৪৪তম অধ্যায়
সৃষ্টপদার্থের আদিভূত বস্তু-নির্ণয়
“ব্রহ্মা বলিলেন, ‘হে তপোধনগণ! এক্ষণে যে যে পদার্থ যে যে পদার্থের আদি এবং যে যে পদার্থ যে যে পদার্থের অন্ত, আমি তাহা সবিস্তর কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর। দিবস রাত্রির, শুক্লপক্ষ মাসের, শ্রবণা নক্ষত্রসমুদয়ের, শিশির [শীত ঋতু] ঋতুনিচয়ের, ভূমি গন্ধের, জল রসের, তেজঃ রূপের, বায়ু স্পর্শের, আকাশ শব্দের, সূৰ্য্য জ্যোতিঃপদার্থসমুদয়ের, অগ্নি দৃশ্য ভূতত্রয়ের [জরায়ুজ, অণ্ডজ ও উদ্ভিজ্জ এই ত্রিবিধ পদার্থের], সাবিত্রী বিদ্যাসমুদয়ের, প্রজাপতি দেবগণের, ওঁকার বেদসকলের, প্রাণবায়ু বাক্যের, গায়ত্রী ছন্দের, সৃষ্টির পূৰ্ব্বকাল প্রজাগণের, গাভী চতুম্পাদদিগের, ব্রাহ্মণ মনুষ্যসমুদয়ের; শ্যেন পক্ষীদিগের, আহুতি যজ্ঞসমুদয়ের, সর্প সরীসৃপগণের, সত্যযুগ সমুদয় যুগের, সুবর্ণ সমুদয় রত্নের, যব ওষধিনিচয়ের, অন্ন ভক্ষ্যদ্রব্যের, জল দ্রব দ্রব্য ও পানীয়সমুদয়ের, ব্রহ্মার আবাসস্থান প্লক্ষপাদপ [অশ্বথ বৃক্ষাদি] স্থাবকসমুদয়ের, আমি প্রজাপতিদিগের, অচিন্ত্যাত্মা স্বয়ম্ভূ ভগবান বিষ্ণু আমার, সুমেরু পর্ব্বতগণের, পূৰ্ব্বদিক্ দিক্মুদয়ের, গঙ্গা নদীগণের, সাগর জলাশয়সকলের, ভগবান বিষ্ণু দেব-দানব-ভূত-পিশাচ-উরগ-রাক্ষস-নর-কিন্নর-যক্ষগণসম্বলিত সমুদয় জগতের এবং গার্হস্থ্য সমুদয় আশ্রমের আদি। প্রকৃতি সমুদয় লোকের আদি ও অন্তস্বরূপ। সূর্য্যের অস্তগমনসময় দিবসের, সূর্য্যের উদয়কাল রাত্রির, সুখ দুঃখের, দুঃখ সুখের, ক্ষয় সঞ্চিত বস্তুর, পতন উন্নত বস্তুর, বিয়োগ সংযোগের এবং মরণ জীবিতকালের অন্ত। ইহলোকে কি স্থাবর, কি জঙ্গম, কোন বস্তুই চিরস্থায়ী নহে। উৎপন্ন পদার্থমাত্রেরই ধ্বংস হইবে। দান, যজ্ঞ, তপস্যা, ব্রত ও নিয়মসমুদয়ের ফলও কালক্রমে ধ্বংস হইয়া যায়; কিন্তু জ্ঞানের কখনই ধ্বংস হয় না। প্রশান্তচিত্ত জিতেন্দ্রিয় অহঙ্কারবিহীন মহাত্মারা ঐ জ্ঞানপ্রভাবেই সমুদয় পাপ হইতে বিমুক্ত হইয়া থাকেন।”