৩. সুসান শুয়ে পড়ল

একাদশ পরিচ্ছেদ

০১.

সুসান শুয়ে পড়ল। কিন্তু ঘন্টার পর ঘন্টা শুয়েও সুসানের আজ ঘুম এলো না।

যেখানে কেউ খুন হয়, লোকে সেই বাড়িকে ভয় পায়। এটাও হয়ত ভৌতিক বাড়ি হয়ে যাবে।

এখানে আসার পর থেকে তার মনে হচ্ছে আন্ট কোরা তার কাছাকাছি আছে।

একটা আসবাবপত্রের শব্দ হল। চুপি চুপি কেউ পা ফেলে আসছে নাকি? সুসান আলো জ্বালাল…. কিছু না…নার্ভাস হচ্ছে ….ভেবো না …চোখ বোজ…।

ওটা কি? …কেউ গোঙাচ্ছে….মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে….

সুসান বলল, আমি আর এসব নিয়ে ভাবব না… ভাবব না।

আবার …আবার গোঙানি …আরও জোরে কেউ মরতে চলেছে…

এবার আর কল্পনা হয়। সুসান আলো জ্বালিয়ে শুনতে লাগল। গোঙানিটা সত্যি, পাশের ঘর থেকে আসছে।

হঠাৎ সুসান লাফিয়ে উঠে গিলফ্রিস্টের দরজায় কড়া নাড়ল। অপেক্ষা না করে ঢুকে পড়ল। আলো জ্বলছে ঘরে, গিলক্রিস্ট বিছানায় বসে। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় মুখটা বিকৃত।

কি হয়েছে?

বলতে পারছি না, বিছানা থেকে নামতে গিয়ে একটা বমির দমক এল। ডাক্তারকে একবার ফোন করে দাও। কিছু একটা পেটে গেছে।

ফোনের নম্বরটা দাও।

কে? গিলক্রিস্ট? লিড়স লেনের? ঠিক আছে আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।

 দশ মিনিট পর ডাক্তার এল। সুসান দরজা খুলল।

রুগী দেখার পর ডাক্তার বলল, এ্যাম্বুলেন্স আনতে বল, ওকে হসপিটাল নিয়ে যেতে হবে।

তাহলে ওর অবস্থা ভালো নয়?

হ্যাঁ আমি মরফিয়া দিয়েছি। যন্ত্রণা কমার জন্য। কি খেয়েছিল?

 ম্যাকারনি, কাস্টার্ড, পুডিং আর কফি।

তুমিও একই জিনিস খেয়েছ?

হা।

ও আর কিছু খায়নি তো?

না, আমরা কিংস আর্মে লাঞ্চ খেয়েছি।

তুমি মিসেস ল্যান্স কোয়েনেটের বোনঝি।

হা।

 বীভৎস খুন। আশা করি ওরা অপরাধীকে ধরতে পারবে।

হ্যাঁ।

এ্যাম্বুলেন্স এলে ডাক্তার গিলফ্রিস্টকে নিয়ে চলে গেলেন। উপরে গিয়ে সুসান ঘুমিয়ে পড়ল।

.

০২.

সকাল বেলায় হাসপাতাল থেকে ফোন এল। ডাক্তার বলল, কয়েক দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যাবে। ভাগ্যি তাড়াতাড়ি ফোন করেছিলে, প্রায় মৃত্যুর দরজায় পৌঁছে গেছিল। তিনি আবার বললেন।

সুসান ঠিক মনে করে দেখত ও এমন কিছু খেয়েছে যা তুমি খাওনি?

আমার তেমন কিছু মনে পড়ছে না তো!

সত্যি কি ফুড পয়েজনিং হয়েছে?

ডাক্তার বললেন, আর্সেনিক।

আর্সেনিক? হতভম্ব হল সুসান, কেউ ওকে আর্সেনিক খাইয়েছে?

ব্যাপারটা সেইরকম দাঁড়াচ্ছে।

আচ্ছা সে কি নিজে আর্সেনিক খেয়েছিল।

আত্মহত্যা? না না একথা সে স্বীকার করেনি।

অজান্তে আর্সেনিক খেয়ে ফেলেনি তো?

 সেই কথাই ভাবছি।

 হঠাৎ মনে পড়ে যেতে সুসান বলল, ওতো ওয়েডিং কেক খেয়েছিল। আমি সে কেক খাইনি।

ওয়েডিং কেক? তিনি বললেন–অস্বাভাবিক, কে পাঠিয়েছে ও জানে না? যে বাক্সটাতে কেকটা ছিল, সেটা আছে?

