রাত ন’টা নাগাদ নবীন মুদি যখন দোকান বন্ধ করার জন্য তোড়জোড় করছে, তখন দুটো লোক এসে হাজির। দু’জনেরই মুশকো চেহারা। একজন আর-একজনকে বলছিল, “তোর জন্যই সুযোগটা ফসকাল। বললুম অতটা পাঁঠার মাংস খাওয়ার পর একবাটি পায়েস আর গিলে কাজ নেই। শুনলি সেই কথা! পেট খারাপ করে ফেললি বলেই তো লোকটা হাওয়া হয়ে গেল। এমন সুযোগ আর আসবে?”
দ্বিতীয় লোকটা কাঁচুমাচু হয়ে বলল, “আমার ঠাকুর্দা কী বলতেন জানো গোপালদা, তিনি বলতেন, ওরে গোবিন্দ, পাত পুঁছে খাবি, খাবার জিনিস ফেললে অভিশাপ লাগে। আজ যা ফেলবি কাল তারই আর নাগাল পাবি না। ধর বেগুনভাজাটা ফেলে উঠলি, তো একদিন দেখবি তোর পাতে আর কেউ বেগুনভাজা দিচ্ছে না, মাছ ফেলবি তো পাতের মাছ একদিন লাফিয়ে পালাবে। সেই শুনে ইস্তক আমি খুব হুঁশিয়ার হয়ে গেছি। মরিবাঁচি পাতে কিছু ফেলে উঠি না।”
“আহা, কী মধুর বাক্যই শোনালেন। বলি, খাওয়াটা আগে না কাজটা আগে? এই তোকে বলে রাখছি গোবিন্দ, ওই লোভই তোকে খাবে। এ পর্যন্ত তোর পেটের রোগের জন্য কটা কাজ পণ্ড হল সে হিসেব আছে?”
“এবারের মতো মাপ করে দাও দাদা। হেঁটে হেঁটে হেদিয়ে গেছি, খিদেও লেগেছে বড় জোর।”
“এর পরেও খেতে চাস? তোর কি আক্কেল নেই?”
গোপাল অভিমানভরে বলল, “আমার খাওয়াটাই দেখলে গোবিন্দদা, আর এই যে সাত ক্রোশ হাঁটলুম এটার হিসেব করলে না? পেটের নাড়িভুড়ি অবধি খিদের চোটে পাক খাচ্ছে।”
দুজনে সামনের বেঞ্চে বসে পিরানের নীচে কোমরে বাঁধা গামছা খুলে মুখটুখ মুছল। তারপর গোপাল নবীনের দিকে চেয়ে বলল, “ওহে মুদি, সঁটকো চেহারার একজন বুড়ো মানুষকে এদিকপানে আসতে দেখেছ?”
নবীন লোক দুটোকে বিশেষ পছন্দ করছিল না। সে নির্বিকার মুখে বলল, “সারাদিন কত লোক আসছে যাচ্ছে। মোটকা, শুটকো, বুড়ো, যুবো, কালো, ধলল, কে তার হিসেব রাখে! তা বুড়ো মানুষ খুঁজে বেড়াচ্ছেন কেন?”
গোবিন্দ আর গোপাল একটু মুখ-তাকাতাকি করে নিল। তারপর গোপাল বলল, “ইনি আমাদের দাদু হন। মাথার একটু গণ্ডগোল আছে। রাগ করে বেরিয়ে পড়েছেন, তাই খুঁজতে বেরিয়েছি। ভাল করে ভেবে দ্যাখো দিকি, লম্বা কোট আর বাঁদুরে টুপি পরা খুব শুটকো চেহারার একজন বুড়ো মানুষকে দেখেছ বলে মনে পড়ে কি না।”
নবীনের খুব মনে আছে। তবে সে এ দুজনকে একটু খ্যাপানোর জন্য বলল, “কত লোক আসছে যাচ্ছে, কত মনে রাখব? তবে একটু ভাবতে হবে। ভাবলে যদি মনে পড়ে!”
“তা ভাবতে কতক্ষণ লাগে তোমার?”
নবীন বলল, “আমাদের বিদ্যেবুদ্ধি তো বেশি নয়, তার ওপর পেঁয়ো মানুষ, আমাদের ভাবতে একটু বেশি সময় লাগে মশাই। এই ধরুন ঘণ্টাখানেক।”
“তো তাই সই। ততক্ষণ আমাদের দুজনকে আধসের করে চিড়ে আর একপো করে আখের গুড় দাও দিকিনি। দইটই পাওয়া যায় না এখানে?”
