৩. পাহাড়তলী অঞ্চলে টিলার গায়ে

০৩.

নর্থ ব্রিজের উত্তর দিকে পাহাড়তলী অঞ্চলে টিলার গায়ে বড়লোকদের ভূসম্পত্তি ছড়ানো পাহাড়ী পথ ধরে এই অঞ্চলের একটা সুরম্য অট্টালিকার দিকে নিজের ক্যাডিলাকখানা নিয়ে ছুটে যাচ্ছিল ফিল ম্যাগার্থ।

ভিডা, নর্থ ব্রিজে খারাপ মেয়ে হিসাবেই পরিচিত। সে ফুর্তি নিয়েই জীবন কাটায়। সে বড়লোক। সে পাঁচ হাজার একরের এক কমলালেবুর বাগান অতি দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করে এই অর্থ উপার্জন করে।

সুসজ্জিত সদর দরজার সামনে গাড়ি থামিয়ে ম্যাগার্থ তার ঘড়ির দিকে তাকাল। ঘড়িতে রাত তিনটে বেজে পাঁচ মিনিট। তারপর সে ফুল ভরা উঠোন পেরিয়ে ভিডার ঘরের জানালায় উঁকি মেরে বলল, জেগে আছো না কি?

বিছানা থেকে কোনোরকম সাড়া না পেয়ে ভেতরের অন্ধকারের দিকে তাকাল ম্যাগার্থ। কিন্তু ভিডার বিরাট বিছানা ছাড়া আর কিছু নজরে এলো না। তখন সে বিছানার সামনে গিয়ে লেপের ভেতর নিজের একখানা হাত ঢুকিয়ে দিল। ভিডা সঙ্গে সঙ্গে চাপা আর্তনাদ করে জেগে উঠল। তারপর আলো জ্বেলে দিল।

ভিডা বলল, তুমি এরকমভাবে আমাকে না জাগিয়ে আর একটু ভদ্রভাবে আমাকে জাগাতে পারতে ফিল।

ভিডা বলল আমি ভাবি তোমার মধ্যে আমি কি দেখলাম। এই বলে নিজেকে আয়নায় দেখে বললো যাই বল আমি কিন্তু সুন্দরী।

ম্যাগার্থ একটু মুচকি হেসে বলল, তুমি তো বলল যে আমাকে দেখে সবসময়েই খুশি হও। তারপর কাবার্ড থেকে এক বোতল মাল বের করে সে বলল এ তো দেখছি তলানী পড়ে আছে। খুকুমণি আর একটু বেশি করে রাখলেই পারো।

ভিডা বললো রাখবো। তারপর ম্যাগার্থের দিকে তাকিয়ে সেখুশি হল।ম্যাগার্থ সত্যিই সুপুরষ।

এরপর ম্যাগার্থ পানীয় শেষ করে বিছানায় ভিডার খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে বলল, আমি একটা বড়সড় দাঁও মারার তালে আছি। ঠিক মতো গুছিয়ে কাজটা করতে পারলে আমার কপাল খুলে যাবে আর তাহলে তোমাকে বিয়েও করতে পারবো। অতএব যা বলছি তা মন দিয়ে শোনো।

আমি ক্লানডিশ বাড়ির মেয়েকে খুঁজছি।

তুমি– কি বলছো?

 না না। তোমার চিন্তার কিছু নেই। এটা একটা ব্যবসায়িক ব্যাপার। কালকের সকাল থেকে ছদিন বাদে মেয়েটা ওর সম্পত্তি পেয়ে যাবে। মেয়েটাকে খুঁজে বের করে যদি ওর সম্পত্তি খুঁজে পেতে সাহায্য করি তাহলে ও নিশ্চয়ই আমার ওপর কৃতজ্ঞ থাকবে। মেয়েটাকে এখানে নিয়ে এসে জানতে চাইবো যে ষাট লাখ ডলার দিয়ে ও কি করবে, আমি ওর টাকা দিয়ে ওকে বাড়ি কিনে দেবো, গাড়ি কিনে দেবো, তারপর একজন ক্যামেরাম্যানকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়বো, ব্যাপারটা কি রকম হবে বল দেখি।

ভিভা ক্লান্তভাবে বললো, তোমার অনেক অর্থহীন পরিকল্পনার মধ্যে এটাও একটা। মেয়েটা যে সাংঘাতিক, ওর যে মাথা খারাপ, সেটা কি মনে আছে?