বলতে পারছি না, আমি দেখছি।

 আচ্ছা পার্শেলের প্যাকেটটা কোথায় আছে জান?

সেটা পাওয়া গেল না।

 তুমি এখানে থাকবে?

 হা।

ভালো, পুলিশ তোমায় কিছু প্রশ্ন করতে পারে। এটা কে পাঠাল তুমি জান না।

মাথা নাড়ল সুসান।

আমি ওর সম্বন্ধে কিছু জানি না।

মেয়েটা বেশ শান্তশিষ্ট ছিল। পোষ্টের মাধ্যমে ওয়েডিং কেক, মনে হয় কোনো হিংসুটে মেয়ে। কিন্তু কে ওকে হিংসা করবে?

জানি না।

কি জানি এই লীচেট সেন্ট মেরীর কি হল। প্রথমে বীভৎস খুন, তারপরে বিষ দিয়ে মারার চেষ্টা।

ডাক্তার চলে গেলে সুসান দরজাটা খোলা রেখে ওপরে তার কাছে গেল।

সুসান একটা ড্রয়ারে ছবি পেল। কোরার চেহারা বেশ রোগা, একজন লম্বা লোককে জড়িয়ে ছবি তুলেছে। বোধহয় ইনিই পীরে ল্যান্স কোয়েনেট। তারপর সুসান একটা চিঠি নিয়ে পড়তে লাগল। পেছন থেকে হঠাৎ এটা গলার স্বর শুনে চমকে উঠল।

সুসান কি ব্যাপার?

 জর্জ তুমি কি করে এলে?

নিচের দরজা খোলো ছিল।

একটু থেমে আবার বলল : আমি ফোন করেছিলাম, গ্রেগ বলল, তুমি বাড়ির দেখা শোনার জন্য এখানে এসেছো। ভাবলাম আমি তোমায় সাহায্য করতে পারব।

তুমি সত্যি করে বল এখানে কেন এলে?

ছোটখাটো ডিটেকটিভের কাজ করতে।

আন্ট কোরা অন্ত্যেষ্টির দিন যে কথাগুলো বলেছিল, সেগুলো কি অর্থহীন বা তার পেছনে কিছু ছিল। আমি যখন এলাম তখন তুমি একটা চিঠি পড়েছিল, চিঠিতে কি লেখা আছে? কিছু দরকারী কথা আছে ওটাতে?

না না ঠিক –

আমি দেখতে পারি?

বিড়বিড় করে জর্জ চিঠিটা পড়ছিল।

এতদিন তোমাকে দেখে আনন্দ পেলাম…. ভালো মনে হচ্ছে…বাড়িতে সুস্থ শরীরে পৌঁছেছে…একটু অবসন্ন….

এর যে কোনো মানে হতে পারে, তার স্বাস্থ্য সম্বন্ধেও হতে পারে, অথবা কোনো বন্ধু সম্বন্ধেও কোনো গল্পও হতে পারে।

হ্যাঁ অনেক কিছুই হতে পারে। তিনি কোরাকে কি বলেছিলেন। কেউ কি জানে?

তারপর সুসান বলল, আপনি মনে হয় জানেন গিলফ্রিস্ট আর্সেনিক বিষ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

জর্জ চমকে উঠল।

কেউ ওকে বিষ দেওয়া ওয়েডিং কেক পাঠিয়েছিল।

জর্জ একটা চেয়ারে বসে বলল : তাহলে দেখা যাচ্ছে রিচার্ড ভুল করেনি।

.

০৩.

পরে ইনসপেক্টর মর্টন কটেজে এলেন। চোখে বুদ্ধির ছাপ।

আপনি কিছু জানেন মিসেস ব্যাঙ্ক গিলফ্রিস্ট সম্বন্ধে?

 যে কাডবোর্ড বাক্সটা নিয়ে গেছিলেন ডঃ গ্রোকটর তাতে আর্সেনিক পাওয়া গেছে।

মাথা নাড়ল সুসান।

আমি অবাক হয়ে গেছি। আচ্ছা পোষ্টাফিসের ছাপ কিছু বোঝা গেল না?