“পাওয়া যাবে না কেন? পয়সা দিন, মহাদেব ময়রার দোকান থেকে এনে দিচ্ছি।”
“বাঃ, তুমি তো বেশ ভাল লোক দেখছি।”
“নফরগঞ্জ ভাল লোকদেরই জায়গা।”
নবীন পয়সা নিয়ে দই এনে দিল, তাতে তার কিছু আয়ও হল। পাঁচশো গ্রামের জায়গায় পঞ্চাশ গ্রাম কম এনেছে সে। এই সূক্ষ্ম হেরফের বোঝার মতো মাথা লোকদুটোর নেই! অবস্থাও বেগতিক। সাত ক্রোশ হেঁটে এসে দুজনেই হেদিয়ে পড়েছে। নবীন একটু চড়া দামেই দুটো মেটে হাঁড়ি বেচল গোবিন্দ আর গোপালকে। দুজনে হাঁড়িতে চিড়ে মেখে গোগ্রাসে খেয়ে এক এক ঘটি করে জল গলায় ঢেলে ঢেকুর তুলল। তারপর গোবিন্দ জিজ্ঞেস করল, “মনে পড়ল নাকি হে মুদিভায়া?”
“ভাল করে ভেবে দেখছি। সেই প্রাতঃকাল থেকে যত লোক এসেছে গেছে সকলের মুখই ভাবতে হচ্ছে কিনা। এক ঘণ্টার মোটে এই আধ ঘণ্টা হল। তাড়া কীসের?”
“একটু তাড়াতাড়ি আর কষে ভাবো হে। আধ ঘণ্টা পুরতে আর কতক্ষণই বা লাগবে, বড়জোর পাঁচ সাত মিনিট।”
নবীন ফিচিক করে হেসে বলল, “তা মশাই, মাথাটা যে খাটাতে হচ্ছে তারও তো একটা মজুরি আছে না কি?”
“ও বাবা, তুমি যে ধুরন্ধর লোক!”
“যা আকাল পড়েছে। বেঁচেবর্তে থাকতে গেলে ধুরন্ধর না হয়ে উপায় আছে?”
“তা কত চাও?”
“পাঁচটা টাকা ফেললে মনে হয় মাথাটা ডবল বেগে কাজ করবে।”
“রেট বড্ড বেশি হয়ে যাচ্ছে হে। দুটো টাকা ঠেকাচ্ছি, ওর মধ্যেই মাথাটা খাঁটিয়ে দাও ভাই।”
নবীন টাকা দুটো গেজের মধ্যে ভরে ফেলে বলল, “যেমনটি খুঁজছেন তেমন একজন এই সন্ধেবেলাতেই এসেছিলেন বটে। তিনি একজন কৃপণ লোক খুঁজছিলেন।”
এ-কথায় দু’জনেই সোজা হয়ে বসল। গোপাল বলল, “হ্যাঁ, হ্যাঁ, এই তো সেই লোক। তা গেল কোথায় লোকটা?”
নবীন হাত বাড়িয়ে বলল, “আরও দুটো টাকা।”
দু’জনে ফের মুখ-তাকাতাকি করে নিল। তারপর গোপাল বলল, “একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না কি মুদির পো?”
“দিনকালটা কী পড়েছে সেটাও বিবেচনা করুন। বিনি পয়সায় কোন কাজটা হচ্ছে?”
কথাটা ভাল করে শেষ করার আগেই গোবিন্দ নামের লোকটা চাঁদরের তলা থেকে ফস করে একটা হাতখানেক লম্বা ঝকঝকে ছোরা বের করে লাফিয়ে উঠে নবীনের গলার মাফলারটা খামচে ধরে বলল, “আমরা হলুম কত্তাবাবুর পাইক, আমাদের সঙ্গে ইয়ার্কি?”
নবীন চোখ কপালে তুলে কাঁপতে কাঁপতে বলল, “বলছি, বলছি। তিনি ওই সাতকড়ি শিকদারের বাড়িতে গিয়ে উঠেছেন। উনিই এখানকার সবচেয়ে কৃপণ লোক কিনা। সোজা গিয়ে ডানহাতি গলির শেষ বাড়ি।”
গোবিন্দ বিনা বাক্যে নবীনের গেজেটা কেড়ে নিয়ে নিজের টাকে খুঁজে বলল, “শোনো মুদির পো, তুমি অতি পাজি লোক। আর আমরাও খুব ভাল লোক নই। এর পর থেকে সমঝে চোলো।“
এই বলে গোবিন্দ হাতের কানা দিয়ে নবীনের মাথায় একখানা ঘা বসাতেই রোগাভোগা নবীন মূছ গেল। গোপাল আর গোবিন্দ মিলে ধরাধরি করে নবীনকে দোকানের ভেতরে ঢুকিয়ে তার ব্ল্যাক থেকে চাবি নিয়ে দোকান বন্ধ করে বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দিল।
গোপাল খুশি হয়ে বলল, “বাঃ, কাজটা বেশ পরিষ্কার করে করেছিস তো?”
