৩.২ ইরন চেয়ার থেকে নিজেকে মুক্ত করে

ইরন চেয়ার থেকে নিজেকে মুক্ত করে স্কাউটশিপের মাঝ দিয়ে শুমান্তির কাছে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করল, ঠিক সেই মুহূর্তে স্কাউটশিপটা একটা বড় ধরনের ঝাঁকুনি খেয়ে পুরোটা প্রায় উল্টে যেতে যেতে কোনোমতে আবার সোজা হয়ে দাঁড়াল। ইরন দেয়াল আঁকড়ে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না, স্কাউটশিপের এক কোনায় গিয়ে ছিটকে পড়ে। কোনো রকমে আবার সে সোজা হয়ে দাঁড়াল, তারপর মেঝেতে প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে শুমান্তির কাছাকাছি গিয়ে হাজির হল।

যে জিনিসটি তাদের সামনে ঝুলছে এর থেকে কদাকার কিছু তারা কখনো দেখেছে বলে মনে করতে পারল না। জিনিসটি জীবন্ত সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই, এর ভিতরে নানা অংশ নড়ছে, কিলবিল করছে, পুরো জিনিসটি সরসর শব্দ করে হঠাৎ বড় হতে শুরু করল। জিনিসটি থেকে উড়ের মতো কিছু একটা বের হয়ে এল, হঠাৎ করে গোলাপি রঙের চটচটে ভেজা জিনিসটি তাদেরকে স্পর্শ করার চেষ্টা করতেই ইরন শুমান্তিকে নিয়ে লাফিয়ে পিছনে সরে গেল। জিনিসটি আবার নড়তে শুরু করে এবং হঠাৎ করে তাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে, শুমান্তি আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠে এবং ইরন আবার তাকে ধরে নিচে লাফিয়ে পড়ল, ভেজা থলথলে জীবন্ত জিনিসটি তাদের উপর দিয়ে স্কাউটশিপের অন্যদিকে যেতে শুরু করে, ঠিক তাদের উপর দিয়ে যাবার সময় টপটপ করে তাদের উপর চটচচে এক ধরনের তরল গড়িয়ে পড়ল। ঝাজালো কটু এক ধরনের দৃষিত গন্ধে হঠাৎ করে স্কাউটশিপের বাতাস ভারী হয়ে আসে। তাদের নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, শুমান্তি নিশ্বাস নেবার। চেষ্টা করে কাশতে শুরু করে।

প্রাণীটি দেয়াল আঁকড়ে ধরে একটি ছোট ফুটো দিয়ে বাতাস বের হয়ে যাবার মতো এক ধরনের অনিয়মিত শব্দ করতে থাকে, সমস্ত স্কাউটশিপে চটচটে আঠালো গাঢ় বাদামি রঙের এক ধরনের তরল ছিটকে ছিটকে পড়ে।

ত্রালুস স্কাউটশিপের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে ভল্টের দিকে ছুটে গেল, ঢাকনা খুলে তার ভিতর থেকে একটা ভয়াবহ স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিয়ে ছুটে এল। প্রাণীটির দিকে অস্ত্র তাক করতেই ইরন নিচু গলায় বলল, খবরদার। গুলি কোরো না।

ঠিক আছে। এলুস একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে বলল, কিন্তু আবার যদি আমাদের আক্রমণ করে?

করলে দেখা যাবে। এখনো তো করে নি।

ওরা তিন জন স্কাউটশিপের মেঝেতে উঁচু হয়ে বসে প্রাণীটির দিকে এক ধরনের আতঙ্ক নিয়ে তাকিয়ে রইল। এটি দেখলে প্রথমেই যে জিনিসটি মনে হয় সেটি হচ্ছে যে জীবন্ত কোনো একটি প্রাণীর চামড়া ছিলে ফেলা হয়েছে, এখন হঠাৎ করে ভিতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো দেখা যাচ্ছে। থলথলে ভেজা আঠালো জিনিস নড়ছে, এবং কিলবিল করছে। এর নির্দিষ্ট কোনো আকার নেই। প্রথমে একটা বড় অক্টোপাসের মতো দেয়াল আঁকড়ে ধরে রইল এবং সেই অবস্থায় শূন্যে ঝুলতে থাকে। ছোট ছোট পুঁড়ের মতো জিনিস ঝুলতে থাকে এবং সেগুলো হঠাৎ করে বুজে যায়। জিনিসটি স্কাউটশিপের মাঝে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ করে একটু ছোট হয়ে আসে, তীব্র আলোর একটা ঝলকানি হল এবং হঠাৎ করে প্রাণীটি অদৃশ্য হয়ে গেল।

ইরন হতচকিতের মতো স্কাউটশিপের ভিতরে তাকায়, এখনো তার বিশ্বাস হচ্ছে না যে জলজ্যান্ত এ রকম একটা প্রাণী তাদের চোখের সামনে থেকে এভাবে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। ত্ৰালুস শক্ত করে অস্ত্রটি ধরে রেখে কয়েক পা এগিয়ে গেল, এদিক–সেদিক তাকিয়ে বলল, কোথায় গেছে?

