নিজের ঘরে ফিরে চেয়ারে শরীর এলিয়ে চোখ বুজলাম। হুঁ, জালে এবার মোক্ষম টান পড়েছে। ছবিছাপাহলে, কে কোথায় আমাকে দেখেছেভগবান জানেন।এখনআসল যে কাজটা গাড়ির ট্রাকে রাখা বড়মানুষের মেয়েটি তো চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই গন্ধ ছড়াতে শুরু করবেন। আজ রাতের মধ্যেই হেস্তনেস্ত করা দরকার। নিনা জেগে থাকলে আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব না।
হঠাৎ বেজে উঠলো ফোন। নিউজ ডেইলির বার্তা সম্পাদকের ফোন। সব জানালাম।
জেল থেকে বেরোবার পর নিনার তাড়া খেয়ে এরকমই একটা ব্লেজার আমাকে কিনতে হয়েছিল। রেনিকের স্বরে চমকে উঠলাম। দেখি রেনিকের হাতে হুবহু সেই ব্লেজার।
কি হে, স্ত্রীর ধ্যানে বসলে নাকি।নাও চটপট এটা পরে ফেলল। ছবি তোলার লোকেদের বসিয়ে এসেছি।
অতএব উঠতে হল। ছবি দেখে মিভোজ ভারি খুশী। রেনিক মিতোজকে জানাল যে, সেদিন প্লেনে যারা ছিল তাদের মধ্যে এয়ারহোস্টেস ছাড়া সেই মেয়েটি একাকিনী।
মেয়েটার নাম কি?
অ্যান হারকুট। মিস ম্যানরুক্সের ছবি এয়ারহোস্টেসকে দেখালামনা এরকম চেহারার মেয়ে সে রাতে প্লেনে ছিল না।
চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়ালাম– জন, আমি তাহলে…
হ্যাঁ, স্বচ্ছন্দে।
নিজের কামরায় গিয়ে নিনাকে ফোন করলাম।
হ্যারি।
হ্যাঁ, আজও ফিরতে রাত হবে আমার।
সামরিক বাহিনী উত্তরপ্রান্ত থেকে তল্লাশী চালাতে চালাতে ক্রমশঃ দক্ষিণ-মুখো এগোচ্ছে। হিসেবমতো এতক্ষণে তারা আমার বাড়ির দিকে…।
হ্যামন্ডের সাকরেদ টেড ব্রাউনকে একটা গাড়ি দিতে বললাম।
বেশ তো, গাড়ি নেবেন, এ আর বেশি কি কথা।
ঠিক আছে, চটপট তেল-টেল ভরে দাও। নটার মধ্যে আমাকে আবার…।
এমন সময় স্বয়ং হ্যামন্ড এসে হাজির।
হ্যামন্ড বাকিতে গাড়ি দিতে চাইলেন না। উনি চাইছে ত্রিশ ডলার, আর আমার কাছে আছে মাত্র সোয়া দু ডলার।
না, আর দাঁড়ালাম না। এগোলাম বাড়ির দিকে।
সামনের মোড়টা পেরোলেই বাড়ি। মোড়ের কাছাকাছি পৌঁছে থমকে দাঁড়ালাম। সার্জেন্ট…।
তার মানে আমার বাড়িটাও খানা তল্লাসী করেছে। দেখি গ্যারেজের দু-পাশ্লার দরজাটা খোলা। একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে সামরিক বাহিনীর পোশাক পরা দুই যুবক। নিনা দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে তাদের কি যেন বোঝাচ্ছে।
আমি কাছে যেতেই নিনা বলে উঠল, ঐ তো-খোদ বাড়ির মালিক হাজির। যা দরকার–ওর কাছেই বলুন।
কি ব্যাপার নিনা? এতো রাতে এঁরা দুজন, ব্যাপার কি?
গাড়ির ট্রাক খুলে না দেখানো অবধি
কেন?
আগে তুমি ট্রাঙ্কের চাবিটা দাও এদের।
কিন্তু নিনা চাবিটা আসার সময় দোকানে দিয়ে এলাম। নতুন একজোড়া চাবি বানিয়ে নেবার জন্য…।
কাল আটটার পর নতুন পুরনো সব চাবিই এসে যাচ্ছে। তখন আসুন।
ঠিক আছে, বলে হ্যাঙ্ক চলো জো, এখনও অর্ধেক রাস্তা।
দাঁড়াও, দাঁড়াও-কালকের জন্য কিছু ফেলে রাখা যাবে না। ট্রাঙ্ক ভেঙেই বরং…।
তার মানে! ট্রাঙ্ক ভাঙতে চাইলে আমি যে ট্রাঙ্ক ভাঙতে দেবো এ কথাটা আপনার মাথায় ঢোকালো কে?
সঙ্গে আমার ওয়ারেন্ট আছে।
আমি পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সে চাকরি করি।
ট্রাক আমাকে ভাঙতেই হচ্ছে।
খবরদার। নিনা সামনের মোড়ে একজন সার্জেন্টকে দেখে এলাম, তাকে একবার…।
তোমাকে ফাঁসিকাঠে ঝোলাবেন।
মিনিট দুই কাটতে না কাটতে ফিরে এলো নিনা সঙ্গে আগের দেখা সেই সার্জেন্ট।
কি ব্যাপার, এতো গোলমাল কিসের?
ট্রাঙ্কটা আমি খুলতে চাই, ইনি বলছেন চাবি এর কাছে নেই। তালা ভেঙে দেবার কথা বলছি, তাতেও ইনি রাজী নন।
চাবি, আপনার কাছে নেই কেন?
নতুন একপ্রস্থ চাবি বানাতে আমার সব চাবিই আজ দিয়ে আসতে হল দোকানে।
কোন দোকান?
