৩. হোটেল দ্য সুইমির

০৫.

হোটেল দ্য সুইমির আধ নোংরা লাউঞ্জেবসে গতকালের কথা আর্চার চিন্তা করছিলো। মনে শান্তি ছিলো কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায়। একটা মার্সিডিজ গাড়ী ভাড়া নিয়েছিলো এভিস কোম্পানীতে। অনেক বাড়ীর দালালদের সঙ্গে দেখা করার পর প্যারা ভাইসোতে একটা কাঠের তৈরী বাড়ী পেয়েছে লুগানোর লাগোয়া। একমাসের জন্য বাধ্য হয়ে ভাড়া নিতে হলো, তবে আদর্শ জায়গা গ্রেনভিলের লুকিয়ে থাকার পক্ষে।

 আগামীকাল আন্দাজ দুপুর দুটোর সময় সেগেত্তি আর বেলমন্ট আসবে। ওদের প্রথমেই চিনিয়ে আনবে হেলগার বাড়িটা, তারপর আনবে এখানে, কাল রাতেই তো চুরি করা হবে প্রেনভিলকে, মনে মনে নিজেকে সমর্থন করে আর্চার মাথা নাড়লো। যদি ঠিক মতো গ্রেনভিল ভার নিতে পারে হেলগার তবে তার হাতে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই দশ লাখ ডলার না আসার কোনো কারণ নেই। দারুণ জমেছে যে প্ল্যানটা, এখন নির্ভর করছে সবটাই গ্রেনভিলের হাতের কাজের ওপর।

রাস্তার দিকের নোংরা কাঁচের মধ্যে দিয়ে রূপোলী আলোয় মেশানো রোলস রয়েসে গ্রেনভিলকে দেখেই লাফিয়ে উঠলো আর্চার, গাড়ি থেকে নামার চেষ্টা করছিলো গ্লেনভিল উল্টোদিকের দরজাটা আর্চারকে দেখে খুলে দিলো। আর্চার উঠে বসতেই গাড়ি স্টার্ট করে দিলো গ্রেনভিল।

কি অপূর্ব গাড়ি, উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলো আর্চার, সঙ্গে সঙ্গে একটা ঈর্ষারও প্রবাহ বয়ে গেলো তার রক্তে। মনে হলো ওর, ওর জীবনে হেলগা না এলে আজ ওর দামী গাড়ি থাকতো এই রকম।

আমার অনেক কথা আছে তোমার সঙ্গে, গ্রেনভিলের কণ্ঠস্বরের রুষ্টতায় ওর দিকে আর্চার ফিরে তাকালো। গণ্ডগোল কিছু হয়েছে নাকি?

আমার টুঁটি টিপে ধরেছে এই মেয়ে মানুষটা, ও আমায় পাগল করে দেবে, রাগে গ্রেনভিল ফেটে পড়তে চাইলো। তারপর ট্রাফিকের প্রচণ্ড ভীড় কাটিয়ে এলো হ্রদের কাছে, জায়গা দরকার গাড়ি পার্ক করার, কিন্তু ঐ জিনিষটা যেন লুগানোতে নেই। কোথাও শেষ পর্যন্ত জায়গা না পেয়ে গাড়ি ঢুকিয়ে দিলো নো পার্কিং এলাকাতেই ও ইঞ্জিন বন্ধ করে বললো, ও চায় ওর ফার্মে আমি কাজ করি, ভাবতে পারছো? ও আমাকে বিয়ে করবেই, শুধু কি তাই পঞ্চাশ লাখ ডলার আমাকে ধার দিতে চাইছে যাতে আমি ওর পয়সায় খাচ্ছি তা না মনে করি। কোন সুস্থ মস্তিষ্কের লোক কাজ করবে ওর সঙ্গে বলো? একটু ও আমাকে একলা, ছাড়বে না। হয় বিছানায় শোও ওর সঙ্গে না হয় কাজ করো টেবিলে বসে।

আর্চার নিঃশ্বাসটা চেপে গেলো, আহা ঐ ধরণের একটা প্রস্তাব তার কাছে যদি আসতো, সঙ্গে সঙ্গে ও তো ঝাঁপিয়ে পড়তোঁ, ধার পঞ্চাশ লাখ ডলার আর কাজ করবার প্রস্তাব হেরমান রলফ ইলেকট্রনিক কর্পোরেশানে। ভাবাই যায় না। গ্রেনভিলের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে হঠাৎ ঘৃণায় আর্চারের মন ভরে উঠলোসত্যিই পুরুষ বেশ্যা গ্লেনভিল লোকটা, ভয় পায় দায়িত্ব নিতে। তবু আর্চার অশান্ত সুরে বললো, হা, বুঝতে পারছি তোমার মনের কথা, তবে প্রয়োজন নেই জড়িয়ে পড়ার। কিন্তু তুমি কি করে এলে?

 গ্রেনভিল বিরস মুখে বললো, হেলগাকে বললাম যে আমি ওর কথাটা একটু ভাবতে সময় চাই। আমি ভাল চিন্তা করতে পারি গলফ খেলার সময়। এছাড়া বেরিয়ে আসার অন্য কোনো পথ ছিল না। জমি কেনার ব্যাপারে ভার্সাইতে দরকারী কয়েকটা কাজে ফোন আসবে ওর কাছে, তাই আমাকে ও একা ছেড়েও দিলো।…ওর ব্যবসায়ে যদি আমি কাজ করতে রাজী হই, তাহলে আমাকে কালকেই বিয়ে করে ফেলবে, গাড়ির হুইলের ওপর রাগের চোটে এক ঘুষি বসিয়ে দিলো গ্লেনভিল।

 কিন্তু এটাই করুক হেলগা, আমাদের তাই তো প্ল্যান, উত্তর দিলো শান্তভাবে আর্চার, যেন তুমি বড্ড বেশি সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছ। কখনই তোমাদের দুজনের বিয়ে হবেনা। তুমি এতক্ষণ পর্যন্ত বেশ ভালই চালিয়েছে। যাও চালিয়ে, তুমি ওর কোম্পানীতে ফিরে গিয়ে বলবে চাকরী করবে, আর বিয়ে যত তাড়াতাড়ি হবে সুখি হবে ততই তুমি।

একটা সিগারেট ধরালো গ্রেনভিল, বিয়ে হবার কথা ওর সঙ্গে চিন্তা করলেই রক্ত শুকিয়ে যায় আমার। আর্চার ঠিক বলছো তো তুমি, সব ঠিকঠাক চলবে শেষ পর্যন্ত। কবে তুমি ওর হাত থেকে আমায় বের করে আনছো বলো?

মনে মনে ঘৃণায় বিরক্ত হয়ে উঠলো আর্চার। সুন্দর অপদার্থ এই পুতুলটার বদলে সে যদি আজ থাকতো?

তোমায় কিডন্যাপ করা হবে আগামীকাল রাতের বেলায়, তাহলেই তো দুশ্চিন্তা তোমার দূর হবে। এ পাশের প্ল্যান এখনও পর্যন্ত ঠিক মতো চলছে।

ভালো চললেই ভালো। তুমি জানো না, সবসময় খবরদারী করেও আমাকে কিভাবে হাতের মুঠের মধ্যে পুরে রাখতে চায়, জীবনে এরকম মেয়েমানুষ দেখিনি।

নিশ্চিন্ত থাকো। বন্দোবস্ত সব হয়ে গেছে। দুজন লোক যাবে কাল রাত দশটার সময়। মুখোশ পরা পিস্তল হাতে। ওরা ভয় দেখাবে তোমাদের দুজনকে। তোক দেখানো সামান্য বাধা দেবার চেষ্টা করবে তুমি, তবে কড়াকড়ি বেশি করবে না, কারণ যারা যাবে তারা পেশাদার নয়। ওদের সঙ্গে চলে যাবে তুমি। একটা চিঠি এরা হেলগাকে দিয়ে আসবে, আমি চিঠিটা তৈরী করে রেখেছি। কি বলতে হবে হেলগাকে, তাও আমি শিখিয়ে দেবো ওই ভাড়াটে গুণ্ডাদুটোকে কথা দিচ্ছি। তোমায়, হেলগাকে ওরা শাসাবে যেভাবে তাতে ও আর পুলিশকে ডাকবে না। ওরা একটা বাড়িতে তোমাকে গাড়ি করে নিয়ে যাবে, আমি ভাড়া করে রেখেছি বাড়িটা। পৌঁছবার পর ওখানে গুণ্ডাদুটোর পাওনা মিটিয়ে তোমার ভার নেবো আমি আর আশা করি সপ্তাহ খানেকের মধ্যে তুমি মালিক হয়ে যাবে দশ লাখ ডলারের। হ্যাঁ, এতো সহজেই কাজটা হবে।

সিগারেটটা অ্যাসট্রেতে গুঁজে গ্রেনভিল প্রশ্ন করলো, কিন্তু হিঙ্কলকে নিয়ে কি করবে?

 হ্যাঁ, আবার হিঙ্কল আছে ওখানে।…শুতে যায় ও কখন?

 ভগবান জানে। হেলগা গত রাতে ওকে ডিনার খাবার পর শুতে পাঠালো জোর করে।

তাহলে ওদের একেবারে এগারোটার সময় পাঠালেই চলবে। তুমি কি মনে করো হিঙ্কল তোমাদের দুজনকে একলা রেখে চলে যাবে?

থেকেও যেতে পারে।

তাহলে ওর ভার নেবে দুটো গুণ্ডার একজন। হ্যাঁ, আর একটা কথা ক্রিস, তালাটা সদর দরজার খুলে রেখো। আমি ওই বাড়িটা চিনি। ভেতরে ঢোকবার সদর ছাড়া অন্য আর কোন পথ নেই। সদর দরজার কাছেই একটা বাথরুম আছে গলি বারান্দায়। হিঙ্কল চলে যাবার পর এক ফাঁকে চলে আসবে বাথরুমে যাবার নাম করে। ফিরে যাবে দরজার তালাটা খুলে…বুঝেছো?

মাথা নাড়লো গ্লেনভিল। কাঁচ নামাবার বোতামটা টিপলো, কি চাই? সে খেঁকিয়ে উঠলো ইতালী ভাষায়।

নো-পার্কিং এলাকায় আপনি গাড়ি রেখেছেন। বে-আইনী এটা।

যাক গোল্লায়। গাড়ি রাখার কোন জায়গায় নেই এই রাজে শহরে। গাড়ি রাখার ভাল বন্দোবস্ত করা তোমাদের উচিত।

বহুদিন আর্চার সুইজারল্যান্ডে কাটিয়েছে, ও জানে ওখানকার পুলিশ যেমন সৎ, তেমনি স্পর্শকাতর। যেভাবে অপমানজনক কথা গ্রেনভিল বলছে তাতে বাড়বে গণ্ডগোেল।

চোখ মুখ কঠোর হয়ে গেলে পুলিশটির, দেখান আপনার কাগজপত্র।

 এই নিন। গাড়ির কাগজপত্র খোপ থেকে তুলে দিলো পুলিশের হাতে।

কনস্টেবলটি একবার চোখ বুলিয়ে বললো, কিন্তু আপনার তো নয় গাড়িটা?

পড়তে পারো তো তুমি, মাদাম রলফ গাড়ির মালিক, হয়তো তার নাম অজানা নয় তোমার। তিনিই আমাকে চড়তে দিয়েছেন।

 চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো পুলিশ কনস্টেবলের, স্যার আপনার পাশপোর্ট?

বারবার বহু দেশে ঘুরে বেড়ানোর অভ্যেসের ফলে পাশপোর্ট সব সময় গ্রেনভিল সঙ্গেই রাখতো, বাড়িয়ে দিলো।

তার পরেই আর্চার একটা কাজ করে বসলো বোকার মতো। একটা পুরোনো কার্ড নিজের ব্যাগ থেকে বার করে পুলিশের হাতে দিলো, ওতে ওর নাম ঠিকানা আর শেষ যে আন্তর্জাতিক অ্যাটনী ফার্মে কাজ করেছিলো তার নাম লেখা।

নম্র সুরে বললো, মিঃ অফিসার একটা কথা, মিঃ গ্রেনভিল ইংরেজ, তেমন ভালো জানেন ইউরোপের নিয়ম কানুন। বিশ্বাস করুন আমার কথা, মাদাম রলফ চড়তে দিয়েছেন একে তার গাড়ি। মাদাম রলফের ইনি অতিথি, উঠেছেন ওর বাড়িতেই।

ভাল করে কার্ডটা দেখে ফিরিয়ে দিল। তারপর গাড়ির কাগজপত্র, পাশপোর্ট গ্রেনভিলকে দিয়ে বললো, আর কখনো ভবিষ্যতে নো-পার্কিং এলাকায় গাড়ি রাখবেন না। পুলিশটি স্যালুট করে চলে গেলো।

 সঙ্গে সঙ্গে গ্রেনভিলও গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে পড়লো। অসাধারণ কনস্টেবলটির স্মৃতিশক্তি, তার নোটবুকে সব নামধাম টুকে নিলো, খট্‌কা লেগেছে ওর, বাজে পোশাক পরা এইরকম একটা লোক কি করে আন্তর্জাতিক অ্যাটর্নী হতে পারে।

গাড়ি লেকের পাশ দিয়ে চালাতে চালাতে গ্রেনভিল কনস্টেবলটার উদ্দেশ্যে একটা গালাগাল দিলো। নার্ভাস হয়ে আর্চার বললো, ক্রিস ভগবানের দোহাই, ওভাবে কথা বলতে নেই সুইস পুলিশের সঙ্গে। কাজ করেছো খুব বোকার মতো।

মরুকগে ব্যাটা। গাড়ি দাঁড়ালো ইডেন হোটেলে গিয়ে।

 চলো গলা ভিজিয়ে নেওয়া যাক একটু।

দুজনে মুখোমুখি বসলো জিন মার্তিনির অর্ডার দিয়ে। আর্চার দ্যাখো, সবকিছু কিন্তু হওয়া চাই ঠিকঠাক। যে লোকদুটোকে পাঠাবে তারা বিশ্বাসী তো?

আর্চার মুখ খুললো–না, মদ না আসা পর্যন্ত। তারপর দুজনের অনেকক্ষণ কথা হলো। গ্লেনভিল ভিলাতে ফিরলো বেলা তিনটের পরে। অনেকটা কমে গেছে মনের ভার। কথা বলে আর্চারের সঙ্গে ও বুঝে গেছে নির্ভেজাল দশ লাখ ডলার কয়েক দিনের মধ্যে ওর পকেটে আসছে। কিছুটা গলফ খেলে এসেছে গলফ ক্লাবে ট্রেনারের সঙ্গে ট্রেনারকে সহজেই হারিয়ে দিয়েছে।ওর প্রশংসায় ট্রেনার তো পঞ্চমুখ। এত ভাল প্লেয়ার আজ পর্যন্ত ও দেখেনি। গ্রেনভিলও খুশি।

গ্যারেজে রোলসটাকে রেখে বাড়ির মধ্যে ঢুকলো। হেলগা কার সঙ্গে কথা বলছে টেলিফোনে শুনতে পেলো। তাই নিজের ঘরে গিয়ে সোজা স্নান সেরে পোশাক পাল্টে বসবার ঘরে এসে বসলো।

 হেলগার চোখেমুখে বিরক্তির ভাব ছিলো, বেশ খুশি হলো গ্লেনভিলকে দেখে।

এতে বাজে কাটলো সকালটা যে বলার নয়। আমায় বুদ্ধগুলো পাগল না করে ছাড়বে না। গাদাগুচ্ছের কাগজপত্র সামনের টেবিলে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেগুলো ঠেলে সরিয়ে দিয়ে হেলগা উঠে এলো।

গভীর চুমোয় আচ্ছন্ন করে গ্রেনভিলকে জড়িয়ে ধরে বললো, ক্রিস ডিয়ার উত্তরটা দাও…বলো হ্যাঁ।

 হ্যাঁ, বলার সঙ্গে সঙ্গে হেলগাকে কোলে তুলে নিয়ে গ্রেনভিল বেডরুমে ঢুকলো, দরজাটা পা দিয়ে বন্ধ করে বললো, আর এখুনি তার ড্রেস রিহার্সালটা হয়ে যাক্।

 আরে, আরে এসব দেখলে হিঙ্কল মূৰ্ছা যাবে,মুখে বললেও হেলগা ততক্ষণে নিজের জামা কাপড় খুলে ফেলেছে অর্ধেক।

নরকে যাক হিঙ্কল। আমার বৌকে আমি পেয়েছি।

 দশ মিনিট পরে, খাটে নগ্ন হয়ে পাশাপাশি শুয়ে বকবক করতে লাগলো হেলগা। কিভাবে কোথায় বিয়ে হবে তাদের। তার মন চরম আনন্দে ভরে আছে।

 প্যারাডাইস সিটিতে আমরা যাবো। ওখানে একটা দ্বীপে আমার একটা সুন্দর বাড়ি আছে। একটু দূরে আমার একটা আলাদা কটেজও আছে। তুমি ওই কটেজে থাকবে এনগেজমেন্টের কথা ঘোষণা করার পর। খুব জাঁকজমক করে বিয়েটা করতে হবে। বড় বড় অনেক লোক তাদের বৌ নিয়ে আসবে। আসবে বড় বড় অফিসারও যাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আছে ব্যবসার।

গ্রেনভিল কুঁকড়ে উঠলো কথাটা চিন্তা করে, কিন্তু অন্য ভাব বাইরে দেখিয়ে ওর গায়ে হাত বোলাতে লাগলো। মুখে বললো, আমি সবচেয়ে সৌভাগ্যবান মানুষ পৃথিবীর, নিশ্চয়ই আমি পরশু দিন থেকে স্বাধীন। মনে মনে বললো, আর দশ লাখ ডলারের মালিক হয়ে যাবে শিগগিরই।

মৃদু টোকা পড়লো দরজায়, বাইরে থেকে হিঙ্কল জানালো, মাদাম, মিঃ উইনবর্গ টেলিফান করছেন। মৃদু তিক্ততার আভাস গলার সুরে।

লোকটা গোল্লায় যাক, ফোঁস করে উঠলো হেলগা, কিন্তু টেলিফোনটা হাত বাড়িয়ে তুলে নিলো। কি ব্যাপার স্ট্যানলী? কান পেতে শুনে বললো, আর একটা ডলারও দেবো না। দর করছে ওরা। কিন্তু স্ট্যানলী একটা কথা, আমাকে এসব ছোটখাটো ব্যাপারে বিরক্ত করার কি দরকার, একটু বিশ্রাম করছি আমি।

খাট থেকে নেমে আস্তে করে গ্রেনভিল বাথরুমে ঢুকলো। ও জামাকাপড় পরতে পরতে চিন্তা করলো, হায় ভগবান, ও এ কাকে বিয়ে করবে, মানুষ না ব্যবসার যন্ত্র। ও বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো কথা বলে চলেছে হেলগা স্ট্যানলীর সঙ্গে। খোলা ছাদে গিয়ে ও বসলো।

স্যার, চা আনব?