শুমান্তি মেঝে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে শরীরের নানা জায়গায় লেগে থাকা কুৎসিত চটচটে আঠালো তরলের দিকে তাকিয়ে মুখ বিকৃত করে বলল, চলে গেছে।

কিন্তু কেমন করে চলে গেল?

তা হলে আগে জিজ্ঞেস কর কেমন করে ভিতরে এল?

ত্রালুস বিভ্রান্তের মতো শুমান্তির দিকে তাকাল, মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ। ঠিকই বলেছ, কেমন করে ভিতরে এল?

শুমান্তি এক টুকরো নিও পলিমারের টুকরো নিয়ে শরীরের নানা জায়গায় লেগে থাকা আঠালো তরল মুছতে মুছতে বলল, এটাই কি সেই বুদ্ধিমান প্রাণী?

ইরন চিন্তিত মুখে স্কাউটশিপের ভিতরে চারদিকে মাথা ঘুরিয়ে দেখে বলল, মনে হয়।

শুমান্তি বলল, আমার তো এটাকে বুদ্ধিমান মনে হল না। কদাকার মনে হল।

সৌন্দর্যের ধারণা খুব আপেক্ষিক। মাকড়সা যদি আমাদের মতো বুদ্ধিমান প্রাণী হত তা হলে তারা মানুষকে খুব কদাকার প্রাণী বলে বিবেচনা করত।

ত্রালুস স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি ভল্টের ভিতরে রাখতে রাখতে বলল, প্রাণীটি অন্তত আমাদেরকে আক্রমণ করার চেষ্টা করে নি।

হ্যাঁ। অন্তত আমরা বুঝতে পারি নি।

শুমান্তি মাথা নেড়ে বলল, এটি যদি সত্যি সত্যি আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত তা হলে আমি ভয়েই মারা যেতাম।

ইরন অন্যমনস্কের মতো বলল, হুঁ।

শুমান্তি স্কাউটশিপের ঝাঁকুনির মাঝে সাবধানে সামনের দিকে এগিয়ে এসে বলল, ইরন।

ইরন কোনো কথা বলল না, খুব চিন্তিতভাবে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

শুমান্তি কাছে গিয়ে বলল, ইরন।

ইরন একটু চমকে উঠে বলল, কী হল?

তুমি কী ভাবছ?

না, আমি জিনিসটা বোঝার চেষ্টা করছি। একটা রক্তমাংসের প্রাণী—

রক্তমাংসের? শুমান্তি মুখ বিকৃত করে বলল, রক্তমাংস?

দেখে তো সেরকমই মনে হল। স্কাউটশিপে যে তরলগুলো ছিটিয়েছে তার নমুনা মহাকাশযানের মূল তথ্যকেন্দ্রে পাঠিয়ে দিলে বিশ্লেষণ করে বলতে পারবে। আমার মনে হয় আমরা দেখব এটা জীবিত কোনো প্রাণীর দেহ থেকে এসেছে।

শুমান্তি শরীর থেকে চটচটে তরল মোছার চেষ্টা করতে করতে বলল, আমাদের শরীরে লেগে গেছে, কোনো ক্ষতি হবে না তো?

এখনো যখন হয় নি, মনে হয় আর হবে না। যেহেতু এটা ভিন্ন ধরনের প্রাণীসত্তা, আমার মনে হয় না আমাদের শরীরকে আক্রমণ করতে পারবে। ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার মতো এটা তো নিশ্চয়ই আর. এন. এ, ডি. এন. এ দিয়ে তৈরি নয়। তাদের নিজস্ব জিনিস দিয়ে তৈরি। ঘরে কেমন কাঁজালো কটু গন্ধ দেখেছ?

কিসের গন্ধ এটা?

