বন্দি মহামুনি ব্যাস তপস্বী তিলক।
তপোধন পরাশর যাঁহার জনক।।
বেদশাস্ত্র পরায়ণ শুদ্ধ বুদ্ধি ধীর।
নীরপদ্ম আভা যেন কোমল শরীর।।
যুগল নয়ন দীপ্ত উজ্জ্বল মিহির।
পদযুগে কত মণি শোভে নখশির।।
ভাগবত পুরাণাদি যতেক গ্রন্থন।
যাঁহার তপো প্রভাবে হয়েছে নির্ম্মাণ।।
শ্রীকৃষ্ণের লীলা আর বেদ চারিখান।
ঋক্ যজু সাম আর অথর্ব্ব বিধান।।
মৎস্যগন্ধা গর্ভে যাঁর দ্বীপেতে উৎপত্তি।
বাল্যকালাবধি যাঁর তপস্যা সম্পত্তি।।
দ্বীপেতে জনম তাই নাম দ্বৈপায়ন।
কৃষ্ণ তাঁর কায় কৃষ্ণ নাম সঞ্চায়ণ।।
চারিবেদ বিভাগেতে নাম বেদব্যাস।
প্রণতি করি ভারত রচে কাশীদাস।।
সংক্ষেপে বর্ণিনু বিরাটপর্ব্ব কথা।
সাধুর সমান মহাভারতের কথা।।
অশ্বমেধ ফল পায় যে শুনে এ কথা।
ব্যাসের বচন ইথে নাহিক অন্যথা।।
সুবর্ণ মণ্ডিত শৃঙ্গে ধেনু শত শত।
সুপণ্ডিত দ্বিজে দান দেয় অবিরত।।
নিত্য নিত্য শুনে পুণ্য ভারতের কথা।
নিশ্চয় জানহ তুল্য ফল লভে দাতা।।
যেবা কহে যেবা শুনে করে অধ্যয়ন।
তুল্য ফল হয় তার সেই সাধুজন।।
সুবৃষ্টি করয়ে কালে মেঘ সর্ব্ব দেশে।
পরিপূর্ণ হয় পৃথ্বী শস্য সমাবেশে।।
অক্ষয় হউক লোক ব্রাহ্মণ নির্ভয়।
ভক্তজনে কৃতার্থ করুণ কৃপাময়।।
ধন্য হৈল কায়স্থ-কুলেতে কাশীদাস।
চারি পর্ব্ব ভারত করিল সুপ্রকাশ।।
পাঁচালী প্রবন্ধে কহে কাশীরাম দাস।
কৃষ্ণ-পদাম্বুজে অলি হৈব অভিলাষ।।
হরিধ্বনি কর সবে গোবিন্দের প্রীতে।
অন্তকালে স্বর্গপুরে যাবে আনন্দেতে।।
সর্ব্বশাস্ত্র বীজ হরি নাম দ্বি-অক্ষর।
আদি অন্ত নাহি যার বেদে অগোচর।।
কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলিতে মজিবে কৃষ্ণে দেহ।
কৃষ্ণের মুখের আজ্ঞা না হয় সন্দেহ।।
পাঁচালী বলিয়া কেহনা করিবে হেলা।
অনায়াসে পাপা নাশে গোবিন্দের লীলা।।
থাকিলে ভারত নীচগৃহে নহে দুষ্ট।
শুনিলে পাতক হয় সমূলে বিনষ্ট।।
পাণ্ডবের অভ্যুদয় শুনে যেই জন।
সর্ব্বদুঃখ তরে সেই ব্যাসের বচন।।
হরিকথা শ্রবণেতে সর্ব্ব পাপ যায়।
আদ্য মধ্য অন্তে যেবা হরিগুণ গায়।।
কাশীরাম দাস কহে পাঁচালীর মত।
বিরাট পর্ব্বের কথা হৈল সমাপিত।।
।। বিরাট পর্ব্ব সমাপ্ত।।