ভুলে গেছেন পার্সেলের প্যাকেটটা পাওয়া যায়নি। তাছাড়া ওটা বোধহয় পোষ্টেই আসেনি; এখানকার পিয়ন এখানে ঐরকম কিছু দিয়েছে বলে মনে করতে পারছে না।

আচ্ছা গিলক্রিস্ট পুরো কেকটা খেয়েছিলে কি? বলতে পারছি না, আমাকে একটুকরো দিতে চেয়েছিলো আমি খাইনি।

আমি একটু উপরে যেতে পারি?

 নিশ্চয়ই।

সুসান উপরে এসে বলল : কাগজপত্রগুলো একটু ওলট-পালট করেছি আন্ট কোরার জিনিসপত্র দেখার সময়। তবে ডাক্তার আসার পর আমি আর গিলফ্রিস্টের ঘরে ঢুকিনি।

কিন্তু কে ওকে মারতে চাইবে? তার চোখ সুসানের চোখে, সুসান অস্বস্তিবোধ করল।

তুমি জান না? জিজ্ঞেস করল।

না, আমি জানি না।

তাহলে আমাদের খুঁজে দেখতে হবে।

.

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

০১.

একটা আধুনিকভাবে সাজানো ক্যাফেতে বসেছিলেন দুজন বৃদ্ধ।

সিরাফে চুমুক দিতে দিতে পোয়ারো মিঃ গোবির দিকে দেখছিলেন।

মিঃ গোবির গুণ হল তিনি ভালো তথ্য সংগ্রহ করেন। গোবির মত কেউ তাড়াতাড়ি খবর সংগ্রহ করতে পারে না।

তোমার জন্য যতখানি সম্ভব যোগাড় করে দিয়েছি, মিঃ গোবি পাশের ফায়ার প্লেসের দিকে চেয়ে বললেন, আজকালকার ছেলেগুলো ঠিকমত কাজ করতে চায় না।

একটা নোটবুক বার করে মিঃ গোবি বলতে লাগলেন–প্রথমে জর্জ ক্রসফিল্ড। রেস আর জুয়া খেলে, মাঝে মাঝেই ফ্রান্সে আর মস্কোতে যায়। কেসিনোতে অনেক সময় কাটায়। তার ভ্রমণের খরচের চেয়ে অনেক বেশি টাকা তোলে। সম্প্রতি স্টক এক্সচেঞ্জে ঢুকেছিল, কিন্তু ভাগ্য খারাপ, কিছু করতে পারেনি। তারপর থেকে ওর মেজাজ ভালো ছিল না, রিচার্ড মারা যাওয়ার পর বেশ ভালো মেজাজে আছে।

তুমি যে বলেছিলে ঐ বিশেষ দিনটার কথা জিজ্ঞেস করতে। সেদিনও রেস খেলতে হাস্ট পার্কে যায়নি। বোধহয় গেডিংটন থেকে কোথাও চলে গেছিল ট্রেনে করে। লীচেট সেন্ট মেরীর কাছের স্টেশনে নেমে বাসে করে লীচেট সেন্ট মেরীতে যাওয়া যায়। বাসে বেশ ভীড় থাকে। লীচেট সেন্ট মেরীতে ওকে কেউ দেখেনি, দেখা সম্ভব নয়।

গোবি নোটবুকের পাতা ওল্টালেন, মিঃ মাইকেল গ্রেগ, টাকা চেনে, টাকা উপার্জনও করছে। মাইকেলের স্ত্রী ছোটখাটো অভিনয় করে স্বামীকে খুব ভালোবাসে। ওদের নিয়ে একটা রটনা চলছিল, মিঃ রিচার্ড এবারেনথীর মৃত্যুর পর রটনাটা ছড়িয়ে পড়েছে। শেষ ব্যাপারটার উপর মিঃ গোবি জোর দিলেন।

এই বিশেষ দিনটিতে মিঃ শেন বলেছিলেন নাটক সম্বন্ধে কথা বলতে তিনি রোজেনহেম ও মিঃ অস্কার লুইসের সাথে কথা বলতে যাচ্ছেন কিন্তু সে দেখা করেনি। হাঁটা পথে কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনটে বাজার আছে, সেখানে গাড়ী পাকু মারে রাখলে কেউ নজর দেবে না, আমরা মিঃ শেনকে তালিকার ভেতরে রাখছি।

নিশ্চয়ই।

পোয়ারো বলল, এখনও বোঝা যাচ্ছে না, ঠিক কারুর উপর সন্দেহটা কেন্দ্রীভূত করা যাচ্ছে না, তুমি বলে যাও।

