তবে ধর্ম্ম আজ্ঞা পেয়ে যায় দূতগণ।
রাজ্যে রাজ্যে যথা যথা বৈসে বন্ধুজন।।
পাণ্ডবের কথা শুনি যত বন্ধুগণ।
শ্রুতমাত্র মৎস্যদেশে করিল গমন।।
দ্বারকা হইতে যদু সপ্তবংশ লয়ে।
রাম কৃষ্ণ দুই ভাই গরুড়ে চড়িয়ে।।
প্রদ্যুন্ন সাত্যকি শাম্ব গদ আদি করি।
সত্যভামা রুক্মিণী প্রভৃতি যত নারী।।
সুভদ্রা সৌভদ্র আর যতেক সারথি।
সহ পরিবার আসিলেন শীঘ্রগতি।।
আসিল পাঞ্চাল হৈতে দ্রুপদ রাজন।
ধৃষ্টদ্যুন্ন সহ পঞ্চ কৃষ্ণার নন্দন।।
কাশীরাজ আদি আর কেকয় নৃপতি।
দুই অক্ষৌহিণী সেনা দোঁহার সংহতি।।
উগ্রসেন বসুদেব উদ্ধব অক্রূর।
সব রাজা উত্তরিল বিরাটের পুর।।
নানাধৃতি সুকৃতি কৌতুক নরপতি।
ঝিল্ল উপঝিল্ল তথা এল শীঘ্রগতি।।
মাতা সহ অভিমন্যু অর্জ্জুন-নন্দন।
চিত্রসেন সারথি যে আসে সেইক্ষণ।।
বৃষ্ণি ভোজ উলূকান্দি যত সেনাপতি।
পুরীসহ শ্রীগোবিন্দ আসিলেন তথি।।
মাতঙ্গ সহস্র দশ, অশ্ব তিন লক্ষ।
এক লক্ষ রথে চড়ি আসে সর্ব্ব পক্ষ।।
দশ লক্ষ চর আসে পদাতিকগণ।
স্বয়ং কৃষ্ণ আসিলেন বিরাট-ভবন।।
গোবিন্দেরে দেখি পঞ্চ পাণ্ডব সানন্দ।
চকোর পাইল যেন পূর্ণিমার চন্দ্র।।
আলিঙ্গন দিয়া রাজা কৃষ্ণে না ছাড়েন।
দুই ধারা নয়নেতে অশ্রু বরিষেন।।
অশ্রুজলে গোবিন্দের ভাসে পীতবাস।
মুখেতে না স্ফুরে বাক্য, গদগদ ভাষ।।
প্রণমিয়া শ্রীগোবিন্দ বলে মৃদুভাষা।
একে একে পঞ্চ ভাই করেন সম্ভাষা।।
সবারে করেন পূজা রাজা মহাশয়।
থাকিতে সবারে দেন উত্তম আলয়।।
উৎসব করিল তবে বিবিধ কারণ।
নট নটী নৃত্য করে বিবিধ বাজন।।
নানা বৃক্ষ রোপে আর নানা পুষ্পমালা।
প্রতি দ্বারে হেমকুম্ভ প্রতি দ্বারে কলা।।
নানা বস্ত্র বিভূষণ কন্যারে পরাল।
রোহিণী চন্দ্রমা যেন একত্র মিলিল।।
সর্ব্বগুণে সুলক্ষণা উত্তরা যে নাম।
অভিমন্যু সঙ্গে মিলে যেন রতি কাম।।
অর্জ্জুন-তনয় অভিমন্যু মহামতি।
কৃষ্ণ-ভাগিনেয়, বসুদেবের যে নাতি।।
ভক্তিভাবে মৎস্যরাজ করে কন্যাদান।
রথ গজ অশ্ব দিল প্রধান প্রধান।।
এক লক্ষ দিল গজ রত্ন-সিংহাসন।
প্রবাল মুকুট রত্ন দিল নানা ধন।।
হেনমতে সবান্ধবে কুতূহলী মনে।
ধর্ম্ম নিবসেন সুখে বিরাট ভবনে।।
বিদায় করেন ধর্ম্ম যত রাজগণ।
যে যাহার দেশে সবে করিল গমন।।
শ্রীকৃষ্ণ রহেন তথা আর অভিমন্যু।
বিদায় করেন কৃষ্ণ আর যত সৈন্য।।
যত যদুনারী গেল দ্বারকা নগর।
বলভদ্র আদি আর যতেক কুমার।।
পাণ্ডবের অভ্যুদয় শুনে যেই জন।
সর্ব্ব দুঃখ খণ্ডে তার ব্যাসের বচন।।
মহাভারতের কথা অমৃত লহরী।
শুনিলে অধর্ম্ম খণ্ডে পরলোকে তরি।।