ওসব কথায় আমি দমছিনা। মেয়েটাকে আমি দিব্যি সামলাতে পারবো, মেয়েটার নার্সের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। ও বলেছে মেয়েটার মনে দুটো ভাগ। মাঝেমাঝেই ওকে রোগটা আক্রমণ করে। তবে বাকি সময় ও বেশ মিষ্টি স্বভাবের মেয়ে হয়েই থাকে। আর একটা মিষ্টি স্বভাবের মেয়ের উপর নজর রাখার জন্য আমাকে খুব ভালই মানিয়ে যায়।

তুমি একটা ইঁদুর। এই বলে ভিডা কম্বলের তলা থেকে ম্যাগার্থের দিকে লাথি ছুঁড়ল।

 ম্যাগার্থ বলল বাধা দিও না। শোনো মেয়েটার অছিদের মধ্যে সাইমন হার্টম্যান বলে একটা বুড়ো,স্যানাটোরিয়ামে গিয়ে হাজির হয়েছিল।নার্সটা বলল, ক্যারল পালিয়ে গেছে বলে লোকটা রাগে আধপাগল হয়ে গেছিল। ও বুঝতে পেরেছিল যে ওর অছিগিরি আর টিকবে না, ষাট লাখ ডলার ওর হাত দিয়ে গলে বেরিয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় হার্টম্যান যাতে ষাট লাখ ডলার আত্মসাৎ করতে পারে তাই মেয়েটাকে পাগলাগারদে আটকে রাখা হয়েছে। আসলে মেয়েটা সেরকম ভয়ঙ্কর নয়।

ভিডা বলল, বাজে কথা বলল না। জন ব্লানডিশই এরকম ব্যবস্থা করে গিয়েছিল।

ওর সম্বন্ধে ব্লানডিশের কোন আগ্রহই ছিল না। যা করার ওই হার্টম্যানই করেছে। একটা লোক ওর কুকুরকে পেটাচ্ছিল বলে ক্যারল তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাই ওকে পাগলা গারদে পুরে রাখা হল।

কিন্তু মেয়েটা তো সাংঘাতিক। ও ট্রাক ড্রাইভারের কি দশা করেছিল মনে আছে?

সেটা ও ওর ইজ্জত বাঁচানোর জন্য করেছিল। এক একটা মেয়ের কাছে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। তুমি অবশ্য এই ব্যাপারটা বুঝবে না।

আজ রাত্তিরে কালো রঙের একটা বিরাট প্যাকার্ডে আমি দুটো লোককে দেখলাম। ওরা ব্লু মাউন্টেন সামিটের শেয়াল খামারের মালিক স্টিঙ লারসনের খোঁজখবর নিচ্ছিলো।

ভিডা বলল, আমি স্টিঙকে দেখেছি, ও খুব সুন্দর। ও লোক দুটো বোধহয় সুলিভ্যান ব্রাদার্স ম্যাগার্থ বলল, ওরা দুই পেশাদার খুনে।

 ভিডা অবাক হয়ে বললো তার মানে।

আমাকে বলতে দেবে কিনা।

 ধরো তুমি কাউকে খুন করতে চাও, তবে সুলিভ্যানদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ওরা তোমার কাজটা খতম করে দেবে, তোমার কাজ শুধু ওদের টাকা গছিয়ে দেওয়া।

