০৩.
বসে আছে অস্কার ব্রুকম্যান গত দুদিন আগে এসে। মালা রীডকে দেখে এসেছে এর মধ্যে ও আলহামব্রা নাইট ক্লাবে ঘুরে। ও মালার দেহ দেখে অন্য পুরুষ-এর মতই মুগ্ধ হয়েছে যদিও একেবারেই সুর কনা। ও দেখে এসেছে মালার বাড়িও।
গারল্যান্ড পরদিন সকালে প্রাগ যাচ্ছে এই সাংকেতিক টেলিগ্রাম ও দ্বিতীয় দিনে ডোরীর কাছ থেকে পেল। ত্রিশ হাজার ডলার খামে পুরে খামটি ব্রিফকেসে ভরে মালার ফ্ল্যাটের দিকে হেঁটে চলল মালা যখন আলহামব্রা নাইট ক্লাবে। সিঁড়ি ধরে ও স্বাভাবিকভাবে অথচ সন্তর্পণে সেখানে পৌঁছে উঠে গেল। কোনো সন্দেহই হয় না ওর চলাফেরা দেখে। ওর এখানে আসার কথা ছিল যেন। ওয়ারদিংটনের কানে পৌঁছিল ওর পায়ের শব্দ।
বুক ধড়াস ধড়াস করছে ওয়ারদিংটনের। বাড়ির সব আলো নিভিয়ে দিয়ে ৩২ ক্যালিবারের কোন্টটি নিয়ে তাড়াতাড়ি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল।
যেন এক প্রত্যাশিত আগন্তুক এই ভেবেকম্যান প্রথমে দরজায় বেল দিল। আবার বেল দিল একটু পরে। বাড়ির মধ্যে কেউ নেই। দরজার তালা খুলল একটা ইস্পাতের ছোটো টুকরো দিয়ে এবং আলো জ্বালিয়ে দিল দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে, ওয়ারদিংটন উঁকি মারল এবং চিনতে পারল ব্রুকম্যানকে দেখে। পোষা গুণ্ডা ও হ্যালোরানের। ওর শরীর আড়ষ্ট হয়ে গেল অজানা ভয়ে। কেন এসেছে ব্রুকম্যানের মত খুনী গুণ্ডা, তাকে খবর দিল কে। ওকে আক্রমণ করে যদি ব্রুকম্যান। পিস্তল দিয়ে, তাহলে ও কি করে আত্মরক্ষা করবে।
ঠিকই জানত মনে মনে ওয়ারদিংটন, আরেকজনকে মারতে পারবেনা ও কোনো দিনই পিস্তল চালিয়ে। ওর মন বড় দুর্বল এবং বড় মমতা মনে। ও বারান্দায় বসে রইল নিশ্চল হয়ে। সম্পূর্ণ অসহায় ভাবে কয়েক মিনিট বসে রইল। ও উঁকি মারল তারপর সাহস সঞ্চয় করে, ব্রুকম্যান কি যেন ভাবছে একটি মানুষ প্রমাণ দেবদুতের মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে বাথরুম থেকে ঘুরে এসে। জামা আলগা, ফাপা মূর্তিটি কাঠের তৈরী।
ব্রুকম্যান দেবদূতের মাথা তুলে নিয়ে মাটিতে রাখল হঠাৎ কি ভেবে। মাথাটি আবার বসিয়ে দিল। ব্রিফকেশ খুলে একটি ছোটো প্যাকেট নিয়ে মূর্তির মধ্যে রেখে। তাড়াতাড়ি আলো নিভিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল তারপর ব্রিফকেসতুলে নিয়ে। কেবলমাত্র দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ শোনা গেল এবং তারপরই সবকিছু চুপচাপ।
ওয়ারদিংটন নিজেই অবাক হল নিজের সৌভাগ্যে। ওয়ারদিংটন আলো জ্বালল ঘরে ঢুকে এবং একটি ইজিচেয়ারে এলিয়ে গেল মূর্তির দিকে চেয়ে। ভয়ে অসহায় স্তম্ভিত। যেহেতু মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে। অবসাদ নেমে এল শরীরে। কোনো অঘটন যে ঘটেছে এটা মালা বুঝল ওয়ারদিংটনের ঘামে ভেজা মুখ দেখে।
কি হয়েছে মালা বলে উঠল।
আমি লুকিয়েছিলাম কারণ ব্রুকম্যান এসেছিল।
কি বলছ তুমি, কে ব্রুকম্যান?
ডোরীর লোক ও, আমাকে খুন করতে এসেছে এটা ওকে দেখেই ভেবেছিলাম।
মালা শিউরে বলল, তোমায় খুন করবার কারণ কি?
আমি ধরা পড়লে তোমার আর কেইনের কথা ফাঁস করে দেব এটা ডোরী জানে, ও আমাকে যে মারতে আসেনি এটা আমি পরে বুঝলাম। একটা প্যাকেট রেখে চলে গেল ও দেবদূতের মূর্তির মধ্যে। তোমাকে দিয়ে যায় নাকি ওখানে ওরা চালাচালি করবার খবরাখবর।
কি রেখে গেছে ও ওখানে, বকছ কি তুমি?
জিনিষটা কি দেখাই যাক না।
ছেড়ে দাও আমাকে আমি জানতে চাই না।
সত্যি কথা বলছো তো আমাকে, ও ব্যবহার করে না এই জায়গাটি জিনিষ লুকোবার জন্য
আমি কিছু জানতে চাই না, এটা কখনোই নয়।
তুমি খুকীপনা করছ। আমি জানি তুমি সি. আই. এ এজেন্ট, তুমি সি. আই এতে খবরাখবর দিয়েছ কেইন এবং আমার হাত দিয়ে। এবং সেজন্য টাকাও তুমি পেয়েছ। ওদের কাজ করতেি হবে তোমাকে, এমনকি, তার সঙ্গেও কাজ করতে হবে যে আসবে আমার জায়গায়।
মালা চেঁচিয়ে বলল, যথেষ্ট হয়েছে এবার যাও তুমি, কেউ আমার উপর জোর খাটাতে পারবে না, কাজ করব না আমি আর ওদের হয়ে।
ওর দিকে চাইল ওয়ারদিংটন চোখে অনুকম্পা নিয়ে। মালার মনের ভয়ের পরিমাপ ও করতে চাইছে। কোমল গলায় বলল ও, তুমি উতলা হয়ো না, টাকা খেয়েছ ওদের তুমি, ওরা তোমাকে ছেড়ে দেবে যদি ওদের তোমায় ছেড়ে দেবে যদি ওদের তোমায় দরকার না হয় কিন্তু তুমি ওদের ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারবে না স্বেচ্ছায়। একমাত্র উপায় ওদের হাত ছাড়ানোর আমার মতে পালানো। ওরা তোমায় খুন করে ফেলবে নইলে।
বিশ্বাস করি না আমি।
আমি কেন পালাচ্ছি বলে তোমার মনে হয়, আমি তৈরি ছিলাম, এরকমটা ঘটবে বলে। মালা আমি তোমায় ভালবাসি, যদি এখন সে কথা বলার সময় নয়, তবুবলছি। সেই প্রথম দিন থেকেই ও থেমে গেল মালার মুখ দেখে।
ও কুঁকড়ে গেল মালার মুখের ভয় এবং তাচ্ছিল্য দেখে।
আমাকে ভালবাস তুমি, মালা বলল।
তাহলে কি আমায় তুমি এই বিপদে ফেলতে পারতে, নিজেকে ভালবাস শুধু তুমি। ..
ভেবেছিলাম তোমারকাছে অন্তত একটু সহানুভূতি কারণ আমার আর কোনো যাওয়ার জায়গা নেই।
তোমাকে কতবার বলতে হবে, তুমি আমার কেউ নও, চাইনা, চাইনা আমি তোমাকে এখানে।
একসঙ্গে সুইজারল্যান্ডে যাই আমরা চল, তোমাকে জাল পাসপোর্টও করে দেবে ভ্লাস্ট। আমার সঙ্গে তুমি থাকবে কিনা ঠিক করো জেনিভা পৌঁছে। আমার অনেক টাকা আছে জেনিভার ব্যাঙ্কে।
তুমি চলে গেলে আমার কোনো বিপদ থাকবে না। এখানেই থাকব আমি।
একথা বলতে পারে না কোনো এজেন্ট।
চলে যাও, তুমি যাও না।
ব্রুকম্যান কি রেখে গেল সেটা আগে দেখি।
ছেড়ে দাও, না।
.।
হ্যারি মস সেখানে অপেক্ষা করছে যখন গারল্যান্ড ওরলি এয়ারপোর্টে পৌঁছল, ওকে টিকিট দিল মস্। গারল্যান্ড ও মস একটি বেঞ্চে বসল সুটকেসটা জমা রেখে। গারল্যান্ডকে এক টুকরো কাগজ মস পকেট থেকে দিয়ে বলল, ঠিকানা হচ্ছে এটি, টাকাগুলো আছে কাঠের তৈরী একটি দেবদুতের মূর্তির মধ্যে। আলগা বসানো মূর্তিটির মাথা। তিনদিনের টিকিট তোমার, শনিবারের রিটার্ন টিকিট। এখানেই অপেক্ষা করব আমি।
গারল্যান্ড বলল নীরস গলায়, কাঠের দেবদূত মূর্তি। আমি জানি সেটি।
চোখে না পড়ে পারবে না তোমার। এটি আছে ঘরের বাঁদিকের কোণে।
কেউ থাকে না কি ফ্ল্যাটে।
প্রাগে মুশকিলে বাড়ি পাওয়া যায়, তাই ঠিক বলতে পারি না।
আরেকটু বলতে পার কি, জায়গাটা কেমন?
