বৃকোদর বীর সবে নিঃশব্দ হইল।
কৃষ্ণা প্রতি কর্ণবীর কহিতে লাগিল।।
তিন জন ধনের উপর প্রভু নহে।
সেবক রমণী শিষ্য, শাস্ত্রে হেন কহে।।
দাস হৈল যুধিষ্ঠির, তুই ভার্য্যা তার।
দাস-ভার্য্যা দাসী হয়, বিদিত সংসার।।
দাসী হৈলি, দাসী-কর্ম্ম কর যথোচিত।
প্রবেশহ ধৃতরাষ্ট্র-গৃহেতে ত্বরিত।।
তোর প্রভু হৈল ধৃতরাষ্ট্র-পুত্রগণ।
তোর অধিকারী নহে পাণ্ডুর নন্দন।।
যারে তোর ইচ্ছা হয়, ভজহ তাহারে।
পাণ্ডবেরা আর তোরা নিবারিতে নারে।।
বৃকোদর শুনিল কর্ণের কটুত্তর।
নিশ্বাস ছাড়িয়া যে কচালে করে কর।।
ক্রোধে দুই চক্ষু যেন রক্ত কুমুদিনী।
কর্ণ পানে চাহি যেন গর্জ্জে কাদম্বিনী।।
আরে মূঢ়! যে উত্তর করিলি মুখেতে।
ইহার উচিত ফল আছে মোর হাতে।।
ধর্ম্ম পাশে বদ্ধ এই ধর্ম্ম-অধিকারী।
সে কারণে তোরে কিছু বলিবারে নারি।।
যুধিষ্ঠির প্রতি বলে কৌরব-প্রধান।
তুমি কেন নাহি কহ ইহার বিধান।।
চারি ভাই তব বাক্যে সদা অবস্থিত।
আপনি বলহ, কৃষ্ণা জিত কি অজিত।।
যুধিষ্ঠির অধোমুখে শুনি সে বচন।
নয়নে বসন দিয়া ঢাকেন বদন।।
যুধিষ্ঠিরে অধোমুখ দেখি দুর্য্যোধন।
কর্ণভিতে চাহে বড় প্রফুল্ল বদন।।
ভীম ভীতে আড় আঁখি চাহে কৃষ্ণা পানে।
আপনার ঊরু হৈতে তুলিল বসনে।।
গজ-শুণ্ড-সদৃশ উলট রম্ভাতরু।
সকল লক্ষণ-যুত বজ্রবৎ ঊরু।।
মদগর্ব্বে দুর্য্যোধন কৃষ্ণারে দেখায়।
দেখি বৃকোদর বীর ক্রোধে কম্পকায়।।
ভীম বলে, যত আছ শুন সভাজনে।
এই কুরু দুষ্টকর্ম্ম দেখিলা নয়নে।।
যেই ঊরু দেখাইল সভার ভিতর।
ভারত-কুলের পশু নির্লজ্জ পামর।।
বজ্রসম নিদারুণ করি গদাঘাত।
রণমধ্যে ঊরু ভাঙ্গি করিব নিপাত।।
করিলাম এ প্রতিজ্ঞা, না করিব যবে।
পিতৃ পিতামহ গতি নাহি পান তবে।।
ভীমের প্রতিজ্ঞা শুনি কম্পিত আকার।
সভাতে বিদুর তবে কহে আরবার।।
আমি দেখি কুরুকুল রক্ষা নাহি আর।
ভীম-ক্রোধ-সিন্ধু হৈতে নাহিক নিস্তার।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশীদাস কহে, সদা শুনে পুণ্যবান।।