আমি লারসনের ফার্মে গিয়েছিলাম, সেখানে দেখলাম কেউ নেই। ঘরে ঢুকে আমি এই জিনিষটা পেলাম, একটা রুমাল বিছানায় রেখেও বলল, আমি বাজি রেখে বলতে পারি এটা ক্যারল ব্লানডিশের সম্পত্তি। দ্যাখো এক কোণে ওর নামও লেখা আছে। আরো একটা জিনিষ ওখানে পেলাম ডাক্তার-ট্রেভার্সের শশাফেয়ারের কোট, সেটা ক্যারল পাগলাগারদ থেকে পালাবার সময় নিয়ে গিয়েছিল।

মনে হয় লারসন আর মেয়েটা একসঙ্গে ছিল। সুলিভ্যান ব্রাদার্সরা ওদের ঘরছাড়া করেছে।

যাক গে এখন ভোর হবার আগে অবধি আমি বিশ্রাম নিতে চাই। আর বিশ্রাম মানে একেবারে বিশ্রাম বুঝেছো।

.

ক্যারল প্যাকার্ডের স্টিয়ারিং চেপে বসেছিল। ওর হৃৎপিণ্ড জুড়ে যেন বরফের হিম কাঠিন্য, ড্যাশবোর্ডের আলোয় স্টিঙের ফ্যাকাশে মুখ ও পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিল। স্টিও চোখ বন্ধ করে পড়ে আছে। ভাবল সুলিভ্যানদের আওতা থেকে বেরিয়ে আসবার পরেই ও গাড়িটা থামাবে।

সঙ্কীর্ণ রাস্তায় গাড়ি চালানো অসম্ভব। তাও সে তীব্র গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিল। এর পরে ও হাইওয়েতে উঠল একটা পরিত্যক্ত কাঠগোলা চোখে পড়ল, ও সেখানে গাড়িটা থামাল।

এরপর ও স্টিঙের দিকে ঝুঁকে পড়ল। ও ভাবল যে স্টিঙের যদি মৃত্যু হয় কি হবে। স্টিঙের মাথাটা কোলে নিয়ে মনে হল ভীষণ ভারি আর প্রাণহীন।ও চীৎকার করে উঠতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিল। এরপর বহু কষ্টে ও স্টিকে গাড়ি থেকে নামিয়ে পাইন পাতার ওপরে শুইয়ে দিল।

এরপর কোট খুলে ওস্টিঙের বুকে হাত রাখলো,বুঝলল যে অতিক্ষীণ ভাবেহৃৎপিণ্ড চলছে। স্টিঙ যে এখনও বেঁচে আছে এই ভেবেও কিছুটা নিশ্চিত হল।

কিছুক্ষণ পরে স্টিঙ ক্ষীণভাবে চোখ তুলে তাকালে ক্যারল বলল, স্টিঙ তোমারকি খুব কষ্ট হচ্ছে? দেখি যদি রক্তপড়া বন্ধ করতে পারি।

স্টিঙ যন্ত্রণায় মুখটা কুকড়ে বলল যে বুকের মধ্যে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে।

ক্যারল বলল, স্টিঙ তুমি মরতে পার না। আমি তা সহ্য করতে পারবো না।

ক্যারল কেঁদে বলল কিভাবে তোমার যন্ত্রণা কমবে। আমি সাহায্যের জন্য কার কাছে যাবো। তোমায় কোথায় নিয়ে যাবো।

স্টিঙ বিড়বিড় করে বলল, ডাক্তার ফ্লেমিং। সোজা পয়েন্ট ব্রিজে নেমে বাঁ দিকের দুনম্বর বাঁকে। রাস্তার পাশে ছোট বাড়ি। মাইল কুড়ি দূরে, এছাড়া আর কেউ নেই। কোনরকমে এই কথাগুলো বলেই স্টিঙ আবার অজ্ঞান হয়ে গেল।