গোবিন্দ দুঃখের সঙ্গে বলল, “লোকে এত আহাম্মক কেন বলল তো! এই যে মুদির পোকে এক ঘা দিতে হল, এতেই ভারী পাপবোধ হচ্ছে। বোষ্টম হওয়ার পর থেকে আর লোকজনকে মারধর করতে ইচ্ছে যায় না, জানো! কিন্তু একে না মারলে ঠিক চেঁচিয়ে লোক জড়ো করত।”
“ঠিক বলেছিস। এখন চল সাতকড়ি শিকদারের খপ্পর থেকে বুড়োটাকে বের করে এনে চ্যাংদোলা করে নিয়ে কত্তাবাবুর পায়ের কাছে ফেলি।”
“চলো।”
“তা ইয়ে, গেজের মধ্যে কত আছে দেখলি না?”
“গেঁজে দিয়ে তোমার কাজ কী?”
“ভাগ দিবি না?”
“কীসের ভাগ? গেঁজে তো আমার রোজগার।”
“কাজটা কি ভাল করলি গোবিন্দ? মানছি তোর গায়ের জোর বেশি, খুনখারাপিও অনেক করেছিস। কিন্তু মনে রাখিস, বুদ্ধি পরামর্শের জন্য এই শর্মাকে ছাড়া তোর চলবে না।”
“ঠিক আছে, পাঁচটা টাকা দেব’খন।”
“মোটে পাঁচ? আর একটু ওঠ।”
“তা হলে সাত।”
“পুরোপুরি দশ-এ রফা করে ফ্যাল।”
“কেন, দশ টাকা পাওয়ার মতো কোন কাজটা করেছ তুমি শুনি! গা না ঘামিয়েই ফোকটে রোজগার করতে চাও?”
গোপাল মাথাটা ডাইনে বাঁয়ে নেড়ে বলল, “কালটা যদিও ঘোর কলি, তবু এত অধর্ম কি ভগবান সইবেন রে? মুদির গেঁজের মধ্যে না হোক পাঁচ সাতশো টাকা আছে। বখরা চাইলে আধাআধি চাইতে পারতুম।”
“কোন মুখে? রদ্দা তো মারলুম আমি, তোমার বখরার কথা তা হলে ওঠে কেন?”
“তুই কি ভাবিস রদ্দাটা আমিই মারতে পারতুম না? সময়মতো মারতুমও, তুই মাঝখান থেকে উঠে ফটাস করে মেরে দিলি। একে কী বলে জানিস? মুখের গ্রাস কেড়ে নেওয়া।”
“তা তুমি গেজেটা পেলে কী করতে? দিতে আমাকে আধাআধি বখরা?”
চোখ কপালে তুলে গোপাল বলল, “দিতুম না? বলিস কী? এখনও ভগবান আছেন, এখনও চাঁদসুয্যি ওঠে, এখনও ধর্ম বলে একটা জিনিস আছে। সবাই জানে আমি ধর্মভীরু লোক।”
“তা হলে বলি গোপালদা, চটের হাটে সেবার তামাকের ব্যাপারির গদিতে হামলা করে ক্যাশ হাতিয়েছিলে, মনে আছে? আমাকে দিলে মোটে এগারোটা টাকা। থলিতে কত ছিল তা আমাকে বলেছিলে কখনও? নিত্যপদর মেয়ের সোনার হারখানা ছিঁড়ে নিয়ে নয়াগঞ্জে বেচেছিলে, আমাকে কত দিয়েছিলে মনে আছে? মাত্র একুশ টাকা। তখন তো আমি একটাও কথা বলিনি। হিসেবও চাইনি।”
গোপাল গলাখাকারি দিয়ে বলল, “আচ্ছা, ওই সাত টাকাই দিস। কাজিয়া করে লাভ নেই, হাতে গুরুতর কাজ।”
“তা বটে।”
হঠাৎ গোবিন্দ দাঁড়িয়ে পড়ে পিছুপানে চেয়ে বলল, “গোপালদা, কেউ আমাদের পিছু নেয়নি তো! কেমন যেন একটা মনে হচ্ছে।”
গোপাল পেছন দিকটা দেখে নিয়ে বলে, “কোথায় কে?” গোবিন্দ ফের বলল, “একটা বোঁটকা গন্ধ পাচ্ছ গোপালদা?”
“বোঁটকা গন্ধ! কই না তো!”
“আমি কিন্তু পাচ্ছি। ঘেমো জামা ছেড়ে রাখলে তা থেকে যেমন গন্ধ বেরোয় সেরকম গন্ধ।”
“এখন কি গন্ধ নিয়ে ধন্দের সময় আছে রে! কত্তাবাবু বসে আছেন, বুড়োটাকে নিয়ে গিয়ে তার সামনে ফেলতে হবে, তার পর একটু জিরোতে পারব। চল, চল।”
“উঁহু এ যেমন-তেমন গন্ধ বলে মনে হচ্ছে না গো গোপালদা। এ যে তেনাদের গন্ধ!”