মিঃ গোবি আবার বললেন, মিঃ এবং মিসেস ব্যাঙ্কস, ওরা বলেছে ওরা সারাদিন বাড়িতে ছিল। কিন্তু মিসেস ব্যাঙ্কস একটার দিকে গ্যারেজ থেকে গাড়ী বের করে কোথাও গেছিল, পাঁচটা নাগাদ ফিরেছিল।

মিঃ ব্যাঙ্কস সেদিন কি করেছিল জানা যায়নি। অফিস থেকে বলেছে ও একটু উত্তেজিত অবস্থায় ছিল, যেদিন শেষবার কাজে যায়।

ওহ গোবি তুমি কি করে এতসব খবর জোগাড় কর। পোয়ারো বলল।

 এবার আমরা মিঃ এবং মিসেস টিমোথি সম্বন্ধে বলব, গোবি আরম্ভ করলেন।

ওদের প্রচণ্ড টাকার অভাব, বেশ ভালো খাবার খেতে চায়। টিমোথি পঙ্গু। মিঃ টিমোথি কাউকে বেল বাজিয়ে না ডাকলে কেউ ঘরে ঢোকে না, অন্ত্যেষ্টির পরের দিন ওর মেজাজটা ভীষণ খারাপ ছিল। সেদিন সাড়ে নটা থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত ওকে কেউ দেখেনি।

আর মিসেস্ এবারেনথী?

সে গাড়ীতে করে এণ্ডারবি থেকে বেরিয়েছিল। ক্যালস্টোন নামে একটা গ্যারাজে পায়ে হেঁটে এসে বলেছিল কয়েক মাইল দূরে তার গাড়ীটা খারাপ হয়ে গেছে।

ও এগারটার সময় সরাইখানায় গেছিল। সেখান থেকে মাইল খানেক গিয়ে কারুর গাড়ীতে করে স্টেশনে যেতে পারে–যা হোল এসব ভাবনা তোমার।

গাড়ীটা কী খারাপ হয়েছিল?

তুমি ঠিক বিবরণটা চাও?

ঠিক বলা যায় না, দক্ষ মিস্ত্রি তাড়াতাড়ি সারিয়ে দিতে পারে, আবার নতুন লোকের অনেক সময় লাগতে পারে। পোয়ারো বলল, ওদিন এণ্ডারবি থেকে চাকরদের দৃষ্টি এড়িয়ে বেরিয়েও থাকতে পারেন।

মিঃ গোবি বললেন, বোধহয় না, মিসেস্ এবারেনথী অ্যান্টহুইসলকে কথা দিয়েছিল এণ্ডারবি দেখাশোনা করার জন্য।

.

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

০১.

এরকুল পোয়ারো ভুরু কোঁচকাল বার্কশায়ার কাউন্টির ইনস্পেক্টর মর্টনের কার্ড দেখে।

জর্জ ওকে ভেতরে নিয়ে এস, আর ঐ পুলিশ ভদ্রলোক যা পছন্দ করে নিয়ে এসো।

মর্টন সোজাসুজি কাজের কথা পাড়লেন।

আমি লণ্ডনে এসেছিলাম, আপনার ঠিকানা পেয়ে ভাবলাম বৃহস্পতিবারের তদন্ত সম্বন্ধে আলোচনা করে যাই।

হা আমার তদন্ত করলাম, যাদের জিজ্ঞেস করলাম, সবাই সন্তোষজনকভাবে তাদের সেদিনের সেই সময়ের অবস্থান বলল। না এটা ঠিক সাধারণ খুন নয় মিঃ পোয়ারো। এটা যে করেছে সে এটাকে সাধারণ হিসেবে দেখাতে চেয়েছে। গিলফ্রিস্ট খুন করতে পারে। কিন্তু মোটিভ পাওয়া যাচ্ছে না। ওদের দুজনের বেশ ভাল সম্পর্ক ছিল।

সে থামল।

সে জন্যই আপনার সাহায্যের জন্য এসেছি। কোনো কারণে নিশ্চয়ই ওখানে গেছিলেন?