ক্যারল ভাবলো কুড়ি মাইল দূরেই ডাক্তার ডাকতে যাবো। এছাড়া যখন আর কোন উপায় নেই, সে ভাবল স্টিঙকে সঙ্গে নিয়ে যাবে। তারপর স্টিঙের এখন নড়াচড়া করলে ক্ষতি হবে এই ভেবে তাকে সেখানে রেখে সে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে ফ্লেমিংকে আনতে রওনা হল।

পয়েন্ট ব্রিজ অবধি কিভাবে গিয়েছিল তা ক্যারলের মনে নেই। পয়েন্ট ব্রিজে পৌঁছতেই বাইরের কোন ঘড়িতে রাত আড়াইটের ঘণ্টা বাজলো। সে খুব সহজেই ডাক্তারের বাড়ি খুঁজে পেল। সে দরজায় আঘাত করতে মাঝবয়সী এক মহিলা এসে দরজা খুলে দাঁড়ালো। বিবর্ণ ড্রেসিং গাউন পরা, চুলগুলো অগোছালো।

মহিলা বলল, অত শব্দ করছিলে কেন।

ক্যারল বলল, একজন খুব অসুস্থ। আমি ডাক্তারবাবুর সঙ্গে দেখা করতে চাই।

এখানে কিছু লাভ হবে না। ডাক্তারবাবু অসুস্থ তিনি যেতে পারবেন না।

কিন্তু ডাক্তারবাবু না গেলে তো বাঁচানো যাবে না।

না বাঁচবে তো আমি কি করবো?

 তুমি অন্য কোথাও যাও। এই বলতে বলতেই মহিলা ক্যারলের বাঁহাতের মনিবন্ধের কাটা জায়গাটার দিকে তাকিয়ে দেখে গলার সুর নরম করে বলল, তুমি ভেতরে এসো দেখি যদি তোমার সঙ্গে যাওয়ার জন্য ডাক্তার বাবুকে রাজি করাতে পারি।

ক্যারল মহিলার হঠাৎ পরিবর্তনে ভয় পেলেও শুধু স্টিঙকে বাঁচাতে হবে এই ভেবে ভিতরে ঢুকলো।

তুমি বস, আমি ডাক্তারবাবুকে বলছি। দেরী হবে না।

মহিলা বেরিয়ে গেল। একটু পরেই ও বুঝতে পারলো যে ও ফাঁদে পা দিয়েছে।

ক্যারল শুনতে পেল মহিলা বলছে, আরে গ্লেনভিউর সেই পাগলীটা নিচের তলায়। সেই যাকে সবাই খুঁজছে।

কি বলছো তুমি পুরুষকণ্ঠের উত্তর এলো। কিন্তু মেয়েটা যে সাংঘাতিক, কি করে ওর কাছে যাবো।

যাও বলছি। তুমি নিজেই জানো, তুমি ফোন করতে পারবে না। মেয়েটাকে ধরতে পারলেই পাঁচ হাজার ডলার পুরষ্কার।

ক্যারল দুচোখ বন্ধ করে ফেললো। ও ভাবলো বোধহয়–স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু ও শুনতে পেল টেলিফোনের ঘন্টি আর একজোড়া এলোমেলো পায়ের শব্দ কেউ সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে আসছে। ক্যারল মনে মনে ভাবল এ বাড়ি থেকে পালাতেই হবে।

এর মধ্যেই সামনের দরজাটা খুলে গেল। একটা লোক ঢুকল। লোকটার মাথায় টাক। বাঁকানো নাক।

নাকি সুরে লোকটা বলল, শুনলাম তুমি নাকি মুশকিলে পড়েছ। বলো আমাকে কি করতে হবে।

ক্যারল বললো, আমি ভুল করে ফেলেছি। আপনাকে আমার প্রয়োজন নেই।

বুড়ো বলল, অত তাড়াহুড়ো করো না। বুড়ো হলেও আমি ভাল ডাক্তার তুমি বরং এখানেই থেকে যাও আমরাও তাই চাই। একটু কফি খাও।