“তোর মাথা।”
“আমার ঠাকুর্দা ভূত পুষত, তা জানো? তার ঘরে ঢুকলে এ রকম গন্ধ পাওয়া যেত।”
কথাটা শুনে তিন হাত পেছনে দাঁড়ানো পীতাম্বর খুশি হল।
এতদিন পর এই প্রথম একটা লোক যে তাকে টের পাচ্ছে এটা খুব ভাল খবর। পীতাম্বর যতদিন বেঁচে ছিল ততদিন ছিল তার বেজায় ভূতের ভয়। দিনেদুপুরে এ-ঘর থেকে ও-ঘর যেতে পারত না একা। তারপর একদিন যখন দেহ ছাড়তে হল, তখন শরীর থেকে বেরিয়ে এসেই দ্যাখে, সামনে ধোঁয়াটে মতো কে একটা দাঁড়িয়ে, তাকে দেখে আঁতকে উঠে “ভূত! ভূত!” বলে চেঁচিয়ে পীতাম্বর মূর্ছা যায় আর কী? সনাতন তার বন্ধু মানুষ, দু’বছর আগে পটল তুলেছে। তা সনাতনই এসে তাকে ধরে তুলল, তারপর বলল, “আর লোক হাসাসনি। এতদিন পর পুরনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা, কোথায় খুশি হবি, না মূছ যেতে বসলি? ওরে নিজের দিকে একটু চেয়ে দ্যাখ দেখি। পীতাম্বর নিজের দিকে চেয়ে যা দেখল তাতে তার ফের মূর্ছা যাওয়ায় জোগাড়। সেও ভারী ধোঁয়াটে আর আবছা এক বস্তুতে পরিণত হয়েছে। সেই থেকে তার একটা সুবিধে হয়েছে, ভূতের ভয়টা আর একদম নেই।
তবে হ্যাঁ, নিজের ভূতের ভয় গেলেও অন্যকে ভয় দেখানোর একটা দুষ্টবুদ্ধি তার মাথায় চেপেছে। সনাতন অবশ্য বলে, “দুর, দুর, ওসব করে লাভ কী? তার চেয়ে চল সাতগেছের হাটে মেছোবাজারে ঘুরে বেড়াই। আহা, সেখানকার আঁশটে পচা গন্ধে চারদিক ম ম করছে, গেলে আর আসতে ইচ্ছে যায় না।” পীতাম্বরের আজকাল ওসব গন্ধ খুবই ভাল লাগে। কিন্তু শুধু অজানা, অচেনা, অখ্যাত এক ভূত হয়ে থাকাটা তার পছন্দ নয়। নিজেকে জাহির না করলে হলটা কী? তাই সে মাঝেমাঝেই ভরসন্ধেবেলা নির্জন জায়গায় কোনও লোককে একা পেলে তার সামনে গিয়ে উদয় হয়, নাকিসুরে কথাও বলে। দুর্ভাগ্য তার, আজ অবধি কেউ তাকে দেখতে পেল না, তার কথাও শুনতে পেল না। এই তো সেদিন বামুনপাড়ার পুরুতমশাই কোথায় যেন কী একটা পুজো সেরে বটতলা দিয়ে বেশি রাতে একা ফিরছিলেন। পীতাম্বর গিয়ে তার সামনে অনেক লম্ফঝ করল, টিকি ধরে টানল, হাতে চালকলার থলি কেড়ে নিতে চেষ্টা করল, কিন্তু কিছুই হল না। পন্ডিতমশাই দিব্যি নির্বিকারভাবে চলে গেলেন। সব শুনে সনাতন বলল, “দৃশ্যমান ভূত হওয়া খুব শক্ত। অনেক সাধনা করলে তবে একটু-আধটু দেখা দেওয়া যায় বলে শুনেছি। তা অত কসরত করে লাভ কী? এখন ছুটি পেয়ে গেছিস, ঝুটঝামেলা নেই, মজা করে ঘুরে বেড়াবি চল। বাঁকা নদীর ধারে আজ ভুতুড়ে গানের জলসা বসছে, যাবি? ওঃ, সে যা সুন্দর গান! জগঝম্প, শিঙে, কাঁসর, বড় কত্তাল, আর তার সঙ্গে ব্যাঙের ডাক, গাধার চেঁচানি আর ঘোড়ার চিহিহি মিশিয়ে একটা ব্যাকগ্রাউণ্ড তৈরি হয় আর সবাই পুরো বেসুরে চেঁচায়। শুনলে মোহিত হয়ে যাবি।” হ্যাঁ, পীতাম্বরের সেই জলসার গান খুবই পছন্দ হল। বেঁচে থেকে এ-গান শুনলে তার দাঁতকপাটি লাগত। কিন্তু এখন যেন কান জুড়িয়ে গেল। মনে হল, হ্যাঁ, এই হল আসল গান।