চারতলার ফ্ল্যাট এবং তাতে কোনো কেয়ারটেকার থাকে না। অতি মামুলী ব্যাপার। ঢোকার সময় যে কেউ দেখে না ফেলে সেটা শুধু তুমি খেয়াল রেখো।
রাহাখরচের টাকা? ঠিকানাটা পেলাম।
বাজে খরচ করো না, এক হাজার ফ্ৰা নাও, ফতুর হয়ে গেলাম আমি।
চললাম, আমায় না দেখলে মূৰ্ছ যেও না শনিবার, ব্যাপারটা অনেক ঝামেলার তুমি যা ভাবছ তার থেকেও।
আমি শনিবার এখানেই থাকব, কিছু হবে না।
গারল্যান্ড প্লেনে উঠল মিনিট পনেরো বাদে। মিষ্টি হাসল এয়ার হোস্টেল। পাল্টা হাসল গারল্যান্ড। ওকে বেজায় পছন্দ করে এয়ার হোস্টেসরা চিরকালই। প্রথম শ্রেণীর সিটে ও আরাম করে বসল এয়ার হোস্টেসটির সহায়তায় নিজের সীট ছেড়ে। খুব একটা ভালো চোখে অবশ্য ব্যাপারটা দেখল না অন্য লোকরা। গারল্যান্ড বসল ডবল স্কচ হাতে নিয়ে।
মাথায় নানান চিন্তা গ্যারল্যান্ডের। ওর ঘরে কেন এসেছিল ব্রুকম্যান। গারল্যান্ড তল্লাস করছে ঘর তন্ন-তন্ন করে, কোনো গুপ্ত মাইক্রোফোন বসায়নি তো ডোরী ওর ঘরে। কোন ভাবে ওকে ফাসাতে চেষ্টা করছে কি ডোরী। খুব সুবিধার লাগেনি ওর হ্যারি মসকে। দ্বিতীয় শ্রেণীর চরিত্র যেন হলিউডের। ওকে মনে হয় না আসল মস। প্ৰাগে আগে যাওয়া যাক, তারপর কি হয় সেটা দেখা যাবে, এটাই ভাবল ও।
হ্যারী মস ডোরীকে ফোন করল প্লেন আকাশে উঠার সঙ্গে সঙ্গে। রওনা হয়ে গিয়েছে। টোপ গিলেছে। কিছু করার আছে কি আর।
ধন্যবাদ অ্যালান। কিন্তু টাকা আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি তোমাকে।
বাবা টাকাটা যেন কম না হয়। ব্রুকম্যানকে একটি তার পাঠাল ভোরী ফোন নামিয়ে রেখে তোমাকে চেনে গারল্যান্ড। পড়ে যেও না ওর সামনাসামনি, বোকা ঠাওরিও না ওকে, চাই-চাই এ অপারেশন উৎরোনো।
চেয়ারে বসল ডোরী হেলান দিয়ে তার পাঠিয়ে। বেজায় খুশি আজ ও।
একটি বদ্ধ ঘর। মিনিস্ট্রি অফ ইনটিরিয়ারের অফিসটি বিরাট ঘর। প্রাগ গুপ্ত পুলিশের প্রধান ঘাঁটি এই বিশাল দুর্গের মত বাড়িটি। তিনটি লোক বসে ঘরে একটি টেবিল ঘিরে।
শহরের রাস্তার একটি ম্যাপ দেখছিল গুপ্ত পুলিশের দুনম্বর লোক সুক। ওর মাথায় আঘাতের চিহ্ন ঢেকে রেখেছে এক টুকরো প্লাস্টার। মালিক হল দ্বিতীয় ব্যক্তি। সে ম্যাপ দেখছে এবং সবুজ সর্পিল চোখে সুককে দেখছে। বোরিস স্মেরনফ তিন নম্বর। নিষ্ঠুর মুখ এবং বলিষ্ঠ ভারী চেহারা। পিস্তল চালাতে ওস্তাদ। ও মালিকের ডান হাত। ওর মতো দুর্দম, নাছোড়বান্দা মানুষ শিকারী দুটি নেই সোভিয়েত সামরিক গুপ্তচর বাহিনীতে।
ওর পালাবার কোনো পথ নেই। সুক বলল, টোকা মারল ম্যাপটায় আঙুল দিয়ে, সময় মতো ঠিক ধরা দেবে, ও লুকিয়ে আছে এখানে কোথাও।
ইংরাজীতে কাটা কাটা বলল মালিক, সময়টা কোনো জরুরী এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয় তোমার মতে। এই ব্যাপারটা ঘটল কমরেড তোমার গাফিলতির জন্য। আমি আগেই সাবধান করেছিলাম কমরেড তোমাকে ঐ লোকটির বিষয়ে। ও নিখোঁজ এখনও। সময়মতো ও ঠিক ধরা পড়বে একথা তুমি বলছ। তোমার কথাই ঠিক, বেশ ধরে নিলাম। বল কি ব্যবস্থা নিয়েছ।
কপালের ঘাম মুছল সুক। মালিকের দিকে চাইল না কিন্তু বলল, যে ব্যবস্থা করেছি যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে। খোঁজখ নিচ্ছি এখন, লুকিয়ে রেখেছে কেউ ওকে। তল্লাশীকরা হয়েছে প্রতিটি হোটেলে। হুশিয়ার করে দেওয়া হয়েছে এয়ারপোর্ট আর ফ্রন্টিয়ার পোস্টগুলিকে।
ওকে থামিয়ে দিল মালিক হাত নেড়ে বলল, আমি ওর সঙ্গে কথা বলতে চাই ও ধরা পড়লে।
হ্যাঁ মালিক কমরেড।
এটা খুবই জরুরী যে কে আসছে ওরবদলীতে। পাঠাবেই ওরাবদলী। প্রত্যেকের বিষয়ে বিশদ জানতে চাই যারা প্লেনে, ট্রেনে বা গাড়িতে প্রাগে আসছে। কাউকে ডোরী পাঠাতেও পারে। তবে এখনি পাঠাবে বলে মনে হয় না। বুঝলে তাকে বেশি করে নজরে রাখবে যদি কোনো লোককে সন্দেহ কর।
হ্যাঁ, কমরেড মালিক।
যাও এবার খুঁজে বার কর ওয়ারদিংটনকে। সুক উঠে বেরিয়ে গেল অফিস থেকে।
স্মেরনফফের দিকে তাকিয়ে মালিক বলল, কি রকম বুঝছ।
ইন্টারেষ্টি। জোনাথন কেইন নামক লোকটা কেনেকাঁচের জিনিস। দুবার আগে আসে মাসে। ডোরীর সঙ্গে লাঞ্চ খেয়েছেচারদিনআগে। রুটিন মাফিক খবর পাঠিয়েছে প্যারিসের একঅভিজাত রেস্তোরাঁ শেজ জোসেফের এক ওয়েটার। বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি মালিকনভ ওর খবরটার রিপোর্টে। ডোরী প্রায়ই এর তার সঙ্গে লাঞ্চ খায় সে বলেছে।
কি জান কেইনের বিষয়ে, উজবুক মালিকনভ।
কিছুই বিশেষ জানিনা। একজন পুরোপুরি আমেরিককানব্যবসায়ী, আলহামব্রানাইট ক্লাবেযায় যখন প্ৰাগে আসে। আমি গিয়েছি অ্যালহামব্রা নাইট ক্লাবে। ভালোই খাওয়া দাওয়া। গান গায় একজন মেয়ে। মেয়েটির মা মার্কিন, বাবা চেক। বাবার মৃত্যুদণ্ড হয় কারণ সে সরকার বিরোধী ছিল। মালা রীড মেয়েটির নাম।
কোনো যোগাযোগ আছে কেইনের সঙ্গে মেয়েটার।
কেইন, ওর ফ্ল্যাটে যায়নি কিন্তু বহুবার ফুলের তোড়া পাঠিয়েছে ওকে।
মেয়েটির উপর নজর রাখ বোরিস। সময় হয়তো খানিকটা নষ্ট হবে কিন্তু বুঝলে আমি সব খবর চাই মেয়েটির।
স্মেরনফ বেরিয়ে গেল, আমিও চাই, এই কথা বলে।
কেইন, ওয়ারদিংটন এবং সম্ভাব্য এজেন্টের কথা মালিক জানলার কাছে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগল। কথাটা ঠিক হয়তো সুকের। সব শিকারই জালে পড়ে এদেশে সময় এবং ধৈর্য থাকলে।
ওয়ারদিংটন কাঠের দেবদুতের মূর্তির ভেতর থেকে বের করা প্যাকেটটি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে। ও বলল, এটা নিশ্চয় তোমায় ফাঁসাবার জন্য। দেখেছ, বললাম না ডোরীকে আমরা কোনো বিশ্বাস নেই, আমি এটা বুঝেছি।
কোনো ভয় লুকোবার চেষ্টা না করেই মালা বলল, আমি কি করেছি, কেন?
খুলেই দেখা যাক দাঁড়াও? কি জানি।
মালার বাধা উপেক্ষা করেই ওয়ারদিংটন প্যাকেট খুলে ফেলল ছুরি দিয়ে প্যাকেটের উপরকার সেলোটেপ খুলে। খুলে দুজনেই স্তম্ভিত হয়ে নোটের তাড়া দেখছে। কম্পিত আঙুলে নোটের তাড়া গুনতে শুরু করল ওয়ারদিংটন। ত্রিশ হাজার ডলার, ও বলল গোনা হয়ে গেলে।
ওর পাশে বসে পড়ল মালা ধপ করে ভয়ে সিঁটিয়ে গিয়ে। বলল, মানে কি এর।
আমার বদলে যে আসছে তার খরচার টাকা এটি, এটিই এর একমাত্র মানে, ওরা কোনোদিন দেয়নি আমাকে এত টাকা, তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেই বদলী লোকটা। এখানে টাকা রেখে। গেছে তাই ব্রুকম্যান। খবরাখবর কেনার টাকা এটি। আমাকে যে খরচার খাতায় লিখেই ফেলেছে ওরা, এটা দেখতে পাচ্ছি। এখানে এসে টাকাটা নেবেআমার বদলী এই নিয়ে এতটুকু মাথা ঘামায় না ওরা যে তোমার কি বিপদ হতে পারে।
কেঁপে উঠল মালা।
ওয়ারদিংটন বলল, কোনো অধিকার নেই ওদের এরকমকরার, মালা তোমার কোনো ঝামেলাই হবেনা, এ টাকা থাকলে প্রাগ ছেড়ে পালাতে। স্বাধীন হয়ে যেতে পার তুমি। আমার সঙ্গে জেনিভা যেতে পার তুমি পাসপোর্ট খরিদ করে। তুমি কেন ওদের কথা ভাববে, ওরা তো তোমার কথা ভাবেনি।
আমি ও টাকা ছোঁব না। আমার নয় ও টাকা।
বড় বোকা তুমি।
আমি চোর নই, যদিও বোকা।
চোর হওয়া বোকা হওয়ার চেয়ে অনেক ভাল, যেখানে প্রাণ বাঁচাবার প্রশ্ন।
ঘুমোতে চলে গেল মালা। ঠিক করল ওয়ারদিংটন, ওই নিয়ে নেবে টাকাটা। মালা উঠে এসে দেখে কিছুক্ষণ বাদে যে, ওয়ারদিংটন মূর্তির ভেতর খবরের কাগজ দিয়ে প্যাকেট বেঁধে ঢুকিয়ে রাখল।
মালা.বলে উঠল, তুমি কি করছ।
আমি বোকা নই, তুমি বোকা হলেও। আমি বুঝি টাকার দাম। তোমাকে বাঁচাবার চেষ্টা করছি। আমি। কি জালে জড়িয়েছ সেটা তুমি বুঝছ না। তোমার স্বার্থ আমি দেখব, তুমি সৎই থাক।
উদ্বেগ এবং আন্তরিকতওয়ারদিংটনের চোখে দেখে মালাবলল, একটু ইতস্ততঃকরে, টাকাটা কোথায় লুকিয়ে রাখবে?
কেউ জানবে না মূর্তির নীচে লুকিয়ে রাখব।
আমি দুঃখিত অ্যালেক তুমি আমায় কি চোখে দেখ সেটা আমি জানি। আমি তোমার সঙ্গে সুইজারল্যান্ড যাব, তোমার যদি মনে হয় যে আমি পারব।
ওয়ারদিংটন বুঝল, ওর মত যদিও ও নয় বদলে গেছে টাকা দেখে, তাই ও বলল, তোমার জন্য বিট্রিশ পাসপোর্ট জোগাড় করে দেব কালই ভাটের সঙ্গে দেখা করে।
অ্যালেক তোমাকে ধন্যবাদ, কিকরবল, তোমাকে আমি ভালবাসিনা, বড্ড ভয় করছেআমার কিন্তু।
আমারও ভয় করছে, তুমি দেখোআমরা ঠিক পালাব কিন্তু। আমাকে তোমার ভালোও লাগতে পারে হয়তো জেনিভায় পালালে।
ওরা যখন কথাবলছে, তখন মালার ফ্ল্যাটের উপর নজর রাখছিল, মালারফ্ল্যাটের উল্টোদিকের বাসিন্দাকে অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়ে দুজন বলিষ্ঠ লোক।
মালা এখন বেড়াজালে গুপ্তচরদেরে বন্দী স্মেরনফফের কুম অনুযায়ী।
ডোরীর আপিসে ঢুকল ও হ্যালোরান। ও প্যারিসে ছিল না গত তিনদিন। ওকে দেখে হেসে বসতে বলল ডোরী।
ডোরী বলল, কাজ ভালই এগোচ্ছে এদিকে। গারল্যান্ড গে যে পৌঁছেছে এটাকম্যান খব পাঠিয়েছে। ল্যাটিমারকে পাঠাব গারল্যান্ড ধরা পড়লেই। সেটা দুদিনের মধ্যেই হবে। তড়িঘড়ি কাজ সারে তো গারল্যান্ড। ওর ওপর নজর রাখছে কম্যান।
আর কেউ আছে ওখানে? একা সামলাতে পারবে তো ব্রুকম্যান?
আমার যথেষ্ট বিশ্বাস আছে ওর ওপর, ও পারবে।
ভাবতাম আমি হলেও। কেউ থাকলে হতব্রুকম্যানের সঙ্গে। গারল্যান্ড বড় ধড়িবাজ। ব্রকম্যা গেল, যদি একবারও আঁচ করতে পারে যে ব্রুকম্যান ওর উপর নজর রাখছে।
টিম তুমি বড় মন্দ দিকটা দেখ। সামলে চলবে ব্রুকম্যান।
আমি আরো নিশ্চিন্ত হতাম যদি ওর সঙ্গে কেউ থাকত।
আমার ওপরেই ছেড়ে দাও এটা তুমি। আসা যাক আসল কথায়। একটা জরুরী নির্দেশ এসেছে গত হপ্তায় জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের কাছ থেকে। আমার নিজের হাতেই রেখেছি এটি কারণ এটি একটি টপ সিক্রেট। এটা আমাদের ভিয়েতনামের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, এইসব নিয়েই চিঠিট লেখা যদি রাশিয়া বাধাদান করে তো তাহলে আমরা কি করব। ডাইনামাইট একেবারে। প্রেসিডেন্ট জনসন যখন নিজে সই করেছে তখন মনে হয় যে এটি যা করেছে জেনে করেছে। একটি পাত আছে ভিয়েতনামে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিষয়ে। দেখা উচিত পড়ে আমাদের।
ও হ্যালোরানকে সেফ খুলে ডোর একটি লম্বা সাদা খাম খুলে বের করে দিল। ও হ্যালোরা দুটি কাগজ বের করল খাম থেকে এবং তারপর সেটি পড়ে বলল, ভুল খাম দিয়েছ তুমি আমায়
কি বললে?