এর মধ্যেই মহিলা ঘরে ঢুকলো। স্বামীকে বলল, তুমি কিন্তু ওর সঙ্গে যাবে।

কিন্তু মেয়েটা মত পালটে ফেলেছে।

ক্যারল বলল–আমি এখন যাবো।

মহিলা বলল, যাও তুমি পোষাক পরে নাও। আমি এর মধ্যে ওর জন্য এক কাপ কফি করে আনি।

ক্যারল বললনা, না আমি এখান থেকে যেতে চাই।

মহিলা কঠিন দৃষ্টিতে বলল, আমরা জানি তুমি কে। কাজেই তুমি এখান থেকে যেতে পারবে না।

ক্যারল দরজার দিকে দৌড়ে গেল কিন্তু সেখানে চাবি লাগানো। হঠাৎ একটা ছোট দরজা ভেজানো দেখলো ক্যারল। হাতলে টান দিতেই দরজাটা খুলে গেল। মহিলা ওকে ছুটে এসে ধাক্কা মারতেই ক্যারলের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল।

.

শেরিফ ক্যাম্প নিজের অফিসে ছোট্ট খাঁটিয়াতে বসে নাক ডাকছিল। কিন্তু সহকারী স্টামের ঝাঁকুনিতে সে উঠে বসল।

কি ব্যাপার?

ওরা ওকে খুঁজে পেয়েছে।

 তার মানে মেয়েটাকে কেউ খুঁজে পেয়েছে। কে পেলো?

ডাক্তার ফ্লেমিং। উনি ফোন করে ওর বাড়িতে যেতে বললেন তাড়াতাড়ি।

হার্টম্যান সঙ্গে সঙ্গে তৈরী হয়ে স্টামকে বলল, পত্রিকার লোকদের ডেকে পাঠাও। তারপর তাদের নিয়ে তুমিও এসো। আমি আগে যাচ্ছি।

সাইমন হার্টম্যান ঘুমোতে পারছিলেন না। হোটেলের বিলাসবহুল ঘরে বসে বসে মদ খাচ্ছিলেন। ছোট খাটো শক্ত ধাঁচের চেহারা ওঁর। ওঁর রাতের ঘুম উড়ে গেছিল। নিউ ইয়র্কের একদা অন্যতম শ্রেষ্ঠ সলিসিটার ফার্ম সাইমন হার্টম্যান অ্যান্ড রিচার্ডসের প্রধান অংশীদার ছিলেন এই হার্টম্যান। কিন্তু রিচার্ডস অবসর নেবার পর থেকেই ব্যবসায় ভাঙ্গন শুরু হয়। ঠিক তখনই ব্লানডিশ মারা যায়। গঠিত হয় ব্লানডিশ অছি পরিষদ। রিচার্ড আগ্রহ হারিয়ে ফেললো। অছিহিসেবে তখন সব দায় হার্টম্যানের হাতেই পড়লো।

 এই জন্যই ক্যারল পালিয়ে যাওয়াতে সে প্রায় পাগল হতে বসেছিল। কারণ ক্যারল যদি ফিরে এসে সম্পত্তি দাবী করে। অবশ্য এর মধ্যেই তিনি অনেকটা সম্পত্তি উড়িয়ে দিয়েছেন।

হার্টম্যান ভাবল আর মাত্র ছদিনের মধ্যে যদি মেয়েটাকে না পাওয়া যায় তাহলে তার কপাল ভাঙ্গবে।

এর মধ্যেই ফোন বেজে উঠলো। অপর প্রান্ত থেকে স্টাম বলল ডাক্তার ফ্লেমিং মেয়েটাকে খুঁজে পেয়েছেন।

তিনি কোন জায়গায় থাকেন?

স্টাম তাকে বুঝিয়ে বলল। হার্টম্যান ওভার কোটটা পরে উঠে দাঁড়ালেন ফ্লেমিং-এর বাড়ি যাওয়ার জন্য।

.