তা বলে পীতাম্বর চেষ্টা ছাড়ল না। নিজের বাড়িতে গিয়ে একদিন সে নিজের বিধবা বউ আর ছেলেপুলেদের বিস্তর ভয় দেখানোর চেষ্টা করে এল। কিছুই হল না। শুধু অনেক মেহনতে বারান্দার ধারে রাখা একখানা পেতলের ঘটি গড়িয়ে উঠোনে ফেলে দিতে পেরেছিল। তাতে তার বউ কে রে?” বলে হাঁক মেরে বেরিয়ে এসে ভারী বিরক্ত হয়ে বলল, “নিশ্চয়ই ওই নচ্ছার বেড়ালটা!” বলে ঘটিটা তুলে রাখল। একে তো আর ভূত দেখাও বলে না, ভয় খাওয়াও বলে না। এ-ঘটনা শুনে কিন্তু সনাতন অবাক হয়ে বলল, “তুই ঘটিটা ফেলতে পেরেছিস! উরেব্বাস, সে তো কঠিন কাণ্ড। নাঃ, তোর ভেতরে অনেক পার্টস আছে দেখছি। তুই লেগে থাক, নিশ্চয়ই একদিন লোকে তোকে দেখতে পাবে।”
সেই থেকে লেগেই আছে পীতাম্বর।
.
বাঁশতলা জায়গাটা ভারী নিরিবিলি, সাধনভজনের পক্ষে খুবই উপযুক্ত। পীতাম্বর এই বাঁশতলাতে বসেই নিজেকে দৃশ্যমান করে তোলার জন্য ইচ্ছাশক্তিকে চাগিয়ে তুলতে চেষ্টা করে। তার ফলও এই ফলতে শুরু করেছে। গোবিন্দ নামে লোকটা, কেউ পিছু নিয়েছে বলে যে সন্দেহ করল আর বোঁটকা গন্ধ পেল সে তো আর এমনি এমনি নয়। পীতাম্বরের সাধনারই ফল।
এরা দুজন কোথায় কী মতলবে যাচ্ছে তা পীতাম্বর ভালই জানে। ডানহাতি গলির শেষে সাতকড়ি শিকদারের বাড়ি। কিন্তু যাকে খুঁজতে যাচ্ছে সে ও-বাড়িতে যায়নি, পীতাম্বর তাও জানে। নবীন মুদি এদের ভুল ঠিকানা দিয়েছে। সাতকড়ি শিকদার ষাগুণ্ডা লোক, দু’বেলা মুগুর ভাঁজে। মেজাজও ভয়ঙ্কর। তা ছাড়া তার আরও এক ব্যারাম আছে। তারা তিন বন্ধুতে মিলে রাতের দিকে প্ল্যানচেট করতে বসে। সে সময়ে তাদের বিরক্ত করলে খুব চটে যায়। ওই প্ল্যানচেটের আসরে অনেক ঘুরঘুর করেছে পীতাম্বর, কিন্তু কারও ভেতরে সেঁধোতে পারেনি।
লোকগুলো ভুল ঠিকানায় যাচ্ছে বলে পীতাম্বরের একটু দুঃখ হচ্ছিল। আসলে গোবিন্দ নামে লোকটাকে তার বড্ড ভাল লাগছে। এ-লোকটাই তাকে প্রথম ভূত বলে টের পাচ্ছে তো, সেইজন্যই পীতাম্বর একটু দুর্বল হয়ে পড়েছে।
লোক দুটো যখন ডানহাতি গলিটার মধ্যে ঢুকতে যাচ্ছে, তখন পীতাম্বর তাদের সামনে দাঁড়িয়ে পথ আটকে বলল, “ওহে বাবারা, কাজটা ঠিক হচ্ছে না। মানে-মানে ফিরে যাও, নইলে বেঘোরে পড়ে যেতে হবে যে, মুদির পো মহা পাজি লোক, তোমাদের ভুল ঠিকানা দিয়েছে।”
গোপাল আর গোবিন্দ অবশ্য পীতাম্বরকে ভেদ করেই ঢুকে পড়ল গলিতে। আর ঢুকেই হঠাৎ থমকে দাঁড়াল গোবিন্দ। চাপা গলায় বলল, “একটা গলার স্বর শুনলে নাকি গোপালদা?”
গোপাল চটে উঠে বলে, “কীসের স্বর বললি?”
“আহ, চটো কেন? কেউ কিছু বলছে বলে মনে হল না ভোমার?”
“তোর কি মাথা খারাপ? জনমনিষ্যিহীন গলি, এখানে কথা কইবে কে? কইলে আমি শুনতে পেতুম না?”
“কিন্তু আমি যে শুনলাম?”