হিঙ্কল উদার হলো হঠাৎ। গ্রেনভিল বললো, ডবল পেগ হুইস্কি আর সোডা।

হেলগা এলো আধঘণ্টা পরে, ক্রিস তোমায় এই লেনদেনটার কথা বলছি। এটা দেখাশোনা করতে হবে তোমাকে। এটা হতে চলেছে বিরাট ব্যাপার। তবে বড় বেশি লোভী হয়ে উঠেছে ফরাসী সরকার। প্রথম থেকেই বলছি তোমাকে।

তারপর গ্রেনভিলকে নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হলে পুরো একঘণ্টা। হেলগা কানের কাছে টাকার অংক, খরচ, ধার, সুদের হিসাব, এসব নিয়ে চললো বব করে। যেন কোন রকমে সব বুঝছে এমন ভাব করে মাথা নেড়ে মাঝে মাঝে সায় দিলো গ্রেনভিল। কিন্তু আর হলো না শেষ রক্ষা, যখন বললো হেলগা, শুনলে তো সব ব্যাপারটা, এবার বলো কি মত তোমার?

ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো গ্লেনভিল। কোনো মতামতই নেই ওর, কারণ ও মন দিয়ে একটা কথাও শোনেনি হেলগার। টাকা পয়সা, কাজ কারবারের সব কথা অর্থহীন ওর কাছে।

 তাই সাবধানে বললো, হেলগা নিজের মতামত দেবার আগে, একবার আমি ভাল করে কাগজপত্র, হিসেবগুলো দেখতে চাই। সম্ভব হবে কি সেটা? তোমাকে তো আমি সাবধান করে দিয়েছি আগেই হিসাবের ব্যাপারে আমি অসম্ভব কাঁচা, তবে প্ল্যান আর হিসেবগুলো দেখার জন্যে কয়েক ঘণ্টা যদি সময় পাই, মনে হয় বুদ্ধি খাটাতে পারবো।

 বেশ হতাশ হলো হেলগা, তবুও বললো মাথা নেড়ে, ক্রিস.ঠিক আছে, উইনবর্গকে আমি বলছি কনট্র্যাক্ট, প্ল্যান ইত্যাদি যত তাড়াতাড়ি পারে প্লেনে করে পাঠিয়ে দিক। যা বলছো তুমি ঠিকই বলছো।

টেবিল থেকে ফোনের রিসিভার তুলে প্যারিসে ফোন করার চেষ্টা করলো হেলগা, ঠিক তখনই

ভোদকা মার্তিনি নিয়ে হিঙ্কল ঢুকলো।

মনে মনে হাঁফ ছাড়লো গ্রেনভিল, পাওয়া গেল কিছুটা সময়। গ্লাসে মদ ঢেলে হিঙ্কল মেশাচ্ছে, উইনবর্গের সেক্রেটারীকে হেলগা বলে দিলো ভার্সাইয়ের কনট্রাক্টের কাগজপত্র পাঠিয়ে দিতে।

ওগুলো চাই কালকেই, দুম করে কথাটা বলে হেলগা ফোন নামিয়ে রাখলো।

বাড়িতেই কি ডিনার খাবেন, মাদাম জানতে চাইলে হিঙ্কল।

 হেলগা চলো না, কোথাও খেয়ে আসি বাইরে, মজাও হবে বেশ। গ্রেনভিল তাড়াতাড়ি বলে উঠলো, আবার ঐ সব হিসেবপত্রের কথা? বাড়িতে বসে থাকলে পাগল হয়ে যাবে যে।

যাবো নিশ্চয়ই। গুয়েনিয়ে যাবো আমরা, সাদামাটা জায়গাটা, তবে ভালো খাওয়ায়।না,আমরা একটু বেরোব হিঙ্কল।

ছাদ থেকে হিঙ্কল চলে যাবার পর প্যারাডাইস সিটির কথা গ্রেনভিল জানতে চাইলো, ও আসলে চাইছিলো, যাতে হেলগা আবার ব্যবসা বাণিজ্যের কথা না শুরু করে দেয়। বেশ খুশী মনে হেলগাও বর্ণনা দিতে লাগলো খুঁটিয়ে। দ্রুত গতিতে সময় কেটে গেল। রাত আটটার সময় পোশাক পাল্টাবার জন্যে হেলগা ঘরে গেল, ওখানে বসে বসে গ্রেনভিল চিন্তা করলো আর সাতাশ ঘণ্টা মাত্র, মুক্তি তারপরেই।

পেট ভরে ইতালীয়ান স্টাইলে ডিনার খেয়ে হাতে হাত ধরে দুজনে লেকের ধারে বেড়াতে লাগলো। মানসিক উত্তেজনা হেলগার কমে গেছে, বেশ ফুর্তি মনে। তার স্বামী হতে যাচ্ছে এই মানুষটা। গ্রেনভিলের দীঘল, ছিপছিপে দেহ আর কমনীয়তা ভরা মুখ বারবার হেলগা দেখছিলো। আঃ, কি সুন্দর। মনে মনে সে দারুণ উত্তেজিত হয়ে উঠছিলো বিয়ের প্রস্তুতির কথা চিন্তা করে। কথাটা লোমান আর উইনবর্গ শুনলে চমকে যাবে দারুণ। ওদের জানানো কখন ঠিক হবে তাই ভাবতে ভাবতে ঠিক করলো শেষ পর্যন্ত, ওদের গ্রেনভিলের সঙ্গে দেখা না হওয়া পর্যন্ত জানাবে না কিছু। বলতে হবে সিনিয়ার পার্টনার হিসেবে গ্রেনভিল যোগ দিতে যাচ্ছে কর্পোরেশনে। যে কথাটা শুনে ওরা সুখী হবে না তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু উপায় কি? হেলগার মুঠোয় পুরো কর্পোরেশনটা, তার নিজের একলার পঁচাত্তর ভাগ শেয়ার। নিশ্চয়ই অন্য ডিরেক্টাররাও জ্ব কুঁচকোবে, কিন্তু পরোয়া কিসের। দুঃখের কথাটা এই যে, সব ভালো গ্রেনভিলের, শুধু কেন যে ব্যবসার ব্যাপারে লোকটা মাথা ঘামাচ্ছে না বা একটুও আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ঠিক আছে, দরকার নেই তাড়াহুড়ো করে, কাজ তো একসঙ্গে করা যাক। তারপর ওকে ধীরে ধীরে জাগিয়ে তুলতে হবে।

 নিজের কথা শুধু ভাবতে গিয়ে যেন একটু বেশি গ্রেনভিলকে অবহেলা করে ফেলছে, এটা মনে হতেই হেলগা কথা জুড়ে দিলো গলফ খেলা নিয়ে।

 নিজের চিন্তায় গ্রেনভিলও মগ্ন ছিলো, কি ভাবে কাল রাতে তাকে কিডন্যাপ করবে, ঠিক মতো সব চলবে তো, যা চাইছে শেষ পর্যন্ত তা পাবে তো? পাকা গলফ খেলোয়াড়ের মত হেলগার প্রশ্নের উত্তরে খুঁটিনাটি বর্ণনা দিতে লাগলো গ্লেনভিল। ভালো লাগে না হেলগার এসব শুনতে, ওর ধারণা সময়ের অপব্যবহার গলফ খেলাটাই, মুখে অথচ খুব তারিফ করতে লাগলো গ্রেনভিলকে।

 বাড়িতে ফিরে দেখলো ওদের জন্যে হিঙ্কল অপেক্ষা করছে। একটু রেগে হেলগা বললো, দেখো হিঙ্কল, ডিনার খাবার পর ভবিষ্যতে তুমি চলে যাবে তোমার ঘরে। আমি জানি তুমি ভালোবাসো টিভি দেখতে। কোনো কিছু আমার দরকার হলে তোমাকে ডেকে পাঠাবো। কিন্তু চাই না আমি তুমি অযথা জেগে বসে থাকো আমার জন্যে। কী, কানে গেছে কথাটা।

মাথা নাড়লো হিঙ্কল মাদাম ঠিক আছে, তাই হবে।

 সদরের তালা গ্রেনভিল বন্ধ করে দেবেন। এবার থেকে ডিনারের পর তুমি বিশ্রাম করবে।

গ্রেনভিল এ কথাটা শোনার পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। আর্চার হয়তোযাবলেছেহবে তাই, সব ঠিক মতো এখনও পর্যন্ত চলছে।

পরদিন সকাল সাতটায় গ্রেনভিলের ঘুম ভাঙলো, কিন্তু এখনও মুক্তি পেতে বাইশ ঘণ্টা বাকি। ব্যবসার সেই সব কাগজপত্রগুলো হেলগার এসে যাবে যে প্যারিস থেকে, কোনো সন্দেহ নেই। সে বিষয়ে। আর হেলগা তখন চাইবে ওগুলো পড়েটড়ে আমি আমার মতামত দিই। ও নারাজ এই পরিস্থিতির মুখে পড়তে, আর একমাত্র বাঁচার উপায় অসুস্থতার ভান করা, তার পক্ষে এসব করা নতুন কিছু নয়। আগে আধ বুড়ী মহিলাদের পাল্লায় যখন পড়তে ও তখন, আত্মরক্ষা করতে হয়েছে আধকপালী ব্যাথার নাম করে। আর তাতে কাজও হয়।

একটু নড়ে চড়ে হেলগা উঠতেই গ্রেনভিল একটু গোঙানীর মতো শব্দ করলো। এটা অনেক বছর ধরে প্র্যাকটিস করে রেখেছে সে, সত্যি মনে হয়। সঙ্গে সঙ্গে হেলগা উঠে বসলো, ক্রিস, তোমার কি হয়েছে?

 গ্রেনভিল চোখের ওপর হাত রেখে বললো, কিছুনা। তোমাকে আমি জাগাতে চাইনি, আমার এরকম হয় মাঝে মাঝে।

উৎকণ্ঠায় ভেঙে পড়ে হেলগা গ্রেনভিলের বুকের ওপর ঝুঁকে পড়লো, তোমার কি কোথাও ব্যথা করছে?

ব্যথা, এটা আধকপালী। এমন হয় মাঝে মাঝে, যেন চেষ্টা করে গ্লেনভিল একটি গোঙানী চেপে নিলো, হেলগা ডার্লিং আমায় একটু একলা থাকতে দাও। একটু চুপ করে শুয়ে থাকলে কষ্ট হয় না ততটা।

আধকপালী, হায় ভগবান, হেলগা খাট থেকে নেমে পড়লো, একটা কিছু খুঁজে পেতে দেখি।

না, দরকার নেই, প্লিজ। এটা আমি প্রত্যেকবারই কাটিয়ে উঠি। খুব খারাপ লাগছে। একটু একলা থাকলেই আমি ঠিক হয়ে যাবো। কষ্ট হয় কথা বলতেও।

ক্রিস ঠিক আছে, চা চলবে একটু। কি করতে পারি বলল তোমার জন্য।

দরকার নেই কিছু। সেরে যাবে ঘণ্টাখানেকর মধ্যে।

হেলগা একটু ইতস্ততঃ করে বাথরুমে চলে গেলো। চোখ ঢেকে গ্রেনভিল ঘুমের ভান করে শুয়ে রইলো। চট করে স্নান সেরে শব্দ না করে পরে নিলো পোক।

হেলগাকে আঙুলের ফাঁক দিয়ে লক্ষ্য করতে করতে মাঝে মাঝে একটু একটু করে গ্রেনভিল গোঙাচ্ছিলো।

 ক্রিস, ডার্লিং…ডাক্তার ডাকি।

কোনো ডাক্তার আধকপালী সারাতে পারেনা।তারপর খুবকষ্ট করে যেন মুখের ওপর থেকে হাতটা সরিয়ে বললো, ঠিক হয়ে যাবো আমি। একটু একলা থাকি এখানে, তাহলেই হবে।

মনে মনে উৎকণ্ঠা নিয়ে হেলগা দাঁড়ালো ভোলা ছাদে গিয়ে। গাছে জল দিচ্ছিল হিঙ্কল। ওকে দেখে হোস পাইপটা বন্ধ করে এগিয়ে এলো, মাদাম আজ একটু তাড়াতাড়ি উঠেছেন। কোনো অসুবিধে হয়নি তো?

আধকপালী হয়েছে মিঃ গ্রেনভিলের। ওকে যেন আমরা একটুও ডিসটার্ব না করি।

হিঙ্কলের গোল মুখে আরও নিস্পৃহতা ফুটে উঠলো। আচ্ছা মাদাম, এটা বড় বাজে অসুখ। তাহলে এখানেই কি আপনার কফি দেবো?

তাই দাও।

গ্রেনভিলের জন্য দুশ্চিন্তায় হেলগার-এর কফিও ভাল লাগলোনা। যখন হিঙ্কল ট্রে নিয়ে যাবার জন্যে এলো, তখন হেলগা বললো ভাবতেও পারবে না তুমি যে, মিঃ গ্রেনভিলের মত একজন মানুষ আধকপালী রোগের শিকার হতে পারেন, তাই না হিঙ্কল?