সে চিঠি তো নয় এটি, এটা কোডের ফর্মুলা যা গত মাসে বাতিল করা হয়েছে।
কি বললে?
ডোর ছিনিয়ে নিল কাগজ দুটো। ওর মুখ সাদা হয়ে গেল কাগজটা দেখে। পাঁশুটে হয়ে গেল এবং রক্ত সরে গেল মুখ থেকে। ডোরীর যে হার্ট অ্যাটাক হবে। ও হ্যালোরানের সেই ভয়টাই হল।
কাউকে ডাকব। কি হল।
আমাকে ভাবতে দাও, তুমি চুপ কর।
সব কাগজপত্র ডোরী দেখল সেফ খুলে।
ওর ঠোঁট চাপা কঠিন, সাদা মুখ বুড়িয়ে গেছে। চোখগুলো যেন জ্বলছে।
ও বলল, আমি অমার্জনীয় ভুল করেছি টিম, ব্রুকম্যানকে সেদিন যে কাগজগুলো দিলাম গারল্যান্ডের সুটকেশে রাখবার জন্য, সেগুলো একটা টপ সিক্রেট লেখা খামে পুরেছিলাম চেকদের ধাঁধা লাগাবার জন্য। ব্রুকম্যান যখন ঢুকল তখন চিফস অফ স্টাফের চিঠিটা আমার টেবিলের উপর রাখা ছিল। ভুল খাম দিয়েছি আমি ব্রুকম্যানকে। আমার মনে হয় এই টপ সিক্রেট চিঠি নিয়ে গারল্যান্ড অন্য কোথাও নয় প্রাগে নিয়ে চলে গেছে। আমি খতম হয়ে যাব প্রলয় ঘটে যাবে যদি এই চিঠি রাশিয়ানদের হাতে পড়ে।
হতবাক এবং হতভম্ব কিছুক্ষণের জন্য হয়ে রইল ও হ্যালোরান। গুপ্তচর বিভাগের কর্তা হল সে, তার মাথা বিদ্যুৎগতিতে কাজ করতে শুরু করল একটু পরেই।
ও বলল, আমি তার পাঠাচ্ছি এখন ব্রুকম্যানকে। খামটা উদ্ধার করবে। গারল্যান্ড তো আসছে না দুতিনদিনের আগে। আমরা বাতিল করে দিচ্ছি এ অপারেশান। চেক পুলিশ গারল্যান্ডকে আটকাবেনা, গারল্যান্ডের কাছে টাকা আছে এ কথা যদি ব্রুকম্যান চেক পুলিশকে বাৎলে না দেয় দুদিকেই সুবিধা আমাদের। খামটা উদ্ধার যদি ব্রুকম্যান নাও করতে পারে। তবু চেক পুলিশ গারল্যান্ডকে আটকাচ্ছে না টাকার কথা না জানলে। কথাটা ঠিক বলিনি।
ডোরী আস্তে বলল, গারল্যান্ডকে মালিক আটকাতে পারে কারণ মালিক এখন ওখানে আছে
তা হলেও উদ্ধার করতেই হবে কম্যানকে খামটা।
তুমি কি বলেছিলে টিম, ও কি পারবে, আর কাউকে দিলে হত ব্রুকম্যানের সঙ্গে। এটা অসাধ্য কাজ ওর একার পক্ষে।
আর কাউকে পাঠাবার সময় নেই, তাই ওকে পারতেই হবে।
ডোরী তার লিখতে লাগল ব্রুকম্যানকে পাঠাবার জন্য। ডোরীর তারিফ করল ও হ্যালোরান মনে মনে। সর্বনাশের সীমায় দাঁড়িয়ে আছে লোকটি। বিশ্বব্যাপী ঠাণ্ডা লড়াই আরেক বিশ্বযুদ্ধে দাঁড়াতে পারে ওর এই ভুলের জন্য। তবু ওর মাথা ঠাণ্ডা। লোকটা তৈরী লড়বার জন্য সর্বনাশ বাঁচাতে।
ডোরী ও হ্যালোরানকে তারটা দিয়ে বলল, চলবে?
গুপ্ত সংকেতিক কোডে লিখে দিল, এটা চলবে।
হ্যাঁ, এ খবর আমরা দুজন ছাড়া আর কেউ যেন না জানে, যতক্ষণ পারা যায় চেপে রাখতে হবে। ওয়াদিংটনকে জানাতেই হবে যদি ব্রুকম্যান ব্যর্থ হয়। নিজের গলায় ছুরি বসানো এটা করার মানে। ও হ্যালোরান তারটা হাতে নিয়ে বোর্ড এবং সাইফার ডিভিশনের দিকে দৌড়ে গেল কাউকে কিছু না বলে।
.
০৪.
গারল্যান্ডকে কোনোদিনই তেমন গুরুত্ব দেয়নি ব্রুকম্যান। লোকটা তেমন কিছুনয় ও ভাবত, কেবল বরাত জোরে উৎরে গেছে, সি. আই. এর জন্য যখন কাজ করছে। গারল্যান্ড লম্পট, যদিও ভালো পিস্তল চালায় এবং দক্ষ ক্যারাটে যোদ্ধা। ও ক্ষমা করতে পারত না ওই একটি দোষ। ও সব সাবধানতা অবলম্বন করত যদি ও গারল্যান্ডকে সাচ্চা পেশাদারী মনে করত। কিন্তু ব্রুকম্যান তা করেনি যেহেতু ও গারল্যান্ডকে তাচ্ছিল্য করত। এক সাংঘাতিক ভুল ও করে বসল তার ফলেই কম্যান।
ব্রুম্যানকে দেখে ফেলল গারল্যান্ড অ্যালক্রম হোটেলের খাতায় নাম লেখার সময়। ও সজাগ হয়ে উঠল ওকে দেখা মাত্রই। এখানেব্রুকম্যান কেন? ও ভাবতে লাগল নিজের ঘরেবসে হোটেলে, ব্রুকম্যানের প্যারিসের ফ্ল্যাটে যাবার সঙ্গে কি ওর এই প্রাগে আসার কোনো সম্পর্ক আছে?
ওর মাথায় বিদ্যুতের ঝিলিক খেলে গেল হঠাৎ। সম্পর্ক আছে নিশ্চয়। ওঃ আমি কি বোকা। ওর নিজের উপর ধিক্কার এল। ওর সুটকেশে কিছুগছিয়ে দিয়েছে নিশ্চয় ব্রুকম্যান। লৌহ যবনিকার ওপারে সেটি নিয়েই ও প্রাগে এসেছে।
ভালো করে দেখতে লাগল গারল্যান্ড নিজের সুটকেশ বের করে। কিছুই বোঝা যায় না বাইরে থেকে। ও সুটকেশের লাইনিং এ ছোট একটু জায়গা কাটল ছুরি দিয়ে। তারপর ছিঁড়ে ফেলল পড়পড় করে লাইনিংটা। একটি সেলোটেপে আঁটা সাদা খাম রয়েছে। সুটকেসের তলায়। একটা লাল ছাপ তার উপর।
এইটি যে একটি টপসিক্রেট ডকুমেন্ট তা বুঝল গারল্যান্ড ছাপ দেখেই। দুটি পাতলা কাগজ ও বের করল খাম ছিঁড়ে ভিতর থেকে। পড়ল বার তিনেক। কাগজগুলোতে আমেরিককার প্রেসিডেন্টের সই রয়েছে বলে ও লক্ষ্য করল। ওর খুবই চেনা এই সই। টাইপ করে লেখা কাগজগুলির উপর।
ফ্রম দি জয়েন্ট চিফস অফ স্টা, টপস ওনলি। তার নিচে লেখা;
ফর সেস্টেট।
ফর অল অ্যাম্বাসাডারস
ফর সি, আই, এ ডিভিশনাল হেড ওনলি (কপি ২২)
সাংঘাতিক ঘটনা, এটা রাশিয়ানদের হাতে পড়ুক সেটাই কি উদ্দেশ্য? তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ তো লাগতে পারে এর থেকে। সুতরাং অর্থ কি এটার!
গারল্যান্ড কর্মরত এজেন্ট নয় এখন। ও ভোলেনি তবু ওর প্রশিক্ষণ। রীতিমতো ওয়াকিবহাল। ও রাজনীতির বিষয়ে। গারল্যান্ড সে বিষয়ে নিশ্চিত সে লৌহ যবনিকার ওপারে এই সর্বনাশা, ডকুমেন্ট চলে আসবে তা.জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ কখনো চাইবে না। ডোরীই হয়তো তবে ভুল করেছে। ডোরী কি তার মানে ডবল এজেন্ট হয়ে গেছে? প্যারিসের বাইরে ওকে দিয়ে কাগজটা পাঠাতে চেয়েছে ও কি গ্যারল্যান্ডের অজান্তে?
গারল্যান্ড ভেবে বলল, হতে পারে না তা; ডবল এজেন্ট তবে হয়তো ব্রুকম্যান, তাও হতে পারেনা। ব্রকম্যানের যে সন্দেহ হবে এতো ফটোকপিনয়। আসল জিনিষ এটি। খুব তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে সেটি খোয়া গেছে। কোথাও চালে ভুল করেছে হয়তো ডোরী। পরোয়া করবো কেন আমি। নিজেকেই জিগ্যেস করল গারল্যান্ড। ল্যাজে খেলানো হয়েছে আমাকে শুধু বোকা বানিয়ে। সবই ভুয়ো ঐ কাঠের দেবদূত মূর্তি এবং ত্রিশ হাজার ডলার। বিগড়ে গেল ডোরীর কোন পরিকল্পনা। ব্যাপারটা কি তাহলে।
কাগজগুলো পুড়িয়ে ফেলে একবার ভাবল, আরো ভালে হয় এটি, সে ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখল, যদি ডোরীকে জব্দ করা যায় এই কাগজগুলির সহায়তায়। এবার ভোরীর পালা, অনেক জ্বালিয়েছে ডোরী।
ও ড্রেসিংটেবিলের মাঝের দেরাজটা নামাল কাগজগুলো খামে পুরে, সেঁটে রাখল খামটা, দেরাজের ফোকরের ওপরের দিকে। ঢোকাল আবার দেরাজটা। এতেই কাজ চলবে এখনকার মতো। তারপর নীচে নেমে ভাল করে লাঞ্চ খেল। তারপর হ্যারি মসের দেওয়া ঠিকানা খুঁজে বার করল প্রাগের রাস্তার একটি ম্যাপ কিনে। মালা রীডের ঠিকানা আসলে এটি। পথটা দেখে আসা যাক, এটাই সে ভাবল, ব্লকম্যান ওর পিছু নিয়েছে কিনা তা চলবার সময়ে ও দেখে নিল। না, কেউ পিছু নেয়নি।
দুশ্চিন্তার দরকার ছিল না ব্রুকম্যানের। ডোরীর সাংকেতিক তারটি পেল ও নিজের হোটেলে ফিরে গিয়ে। ওর মাথায় বাজ পড়ল, তারটি পড়ে ও যা বুঝল। ও পড়ল সংকেত উদ্ধার করে, ভীষণ জরুরী এখনি ফেরত চাই গারল্যান্ডের সুটকেসের কাগজ। টপসিক্রেট ওগুলো। যে কোনো রফা কর ওর সঙ্গে। ওকে খতম কর দরকার হলে। কাগজ ফেরত চাই, তা যেভাবেই পার, ডোরী।
ব্যাপার ব্রুকম্যান কিছুই বুঝল না। ও নিজেও অস্থির হয়ে উঠল কিন্তু তাগাদা পেয়ে। কাগজ ফিরে পেতে যাকগে কোনো অসুবিধা হবে না। ওর স্যুটকেশে যে কাগজগুলো লুকানো আছে তা গারল্যান্ড জানেই না। ও পুড়িয়ে ফেলল ডোরীর তারটা। ও গারল্যান্ডের হোটেলের দিকে রওনা হল একটি ৩২ ক্যালিবার অটোমেটিক এবং একটি তিন ইঞ্চি সাইলেনসার নিয়ে। গারল্যান্ডকে খতম করতেই হবে, কোনোরফার মধ্যে যাওয়ার ইচ্ছা ওর নেই। যা ধড়িবাজ লোক।
মিঃ গারল্যান্ড এখানে, উঠেছেন কি? ও গারল্যান্ডের হোটেলে পৌঁছে হেড পোর্টারকে জিজ্ঞেস করল। খাতা দেখে হেড পোর্টার বলল, ৩৪৭নম্বর ঘরে স্যার, কিন্তু মিঃ গারল্যান্ড বেরিয়ে গেছেন এখন। কোনো খবর রেখে যেতে চান আপনি?
