ওহে প্রভু কৃপাসিন্ধু, অনাথ-জনের বন্ধু,
অখিলের বিপদ-ভঞ্জন।
এ সব সভার মাঝ, ইথে নিবারিতে লাজ,
তোমা বিনা নাহি অন্য জন।।
যে প্রভু পালিতে সৃষ্ট, সংহার করিতে দুষ্ট,
পুনঃ পুনঃ হও অবতার।
তাঁহার চরণ-ছায়া, স্মরিয়া সঁপিনু কায়া,
অনাথের কর প্রতিকার।।
বিষ-অগ্নি খরক্রোধ, ভুজঙ্গ দন্তীর পদে,
যেই প্রভু রাখিলা প্রহ্লাদে।
তাঁহার চরণ-যুগে, দ্রৌপদী শরণ মাগে,
রক্ষা কর বিষম প্রমাদে।।
যাঁহার উজ্জ্বল চক্র, কাটিয়া মস্তক নক্র,
নিস্তার করিল গজরাজ।
বল করে দুরাশয়ে, শরণ নিলাম ভয়ে,
তাঁহার চরণ-পদ্ম মাঝ।।
যেই প্রভু ঈষদক্ষে, কৃপায় সংসার রক্ষে,
নাচয়ে যে ফণাধর-মুণ্ডে।
তাঁহার চরণ রঙ্গ, স্মরিয়া সঁপিনু অঙ্গ,
রাখ প্রভু দুষ্ট কুরুদণ্ডে।।
যে পবু কপটে ছলি, পাতালে লইল বলি,
নির্ভয় করিলা শচীপতি।
তাঁহার ত্রিপাদ-পদ্ম, ত্রিপথগামিনী সদ্ম,
তাহা বিনা নাহি মোর গতি।।
পরশি যে পদধূলা, অনেক কালের শিলা,
দিব্যরূপ অহল্যা পাইল।
জলনিধি করি বন্ধ, বিনাশিলে দশস্কন্ধ,
দ্রৌপদী শরণ তাঁর নিল।।
যে প্রভু পর্ব্বত ধরি, গোকুলে গোপের নারী,
রক্ষা কৈল ইন্দ্রের বিবাদে।
বেদশাস্ত্র লোকে খ্যাত, পতি-পুত্রগণ-নাথ,
পাণ্ডুবধূ রাখহ প্রমাদে।।
যাঁহার সৃজন সৃষ্টি, সংসারে যাঁহার দৃষ্টি,
মোর দুঃখ কেন নাহি দেখ।
বলিষ্ঠ দুর্জ্জন জনে, স্মরণ করিলে শুনে,
এ সঙ্কটে কেন নাহি রাখ।।
নৃসিংহ বামন হরি, বিষ্ণু সুদর্শন-ধারী,
মুকুন্দ মুরারি মধুহারী।
নারায়ণ বিষ্ণু রাম, ইত্যাদি যতেক নাম,
ঘন ডাকে দ্রুপদ-কুমারী।।
দ্রৌপদী আকুল জানি, অস্থির সে চক্রপাণি,
যাঁর নাম আপদভঞ্জন।
ধর্ম্মরূপে জগৎপতি, রাখিতে এলেন সতী,
সত্যধর্ম্ম করিতে পালন।।
আকাশ-মার্গেতে রয়ে, বিবিধ বসন লৈয়ে,
দ্রৌপদীরে সঘনে যোগায়।
যত দুঃশাসন কাড়ে, ততেক বসন বাড়ে,
আচ্ছাদন করি সর্ব্ব-গায়।।
লোহিত পিঙ্গল পীত, নীল শ্বেত বিরচিত,
নানা-চিত্র-বিচিত্র বসনে।
বিবিধ বর্ণের শাড়ী, দুঃশাসন ফেলে কাড়ি,
পুঞ্জ পুঞ্জ হৈল স্থানে স্থানে।।
পর্ব্বত-প্রমাণ বাস, দেখি লোকে লাগে ত্রাস,
চমৎকার হইল সভাতে।
কভু নাহি দেখি শুনি, সভাজন বল বাণী,
ধন্য ধন্য দ্রুপদ-দুহিতে।।
ধন্য গর্গ মহামুনি, নিস্তার করিতে প্রাণী,
বাছিয়া থুইল কৃষ্ণ-নাম।
যে নাম লইলে তুণ্ডে, বিবিধ দুর্গতি খণ্ডে,
হেলে লভে স্ববাঞ্ছিত কাম।।
নরেতে যে নাম ধরি, ভবসিন্ধু যায় তরি,
খণ্ডে মৃত্যুপতি দণ্ড দায়।
ক্ষণেক যে নাম ধরি, ভবসিন্ধু যায় তরি,
খণ্ডে মৃত্যুপতি দণ্ড দায়।
ক্ষণেক যে নাম জপি, অশেষ পাপের পাপী,
সকল ধর্ম্মের ফল পায়।।
ভারত-অমৃত-কথা, ব্যাস বিরচিত গাথা,
অবহেলে যেই জন শুনে।
দুস্তর সংসারে তরি, যায় সেই স্বর্গপুরী,
কাশীরাম দাস বিরচনে।।