ভ্রূ কুঁচকালো হিঙ্কল, মনেহয় আমার এটা এসেছেনার্ভাসনেস থেকে।না, মাদাম ওসব আপনি ভয় করবেন না।

হেলগার-এর হঠাৎ মনে হলো হিঙ্কলের সঙ্গে পরামর্শ করা দরকার একটু, হিঙ্কল যেও না, কথা আছে তোমার সঙ্গে, বোস।

দাঁড়িয়ে থাকতেই ভালবাসি আমি, মাথা হেলিয়ে একটা বাউ করে বললো হিঙ্কল। 

হো হো করে হেসে উঠলো হেলগা, তোমার কি কিছু কখনও ভুল হবার নয় হিঙ্কল, আর তোমাকে এইজন্যই আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু বলে মনে হয়। বোসো প্লিজ।

ধন্যবাদ মাদাম। একটা চেয়ারের কোনায় হিঙ্কল কোনরকমে বসলো।

 জানিয়ে রাখা উচিত তোমাকে, আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি মিঃ গ্রেনভিলকে। উনি সিনিয়ার পার্টনার হতেও রাজীহয়েছে আমার কোম্পানীতে।বিয়েটাআগামী মাসে হবে মনে হয়। হেলগা পরিতৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

সাপ ব্ৰহ্মতালুতে ছোবল মারলে যেমন হয় মুখের অবস্থা, তাই হলো হিলের, কথাটা শোনা মাত্র। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আবার নির্লিপ্ত উদাসীন হয়ে গেলো সে। তাহলে শুভেচ্ছা জানাতে হবে মিঃ গ্লেনভিলকে আর শুভ কামনা করছি আপনারও।

 হিঙ্কল ধন্যবাদ। আমি নিশ্চয়ই ক্রিসকে পেয়ে সুখী হবো। আর ভাল লাগছে না এই নিঃসঙ্গ জীবন। তুমি তো জানো আমায় কিভাবে একা একা কাটাতে হচ্ছে। আমার জীবন পাল্টে যাবে ওকে কাছে পেলে। অতগুলো বছর রলফের সঙ্গে যে কি বিশ্রী ভাবে কেটেছে মন শিউরে ওঠে ভাবলেও। আমাকে বুঝবার চেষ্টা করো হিঙ্কল, মত দাও আমার বিয়েতে।

 নিশ্চয়ই মাদাম, কিন্তু মন থেকে যে সে কথাটা বললো না বোঝা গেল সেটা। হিঙ্কল উঠে দাঁড়াতেই হঠাৎ হেলগা রেগে উঠলো, তোমায় বসতে বলছি না। আর শোনো এই সপ্তাহের শেষে প্যারাডাইস সিটি যাবো আমরা। সব ব্যাপারটা তুমি দেখাশোনা করবে, তাই আমি চাই, বেশ জাঁকজমক করে হবে বিয়েটা।

 দাঁড়িয়ে রইলো হিঙ্কল, আপনি আমার ওপর ভরসা রাখতে পারেন মাদাম, সে খুব চাপা সুরে বললো।

 হেগলা খুব ভালভাবে হিঙ্কলকে চেনে। যখন ও মনের দিক দিয়ে হয়ে ওঠে চঞ্চল, তখন বেশ কিছু সময় না দিলে কোনো কাজ হয় না।

 আমি বিনা দ্বিধায় ততক্ষণ পর্যন্ত ভরসা রাখতে পারি তোমার ওপর, হেলগা নরম সুরে বললো।

 মাদাম ঠিক আছে। তবে সব সময়ই আপনি আমার ওপর ভরসা রাখতে পারেন। আচ্ছা এখন আমি আসি, বাকি আছে কিছু কাজ।

হেলগা লক্ষ্য করলো হিঙ্কল ঘাড় শক্ত করে চলে গেলো ভেতরে। যদি খুশি হতো হিঙ্কল, তাহলে তো কথাই ছিলো না, ঠিক আছে ওকে সময় দেওয়া হবে। এবার গ্রেনভিলের সঙ্গে একটু কথা বলতে হবে, বোঝাতে হবে ওকে, হিঙ্কলের দাম অনেক হেলগার কাছে। চেষ্টা করতেই হবে গ্রেনভিলকে হিঙ্কলের মন জয় করার জন্যে। হেরম্যান রলফকে যখন হেলগা বিয়ে করে ওকে হিঙ্কল অপছন্দ করতো। অনেক চেষ্টার ফলে ধীরে ধীরে ভালবাসতে, শ্রদ্ধা করতে হিঙ্কল শুরু করেছিলো।

 হেলগা ধীর পায়ে শোবার ঘরে গেলো, দরজা খুললো আস্তে। ওপাশে গ্রেনভিল চা আর সিগারেটের জন্য ছটফট করছিলো। হেলগার পায়ের শব্দ শুনেই মুখের ওপর হাতটা চাপিয়ে ভান করলো ঘুমিয়ে থাকার।

ওকে দেখে নিয়ে হেলগা আবার ফিরে গেলো ধীর পায়ে। হায় ভগবান। ওর জীবনে আজকের দিনটার মত এমন ভয়ঙ্কর দিন কখনও আসেনি।

 ঘুমিয়ে থাকার ভান করে গ্রেনভিল সিরিয়াসলি চিন্তা করা শুরু করেছিল। ওর বেশ অস্বস্তি হেলগার ব্যাপারে। ইস্পাতের মত একটা কাঠিন্য আছে হেলগার-এর মধ্যে, সবসময়েই যার জন্যে উদ্বেগের মধ্যে থাকে। হেলগা যদি একবার বুঝতে পারে পুরো ব্যাপারটা, তাহলে কেলেঙ্কারী হবে ভীষণ। টাকাটা আর্চারের কাছ থেকে পেলেই খুব দূর দেশে পালিয়ে যাবে কোথাও, একটা ভাল গোছের বান্ধবী জোগাড় করে ফুর্তিতে কাটাবে বেশ কিছুদিন, তারপর ইউরোপে ফেরা যাবে গণ্ডগোল থিতিয়ে এলে।

একটা কথা হঠাৎ মনে হতেই গ্রেনভিলের মন মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। কতটা বিশ্বাস করা যায় আর্চারকে। সে ওকে কতটুকুই বা চেনে? হঠাৎ দেখা হল প্যারিসের সেই সস্তা হোটেলে। সত্যি সত্যিই কি আর্চার আন্তর্জাতিক অ্যাটর্নী? যে সব জোচ্চোরদের কথা শোনা যায়, তাদেরই কি একজন আর্চার? মানছি, ও চেনে হেলগাকে। কেননা হেলগা সম্বন্ধে ও যা যা বলেছে সবই মিলে যাচ্ছে। আর্চারের কেমন গরীব গরীব ভাব। মুক্তিপণের কুড়ি লাখ ডলার জমা দেওয়া হবে আর্চারের নম্বর দেওয়া একটা সুইস ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে। ব্যবস্থাটা এমনিতে পাকা সন্দেহ নেই। কিন্তু গ্রেনভিলের দাবী ঐ টাকার ওপর কি করে টিকতে পারে? যদি আর্চার বেপাত্তা হয়ে যায় টাকা জমা পড়ার পর? ঘামতে শুরু করলো গ্রেনভিল। বেপরোয়া জীবন যাপন, পুরুষ বেশ্যার ভূমিকায় অভিনয় করলেও সে রাজী নয় নিজেকে ঠকতে দিতে। আধো অন্ধকার ঘরে শুয়ে শুয়ে গ্রেনভিল ডুবে রইলো আকাশ-পাতাল এই সব চিন্তায়।

.

কাঁটায় কাঁটায় দুপুর দুটোর সময় একটা ভাঙাচোরা ভক্সওয়াগনে চেপে ম্যাক্স সেগেত্তি আর জ্যাকস বেলমন্ট হোটেল দ্য সুইমিতে এসে পৌঁছলো। আর্চার হোটেলের বিল চুকিয়ে অপেক্ষা করছিলো তার ভাড়া করা মার্সিডিজ গাড়িতে। ওদের জানালো হাত নেড়ে, অনুসরণ করতে তার গাড়িকে। লুগানোর ব্যস্ত সড়ক হয়ে ওদের গাড়ি হ্রদের সামনে দিয়ে এগিয়ে চললো প্যারাডাইসের দিকে। আর্চার মাঝে মাঝে গাড়ির আয়নায় দেখে নিচ্ছিলো ঠিক মতো সেগেত্তিরা আসছে কিনা।

সেই ভাড়া নেওয়া গাড়ির সামনে মিনিট দশেক পরে এসে দাঁড়ালো আর্চারের গাড়ি। সেগেদ্ভিদের ভক্সওয়াগনও পৌঁছে গেল প্রায় সঙ্গে সঙ্গে। পুরনো স্যুটকেশ হাতে নিয়ে তারা নামলো। গাঢ় রঙের স্যুট দুজনেরই পরনে। দেখা হয়েছিলো প্রথম যেদিন তার চেয়ে ভদ্র লাগছে অনেক বেশি ওদের।

ঝঞ্জাট হয় নি তো? ইতালীয় ভাষায় আর্চার প্রশ্ন করলো।

না স্যার, একটু হেসে সেগেত্তি উত্তর দিলো।

মুখোশ আর রিভলবার এনেছো?

 হ্যাঁ স্যার। আমরা জুরিখ হয়ে এসেছি, ইতালীর কাস্টমসকে এড়াবার জন্য, ঝঞ্ঝাট হয়নি।

ঠিক আছে, ভেতরে এসোআর্চার ওদের অযত্নে লালিত বাগানের মধ্যে দিয়ে বাড়ির সামনে এসে দরজা খুলে বসবার ঘরে ঢুকে বললো, তোমরা বসো।

বসলো দুজনে, আর্চার ঘরের মধ্যে পায়চারি করতে করতে বললো, আজ রাত এগারোটায় আসল কাজ শুরু হবে। তালা থাকবেনা বাড়িটার সদর দরজায়। ঢুকে পড়বে তোমরা জোর করে। বন্দুক দেখিয়ে মহিলা আর পুরুষটিকে ভয় দেখাবে। আর চলে আসবে পুরুষটাকে ধরে নিয়ে। ওকে তোমরা এখানে আনা মাত্র আমার চুক্তি খতম হয়ে যাবে তোমাদের সঙ্গে। বাকি টাকাটা আমি দিয়ে দেবো। আর একটুও তোমরা দেরি না করে চলে যাবে জেনিভা ছেড়ে, একটুও মনে রাখবার চেষ্টা করো না এখানকার ঘটনাটা।

ঘাড় নাড়লো সেগেত্তি, ঘাড় নিচু করে বেলমন্ট চুপচাপ বসেছিলো।

 কোথায় ঐ বাড়িটা?

 ওখানে তোমাদের কয়েক মিনিটের মধ্যে নিয়ে যাবো। তবে অসুবিধে একটা হতে পারে। একটা পুরুষ চাকর আছে ঐ বাড়িতে। ও সুবিধের নোক নয়। যদি ও পৌঁছে যায় ওখানে, ওকে তোমাদের একজন সামলাবে। একটু থেমে আর্চার আবার বললো, তবে খুনজখম, মারামারি যেন কোনো রকম না হয়।

 বেলমেন্ট এতক্ষণ পরে মুখ খুললো। শয়তানি হাসি হেসে বললো, ঠিক আছে। আমি নেবো ওর ভার।

ওর গলার হিংস্র স্বরটা শুনে চিন্তিত হলো একটু আর্চার, আবার বলে রাখছি আমি, খুন জখম মারামারি কোনো রকম যেন না হয়। একবার করে দুজনের দিকে তাকিয়ে নিয়ে বললো, বুঝতে পেরেছে তো পুরো কথাটা, কোনো চিন্তা নেই ওকে চুরি করে না আনতে পারলেও, তবে খাটাবে না গায়ের জোর।

স্যার দরকার পড়বে না তার। সেগেত্তি বিনীত সুরে জানালো।

ধরে আনতে হবে যাকে, সে বাধা দেবে নাম মাত্র, তার বেশি নয়। ও বিশ্বাস করাতে চায় মহিলাকে যে জোর করে ওকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, বুঝেছো?

 হ্যাঁ, স্যার।

ঠিক আছে। আবার একবার সব কথাটা বলে দিচ্ছি ঘুরিয়ে, ঠিক রাত এগারোটার সময় ওই বাড়িতে তোমরা যাবে, আমার গাড়িটা নেবে। গাড়ি দাঁড় করাবে গেটের বাইরে। বাড়িতে রাস্তাটা হেঁটে পার হয়ে ঢুকবে, তালা থাকবে না সদর দরজায়। তোমরা ভিতরে হুট করে ঢুকে পড়বে। হয় বসবার ঘরে পুরুষ আর মহিলাটি কিংবা ভোলা ছাদে দোতলায় থাকবে। বসবার ঘরের দরজাটা বাড়ির বারান্দায় উঠলেই সোজা দেখতে পাবে। আর্চার ওদের বাড়িটার একটা হাতে আঁকা নক্সা দিলো।

দেখে নাও ভাল করে। সেগেত্তি নক্সাটা দেখে নিলো, স্যার সুন্দর আছে,পকেট থেকে আর্চার আর তিরিশটা কাগজ বের করলো, কি কি কথা ঠিক বলতে হবে তা আমি লিখে রেখেছি এতে, আমি চাই তোমরা এটা মুখস্ত করে নাও। সেগেত্তি লেখাটা পড়ে নিয়ে বেলমেন্টকে দিয়ে বললো, এটা তোমার কাছেরইলো বেলমন্ট।তারপর বললো আর্চারকে, ম্যাকসই ভালো করবে এ কাজটা বলে মনে হয়।

 আমি মাথা ঘামাচ্ছি না কে করবে তা নিয়ে। শুধু ঠিক মতো মহিলার কাছে বলা হলেই হলো। সোজা এখানে পুরুষটিকে তুলে নিয়ে চলে আসবে। ব্যস্ কাজ ঐ টুকুই। তারপর টাকা নেবে আর চলে যাবে।

সেগেত্তি বললো, ঠিক আছে স্যার।

 বেশ চলো বাড়িটা এবার দেখিয়ে আনি, চলো।

কাজটা এরা ঠিকমতো করতে পারবে এই বিশ্বাস আর্চারের মনের মধ্যে গেঁথে গেলো। হাসিল হবেই কাজ। মার্সিডিজ ছুটে চললো কাস্টাগনোলায় হেলগার বাড়ির দিকে। গাড়ি চালাচ্ছিলো। আর্চার আস্তে আস্তে যাতে বাড়ি ঠিক মতো চিনে নিতে পারে সেগেত্তিরা।

 হেলগার বাড়ি সে উঁচু পাহাড়টার ওপর, সেটাকে ক্রস করার সময় আরও আস্তে করে দিলো গাড়ি আর্চার। এইটাই সেই বাড়ি। ভিলাহেলিওজ, এই রাস্তা দিয়েই আমি আবার ফিরবো।

 লোহার বড়ো ফটকের মধ্যে দিয়ে সেগেত্তি আর বেলমন্ট দুজনেই যতটা দেখা যায় ভাল। করে দেখে নিলো বাড়িটাকে। শেষ প্রান্তে রাস্তায় গিয়ে আবার আর্চারের গাড়ি ফিরে এলো। দেখে নিলো সেগেত্তিরাও বাড়িটাকে আর একবার।

  চিনে নিয়েছো?

 স্যার কোনো চিন্তা নেই।

ঠিক আছে, এখনো আট ঘণ্টা সময় আছে তোমাদের হাতে। তোমরা কি আমার ঐ বাড়িটাতেই থাকবে, না, অন্য কিছু করতে চাও?

লুগানো শহরটা আমরা একটু ঘুরে ফিরে দেখে নিতে চাই। কখনো এর আগে আসি নি তো। আপনার বাড়িতে নিয়ে চলুন আমাদের, আমরা ওখান থেকে আমাদের গাড়িটা নিয়ে বেরোবো।

অনেকটা আরাম বোধ করলো আর্চার। এক নাগাড়ে আট ঘণ্টা ওই বাজে লোক দুটোর সঙ্গে কাটানোর চিন্তাটা কুরে কুরে খাচ্ছিলো ওকে।বেশ তো তাই হবে, নিজের বাড়িতে ফিরলো আর্চার।

 সেগেত্তি মার্সিডিজ থেকে নেমে বললো, ঠিক রাত দশটা পনেরো মিনিটে আমরা এখানে স্যার ফিরে আসবো।

 ওরা বেরিয়ে যেতে দরজাটা চাবি দিয়ে খুলে আর্চার ঘরে ঢুকলো। খাটে শুয়ে পড়ে চিন্তা করতে লাগলো, এখন সফল হতে চলেছে স্বপ্নটা বহুদিন অপেক্ষা করার পর।

দশ লাখ ডলার। ও নিউইয়র্কে চলে যাবে টাকাটা নিয়ে। ওখানে ব্যবসা শুরু করবে ইনকাম ট্যাক্স কনসালটেন্ট হিসেবে। টাকাটা একবার হাতে পেলে ঐ কুত্তিটা পাবে না তার নাগাল পর্যন্ত। আর এটাও ঠিক কখনো এই নিয়ে হেলগা চেঁচামেচি করবে না। কারণ মামলা কোর্টে গেলে হৈ চৈ পড়ে যাবে দারুণ, একটা খবর হয়ে উঠবে হেলগা পাঁচ জনের কাছে, কি না, একজন বাজে লোকের পাল্লায় ও পড়েছিলো যার কাজ মেয়ে বেশ্যাদের মতো, তবে পুরুষ মানুষ গ্রেনভিল তাই তার কাজ মনোরঞ্জন করা মেয়েদের।

ব্যাপারটা নিয়ে হৈ হৈ করে হেরমান রলফও আর্চার হেলগার কি বদনাম ছড়াতো না…তারও ভয়ের কোনোকারণ নেই হেলগার ব্যাপারটা।…কিন্তু ওকে এই লোকদুটো ভাবিয়ে তুলেছে, কেমন যেন মুখে চোখে হিংস্র ভাব। আরও বেড়ে যেততা আর্চারের ভাবনা, যদি দেখতে পেতো লুগানোর পোষ্ট অফিসের সামনে দাঁড়িয়েছে সেগেত্তি আর বেলমেন্টের ভক্সওয়াগন।

সেগেত্তি গাড়িতে বেলমেন্টকে রেখে তাড়াতাড়ি ঢুকে পড়লো লুগানোর পোস্ট অফিসের টেলিফোন বুথে। কথা বলতে হবে বেৰ্ণির সঙ্গে জেনিভাতে। কথা হলো খুব কম, শুধু শুনে গেলে বের্ণি, শেষে বললো, আবার দুঘণ্টা পরে ম্যাক্স ফোন কোরো।

 বের্ণির জানাশোনা অনেক লোক সুইজারল্যান্ডে আছে। তার মধ্যে বিশ্বাসী হলো সবচেয়ে ভাগ্যবান বেলিনি। ওর সঙ্গে ভাগ্যবান নামটা জুড়ে গিয়েছিলো। তার কারণ বেশ কয়েক বছর আগে একজন মহিলা পাগল হয়ে ওর পিঠে ছুরি বসিয়ে দেয়, কিন্তু বেলিনির ভাগ্য ভালো ছিলো ও বেঁচে যায়। সবাই ওকে বলতে লাকি বেলিনি।

 লাকি? একটা খবর চাই আমি, ভিলহেলিওজ নামের বাড়িটাতে কাস্টাগনোলোতে কে থাকে? বেৰ্ণি প্রশ্ন করলো।

হেলিওজ? এক পর্দা চড়ে গেলো লাকির গলার স্বর, ওটা হেরমান রলফের বাড়ি। মারা গেছে লোকটা, মাঝে মাঝে ওর বৌ এসে থাকে। এখন দেখেছি এসেছে।

আকর্ণ হাসিতে বের্ণির মুখ ভরে গেলো, লাকি কাছাকাছি থেকো। সন্ধ্যে নাগাদ আমি তোমার কাছে যাচ্ছি।

ফোন নামিয়ে রেখে আবার নিলো তুলে, এবার এয়ারপোর্ট। এয়ার ট্যাক্সি চাই একটা, লুগনোর কাছে সন্ধ্যে ৬টার মধ্যে অ্যাগনো এয়ারপোর্টে পৌঁছতে হবে।

যখন আবার সেগেত্তি ফোন করলো, তখন জানলো বেৰ্ণি আসছেন, যা বলেছে ঐ বজ্জাত আর্চারটা সেই মতো কাজ করো, তুলে নিয়ে এসো ওই লোকটাকে, আমি দেখছি বাকিটা।

বেৰ্ণি ঠিক আছে, কিন্তু কোথায় দেখা হবে?