সেক্রেটারীকে দিয়েছিলাম, তিনি কোথায় দিয়েছেন, জানি না। হেড কোয়ার্টার্সে চাকরি করি, সারা দিন যা ঝামেলা। বারবার বলছি এঁরা যেন কাল এসে যখন হোক যা দেখার দেখে যায়–ঐ এক গো–তালা ভেঙে এখনই এই মুহূর্তে ট্রাঙ্ক দেখবেই।
এটা আপনাদের বাড়াবাড়ি হচ্ছে।হেড কোয়ার্টার্সের লোক…কথায়ও তো একটা দাম দিতে হয়।
ট্রাঙ্ক আমি ভাঙবোই।
ভাঙার আগে ক্ষতিপূরণের কথাবার্তা যে মনে রাখতে হবে।
আমি বললাম, অত তর্ক-বিতর্কে লাভ নেই। বরং এক কাজ করা যাক, রেনিককে একবার ফোন করি। সে যদি মত দেয়, তবেই তালা ভাঙবেন।
ঠিক, আপনি তাই করুন। সার্জেন্ট বলে উঠলো।
ধ্যাৎ, পুলিশের কাজ কারবারই এমন। চলল হ্যাঙ্ক, এখানে আর না। রিপোর্ট দেবার সময় চীফ অফিসারকে আমি সব ব্যাপারটা বলব।
ধন্যবাদ সার্জেন্ট, অসংখ্য ধন্যবাদ। অভিবাদন জানিয়ে বিদায় নিলো সে।
নিনা কপাল চাপড়ালো, ও কি কাণ্ড! সামান্য একটা চাবির জন্য। দুদিন সবুর করলেও তো…
বাদ দাও, আর ভালো লাগছে না। দাও চাবিটা দাও, গ্যারেজের তালা বন্ধ করে রাখি।
চাবি দিলো নিনা। দাও, এবার একটু হুইস্কি দাও।
ধরো সিগারেট।
দাও।
দেশলাইটা কোথায় যে রাখলাম।
আমার কোটের পকেটে লাইটার আছে।
নিনা কোটের পকেটে হাত ঢোকালো। হ্যারি…! নিনা চীৎকার করে উঠলো। চকিতে তার দিকে তাকালাম। দু-আঙুলের ফাঁকে ধরা আমার চাবির রিং। সব চাবিই ওতে আছে।
গলা আমার শুকিয়ে কাঠ। হাত থেকে গ্লাসটা পড়ে গেল আমার।
নিনার মর্মভেদী দৃষ্টির সামনে পড়ে আমি আরেকবার মৃত্যুকে যেন প্রত্যক্ষ করলাম।
ঘড়িতে তখন ঢং ঢং করে দশটা বাজলো। নীরবতা ভাঙলো নিনা। বিড়বিড় করে বলল, মেয়েটা তাহলে গাড়ির ট্রাঙ্কেই আছে।
আমি মাথা নীচু করলাম।
বলো হ্যারি, কি করেছ তুমি হাঁটু গেড়ে বসে আমাকে ঝাঁকালো।
বিশ্বাস করো–আমি কিছু করিনি।
তুমি তাকে খুন করেছ?
না নিনা, না তোমার গা ছুঁয়ে বলছি আমি কিছুই করিনি।
তাহলে গাড়ির ট্রাঙ্কে সে এল কি ভাবে।
সে এক বিরাট ইতিহাস নিনা, তুমি কি সব কথা বিশ্বাস করবে?
চোখের কোণে জল টলমল করে উঠলো। আচ্ছা তোমাকে ছাড়া আমি আর কাকে বিশ্বাস করবো হ্যারি।
এতোদিনের জমাটবাধা কান্না আর বাধা মানলোনা। নিনাকে শক্ত আলিঙ্গনে আঁকড়ে ধরলাম। বললাম, রিয়ার সাথে প্রথম পরিচয়ের বিবরণ থেকে সব।
এমনকি ওদেতের সাথে দুরাত কাটানো।
নিনা বলল এত কাণ্ড। আমায় আগে বলোনি কেন?
বলিনি, আমার এই অভিশাপের কথা তোমাকে বলতে গিয়েও পারিনি।
তুমি…তোমার সব কিছুর অংশীদার হতে চাই আমি।
পরম নির্ভয়ে তাকে বুকে টেনে নিলাম। অনেক দিন পর আবার সহজভাবে শ্বাস নিতে পারলাম।
বাধা দিল নিনা, দেরি করা আর ঠিক নয়, চলো।
হ্যাঁ অনেক বিপদ। মৃতদেহ হয়তো পচতে শুরু করেছে। একবার যদি কয়লাখনিতে নিয়ে যেতে পারতাম।
হ্যাঁ, একখানা গাড়ি এক্ষুনি দরকার, কিন্তু ভাড়ার টাকা।
ভাড়ার টাকা তো ট্রাঙ্কেই আছে। ম্যানরুক্সের টাকার বাক্স-ওদেতের মৃতদেহের সঙ্গেই আছে।
বেশ তাহলে তুমি এক কাজ করো। গাড়ি নিয়ে এসো।
উঠলাম। নিনাকে বললাম তুমি চারিদিকে নজর রাখো। আমি অ্যাটাচি নিয়ে আসছি। গ্যারেজের দরজায় তালা খুলে হাট করে দিলাম। পচা গন্ধ বেরিয়েছে। লাশ পচতে শুরু করেছে। তালাটা খুলে অ্যাটাচিটা বার করলাম। শরীর অসাড়, বৈঠকখানার সোফায় শরীর এলিয়ে চোখ বুজলাম।
হুইস্কির গ্লাস এগিয়ে ধরলো নিনা। দুপ্রান্তে দুটি ট্রি তালা। চাপ পড়তেই তালাটা ফাঁক হল।
কিন্তু না, টাকা নেই, টাকার বদলে একরাশ ভাজ করা খবরের কাগজ। দু-হাতে মুখ ঢেকে আমি চোখ বুজলাম।
গাড়ি ভাড়া করার মত তিরিশ ডলারও আমার নেই।
টাকা, টাকা কোথায়?
নেই।
তা হলে এসব ম্যানরুক্সেরই কারসাজি।
না, কারসাজি করার লোক তিনি নন।
ম্যানরুক্স আসলে একজোড়া হুবহু অ্যাটাচি কিনেছিলেন। চালাকি করে কেউ হয়তো বদল করেছে।
চালাকিটা করবে কে?
কেন, রিয়া, কু-মতলবের শিরোমণি। বিশ্বাসের নামে সে আমাকে ঠকিয়েছে।
থাক, ওসব কথা, আগে একটা গাড়ি যোগাড় করতে হবে। বাঁ দিকের রাস্তায় অজস্র গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে…ওর একখানা যদি নিই?
আমরা গাড়ি চুরি করবো?
না, চুরি নয়, ধার। কিছুক্ষণের জন্য।
রাস্তায় বেড়িয়ে এলাম। অসংখ্য গাড়ি। পুরোনো মডেলের বড়সড় গাড়ি। দরজার হাতলে চাপ দিলো নিনা। খট করে একটা শব্দ। দরজা খুললো। যাক বাঁচা গেলো। চাবিটা ড্যাশবোর্ডেই আছে।
তবে কি এখনই?
না এখন নয়। রাত বাড়ুক, ততক্ষণ আমরা সমুদ্রের পাড়ে একটু বসি।
পাশাপাশি আমরা বসলাম।
ফিসফিস করলো নিনা, কিন্তু মেয়েটাকে খুন করলো কে?
ঠিক, একথাটা আমিও সমানে ভেবে চলেছি।
রিয়া?