পয়েন্ট ব্রিজ রেল ইয়ার্ডের একটা কাফের কাছে একটা খালি ট্রাক এসে থামলো।

ড্রাইভার বললো আপনাদের এখানেনামলে চলবে। সুলিভ্যানরা বলল খুব চলবে। বলে নেমে গেলো। ফ্র্যাঙ্ক বলল, আমাদের কপাল ভালই বলতে হবে। দিব্যি ট্রাকটায় চেপে আসতে পারলাম।

বেশি বকো না। এই বলে ম্যাক্স সামনের কাফেটায় ঢুকে গেল।

কাউন্টারের সামনে বসে ওরা কফির অর্ডার দিল।

পরিচারিকা কফি আনতে ফ্র্যাঙ্ক মনে মনে ভাবল মেয়েটার শরীরটা চমৎকার। সে ভাবল ম্যাক্সের সঙ্গে আলোচনা করবে কিন্তু মনের ইচ্ছা মনেই রাখল কারণ ম্যাক্সের তার মতো মেয়েছেলেতে আগ্রহ নেই।

মেয়েটা সুলিভ্যানদের দেখেই বিচলিত হল।

ম্যাক্স বলল, জানিনা লোকটা মরেছে কিনা যদিও আমি দুদুবার গুলি চালিয়েছি। ওর মরা একান্ত দরকার কারণ ও আমাদের কাজের সাক্ষী।

তারপর হাই তুলে বলল, সে যাই হোক এখন তো আমাদের একটু ঘুমানো দরকার কিন্তু কোথায় ঘুমাবো।

মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করে দ্যাখো ও মনে হয় বলতে পারবে, ফ্র্যাঙ্ক বলল।

ম্যাক্স মেয়েটাকে বলল, এদিকে কোথাও শোবার জায়গা পাওয়া যাবে?

মেয়েটা বলল, রাস্তার মোড়ে কয়েদখানার পাশেই একটা হোটেল আছে।

আচ্ছা এখানে হাসপাতালটা কোথায়। হাসপাতাল তো এখানে নেই। সবচাইতে কাছের হসপিটাল এখান থেকে পাঁচ মাইল দূরে ওয়ালটনভিলে।

ম্যাক্স বলল, চল ফ্র্যাঙ্ক। একটু ঘুমাতেই হবে।

কিন্তু রাস্তার মোড়ে এসে থমকে গেল ওরা। ওখানে কি হচ্ছে!

শেরিফ ক্যাম্পকে তাড়াতাড়ি কয়েদখানার সিঁড়ি ভেঙ্গে নামতে দেখে ওরা খানিকটা পিছিয়ে গেল। দেখল গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করে শেরিফ ব্যস্ত ভাবে বেরিয়ে গেল।

মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে।

 ঘুম চুলোয় যাক আগে দেখতে হবে কি ব্যাপার।

.

বিছানার পাশে টেলিফোন বাজতে শুরু করল।ভিডাবলল, বাজুক ধরবোনা। মনে হয় আমার কোনো প্রেমিকের টেলিফোন।

বাজে কথা থামাও, টেলিফোনটা আমারও হতে পারে।বলে ম্যাগার্থ ফোন ধরতে হাত বাড়াল।

কিন্তু তুমি যে এখানে আছে কেউ জানে না।

আমার পত্রিকায় সম্পাদক মশাই সব জানেন।

 ম্যাগার্থ বলল, হ্যালো

ম্যাগার্থ নাকি হে?

ম্যাগার্থ সম্পাদকের গলা চিনতে পারলো। সম্পাদক বলল-ওই মেয়েছেলেটাকে নিয়ে শুয়ে আছ নাকি?

আর কি নিয়ে শোবো। ঘোড়া?

