৪৩তম অধ্যায়
অর্জ্জুনকর্ত্তৃক অস্ত্রপরিচয় প্রদান
অর্জ্জুন কহিলেন, “হে রাজপুত্র! আপনি প্রথমে যে শরাসনের বিষয় জিজ্ঞাসা করিলেন, উহা ভুবনবিখ্যাত গাণ্ডীব; ধনঞ্জয় এই একমাত্ৰ কামুক লইয়া সমুদয় দেব ও মানবগণকে পরাভব করিয়াছেন। দেব, দানব ও গন্ধর্ব্বগণ বহুকাল ঐ স্নিগ্ধ, আয়ত, অক্ষত ও উচ্চাবচ শরনিকরশোভিত শরাসনের অর্চনা করিয়াছেন। প্রথমে ভগবান ব্ৰহ্মা ঐ ধনু সহস্র বর্ষ তৎপরে প্রজাপতি সাৰ্দ্ধ-সহস্র বর্ষ, পুরন্দর পঞ্চাশীতি বর্ষ, চন্দ্ৰমা পঞ্চ শত বর্ষ এবং বরুণদেব শতবর্ষ ধারণ করিয়াছিলেন। মহাবীর ধনঞ্জয় বরুণদেবের নিকট এই দিব্য চাপ প্ৰাপ্ত হইয়াছিলেন। ইহা তাঁহার হস্তে পঞ্চষষ্টি বর্ষ ছিল। আর এই সুপার্শ্ব হেমবিগ্ৰহ শরাসন ভীমসেনের করে শোভা পাইত; তিনি ঐ ধনু দ্বারা সমুদয় পূর্ব্বদিক পরাজয় করিয়াছিলেন। এই যে ইন্দ্ৰগোপচিত্র দারুদৰ্শন শরাসন রহিয়াছে, মহারাজ যুধিষ্ঠির ইহা ধারণ করিতেন। যাহাতে কাঞ্চনময় সূৰ্য্যত্রয় প্রকাশিত আছে, উহা নকুলের ধনু। যাহাতে নানাবিধ হেমময় চিত্র ও সুবৰ্ণবিনির্ম্মিত শলাভ-সমূহ বিরাজিত হইতেছে, উহা সহদেবের শরাসন।
এই যে ক্ষুরধার সহস্ৰ নারাচ দেখিতেছি, মহাবীর ধনঞ্জয় ইহা লইয়া সংগ্ৰাম করিতেন; উহা শীঘ্রগামী ও অক্ষয়; সমরসময়ে সতেজে প্রজ্জ্বলিত হইয়া শক্রগণের প্রতি নিক্ষিপ্ত হইত; আর ঐ সমুদয় স্থূল, দীর্ঘ ও অৰ্দ্ধচন্দ্ৰাকৃতি শরনিকর ভীমসেনের; যে সমুদয় বাণে পঞ্চ শার্দ্দুলের চিহ্ন লক্ষিত হইয়াছে, ধীমান নকুল ঐ সমস্ত হরিদ্বর্ণ হেমপুঙ্খ নিশিত শর-সমূহ দ্বারা সমস্ত পশ্চিমদিক পরাজয় করিয়াছেন। এই সমুদয় সূৰ্য্যসদৃশ চিত্রিত লৌহময় শরসমূহ ধীমান্য সহদেবের। ঐ সকল নিশিত পীতবর্ণ হেমপুঙ্খ ত্রিপর্ব্ব শরগুলি মহারাজ যুধিষ্ঠিরের; আর ঐ সুদীর্ঘ শিলী পৃষ্ঠ শিলীমুখ মহাবীর অর্জ্জুনের। ঐ ব্যাঘ্রচর্ম্মনির্ম্মিত কোষে ভীমসেনের দিব্য খড়্গ রহিয়াছে। রাজা যুধিষ্ঠির এই চিত্ৰকোষনিহিত হেমমুষ্টি-শোভিত তীক্ষ্নধার নিস্ত্রিংশ ব্যবহার করিতেন। শার্দ্দুলচর্ম্ম বিনির্ম্মিত কোষে নকুলের দৃঢ়তর খড়্গ রহিয়াছে আর ঐ গোচর্ম্মনির্ম্মিত কোষে সহদেবের অসিপত্র লক্ষিত হইতেছে।”