হতে পারে।
দেখো, আমার কেবল মনে হচ্ছে তোমার এই রিয়ার একজন প্রেমিক আছে।
হতে পারে।
আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে অনেক প্রশ্নের ঝড় উঠলো। উঠলাম আমরা। চারদিকে সতর্কদৃষ্টি ঘুরিয়ে দরজা খুললো নিনা। গাড়িতে উঠে বসলো। আমিও উঠলাম। বাংলোর দিকে যেতে শুরু করল নিনা।
গ্যারেজে পৌঁছে তালাটা খুলে মৃতদেহ ও অ্যাটাচিটা ঐ গাড়ির মধ্যে রেখে দিলাম। তারপর সমুদ্রের কাছাকাছি নির্জন এক জায়গায় এসে গাড়ি দাঁড় করালো নিনা। আমি আর নিনা নেমে বাড়ির দিকে ছুটতে শুরু করলাম।
বাড়ি ফিরে নিনা জ্ঞান হারালো। জ্ঞান ফিরলো একঘণ্টা পর। আমি এগোলাম গ্যারেজের দিকে।
হ্যাঁ, কাজ এখনো বাকি। ওদেতের টুকিটাকি জিনিস সহ সটকেশটার সদগতি করা দরকার। রান্নাঘরে গ্যাসচুন্নী জ্বেলে সুটকেস পুড়িয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।
সকাল নটার সময় অফিসে গেলাম। মাথা ধরে আছে। রাজ্যের ঘুম আসছে চোখে। প্রায় মিনিট পনেরো পর হঠাৎ ঝনঝন করে বেজে উঠল ফোন।
হ্যালো। হ্যারি বলছি।
হ্যারি, ম্যানরুক্সের মেয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে।
বলো কি!
গুণ্ডারা তার মৃতদেহ একখানা চুরি-করা গাড়ির ট্রাঙ্কে পুরে সমুদ্রের ধারে ফেলে রেখে গেছে।
তার মানে…খুন।
তুমি এখুনি থানায় চলে এসো।
এই সেই গাড়ি, ছবি তোলা থেকে ওরনানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। ট্রাকের তালা খোলা। অ্যাটাচিটা পড়ে আছে একপাশে।
ভারি মজার ব্যাপার, টাকার বদলে অ্যাটাচি বোঝাই এক পাঁজা পুরনো খবরের কাগজ।
বলল কি, অবাক কাণ্ড তো।
যাই হোক, তুমি বরং ম্যানরুক্সের বাড়িতে চলে যাও। ওঁকে সঙ্গে নিয়ে এসো। মৃতদেহ সনাক্ত করতে হবে।
আমি..মানে, উনি তো অসুস্থ।
যাও, উনি আসতে না পারেন ও’রিলেকে সঙ্গে করে নিয়ে এসো।
পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স থেকে আসছি। মিঃ ম্যানরুক্স…
উনি খুবই অসুস্থ। ডাক্তারের বারণ…।
তাহলে মিসেস ম্যানরুক্সকেই ডাকুন।
আমিও তার সঙ্গে গেলাম ভেতরে। টানা হলঘর পেরিয়ে সেই পেছনের উঠোন। আরাম চেয়ারে বসে কাগজ পড়ছে রিয়া। ভারী সুন্দর দেখাচ্ছে। আমাদের পায়ের শব্দে চোখ তুলল। আমার দিকে চোখে চোখ পড়তে সে যেন একটু অবাক হলো। চোয়াল শক্ত হলো তার।ইনি…একে তো ঠিক…
হ্যারি বার্কর। হেড কোয়ার্টার্স থেকে আসছি।
হাতের ইশারায় খানসামাকে চলে যেতে বলল রিয়া। কিছুক্ষণ দুজনেই নির্বাক। আমি হাসলাম, কি চিনতে পারছেন?
রিয়া সিগারেট ধরিয়ে বলল, কেন এসেছে বলুন।
এলাম….আসতেই হলো। মৃতদেহের হদিশ যে পুলিশ পেয়েছে, সেই খবরটুকু জানাতে এলাম।
ওদেত তাহলে মারা গেছে।
বাঃ অপূর্ব। সে যে মারা গেছে একথা আপনার চেয়ে ভালো আর কে জানে?
টাকার লোভে শেষে আপনি ওকে খুনই করলেন?
হাসলাম, আমাকে দোষারোপ করে কোন লাভ নেই মিসেস ম্যানরুক্স। আর কেউ না জানুক, আমি জানি আপনিই দায়ী। আপনাকে নিস্তার দিচ্ছি না।
এসব কি বলছেন।
স্বামী মারা যাবার পর পুরো সম্পত্তি হাতের মুঠোয় আনার এমন সুন্দর এক সুযোগ…
আশ্চর্য, সেদিন রাতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আমি তখন শয্যাশায়ী। আপনি সে রাতে কোথায় ছিলেন?
আমি কোথায় ছিলাম না ছিলাম তাতে আপনার লাভ হবে না। এব্যাপারে আমাকে জড়াতে চাইলে আপনিও নিস্তার পাবেন না।
আপনি অনর্থক ভয় দেখাচ্ছেন মিঃ।মনে রাখবেন, জেল ফেরত একজন কয়েদীর মুখেরকথায় চেয়ে পুলিশ কোটিপতির স্ত্রীর কথাতেই অনেক বেশি মর্যাদা দেবে।
আমাকে যতটা বোকা ভেবেছিলেন, আসলে আমি তা নই। আপনার মতলব বুঝতে আমার এতোটুকু অসুবিধে হয়নি। তাই শুরু থেকেই আমি সতর্ক ছিলাম। আমাদের সব কতাবার্তা আমি টেপ করে রেখেছি।
তার মানে…একা পেয়ে আপনি আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন?
সময় এলে বুঝতে পারবেন। কাঁচের দরজা ঠেলে এক বলিষ্ঠ চেহারার যুবক এল। বয়স আমারই মত।
ও’রিলে…আশ্চর্য। আমার ধারণা ছিল ও’রিলে বয়সে প্রৌঢ়, কিন্তু আজ দেখছি, সে যুবক।
গাড়ি তৈরি ম্যাডাম।
থাক, আজ শরীরটা ভালো নয়, যাব না।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
বলছিলাম, ওদেত-কে যে অবস্থায় পেয়েছি, তার পরনে ছিল নীলের ওপর সাদা ডোরাকাটা স্কার্ট। এই পোশাকটা এলো কোত্থেকে?
স্কার্টটা আমিই কিনে দিয়েছিলাম।সস্তা দামের জামা, মান-টান করতে লাগত। গাড়িতেই রেখে দিতে ওদেত। বলে দ্রুত সে চলে গেল।
আপনি নিশ্চয়ই মিঃ বাৰ্কর?