শোন বিছানা ছেড়ে ওঠো। ওরা সেই ব্লানডিশ কন্যাকে পেয়ে গেছে। তুমি ক্যামেরা নিয়ে ওখানে চলে যাও তুমি না যাওয়া অবধি শেরিফ কিছু করবে না। ওর ইচ্ছে মেয়েটাকে গ্রেপ্তার করার সময় ওর একটা ফটো তোলা হোক।

এক্ষুণি যাচ্ছি। ওঃ ভগবান শেষ অবধি ওরা মেয়েটাকে পেয়ে গেলো। মেয়েটাকে ওরা পাগলা গারদে পুরলে আমার বাড়া ভাতে ছাই পড়বে। নাঃ ওকে আমার বাঁচাতেই হবে।

ডাক্তার ফ্লেমিং-এর বাড়ির সদর দরজা আর খিড়কির দরজার মাঝের সঙ্কীর্ণ বারান্দাটুকু লোকে লোকারণ্য। ফিল ম্যাগার্থ ক্যামেরা নিয়ে পেছনের দরজার গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।

ক্যাম্প বলল, ম্যাগার্থ আমি মেয়েটাকে বের করে আনলেই ছবি তুলে ফেলবে।

এখনও বের করেননি, বলা তো যায় না মেয়েটাই হয়ত আপনাকে বার করে আনবে।

ক্যাম্প-চোরাকুঠুরী দরজায় আঘাত করে বললো, আমরা জানি, তুমি ভেতরেই আছো। তুমি ভাল চাও তত বেরিয়ে এসো।

এদিকে ক্যারল অন্ধকার চোরাকুঠুরিতে আরো খানিকটা সেঁটিয়ে গেল। ও ঘরের চারিদিকে হাতরে বুঝেছিল যে এই একটা দরজা ছাড়া বেরোনোর আর কোন পথ নেই। নিজেকে মুক্ত করার জন্য ও মরীয়া হয়ে উঠলো কারণ না হলে স্টিঙকে বাঁচানো যাবে না। তারপর ক্যাম্প সজোরে, ধাক্কা মেরে দরজাটা খুলে দিতেই ক্যারল একটা শিক দিয়ে ঘরের সুইচ নিভিয়ে দিল। ফিউজ নষ্ট করে দিলো।

ক্যাম্প ঘরের মুখে উঁকি দিয়ে বলল, বেরিয়ে এসো বলছি।

হার্টম্যান বলল যান, ভেতরে গিয়ে মেয়েটাকে ধরে আনুন। তবে দেখবেন ও যেন ব্যথা না পায়। জর্জ স্টীম কেটে পড়ার তালে ছিল। ক্যাম্প তাকে ডাকতে সে বলল, আমি নীচে নামছি না। আমার পাগলকে খুব ভয় লাগে।

তখন ম্যাগার্থ বলল, আমি আপনার সঙ্গে যেতে রাজি। তখন শেরিফ আর ম্যাগার্থ ঘরের মধ্যে ঢুকল গাঢ় অন্ধকারে তারা কিছুই দেখতে পেল না।

ক্যারল শেরিফের হাত ধরে হ্যাঁচকা টান মারল; শেরিফ সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল। আর ম্যাগার্থও লোকজনের মধ্যে বিভ্রান্তি বাড়িয়ে তোলার জন্য এক বীভৎস চীৎকার করে উঠলো। জর্জ স্টীমের গায়ে গিয়ে সজোরে পড়লো মাগার্থ। সে আবার সিপাইদের ঘাড়ে লাফিয়ে পড়লো।

ম্যাগার্থ চীৎকার করে বললো, সাবধান মেয়েটা কিন্তু আমাদের মধ্যেই এসে পড়েছে সমস্ত জায়গাটা যেন কিছুক্ষণের জন্য বিভ্রান্তি, অরাজকতা, এবং আতঙ্কের রাজত্ব হয়ে রইলো।

সেটুকুই ক্যারলের পক্ষে যথেষ্ট ছিল। সে বারান্দায় বেরিয়ে এসে সদর দরজার কাছে হৈ চৈ শুনে খিড়কির দরজা খুলে পেছনের বাগানে বেরিয়ে পড়লো। ম্যাগার্থ ওকে দেখতে পেয়ে দ্রুত অনুসরণ করলো।