মনে হয় ক্লোরিনের। আমরা যেরকম অক্সিজেন দিয়ে নিশ্বাস নেই, এটা মনে হয় সেরকমভাবে ক্লোরিন দিয়ে নিশ্বাস নেয়!।

ক্লোরিন? কিন্তু সেটা তো ভয়ঙ্কররকম বিক্রিয়াশীল গ্যাস।

ইরন হেসে ফেলল, বলল, অক্সিজেনও অত্যন্ত বিক্রিয়াশীল গ্যাস। লোহার মতো ধাতুকে সেটা আক্রমণ করে ক্ষয় করে ফেলে। কিন্তু আমরা তার মাঝে দিব্যি বেঁচে থাকতে পারি।

সেটা ঠিক বলেছ, আমি আগে কখনো এভাবে চিন্তা করি নি।

ত্রালুস স্কাউটশিপের নিয়ন্ত্রণ প্যানেলের সামনে বসে ছোট স্ক্রিনটার উপর ঝুঁকে পড়ল। সাবধানে স্কাউটশিপটাকে আবার নিচে নামাতে শুরু করে। বাতাসের ঘনত্ব আরো বেড়েছে–বাইরে এখন ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। ধোঁয়ার মতো কুণ্ডলি পাকানো সবুজ মেঘ ভেসে যাচ্ছে, প্রতিবার এ রকম একটা মেঘে আঘাত করা মাত্র স্কাউটশিপটি থরথর করে কেঁপে উঠছিল। বহু নিচে স্থানে স্থানে বেগুনি রঙের উঁচুনিচু ভূমি। সেখানে কী বিস্ময় লুকিয়ে আছে কে জানে।

ইরন স্কাউটশিপের গোলাকার জানালার সামনে বসে আবার বাইরে তাকিয়ে চিন্তায় ডুবে গেল। একটি প্রাণী কীভাবে বন্ধ স্কাউটশিপে এসে হাজির হতে পারে আবার কীভাবে বন্ধ স্কাউটশিপ থেকে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে? এটি তো অলৌকিক কিছু হতে পারে না, বিজ্ঞানের মূল সূত্রগুলো নিশ্চয় মানতে হবে। কোনো জিনিস তো হঠাৎ করে সৃষ্টি হতে পারে না, আবার এ রকম হঠাৎ করে অদৃশ্যও হয়ে যেতে পারে না। প্রাণীটি কোথায় গেল?

কীশার স্কাউটশিপটা নিচে নেমে গেছে। ত্রালুসের গলার স্বর শুনে ইরন মাথা তুলে তাকাল।

কেমন করে বুঝতে পারলে?

খুব ঝড়ো হাওয়া হচ্ছে তাই দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু সিগনালে আর ডপলার শিফট নেই। স্কাউটশিপটা থেমে গেছে।

আমাদেরও কাছাকাছি থামতে হবে।

ঠিক আছে। নিচে নেমে আমি একবার ঘুরে আসি।

বেশ।

স্কাউটশিপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এর মাঝে ত্রাসের নিজের মাঝে বেশ একটা আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে, সে বেশ সাবলীলভাবে স্কাউটশিপটাকে ঘুরিয়ে নিচে নামিয়ে নিতে থাকে। বাইরে গাঢ় সবুজ রঙের মেঘ কুণ্ডলি পাকিয়ে উঠে আসছে, তার মাঝে নীলাভ বিদ্যুতের স্ফুলিঙ্গ খেলা করছে। নিচে বেগুনি রঙের প্রান্তর, কোথাও আলো কোথাও অন্ধকার। মাঝে মাঝে বড় বড় ফাটল, তার ভিতর থেকে ঈষৎ কমলা রঙের এক ধরনের আলো বের হয়ে আসছে। পুরো দৃশ্যটি একটি অতিপ্রাকৃত দৃশ্যের মতো, তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ করে মনে হয় এর কোনোটিই সত্যি নয়, পুরোটুকু বুঝি শক্তিশালী কোনো মস্তিষ্ক–বিকলন ড্রাগের ফল। ইরন জানালা থেকে মাথা ঘুরিয়ে ভিতরে তাকাল এবং হঠাৎ করে স্কাউটশিপের ভিতরে আবার সেই ভয়াবহ কদাকার প্রাণীটিকে দেখতে পেল। কোনো বীভৎস প্রাণীকে যেন কেউ খুলে তার ভিতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে বাইরে নিয়ে এসেছে।

স্কাউটশিপের ভিতরটুকু তীক্ষ্ণ ঝুঁজালো গন্ধে ভরে গেল–আঠালো চটচটে তরল প্রাণীটির দেহ থেকে ফোঁটা ফোঁটা করে স্কাউটশিপের ভিতর গড়িয়ে পড়তে থাকে। প্রাণীটি থরথর করে কাঁপছে। ভিতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সরসর করে নড়ছে। ইরন নিশ্বাস বন্ধ করে বীভৎস প্রাণীটির দিকে তাকিয়ে থাকে এবং হঠাৎ করে একটা জিনিস বুঝতে পারে, সে ভয়ঙ্করভাবে চমকে উঠে বিস্ফারিত চোখে প্রাণীটির দিকে তাকিয়ে থাকে।