চমকে চোখ ফেরালাম। আমিই ও’রিলে।
রেনিক বলছিল মৃতদেহ সনাক্ত করতে, আমি যেন আপনাকেই সঙ্গে নিয়ে যাই।
মৃতদেহ, তার মানে মিস ম্যানরুক্স তাহলে খুনই হল।
হ্যাঁ।
সেই একবাক্স টাকা, তার কোনো হদিশ পাননি বুঝি?
না।
টাকার হদিশ বের করুন, এই ষড়যন্ত্রের নায়ক কে তারও হদিশ পাবেন।
হাতে হাত ঘষলো সে,ইস, অমন ফুলের মত মেয়েটা, কোন শয়তান যে তাকে গলা টিপে মারলো। দাঁড়ান মিঃ ম্যানরুক্সকে খবরটা দিয়ে আসি। বলে সে পা বাড়ালো।
আশ্চর্য আমি তোকাউকেই বলিনি ওদেত কিভাবে মারা গেছে। কোনো কাগজেও ছাপা হয়নি। তাহলে ও’রিলে কিভাবে জানতে পারলো যে তাকে গলা টিপে মারা হয়েছে।
হ্যাঁ ঠিক ভেবেছি। এই ষড়যন্ত্রে রিয়ার দোসর ঐ ও’রিলে।
পাঁচ মিনিট পর ও’রিলে এল।
চলুন যাওয়া যাক।
ম্যানরুক্সকে বললেন?
বলেছি।
শুনে খুব ভেঙে পড়েছেন, না?
স্বাভাবিক।
অথচ দেখুন, মিসেস ম্যানরুক্স কিন্তু কত সহজ ভাবেই না নিলেন। হয়তো সৎ মেয়ে বলে পছন্দ-টছন্দ তেমন একটা…।
মাথা নাড়লো ও’রিলে–দুজনের একেবারে গলায় গলায় ভাব ছিল। মিসেস ম্যানরুক্সও কম দুঃখ পাননি। তবু ঐ এক ধরণ। ভেতরে ভেতরে গুমরান।
আমি বললাম, রেনি বলছিলো ওদেত মারা যাওয়ায় লাভটা একদিক থেকে মিসেস ম্যানরুল্পের।…অ্যাটাচির হদিশ পাওয়া গেছে।
কোন অ্যাটাচি?
ম্যানরুক্সের লুটের টাকার।
কোথায় পেলেন?
গাড়ির ট্রাঙ্কে।
পুরো টাকাটাই ছিল নাকি?
না, একরাশ পুরনো খবরের কাগজ।
সেকি! অতটাকা কি হল?
কি জানি…
মৃতদেহ সনাক্ত করে চলে গেলো ও’রিলে। আমি, রেনিক আর বান্টি আমরা তিনজনই জীপে করে হেড কোয়ার্টার্সের দিকে গেলাম।
রেনিক বলল, পোশাক পাল্টালো কেন সে? আর ঐ খবরের কাগজে ঠাসা অ্যাটাচি—
আগামীকাল দুপুরের আগেই আমার রিপোর্ট চাই।
দরজা খুলে উঁকি দিলে এক সার্জেন্ট, স্যর এক ভদ্রলোক আপনার সঙ্গে দেখা করার জন্যে অনেকক্ষণ থেকে বসে আছেন। নাম ক্রাইস কেলার।
পাঠিয়ে দাও,বলল রেনি। কিছুক্ষণ পর এক লম্বা চেহারার যুবক ঘরে ঢুকলো।
পকেট থেকে ভাঁজ করা একখানা খবরের কাগজ বের করে টেবিলে মেলে বলল ছবির এই লোকটিকে আমি দেখেছি লেফটেন্যান্ট।
কোথায়?
এয়ারপোর্টে।
বুকটা হঠাৎ ধক করে উঠলো।
কবে?
শনিবার রাত এগারোটায়। হঠাৎ দেখি এই লোকটা ব্লেজার পরে আসছিল।
তার মানে?
আসলে ব্লেজারের শখ আমার বহুদিনের কিনবো কিনবো করে আর কেনা হয়ে ওঠেনি। সেই জন্য কারোর গায়ে দেখলেই চোখ যায়।
স্বাভাবিক! তা তাকে দেখলে আপনি চিনবেন?
না।
একলা ছিল সে?
না, সঙ্গে একটি মেয়েও ছিল।
মেয়ে! দেখেছেন তাকে। কি পোশাক ছিল?
হ্যাঁ, পরনে ছিল নীলের ওপর সাদা ডোরাকাটা স্কার্ট, রোদ চশমা চোখে দেখতে মন্দ না। মাথায় লাল চুল।
রিসিভার তুললল রেনিক টেইলর? শোনো মেয়েটির পরনের পোশাকটা এখুনি একবার হেড কোয়ার্টার্সে পাঠিয়ে দাও।
কেলার অবাক আপনারা কার খবরটা জানতে চান বলুন তো? লোকটার না মেয়েটার?
কি করছিল তারা?
দুজনে এল লবিতে। একবারও তারা কথা বলেনি।
দরজা ঠেলে ঢুকলো এক সার্জেন্ট। হাতে ওদেতের নীল-পোশাকটা।
এই পোশাকটাই পরনে ছিল কি?
হ্যাঁ, এই জামাই পরা ছিল।
রেনিক হাত বাড়িয়ে দিল– ধন্যবাদ, মিঃ কেলার। ঠিকানাটা দয়া করে দিয়ে যান। আবার দরকার হতে পারে।
চলি তাহলে।
বান্টিকে ফোন করল রেনিক এখুনি চলে এসো। দেরী কোরো না।
আমার দিকে তাকিয়ে রেনিক বলল, হ্যারি, আগাগোড়া ব্যাপারটার মধ্যে কোথায় যেন গলদ আছে–ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের মত এটা ব্যাপার না।
গলাটা আমার কেঁপে উঠলো। কেন, নয় কেন?
কেন নয়, এটাই যদি জানতে পারতাম…।
বান্টি ঢুকলো ঘরে। কি ব্যাপার এত জরুরী তলব?