 সন্ধ্যে ছটার সময় অ্যাগনো এয়ারপোর্টে নিতে এসে আমাকে।

বের্ণি, ঠিক আছে, তখনও মুখে হাসি লেগে আছে বেৰ্ণির, নামিয়ে রাখলো ফোন।

দুপুর বেলায় ক্লান্ত গ্রেনভিল খোলা ছাদে এসে বিরক্ত হয়ে দাঁড়ালো, পেট জ্বলে যাচ্ছে ক্ষিদেতে। ওখানে একটা মাঝারি টেবিলে ফাইলপত্র ছড়িয়ে হেলগা কাজ করছিলো। খুশিতে মুখ জ্বলজ্বল হয়ে উঠলো ওকে দেখে। আশা করি ক্রিস ডার্লিং ভালো আছ অনেকটা?

একটা শুকনো ভাব মুখের মধ্যে ফুটিয়ে গ্রেনভিল ওর কাছে গিয়ে হেলগার গালে আলতো ভাবে একটা চুমু খেলো।

অনেকটা ঠিক আছে। ভালো হতো না একটু কফি খেলে?

 নিশ্চয়ই, হেলগা বেল বাজিয়ে হিঙ্কলকে ডেকে পাঠালো।

 ঠিক তো? সত্যি ভাল বোধ করছো তো?

 কেমন লাগছে একটু, বেশ কয়েক মাস পরে হলো তো, গ্রেনভিল মুখে সাহস দেখালো। হিঙ্কল এলো। হিঙ্কল কফি আনো। অনেকটা ভালো বোধ করছে মিঃ গ্লেনভিল।…একটা ওমলেট কি তুমি খাবে গ্রেনভিল?

 তখন মাংস খাওয়ার ক্ষিধে গ্রেনভিলের, যাই হোক কাজ চালাতে হবে ওমলেটেই। চলে গেলো হিঙ্কল।

কাজ করছে দেখছি তুমি। চালিয়ে যাও তুমি, একটু জিরিয়ে নিই আমি। গা এলিয়ে চেয়ারে চোখ বন্ধ করলো গ্রেনভিল।

হেলগা হাতে ফাইল তুলে নিলো একটু ইতস্ততঃ করে। যখন ট্রে সাজিয়ে হিঙ্কল কফি, টোস্ট আর ওমলেট আনলো তখন বন্ধ করলো ফাইল।

 যখন ঢাকনা খুলে সামনে খাবার মেলে ধরল হিঙ্কল, তখন গ্রেনভিল ওমলেটের দিকে তাকিয়ে প্রশংসা না করে থাকতে পারলো না।

মাথা ঝুঁকিয়ে হিঙ্কল ধীরে ধীরে চলে গেলো। হেলগা বললো আজকে আর কাজের কথা আলোচনা হবে না। তবে মনে হচ্ছে বুদ্ধি খুলেছে উইনবর্গের। ও আমাকে সকালে জানিয়েছে, টেলিফোনে জমিটা আমরা আমাদের দামেই পাচ্ছি।

বাঃ চমৎকার। খুশি খুশি ভাব দেখালো গ্রেনভিল, তবে এখনো মাথাটা একটু ধরে আছে, আলোচনা কাল হবে ঠিক মত।যদিও জানে গ্রেনভিল এই কাল আর আসবে না কোনো দিনও, এক কাপ কফি টেলে নিলো।

নিশ্চয়ই। ক্রিস জানো ভাবতেই পারি নি আমি, তোমার মতো মানুষের আধকপালীর অসুখ থাকতে পারে।

পেয়েছি বাবার কাছ থেকে, তিনি ওই অসুখেই মারা যান।হিঙ্কল সত্যিই ভালো তৈরি করেছিল ওমলেট। ওটা খেয়ে গ্রেনভিল আর এক কাপ কফি খেলো, না হিঙ্কলের তৈরি ওমলেট সত্যিই ফেলা যায় না।

একটু অস্বস্তির মধ্যে হেলগা বললো, হিঙ্কল একথা শুনলে কষ্ট পাবে। ওরনতুন সৃষ্টি ওমলেট। ওর সঙ্গে এখন থেকে ক্রিস একটু ভাল ব্যবহার করো। ও ভালো চোখে আমাদের বিয়েটা দেখছে না।

ভ্রূ কুঁচকে গ্রেনভিল হেলগার দিকে তাকালো, ভালো চোখে দেখছনা, তোমার তো ও চাকর, তাই না? পছন্দ হলে কি হলো না ওর, পরোয়া করে কে? অনেক চাকর পাওয়া যাবে।

 শক্ত হয়ে উঠলো হেলগার শরীর, শাণিত দৃষ্টি চোখে, ক্রিস প্লিজ হিঙ্কল সম্বন্ধে একটা বোঝাঁপড়া থাকা দরকার আমাদের। ওর মতো তুমি ছাড়া আর কেউ নেই যাকে এতো প্রয়োজন আমার। বহুবার অতীতে ও নানাভাবে আমাকে সাহায্য করেছে। ও বোঝে আমাকে।

হিঙ্কল..কথা বন্ধ করে হঠাৎ জোর করে হেলগা একটু হেসে বলতে থাকলো, আমার সংলাপ কি শোনাচ্ছে নাটকের মত। ক্রিস, বলে রাখি এইটুকু আমার জীবনে অপরিহার্য দারুণ ভাবে। ওকে আমার দরকার যে কোনো মূল্যের বিনিময়ে।

সঙ্গে সঙ্গে গ্রেনভিল বুঝতে পারলো ভুল চাল হয়ে গেছে একটা, কিছুই ক্ষতি হবে না, তবে চটাতেও চায় না হেলগাকে।

 হেসে বললো, দুঃখিত বুঝতে পারিনি, ও এতে আপনজন তোমার। কথা দিচ্ছি, এমন ব্যবহার এবার থেকে করবো যাতে আমাকে হিঙ্কল পছন্দ করতে শুরু করে।

গম্ভীর হয়ে হেলগা বললো, সত্যিই ও আমার খুব আপনজন, খুব বিশ্বস্ত ও, মন খুব নরম ওর, আর যে কোনো ব্যাপারে নির্ভর করা যায় ওর ওপর।

কথা দিচ্ছি আমি, মৃদু চাপ দিয়ে হেলগার হাতে খুব আবেগের সঙ্গে বললো।

ক্রিস ধন্যবাদ, এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত যে তোমাকে যেভাবে আমি চিনেছি, হিঙ্কলও একদিন তোমাকে চিনবে তেমনিভাবে, তারপর দেখবে কতো সৎ ও, কতো বিশ্বস্ত। ঠিক আমারই মতো সেবা করবে তোমার।

হায় ভগবান, ওই হোঁতকা অংহকারী একটা রাঁধুনী কাম চাকরকে নিয়ে বড় বেশি যেন বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। ঠিক আছে, মনের কথা চেপে রেখে গ্রেনভিল তার স্বভাব সিদ্ধ মিষ্টি হাসি ভিজিয়ে বলল তাই আশা করি আমিও।

হিঙ্কল দুপুর একটার সময় এলো ভোদকা মার্তিনির বোতল আর দুটো গ্লাস নিয়ে। মনে পড়ে গেলো গ্রেনভিলের, ও অসুস্থ, সকাল থেকে তাই ইচ্ছে থাকলেও মুখে বলতে হলো না। হিঙ্কলকে বললো, দারুণ ওমলেট করেছিলে। অত কম মশলা দিয়ে ভাবতেই পারি না অমন সুস্বাদু ওমলেট কি করে করো?

 ভালো লেগেছে আপনার স্যার, খুব খুশি আমি, হিঙ্কল শুকনো গলায় কতকটা ভদ্রতা করলো। তারপর হেলগার দিকে ফিরে বললো, মাদাম সিগনন দ্য ভিউ মাসরুমের সসে ভিজিয়ে দেবো লাঞ্চের জন্য আর শেষে ফ্রাই আছে চমৎকার।

চমৎকার, প্রেনভিলের দিকে তাকিয়ে হেলগা প্রশ্ন করলো, খাবে নাকি কিছু?

ইতস্ততঃ করলো গ্রেনভিল। পেটের একটা কোনও ভরে নি ওমলেটে।

মনে তো হচ্ছে আরো কিছুক্ষণ ম্যানেজ করতে পারবো। বুঝতে পারছিলো গ্লেনভিল, ওর দিকে হিঙ্কল এমনভাবে তাকিয়ে আছে যার অর্থ তার মনঃপুত হচ্ছে না কথাটা। হিঙ্কল চলে গেলে গ্রেনভিল বললো, এখনও ও আমাকে ঠিক মেনে নিতে পারে নি, তাই না?

একটু সময় ওকে দিতেই হবে। ফাইল পত্র হেলগা সব গুছিয়ে উঠে পড়লো, যাই সাঁতার। কাটি আমি একটু, চুপ করে তুমি শুয়ে থাকো।

 খুব ইচ্ছে করছিলো গ্রেনভিলেরও সাঁতার কাটতে, কিন্তু বোকামী হয়ে যাবে। আর বাকি আছে। ক ঘণ্টা তার হিসেব কষে দেখলো। এই নরক যন্ত্রণা মাত্র আর দশ ঘণ্টা, স্বাধীনতা তারপরেই। আরামে সে চোখ বুজলো সিগ্রেট ধরিয়ে।

বড় ছাতার তলায় বাগানে বসে লাঞ্চ সারলো দুজনে, হেলগা তারপর ওকে একরকম জোর করেই পাঠিয়ে দিলো শুতে, আর তাই চাইছিলো গ্রেনভিলও। সোজা ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লোরা ওপাশে আবার কাগজপত্র বের করে হেলগা কাজ শুরু করলো।

গ্রেনভিল বিকেল সাড়ে চারটের সময় ছাদে এসে দেখে হেলগা কাজ করে চলেছে তখনও। নিচ্ছে নোট, ফোন করছে।

থাকতে পারো না, কাজ না করে? একটু খেদের সুর মিশিয়ে বললো।

হাসলো হেলগা, আমি এই বিরাট ব্যবসা রাজ্যের অধিকারী, দশ হাজার কোটি ডলার যার দাম। আমার ডান হাত হতে চলেছো তুমি। রাজত্ব এত বড়ো থাকলে, কাজ না করে থাকা যায় না।…ক্রিস বোম টেপো চায়ের জন্যে, আমার প্রায় কাজ শেষ।

বিয়ে করা এই মহিলাকে। হায় ভগবান, তাহলে তো ক্যালকুলেটারের সুইচ হয়ে যাবো আমি।

দুজনে সারা সন্ধ্যে গল্প করে কাটালো। হেলগা খুব উৎসাহ নিয়ে মধুচন্দ্রিমার পরিকল্পনা করতে লাগলো। একটা প্রমোদ তরণী আছে ওর, ওতে করে ফ্লোরিডার উপকূলে ভেসে বেড়ানো খারাপ হবে না। গ্রেনভিল সাগ্রহে সব কথাতেই সায় দিচ্ছিলো, কারণ ও তো জানেই হেলগার মুঠি থেকে আর কয়েক ঘণ্টা পরে বেরিয়ে যাচ্ছে, আর দশ লাখ ডলার ওর হাতে আসছে।

হেলগাকে গোধূলির আলোতে দেখে একটা অনাস্বাদিত বেদনা বুকের মধ্যে গ্রেনভিল অনুভব করলো। সত্যিই সুন্দরী হেলগা। শুধু এততা যদি ও বুদ্ধিমতী, এতো কাজের মেয়ে না হতো। ভীষণ কঠোর হয়ে ওঠে মাঝে মাঝে, আর কর্তৃত্ব প্রিয় বড় বেশি। একটু উল্টোপাল্টা কিছু হলেই শাণিয়ে ওঠে ইস্পাতের মতো হেলগার দৃষ্টি, ছুরির মতো ধারালো গলার স্বর হয়ে যায়, গ্রেনভিলের ভয় লাগে।না সে নিজের মতো করে এই মহিলাকে পাবেনা। সব সময়ে বল হেলগার কোর্টেই থাকবে। তবুও দুঃখ হচ্ছে বেশ। অপূর্ব বিছানায়, ওর রূপ চোখ চেয়ে দেখার মতো, আর টাকা কোটি কোটি। কিন্তু অনেক বেশি হেলগা ক্ষমতা রাখে গ্রেনভিলের চেয়ে। আর ঠিক এটাও বিয়ে করে ফেললে একবার চিরকালের মতো হেলগা হাতের মুঠোতে ওকে পুরে ফেলবে। টাকা আর স্বাধীনতা চায় গ্রেনভিল। একটা চিড়িয়া জোগাড় করবে যখন খুশি, ভোগ করবে। ফুরিয়ে গেলে প্রয়োজনে তাকে ফেলে জোগাড় করবে আর একটা চিড়িয়া। গ্রেভিল রাজি নয় পাকাপাকি কোনো বন্ধনের মধ্যে যেতে। এইভাবেই সে চায় বাঁচতে, আর কোনো ঝাটের মধ্যে যাওয়া নয়, দুঃশ্চিন্তা নয়, রাত কাটানো নয় থলথলে মোটাসোটা বিধবাদের সঙ্গে। ঘড়ি দেখলো চঞ্চল হয়ে।

মদের সরঞ্জাম নিয়ে হিঙ্কল ছাদে এলো, এবার আর থাকতে পারলো না গ্রেনভিল, ভেজাতেই হবে গলা। সেই ভুবন মনোমোহিনী তার সেই হাসি হেসে বললো, হিঙ্কল এখন বেশ ভাল বোধ করছি, একটু মাংস ভাজা খেলে মন্দ হয় না।

খুশি হয়ে হেলগা তাকালো হিঙ্কলের দিকে, সেখানে দেখা গেলো না কোনো ভাবান্তর।

 স্যার বেশ তো, শুধু ভাজা না, অন্য রকম ভাবে একটু তৈরী করবো?