ইরন শুমান্তির আর্তচিৎকার শুনতে পেল। ত্রালুস ছুটে গিয়ে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রটি হাতে নিয়ে ইরনের পাশে এসে দাঁড়ায়। ভয়ঙ্কর দর্শন প্রাণীটি থেকে হঠাৎ করে গুঁড়ের মতো কিছু একটা ছুটে আসে, ত্রালুস অস্ত্রটি উঁচু করে ধরতেই ইরন খপ করে তার হাত ধরে ফেলল, না, ত্রালুস, না।

এটা তোমাকে আক্রমণ করছে।

আমার ধারণা করছে না।

তা হলে কী করছে?

কিছুই করছে না।

ত্রালুস নিশ্বাস বন্ধ করে তাকিয়ে থাকে এবং থলথলে ভেজা আঠালো ঔড়গুলো তাদের গা ঘেঁষে গিয়ে হঠাৎ করে প্রাণীটির শরীরে মিশে গেল।

শুমান্তি হেঁটে ইরনের পাশে এসে দাঁড়াল, নিচু গলায় বলল, তুমি কেন বলছ এটা কিছুই করছে না?

কারণ এটা আমাদের দেখছে না।

দেখছে না?

না।

কেন দেখছে না, এর কোনো চোখ নেই?

না, চোখ–কানের কথা নয়। অন্য কোনো ধরনের প্রাণী হলেই যে চোখ–কান থাকতে হবে তা ঠিক নয়, তারা অন্য কোনোভাবেও তাদের তথ্য নিতে পারে।

তা হলে?

এটি একটি চতুর্মাত্রিক প্রাণী। ত্রিমাত্রায় কিছু থাকলে সেটি এত সহজে সেটা দেখতে পারে না।

চতুর্মাত্রিক প্রাণী?

হ্যাঁ। শুধুমাত্র চতুর্মাত্রিক প্রাণীই ত্রিমাত্রিক জগতে হঠাৎ করে হাজির হতে পারে, হঠাৎ করে অদৃশ্য হতে পারে। এরা চতুর্মাত্রিক প্রাণী বলেই চতুর্থমাত্রা ব্যবহার করে পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছিল।

হ্যাঁ, আমরা ত্রিমাত্রিক জগতে এই প্রাণীটির প্রজেকশনটুকু দেখছি। প্রাণীটি দেখতে আসলে কী রকম আমরা কোনোদিন জানতে পারব না।

ত্ৰালুস অস্ত্রটি তাক করে রেখে ভয় পাওয়া গলায় বলল, তুমি নিশ্চিত এটা আমাদের দেখতে পারছে না?

পুরোপুরি নিশ্চিত কেমন করে হব? কিন্তু আমার ধারণা এটা আমাদের দেখতে পাচ্ছে। যদি দ্বিমাত্রিক একটা জগৎ থাকত তা হলে আমরা যেরকম দেখতে পেতাম না অনেকটা সেরকম।

শুমান্তি বিস্ফারিত চোখে প্রাণীটার দ্রুত পাল্টে যাওয়া বীভৎস দেহটির দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, কেন আমরা দ্বিমাত্রিক জগৎ দেখতে পেতাম না?

কারণ একটি ত্রিমাত্রিক জগতে অসীম সংখ্যক দ্বিমাত্রিক জগৎ থাকে, কোনটি তুমি দেখবে? শুধু একটি হলে তুমি দেখবে, কিন্তু একটি তো নেই, কোনটা তুমি আলাদা করে দেখবে?

ত্রালুস অস্ত্রটি আলগোছে ধরে রেখে বলল, তুমি বলছ আমি যদি এটাকে গুলি করি এটা জানবে না কে তাকে গুলি করেছে?।

সম্ভবত জানবে না, কিন্তু বুঝতে পারবে, কোনো একটি ত্রিমাত্রিক জগতে সে আঘাত পেয়েছে। চতুর্মাত্রিক প্রাণী তখন ত্রিমাত্রার জগৎকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে পারে।

শুমান্তি আটকে থাকা একটা নিশ্বাস বের করে দিয়ে বলল, এটা আসলে তার আকার পরিবর্তন করছে না। এটা আমাদের এই ত্রিমাত্রিক জগতের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে। যখন যেটুকু আমাদের জগতে রয়েছে তখন সেটুকু আমরা দেখতে পাচ্ছি।

