রুআরী, ১৮৯৫
ব্রুকলিন এথিক্যাল এসোসিয়েশনের উদ্যোগে হিষ্টরিক্যাল হল-এ হিন্দুসন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ সোমবার রাত্রে ‘জগতে ভারতবর্ষের দান’ সম্বন্ধে বক্তৃতা করেন। বক্তা যখন মঞ্চের উপর উঠেন, তখন মঞ্চে প্রায় আড়াই শত ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। ব্রুকলিন রমাবাঈ সার্কেল-এর সভাপতি মিসেস জেম্স্ ম্যাক্কীন কয়েকদিন আগে ‘ভারতবর্ষে বালবিধবাদের উপর দুর্ব্যবহার করা হয় না।’—বক্তার এই উক্তিটির প্রতিবাদ করিয়াছিলেন। ঐ প্রতিষ্ঠানটি ভারতে খ্রীষ্টমতানুগ সেবাকার্য করিয়া থাকে। বক্তার নিকট এই প্রতিবাদের প্রত্যুত্তর শুনিবার জন্য শ্রোতৃবৃন্দের খুব আগ্রহ দেখা যায়। কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দ তাঁহার ভাষণে ঐ বিষয়ের কোন উল্লেখ করেন নাই। তাঁহার বক্তৃতা শেষ হইলে একজন শ্রোতা ঐ প্রসঙ্গটি তুলেন এবং জিজ্ঞাসা করেন—ঐ সম্পর্কে তাঁহার কি বলিবার আছে। স্বামী বিবেকানন্দ বলেন, বালবিধবাদের প্রতি নির্যাতন বা কঠোর ব্যবহার করা হয়—এই সংবাদ সত্য নয়। তিনি আরও বলেনঃ ইহা ঠিকই যে কোন কোন হিন্দুর বিবাহ হয় খুব অল্প বয়সে। অনেকে কিন্তু বেশ পরিণত বয়সেই বিবাহ করে। কেহ কেহ বা আদৌই বিবাহ করে না। আমার পিতামহের যখন বিবাহ হইয়াছিল, তখন তিনি একেবারেই বালক। আমার পিতা বিবাহ করেন চৌদ্দ বৎসর বয়সে। আমার বয়স ত্রিশ বৎসর, আমি এখনও বিবাহ করি নাই। স্বামী মারা গেলে তাঁহার যাবতীয় সম্পত্তি তাঁহার বিধবা পত্নী পান। দরিদ্রের ঘরে বিধবার কষ্ট অন্যান্য দেশে যেমন, ভারতেও সেইরূপ। কখনও কখনও বৃদ্ধেরা বালিকা বিবাহ করে। এইরূপ স্বামী ধনী হইলে যত শীঘ্র মারা যায়, তাহার বিধবা স্ত্রীর পক্ষে ততই মঙ্গল। আমি ভারতের সর্বত্র ভ্রমণ করিয়াছি, কিন্তু বিধবাদের প্রতি যে রূপ নির্যাতনের কথা প্রচার করা হইতেছে, ঐরূপ একটিও দেখিতে পাই নাই। এক সময়ে আমাদের দেশে এক ধরনের ধর্মোন্মত্ততা ছিল। তখন কখনও কখনও বিধবারা মৃত পতির জ্বলন্ত চিতায় প্রবেশ করিয়া মৃত্যু বরণ করিতেন। হিন্দু জনসাধারণ যে এই রীতি পছন্দ করিত, তাহা নয়, তবে উহা বন্ধ করিবার চেষ্টাও ছিল না। অবশেষে ব্রিটিশরা ভারত অধিকার করিলে ইহা নিষিদ্ধ হয়। সহমৃতা নারীকে সাধ্বী বলিয়া খুব সম্মান করা হইত। অনেক সময়ে তাঁহাদের স্মৃতিতে স্তম্ভাদি নির্মিত হইত।