ব্রুকম্যান বলল, আমি পরে ফোন করব, ঠিক আছে। লবিতে ঘুরতে লাগল এদিক ওদিক। তারপর লিফটে উঠে তিনতলায় পৌঁছল হেড পোর্টারের নজর এড়িয়ে।
ও গারল্যান্ডের দরজার তালা খুলল ইস্পাতের পাতলা রড দিয়ে। চমৎকার ঘরটি সাজানো। ও অসন্তুষ্ট হল। ওর মনে পড়ল নিজের হোটেলের ছোট, নোংরা ঘরটির কথা ভেবে। ওর মাথায় রক্ত চড়ে গেল স্যুটকেশ খুলে। ও ঘরে কোনো তল্লাশি করল না। ওকে ঘর লন্ডভন্ড করতে হবে, কারণ হয় গারল্যান্ড খামটা সঙ্গে নিয়ে গেছেনয়তোবা কোথাও লুকিয়েছে। তাহলে রিপোর্ট গেলে সিকিউরিটি পুলিশের হাজির হওয়াটা ঢুকম্যান চায় না।
গারল্যান্ডের সঙ্গে রফাই করতে হবে তাহলে। গারল্যান্ডের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল কম্যান পিস্তলে সাইলেনসার লাগিয়ে। কাগজগুলো নিশ্চয় পড়েছে গারল্যান্ড। ও ডোরীকে ব্ল্যাকমেল করতে পারে, যদিও টাকার জন্য কাগজগুলো হাত ছাড়া করে। তাতেই রাজি হতে হবে এবার ব্যাটা যা চায়। ও গারল্যান্ডকে খুন করবেকম্যান খামটা হাতে এসে গেলে। কম্যান প্রাগ ছেড়ে উধাও হবে একটি নিঃশব্দ গুলির পরে।
.
মালা রীডের বাড়িতে ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে গারল্যান্ড। ও মালার দরজায় বেল টিপল ফ্ল্যাটের বাইরে দাঁড়িয়ে। দরজা খুলল একটু বাদেই। গারল্যান্ড বেজায় খুশি হল মালাকে দেখে। কারণ খাসা মেয়ে মালা। মালার পরনে আঁটো হয়ে বসে থাকা একটি নীল পোশাক, সে এটি দেখল চোখ বুলিয়ে।
গারল্যান্ড বলল, আপনি কি ইংরেজী বলতে পারবেন, মাপ করবেন।
ভ্লাস্ট এসেছেমালা ভেবেছিল। ও বুক ধড়াস করে উঠল লম্বা চওড়া চেহারার আমেরিককানটিকে দেখে। ও বলল, কি চাই, হ্যাঁ।
কাঠের দেবদুতের মূর্তিটি গারল্যান্ড ঘরের কোণে দেখতে পেল। এটুকু অন্তত সত্যি হ্যারি মসের কথাটা। ও বলল, এখানে কেউ থাকে হ্যারি মস বলে।
সে বলল বটে কিন্তু ভেবে পেল না যে মেয়েটি এত ভয় পেয়েছে কেন।
না।
মুশকিলে পড়ল, ও আমাকে ঠিকানা দিয়েছিল এটারই। ওর সঙ্গে দেখা করতে আমি নিউইয়র্ক থেকে এসেছিলাম। ও বলতে পারেন কোথায় গেছে, আমি পুরনো বন্ধু ওর।
মালা দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলল, না আমি জানি না কিছু।
কিছু না বলে নেমে এল গারল্যান্ড। যা আছে তো কাঠের মূর্তিটা। পথে নেমে এল সিঁড়ি বেয়ে। খাসা মেয়ে এই মালা রীড। কিন্তু কেন পেয়েছে এত ভয়! মূর্তির মধ্যে আছে তো টাকাটা। জানে কি তা মেয়েটি। খুঁজে দেখতে হবে ও যখন থাকে না। আর কেউ থাকে কিনা ওর ফ্ল্যাটে দেখতে হবে। গারল্যান্ড জানে যে এই ত্রিশ হাজার ডলার পেতে হলে বেশ কিছু ধকল পেতে হবে।
যখন ফুটপাতে দাঁড়িয়ে গারল্যান্ড তখন সে জানতেও পারল না যে, উল্টোদিকের বাড়ি থেকে স্মেরনফফের সাকরেদ ঝেরোভ ওর ছবি তুলে ফেলল। সবারই ছবি তোলা হচ্ছে এ বাড়িতে, যে ঢুকবে বেরোবে। ঝেরোভের সহকর্মী নিকলিক চলে গেল ল্যাবরেটরিতে ছবিসুদ্ধ ফিল্ম রোলটি নিয়ে।
গারল্যান্ডের চোখে পড়ল হোটেলের দিকে ফেরার সময় পথ চলতে চলতে মালা রীডের ছবি শুঙ্কু পোস্টার অ্যালহামব্রাক্লাবের দেওয়ালে সাঁটা। কোথায় কাজ করে মালারীড, যাক সেটা জানা গেল। ওই ক্লাবে রাতে একবার টু মারবে বলে ও ঠিক করল। ও হোটেলে ফিরে এল এইসব কথা ভাবতে ভাবতে। ঘরের চাবি দিতে দিতে হোটেলের হল পোর্টার ওকে বলল, আপনার খোঁজ করছিলেন এক ভদ্রলোক।
তাই নাকি কেমন দেখতে মনে আছে? কে হতে পারে।
চেহারা খুব লম্বা এবং ভারিসারি, কোনো দুর্ঘটনা হয়েছিল বোধহয় ডান কানে।
গারল্যান্ড হাসল, ব্রুকম্যান! আবার ব্রুকম্যান, খেলা শুরু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তাই তৈরী থাকতে হবে।
ব্রুকম্যান বসে আছে সে দেখল ঘরে ঢুকে। বলল গারল্যান্ড, কি খবর, ভালো তো সব বউ বাচ্চা।
কথা আছে, নচ্ছার চুপ করে বসো গারল্যান্ড হাসল, সেইমত কথাবার্তা বল অস্কার। তুমি বড় হয়েছ। তোমার বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে এই ধুমসো শরীর নিয়ে অত মেজাজে কথা বলা। তোমাকে দেখলে যেন মনে হয় পোয়াতী গাই। যা ওজন বেড়েছে তোমার। হবেই তো অতো মদ গিললে। ও ব্রায়েন তোমার বন্ধু কোথায় সে। মনে আছে তো সেবার তুমি যখন মস্তানি করেছিলে তার আমি কি হাল করেছিলাম।
ব্রুকম্যান বিদ্যুৎ গতিতে পিস্তল বার করল, বোসো হতভাগা।
গারল্যান্ড হাসল, ফিল্মে নেমে পড় অস্কার। আমায় গুলি কর এস ও প্রায় গা ঠেকিয়ে দাঁড়াল ব্রুকম্যানের পিস্তলের নলে। বলল, গুলি কর ব্রুকম্যানের কব্জিতে প্রচণ্ড ঘা মারল হাতের তালুর পাশ দিয়ে। সম্পূর্ণ অবশ হয়ে গেল ব্রুকম্যানের ডান হাত এবং পিস্তল ছিটকে দূরে পড়ে গেল। উঠে দাঁড়াতে গেল ব্রুকম্যান গাল দিয়ে। কিন্তু ওকে ঠেলে চেয়ারে বসিয়ে গারল্যান্ড বলল, অস্কার আস্তে আস্তে, তুমি আমাকে এখনি খুন করতে পার না। মনে নেই আমাদের কথা আছে।
চোখ দুটি রাগে জ্বলছে ব্রুকম্যানের। ডান হাত দলতে লাগল অন্য হাত দিয়ে। খাটে টান টান হয়ে শুয়ে পড়ে জিগ্যেস করল গারল্যান্ড কি ব্যাপার অস্কার বল।
টেবিলের উপর রাখল ব্রুকম্যান পিস্তলটি কুড়িয়ে এনে। তারপর বলল, আমি চাই তোমার টপসিক্রেটের চিঠিটা।
গারল্যান্ড হেসে বলল, সেটা কি তুমি একলাই চাও, মিঃ জনসন মিঃ কোসিগিন, প্রিয় বন্ধু ডোরী সকলেই চান চিঠিটা।
কাগজগুলো দিয়ে দাও গারল্যান্ড, বাজে কথা রেখে দিয়ে।
কথা বাজে, প্রথম থেকেই শুরু করা যাক ব্যাপারটা আমার ফ্ল্যাটে ঢুকে প্যারিসে তুমিই প্রথম খামটা ঢোকালে। ডোরীর হুকুমে করেছ নিশ্চয়। তোমার অত বুদ্ধি নেই। যদিও আমি একবার ভেবেছিলাম যে তুমি ডবল এজেন্ট হয়ে গেছ।
আমি ডবল এজেন্ট, কি বলছ তুমি?
ফেটে যাবে তুমি যদি অত খেপে যাও। তুমি ডবল এজেন্টনও, বুঝলাম সেটা। একাগজগুলো কিন্তু মারাত্মক। তোমায় খামটা দিয়ে তাহলে ডোরী ভুল করেছে। ঠিক বলছি।
ওগুলো দিয়ে দাও, আমি বলতে চাইনা কোনো কথা, গারল্যান্ড, জোচ্চোর তুমি একটা। তুমি। এত নীচ নিশ্চয় নও যে এই কাগজের জন্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধবে সেটা তুমি চাইবে।
অস্কার আমায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখিও না। এ খেলা শুরু করেছে ডোরী। ও ভাবের্নি আমার বিপদের কথা। ও গুলি ছুঁড়তে চেয়েছিল আমার কাঁধে বন্দুক রেখে। আমি ঘোড়াই কেয়ার করি ওর কি হয় তাতে। অস্কার কি মতলব ছিল ওর। পার পাবে না তুমি মিছে কথা বললে। ঘাস খাই কি আমি। আমি জানি মালা রীডের কথা। সব খুলে বল তুমি যদি.কাগজ ফেরত চাও।
পিস্তলের দিকে চাইল ব্রুকম্যান। ওকে বুঝিয়েছেগারল্যান্ড যে যদি কেউ ওকে খুন করে তাহলে ডোরী পাবেনা কিন্তু কোসিগিন কাগজটা পাবে। টপসিক্রেট এই কাগজটি। যে কোনো রফা করে কাগজটি ফেরত নিয়ে যেতে হবে একথা ডোরী বলেছে ব্রুকম্যানকে। ও নিরুপায় হয়ে বলল, কি ভাবে ল্যাটিমারকে গে ঢোকাবার ব্যবস্থা করা হয় গারল্যান্ডকে সামনে রেখে ধোঁকা দিয়ে।
গারল্যান্ড সব শুনে চোখ খুলে হেসে বলল, ওই মূর্তির ভেতর টাকাটা আছে তবে তুমি টাকাটা আনবেআজ মালারীডের বাড়ি থেকে। আমাদের দেখা হবে এয়ারপোর্টে আমিনজর রাখবা তুমি কাগজ পাবে, আমি টাকা নেব। আমার ভালবাসা দিও ডোরীকে। এ খবর পুলিশকে দিতে যেও না যে আমার কাছে ত্রিশ হাজার ডলার থাকছে। সব ফাঁস করে দেব তাহলে নিজেকে বাঁচাবার জন্য, কাগজে কি লেখা থাকছে।
আমি ভাবতে পারি না যে কোনো ভদ্র আমেরিককান এরকম হতে পারে। তুমি ভাবতে পার টাকা ছাড়া কিছু।
আহা, এমন মন্দ কি টাকা, আমি নজর রাখব, আজ রাত সাড়ে দশটায়।
.
স্মেরনফ দিল মালিকের হাতে একটি ছবি এবং দিয়ে বলল এই ফোটো তোমার ভালো লাগবে। কারণ খেলা জমেছে।
মালিকের মুখ বদলাল না এই ছবি দেখে কিন্তু রাগে কালো হয়ে গেল সবুজ চোখ। ও আস্তে বলল গারল্যান্ড।
এটাই বরাত জোর যে কেরনভকৈ বলেছিলাম ও বাড়ি থেকে যেই বেরোক তারই ছবি তুলবে। জালে পড়ে গেল মাছ।
ওই ওয়ারদিংটনের বদলী এজেন্ট হতে পারে গারল্যান্ড। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে এ গারল্যান্ড, কারণ আমি জানতাম যে ওদের কুনজরে পড়েছে গারল্যান্ড। তুমি ভাবতে পার যেবদলী এজেন্টর কাজ করছে গারল্যান্ড। আছে নিশ্চয় এতে কোনো গড়বড়। কোনো কারণই নেই। গারল্যান্ডের এই প্রাগে পড়ে থাকার। কাজ করতে হবে, চাকরী করতে হবে এখানে একটা বদলী এজেন্টের। কখনো কাজ করে না গারল্যান্ড।
ডোরী ধোঁকা দিচ্ছে তো গারল্যান্ডকে দেখিয়ে। ডোরী এটাই চায় যাতে আমরা বুঝি, বদলী এজেন্ট হচ্ছে গারল্যান্ড। কোনো খবর আছে আর?