হারামজাদা, শুয়োরের বাচ্চা, গ্রেনভিল ক্ষেপে গেলো মনে মনে, ঠিক আছে তোকে আর কয়েকটা ঘন্টা সহ্য করতেই হবে আমায়। তোর মুখদর্শনও কাল থেকে করতে হবেনা,বাঁচা যাবে। ভাজা হলেই শুধু চলবে।

আমার জন্যেও হিঙ্কল তাই এনো। আর ড্রিংক দিয়ে শুরু করবো না। আমাদের শ্যাম্পেন সরবৎ দিও।

যেন ছোটো করে গ্রেনভিলকে দেখবার জন্যেই মুখ উজ্জ্বল করলো হাসিতে হিঙ্কল। হেলগার এর দিকে তাকিয়ে বললো, দেবো নিশ্চয়ই।

দীর্ঘশ্বাস ফেললো গ্রেনভিল, যেন কিছুতেই হিঙ্কলকে ভোলাতে পারা যাচ্ছে না। আশ্বাস দিলো হেলগা, সময়ে ঠিক হয়ে যাবে।

পোশাক বদলাতে গ্রেনভিল চলে গেলো।

 হিঙ্কল ডিনারের পর যখন কফি আনতে গেছে, তখন গ্রেনভিল বললো, এবার একটু বিশ্রাম দরকার হিলের। ওতো কম বয়সী নয় আমাদের মতো। একপায়ে সারাদিন কাজ করে।

কফি ঢালছিল হিঙ্কল, হেলগা বললো, হিঙ্কল যথেষ্ট হয়েছে, প্রত্যেকবারের মতো আজ খাওয়াটা অসাধারণ হয়েছে। তুমি যাও এবার, আমাদের আর কিছু দরকার নেই।

 কোনো কথা না বলে মাথা ঝুঁকিয়ে হিঙ্কল ট্রে তুলে নিয়ে যেতে যেতে বললো, মাদাম ঠিক আছে, আমি যাচ্ছি। শুধু মিঃ গ্রেনভিল যেন বন্ধ করে দেন বড় জানলার পাশ্লাগুলো আর তালা দিয়ে দেন সদরে। আমি বাড়ীর বাকী অংশ দেখে নিয়েছি সব,..সুনিদ্রা হোক আপনার। গ্রেনভিলকে তারপর যেন হিঙ্কল উপেক্ষা করেই চলে গেলো। যাক বদমাসটার হাত থেকে বাঁচা গেলো, গ্রেনভিল ভাবলো মনে মনে। টেলিভিশনে হেলগা একটা ভাল ফিল্ম হচ্ছে চলো দেখা যাক।

যাবো, তার আগে আরো কিছুক্ষণ এখানে বসো। ভাল লাগছে এতে, কখন শুরু হবে ফিল্ম।

নটা পয়তাল্লিশ-এ।

 তাহলে অনেক সময় এখন হাতে, হেলগানরম সুরে গ্রেনভিলের গায়ে হাত রেখে প্রশ্ন করলো, বেশ সুস্থ লাগছে তো এখন ক্রিস?

চমৎকার আছি, ফিল্মটা শেষ হলে তার প্রমাণ দেবো।

বিদ্যুতের তরঙ্গ খেলে গেলো হেলগার চোখে, ডার্লিং তোমায় পেয়ে কি খুশিই না হয়েছি কি বলবো। ভাবতে পারবে না তুমি, আমার কতোটা জুড়ে আছো তুমি।

একটু খোঁচা লাগলো গ্লেনভিলের বিবেকে। আর পৌনে দুঘণ্টা পরে। আকাশ ছায়া নক্ষত্রে ভরা, বাতাসে মদির ফুলের গন্ধে, এই তো সন্ধিক্ষণ প্রেম করার।

 সে সময় কিন্তু গ্রেনভিলের মনে প্রেম নেই, অন্যভাব মুখে দেখালেও শুনছিলো কান খাড়া করে শেষ হলো হিলের কাজ, বন্ধ হলো রান্নাঘরের দরজা, হিঙ্কলের ঘর বাড়ির পিছন দিকে, ভারি ভারি পা ফেলে ও চলে গেলো সে দিকে।

 টেলিভিশান দেখা যাক চলো।

বসার ঘরে এলো দুজনে, টিভিটা গ্রেনভিল চালিয়ে দিয়ে বললো, আসছি এক মিনিট,বসার ঘরের দরজাটা ও ভেজিয়ে চলে গেলো সদর দরজার কাছে, তালাটা ঝট করে খুলে, নামিয়ে দিলো হুড়কোটা। তারপর পাশের বাথরুমে ঢুকে ফ্ল্যাশটা শব্দ করে টেনে ফিরে এলো শান্ত মুখে। সময় আর এক ঘণ্টা।

পাশে বসলো হেলগার। হাতুড়ি পেটাচ্ছে বুকের ভেতর। বোকার মতো টিভির উজ্জ্বল পর্দার, দিকে তাকিয়ে রইলো, চোখে পড়ছিলো না কিছুই। শুধু চিন্তা একটা, আর এক ঘণ্টা পরে ফাটবে একটা বোমা, তার পরেই পাল্টে যাবে ওর সারা জীবন।

 খুবই ভাল ছিলো সিনেমা। একমনে দেখছিলো হেলগা। গা এলিয়ে দিয়ে মনের সুখে গ্রেনভিলের একটা হাত মুঠোর মধ্যে ধরে সে সিনেমা দেখছিলো। একটা মাঝারী পাওয়ারের আলো, ঘরে।

 জ্বলজ্বলে ঘড়ি একটা তাকে। গ্লেনভিল মাঝে মাঝে ঘড়ি দেখছিলো।

 এগারোটার ঘরে ঘড়ির কাঁটা ছুঁতেই দুজন মুখোশধারী হুড়হুড় করে ঢুকলো ঘরের মধ্যে, রিভলবার হাতে।

.

০৬.

হাত ঘড়ি দেখলো আর্চার, ঠিক এগারোটা। সেগেত্তি আর বেলমন্ট এই মুহূর্তে নিশ্চয়ই ঢুকে পড়েছে হেলগার বাড়িতে।

ঠিক দশটা পনোরোমিনিটে ওরা ফিরে এলো আর্চারের ভাড়া নেওয়া গাড়িতে।কালো চামড়ার দুটো মুখোশ আর অটোম্যাটিক রিভলবার আর্চারকে দেখিয়ে দিলো।

এককালে আর্চার কাজ করেছিলো সেনাবাহিনীতে, তার চেনা আগ্নেয়াস্ত্র। গুলি আছে কিনা পিস্তল দুটোতে দেখে নিলো। নেই, তবুও সতর্ক করে দিলো আরেকবার, দেখ ধারে কাছে যেয়ো না খুনজখমের, তার চেয়ে বাতিল করা ভালো প্ল্যানটা। ঠিক পাবে তোমাদের টাকাটা, বুঝেছো?

দেঁতো হাসি হেসে সেগেত্তি চিন্তা করতে মানা করলো। আর ফিরিয়ে এনে দাও আমার বন্ধুকে। তাড়াহুড়ো করবে না। ঝামেলায় জড়াতে চাই না পুলিশের সঙ্গে।

ওরা দুজনে চলে গেলে অস্থিরভাবে ঘরের মধ্যে পায়চারি করতে করতে আর্চার বারবার ঘড়ি দেখতে লাগলো। ঠিকঠাক সব কিছু চললে ওরা সাড়ে এগারোটার মধ্যে গ্রেনভিলকে নিয়ে ফিরে আসবে। যদি চলে ঠিক মতো…

স্যুটকেশ গোছানো আর্চারের। কোনো গণ্ডগোল যদি হয়, সঙ্গে সঙ্গে যাতে পালাতে পারে। পাল্লা দিতে গেলে হেলগার মত মেয়ে মানুষের সঙ্গে কি হয় কখন কে জানে। বোঝা যাচ্ছে এমনিতে তো ওকে গ্রেনভিল বঁড়শিতে গেঁথেছে, শুধু এখন টাকাটা খেলিয়ে তুলে নেওয়া। কিন্তু যেন হেলগা এক ইস্পাতের তলোয়ার, ধরতে ঠিক মত না পারলে হাত কাটবেই। সেটাই আরও দুঃশ্চিন্তা আর্চারের।

যখন আর্চার ওকে অতীতে ব্ল্যাকমেল করতে চেয়েছিলো, আর কি করে হেলগা ওকে ভাড়ার ঘরে মাটির তলায় বন্দী করে রেখেছিলো, আর্চারের সে সব কথা মনে পড়লো। যখন মনে মনে আর্চার ভাবছিলো নস্যাৎ করে দিয়েছে হেলগাকে, তখন কিন্তু ওকে হেলগাই হারিয়ে বসে আছে। আর তারপর থেকেই আর্চারের এই দুঃখ দুর্দশা শুরু হয়েছে।

 আর্চারের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো, গ্রেনভিল একবার ফিরে আসুক। বোঝা যায় যদি ঠিক মত কিডন্যাপিং হয়েছে, তখন হেলগাকে ফোন করবে আর্চার। আর সেটাই হবে সবচেয়ে সুখের মুহূর্ত আর্চারের কাছে, ভরা সাফল্যের আনন্দ। প্রতিহিংসা নেবার আনন্দ। ,

ঘড়ি দেখলো আবার, রাত এগারোটা বেজে কুড়ি মিনিট।যদি হয়ে থাকে সব ঠিক মতো তাহলে এখন ফিরছে ওরা। আচ্ছা হিঙ্কল, যদি ওই বিপজ্জনক লোকটা,ঝামেলা বাধায়।ও চেনে হিঙ্কলকে। সে হেরমান রলফের খাস চাকর ছিলো। আর্চারকে যে হিঙ্কল পছন্দ করতো না এটাও ঠিক। ভোদা ভোদা চেহারাটা হলে হবে কি, হেলগার মতোই ভেতরে ইস্পাতের কঠোরতা আছে হিঙ্কলের মধ্যে। এটাই বোধহয় কারণ যে, হেলগাকে ধীরে ধীরে হিঙ্কল শ্রদ্ধা করতে শুরু করেছে। দুজনে এক জাতের।

 গাড়ির শব্দ না? সদর দরজায় ছুটে গেলো, খুলতেই দেখা গেলো একটা হেডলাইট গাড়ির রাস্তায়। কিন্তু চলে গেলো গাড়িটা। পরপর বেশ কয়েকটা গাড়ি চলে যাবার পর দেখা গেলো সেগেদ্ভিদের মার্সিডিজ। গাড়িটা থামতেই আর্চারের বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠলো।

 লাফিয়ে নেমে গ্রেনভিল দ্রুত পায়ে আর্চারের কাছে চলে এলো। আর্চার প্রায় রুদ্ধশ্বাস প্রশ্ন করলো ঠিক আছে সব?

নিখুঁত। ভাল আর হয় না এর চেয়ে, হাসলো গ্রেনভিল।

 যাও ভেতরে, এ দুটোকে আমি সামাল দিই, আর্চারের হঠাৎ মনে হলো যেন দশ ফুট লম্বা হয়ে গেছে সে।

 ধীর পায়ে এলো সেগেত্তি আর বেলমন্ট। এবার ওদের হাত থেকে আর্চার চায় নিষ্কৃতি। ব্যাগ। থেকে তাড়াতাড়ি বের করলো দুহাজার ফ্রাঙ্কের নোট। কোনো ঝাট?

মাথা নেড়ে সেগেত্তি জানালোনা। তোমার খবরটা ম্যাকস মহিলাকে জানিয়ে দিলো। মহিলা দারুণ ঘাবড়ে গেছে মনে হচ্ছিল, আর বিশ্বাস করেছে পুরো ব্যাপারটাকে।

ঠিক আছে, তোমাদের টাকা এই নাও। ভুলে যাও এসব কথা, তোমরা জেনিভাতে ফিরে যাও।

সেগেত্তি নোটগুলো গুনে নিলো চাঁদের আলোতে, স্যার ঠিক আছে। আমরা এবার যাবো।

ভক্সওয়াগনে চেপে ওরা চলে গেলো। বাড়ির ভিতরে বসবার ঘরে এসে দেখলো গ্লেনভিল আরাম করে বসে আছে, মুখে হাসি।

গ্রেনভিল বললো, চমৎকার কাজ হয়েছে।

আর্চার হুইস্কির বোতল খুললো, আমায় সবটা বলল ক্রিস৷ গ্রেনভিল মদে চুমুক দিয়ে শুরু করলো, রাত প্রায়নটা আন্দাজ হিঙ্কলকে সরিয়ে দিলাম ম্যানেজ করে। ভালো ছিল ভাগ্য, সিনেমার প্রোগ্রাম টিভিতে দেখার কথা বলতেই রাজি হলো হেলগা। যখন ও টিভির সামনে গিয়ে বন্দোবস্ত করছিলো ভাল করে গুছিয়ে বসবার, সেই ফাঁকে বেরিয়ে গিয়ে খুলে দিয়ে এলাম সদর দরজাটা। ভাবছিলো ও আমি জল বিয়োগ করতে গেছি। সিনেমাটা যখন শেষ হবো হবো ঠিক এগারোটা, এমন সময় দুজন এরা ঢুকে পড়লো হুড়মুড় করে। চেহারাটা ভয় পাওয়ানো বটে। হাসলো গ্রেনভিল, ওরা আমাদের কয়েক মুহূর্তের জন্য বেশ ভয় পাইয়ে দিয়েছিলো। ওরা যা করলো হেলগার সঙ্গে তুমি থাকলে দেখতে। আর ওদের চোখের পাতা পড়ছিলো না। হেলগাকে ওদের মধ্যে একজন বললো ওরা ধরে নিয়ে যাচ্ছে আমাকে। আর কাল সকালে মুক্তিপণের চিঠিটা পাবে। বললো এমনভাবে যে অবিশ্বাস করার কিছু ছিলো না, এতো শাণিত গলার সুর যে লোহা পর্যন্ত কেটে ফেলার মতো। হিস হিস করে চাপা সুরে এমনভাবে বললো যে আমিও প্রথমটায় বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। পুলিশ ডাকলে আমাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না একথা বলে শাসিয়েও এলো। একেবারে হেলগা বসে রইলো পাথরের মূর্তির মতো। প্রতিবাদ করার আমি চেষ্টা করতেই আমাকে ওরা একটু দূরে ঠেলে নিয়ে গেলো, তারপর রিভলবার পিঠে ঠেকিয়ে আমাকে জোর করে বের করে আনলো। পাঁচ মিনিটে পুরো ব্যাপারটা খতম। গ্রেনভিল জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বাকি কথাটুকু শেষ করে বললো, আমি এখন স্বাধীন। তবে কি জ্যাক, জানো, হেলগা কিন্তু আমাকে সত্যি সত্যিই ভালবেসে ফেলেছে, আর আমিও কেমন যেন হয়ে যাচ্ছিলাম আস্তে আস্তে?

 ওসব কথা বাদ দাও, ওকি তোমাতে সত্যি সত্যিই মজেছে, অর্থাৎ ওর গলায় কি তোমার বঁড়শি আটকেছে ভালো ভাবে, সবচেয়ে এটাই জরুরীকথা। যদি তা হয় তবে ও পুলিশকে ডাকবে না।

 গ্রেনভিল আর আর্চার এইসব আলোচনা করার সময় জানোনা বা সন্দেহও করতে পারেনি যে একটু দূরে গিয়েই ভক্সওয়াগনটা থেমে গিয়েছিলো আর গাড়ি ঘুরিয়ে সেগেত্তি ছায়ার মতো বাড়িটার পিছন দিকে চলে গিয়ে পিছনের দরজাটা একটা ছুরির সাহায্যে খুলে রান্নাঘরে নিঃশব্দে এসে দাঁড়িয়েছিলো। আধ ভেজানো ছিল দরজাটা, বসবার ঘরটা ওখান থেকে দেখা যাচ্ছিলো মোটামুটি। যখন ও পৌঁছলো গ্রেনভিল তখন বলেছিলো, গেঁথেছে কি না বঁড়শিতে? কি যে বলল, বঁড়শি নয়, গেঁথেছি একেবারে হারপুন দিয়ে। যখন ওরা দুজন আমাকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছিলো ঘর থেকে, যদি হেলগার তখনকার চেহারা দেখতে। একেবারে ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিলো ভয়ে আতংকে হেলগা। সত্যি আমি ওকে মজিয়ে ফেলেছিলাম।…জ্যাক বিশ্বাস করো, একেবারে সারা সন্ধ্যেটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো দীর্ঘ মধুচন্দ্রিমা যাপন আলোচনা করে।

 ভাল। চমৎকার। খুব খুশি হয়ে আর্চার বললো, তীরে প্রায় পৌঁছে গেছি। ওর কাছে আগামীকাল যাব। এই সাক্ষাত করাটার জন্যে বহুদিন ধরে অধীর আগ্রহে বসে আছি। সবচেয়ে বড় আনন্দের দিন হবে জীবনে ওটা।

 গ্রেনভিল একটু চুপ করে থেকে বললো, তোমার সঙ্গে একটা ব্যাপারে কথা বলতে চাই আর্চার। কম টাকা নয় কুড়ি লাখ ডলার, আর প্রলোভনও তার প্রচুর। তোমার সুইস ব্যাঙ্কের হিসেবে টাকটা তো জমা পড়বে। আমার শেয়ার যে আমি পাবো তার গ্যারান্টি কি?

ওর দিকে অবাক বিস্ময়ে আর্চার হাঁ করে তাকিয়ে রইলো। এতে নিচে নেমে গেছে কি ও যে এইরকম একটা বাজে পুরুষ বেশ্যাও তাকে বিশ্বাস করতে পারছে না?

 আর্চার রেগে গিয়ে বললো, তুমি নিশ্চয়ই তোমার অংশ পাবে। একসঙ্গে আছি আমরা, বখরা আধাআধি।

কিন্তু তোমার কথা তো ওটা। আমি কি করে ভরসা রাখি? নিশ্চিন্ত হতে চাই আমি।

ইতস্ততঃ করলো আর্চার, নিজের এই গরিবী হালের জন্য তার দুঃখ হলো, তবে বুঝতে পারলো এটাও তার এই দুর্দশাগ্রস্ত চেহারার জন্যেই.ওকে বিশ্বাস করতে পারছে না গ্রেনভিল।

বলো কি বলছো তুমি, বোঝাই তো যাচ্ছে এটা, তুমি বিশ্বাস করছো না আমাকে।

 ও ভাবে আমার কথাটাকে নিয়ো না জ্যাক। বিশ লাখ ডলারের ব্যাপারে, সত্যি কথা বলতে কি কাউকেই বিশ্বাস করতে পারি না আমি এবং আমার মনে হয় না তুমিও করবে বলে। এখন থেকে, ওর সঙ্গে তুমি দেখা করে টাকার বন্দোবস্ত করে আসার পর থেকে একসঙ্গে সবসময় থাকবো দুজনে। ব্যাঙ্কে যাবো তোমার সঙ্গে, আমার অংশটা তুমি আমার অ্যাকাউন্টে তুলে দিলে নিষ্কৃতি তোমার। আপত্তি আছে?