ইরন মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ। এইজন্য এটা হঠাৎ করে এখানে আসতে পারে, আবার হঠাৎ করে চলে যেতে পারে।

ইরনের কথা শেষ হবার আগেই অদৃশ্য একটা আলোকের ঝলকানি দেখা গেল এবং হঠাৎ করে প্রাণীটা অদৃশ্য হয়ে গেল। ইরন মাথা নেড়ে বলল, একটা বদ্ধ জায়গায় কোনো জিনিস হঠাৎ করে আসা এবং হঠাৎ করে বের হয়ে যাওয়ার একটি মাত্র ব্যাখ্যা, এটি চতুর্মাত্রিক প্রাণী।

ত্রালুসকে খানিকটা বিভ্রান্ত দেখায়। সে শুমান্তির দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি মনে হয়। ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছ। আমি এখনো বুঝতে পারি নি।

ইরন ত্রালুসের কাধ স্পর্শ করে বলল, আমি তোমাকে বুঝিয়ে দেব, আগে দেখ মহাকাশযানের মূল তথ্যকেন্দ্র বিশ্লেষণ করে নতুন কিছু পাঠিয়েছে কি না।

যোগাযোগ মডিউলে মহাকাশযানের মূল তথ্যকেন্দ্র থেকে পাঠানো তথ্যগুলো তিন জন মিলে দেখতে থাকে। প্রাণীটার শরীরে প্রচুর ধাতব পদার্থ রয়েছে, বিশেষ করে এলকালী ধাতু। ক্লোরিনের সাথে বিক্রিয়া করে শক্তি সংগ্রহের একটি সহজ পদ্ধতি। পৃথিবীর প্রাণিজগৎ যেরকম পুরোপুরি ডি. এন. এ. নির্ভর এখানে সেরকম কিছু দেখা গেল না, দীর্ঘ সুতার মতো ক্রিস্টালের অবকাঠামো রয়েছে যার ভিতর দিয়ে বৈদ্যুতিক সঙ্কেত যেতে পারে। মাঝে মাঝে গোলাকার অংশে গেলিয়াম৩১ এবং আর্সেনাইডের প্রাচুর্য দেখা গেল, সম্ভবত বৈদ্যুতিক সঙ্কেত বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। প্রাণীটির দেহ থেকে বের হওয়া তরল থেকে আরো নানা ধরনের অসংখ্য তথ্য দেওয়া হয়েছে, যার বেশিরভাগই অল্প সময়ে বোঝার কোনো উপায় নেই। ঠিক কোন অংশটি ব্যবহার করে এটি চতুর্মাত্রিক জগতে বিচরণ করতে পারে সেই তথ্যটুকু খুঁজে পাওয়া গেল না।

ত্রালুস বিশাল তথ্যভাণ্ডারের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে ইরনকে জিজ্ঞেস করল, ইরন, তুমি বুঝতে পারলে?

পুরোপুরি বুঝতে সময় নেবে। তবে যেটুকু বোঝার সেটুকু বুঝেছি।

কী বুঝেছ?

এটি চতুর্থমাত্রায় বিচরণ করতে পারে সত্যি কিন্তু এটি তৈরি আমাদের পরিচিত পদার্থ দিয়ে। যার অর্থ– ইরন একমুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, আমরা প্রয়োজন হলে আমাদের প্রযুক্তি দিয়েই তার সামনাসামনি হতে পারব।

শুমান্তি একটু হেসে বলল, তুমি বলতে চাইছ প্রয়োজন হলে আমাদের অস্ত্র দিয়ে এদের সাথে যুদ্ধ করা যাবে।

ইরন হাসার চেষ্টা করে বলল, আমি এটা বলতে চাইছি না–বোঝাতে চাইছি। প্রথমবার যখন কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর সাথে দেখা হয় তখন তাদের সাথে যুদ্ধ করার কথা নয়!।

ত্রালুস স্কাউটশিপের সামনে থেকে উচ্চকণ্ঠে বলল, তোমরা তোমাদের নিজেদের জায়গায় বস, কীশার স্কাউটশিপটা পাওয়া গেছে, আমরা এখন নামব।

কিছুক্ষণের মাঝেই স্কাউটশিপের শক্তিশালী ইঞ্জিন গর্জন করতে শুরু করে। আয়োনিত গ্যাসের আলোতে হঠাৎ করে চারদিক আলোকিত হয়ে ওঠে।