কারেল ভ্লাস্টের বাড়ি যায় আজ সকালে রীড মেয়েটি। বাড়ি ছিল না ভ্লাস্ট। ভ্লাস্ট পাসপোর্ট জাল করে এবং এটাই ছিল সুকের সন্দেহ, কিন্তু এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ওর কাছেই গিয়েছিল মেয়েটা। চেষ্টা করছে হয়তো ভাগবার। গ্রেপ্তার করেনি কেন সুক ভ্লাস্টকে। কি প্রমাণ আবার এর। জেরা কর, গ্রেপ্তার কর লাকটাকে, তন্নাশি কর বাড়ি। প্রমাণ পাবেই পাসপোর্ট জাল করলে।
গারল্যান্ড।
গারল্যান্ড আলকর্নে থাকবে আমি যা জানি গারল্যান্ড সম্বন্ধে। অসম্ভব বিলাসী ও। আর কিছু করনা এখন ওকে আপাততনজরে রাখলেও হবে। হদিশ মিলতে পারে ওকে দিয়ে ওয়ারদিংটনের। ও যেন টের না পায় যে তুমি নজর রাখছ সুতরাং এই বিষয়ে সাবধান থেকো। শুধু নজরেই রাখ মেয়েটাকেও হদিশ দিতে পারে ও ওয়ারদিংটনের। মাইক্রোফোন লাগাও ওর ঘরে। কেরনভ যেন কাজ সারে আজ রাতেই। ওখানে আবার যাবে গারল্যান্ড। আমার চাই ওদের কথাবার্তার টেপ।
সময় নিয়ে বেরিয়ে গেল স্মেরনফ। আবার দেখল ফোটোটা মালিক। ও গারল্যান্ডকে হুঁশিয়ার করেছিল শেষ সংঘর্ষের সময়। সেইটাই হবে শেষ সাক্ষাৎ যদি আবার দেখা হয়। ও ছবিটা ছিঁড়ে ফেলল হিংস্র বর্বরতায়।
.
গারল্যান্ডকে নিয়ে গত একঘণ্টা ধরে কথা বলছে মালা আর ওয়ারদিংটন। –কে লোকটি, কে হ্যারি মস্। ডোরীর এজেন্ট কি লোকটি? ও কি খুঁজছে ওয়ারদিংটনকে?
বেজায় ঘাবড়ে গেছেওয়ারদিংটন। ও বলল, বোঝা যাচ্ছেনা কিছুই চলা সম্ভবনয় আর এভাবে। ভ্লাস্টের কাছে যাবে না একবার তুমি।
যাচ্ছি ঠিক আছে।
কারেল ভ্লাস্ট ঘরে বসে নিজের জখমের কথা ভাবছিল, মালা যখন বাড়ি থেকে বেরোচ্ছে। হাত সারতে যে এখন ঢের দেরী এটাও বুঝেছে ডাক্তারের মুখের ভাব দেখে। ও জানলা দিয়ে দেখল হঠাৎ, ওর বাড়ির সামনে দাঁড়াল একটি কালো ট্রাক গাড়ি। ওর ফ্ল্যাট বাড়িতে ঢুকল গাড়ি থেকে নেমে চারটি লোক। বুক ধড়াস করে উঠল ভ্লাস্টের। এরা যে সিকিউরিটি পুলিশের লোক তা ওদের দেখেই বুঝল। তা ও জানতও যে একদিন ওরা আসবে। ও তৈরী হয়ে আছে দুবছর ধরে। ও দরজার হাতলের নীচে পেরেক মেরে সেটে দিল খাবারের টেবিলের উপরের তক্তাটি। কিছুটা দেরী হবে হয়তো ওদের দরজা ভাঙতে। পনেরো মিনিট লাগবে হয়তো। প্রমাণপত্রগুলি নষ্ট করার যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবে যাতে না ফাসে ওর বন্ধুরা। ফায়ার প্লেসে ফেলল ন্যাকড়ায় পেট্রল ঢেলে।
এরপর ফায়ার প্লেসে অন্যদের ছবি, পাসপোর্ট আনুষঙ্গিক কাগজপত্র সব কিছু ফেলে দিয়ে আগুন জ্বেলে দিল ফায়ার প্লেসের পেট্রোল ভেজা ন্যাকড়ায়। দরজা ভাঙছে ওরা কারণ ঘা পড়ছে দরজায়। ধীরস্থির রয়েছে ভ্লাস্ট। ও চেয়ারে বসে অপেক্ষা করতে লাগল পকেট থেকে ছোট ক্যাপসুল বের করে। ওর দিকে ভয়াল ভীষণ মুখে স্মেরনফ দরজা ভেঙে তেড়ে এল। ব্লাস্ট বিষের ক্যাপসুলে কামড় বসাল মনে মনে প্রার্থনা জানিয়ে।
.
ওয়ারদিংটন শুনতে পেল সিঁড়িতে মালার পায়ের আওয়াজ। ওয়ারদিংটন ভয় পেয়ে গেল মালা ঘরে ঢুকতেই, মালার ফ্যাকাশে মুখ দেখে। ঠাণ্ডা বরফ জল যেন বইতে লাগল ওর শিরদাঁড়া, বেয়ে।
কি হয়েছে।
দাঁড়াতে পারছে না আর মালা। ও অবসন্ন শরীরে চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে বলল মারা গেছে ব্লাস্ট, ওরা ওর মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছিল আমি যখন গেলাম।
ভুল দেখেছ নিশ্চয়।
ওখানে হাজির হয়েছিল সিকিউরিটি পুলিশ, ওরমুখ স্পষ্ট দেখেছি অ্যাম্বুলেন্সে তোলার সময়।
নিজের মুখ দুহাতে ঢেকে বসে পড়ল ওয়ারদিংটন। সমস্ত পরিকল্পনা প্রাগ ছেড়ে পালাবার ভেস্তে গেল ভ্লাস্টের মৃত্যুর ফলে। মালার মনে জোর ফিরে এল ওর অবস্থার জন্য।
ও বলল, আমরা এখনো পালাতে পারি কারণ টাকাগুলো তো আছে।
এসব কথা যে নিরর্থক সেটা জানে ওয়ারদিংটন। পালাবার কোনো পথ নেই জাল পাসপোর্ট ছাড়া। মালাকে ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত ওর, মালার নিরাপত্তার জন্যই। ওর নিজের কোনো উপায় নেই, এখন আত্মহত্যা করা ছাড়া। কিন্তু সাহস কি আছে ওর আত্মহত্যা করার।
ঘরে পায়চারি করতে লাগল মালা উত্তেজিত হয়ে। হঠাৎ থেমেবলল তারপর, আমাকে একজন সাহায্য করতে পারে, আমার মনে পড়েছেতারনাম ইয়ানব্রন। আমার বাবার বন্ধু ওর বাবা। দুজনের একই সঙ্গে প্রাণদণ্ড হয়। ওর খামার বাড়ি প্রাগ থেকে ত্রিশ কিলোমিটার দূরে। আমাদের পাসপোর্ট যে জোগাড় করে দেবে ইয়ান তাকে জানতেও পারা যায়।
তুমি নিশ্চিত জান যে তাকে বিশ্বাস করতে পার।
ওর বাবা আমার বাবার সঙ্গেই মরেছে বললাম না? বিশ্বাস করতে পারি নিশ্চয়। ও সবজী বেচতে প্ৰাগে আসে ফি হপ্তায়। কাল হাটবারে ও আসবে। কাল আমি গিয়ে দেখা করব।
মালা না, বরং আমি ছেড়ে যাই তোমায়। জড়িয়ে পড়বে তুমি।
চুপ কর, সাহায্য করতে চেয়েছিলে আমায় তুমি না। পালা আমার এখন, খাবার ব্যবস্থা করি গে আমি। দেরি হয়ে যাচ্ছে।
মালা যে আর ভয় পাচ্ছে না সেটা দেখল ওয়ারদিংটন। এই অবস্থার রাশ হাতে তুলে নিয়েছে কেমন করে যেন। নতুন আশার সঞ্চার হল ওর মনে।
ব্রুকম্যান ডোরীকে টেলিফোনে জানাল গারলান্ডের কথাবার্তার কথা। সাংকেতিক ভাষায় হল কথাবার্তা। ব্যবসার কথা হচ্ছে ভাববে অন্য লোক শুনলে। ডোরী বলল, তোমাকে তো দেওয়া হয়েছে যা ভালো বলে মনে হয় সেটা করবার। বলেছি তো তোমাকে সেই কথাই।
মালা রীডের ফ্ল্যাটে পৌঁছল ব্রুকম্যান রাত সাড়ে দশটার একটু আগে। কাউকে দেখতে পেল না বাড়ির চারপাশে। কাছাকাছি অন্ধকারে গারল্যান্ড কোথাও যে লুকিয়ে আছে এটা ও নিশ্চিত জানে। ও সিঁড়ি ধরে উপরে উঠতে লাগল চারদিক ভালো করে দেখে নিয়ে।
কেরনভ ও সিঁড়ি ধরে উপরে উঠছে সেই মুহূর্তেই। মালারীডের ফ্ল্যাটে মাইক্রোফোন বসাতে এসেছেও স্মেরনফফের কুমমতো। ও রেলিং দিয়ে বুকে পড়ল ব্রুকম্যানের পায়ের আওয়াজ শুনে এবং দেখল, উপরে উঠছে একটি বলিষ্ঠ লোকের আবছা চেহারা, কেরনভ নিঃশব্দে দৌড়ে উপরে উঠে গেল পায়ের জুতো খুলে ফেলে দিয়ে। ওয়ারদিংটন ঘরের আলো নিভিয়ে বারান্দায় গিয়ে লুকোল ব্রুকম্যানের পায়ের আওয়াজ শুনে। বেল টিপল মালার দরজায় কম্যান। ওকে দেখছে কেরনভ তার উপরতলার সিঁড়ির রেলিং এর ফাঁক দিয়ে।
ইস্পাতের রড দিয়ে তালা খুলে ঘরে ঢুকে ব্রুকম্যান আলো জ্বালল। প্যাকেটটি বার করল ও তাড়াতাড়ি কাঠের দেবদূত মূর্তির মাথাটি তুলে নিয়ে। সবই দেখতে পাচ্ছে ওয়ারদিংটন। ব্রুকম্যান দরজা বন্ধ করে আলো নিভিয়ে প্যাকেট হাতে বেরিয়ে এল। সব দেখতে পাচ্ছে বলে ওয়ারদিং টন এটাও দেখতে পেল যে ছোটো টর্চের আলোয় ও নামতে লাগল সিঁড়ি দেখতে দেখতে।
কেরনভ পিস্তল হাতে নেমে এল দ্রুত গতিতে ওকে প্যাকেট হাতে নামতে দেখে। কি আছে প্যাকেটে? কেরনভ টাইম সুইচ টিপে দিল যখন প্রায় নিচতলায় পৌঁচেছে ব্রুকম্যান। সমস্ত সিঁড়ির আলো জ্বলে উঠল সঙ্গে সঙ্গে। ব্রুকম্যান ঘুরে দাঁড়াল বিদ্যুৎ গতিতে। কেরনভের দিকে তাকিয়ে গুলি করল ও টর্চ ফেলে দিয়ে। গুলি লেগেছে কেরনভের হাতে, জামার হাতা ছিঁড়ে গিয়ে। ব্রুকম্যানকে ও করল কিন্তু পরপর তিনটি গুলি। আরো সঠিক ওর লক্ষ্য।