মর্টন বিস্তৃতভাবে ওয়েডিং কেকের ঘটনাটা বলল।

 পোয়ারো দীর্ঘশ্বাস টানলো।

আমি গিলক্রিস্টের ব্যাপারে অ্যান্টহুইসলকে সতর্ক করে দিয়েছিলাম। তবে বিয়ের কথা ভাবিনি। আমি আবার কুড়ুলের আশা করেছিলাম।

আপনি আর একটা খুনের আশা করেছিলেন কেন?

আস্তে আস্তে মাথা নাড়লেন পোয়ারো।

ব্যাপারটা অন্ত্যেষ্টির পর থেকে আরম্ভ হয়। অ্যান্টহুইসলের কথাগুলো পোয়ারো বললেন।

মর্টন বুদ্ধিমান, যে ঠিক পয়েন্টগুলো নিল বেছে। তাহলে মিঃ এবারেনথীকে বিষ দেওয়া হয়েছিল?

সম্ভাবনা আছে।

আর দেহটা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনো প্রমাণ নেই।

ঠিক বলেছ।

তবে কিছু লোক আছে যারা কোরাকে ঐ কথাটা বলতে শুনেছে। এবং বিশেষ একজন কেউ ভেবেছে কোরা পরে কথাটাকে আরও বিস্মৃতভাবে বলবে।

এবার তাহলে বুঝতে পারছো, তদন্তের সময় কেন আমি উপস্থিত ছিলাম।

তারপরেই মিস গিলফ্রিস্টের উপর আক্রমণ

একটা কাজ করা যেতে পারে, যে প্যাকেটে কেকটা এসেছিল তার উপর হাতের লেখাটা পরীক্ষা করা যেতে পারে।

পার্শেলটা পোস্টে এসেছিল কিনা বোঝা যাচ্ছে না। পোষ্টম্যান নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না। যদি পার্শেলটা দিয়েও থাকে তবে সেটা কারুর চোখে পড়ল না যতক্ষণ না গাথরী।

মর্টন বলল, হ্যাঁ, আমি ভাবছি মিঃ গাথরী ল্যান্স কোয়েনেটের বন্ধু ছিল। সে সহজেই প্যাকেট ফেলে দিয়ে যেতে পারে প্যাকেটের উপরে ভুয়ো পোস্টাল ছাপ দিয়ে। একটু থেমে বলল, আরও একটা সম্ভাবনা আছে।

মিঃ জর্জ ওখানে গেছিল। উদ্দেশ্য অন্ত্যেষ্টিতে যোগ দেওয়া, রাস্তায় গাড়ী খারাপ হয়েছিল। ওর সম্বন্ধে কিছু জানেন মিঃ পোয়ারো?

আমি সামান্য কয়েকটা তথ্য জোগাড় করেছি। আমি একটু ছদ্মবেশ নিয়ে উত্তরে গেছিলাম বাড়ি কেনার আছিলায়। উই-এন-এ-অব-সি-ওর প্রতিনিধি হয়ে।

ইউনাইটেড নেশনস-এইড-এর রিফিউজি সেন্টার অর্গানাইজেশান।

মর্টন হাসল।

.

চতুর্দশ পরিচ্ছেদ

০১.

এরকুল পোয়ারো লক্ষ্য করলেন, প্রধান দরজাটা তালাবন্ধ। তবে বাগানের দিকে আর একটা ছোট দরজা আছে। সন্ধ্যের আগে সেটা বন্ধ করা হয় না। প্রায় একটার সময় যখন মালী ও বাড়ির লোক খেতে গেছিল তখন পোয়ারো ঐ দরজাটা দিয়ে সবার অজান্তে রিচার্ডের শোবার ঘরে চলে এলেন।

হ্যাঁ এটা করা হয়ে থাকতে পারে, তবে সত্যি করা হয়েছে কি? তিনি একটা প্ল্যান করেছেন। তবে তার আগে বৃদ্ধ ল্যান্সকম্বের সাথে একটু কথা বলা দরকার।

জ্যানেটের মত উদ্ধত নয় ল্যান্সকম্ব, হাতের পালিশের চামড়াটা রেখে বলল : বলুন।

পোয়ারো বললেন : তুমি মিসেস এবারনথীকে বলেছ যে তুমি অবসর নেওয়ার পর বাইরের লজটাতে থাকার ইচ্ছে প্রকাশ করেছ?

হা।

তোমার প্রভুর মৃত্যুতে নিশ্চয়ই খুব আঘাত পেয়েছো?