একটুও না, যদি তুমি তাই চাও, হবে।

 আমি চাই এইটুকুই।

ধরে নাও করা হচ্ছে ওটা। হেলগাকে টাকাটা জোগাড় করতে শেয়ার কিছু বিক্রি করতে, হবে। ওকে আমি সময় দেবো তিনদিনের, তবে একটা দিনও বেশি না। আমাদের এখানেই এই কটা দিন থাকতে হবে। সবার চোখের আড়ালে তুমি থাকবে ক্রিস। বোঝাই করে রেখেছি ফ্রিজে খাবার আমি। আর প্রাসাদ এটা না হলেও, যথেষ্ট মাথা গোঁজবার পক্ষে।

আমি ঠিক থাকবো, গ্রেনভিল গলায় হুইস্কিটা ঢেলে দিলো।

আমায় এবার একটা ছোট কাজ করতে হবে। আর্চার দেওয়াল আলমারী থেকে একটা পোলারয়েড ক্যামেরা বের করলো, এটা কিনে এনেছি আজকে।

বোকার মতো প্রশ্ন করলো গ্লেনভিল, ওটা দিয়ে কী হবে?

আর্চার হেসে উত্তর দিলো তৈরী করবো প্রমাণ, কিনে এনেছি আর একটা জিনিস। এক বোতল টমাটো সস আলমারী থেকে বের করলো।

 হায় ভগবান, আর্চার তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?

 মাই ডিয়ার ক্রিস আদৌ না। বোতলটা তারপর ক্রিসের মুখের সামনেনাড়তে নাড়তে বললো, বিশ লাখ ডলার এই টমাটো সসের দাম। বুঝলে, রান্নাঘরে সেগেত্তি আরও একটু এগিয়ে এলো, বসবার ঘরে উঁকি মারলো।

 এটা ক্রিস একটু ঝঞ্ঝাটের বাপার, কিন্তু টাকা অতগুলো পেতে হলে কষ্ট তো করতেই হবে। তোমার মুখে এই সস একটু মাখিয়ে দেবো, আর মেঝেতে তুমি চিৎপাত হয়ে পড়ে থাকবে। আর ঐ অবস্থার ছবি তুলে দেখাবো হেলগাকে, কাজ হবে তাতে, টাকা দিতে হেলগা দেরী করবে না। হেলগাকে আমি চিনি, ও একেবারে এইসব খুন খারাপি পছন্দ করে না।

 হেসে গড়িয়ে পড়লো গ্রেনভিল, আর্চার দারুণ বুদ্ধি খাঁটিয়েছো, দারুণ।

কাজ হবে যতটুকু শুনলে, ততটুকু শোনামাত্র ধীরে ধীরে সেগেত্তি ফিরে গেলো, আর সোজা চলে গেলো ভক্সওয়াগনে চেপে।

পিয়াজ্জাগ্রান্দের পিছন দিকের একটা রাস্তায় লুগানো শহরে ইতালীর নানারকম জিনিস বিক্রি করার যে দোকানটা আছে লাকি বেলেনি তার মালিক। লাকি থাকতো ছোট্ট দোকানঘরের ওপর আর ফ্ল্যাটে তার স্ত্রী মারিয়া, বেজায় মোটা। আটজন ওদের ছেলেমেয়ে চাকরী বাকরী নিয়ে সবাই ঘরছাড়া। লাকির মাঝে মাঝে বেশ দুঃখ হয় তাদের জন্যে। সে ঘর সংসারী মানুষ। অন্যত্র শেষ ছেলেটি চলে যাবার আগে দোকানের পিছনদিকে গুদাম ঘরের ওপর লাকি একটা ছোট্ট ঘর করেছিলো। ছোট্ট একটা বাথরুম লাগানো ঘর, একজনের থাকার মতো। ছোটো ছেলে থাকত ওই ঘরে যার স্বপ্ন ছিল ড্রাম বাদক হবার। আর লাকির ঐ ড্রামের শব্দটা একটুও ভাল লাগে না। ঘরটার জন্ম হয় সেই জন্যে।

 ঐ ঘরেই এদিন দেখা গেলো কথা বলতে লাকি আর বেৰ্ণিকে। লাকি ছিল প্রায় বছর পনের আগে নেপলস শহরের মাফিয়া দলের নায়ক। বয়স এখন তার চুয়াত্তর, ভালই আছে অবসর নিয়ে কিন্তু একবার যে মাফিয়া নেতা হয় তার রক্তে সেই নেশা থেকে যায়। ও জানতো নেপলসের লোকেদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে বেৰ্ণির, এবং বেৰ্ণির উপকার করা মানে উপকার করা ওদের।

বেৰ্ণি হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো, যা জানো এই রলফ মেয়ে মানুষটা সম্বন্ধে আমায় বলল। তখন রাত এগারোটা, যে সময়ে ঠিক অভিযানে গেছে–সেগেত্তি আর বেলমন্ট।

সবরকম খবরাখবর লাকি রাখে। হেলগা, লক্ষ লক্ষ ডলার পেয়েছেরলফের উত্তরাধিকার সূত্রে, রলফ বর্তমানে ইলেকট্রনিক কপোরেশনের মাথা। নিজেরই ওর প্রায় ছশো থেকে সাতশো লক্ষ ডলার আছে। একটু বেশি কামপ্রবৃত্তি, ফলে হোটেলের ওয়েটার, কারম্যান আর বিশেষ করে ও তাকে ছাড়ে না ইতালীর পুরুষ পেলে। মারা যাবার পর রলফ, যতদূর আমি জানি, ও শান্ত হয়ে গেছিল একটু। ওর এখন একজনকে মনে ধরেছে, লোকটার নাম ক্রিস্টোফার গ্রেনভিল। হেলিওজ ভিলাতে এখন ওরা দুজনে আছে।

কে এই নচ্ছারটা?

গ্লেনভিল,ইংরেজ, দেখলে মনে হয় ও মালদার লোক, কিন্তু ওর ওটা চালাকি। এছাড়া ওর সম্বন্ধে আর কিছু জানি না, তবে শুনেছি ও জার্মানীতে কিছু কাল ছিলো।

কিছু জানো জ্যাক আর্চার সম্বন্ধে?

জানি, আগে ও রলফের টাকা পয়সা কোথায় কি আছে তার খবরদারি করতো। ও তখন লাউসানের একটা বিখ্যাত ট্যাক্স কনসালটেন্ট ফার্মের খুব উঁচু পোষ্টে চাকরী করত। যখনই রলফরা আগে হেলিওজে আসতো তখন সেখানে ঘন ঘন দেখা যেতো আর্চারদের। তারপর হঠাৎ বন্ধ করলো আসা। শুনেছি রলফের কিছু টাকা গ্যপ করার ফলে ওকে পড়তে হয়েছিলো ঝাটে, তবে জানি না সঠিক। আবার শুনেছি এও বলফের বউয়ের সঙ্গে লটঘট ছিলো ওর, কিন্তু লোকের মুখে ওটাও শোনা।

একের পর এক বেৰ্ণি খবরগুলো গেঁথে নিলোমনে, তারপর বললো মাথা নেড়ে, ঠিক আছে। এখন শুতে যাও। আমার এখানে কোনো অসুবিধে হবে না। এখন আমি উনুনে চাপিয়েছি একটা কড়া। ফুট ধরতে শুরু করলেই নামাতে হবে। তবে তার ভাগ তুমিও পাবে নিশ্চয়ই।

লাকি দাঁত বের করে হাসলো।

হ্যাঁ, ভালই লাগবে একটু বাড়তি টাকা পেলে। এখানে থাকো যতদিন খুশি। কিছু খাবার ইচ্ছে হলেই কফি, হুইস্কি, টেলিফোন আছে, খবর দিও। পাঠিয়ে দেবো। বেৰ্ণি পুলিশি ঝাটে পড়েছে লাকির ধারণা হয়েছিলো, থাকতে চায় লুকিয়ে। ওর মনের কথা বেৰ্ণি বুঝতে পারলেও ভাঙালো না ভুল।

 লাকি ঠিক আছে, আসতে পারে কয়েকজন বন্ধুও। আপত্তি নেই তো?

কোনো ব্যাপারে আপত্তি নেই আমার, তোমার বা যদি মাটিতে শুতে পারে, কারণ খাটতে একটাই।

লাকি হ্যান্ডশেক করে চলে গেলো। নিজের ঘরে বৌকে গিয়ে বললো বোধহয় বের্ণি খুব ঝঞ্ঝাটে পড়েছে, পৌঁছে দিতে হবে খাবার টাবার চাইলে। ওর থেকে মারিয়া পাঁচ বছরের ছোটো। কথাটা শুনে খুব খুশি হোলো না তবে আপত্তিও করলো না। গত পঞ্চাশ বছরের বিবাহিত জীবনে যা বলেছে শুনে এসেছে শান্তভাবে মারিয়া। প্রশ্ন করেনি কোন।

বেৰ্ণি লোহার খাটে শুয়ে চিন্তা করতে লাগলো। সেগেত্তি আর বেলমন্ট বারটার একটু আগে ওপরে উঠে এলো সিঁড়ি দিয়ে। পুরো ঘটনাটার খুঁটিনাটি বিবরণ দিলো বের্ণিকে, সবশেষে চুরি করে গ্রেনভিলকে আনার পর আর্চারের ওখানে যা ঘটেছিলো জানালো তাও।

ওই লোকটাকে ওরা এনেছে কুড়ি লাখ ডলার আদায় করার জন্যে। ব্যাপারটা বোঝো?

ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে বেৰ্ণি বললো, আরে হাঁদা হোললা আর্চারটা। পেশাদার তো নয়। অত কম নয় গ্রেনভিলের দাম, আমি হলে অনায়াসে পঞ্চাশ লাখ ডলার আনতে পারি। রোমে কদিন আগে এরকম ঘটনা ঘটেছিলো, তাতে দাবি করেছিলো সত্তর লাখ ডলার। শোনো এবার কি করতে হবে…

হাত পা আধ ঘণ্টা ধরে নেড়ে বের্ণি একটা কথা ওদের বোঝাতে লাগলো, তারপর জানতে চাইলে ওরা বুঝেছে কিনা।

আনন্দে সেগেত্তি লাফিয়ে উঠলো, মার দিয়া কেল্লা। কিন্তু আমরা কতো পাবো ভাগ বের্ণি?

 পরে সেটা ঠিক করা যাবে। এখনও বাকি অনেক কাজ। এখন শুয়ে পড়া যাক এসো। কার্পেটের ওপর শুয়ে পড়ো তোমরা।

.

হেলগার ঘুম ভাঙলো আস্তে আস্তে, শান্ত মনে বেশ দু-এক মিনিট জাগন্ত অবস্থায় ও হাত বাড়ালো শুয়ে থেকে গ্রেনভিলকে বুকের কাছে পাবার জন্যে। কিন্তু যখন পেলো না হাতড়েও, তখন হেলগা চোখ খুললো। সূর্যের আলো জানলার খড়খড়ির মধ্যে দিয়ে ঘরে এসেছে। ঘড়ি দেখলো খাটের পাশে রাখা, সকাল দশটা। হয়তো সাঁতার কাটতে গেছে ক্রিস…গতরাত্রের হঠাৎ সেই ভয়াবহ দৃশ্যটা ভেসে উঠলে ওর চোখের সামনে। হেলগা চাপা আর্তনাদ করে উঠে বসলো, সে শুধু ব্রা আর প্যান্টি পরে শুয়েছিল। ঘরের চারপাশে পাগলের মতো তাকাতেই খালি চোখের সামনে মুখোশ পরা লোকদুটোর মুখ ভেসে উঠতে লাগলো, রিভলবার হাতে।

 কে যেন বুকের মধ্যে হাতুড়ি পেটাতে শুরু করলো। গলা থেকে বেরিয়ে আসা আর্তনাদকে চাপা দেবার জন্যে সে নিজের মুখ চেপে ধরলো।

টোকা দরজায়, কফির ট্রলি নিয়ে হিঙ্কল ঘরে ঢুকলো। ধীরভাবে বললো, মনে হলো জেগে উঠেছেন আপনি, একটা চাদর পাশের ঘর থেকে এনে জড়িয়ে দিলো হেলগার গায়ে। গতরাতে আমিই আপনার পোশাক খুলে দিয়েছিলাম, যাতে শুতে পারেন আরাম করে।

 হেলগা জোরে নিঃশ্বাস নিলো, ক্রমশঃ কঠোর হয়ে এলো মনটা। গত রাতে মনে পড়ে গেলো ওদের গাড়িটা চলে যাবার শব্দ শোনার পর পাগলের মত হিলের ঘরে ছুটে গিয়েছিলো। ওকে জড়িয়ে কেঁদে উঠেছিলো। মাথায় ছেলেমানুষের মত হাত বুলিয়ে, ধীরে ধীরে সান্ত্বনা দিয়ে হেলগাকে শোবার ঘরে এনে হিঙ্কল খাটে শুইয়ে দিয়েছিলো। তারপর শক্ত করে হাতটা ধরে খাটের পাশে বসে ছিলো সে। ধীরে ধীরে হেলগা সব ঘটনাটা বলার পর, কেঁদে বলেছিলো আমি ওকে হারিয়ে বেঁচে থাকতে পারবো না হিঙ্কল, এনে দাও ওকে। আমি কি করি? যাই কোথায়…

 উতলা হবেন না এত। আপনি তো জানেন আজকাল এসব ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। শান্ত হোন একটু…

হিঙ্কল, ওকে ওরা মারতে পারে। আমি ওকে ভালবাসি। ওই শয়তানদের কবলে পড়েছে ক্রিস, আমার বুক ফেটে যাচ্ছে ভাবতেও।…আমার চাই-ই ওকে।

 হিঙ্কলের গলায় হঠাৎ রুক্ষতায় হেলগা চমকে উঠলোমাদাম রলফ, বড় বেশি পাগলামী করছেন আপনি। আমি তো বললাম আজকাল এসব ঘটনা আকছার ঘটছে। পুলিশ লাগাবো আমি…

না, না, না খবর দেওয়া চলবে না পুলিশে। খবর দিলে ওকে ওরা মেরে ফেলবে বলে গেছে। শোনো নি তো তুমি, লোকদুটোর কথা কী হিংস্র ছিলো…

তাহলে যতক্ষণ না মুক্তিপণ দাবী করছে, ততক্ষণ চুপ করে থাকাছাড়া অন্য পথ নেই। অন্ততঃ ততক্ষণের জন্যে শান্ত হয়ে আপনি বিশ্রাম করুন।

কিন্তু আর ধরে রাখা যাচ্ছিলো না হেলগাকে। বিছানায় ছটফট করে হিঙ্কলকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলছিলো।

ওর দিকে তাচ্ছিল্য ভাবে তাকিয়ে হিঙ্কল কি ভেবে বাথরুমে গিয়ে ঘুমোবার ওষুধের চারটে বড়ি জলে মিশিয়ে এনে জোর করে তুলে ধরলো হেলগার ঠোঁটের কাছে।

খাবো না আমি। খাবো না আমি।

 খেয়ে নিন, আর নাটক করতে হবে না ছেলেমানুষের মত, হিঙ্কল হুঙ্কার দিয়ে উঠলো।

জলটা এক চুমুকে খেয়ে হেলগা কেঁপে উঠলো। মাথা বালিশে রেখে কাঁদতে কাঁদতে বললো, আমি ওকে ভীষণ ভালবাসি। হে ভগবান, যেন ওরা ওকে না মেরে ফেলে।

হিঙ্কল পাশে বসে নজর রাখতে লাগলো কখন শুরু হয় ওষুধের ক্রিয়া, হেলগা ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়লো।

নিজের ব্যবহারের কথা, আর কি ভাবে হিঙ্কল পরিস্থিতিটাকে শান্ত মাথায় সামলাচ্ছিলো মনে পড়তেই হেলগা লজ্জায় মুখ নীচু করলো। হিঙ্কল ধন্যবাদ। তোমার সাহায্য না পেলে আমার যে কি হতো ভেবে পাই না। আমার কাল রাতের আচরণের জন্যে লজ্জা পাচ্ছি।

 কি হয়েছে তাতে, মিঃ গ্রেভিল কয়েক দিনের মধ্যেই ফিরে আসবেন, দূর হবে আপনার কষ্ট।

 আছি সেই আশাতেই,কফিতে চুমুক দিয়ে হেলগা বললো, মুক্তিপণের চিঠি আজই পাবো ওরা বলেছে। ফোন করবে কি ওরা?