ব্রুকম্যান সিঁড়ি বেয়ে গড়িয়ে গেল। সিঁড়ির আলো নিভে গেল হঠাৎ। তাড়া করে নেমে এল কেরনভ। উপর পানে লক্ষ্য করল ব্রুকম্যান আবার। বসে পড়েছিল কেরনভ। গুলি বেরিয়ে গেল ওর মুখের পাশ দিয়ে। ওর ফুসফুস যে ফুটো হয়ে গেছে সেটা কম্যান বুঝল। ও খতম এবার ও সিঁড়ির পরে হোটেলের লবি পেরিয়ে রাস্তায় পৌঁছল প্যাকেটটা চেপে ধরে রক্ত থু থু করে ফেলতে ফেলতে। ব্রুকম্যানের পিঠে গুলি করল অন্ধকারে নিশানা করে ঝেরন। আর পারল না ব্রুকম্যান। মাটিতে পড়ে গেল ও ছিটকে। রাস্তার নর্দমায় পড়ল প্যাকেটটা। উল্টোদিকের বাড়ি থেকে ছুটে এল নিকালক গুলির আওয়াজে। গারল্যান্ড সবই দেখল অন্ধকারে দাঁড়িয়ে। নর্দমায় প্যাকেট পড়ল, ব্রুকম্যান পড়ল সবকিছুই। পুলিশ ভ্যানের সাইরেন শোনা গেল দূরে। সর্বনাশ এখন। প্যাকেটটা তুলতে গেলেই। হোটেলে ফিরে গেল ও ছায়ায় ছায়ায় দৌড়ে।
টাকা তো চুলোয় গেল ও ভাবল হোটেলে পৌঁছে। এখন শ্রেয় প্রাগ ছেড়ে পালানোই। কিন্তু কি হবে সেই গোপন দলিলের। ডোরীকে তো আর কোনোদিন এগুলো পৌঁছতে পারবে না ব্রুকম্যান। ডোরী চুলোয় যাক ও একবার ভাবল। এ দলিল রাশিয়ানদের হাতে ও প্রাণ থাকতে যে পড়তে দিতে পারবেনা ও সেটাও বুঝল। মালিক আছে যেহেতু সেহেতু পালাবার সময় নিশ্চয় তল্লাশী করবে ওরা। ডোরীর এক এজেন্ট তো এই মালা রীড। মালার কাজ এখন এটা ডোরীকে পৌঁছে দেওয়া।
ও আলহামব্রা ক্লাবে চলে গেল ট্যাক্সি নিয়ে। সেখানে জায়গা নেই তিলধারণের। টেবিলে জায়গা পেল ও এক ওয়েটারকে ঘুষ দিয়ে। বুথে অবস্থিত রয়েছে টেবিলটি। ও মালারীকে লিখে পাঠাল ওয়েটারের হাত দিয়ে, আপনার দেবদূত মূর্তিটা আমি কিনতে চাই, এখানে আসবেন একবার।
মালা রীড বুথে ঢুকল দশ মিনিট বাদে। ও পালাতে যাচ্ছিল গারল্যান্ডকে দেখে। গারল্যান্ড ওকে আশ্বস্ত করল বহু কষ্টে। ও শরীরে আঙুল বুলিয়ে গেল, টাই ছুঁইয়ে। ও যে ডোরীর এজেন্ট সেটা মালা বুঝল। ডোরীর এজেন্টরা সাংকেতিক অঙ্গভঙ্গিকরে যদিও ওরা কেউ পরস্পরকে চেনে না। ও সব কথাই বলল মালাকে। বলল, মালাকেই পাচার করতে হবে এই টপ সিক্রেট কাগজগুলি। কেননা ও হচ্ছে ডোরীর অন্যতম এজেন্ট প্রাগে। একেবারে নারাজ এতে মালা।
গারল্যান্ড বলল, তোমায় করতেই হবে একাজ। কোনো পথ নেই তোমার ফিরবার। ডোরীর এজেন্ট তুমি। জলে গেছেটাকা বাঁচাতেই হবেডকুমেন্ট। ডোরীর হাতে এটা তোমাকে পৌঁছতেই হবে। পারব না আমি। ভালোমতো চেনে আমাকে মালিক। এ কাজ তোমাকে করতেই হবে।
না না, ও লোকটা পায়নি টাকা। আমাদের কাছে আছে টাকা।
তুমি আর কে। আমাদের মানে কি বলতে চাইছ তুমি।
এতো লোকটা অন্যরকম ওয়ারদিংটনের চেয়ে। মালার কেমন যেন বিশ্বাস এসে গেল ওর উপর। এই পারবে ওকে সাহায্য করতে, যদি কেউ পারে, এই বলে ওর মনে হল। ও বলল ওয়ারদিংটনের কথা।
গারল্যান্ড এই কথা শুনে অদ্ভুত বনে গেল।
টোকা পড়ল বুথের দরজায়। কাঠ হয়ে গেল ভয়ে দুজনেই। ওয়ারদিংটনহাতে ব্রিফকেশ এবং চোখে চশমা নিয়ে ঢুকল।
.
০৫.
মালিক দেখল শুধুই বাজে খবরের কাগজ ব্রকম্যানের দেওয়া প্যাকেটটা খুলোও জ্বলন্ত চোখে কেরনভের দিকে তাকাল এই প্যাকেটটা মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে। হাতে ব্যান্ডেজ কেরনভের।
তীক্ষ্ণ গলায় বলল মালিক, একটা লোকেকে মারলে তুমি এইগুলোর জন্য। মালিক যে কী প্রচণ্ড রেগেছে তাবুঝল একটি মাত্র লোক, স্মেরনফ। কিছুনাবলেহঠাৎসুকবলে উঠল, ওকরেছে যা ভালো বুঝেছে।
অগ্নিদৃষ্টি হানল মালিক ওর দিকে।
কথা বলছি না আমি তোমার সঙ্গে। ও কেরনভকে আবার বলল, একটা লোককে খুন করলে এইগুলোর জন্য।
কেরনভ বলল আমার অন্য উপায় ছিল না, কারণ ও আমায় গুলি করে।
মালিক বলল, একটা আন্তর্জাতিক ঘটনা এই ব্যাপারটা। ডোরীর এক এজেন্ট এই লোকটা। এর তদন্ত করবে আমেরিককান রাষ্ট্রদূত। বড় বড় হেডলাইন এ নিয়ে লিখবে ক্যাপিটালিস্ট প্রেস। এই সবই হবে তোমার জন্য। সিঁড়ির আলো জ্বালতে গেলে কেন গাধার মত। নষ্ট হয়ে গেল গোটা অপারেশনটা। ঘর থেকে বের করে দিল কেরনভকে মালিক।
মালিক সুককে বলল, কোনো কাজের নয় লোকটি। বুঝেছ শাস্তি হওয়া চাই ওর। কোথায় গারল্যান্ড।
বলল পারি না গারল্যান্ড কোথায়। ওকে রাখা হয়েছে নজরে, কি সম্পর্ক ওর এর সঙ্গেকে জানে।
ও কোথায় খুঁজে বের কর। জানতে চাই আমি সুক তাড়াতাড়ি, বেরিয়ে গেল এই কথা বলেই। চুপচাপ স্মেরনফ। মালিক বলল, কারবারটা কি! ভ্লাস্ট আত্মহত্যা করল তোমার জন্য। ডোরীর এক সেরা এজেন্টকে খুন করল ওই গাধাটা। হুঁশিয়ার হয়ে যাবে তো রীড মেয়েটি। গারল্যান্ড তারপর।
কি করণীয় এখন আমাদের।
ধরতেই হবে গারল্যান্ডকে আর মেয়েটিকে। কোনো গোপন মেসেজ আছে কিনা পরীক্ষা করতে হবে খবরের কাগজগুলোতে।
আবার ফিরে এল সুক। ফ্যাকাশে মুখে বলল, উধাও গারল্যান্ড, ওদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়েছে ও। যদিও তিনটে লোক আমি লাগিয়েছিলাম ওর পেছনে।
মালিক বলল, কমরেড সুক। এটা রিপোর্ট করা হবে। এ তোমার দায়িত্ব যেন গারল্যান্ড দেশ ছেড়ে না পালায়। স্মেরনফকেবলল, গ্রেপ্তার কর মেয়েটাকে, ওয়ারদিংটন যে কোথায় আছে সেটা বলতে পারবে ওই, ফ্ল্যাটে তন্নশ কর মেয়েটার।
ঘর থেকে বেরিয়ে গেল মালিক ও স্মেরনফ। সুক কপাল মুছল এবং এরপর ফ্রন্টিয়ার পোস্ট, এয়ারপোর্ট, রেলস্টেশনের গার্ডদের নির্দেশ দিতে লাগল টেলিফোনে, আটকাতেইহবে লোকটাকে, যেন ভুল কোনো না হয়।
.
গারল্যান্ডকে সব কথাই বলেছিল ওয়ারদিংটন। এবার পুলিশ আসবে, ও বোঝে বন্দুকের আওয়াজ শুনেই। ওর আর এখানে থাকা চলবে না। কিছু জামাকাপড় নিয়ে চলে এসেছে তাই ওর নিজের এবংমালার। ও একটু ইতস্ততঃ করছিল গারল্যান্ড টাকার কথা জিগ্যেস করাতে। মালা বলল, গারল্যান্ড জানে টাকার কথা। তখন ও বলল, ওর ব্যাগে আছে টাকাটা। গারল্যান্ড বলল, পালাতে হবে এখন। কিন্তু যাব কোথায় এখন?
মালা বলল, ইয়ান ব্রনের কাছে যাওয়া যায় একটা গাড়ি পেলেই।
যোগাড় করব, গাড়ীর জন্য কোনো ভাবনা করো না, সেখানেই যাওয়া যাক, চল। পথ আছে। একটি বেরোবার পিছন দিয়ে, গারল্যান্ড বলল।
মালা–আছে, এই বলে ইতস্ততঃ করল।
গারল্যাস্ত বলল, সময় নেই শীগগির চল।
ওয়ারদিংটন বুঝল ঠিকই বলেছে গারল্যান্ড। ওদের দুজনকে নিয়ে বেরিয়ে এল গারল্যান্ড। গাড়িতেই লাগানো আছে ইগনিশান চাবি, ও একটা মার্সিডিস গাড়ি পেয়ে গেল এমন একটা গাড়ি খুঁজতে খুঁজতে। গাড়িতে উঠল ওরা গাড়ির দরজা খুলে। ওয়ারদিংটন পেছনে এবং মালা সামনে বসল। দুটি পুলিশের গাড়ি ক্লাবে এসে ঢুকল, ওদের গাড়ি যখন বড় রাস্তায় পড়েছে।
গারল্যান্ড বলল বেরিয়ে পড়া গেছে খুব সময় মতো। একই গতিবেগে মালার নির্দেশ মতো গাড়ি চলতে লাগল। মালাকে আশ্চর্য রূপে আশ্বাস দিল ওর মুখের প্রশান্তি, চোখের বিদ্রূপ আর আলগা হাসি। ওয়ারদিংটন হঠাৎ বলল হিয়াভকুভ ব্রিজ পেরোবার সময়, ওরা তো গাড়ির খোঁজ করবেই, কি করে পালাব।
গারল্যান্ড বলল, সুস্থির হও, এখনো আশি মিনিট বাকি ক্লাবের শো শেষ হতে। পুলিশকে খবর দিচ্ছে না সে শো ভাঙা না অবধি যে টুরিস্টের গাড়ি এটা। ভেবে দেখ ওর ভাষা পুলিশকে বোঝালে কি বিপদে পড়বে। দুঘণ্টার মতো হাতে পাচ্ছি অন্তত আমরা। আবার জিগ্যেস করল মালাকে ও ইয়ান ব্রনের কথা। ওর ক্রমেই পছন্দ হচ্ছে মালাকে। খাসা মেয়ে। কথা শুনে মনে হল মালার, ওদের সাহায্যে এলেও আসতে পারে ইয়ান ব্রন নামে লোকটি।
ও ওয়ারদিংটনকে বলল তারপর, বিরক্তি ধরে গিয়েছিল তো ওর ভোরীর কাজ করে করে। আমিই তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেছিলাম, তোমার কি দোষ দেব। গারল্যান্ডের কথায় যেন একটু। সহানুভূতির আঁচ পেল ওয়ারদিংটন। ও বলল, তখন ভয় পেয়ে গেলাম যখন শুনলাম মালিক প্রাগে এসেছে।
তুমি ঠিক জান যে মালিক প্ৰাগে এসেছে?