ক্যারল বাগানের পথ দিয়ে অন্ধের মতো ছুটছিলো। ছুটতে ছুটতে একসময় একটা গাছের মোটা শিকড়ে পা আটকে পড়ে গেল ও।

এক মুহূর্ত নিস্পন্দ হয়ে পড়ে ছিল ক্যারল। তারপর উঠে বসতে যেতেই ম্যাগার্থ ওর সামনে ঝুঁকে দাঁড়াল।

ম্যাগার্থ বলল, ভয় পাবেন না, আমি আপনাকে সাহায্য করতে চাইছি। আমিই আপনাকে পালাতে সাহায্য করেছিলাম।

ক্যারল ম্যাগার্থকে দেখে ভরসা পেল। বলল, আপনি কে?

আমি ফিল ম্যাগার্থ, কাগজের লোক। আপনিও তো ক্যারল ব্লানডিশ তাই না।

জানিনা একটা দুর্ঘটনা হয়েছিল তারপর কিছু মনে নেই। স্টিঙের দারুণ চোট লেগেছে। ওকে বাঁচাতে হবে আপনি আমাকে সাহায্য করবেন?

স্টিঙ লারসন? ম্যাগার্থ চোখ কুঁচকে বললো।

হ্যাঁ, আপনি ওকে চেনেন।

কিন্তু ওর কি হয়েছিলো? ওই কালো পোষাক পড়া লোক দুটো কি? হ্যাঁ, ওরা ওকে গুলি • করেছে।

ম্যাগার্থ বলল, সত্যিই কি আপনি জানেন না যে আপনি কে?

না, তবে যদি সাহায্য করতে চান আর সময় নষ্ট না করে আমার সঙ্গে আসুন। পাহাড়ের ওপর দিকে একটা কাঠগোলায় আমি ওকে রেখে এসেছি।

আচ্ছা আমি গাড়ি নিয়ে আসছি আপনি জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে থাকুন।

ফিল গাড়ি আনতে গেল। ক্যারল এখন সম্পূর্ণ একা, একটু পরেই তার ভয় করতে লাগল মনে হল ওর সঙ্গে গেলেই ভাল হত। এই মনে করে সে এগোতে লাগল। সহসা তার গতি বন্ধ হয়ে গেল।

বিরাট একটা গাছের গুঁড়ির পেছন থেকে একটা পুরুষালি টুপির ওপরের অংশ দেখা গেল। এর পরেই কালো ওভার কোট আর কালো স্নাউচ টুপি পরা একটা লোক গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে ক্যারলের পথ আটকে দাঁড়াল।

লোকটা ম্যাক্স, সে বলল, দেখো ঝামেলা কোরোনা। তোমাকে আমার দরকার।ক্যারল অস্ফুট আর্তনাদ করে উল্টো দিকে অন্ধের মতো ছুটতে লাগল। কিন্তু সেখানে ফ্র্যাঙ্ক ছিলো।

ক্যারল দাঁড়িয়ে পড়লো। ওর হৃৎপিণ্ডের গতি বন্ধ হয়ে গেলো।

ক্যারল বলল, আমাকে ছুঁয়োনা। দয়া করে চলে যাও।

ম্যাক্স বললো, তোমাকে আমাদের দরকার। আর লারসন কোথায় তাকেও আমাদের দরকার।

 আমি কিছু জানি না।

 সবই জানবে। কি করে মেয়েদের মুখ থেকে কথা বার করতে হয় তা আমি ভালই জানি।

 ক্যারল চীৎকার করে বলল, ছেড়ে দাও আমাকে। ফ্র্যাঙ্ক এক লাফে এগিয়ে এসে ক্যারলের চুলের গোছা ধরে টেনে নিয়ে বললো। ম্যাক্স ওকে ভাল করে পেটাও। ম্যাক্স সজোরে ক্যারলকে আঘাত করলো।