কেলারের কথা আগাগোড়া বলল রেনিক বান্টিকে।
আশ্চর্য, এয়ারহোস্টেসের বর্ণনার সাথে কেলারের বর্ণনার দেখছি বেশ মিল আছে। প্লেনের মেয়েটির নাম অ্যান হারকুট।
আমার মন বলছে আগাগোড়া ব্যাপারটা মিথ্যে।
আশ্চর্য ব্যাপার, ওদেতের সাথে উইলিয়ামের দেখা মাসদুয়েক হল বন্ধ। আর তার ফোন পেয়েই সে পাইরেসি কেবিনে ছুটলো? সেই যে গেল, সেই যাওয়াই শেষ যাওয়া।
এরপর সঙ্গে এল বাদামী রঙের ব্লেজার, বলিষ্ঠ লম্বা-চওড়া গড়নের এক যুবক। গাড়ি পেছোতে গিয়ে লাগল ধাক্কা ক্যারির গাড়ির সাথে। তারপর দেখা গেল এয়ারপোর্টে। কেলারের বর্ণনা অনুযায়ী সে অ্যান হারকুট। কিন্তু আমার অনুমান সে ওদেত ম্যানরুক্স। সঙ্গী যুবকের কথামতো সে চটপট নিজেকে পাল্টেছে।
তারপর অ্যাটাচির ব্যাপারটা…।
কাল সকালেই সব রিপোর্ট চাই।
রেনিক আমাকে বলল-আর হ্যারি শহরের সব কাগজে মেয়েটির জামার সব ছবি ছাপাওঁ। দেখি কাজ এগোয় কিনা।
না। শেষ চেষ্টা আমার করতেই হবে। ও’রিলের অপরাধ প্রমাণের শেষ চেষ্টা, দেখা যাক। মুখ বুজে চুপচাপ কাজ করতে হল নব্বই মিনিট। খিদেয় পেট চো চো করছে। উঠব-তখনি বেজে উঠলো ফোন।
বিরক্তিতে রিসিভার তুললাম- হ্যালো।
হ্যারি, নিনার উদ্বেগ পূর্ণ স্বর ভেসে এলো।
তুমি এখুনি একবার বাড়িতে চলে এসো, ভীষণ দরকার।
দরকার, কেন হঠাৎ…।
নিনা ফোন নামিয়ে রেখেছে। রেনিকের কামরায় ঢুকলাম।..কি ব্যাপার?মুখ-চোখ এরকম?
আর বোলো না, নিনার ফোন পেলাম, বাড়ি যেতে হবে এখুনি, শরীর খারাপ।
যাও, চট করে ঘুরে এসো। অফিসের গাড়িগুলো…।
কথা শোনার ধৈর্য আমার নেই। বাড়ি পৌঁছলাম। না, নিনা এ-ঘরে নেই।
নিনা, কোথায় গেলে তুমি?
এই যে এখানে।
আমি ঢাকা বারান্দায় উঁকি দিলাম। দরজার দিকে মুখ করে নিনার উল্টো দিকের একখানি সোফায় বসে ও’রিলে। আর ডান হাতে এক ছোট্ট রিভলবার।
দাঁড়িয়ে রইলেন কেন? আসুন।
আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম–এই মুহূর্তে আপনি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান।
রিভলবার শূন্যে ছুঁড়ে লুফে নিয়ে বলল ও’রিলে, আমি অতিথি–আমাকে তাড়ানো কি ঠিক হবে?
কি চান আপনি?
টেপ।
কিসের টেপ?
এই দেখো–সকালে রিয়াকে বলে এলেন–এর মধ্যে সব ভুলে গেলেন।
না ভুলিনি। এককালের ভালমানুষ।
পুলিশ অফিসার ও রিলে যে আজ কোটিপতির বৌয়ের পা-চাটা কুকুর…।
বাঃ চমৎকার, এত কিছু জেনে গেছেন আমার সম্বন্ধে, এবার চটপট টেপগুলো দিয়ে দিন।
না, টেপ আপনি পাবেন না।
মিঃ বাৰ্কর অবাধ্য হবেন না। একটা গুলিতেই সব শেষ হয়ে যাবে, এত অব্যর্থ টিপ আমার।
আমি স্থির, নির্বাক।
ধরুন গুলিটা এক মুহূর্তে আপনার প্রিয়তমা স্ত্রীর ফুসফুস ঝাঁঝরা করে দিতে পারে। বা এই শিশির নাইট্রিক অ্যাসিডটা যদি আপনার স্ত্রীর মুখে কেউ ঢেলে দেয়…ভাবতে আমারই অবাক লাগছে মিঃ বাৰ্কর।
আমি শিউরে উঠলাম। চলুন।
কোথায়?
ব্যাঙ্কে, লকারে টেপগুলো আছে।
সাবধান–ধোঁকা দেবার চেষ্টা করবেন না।
না, চলুন, বলে দরজার দিকে পা বাড়ালাম। নিনা ছুটে এসে পথ আগলালো।
আমি এক ঝটকায় সরিয়ে দিলাম নিনাকে।
টেপ হাতছাড়া করলে, প্রমাণ যে কিছুই থাকবে না। ঝোঁকের মাথায়…
আমি কর্ণপাত করলাম না। কালবিলম্ব না করে গাড়ি ছাড়লাম।
তাকিয়ে দেখলাম কিনা কাঁদছে।
দাঁত বের করে ও’রিলে হাসলো। তবে–এই না হলে মরদ।
আমি নিরুত্তর।
রিয়া বলল, টেপগুলো নাকি আপনার কাছেই রয়েছে। তা বলিহারি বটে আপনাকে! মনের এতো জোর আপনার। রেনিক বোধহয় আপনাকে সন্দেহ করে উঠতে পারেন নি তাই না?
হ্যাঁ, মাথা নাড়লাম আমি।
ঠিক পারবে, নিস্তার আপনি পাবেন না।
জানি।
তবে হ্যাঁ, বিপদে পড়ে শেষে আবার আমাকে বা রিয়াকে ঝামেলায় জড়াবেন না।
আমি ম্লান হাসলাম।
কি হল, হাসছেন যে!
হাসছি আপনার ভবিষ্যতের কথা ভেবে।
অর্থাৎ?
অর্থাৎ যা চিরকালের নিয়ম।
সে কিরকম মশাই।
সাদামাটা হিসেব। রিয়া ম্যানরুক্সকে বাঁচাবার জন্য আপনি আজ উঠে পড়ে লেগেছে। অনেক আশা আপনার। এই রিয়াই আপনাকে কুকুরের মতো লাথি মেরে তাড়িয়ে দিতে কসুর করবেনা। দুর্ভোগ আপনাকেও ভুগতে হবে।
সহসা অট্টহাসিতে ও রিলে ফেটে পড়লো। বাঃ মিঃ বাকর, কায়দাটা দেখছি বেশ ভালই করেছেন। কথার বোলচালে রিয়া, আমার মধ্যে একটা গোলমাল বাধাবার চেষ্টা করে লাভ নেই। ও রিলেকে অতো কাঁচা ছেলে ভাববেন না। রিয়ার কাছ থেকে কথা আদায় না করে….