হন্যে হয়ে ফিরছে হয়তো আমার জন্য।
বহুদিনের বন্ধু আমি এবং মালিক। আমাদের দোভি তেমনি সাপে নেউলে যেমন দোক্তি হয়।
গাড়ির গতি বাড়াল গারল্যান্ড। মরনাস্তিক বিপদে পড়েছে ওরা তিনজন। স্মেরনফ সেখানে মালিক যেখানে। সোভিয়েতের অন্যতম সেরা মানুষ শিকারী হচ্ছে এই স্মেরনফ। ওয়ারদিংটন এবং মালা আরো ঘাবড়ে গেল।
গারল্যান্ড বলল, ব্রনের কথা বল। আমি জানি মালিককে। ও খোঁজ নেবে তোমাদের প্রত্যেকের চেনাজানার।
এক বছর দেখা হয়নি ইয়ানের সঙ্গে। ওর নাম কোনোদিন করিনি আমার কোনো বন্ধুর কাছে। ও আমায় সাহায্য করবে এটা আমি জানি। ওর বাবাকে সাহায্য করেছিল আমার বাবা। অনেক দুরে খুব নির্জন জায়গায় ওর বাড়ি। বিশ্বাস করা চলে ওর বউ ব্লাঙ্কাকেও। মেয়েটি চমৎকার। দুটো বড় গোলাবাড়ি আছে বাড়িতে।
আমাদের নিতেই হবে এ ঝক্কি। দেখিনা এর জন্য আর কোনো উপায়। গাড়িটা দরকার হবেই তাড়াতাড়ি ভাগবার জন্য। লুকিয়ে রাখব না হয় একটি গোলাবাড়িতে গাড়িটা।
যত শুনছিল তত ভয় পাচ্ছিল ওয়ারদিংটন এবং গারল্যান্ডের উপর ততই বিদ্বেষ হচ্ছিল। ঝামেলা বাধাতে পারে ওয়ারদিংটন সেটা গারল্যান্ড বুঝেছিল। পরিস্থিতি আরো ঘোরালো হতে পারে কারণ লোকটা মালাকে ভালবাসে। ও গোটা পরিকল্পনার কথাই বলল ওয়ারদিংটনকে হ্যারি মস থেকে শুরু করে ডোরী পর্যন্ত।
ডোরী বড্ড বেশী চালাকী করে ফেলেছে শেষে বলল ও। আমার ঘাড়ে ভুল কর এই টপ সিক্রেট ডকুমেন্ট চাপিয়ে দিয়ে ভুলের মাশুল দিচ্ছে নিজেই এই জালে জড়িয়ে পড়ে। আমাকে বাঁচাতেই হবে ঐ বুড়োটাকে যা করে থোক। যদিও বুড়োটা আমাকে কম ভোগায়নি তবুও আমার কেমন যে মায়া পড়ে গেছে ঐ বুড়ো ছাগলটার উপর। দেওয়া যাবে না এখানকার রাষ্ট্রদূতকে কাগজগুলো। ওগুলো নির্ঘাত ও পড়ে ফেলবে। ওগুলো ডোরীর নিজস্ব কপি বলে জেনে যাবে। এল কি করে ওগুলো প্ৰাগে সেটা জানতে হবে। আমাকে ওগুলো ওর হাতে পৌঁছতে হবে যদি আমি ডোরীর প্রাণ বাঁচাতে চাই।
ওয়ারদিংটন বলল, তোমার কাছেই কি আছে এই কাগজগুলো?
হা। আমার ওগুলো ব্রুকম্যানকে দেবার কথা ছিল টাকার বদলে। এখন এগুলো আমারই হেফাজতে যেহেতু ব্রুকম্যান খতম।
আগে থেকেই পরিষ্কার হয়ে যাক একটা কথা যে আমার এবং মালার ওই টাকাটি। তুমি পাচ্ছ না ওই টাকা কারণ আমাদের পালাতে কাজে লাগবে ওই টাকা।
শুনি, তোমরা পালাবে কেমন করে?
আমি বুঝব যে কি করে পালাতে হয়।
ওয়ারদিংটনের হাতে পিস্তল, গারল্যান্ড গাড়ির গতি কমিয়ে পিছন ফিরে দেখল। ওর চোখ দুটি বন্য পশুর মত জ্বলছে এবং মুখটি ফ্যাকাশে ওর। ওয়ারদিংটন বলল, আমরা তোমাকে চাই, আমাকে দাও কাগজটা। গাড়ির গতিবেগ হঠাৎ বাড়িয়ে দিল গারল্যান্ড কোন কথা না বলে।
মালা বলে উঠল ধমক দিয়ে, কি পাগলামি করছ অ্যালেক। চুপ কর।
মালা ওকে কি অপদার্থই না ভারে তা ও ওয়ারদিংটনের গলার স্বর শুনেই বুঝল। চুপ করে গেল ও। সংকীর্ণ নির্জন পথ ধরে গাড়ি ছুটে চলল। চাঁদ উঠল। জ্যোৎস্নায় দেখা গেল দূরের পাহাড় এবং পথের দু পাশের কন। ওরা থামল একটু পরে ব্রনের খামারবাড়ির কাছে এসে।
মালাকে বলল গারল্যান্ড, ওরা তোমার বন্ধু, ওরা আমাদের থাকতে দেবে কিনা আগে গিয়ে দেখে এস। অন্য বন্দোবস্ত করতে হবে নইলে।
ওয়ারদিংটন বলল, কেন ওকে হুকুম করছ, কি ভেবেছ তুমি নিজেকে।
এবার চটে গেল গারল্যান্ড। পিস্তল দেখা গেল মুহূর্তের মধ্যে ওর হাতে। গারল্যান্ড ওর পিস্তল ছিনিয়ে নিল ওয়ারদিংটন কিছু বোঝবার আগেই। ও পিস্তলটি ওয়ারদিংটনের হাতে ফিরিয়ে দিল পিস্তল থেকে বুলেটগুলি বের করে নিয়ে এবং বলল, এ অপারেশান এখন আমার হাতে, তোমরা চুপচাপ থাক, বুঝলে তুমি কেবলমাত্র সঙ্গে আছ। চুপকরে গেল ওয়ারদিংটনকি বিড় বিড় করে বলে।
মালার অপেক্ষায় দুজনেই নীরবে গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে রইল।
.
সুক বেজায় খুশি মালা রীড মালিকের মত দায়িত্বশীল লোকের জাল থেকে পালানোতে। মালিককে দেখছিল ও চুপচাপ। মেলার ম্যাপ দেখছিল মালিক ভুরু কুঁচকে। এটা অসম্ভব যে মালা রীড পালাবে এবং একথা সে নিজেকেই বলছিল। স্মেরনফ ঢুকল দরজায় টোকা মেরে। বলল গারল্যান্ড আছে মালার সঙ্গে এবং এছাড়া সঙ্গে আছে আরো একটি লোক। চেহারার বর্ণনায় মনে হয় যে লোকটি ওয়ারদিংটন।
ঠিক জান, লোকটি ওয়ারদিংটন?
ওর বর্ণনা পেয়েছি ক্লাবের এক ওয়েটারের কাছ থেকে। কোনো সন্দেহ নেই যে ও ওয়ারদিংটন। গারল্যান্ড খবর দেয় রীডকে। কিছুক্ষণ বাদে এসে জোটে ওয়ারদিংটন। ওয়েটার ওদের যেতে দেখে কার পার্কের দিকে পেছনের দরজা দিয়ে। চুরি হয়েছে একটি মার্সিডিস গাড়িও।
ও টেবিলে রাখল গাড়ির নম্বর লেখা একটি কাগজ। মালিক কাগজটা দিল সুকের হাতে এবং দিয়ে বলল, খুঁজে বের কর গাড়িটা দৌড়ে প্রায় বেরিয়ে গেল সুক।
স্মেরনফ বলল, মালা রীডের ফ্ল্যাটেই তো এতদিন লুকিয়েছিল ওয়ারদিংটন। পাওয়া গেছে সেখানেই ওর জামাকাপড়। আঙুলের ছাপ প্রভৃতি।
অত্যন্ত জোরদার যে গাড়ি ওদের কাছে আছে। ওরা এতক্ষণে হয়তো ফ্রন্টিয়ার দিকে যাচ্ছে শহর ছেড়ে। জার্মান সীমান্ত সবচেয়ে কাছে তবে ওরা যেতে পারে অস্ট্রিয়ান সীমান্তের দিকেও। ওখানে অনেক সোজা এখন সীমান্ত পেরোনোনা।
স্মেরনফ বলল, আমি জাসিয়ে দেখছি মালা রীডের। সীমান্ত পেরোবে না এখনি ওরা হয়তো। আমার মনে হয় যে খোঁজাখুঁজি একটু না কমলে কোথাও লুকিয়ে থাকবে। বের করতে হবে ওদের আস্তানাটা যেখানে ওরা লুকিয়ে থাকে। দেখি কিছু হদিশ মেলে কিনা মালা জাসিয়েরে।
বের করতেই হবে খুঁজে ওদের। আশা করি অবস্থা কি হবে ওরা পালাতে পারলে তা নিশ্চয় বুঝিয়ে বলতে হবে না।
বেরিয়ে গেল স্মেরনফ। সুক এসে ঢুকল দশ মিনিট বাদে। গাড়িটা বেরিয়ে গেছে হিয়াভকুভ ব্রিজ পেরিয়ে। দুজন পুরুষমানুষ এবং একটি মেয়ে ছিল গাড়িতে। গাড়িটার আর কোনো খোঁজ পায়নি তারপর।
তোমার দায়িত্ব হল কমরেড, সীমান্ত পেরিয়ে ওরা যাতে বেরিয়ে না যায় সেটা লক্ষ্য রাখা। পরোয়া নেই কোনো, যত লোক লাগে লাগুক।
ওরা পারবে না পালাতে, বন্দোবস্ত আমি করছি।
মালিক চিন্তায় ডুব দিল সুক চলে যাবার পর। দারুণ রাগ হচ্ছে ওর নিজের ওপরই। মালার বিষয়ে আগ্রহী কেইন একথা যখন বলল স্মেরনফ তখনই ও গ্রেপ্তার করল না কেন মালা রীডকে। ভীষণ গাল দিল ও মনে মনে মালা রীডকে। ওকে বিপদে ফেলতে পারে মালিকের ওপরওয়ালা কোস্কি এই বিপদের জন্যই। ভালো নয় তো ওদের সম্পর্ক।
স্মেরনফ ফিরে এল একঘণ্টা বাদে। একটি ফোটো হাতে নিয়ে বলল, মনে হচ্ছে একটা হদিশ পেয়েছি, এই ছবিটা ছিল রীড মেয়েটার ফ্ল্যাটে। একটি বলিষ্ঠ যুবক এবং মালা ছবিতে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রয়েছে। দুটো বড় বড় খামার বাড়ির গোলা রয়েছে ওদের পেছনে। মালিক বলল, তা হলে।
আদর্শ জায়গা এরকম একটি নির্জন খামার বাড়ি লুকোবার পক্ষে। একসঙ্গে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হয় দেশদ্রোহিতার জন্য এই ছেলেটা ইয়ান ব্রন-এর বাবা এবং এই মালা রীডের বাবা।
কোথায় জান এই খামার বাড়িটা।
ত্রিশ কিলোমিটার দূর এখান থেকে।
জোগাড় কর তাহলে লোক।
অপেক্ষা করছে তিনটি পুলিশ ভ্যান। বারো জন লোকও হাজির হবে অটোমেটিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে।
এর তিনগুণ লোক লাগবে যদি সঙ্গে থাকে গারল্যান্ড।
স্মেরনফ ফোন তুলল, যা বল।
.
বিপদে এদের ওপর নির্ভর করা চলে এ কথা মনে হয় ইয়ান ব্রন এবং তার স্ত্রীকে দেখে। ধীরস্থির, শান্ত এবং দৃঢ় ব্যক্তিত্বের ছাপ পড়েছে চেহারায়। গারল্যান্ড বলল, তুমি যত কম জানো এই অপারেশান বিষয়ে, ততই ভালো। সীমান্ত আমাদের পেরোতেই হবে। আন্তর্জাতিক গণ্ডগোল প্রচণ্ড রকমের যদি পেরোতে না পারি। আমাদের পিছনে লেগে আছে পুর সেরা এজেন্ট। সীমান্ত পেরোতে হবে দরকার হলে খরচ করে।
মাথা নাড়ল ইয়ান, সীমান্ত পেরোনো যাবে না কেবল টাকার জোরে। বরাত জোর চাই। স্বপ্নেও ভেব না পুলিশ পাহারা পেরোতে পারবে জাল পাসপোর্ট নিয়ে। ইদানীং যদিও অষ্ট্রিয়া সীমান্তের কড়াকড়ি কমেছে তবে তোমরা দামী মাল বলে পুর এজেন্ট যদি মনে করে তবে পুরো বর্ডার বন্ধ করে দেবে মিলিটারী দিয়ে। তবে এখান থেকে একশো ত্রিশ কিলোমিটার দূরে একটা জায়গা আছে বটে। বেজায় কষ্টসাধ্য পথ, সেখানে হেঁটে যেতে হবে। লাগবে দিন চারেক। নজর পড়বে ওদের, তাই গাড়িতে যাওয়া চলবে না।
ইয়ান সঙ্গে থাকলে যে সুবিধা হবে সেটা বুঝল গারল্যান্ড। ও বলল, চল না কেন তোমরা দুজন। টাকা দেব আমরা।
ইয়ান ইতস্তত গলায় বলল, য়াই কি করে আমরা সব ছেড়ে।
এখানে কি জন্য পড়ে থাকবে? এর কোনো ভবিষ্যৎ আছে?