হা। ওরকম প্রভু আর হবে না।

ওভার কোটটা নিয়ে পোয়ারো বাইরে বেরিয়ে হেলেনের সাথে দেখা করলেন।

 গোলাপ গাছে জল দিচ্ছিল হেলেন।

আর কিছু পেলেন? সে জিজ্ঞেস করল।

 না, পাব আশাও করিনি।

হেলেন বলল : এটা বোধহয় একটা অলীক ব্যাপার।

কুড়ুল দিয়ে আক্রমণ?

 কোরার সম্বন্ধে বলছি না।

আমি কিন্তু কোরা সম্বন্ধে ভাবছি। ওকে খুন করার দরকার পড়ল কেন? মিঃ অ্যান্টহুইসল বলেছেন যে কোরা অন্ত্যেষ্টির সময় একটা অস্বাভাবিক কথা বলেছিল তাই না?

হা, কিন্তু আমি জানি না।

পোয়ারো কথাটা চেপে ধরলেন।

কিভাবে অস্বাভাবিক? অপ্রত্যাশিত? বিস্ময়কর?

আমার কিছু মনে পড়ছে না।

 তুমি কিছু শুনে থাকতে পার, কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ বা কিছু ভাঙার শব্দ।

ভুরু কুঁচকে হেলেন মনে করার চেষ্টা করল।

 না, আমার তা মনে হয় না…।

এখন আমায় বল, কোরাকে ভালোভাবে চিনত কে?

মনে হয় ল্যান্সকম্ব।

 হেলেন বলল, ল্যান্সকম্বের পরে আমিই ওকে ভালো করে চিনতাম।

তাহলে তোমাকে পরিচিত ধরে নিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারি তুমি কেন ভাবলে ও যেমন প্রশ্ন করতে সেইরকম করেছিল?

এটা কোরার বৈশিষ্ট্য।

পোয়ারো বললেন, ধর কোরা ভেবেছিল সেই অপ্রত্যাশিত কথাটা বললে সবাই চমকে যাবে এবং সে মজা পাবে। এটা কি তার পক্ষে সম্ভব?

হতে পারে, বাচ্চাদের মত আর এইরকম একটা প্রবৃত্তি ছিল। কিন্তু তাতে কি হবে?

 প্রসঙ্গ পরিবর্তন করলেন পোয়ারো।

মিসেস টিমোথি এবারেনথী অন্ত্যেষ্টির পরে এখানে রাত কটিয়েছিলেন?

হা।

ও কি তোমার কাছে কোরার কথাগুলো নিয়ে আলোচনা করেছিল?

 হ্যাঁ সে বলেছিল এরকম কথা বলা ঠিক হয়নি।

তুমি কি কথাটার গুরুত্ব দিয়েছিলে?

হ্যাঁ, মিঃ পোয়ারো, আমি গুরুত্ব দিয়েছিলাম।

পোয়ারো বললেন, অনেকদিন ধরে মিসেস ল্যান্স কোয়েনেট এবং তার ফেমিলির সাথে একটা বিচ্ছেদ চলছিল।

হা। আমাদের কেউ ওর স্বামীকে পছন্দ করতাম না। তাই বিচ্ছেদটা হয়েছিল।

 তারপর হঠাৎ রিচার্ড ওর সাথে দেখা করতে গেল কেন?

আমি জানি না। বোধহয় ভেবেছিলেন আর বেশিদিন বাঁচবেন না তাই ঝগড়াটা মিটিয়ে দিতে গেছিলেন। ঠিক কিছু জানি না।

উনি তোমায় বলেননি?

উনি আমায় ওঁর টিমোথির কাছে যাওয়ার কথা বলেছিলেন, কোরার কাছে যাওয়ার কথা কিছু বলেননি।

হেলেন বলল, আপনি পুলিশের মত প্রশ্ন করে যাচ্ছেন।

 আমি এককালে পুলিশ ছিলাম।

আচ্ছা তুমি শুনেছ সুসানের স্বামী একবার তার এক রুগীকে বিষ দিয়েছিল?