কি কথা আদায় করবেন?
ভবিষ্যতের কথা। বুড়োটা মরে যাবার একমাস পর সে আমাকে বিয়ে করবে–এমনকি পুরো সম্পত্তির হিসেবটা।
আমি হেসে বললাম, এ ভুল আপনার ওখানেই মিঃ ও রিলে। সাংবাদিক জীবনে এমন ঘটনা আমি আকছার ঘটতে দেখেছি।
আমার জায়গায় যদি আপনি হতেন—
কি আবার আগে দেখতাম তার কথাকতদুর সত্যি।মুখে সেযাবলে,কাজেও তাইকরে কিনা।
আপনি একটা আস্ত গাধা। রিয়াকে চোখের দেখাই দেখেছেন শুধু। মনটা তার দেখেননি। এক কথার মেয়ে সে। মুখে যা বলে কাজেও তাই।
পরবর্তী কাজ সংক্ষিপ্ত। ব্যাঙ্কে ঢুকলাম। লকার থেকে টেপের বান্ডিল বের করে তুলে দিলাম ও’রিলের হাতে।
চলি।
আসুন, আমার উপদেশটা খেয়াল করবেন।
থাক।
অফিসে ফিরতে ফিরতে শোয়া তিনটে। ঘরে ঢুকে দেখি রেনিকের একটা চিঠি। তার সাথে দেখা করার জন্য। তার মানে এক ঘণ্টার অনুপস্থিতিতে অনেক জল গড়িয়েছে।
তিনটে কুড়ি, রেনিকের কামরায় পা রাখলাম।
আমার পায়ের শব্দে চোখতুলল। বোসো। রিপোর্টের শেষফাইলটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিই।
রেনিকের গলার স্বর গম্ভীর। একঘণ্টার আগের দেখা রেনিকের সাথে এ রেনিকের কোনো মিল নেই। আমি প্রমাদ গুনলাম।
হ্যারি–ওদেত ম্যালরুক্সের সাথে তোমার কি কোনো রকম জানাশোনা ছিল?
এসব তুমি কি বলছো জন। আমার সে সুযোগ কোথায়?
ঠিক তবু তার সম্বন্ধে যদি কিছু।
কিন্তু হঠাৎ এ প্রশ্ন আসছে কেন জন?
এমনি, খুনের ব্যাপার। নিজের বৌকে অবধি সন্দেহের চোখে দেখতে হয়। বলে সে হাসলো।
মনের অস্বস্তি চাপা দিতে আমিও তার সঙ্গে গলা না মিলিয়ে পারলাম না।
হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছি মিসেস ম্যালরুক্সের এখন সোনায় সোহাগা। পুরো সম্পত্তির উত্তরাধিকারী এখন সে।
জানো হ্যারি, মেয়েটার সম্বন্ধে যা জানলাম, ভাল না। কত লোকের সঙ্গে যে তার ভালবাসা ছিল। এখুনি লসএঞ্জেলস থেকে আমার লোকেরা ফোন করেছিলো। অ্যান হারকুটের সন্ধান তারা পেয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট একটু আগে পেলাম। আচমকা পেছন থেকে মাথায় আঘাত, তারপর গলা টিপে খুন।
জন, আমি রং ঘরেই গিয়ে বসি, একগাদা কাজ রয়ে গেছে টেবিলে।
ঠিক আছে, তুমি ঘরে যাও।
সামনের ঝুল-বারান্দায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুজন গোয়েন্দা-অফিসার। চাপা গলায় কি যেন তারা ফিসফাস করছে। আমাকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিল। দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকলাম আমি।
হুঁ, পাহারার ব্যবস্থাও দেখছি।
সিগারেটের পর সিগারেট পোড়ালাম। চারটে বেজে দশ। পর্দা সরিয়ে উঁকি দিল রেনিক, চলো হে, বড় সাহেব ডাকছেন।
দুজনে মিভোজের ঘরে এলাম।
মিভোজ বললেন এসব কি শুনছি রেনিক?
আগাগোড়া ব্যাপারটাই একটা সুন্দর ছকে-ফেলা গল্প। মেয়েটি এবং ব্লেজার-পরা সঙ্গী দুজনে মিলে গল্পটা সাজিয়েছে।
অ্যান হারকুটের হাতের ছাপের সঙ্গে মিস ম্যানরুক্সের হাতের ছাপ হুবহু মিলে গেছে।
কিন্তু মেয়েটি খুন হলো।-কেন?
কারণ একটা নয়–অজস্র।
কিন্তু…কে সেই দোষী? তার পরিচয়…।
পেয়েছি। যেটুকু পেয়েছি, তাকে গ্রেপ্তার করার পক্ষে যথেষ্টনয়। বালির ব্যাপারে ফোরেনসিক রিপোর্টটা পেলে।
ঝনঝন করে বেজে উঠল ফোন। রেনিক রিসিভার তুলল।–হ্যালো, হ্যাঁ, পেয়েছো? বলো কি? আমরা এখুনি যাচ্ছি। রিসিভার নামিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ালো সে।
ইস্ট বীচে এখুনি একবার আমাকে যেতে হচ্ছে। চলো হ্যারি, যাওয়া যাক।
বিল হোস্পেনের মুখখানা মুহূর্তে ভেসে উঠল। আমাকে দেখে যদি সে সবার সামনে শুরু করে দেয় টাকার তাগাদা–আমার তো দফা রফা।
আমি….আমাকে নিয়ে কেন টানা হ্যাঁচড়া করছো ভাই। টেবিলের কাজ প্রচুর।
থাক..চল। রেনিক ধমক দিল। সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে দেখি, সেই গোয়েন্দা অফিসার দুজন চলেছে। গাড়ির পেছনে উঠে বসলাম আমরা, তারা দুজন বসল চালকের পাশে।
ইস্ট বীচে পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যে ছটা। গাড়ি থামলো বিল হোন্ডেনের অফিসের সামনে। আমরা নামলাম।
আসুন মিঃ বাৰ্কর, আসুন। খবরটবর কি বলুন! বিল হেসে বলল।
পরিচয় করিয়ে দিই,ইনি লেফটেন্যান্ট রেনিক, হেড কোয়ার্টার্স থেকে আসছেন একটা জরুরী তদন্তের ব্যাপারে।
প্রশ্ন! আমাকে? কোন গোলমাল?
না তেমন কিছু নয়। বছর কুড়ি বয়স, মাথার চুল লালচে, নীলের ওপর সাদা ডোরাকাটা স্কার্ট চোখে রোদ-চশমা–এরকম কোনো মেয়েকে কিআপনিগতকয়েকদিনের মধ্যে এখানে দেখেছেন?