মনে তো হয় তাই। সাধারণ নিয়ম এটাই তো। আপনার স্নানের ব্যবস্থা করছি আমি। যদি টেলিফোন আসে, আপনাকে আমি খবর দেবো।…আর মাদাম একটা কথা…আপনার আজ অগ্নিপরীক্ষার দিন। কোনো মহিলা যখন বিপদে পড়েন, তখন কিছু ভাল চাইতে হলে ভাল ভাবে নিজেকে গুছিয়ে রাখা উচিত।

হেলগার মন ভরে উঠলো কৃতজ্ঞতায়। ও বেঁচে আছেহিঙ্কল আছে বলে…তারপর স্নান সেরে সিষ্কের আকাশনীল রঙের সার্ট আর কালো ট্রাউজার পরে নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হেলগা সম্বোধন করে বললো, আমি হেলগা রলফ। ক্রিসকে আমি ভালোবাসি। সবচেয়ে পৃথিবীর ধনী মহিলাদের মধ্যে একজন আমি। আমার হাতে হেরমান রলফের যাদুদণ্ড, লাগুক যতো টাকা লাগে, আমার ক্রিসকে আমি ফিরে পাবার জন্যে খরচ করবো।

হেলগা খোলা ছাদে গিয়ে দাঁড়ালো, হিঙ্কল জল দিচ্ছিলো ফুলগাছে। একবার আপাদমস্তক ওকে দেখে বললো, যদি কিছু মনে না করেন তবে একটা কথা বলি, দারুণ সুন্দর দেখতে আপনি।

 হিঙ্কল ধন্যবাদ। কখনও তোমার স্নেহত্ন ভুলবো না।

কয়েকটা ফুল শুকিয়ে গেছে, তুলে ফেলতে হবে, আমি বলি কি, আপনি কাজটা করুন। পরিচর্যা করা ভালো বাগানের, তাছাড়া ভুলে থাকবেন সব। এই বলে কাচি আর ছোট্ট ঝুড়িটা হেলগার হাতে তুলে দিলো।

 হেলগা এ কাজ কখনো করেনি। তবে করতে গিয়ে দেখলো সত্যিই ভুলে থাকা যায় অনেক কিছুই।

– হিঙ্কল হালকা মদ নিয়ে এলো সওয়া এগারোটা আন্দাজ। খেয়ে নিন সামান্য কিছু।

হেলগা হাত ধুয়ে ফিরে এলো, ফোন তো করলো না এখন।

 না করেনি, তবে এটা তো স্নায়ুযুদ্ধ। আর স্থির বিশ্বাস আমার, মানসিক শক্তির লড়াইয়ে হারবেন না আপনি।

 হেলগা গ্লাসটা হাতে নিয়ে বললো, একটাই চিন্তা আমার ওকে যেন মেরে না ফেলে ওরা।

তা কেন করবে?…করবে না।..ফোন না আসে যতক্ষণ একটু লাঞ্চ খেয়ে নিন, আনবো সেই ওমলেট? আপনাকে মনের আর শরীরের জোর রাখতে হবে দুটোরই।

ঠিক সেই সময়ে কেউ দরজার বোম টিপলো, বেজে উঠলো ঘণ্টা। হেলগার মুখ আতঙ্কে সাদা।

হিঙ্কল একটুও না ঘাবড়ে বললো, মাদাম প্লিজ। হয়তো পিওন এসেছে, আমি দেখছি।

ছাদ পেরিয়ে দরজা খুলতেই আর্চারের মুখোমুখি হলো। শ্যেনদৃষ্টিতে দুজন দুজনের দিবে তাকালো, হিঙ্কল কেমন আছো? পারছো চিনতে?

 হিঙ্কল যা বোঝবার বুঝে নিলো। তবে মুখের ভাব না পাল্টে কুঁচকে বললো, মিঃ আর্চার। তাই তো?

নিঃসন্দেহে, আমি একটু কথা বলতে চাই মাদাম রলফের সঙ্গে।

বাড়ি নেই মাদাম রলফ।

 আমার সঙ্গে উনি দেখা করবেনই। খবর দাও ওকে মিঃ গ্লেনভিলের ব্যাপারে এসেছি আমি।

 হিঙ্কল ওর দিকে অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। কম দামী আর্চারের পোশাকের দিবে তাকিয়ে বললো, অপেক্ষা করুন একটু।

 ভাল করে দরজা বন্ধ করে ওপরে এলো হিঙ্কল। হেলগা উত্তেজনায় অধীর হয়ে দাঁড়িয়েছিলো।

মাদাম, আপনার সঙ্গে মিঃ আর্চার দেখা করতে চান।

 কে?

মিঃ জ্যাক আর্চার।

হেলগার চোখে আগুন ঝিলিক দিয়ে উঠলো। আর্চার? এত সাহস ওর হলো কি করে? দাও তাড়িয়ে। ঢুকতে দেবে না ওকে।

আমি বলি কি, দেখা করা ভালো ওর সঙ্গে। বললেন, এসেছেন গ্রেনভিলের ব্যাপারে।

 হেলগা চমকে উঠলো, তাহলে আর্চার কি আছে ওর পিছনে?

 জানি না, তবে তাই মনে হচ্ছে।

আবার সেই ইস্পাতের কাঠিণ্য হেলগার মধ্যে ফিরে এলো। পায়চারি করতে করতে ঘরে মধ্যে অতীতের কয়েকটা ঘটনা ভেসে উঠলো ছবির মতো। আর্চারকে মাটির তলার ঘরে আটবে রাখা, আর্চার যখন ঠিক মনে করেছিলো, জিতেছে সে, তাকে তখন চরম আঘাত হানা…ও প্রায় কুড়ি বছর ধরে আর্চারকে চেনে, যখন হেলগার বাবার ফার্মে হেলগা আর আর্চার দুজনেই চাকর করতো, তখন প্রেম ছিলো ওদের মধ্যে। ওকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে এই আর্চারই হেরমান রলফবে বিয়ে করতে রাজী করিয়েছিলো, যাতে আর্চার, রলফের সুইজারল্যান্ডের ব্যবসাপত্রে নাক গলাতে পারে। প্রায় কুড়ি লাখ ডলার রলফের সরিয়ে নিয়ে ফাটকাবাজীতে খাঁটিয়ে আর্চার হেরে ভূত হয়ে গিয়েছিলো। ভয় দেখিয়েছিলো, হেলগা যাতে সে তার স্বামীকে কোনো কথা না বলে। কিন্তু রাজী হয় নি, হেলগা। ও তখন হারিয়েছে ওকে, পারবে আজও। হেলগা চিন্তা করে বললো হিঙ্কল ভেতরে ওকে পাঠিয়ে দাও, আর আমি ওর সঙ্গে একটু একলা দেখা করতে চাই।

 মাদাম ঠিক আছে।

হাই-ফাই সেটের পাশ দিয়ে যাবার সময় যন্ত্রটার একটা সুইচ আর বোতামটা টিপে দিয়ে হিঙ্কন চলে গেলো।

…আর্চার ঘরে এলো এক মুখ হাসি নিয়ে, মাই ডিয়ার হেলগা, দেখা কতোদিন পরে, ভান লাগছে বেশ।

অনেকদিন পরে তাই না?

বাইরে থেকে নিঃশব্দে হিঙ্কল বন্ধ করে দিলো দরজাটা। মাথাটা পিছনদিকে নিশ্চল ভাবে একটু হেলিয়ে হেলগা দাঁড়িয়ে রইলো। ছুরির তীক্ষ্ণতা চোখে। আর্চারকে আপাদমস্তক দেখলে হেলগার ঠোঁট বেঁকে গেলো।

আঃ, অনেক পরিবর্তন দেখছো আমার মধ্যে, তাই না? ভাটার টানে আছি এই মুহূর্তে, তকে সময় এসে গেছে জোয়ার আসারও। সেই হাসিটা মুখে নিয়েই সে বিনা আমন্ত্রণে বসে পড়লো চেয়ারে, তোমাকে সেই আগের মতো এখনও সুন্দর লাগছে হেলগা। কিভাবে যে বয়েসটাকে ম্যানেজ করছো জানি না। তবে হ্যাঁ, কি না হয় টাকা থাকলে। বিউটিশিয়ান, হেয়ার ড্রেসার, ম্যাসাজ আর পোশাক তো বটেই।…আরে আমাকেই.কত সুন্দর দেখাতে পারে দামী পোশাকে, তা আমি জানি, তবে আমাকে তুমিই ডুবিয়ে দিয়ে গেছে। তুমিই।

তুমি কি চাও? প্রশ্ন করলো হেলগা, গলার স্বর যেন খোলা তলোয়ার।

 আমি কি চাই? বলবো কি প্রতিশোধ? সুস্পষ্ট মনে আছে আমার কবে যেন? দশ মাস? তুমি তখন বলেছিলে তোমার হাতে আছে তুরুপের টেক্কা। আজ কিন্তু তুরুপের টেক্কা আমার হাতে। কোনো উত্তর হেলগা না দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ঐভাবে। বলে চললো আর্চার, আমি অনেকদিন ধরে এই মুহূর্তটার স্বপ্ন দেখে আসছি হেলগা, আমার থুথু সেদিন গিলতে হয়েছিলো আমাকেই, এবার গিলতে হবে তোমাকে।..জোরে জোরে আর্চার হাসতে লাগলো।

খুব নামকরা আন্তর্জাতিক অ্যাটর্নী হওয়া সত্ত্বেও পুরনো কিছু ধারণা মনের মধ্যে সযত্নে হেলগার বাবা লালন করতেন। একটা কথা প্রায়ই বলতেন, হেলগাকে, যা দেবে তুমি তাই তুলে নেবে। আমন্ত্রণ করা আত্মরক্ষার চেয়ে অনেক ভালো।

 হেলগার বাবার কথা মনে পড়ে গেলো। খুব একটা ঝাটে হেলগা একবার পড়ে গিয়েছিলো, যখন পড়বে কোণঠাসা হয়ে, তখন কথা বলতে দেবেঅপর পক্ষকে। সেই সুযোগে শত্রুকে চেনার চেষ্টা করবে। শুনবে ভাল করে, দুর্বল জায়গাটা প্রতিপক্ষের খুঁজে পেতে অসুবিধে হবে না।

 জানার চেষ্টা করো শত্রুকে।…বাবা আর কখনও এত ভালো উপদেশ আর দেননি, আজ হেলগা সেটা কাজে লাগাতে চাইলো।

আর্চার একটু থেমে হেসে প্রশ্ন করলো, কিছু বলবে না?

হেলগা বললো, শুনছি আমি।

 হ্যাঁ, একজন ভালো শ্রোতা বটে তুমি। আর মিথ্যে কথা বলতে ওস্তাদ চিরকালই। তবে হেলগা এবার আমার তুরুপের তাস।

 তুমি কি আসল কথায় আসবে? আমার ধারণা তুমি টাকার কথা বলতে এসেছে। এই ছন্নছাড়া তোমার ভাব দেখে মনে হচ্ছে তোমার টাকা চাই।

 আর্চার একটু লজ্জা পেলো, ঐ টাকা চুরি করার আগে ও নিজের চেহারা আর পোশাক নিয়ে সব সময় গর্ব করতো। সার্ট বদলাতো দিনে দুবার, সেলুনে যেতে সপ্তাহে একবার। সব সময়ে ছিমছাম থাকতো, এখন পোকা খাওয়া দাঁতের মত নোংরা পোশাক বেশ অস্বস্তিতে ফেলেছে।

আমার অসুবিধের সময় আমাকে তুমি সাহায্য করতে রাজি না হওয়াতেই এই অবস্থা আমার, মন্দা যাচ্ছে একটু, আর্চার বললো।

অসুবিধের মধ্যে তোমার পড়ার কারণ হলো, তুমি, তছরুপ করে ছিলে তহবিল, জাল করেছিলে সই আর ব্ল্যাকমেল করতে চেয়েছিলে আমাকে, দোষটা তার জন্যে তোমারই, আর কারুর নয়।

এই সুরে ঠিক তোমার কথা বলা উচিত নয় আমার সঙ্গে।আর্চার হঠাৎ রুক্ষ্ম হয়ে উঠলো, ব্যঙ্গ করে বলতে গেলো আমি…..

কিন্তু ঠিক কিনা বলল আমার কথাটা?ঐসবঅপরাধ তুমি করেছিলে কিবলো?…মিথ্যেবাদী আর বলতে চাইছি না।

ক্রমশঃ যে হেলগা নিজের মুঠোর মধ্যে নিয়ে নিচ্ছে পরিস্থিতি, এটা বুঝতে পেরে কঠোর হবার পথ ধরলো আর্চার, তোমার চাকরকে আমি বলেছিলাম গ্রেনভিলের ব্যাপারে আমি এখানে এসেছি।

গ্রেনভিলের নাম শুনতেই হেলগার মুখ একটু ধারালো হয়ে উঠলো, সেটা লক্ষ্য করে আর্চার একটু আমতা আমতা করলো।

বলো, হেলগা সেই রকম তীরে ছুঁড়ে দিলো কথাটা।

 হেলগা খুবই বাজে ব্যাপার, পরে হবে সেসবকথা, বোসো,দাঁড়িয়ে কেন? একটু সময় লাগবে আমার কথা শেষ করতে, আর তোমার মতো একজন দেবীঠায় এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকবে, ভালো দেখায় না সেটা।

 হেলগা একটা চেয়ার টেনে বসলো উত্তর না দিয়ে। আর্চার তাকালো বাইরে খোলা ছাদের দিকে, আঃ চমৎকার, বোতল আর গ্লাস। নিশ্চয়ই তোমার প্রিয় ভোদকা মার্টিনি? ওসব যে কতোদিন খাইনি, একটু দাঁড়াও।ছাদে গিয়ে চট করে হেলগার জন্য ঢালা মদটা এক চুমুকে খেয়ে আরও ঢেলে খানিকটা নিয়ে ফিরে এলো।

এখনো দারুণ ভোদকা মার্তিনি তৈরি করে তোমার ভৃত্যটি। ওরকম কাজের লোক পাওয়াও কম ভাগ্যের কথা নয়।

 নিশ্চল হয়ে হেলগা বসে রইলো কোলের ওপর হাত রেখে, ভাবলেশহীন মুখে ফুঁসছিলো ভেতরে।

হ্যাঁ যা বলছিলাম। বাজে ব্যাপার সত্যিই দারুণ, দুই দিন আগে আমার কাছে এক ভদ্রলোক আসেন, ইতালীয়ান মনে তো হয়, বললেন যদি ওর হয়ে একটা কাজ করে দিই তবে ফী হিসেবে দশ হাজার ফ্র দেবেন। আর্চার মদে চুমুক দেবার সময়টুকু নিলো, সেই যবে থেকে আমি গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়েছিলাম তোমার স্বামীর টাকাটার ব্যাপারে, আর আমাকে সাহায্য করতে তুমিও এগিয়ে এলে না, তবে থেকে আমি টাকা পয়সার বেশ টানাটানিতে আছি। আর মনে হয় সব জায়গায় তোমার স্বামী বদনামও রটিয়ে দিয়েছিলো আমার নামে। কারণ কাজের জন্যে যেখানেই গেছি নাম শোনামাত্র তারা বিদায় করে দিয়েছে আমায়। ফলে লোভ আমি সামলাতে পারিনি এই দশ হাজার ফ্রা-এর। মনে করছি ঈশ্বরের দান,বলতে লাগলো আর এক চুমুক খেয়ে, আসতে পারে এমন সময় যখন কোনো টাকা পয়সা তোমার থাকবে না, যদিও তার সম্ভাবনা নেই জানি, কিন্তু ধরো না কেন সব নষ্ট হয়ে গেছে, তোমার সব টাকা, তোমাকে যখন একটা পোশাকে কাটাতে হচ্ছে দিনের পর দিন। পয়সা নেই নতুন কেনার, খেতে হচ্ছে সস্তার হোটেলে, কিংবা খাওয়াও জুটছে না কোনো কোনো দিন। হয়তো তখন তুমি দেখবে এতদিন যে ধারণা ভালো মন্দ সম্বন্ধে তোমার ছিলো, তা পাল্টাতে হচ্ছে আস্তে আস্তে।

ফলে যখন ঐ লোকটা এলো, আমি মন দিয়ে ওর কথা শুনলাম। আমায় লোকটা বললো তুমি আছো গ্রেনভিলের সঙ্গে এবং তুমি মজে আছে ওর সঙ্গে। আমার মকেল–ওকে আমি মলেই বলবোনজর রাখছে তোমাদের দুজনের ওপর। ও জানে অনেক টাকা তোমার, তাই গ্রেনভিলকে কিডন্যাপ করতে পারলে তোমার কাছ থেকে মুক্তিপণ হিসেবে পাওয়া যাবে অনেক টাকা। খুব দুর্দান্ত আমার মকেলটি আর ভয়ানক চরিত্রের লোক। সত্যি কথা বলতে কি, ও যে মাফিয়া দলের লোক অস্বীকার করেনি সেটা। যেন কিভাবে জানতে পেরেছেও তোমার সঙ্গে পরিচয় ছিলো আমার, পরিচয় নয় শুধু, ঘনিষ্ঠও ছিলাম বেশ, হেলগা ছিলাম তাই না? বরং বলা যা আমরা ঘনিষ্ঠ ছিলাম।

কথা নেই হেলগার মুখে, হাত দুটো খালি শক্ত মুঠি পাকিয়ে ফেলেছে। বলে চললো আর্চার, পূর্ব পরিচয় আছে তোমার সঙ্গে জেনেমুক্তিপণের ব্যাপারে আমার মক্কেল আমায় পাঠিয়েছে কথা বলার জন্যে। আর আমি আজ এখানে সেই জন্যেই।

ঐ লোকটার সঙ্গে আমি সরাসরি কথা বলতে চাই, তোমার মারফৎনয়,কাটা কাটা উত্তর দিলো হেলগা।

 কাজ হবে না তোমার কথায়, আড়ালেই থাকতে চায় আমার মক্কেল। তুমি যদি ফিরে পেতে চাও তোমার মনের মানুষকে, আমার সঙ্গেই কথা বলতে হবে তোমাকে। তাছাড়া ফী-টাও খুব বেশি দরকারী আমার কাছে।

 হেলগা তাকালো ঘৃণা নিয়ে, তাহলে তহবিল তছরুপকারী জালিয়াত ব্ল্যাকমেলার শুধু নও তুমি একজন মাফিয়া দলের সদস্য?