হেলেনের মুখে রাগের ভাব।

হেলেন তার কাছে এগিয়ে এসে হাত ধরল। মিঃ পোয়ারো এমন কেউ কি আছে যার জীবন সম্বন্ধে তদন্ত করা দরকার? লোকেদের এর মধ্যে টেনে আনা কি ঠিক যখন তাদের কোনো হাত নেই…

ল্যান্স কোয়েনেটের মৃত্যুতে, হা কারণ সবই পরীক্ষা করে দেখতে হয়। কোনো কিছুই অবজ্ঞা করা যায় না। আমি সবার সাথে দেখা করে কথা বলতে চাই যারা অন্ত্যেষ্টির দিন উপস্থিত ছিল। সবাইর সাথে যদি এখানে কথা বলা যায় তাহলে আমার খুব সুবিধে হয়।

কিন্তু মিঃ টিমোথি আসবেন না। উনি তো বাড়ি থেকে বেরোন না। আমার মনে হয় ও ব্যাপারেও আপনি ভাগ্যবান। আমাকে লর্ড বলছিল, বাড়িটা রঙ করা হচ্ছে। টিমোথি রঙের গন্ধে অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন, ওরা এখানে এসে দুসপ্তাহ থাকবে। মডের ভাঙা পা এখনও ঠিক মত সারেনি।

হেলেন বলল : ওদের সবাইকে এখানে আনুন, সত্য বের করুন। আর খুন হতে দেবেন না।

তাহলে তুমি সহযোগিতা করবে?

হ্যাঁ, আমি করব।

.

পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ

০১.

ঐ লিনোলিয়াস খুব সুন্দর লাগছে মিসেস জোনার। আপনার লিনে কি হাত? কীচেন টেবিলে চা আছে। যান গিয়ে খেয়ে নিন, আমি যাচ্ছি।

এক কাপ চা নিয়ে গিলফ্রিস্ট টিমোথির ঘরের দরজায় শব্দ করল। ভেতর থেকে একটা শব্দ হতে ঘরে ঢুকল।

সকালে চা আর বিস্কুট, মিঃ এরেনথী আজ নিশ্চয় ভালো বোধ করছেন। আজ দিনটা বেশ উজ্জ্বল। পদগুলো ওরকম থাক।

আমি ভেবেছিলাম আপনার রোদ ভালো লাগবে। আজ রোদ ঝলমলে দিন।

না, আমার ঘর অন্ধকার থাক। ঐ রঙের গন্ধ আমার সহ্য হয় না। আমাকে পাগল করে দিচ্ছে।

মড কোথায়? ঘন্টখানেক হল দেখছি না।

তিনি বিশ্রাম করছেন।

ওকে এখানে এসে বিশ্রাম নিতে বলবে। নিচে নেমে গিলফ্রিস্ট চুপিচুপি ঘরে ঢুকে দেখল মড একটা নভেল পড়ছেন।

আপনাকে মিঃ এবারেনথী ডাকছেন। মড নভেলটা রেখে সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়ল।

ওহ আমি ভুলে গেছিলাম, এক্ষুনি যাচ্ছি। স্ত্রী ঘরে ঢোকার সাথে সাথে টিমোথি ফেটে পড়লেন।

এতক্ষণে আসা হল?

 আমি দুঃখিত ডিয়ার, আমি জানতাম না তুমি আমায় ডাকছ।

 তুমি যে মেয়েটাকে বাড়িতে ঢুকিয়েছ, আমায় পাগল করে ছাড়বে।

ও তোমায় বিরক্ত করেছে, ও কিন্তু সেবা করতে চায়। তারপর বলল, কেমন আছ?

না ভালো নেই, তুমি কটনকে একবার ডেকে পাঠাও। এই রক্তের গন্ধ আমার হার্টে আঘাত করছে।

কিচেন গিলক্রিস্ট চা খেতে খেতে মিসেস হেলেনের সাথে গল্প করছিল।

আমি সব সময় চেষ্টা করছি মিসেস এবারেনথীর কষ্ট কমাতে। ওই সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা ওর পক্ষে ভীষণ কষ্টকর।

ওর পিছনে লেগে থাকতে হয়, চায়ের কাপে চামচ নাড়তে নাড়তে জোনস বলল।

ওর পঙ্গু অবস্থা ভীষণ দুঃখকর।

হঠাৎ টেলিফোন বেজে উঠল। গিলক্রিস্ট তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল ফোনটা ধরার জন্য।

মিঃ টিমোথি গিলফ্রিস্টের দিকে রাগতমুখে তাকালেন। সে যখন ট্রে তুলছিল বললেন : কে ফোন করছে?