দুঃখিত স্যর।
কিন্তু শব্বিার মাঝরাত নাগাদ এখানে সে এসেছিলো মিঃ হোন্ডেন। আচ্ছা আপনাকে কত রাত অবধি থাকতে হয় এখানে?
আটটা, ভালো কথা মিঃ বাৰ্কর তত শনিবার সারা রাত এখানেই ছিলেন।
যে ভয় এতোদিন করছিলাম, বিল দিল হাটে হাঁড়ি ভেঙে।
শনিবার রাত্রে এখানে আমি ছিলাম না, ছিলাম শুক্রবার। তোমার হিসেবে বোধহয় ভুল হচ্ছে।
হতে পারে..সারাটা দিন যা ধকল আমাকে পোয়াতে হয়…।
কিন্তু মিঃ বাৰ্কর যে শনিবার রাতে এখানে ছিলেন–এ কথাটা হঠাৎ আপনার মাথায় এলো কেন? তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন রেনি।
আমি বললাম একটা উপন্যাস লেখার ব্যাপারে একটা কেবিন কদিনের জন্য ভাড়া নিয়েছিলাম জন।
সেকি। কেবিন ভাড়া নিয়েছিলে–আমাকে তো একবারও বল নি।
ভেবেছিলাম, বইখানা তোমার নামেই উৎসর্গ করবো। আগে থেকে তাই কিছু বলিনি।
চোখ ফেরালো রেনিক, শনিবার রাতে সব কেবিনই তালাবন্ধ ছিল–তাই না মিঃ হোল্ডেন?
হ্যাঁ, তবে মিঃ বার্করের কেবিনের চাবিটা ওনার কাছেই রাখতেন।
আমার দিকে চোখ ফিরিয়ে রেনিক জিজ্ঞেস করলো তোমার কেবিনে নিশ্চয়ই তালা লাগানো ছিল।
হুঁ, সেরকমই তোত মনে হচ্ছে।
কোন কেবিনটা ভাড়া নিয়েছিলে তুমি?
বাঁ দিকের শেষ কেবিন।
কেবিনটা কি এখন খালি, না লোকজন আছে।
না খালি।
চমৎকার, দিন চাবিটা দিন, কেবিনটাও দেখে যাই।
ঘাড় ফিরিয়ে রেনিক জিজ্ঞেস করলো, মিঃ হোল্ডেন, ওদেত ম্যানরুক্সকে আপনি কি কখনো দেখেছেন?
না, চাক্ষুস কখনো তাকে দেখিনি।
কেবিনে ঢুকে রেনিক বলল-বাঃ ব্যবস্থা তো দেখছি একেবারে রাজকীয়। তা এরকম কেবিন ভাড়া করলে, আমাকে জানালে না?
অন্যমনস্কর মতো ঘাড় নাড়লল রেনিক, হুঁ, খুন হবার পক্ষে আদর্শ জায়গাই বটে!
খুন যে এখানে হয়েছে একথা তুমি ভাবছো কেন?
বেশ ভালো করে ভেবে বল, শনিবার রাত্রে চাবি তুমি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলে, না রেখে গিয়েছিলে?
আর বল কেন। তাড়াহুড়োর মধ্যে চাবিটা সেদিন নিতে ভুল হয়ে গেছে।
কয়েক মুহূর্ত স্থির হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো রেনিক–আরে ব্যস, সাড়ে ছটা, তুমি এখনি বাড়ি যাও, নিনার শরীর খারাপ…।
আরে ধূর, তুমিও যেমন, শরীর খারাপের ব্যাপারটা আসলে একটা মস্ত ধোঁকা। আমাকে তখন ঐ কথা বলে বাড়ি দৌড় করালো। গিয়ে দেখি পুরনো এক বান্ধবী এসেছে, পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য। আসার সময় শুনে এলাম, তারা দুজন কোথায় বেরোবে। হয়তো গিয়ে দেখবো নিনা এখনো ফেরেই নি। বরঞ্চ তোমার সাথে থাকি। দরকার টরকার যদি হয়।
আরে না না, দরকার আবার কিসের? থাক, তুমি বাড়ি যাও। রেনিকের স্বরে দৃঢ়তা। আমি জানি আমি চলে যাওয়া মাত্র ফোরেনসিক দপ্তরের তাবৎ লোজন ঘরে শুরু করে দেবে তাদের পরীক্ষা নিরীক্ষা। ঘরের প্রতিটি ইঞ্চি তারা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখবে। আমার সম্বন্ধে যেটুকু অজানা তাদের, সেটুকুও আর জানতে বাকি থাকবে না।
তাহলে চলি জন। কাল আবার দেখা হবে।
হু। ঘরের চারপাশ দেখতে দেখতে অ্যামনস্কের মতো মাথা নাড়লো রেনিক।
বিলের অফিসে গেলাম।
তোমার টাকাটা কালকে সকাল দশটার মধ্যে দিয়ে যাব বলে আর দাঁড়ালাম না–চলি।
বাসস্টপে এসে দাঁড়িয়েছি একখানা জীপ এসে থামলো আমার পাশ ঘেঁষে। সেই গোয়েন্দা। দুজন। একি! বাসে কেন? আমরা তো ঐ দিকেই যাচ্ছি, আপনাকে বরং গাড়ির সামনে…।
থাক, বাসেই যাবো। বলে আগত বাসে উঠে পড়লাম। মাইলখানেক যাবার পর নিতান্ত কৌতূহলের বশে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে দেখলাম সেই জীপখানা বাসের পেছন পেছন আসছে।
বাড়ি ফিরে দেখি নিনা চেয়ারে বসে আছে। আমাকে দেখে আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো। জানো ওরা আজ এসেছিল।
কারা?
পুলিশ। দুপুরে আমি বেরিয়েছিলাম বাজারে। সেই ফাঁকে বাড়িতে ঢুকে ওরা কি যেন সব খোঁজ করে গেছে। হয়তো মাইক্রোফোন ফিট করে গেছে।
ইশারায় চুপ করতে বললাম। শিকারী বিড়ালের মতো আমি দেখতে লাগলাম। ঘড়ির পেছনে সরু কালো তারটা হঠাৎই নজরে পড়লো। সবদিক দিয়েই পাকাপাকি ব্যবস্থা। রেডিওটা চালু করলাম জোরে। রেডিওর সরব আর্তনাদে গমগম করতে লাগলো ঘর।
কি দেখে তুমি বুঝলে বাড়িতে কেউ এসেছিল।
ঐ দেখো, আলমারীটা খোলা। সব অগোছাল।
দেরী না করে তিনলাফে গিয়ে পৌঁছলাম আলমারির কাছে, হাতল টেনে পাল্লা খুললাম। জামা, প্যান্ট-কোট-টাই সবই আছে। নেই কেবল ব্লেজারটা।
ভয়ের একটা শীতল অনুভূতি শিরা উপশিরা বেয়ে ছড়িয়ে পড়ল সারা দেহে। এগিয়ে এসে নিনা দাঁড়ালো আমার পাশ ঘেঁষে– হ্যারি–কি হল?
