দাস্যে মুক্ত হইলেন পঞ্চ সহোদর।
হাসি কর্ণবীর বলে সভার ভিতর।।
নাহি দেখি, নাহি শুনি লোকের বদনে।
স্ত্রী হইতে স্বামী মুক্ত হয়েছে কখনে।।
ভার্য্যা হৈতে যেই তরে পুরুষ হইয়া।
লোকে বলে তাহারে কাপুরুষ বলিয়া।।
মহা-সিন্ধু-মধ্যেতে তরণী ডুবেছিল।
এ মহাবিপদ হৈতে কৃষ্ণা উদ্ধারিল।।
ভীম বলে, শাস্ত্র জ্ঞাত নহিস দুর্ম্মতি।
শুন কহি যাহা কহিলেন প্রজাপতি।।
সংসারের মধ্যে ভার্য্যা শ্রেষ্ঠ সখা গণি।
সর্ব্বসুখে হীন নর বিহীন রমণী।।
বিবাহ-মাত্রেতে লোক গৃহস্থ বলায়।
নানা ধর্ম্ম উপার্জ্জয়ে ভার্য্যার সহায়।।
দান যজ্ঞ ব্রত করে সহায় যাহার।
পুত্র জন্মাইয়া করে বংশের উদ্ধার।।
পতিত কুপিত হয় কর্ম্ম-অনুসারে।
জ্ঞাতিগণ ছাড়ে, ভার্য্যা ছাড়িবারে নারে।।
ইহকালে ভার্য্যা হৈতে বঞ্চে বহু সুখে।
মরণে সহায় হৈয়ে তারে পরলোকে।।
পরলোকে তারে ভার্য্যা, কহে হেন নীত।
এ লোকে তারিতে কেন নহে সমুচিত।।
ওরে মূঢ় সূতপুত্র! তুই হীন জন।
তেঁই হীনের অন্নদান কৈলি গ্রহণ।।
তোমা বিনা নির্লজ্জ কে আছয়ে সংসারে।
কপটে জিনিয়া হীন বলিবারে পারে।।
দৈবে এই কথা তোরে কহিতে যুয়ায়।
ভার্য্যার ঈদৃশ যাহা কহিলি সভায়।।
সংসারে নাহিক হীন আমার সমান।
তোরে না মারিয়া এতক্ষণ ধরি প্রাণ।।
শুনিয়া বলেন পার্থ বিনয় বচন।
হীন বস বাক্যব্যয়ে নাহি প্রয়োজন।।
হীনের বচন কভু শুনি না শুনিবে।
হীন-জন-বচনেতে উত্তর না দিবে।।
হীন জন সূত-পুত্র এই দুরাচার।
ইহা সহ সমদ্বন্দ্ব না শোভে তোমার।।
ভীম বলে, ধনঞ্জয় আছয়ে কি লোকে।
পুত্রবতী ভার্য্যার এ দশা চক্ষে দেখে।।
ঈদৃশ বচন যদি কহে হীন জন।
দেহ ভূজভার তবে বহে অকারণ।।
ধর্ম্মে যদি মুক্ত হইলেন ধর্ম্মরাজ।
শত্রুগণ সংহারিতে কেন করি ব্যাজ।।
আজি সব শত্রুগণে করিব সংহার।
একত্রে আছয়ে যত শত্রু যে আমার।।
যে কিছু করিল, চক্ষে দেখিলা সে সব।
ইহা হৈতে আর কি আছয়ে পরাভব।।
বাক্-চাতুরীতে ভাই নাহি প্রয়োজন।
উঠ ভাই, সব শত্রু করিব নিধন।।
পৃথিবীর ভার আজি করিব নির্ম্মূল।
নিপাত করিব আজি কৌরবের কুল।।
কহিতে কহিতে ক্রোধে কম্পে ভীম-অঙ্গ।
জ্বলন্ত অনল যেন নয়ন-তরঙ্গ।।
নয়ন-তরঙ্গ হৈতে অগ্নি বাহিরায়।
ভয়ঙ্কর মূর্ত্তি যুগান্তের যম প্রায়।।
ভীমের আজ্ঞাতে উঠিলেন তিনজন।
ধনঞ্জয় আর দুই মাদ্রীর নন্দন।।
সম্মুখে দেখিল ভীম লোহার মুদগর।
তুলিয়া লইতে যায় বীর বৃকোদর।।
বুঝিয়া বিষম দ্বন্দ্ব ধর্ম্মের নন্দন।
দুই হস্ত তুলি ভীমে করেন বারণ।।
যুধিষ্ঠির-আজ্ঞা ভীম লঙ্ঘিতে না পারে।
ক্রোধ নিবারিল তবে চারি সহোদরে।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশী কহে, শুনিলে জন্ময়ে দিব্যজ্ঞান।।