 দুই চোখ আর্চারের লাল হয়ে উঠলো, তোমায় আমি মনে করিয়ে দিতে চাই হেলগা, তুমি এই অবস্থায় আমাকে গালাগালি দিতে পারো না।আর্চার হিংস্র গলায় বলতে থাকলো, কুড়ি লাখ ডলার দিতে হবে গেনভিলকে ফিরে পেতে চাইলে। তোমাকে আমার মকেল সময় দিচ্ছে তিনদিনের, টাকাটা জমা দেবে জোগাড় করে একটা সুইস ব্যাঙ্কে। আজ থেকে তিনদিন পরে, এই সময় ঠিক আমি আসবো তোমার কাছে, ঝকিটা তোমার হাতে। গ্লাসটা শেষ করে সে নামিয়ে রাখলো। মনে করিয়ে দেওয়া তোমাকে ভুল হবে না যে তুমি লেনদেন করতে যাচ্ছো মাফিয়াদের সঙ্গে, অতএব খুব বেশি সাবধান থাকবে। কিছু উল্টো পাল্টা করলে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে গ্রেনভিলের, সেটা জানিয়ে রাখতে বলেছে মক্কেল। যদি যোগাযোগ করো পুলিশের সঙ্গে গ্রেনভিল নাও থাকতে পারে বেঁচে। আর একটা কথা বলেছে মর্কেল, টাকা তিনদিনের মধ্যে না পেলে, গ্রেনভিলের একটা কান পরদিন পার্শেল করে তোমার কাছে পাঠানো হবে।

সাদা হয়ে গেলো হেলগার মুখ, কিন্তু ঠিক আছে নার্ভ। খুবই বর্বরোচিত জিনিসটা সন্দেহ নেই, শুনতে আমারও খারাপ লাগছে, কিন্তু ঐ রকমই মাফিয়াদের কাজ। ওরা বড় নিষ্ঠুর। মনে কোরো না যে ওরা ভয় দেখিয়েছে মিথ্যে। আগেও ঘটেছে ও ধরনের ঘটনা, নিশ্চয়ই তোমার জানা আছে সেগেদ্ভিদের ব্যাপারে। শোনো আমার কথা, কত আছে তোমার স্টকে দেখে নাও। ব্যাপারটা মিটিয়ে নাও কিছু বিক্রি করে, অবশ্য তুমি যদি ফিরে পেতে চাও গ্রেনভিলকে, ওকে আমি দেখিনি এখনও, কিন্তু তুমি ওকে যেহেতু পছন্দ করেছে, তাই ধরে নিতেই হবে যে ও খুব সুন্দর দেখতে। চলে গেলে একটা কান, নিশ্চয়ই ও তত রূপবান থাকবেনা। একটু দরজার দিকে এগিয়ে আর্চার বললো, প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম আর একটা কথা, এই খামটা আমার মক্কেল পাঠিয়েছেন তোমার জন্যে। টেবিলের ওপর মুখ আঁটা খামটা আর্চার রাখলো, আমি শুনেছি গ্রেনভিল সাহস একটু বেশি দেখাতে গিয়েছিলো। ভুল করেছিলো, কারণ মাফিয়াদের হাতে যে ও পড়েছে তা জানতো না।আর একটু সময় নিয়ে ও বললো, হেলগা ঠিক আছে, আবার তিনদিন পরে আসবো আশা করি। গুড বাই।

মার্সিডিজে চড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে চলে গেল আর্চার।

হাতুড়ির দাপাদাপি বুকের মধ্যে নিয়ে হেলগা খুললো খামটা। বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে পোলারয়েড ক্যামেরায় তোলা রঙিন তিনটে ফটো। ছবির দিকে তাকিয়ে তার সারা শরীর আতঙ্কে কেঁপে উঠল। হেলগা প্রায় চিৎকার করে পড়ে যাচ্ছিলো, সামলে নিলো কোনো রকমে। হিঙ্কল ঘরে ঢুকলো নিঃশব্দে।

যা অনুমান করেছিলো আর্চার ঠিক তাই হলো, হেলগ ফটোগুলো দেখে ভেঙে পড়েছে। একেবারে। মারামারি, রক্তক্ত পছন্দ হয় না ওর।

মার দাঙ্গা সিনেমাতে থাকলে সহ্য করতে পারতো না হেলগা। যখন কোনো লোককে টিভিতে খুন বা মারধোর করার দৃশ্য দেখাতে হেলগা তখনই টিভি বন্ধ করে দিতো, আর নেই হেলগার সেই ইস্পাতের কাঠিন্য, ভেঙে পড়েছে একেবারে, কাঁদছে ফুঁপিয়ে।

 ওকে ওরা মেরেছে, জানতাম আমি মারবে। ওকে ওরা মেরেছে, হেলগা ককিয়ে উঠলো।

খুব বিরক্ত হয়ে হিঙ্কল ওর দিকে তাকালো। তারপর তুলে নিলো ফটোগুলো। ভাল করে দেখার পর, ঠোঁট জিভ দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে টেবিলে ফটোগুলো সাজিয়ে রাখলো। তারপর হেলগার কাঁধে আলতো ভাবে হাত রেখে বললো, মাদাম আমি বলি কি, উতলা হবেন না এত। শক্ত করুন মনকে।

 হেলগা বড় বড় চোখ করে তাকালো, বিহ্বল দৃষ্টি।দেখো কি হাল ওর করেছে ওরা। শয়তান গুলো। টাকা চাই এখন আমার। আমি…হেলগা আবার কাঁদতে লাগলো।

হাই-ফাই সেটের কাছে গিয়ে হিঙ্কল বন্ধ করলো সুইচটা। তারপর খুব পাওয়ার ফুল ম্যাগনিফাইং গ্লাস একটা ড্রয়ার থেকে নিয়ে দেখতে লাগলো ফটোগুলো। মনে হচ্ছিলো প্রথমে ঠিকই, মেঝেতে চিৎ হয়ে গ্রেনভিল পড়ে আছে। চোখ বন্ধ, রক্ত মুখে, ভাল করে ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে দেখার পর মাথা নাড়লল হিঙ্কল, টেবিলে নামিয়ে রাখলো ছবিগুলো।

মাদাম, যদি আপনি পাগলামি থামান তবে বলবো একটা কথা, গলার স্বর হিস্কলের বেশ কঠিন।

 হেলগা চোখের জলে মুখ ভাসিয়ে মাথা তুললো, একলা থাকতে দাও আমায়, যাও।

মাদাম, বলার আছে একটা কথা।

কি কথা?

হেলগার দিকে একটা ফটো তুলে বাড়িয়ে বললো, একেবারে টমাটো সসের মত দেখতে এটাকে।

চমকে উঠলো হেলগা, কান্না বন্ধ করে বলে উঠলো, কি বললে?টমাটো সস?…তুমি কি পাগল হয়েছে? কি বলছো যা তা? গলার স্বর হেলগার কাঁপছিলো।

 এখানে মিঃ রলফের চাকরী করতে আসার আগে এক ভদ্রলোকের কাছে আমি সিনেমাতে চাকরীকরতাম। কীভাবে মেক আপ করা হয়…ওঁর কাছ থেকেই শিখেছিলাম। টমাটোর সস ব্যবহার করা হতো রক্ত দেখাবার জন্যে।

তুমি কি বলতে চাইছো? হেলগা আবার ফিরে আসতে লাগলো তার পুরোনো মেজাজে।

বলতে চাইছি আমি, আদৌ মিঃ গ্রেনভিল আহত হননি। দেখা যাবে যে জালিয়াতি করা হয়েছে। ফটোগুলোতে।

হিঙ্কল, সত্যিই তুমি তাই মনে করো? তোমার ধারণা কি ওকে ওরা মারে নি?

আমার তো মনে হয় অস্বাভাবিক মারধোর করাটাই…।

শয়তান,শক্ত হয়ে উঠলো হেলগার মুঠি, কিন্তু ওকে বের করে আনতেই হবে ওদের হাত থেকে।

মাদাম একটা প্রশ্ন করবো কি?

 হায় ভগবান, হিঙ্কল দরকার নেই এতো ভদ্রতা করার। ঠিক নেই আমার মাথা। বলো কি বলছিলে? 

আবার হিঙ্কল মাথা নাড়লল, আবার তার পুরনো মেজাজে হেলগা ফিরে এসেছে, কেটে গেছে। ছেলেমানুষী পাগলামী।

এই যে লোক দুটো ধরে নিয়ে গেছে মিঃ গ্রেনভিলকে, ওরা ঢুকলে কি করে সে কথা কি একবার ভেবে দেখেছেন?

ওর কি সম্পর্ক তার সঙ্গে? ওরা হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে চলে গেলো ওকে নিয়ে, মেজাজী গলায় হেলগা বললো।

কিন্তু কি করে ঢুকলো? নাছোড়বান্দা হিঙ্কল।

 কেন, সদর দরজা দিয়ে?

সদর দরজা, নিজের হাতে আমি হুড়কো দিয়েছি, বন্ধ করেছি তালা।

 ভুলে গিয়েছিলে নিশ্চয়ই, হেলগা অধৈর্য হয়ে উঠলো।

 শুতে যাবার আগে নিজের হাতে আমি বন্ধ করেছি দরজা।

ওর দিকে হেলগা তাকিয়ে মাথা নাড়লো। আমি মাফ চাইছি। ঠিক নেই আমার মাথার।

ঠিক আছে, যাই হোক সদর দিয়েই ঢুকেছে ঐ লোক দুটো। আচ্ছা মিঃ গ্লেনভিল কি বারান্দায় বাথরুমে গিয়েছিলেন একবারের জন্যে।

আরও বড় হয়ে গেলো হেলগার চোখ।

হ্যাঁ, কিন্তু…

তাহলে মনে হয় আমার সদরের হুড়কো আর তালা খুলে ছিলেন মিঃ গ্রেনভিলই।

তার মানে বলতে চাইছো তুমি, মিঃ গ্রেনভিল চুরি হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা নিজেই বন্দোবস্ত করেছেন? তীক্ষ্ণ গলায় হেলগা চেঁচিয়ে উঠলো।

 জাল এই ফটোগুলো। এখানে মিঃ গ্রেনভিলই একমাত্র ছিলেন, যার পক্ষে সম্ভব ছিলো দরজা খোলা। আর এবং এছাড়া কি অন্য কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়?

 না, আমাকে ও ভালবাসে। ও কখনো এ কাজ করতে পারে না। তোমার কথা আমি শুনবো না। জানি আমি, ওকে তুমি ঘৃণা করো। কিন্তু ওকে ভালবাসি আমি। আমি শুনবো না তোমার কথা। ..

 আপনার কাছে মিঃ আর্চারকে পৌঁছে দিয়ে চলে যাবার আগে এই হাই-ফাই টেপরেকর্ডারটা আমি চালিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছিলাম। হিঙ্কল একটুও বিচলিত না হয়ে বললো, টেপ করা হয়ে গেছে আপনার আর মিঃ আর্চারের কথাবার্তাগুলো। ওর গাড়ির নম্বরটাও আমি টুকে রেখেছি। এবার পুলিশকে আমার মতে খবর দেওয়া উচিত।

 পুলিশ? না, এখন মাফিয়াদের হাতে ক্রিস। টাকা না দিলে ওরা ভয় দেখিয়েছে, ওর কান কেটে দেবার। হেলগা লাফিয়ে উঠলো, টাকা? কি দাম টাকার? আমি ওকে পাবার জন্যে টাকা দেবো। দেবোই। আমি তোমার বাজে কথায় কান দেবো না। খুবই ঘৃণ্য কথা বলছো তুমি, কারণ ওকে তুমি ঘৃণা করো। ফিরে পাবার জন্যে ওকে যতো টাকা লাগে দেবো।এক দৌড়ে হেলগা শোবার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো দড়াম করে।

চুপ করে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে খোলা ছাদে ধীরে ধীরে এসে হিঙ্কল দাঁড়ালো। থমথমে মুখ। দেখতে লাগলো এক দৃষ্টিতে হ্রদের জল, একরাশ চিন্তা মাথায়।

মার্সিডিজ গাড়ির সিটে ভারী শরীরটা দাখিল করে ক্যাসারেট হয়ে আর্চার চলে গেলো প্যারাডাইসের দিকে।

 বেশ খুশি মনে মনে, কুত্তিটার পেটে নিঃসন্দেহে ছুরি চালিয়েছে, বেশ হয়েছে। আর্চার নিজের মনেই হেসে উঠলো। দুঃখের কথা এই যে, যখন ঐ ছবিগুলো হেলগা দেখলো তখন তার মুখের ভাবটা দেখা হলো না আর। তবে কল্পনা করা যায় যে নিশ্চয়ই একেবারে ভেঙে পড়বে। রক্তাক্ত অবস্থায় প্রেমিককে দেখলে আর ওর মনের জোর থাকবে না, ভেঙে পড়বে। আর দেরি করবে না টাকা দিতে।

দশ লক্ষ ডলার। যতগুলো খুশি স্যুট পরতে পারবে, আর নিজের হাতে চুল কাটতে হবে না, নাপিতের সেলুনে যেতে পারবে সপ্তাহে সপ্তাহে।বড়ো হোটেলে পছন্দ মতো থাকবে, ভাল খাবে। দয়া দেখানোর কোন মানেহয় না হেলগাকে।কারণ, আর্চারের বেলায় ওতো দেখায় নি। প্রতিহিংসা কি মিষ্টি।

 মাফিয়াদের হাতে গ্রেনভিল পড়েছে, এই পরিকল্পনাটা কাজে লাগাতে পেরে খুব আত্মপ্রসাদ মনে মনে লাভ করলো আর্চার। খুব হাসবে গ্রেনভিলও। দূর ছাই, এসব কথা থাক। এখন পালন করতে হবে একটু উৎসব, তার পরেই পাকালো চোখ। না, না লুকিয়ে রাখতে হবে গ্রেনভিলকে, যতক্ষণ না পাওয়া যায় টাকাটা। যাই হোক যাওয়া যাক এক বোতল শ্যাম্পেন নিয়ে। এটা বেশ পছন্দ করবে গ্রেনভিল।

লুগানোতে গাড়ি পার্ক করার একটা জায়গা একটু চেষ্টা করে খুঁজে নিলো।দু বোতল শ্যাম্পেন, কিছু শুকনো মাংস আর চীজ একটা দোকান থেকে আর্চার কিনলো। ভালই হবে ভোজটা।

তারপর আর্চার নিজের ভাড়া করা বাড়ির দিকে মার্সিডিজ চালিয়ে রওনা দিলো। হেলগা এতক্ষণে নিশ্চয়ই হিসেবপত্র করতে বসে গেছে নিজের স্টকের। বিক্রি যাই করুক না কেন, ক্ষতি হবে ওর। উচিত সাজা দেওয়া গেছে কুত্তিটাকে। ওর কবর ওটাই, হেসে ফেললো আর্চার। কল্পনা নেত্রে দেখতে পেলে, হেলগা তার সাধের রোলস হাঁকিয়ে যাচ্ছে ব্যাঙ্কে। ভয় বুকের মধ্যে। প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে খাসা। এখন তার হাতে তুরুপের তাস।

বাড়ি পৌঁছে দরজা খুললো মালপত্র নিয়ে। ক্রিস, কাজ হয়েছে, আর্চার চেঁচিয়ে বললো। উত্তর এলো না কোন। খুঁজলে বাড়ির সর্বত্র, বাথরুম, রান্নাঘর, ফাঁকা বাড়ি। গ্লেনভিল নেই।