মিসেস লিও এবারেনথী।

তাহলে ঘন্টা খানেক গল্প চলবে। ফোনে কথা বলার সময় মেয়েদের জ্ঞান থাকে না। বোঝে না ওরা তো টাকা নষ্ট করছে।

তারপর বললেন : পর্দাটা একটু সরিয়ে দাও, ওটা নয় এটা। চোখে আলো পড়লে ভালো লাগে না। তুমি ঐ বইকেস থেকে একটা বই দাও তো। কী হল।

কোনো বইটা আপনি চাইছিলেন?

 তোমার জন্য ভুলে গেলাম, যেতে পার।

মড উল গোটাচ্ছিল গিলক্রিস্ট আর কাছে গেল। তারপর মড় কষ্টের সাথে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগলেন।

হেলেন ফোন করছিল বাড়িটা কোনো বিদেশী রিফিউজি প্রতিষ্ঠানকে বিক্রি করা হবে?

 টিমোথি কথটা শুনে ক্ষেপে গেলেন।

আর কিছু থাকল না, আমাদের পুরনো বাড়ি, যেখানে জন্মেছি? ওঃ আমি আর চিন্তা করতে পারছি না।

মড বলল : হেলেনও এই কথা বলছিল, বাড়িটা বিক্রি হয়ে যাবার আগে ওখানে যেতে বলল। ও তোমার স্বাস্থ্য সম্বন্ধে উদ্বিগ্ন। হোটেলে না গিয়ে এণ্ডারবিতে গিয়ে থাকতে বলল। এখনও চাকররা আছে, তোমার কষ্ট হবে না।

দেখি চিন্তা করে। আমি শুনেছি রঙে আর্সেনিক থাকে। আবার কোথাও যাওয়া আমার পক্ষে কষ্টকর। ভেবে পাচ্ছি না কি করলে ভালো হবে।

হোটেলেই ভালো হবে মনে হয় মড বললেন, টাকা খরচ হবে সত্যি কিন্তু সেখানে তোমার স্বাস্থ্যের প্রশ্ন।

বাধা দিল টিমোথি।

ওহ মড তুমি কি বোঝ না আমরা মিলিওনিয়ার নই। হেলেন যখন বলেছে আমরা তো ওখানে গিয়ে থাকতে পারি। যা হোক মরার আগে বাড়িটা একবার দেখার ইচ্ছে আছে।

মড এবার শেষ কৌশলটা প্রয়োগ করল, আমি শুনলাম মিঃ অ্যান্টহুইসল বাড়িটা বিক্রি হয়ে যাওয়ার আগে সমস্ত আত্মীয়দের ডেকে পাঠিয়েছেন, নীলামে যাওয়ার আগে আত্মীয়রা যদি কোনো আসবাব চায়।

আমাকে যেতেই হবে, বাড়ির একমাত্র লোক বংশধর হিসেবে আমার সেখানে উপস্থিত থাকা দরকার। আমরা ওখানে থাকার সময় বাড়ির রঙ করা শেষ হয়ে যাবে। ঐ মহিলা এখানে থেকে বাড়ির দেখাশুনা করবে।

.

০২.

আমি পারব না। বলল গিলক্রিস্ট।

ওর কথায় মড অবাক হলেন। মিস গিলক্রিস্ট কাঁপছিল।

আমিও বাড়িতে একা থাকতে পারব না। যদি কেউ এখানে শুত তাহলেও হত।

মড এবারেনথী বললেন যে এখানে কেউ এমন নেই যে এখানে ঘুমোতে আসবে। গিলফ্রিস্ট বলল : আপনি হয়ত ভাবছেন আমি ভীতু। কিন্তু আমি কোনোদিন ভয় পেতাম না কিন্তু এখন অন্যরকম, একা থাকলে ভয়ে মরে যাব।

স্বীকার করলেন মড :

হা যদিও এর মধ্যে কোনো যুক্তি নেই, এই ঘটনার পরেও আমি এরকম ভয় পেতাম না। ভয়টা আস্তে আস্তে গজিয়েছে। এখানে আসার পর আমার ভয়টা আরও বেড়ে গেছে–কোনো বিশেষ কারণে নয়। সব সময় মনে হয় একটা সাংঘাতিক কিছু ঘটবে…. এই যে নান এসেছিল তাতেও আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম।

তাই নাকি? আমি জানতাম না, ওঃ আমার এত খারাপ লাগছে। আপনারা কি ভাববেন

সত্ত্বনা দিল মড : আমরা অন্য ব্যবস্থার কথা চিন্তা করছি।