“কী শুনলি?”
“ভাল বোঝা গেল না। মনে হল কেউ যেন আমাদের গলিতে ঢুকতে বারণ করছে।”
পীতাম্বর আনন্দে আত্মহারা হয়ে দুহাত তুলে নাচতে নাচতে গেয়ে উঠল, “সারা-রা-রা-রা, মার দিয়া কেল্লা।”
গোবিন্দ পাংশু মুখে বলল, “কে গান গাইছে বলে তো গোপালদা?”
“গান গাইছে? বলিস কী?”
“খুব আস্তে শোনা যাচ্ছে বটে, কিন্তু গাইছে ঠিক। অনেকটা যেন মশার গুপ্ত শব্দের মতো।”
“কী গাইছে?”
“মার দিয়া কেল্লা না কী যেন।”
গোপাল গম্ভীর হয়ে বলল, “এ তো মস্তিষ্ক বিকৃতির রাজলক্ষণ দেখছি! শোন গোবিন্দ, কাজটা নামিয়ে দে, তারপর ফিরে গিয়েই তোকে হরিহর কবরেজের কাছে নিয়ে যাব। মাথার তালুটা চৌকো করে কামিয়ে হরিহর কবরেজ যে মধ্যমনারায়ণ তেল দিয়ে পুলটিস চাপিয়ে দেয় তাতে বহু পুরনো পাগলও ভাল হয়ে যেতে দেখেছি।”
“না গোপালদা, এ মোটেই পাগলামি নয়। কিছু একটা হচ্ছে।”
পীতাম্বর সোল্লাসে বলে উঠল, “হচ্ছেই তো! খুব হচ্ছে। তা গোবিন্দভায়া তোমার ওপর বড় মায়া পড়ে গেছে বলেই বলছি, সেই বুড়ো ভামটিকে এখানে পাবে না। সে গিয়ে বিপিনবাবুর বাড়িতে উঠেছে।”
গোবিন্দ আঁতকে উঠে বলল, “ওই আবার?”
“আবার কী? নতুন গান নাকি?”
“না, কী যেন বলছে। ঠিক বুঝতে পারছি না।”
“একটা কাজ করবি গোবিন্দ? একটু মাটি তুলে দুটো টিপলি বানিয়ে দুই কানে চেপে ঢুকিয়ে দে। তা হলে আর ঝঞ্জাট থাকবে
পীতাম্বর চেঁচিয়ে উঠল, “না, না, খবরদার না।”
গোবিন্দ মাথা নেড়ে বলে, “শিশিরে ভেজা ঠাণ্ডা মাটি কানে দিলে আর দেখতে হবে না, কানের কটকটানি শুরু হয়ে যাবে। তার চেয়ে এক কাজ করি গোপালদা।”
“কী কাজ?”
“এসব ভূতুড়ে কাণ্ড না হয়েই যায় না। আমি বরং রামনাম করি। কী বলে?”
গোপাল নীরস গলায় বলল, “রামনামে কি আজকাল আর কাজ হয় রে? সেকালে হত। তবু করে দ্যাখ।”
পীতাম্বর আর্তনাদ করে উঠল, “ওরে সর্বনাশ! ও নাম নিসনি! নিসনি! তা হলে যে আমাকে তফাত হতে হবে।”
তা হলও তাই। গোবিন্দ কষে রামনাম শুরু করতেই যেন বাতাসের একটা ঝাঁপটায় পীতাম্বর ছিটকে বিশহাত তফাতে চলে গেল। আর ওদের কাছে এগোতেই পারল না।
মনের দুঃখে পীতাম্বর অগত্যা সাতড়ি শিকদারের প্ল্যানচেটের ঘরে ঢুকে পড়ল।
দৃশ্যটা বেশ গা-ছমছমে।
মাঝখানে একটা কাঠের টেবিলের ওপর একটা করোটি রাখা। তার পাশেই মোমদানিতে একটা মোম জ্বলছে। একধারে বিশাল ঘণ্ডা চেহারার সাতকড়ি বসে আছে, অন্যপাশে তার ভায়রাভাই নবেন্দ্র, আর তিন নম্বর হল বুড়ো হলধর পাণ্ডা। তিনজনেই ধ্যানস্থ। ভীষণ ঠাণ্ডা বলে তিনজনেই যথাসাধ্য চাপাচুপি দিয়ে বসেছে। হলধরের গলা অবধি বাঁদুরে টুপিতে ঢাকা। হলধরের মধ্যেই নাকি বোজ ভূত সেঁধোয়, প্রত্যেকদিনই হলধর নাকি সুরে নানা কথা কয়। কিন্তু পীতাম্বর জানে, ওসব ফকিকারি ব্যাপার। হলধর একসময়ে যাত্রা করত, অভিনয়টা ভালই জানে। ভরটর একদম বাজে কথা।
তবে আজকের সাফল্যে উজ্জীবিত পীতাম্বরের ইচ্ছে হল, সত্যি-সত্যিই হলধরের ঘাড়ে ভর করার। অনেকবার চেষ্টা করে পারেনি ঠিকই, কিন্তু আজ তার ইচ্ছাশক্তি বেশ চাগাড় দিয়ে উঠেছে। ইচ্ছাশক্তির বলে পীতাম্বর খুব সরু হয়ে হলধরের নাক দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল। ফলে হলধর দুটো হাঁচি দিল। আর সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে বেরিয়ে এল পীতাম্বর। কিন্তু হাল ছাড়লে চলবে না। সে আর নাকের দিকে না গিয়ে কানের ভেতর দিয়ে গুঁড়ি মেরে ঢুকে পড়ল ভেতরে।
আর তার পরই হলধর বলতে শুরু করল, “শোনো হে, সাতকড়ি, শোনো হে নবেন্দ্র, দুটো মুশকোমতো লোক এদিকেই আসছে। তারা এলে তাদের মারধর করতে যেয়ো না। বরং তাদের বোলো, তারা যাকে খুঁজতে এসেছে সে বিপিনবাবুর বাড়িতে আছে।”
সাতকড়ি গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করে, “আপনার কি ভর হয়েছে হলধরবাবু?”