ত্রিশ হাজার ডলার আছে আমাদের। সমান ভাগে ভাগ করলে পাঁচজন ছয় হাজার ডলার করে পাবে। নতুন করে জীবন শুরু করবে তোমরা জার্মানী, অষ্ট্রিয়া, ফ্রান্স যেখানে খুশি গিয়ে।
ওর ব্রিফকেস চেপে ধরল ওয়ারদিংটন। বলল, কোনো অধিকার নেই তোমার ওই টাকা বিলি করবার। আমার এবং মালার টাকা এগুলো।
ওর দিকে চাইল বাকী চারজন। মালা বলল, এমনিতো আমাদের নয় অ্যালেক, বোকামী করো না দয়া করে। ও এগিয়ে এল ব্রিফকেস দাওবলে উঠল ওয়ারদিংটনকে। প্রতিবাদ, আপত্তি কিছুই খাটল না ওয়ারদিংটনের। গারল্যান্ডের হাতে তুলে দিল মালা ব্রিফকেসটি। তুলে দিয়ে বলল, আমাদের পালাবার ব্যবস্থা করতেই হবে এই টাকা দিয়ে। গারল্যান্ডকে বলল এরপর, যা করবার কর এই টাকা নিয়ে।
গারল্যান্ড ইয়ানকে বলল, বারো হাজার ডলার তোমরা পাচ্ছ যদি আমাদের সীমান্ত পার করিয়ে দাও। তারপর তোমাদের ইচ্ছা ফিরে আসবে কি আসবে না।
ইয়ান বলল, একটু কথা বলে নিই আমরা। এই বলে ও ঘর থেকে বেরিয়ে গেল স্ত্রীকে নিয়ে। মালাকে গারল্যান্ড বলল, এখানকার ভাষা জানে ওরা। কিভাবে আমরা যে পালাতে পারি ওরা সেটাও জানে। টাকা দিতে চেয়েছি কারণ ওদের ছাড়লে আমার চলবে না।
মালা ঠিকই বুঝেছে, তাই ও ঘাড় নেড়ে সায় দিল।
গজগজ করতে করতে ওয়ারদিংটন বলল, কেন দেবে না টাকা? তোমার কি? তিন গুণ টাকা বের করে নেবে তো তুমি ডোরীকে ব্ল্যাকমেল করে।
গারল্যান্ড বলল, এই তোমার ভাগের ছ হাজার ডলার রইল যদি পছন্দ না হয় তো ফিরে যাও এটা নিয়ে প্রাগে। বাজে ন্যাকামি রেখে কাজের কাজ করতে হবে আমাদের সঙ্গে প্রাগে থাকতে গেলে।
মালাকে বলতে গেল ওয়ারদিংটন, গারল্যান্ড টাকা মেরে দিচ্ছে। জোচ্চোর ও একটা। ও থেমে যেতে বাধ্য হল মালার ধমক খেয়ে। গারল্যান্ডের সহ্য হচ্ছিল না ওয়ারদিংটনের ঘ্যা ঘ্যানানি। ও থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল ঘরে পায়চারি করতে করতে দেওয়ালে একটা ছবি দেখে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ইয়ান ব্রন এবং মালা। দুটি গোলা এবং খামারবাড়ি ছবির পেছনে। জিজ্ঞে করল মালাকে, তোমার কাছে আছে এ ছবির কপি?
ফ্যাকাশে হয়ে গেল মালা। কি অনুমান করছে গারল্যান্ড তা বুঝল। বলল, আমার ফ্ল্যাটে অ্যালবামে আছে।
ও ইয়ান ও ব্লাঙ্কাকে ডাকল, হয়েই গেছে তবে তো, ওদের বলল, এখন অন্য উপায় নেই তোমাদের পালানো ছাড়া।
ছবিটি দেখিয়ে বলল এ ছবির কপি আছে মালার ফ্ল্যাটে। খুঁজে পাবে ওরা এটি। কিছু দেরি হবে না খামারবাড়ির হদিশ করতে। ওরা চলে আসতে পারে দু ঘণ্টার মধ্যে। তোমাদের ভাগে টাকাটা নাও। আমাদের রওনা হতে হবে এখনি।
ইয়ান ব্লাঙ্কাকে বলল, এটা পথ চলার মতো নয়, মালা যেটা পরে আছে।
মালাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল ব্লাঙ্কা অন্য পোষাক দেবে বলে। ইয়ানও বেরিয়ে গেল জিনিষপত্র গোছাবে বলে।
ওয়ারদিংটনকে বলল গারল্যান্ড, তোমার ভাগের টাকা নাও। খতম করে দেব যদি আর ঝামেলা কর। বহু ঝামেলা পোহাতে হবে এমনিতে আমাদের। মুষড়ে পড় না অত। একজোট লড়তে হবে জান বাঁচাতে হলে। ভাগের টাকা পকেটে রেখে দিল ওয়ারদিংটন কোনো কথা ন বলে। ইয়ান দুটি রুকস্যাকে খাবার, টিনের খাবার, মোমবাতি, সাবান, মাথা পিছু একটি করে কম্বল নিয়ে দশমিনিটের মধ্যে হাজির হয়ে বলল, পাড়ি দিতে হবে লম্বা রাস্তা। গারল্যান্ড জিজ্ঞেস করত মালাকে ভাগের টাকা দিতে দিতে কোথায় যাচ্ছি প্রথমে।
আমার একটা কুঁড়ে ঘর আছে দশ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ে, প্ল্যান করা যাবে সেখানে গিয়ে নিশ্চিন্তে ম্যাপ নিয়ে বসে। দুটো বড় বড় কাগজের প্যাকেট গারল্যান্ডের হাতে দিয়ে বলল, আমর সার বেঁধে যাব, এতে মরিচের গুড়ো আছে। তুমি শেষে, আমি প্রথমে। আসবে এই মরিচ ছড়াতে ছড়াতে। শিকারী কুকুর থাকবেই ওদের সঙ্গে। আমাদের গন্ধ পাবে না কুকুর এই মরিচের গন্ধে আমাদের গুঁড়ো আছে দু কিলোমিটার অব্দি ছড়ানোর। কাজ হবে তাতেই।
ওরা উঠতে লাগল বেরিয়ে পড়ে জঙ্গলে ঢাকা পাহাড়ের খাড়াই বেয়ে। দিব্যি চলছে ইয়া ও ব্লাঙ্কা। মালা বসে পড়ল কিন্তু কিছুক্ষণ বাদে, একটু দম নিয়ে নিই, আর পারছি না আমি।
থেমে গেল সবাই, বেজায় বিরক্ত ইয়ান।
গারল্যান্ড হঠাৎ বলল, চেয়ে দেখ নিচে।
দশটি গাড়ি জোরে আসছে দূর থেকে ইয়ানের খামার বাড়ির দিকে, মালাকে তুলল হ্যাঁচক টানে গারল্যান্ড। চড়াই পথে কোনোমতে দৌড়ে হোঁচট খেয়ে ওরা উঠতে লাগল। ওরা একটি মালভূমিতে পৌঁছল তারপর। চেয়ে দেখল নীচে, প্রত্যেকটি আলো জ্বলছে ইয়ানের খামার বাড়ির। দেখা যাচ্ছে তোকগুলোকে পিঁপড়ের মত। ঘুরে ঘুরে দেখছে ওরা চারদিক।
গারল্যান্ড বলল, খতম মরিচের গুঁড়ো।
ইয়ান বলল, আর লাগবে না, ঠিক আছে।
ওরা ইয়ানের কেবিনে পৌঁছল অবশেষে আধঘণ্টা দুরন্ত বেগে চড়াই ভেঙে। একটু আশ্বস্ত বোধ করল এখন সকলে। সবাই একটু সুস্থ বোধ করল দশ মিনিট বাদে এবং সিগারেট খেয়ে আগুন জ্বালা হল ফায়ারপ্লেসে। টেবিলে বিছিয়ে ধরল একটি ম্যাপ বের করে ইয়ান।
ইয়ান বলল, যেতে হবে এই পথে। তোমাদের জানা দরকার ফ্রন্টিয়ার ব্যাপারটা কি, অনেব ওয়াচ টাওয়ার, সেনা, মেশিনগান, সিগন্যাল রকেট, সার্চ লাইট এবং রেডিও টেলিফোন সবই আছে। যাতে পরিষ্কার নজর চলে সেই কারণে সত্তর মিটার অব্দি গাছপালা কেটে সাফ করে ফেলা হয়েছে। মিহি করে রোজ সাফ করে মাটি। যাতে দেখা যায় পায়ের ছাপ পড়লেই। অ্যালার্ম সিগন্যাল লাগানো কটা অরের বেড়া আছে। অ্যান্টি পারসোনেল মাইন বসানো বেড়ার বাইরের মাটির নীচে, মানুষ উড়ে যাবে এতে পা পড়লেই। পেরনো অসম্ভব সব শুনলে মনে হয়। একটি পথ আছে। তামার খনি যা বরবাদ এবং বাতিল হয়ে গেছে তার বাতাস চলাচলের সুড়ঙ্গ দিয়ে। অস্ট্রিয়া পার করে দিই ওই পথে কিছুদিন আগে আমি একজনকে। তবে ওর বেলা তত সমস্যা ছিল না আমাদের বেলা যত শোরগোল হচ্ছিল। তবে ভয় পদে পদে বিপদ অনেক।
ও আবার বলল, অন্তত দিন চারেক গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হবে এখন আমাদের এখানেই। হইচই পড়ে গেছে এতক্ষণ ফ্রন্টিয়ারে। চেক সেনাদের আমি জানি। বাচ্চা ছেলে বেশীর ভাগই। উৎসাহে ভাটা পড়বে দিন চারেক খুব সজাগ থেকে। আমরা যেতে পারব তখন।
গারল্যান্ড বলল, বিপদ হবে না তো চারদিন এখানে থাকলে।
হবে না মনে হয়। এখানে এমন কেবিন আছে যে তা আমাদের প্রতিবেশীরাও জানে না। চুপি চুপি বানিয়েছিলাম বছর দুয়েক আগে। একদিন কাজে লাগবে জানতাম কারণ পালাতে হবেই।
আমাদের জাগতে হবে পাহারায়। পাহারায় থাকবে পুরুষরা পরপর তিনজন। ডিউটি দেবে একেকজন চারঘণ্টা করে। আমি জাগব প্রথম খেপটা। বেরিয়ে গেল ও অন্ধকারে।
মালিককে বলল স্মেরনফ, কুকুরগুলো ওদের গন্ধ পাচ্ছে না কারণ ওরা মাটিতে মরিচের গুড়ো ছড়িয়েছে।
মালিকের চোখ জ্বলে উঠল, অজুহাত শুনব না কোন। তোমার কাজ হল দেখা ওরা যাতে ফ্রন্টিয়ার না পেরোয়। কাজে লাগাও যত লোক দরকার। তুমিও জান, ওরা হাঁটবে, বাঁধা পথে যাবে না। আমি ফিরে যাচ্ছি মিনিস্ট্রিতে। ও প্রাগে চলে গেল একটি পুলিশ ভ্যানে উঠে।
সহজে বিচলিত হয় না স্মেরনফফের এটাই ছিল সবচেয়ে বড় গুণ। কোভস্কি ওকে ঘেন্না করে বলে মালিক বিচলিত হয়। মালিককে ফাঁসাবে ও একদিন। বিচলিত হয় না স্মেরনফ। মানুষ শিকার করা ওর কাজ। ওর চাকরি চলে যাওয়াই ঠিক যদি ও তাতে ব্যর্থ হয়। ওর বুক সোজা।
ও বলল সুককে, ভোরে তন্ন তন্ন করে যেন তিনটি হেলিকপ্টার খোঁজে পাহাড়গুলো। এবার ডেকে দাও ক্যাপ্টেন কুলানকে। উৎসাহী এবং নবীন প্রকৃতির কম্যুনিস্ট কুহলানও তৎক্ষণাৎ হাজির হল দৌড়ে এসে।
জেলার ম্যাপ খুলে বসল ওকে নিয়ে স্মেরনফ।
এখন হয় ওরা ফ্রন্টিয়ারের দিকে যাবে, নয়তো কোথাও লুকিয়ে থাকবে হইচই না কমা অব্দি। কোথাও এই অঞ্চলেই ওরা গা ঢাকা দিয়ে অপেক্ষা করছে বলে আমার ধারণা। শুরু হচ্ছে কাল সকালে হেলিকপ্টারে তল্লাশি। এ অঞ্চলটা ঘিরে ফেল তুমি যত পার লোক জড়ো করে। একটিও যেন পথ না থাকে পালাবার। বুঝলে?
হ্যাঁ কমরেড স্মেরনফ। আমার খুব চেনা এই তল্লাট। কতজন লোক লাগবে ঠিক জানি। লোক মোতায়েন থাকবে সকাল আটটার মধ্যে।
স্মেরনফ ক্রুর হাসল, ভোর ছটার মধ্যে, সকাল আটটা নয়।
কমরেড স্মেরনফ, তাই হবে।