৪৮তম অধ্যায়
আত্মবিষয়ক সাংখ্য-বেদান্তবাদ
“ব্রহ্মা বলিলেন, ‘হে মহর্ষিগণ! কোন্ কোন্ মহাত্মা ব্রহ্মকে জগদাকারে পরিণত বলিয়া বিবেচনা করেন এবং কেহ কেহ বা তাঁহাকে নিৰ্ব্বিকার বলিয়া নির্দ্দেশ করিয়া থাকেন। যাঁহার অন্তকালে উচ্ছ্বাসমাত্র কালও পরমাত্মার সহিত জীবাত্মার অভেদজ্ঞান জন্মে, তাঁহার নিশ্চয় মুক্তিলাভ হইয়া থাকে, সন্দেহ নাই। নিমেষমাত্রও জীবাত্মাতে পরমাত্মাকে নিরুদ্ধ করিলে চিত্তপ্রসন্নতাদ্বারা মুক্তিলাভে কৃতকার্য্য হইতে পারা যায়। যে ব্যক্তি প্রতিদিন প্রাতঃকাল, মধ্যাহ্নকাল ও সায়ংকালে দশ বা দ্বাদশবার প্রাণায়ামদ্বারা প্রাণসমুদয় সংযত করেন, তাঁহার নিশ্চয়ই ব্রহ্মলাভ হয়। প্রাণায়ামদ্বারা যাঁহার চিত্তশুদ্ধি হয়, তিনি যেরূপ ইচ্ছা করেন, তাহাই সুসিদ্ধ হইয়া থাকে। অব্যক্ত ঈশ্বরকে লাভ করিয়া উদ্ৰিক্ত [বিরক্ত-বিষয়বাসনায় পরাঙ্মুখ] হইলেই জীবের মুক্তিলাভ হইয়া থাকে। সত্ত্বগুণজ্ঞ মহাত্মারা সত্ত্বগুণ ব্যতীত আর কোন গুণেরই প্রশংসা করেন না। পুরুষ যে সত্ত্বগুণাশ্রয়ী, আমরা তাহা অনুমানদ্বারা অবগত হইয়া থাকি। পুরুষের সত্ত্বগুণ নাই, ইহা কোনরূপে প্রতিপাদন করিতে পারা যায় না। ক্ষমা, ধৈৰ্য্য, অহিংসা, সমদৃষ্টি, সত্য, ঋজুতা, জ্ঞান ও সন্ন্যাস এই কয়েকটি সত্ত্বগুণের বৃত্তি। অনেকে কহিয়া থাকেন যে, সত্ত্ব আত্মা হইতে পৃথক্ নহে। কারণ ক্ষমা, ধৈর্য্য প্রভৃতি গুণসমুদয় আত্মার নিত্যসিদ্ধ; সুতরাং আত্মার সহিত সত্ত্বের একীভাবসম্পাদন যুক্তিসিদ্ধ হইতে পারে। এই মত নিতান্ত দূষণীয়। কারণ ক্ষমা, ধৈৰ্য্য প্রভৃতি গুণসমুদয় যদি আত্মার নিত্যসিদ্ধ হয়, তাহা হইলে আত্মার অনুচ্ছেদে উহাদিগের কি নিমিত্ত উচ্ছেদ হইবে? সত্ত্ব আত্মা হইতে পৃথক বটে, কিন্তু আত্মার সহিত উহার সবিশেষ সংস্রব আছে বলিয়া উহাকে আত্মা হইতে অভিন্ন বলিয়া প্রতীত হয়। যেমন মশক ও উড়ম্বরের, সলিল ও মৎস্যের এবং পদ্মপত্র ও জলবিন্দুর একত্ব ও পৃথকত্ব উভয়েই লক্ষিত হইয়া থাকে, সেইরূপ সত্ত্বগুণ ও আত্মার একত্র ও পৃথকত্ব প্রতীত হয়।’ ”