“হয়েছে। আমি এখন আর হলধর নই, অন্য লোক।”
“কে আপনি বলুন?”
“আমি পীতাম্বর বিশ্বাস।”
“কোন পীতাম্বর? নয়াপাড়ার পীতাম্বর নাকি?”
“সে-ই।”
“তোমার কাছে আমি পঞ্চাশটা টাকা পাই। জমির খাজনা দিতে ধার নিয়েছিলে, মনে আছে?”
“মরার পর কি কারও ঋণ থাকে সাতকড়ি?”
“খুব থাকে। তোমার বউকে শোধ দিতে বলো।”
“সে আমার কথা শুনবে ভেবেছ? যাক গে, যা বললাম মনে রেখো, দুটো লোক আসছে, ডাকাতটাকাত নয়। বিপিনবাবুর বাড়ির রাস্তাটা বলে দিয়ো।”
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই দরজার কড়া নড়ে উঠল। সাতকড়ি গিয়ে দরজা খুলতেই দুটো লোক তাকে ধাক্কা মেরে ঘরে ঢুকে পড়ল। হাতে দুজনেরই দুটো মস্ত ছোরা।
ঘটনার আকস্মিকতায় কী বলতে হবে তা ভুলেই গেল সাতকড়ি। তার ওপর সে ষণ্ডামাকা হলেও ছোরাছুরির মোকাবিলা করার সাহস নেই। সে তিন হাত পিছিয়ে আঁ-আঁ করতে লাগল। তার ভায়রাভাই নবেন্দ্র সুট করে টেবিলের তলায় ঢুকে পড়ল।
বুড়ো হলধরের মুখ দিয়ে পীতাম্বর তখন চেঁচিয়ে বলল, “আ মোলো যা, এরা ভয়ে সব ভুলে মেরে দিল। বলি ও গোবিন্দ, ও গোপাল, তোমরা যাকে খুঁজতে এসেছ সে এখানে নেই। সে আছে বিপিনবাবুর বাড়িতে।”
গোবিন্দ সোল্লাসে বলে উঠল, “গোপালদা, এই তো সেই বুড়ো!”
“তাতে আর সন্দেহ কী! আমাদের চিনতে পেরেছে। তোল, তোল, ঘাড়ে ফেলে নিয়ে ছুট দে।”
হলধর বিস্তর হাত-পা ছুড়ল এবং চেঁচিয়ে অনেক ভাল-ভাল কথা বলতে লাগল বটে, কিন্তু সুবিধে হল না। ভাঁজকরা কম্বলের মতো তাকে লহমায় কাঁধের ওপর ফেলে দাঁড়াল গোবিন্দ। আর গোপাল ছোট্ট একখানা লোহার মুগুর বের করে সস্নেহে এক ঘা সাতকড়ির মাথায়, আর নিচু হয়ে টেবিলের তলায় এক ঘা নবেন্দ্রর মাথায় বসিয়ে দিল। দুজনেই চোখ উলটে পড়ে রইল মেঝেয়।
নির্জন রাস্তা দিয়ে একরকম ছুটতে ছুটতে গাঁয়ের বাইরে এসে হলধরকে নামিয়ে দাঁড় করাল গোবিন্দ। তারপর দম নিতে নিতে বলল, “খুব তো কাঁধে চেপে নিলে কিছুক্ষণ! এবার হাঁটো তো চাঁদু। চটপট হাঁটো। কর্তাবাবু তোমার গদানের জন্য বসে আছেন।”
হলধর ওরফে পীতাম্বর খিঁচিয়ে উঠে বলল, “খুব কেরানি দেখালে যা হোক। পইপই করে বললুম, ওরে সেই অলুক্ষুনে বুড়ো বিপিনের বাড়িতে গ্যাঁট হয়ে বসে লুচি গিলছে, তা শুনলে সে কথা! আমার কোন দায় পড়েছিল আগ বাড়িয়ে খবর দেওয়ার? একটু মায়া পড়েছিল বটে, কিন্তু টানাহ্যাঁচড়ায় সেটাও গেছে। যাও, এবার গিয়ে কাবাবুর লাথি ঝাঁটা খাও গিয়ে। গতরখানাই যা বানিয়েছ, ঘিলুর জায়গায় তো আরশোলা ঘুরে বেড়াচ্ছে।”
গোবিন্দ হলধরকে একখানা মৃদু রা মেরে বলল, “আর মেলা ফটফট করতে হবে না। পা চালিয়ে চলো তো বাছাধন!”
পীতাম্বর ভারী হতাশ হয়ে হলধরের কান দিয়ে বেরিয়ে এল। খামোখা সময় নষ্ট করে লাভ নেই। আজ আবার নিশুত রাতে মথুরাপুরে শিবু দাসের গুদামে শুঁটকি মাছ শুকতে নেমন্তন্ন করে গেছে সনাতন।
পীতাম্বর বেরিয়ে আসতেই হলধর চেতনা ফিরে পেয়ে চারদিকে তাকিয়ে হঠাৎ হাঁউ রে মাউ রে করে উঠল, “ওরে বাবা রে! এ আমি কোথায় এলুম রে! কারা ধরে আনল রে! ভুত নাকি রে তোরা! ভূত! পায়ে ধরি বাবা ভূত, সাত জন্মেও আর প্ল্যানচেট করব না…”
পীতাম্বর খুবই ক্ষুব্ধ চিত্তে দৃশ্যটা দেখছিল। হলধর চেঁচাচ্ছে আর দুই গুণ্ডা তার দু হাত ধরে টানাটানি করছে।
হঠাৎ গোপাল বলল, “দাঁড়া তো গোবিন্দ! আমার কেমন যেন একটা সন্দেহ হচ্ছে।”
“কীসের সন্দেহ?”
“ওর টুপিটা খোল, মুখোনা ভাল করে দেখি।”
“কেন বলো তো?”
“এ সেই লোক না-ও হতে পারে। ভজনবুড়ো এত দুবলা নয়। মনে আছে, গতকাল রাতে কেমন আমাদের হাত ফসকে পিছলে বেরিয়ে গেল!”
‘তা বটে। তা হলে দ্যাখো।” বলে গোবিন্দ একটানে বাঁদুরে টুপিটা খুলে ফেলল। গোপাল একখানা দেশলাইকাঠি ফস করে মুখের সামনে ধরতেই হলধর কাঁপতে কাঁপতে বলল, “না বাবা, আমি সে-লোক নই। জন্মেও আমি সে-লোক ছিলাম না। সে-লোকগুলো যতটা খারাপ হয়, আমি ততটা নই বাবারা।“
ভাল করে দেখে গোপাল একটা খাস ছেড়ে বলল, “না রে, এ সে লোক নয়। ভজনবুডোর বয়স একশো তিরিশ বছর, আর এ তো আশি বছরের খোকা।”
গোবিন্দ বলল, “তা হলে তো সাত হাত জল গো গোপালদা! এখন সে-লোককে পাই কোথা?”
হলধর হঠাৎ শুনতে পেল, কে যেন বলে দিচ্ছে, “বিপিনবাবুর বাড়ি, বিপিনবাবুর বাড়ি..”
হলধর কাঁপতে কাঁপতে বলল, “বিপিনবাবুর বাড়িতে যাও বাবা, বিপিনবাবুর বাড়িতে মেলা সে-লোক। সে-লোকে একেবারে গিজগিজ করছে।”
গোবিন্দ বলল, “তখন থেকে কেবল শুনছি বিপিনবাবুর বাড়ি, বিপিনবাবুর বাড়ি। চলো তো চাঁদু, বাড়িটা একবার দেখিয়ে দাও তো।”
হলধর বিনয়ে গলে গিয়ে বলল, “তা আর বলতে! আস্তাজ্ঞে হোক, আস্তাজ্ঞে হোক। এই যে এ-দিকে।”
পীতাম্বর হাঁফ ছেড়ে বলল, “যাক বাবা, আর একটু হলেই শুঁটকি মাছের গন্ধ শোঁকার নেমন্তন্নটা ভেস্তেই যাচ্ছিল।”
হলধর সোজা তাদের নিয়ে গিয়ে বিপিনবাবুর বাড়ির সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে কাঁপা গলায় বলল, “এই বাড়ি।”