আমার ব্লেজার, ওরা নিয়ে গেছে।
নিয়ে গেছে!
হা–নিনার চোখ জলে ভরে গেল। নিনাকে বুকে টেনে নিলাম। নির্বাক স্থানুর মত দাঁড়ানো ছাড়া আমার কিছু করার নেই।
তুমি টেপগুলো কেন দিলে?
ও’রিলে সব পারে, ও একটা খুনে।
আচ্ছা জনকে ডেকে যদি সব বল।
তাতেও লাভ হবে না। অনেক দেরী হয়ে গেছে। তাছাড়া হাতে আমার প্রমাণই বা কোথায়?
আচ্ছা টাকাগুলোই বা গেলো কোথায়?
হ্যাঁ, টাকা?
ব্যাঙ্কে।
না, ব্যাঙ্ক নয়, বাড়িতেও নয়।
তবে?
বাইরে কোথাও যেমন ধরো, স্টেশান, এয়ারপোর্টের লেফট-লাগেজ?
দাঁড়াও, পুরো ব্যাপারটা লিখে সাজিয়ে নিই। বলে একটা রিপোর্ট লিখলাম।
নিনা দেখলে কাগজটা। এতে তোমার লাভ?
আমার লেখা সব জায়গায় পৌঁছবে। প্রচারের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র প্রশ্ন কেউ তুলবে না।
তাতে তোমার কি?
ও’রিলের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া কথাগুলো। আমি দুটো ফোন করে আসি ডাক্তারখানা থেকে। বাড়ি থেকে করা যাবে না বলে বেরিয়ে দেখি পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে।
হ্যালো, ফ্রেডের পরিচিত স্বর।
ফ্রেড আমি হ্যারি বলছি, একটা জরুরী রিপোর্ট আছে। রাত এগারটায় যদি প্রচারের ব্যবস্থা, করো…।
আলবাৎ, রিপোর্টটা কি বলল। আমি লিখে নিই।
কাগজের লেখাটুকু পড়ে শোনালাম তাকে।
ঠিক আছে।
এবার ম্যালরুক্সের বাড়িতে ফোন করলাম। হ্যালো? খানসামা জিজ্ঞেস করল।
পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স থেকে বলছি। মিঃ ও’রিলেকে একবার দিন।
ধরুন।
ফোন তুললো ও’রিলে। হ্যালো?
চিনতে পারছেন?
বলুন কি দরকার?
শেষরক্ষা বোধহয় আর হল না। রেনিক একটা শক্ত মতলব এঁটেছে।
কিসের মতলব?
কিসের আবার, আপনাদের সাবার। রাত এগারোটার টেলিভিশনের বিশেষ ঘোষণাটি মন দিয়ে শুনবেন। ছাড়ছি। বলে ফোন নামিয়ে রাখলাম। ব্যস কাজ আমার শেষ। বাইরে এলাম।
মিঃ বাৰ্কর, আপনাকে এক্ষুনি আমাদের সঙ্গে হেড কোয়ার্টার্সে যেতে হবে।
চলুন অপেক্ষমান জীপের দিকে এগোলাম। দু-আঙুলের ফাঁকে জ্বলন্ত সিগারেট, মুখের রেখায় এক নীরব ঔদাসীন্য–আমাকে ঘরে ঢুকতে দেখে চোখ তুললল রেনিক– এসো। হাতের ইশারায় সার্জেন্টটিকে চলে যেতে বললো রেনি। সিগারেটের প্যাকেট বের করলো রেনিক, আমার দিকে এগিয়ে ধরলো–নাও, সিগারেট নাও।
হাত বাড়িয়ে নিলাম। স্থিরদৃষ্টিতে আমার ভাব-ভঙ্গি লক্ষ্য করতে লাগলো।
তুমি এসব কেন করতে গেলে হ্যারি?
বলছি। আগে বললা–আমাকে কি তোমরা গ্রেপ্তার করেছো?
না, করিনি। গ্রেপ্তার করার আগে একবার ব্যাপারটা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করে নিতে চাই।
বেশ, কি জানতে চাও বলো।
তুমি…কি ওদেত ম্যানরুক্সকে খুন করেছ?
না, সেকথা তুমি কি বিশ্বাস করবে?
হ্যারি, বিশ বছরের পুরনো বন্ধু আমরা। যা যা হয়েছে, এই ঘটনায় কিভাবে কখন তুমি জড়িয়ে পড়েছো?
টিম কাইলি র সাথে ঘটনার রাতে এয়ারপোর্টে দেখা হওয়া থেকে শুরু করে..আগাগোড়া ব্যাপারটা তোমার মুখ থেকেই শোনা যাক।
বললাম। রিয়ার সাথে প্রথম দেখা হওয়া থেকে এখন যে দুটো ফোন করলাম সব কথা।
রেনিক স্তম্ভিত।বলো কি। ভেতরে ভেতরে এতো সব কাণ্ড। কিন্তু ওদেত বা রিয়া ম্যালরুক্সের দোষ প্রমাণ করবে কি করে?
প্রমাণ সব আছে। টেপের বান্ডিল ও রিলের হাতে তুলে দিয়ে আমি এখন নিঃস্ব। তুমি যদি আমাকে একটু সাহায্য করো।
আমার সাহায্য চাইছো তুমি…আমি কতটুকু কি করতে পারি?
বিশেষ কিছু না। আমার সঙ্গে একবার যাবে ম্যালরুক্সের বাড়িতে। সঙ্গে দলবলও থাকবে। বাকীটা এগারোটা বাজলেই জানতে পারবে।
বেশ, চলো। জীপে ম্যালরুক্সের বাড়ি দশ মিনিটের পথ। ফটকের পাহারায় একজন অফিসারকে রেখে নিঃশব্দে আমরা চারজন নুড়ি বিছানো পথে এগোলাম। দেয়ালের পাশ ঘেঁষে অতি সন্তর্পণে আমি জানলার পথে উঁকি দিলাম। বাঁ দিকের সোফায় আধশোয়া ও’রিলে। হাতে ধরা হুইস্কির গ্লাস, ডানদিকের ডিভানে চিত হয়ে শুয়ে রিয়া। তার হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। এগারোটা বাজতে ঠিক পাঁচ মিনিট বাকি।
টেলিভিশনটা চালাও –রিয়া বলল। উঠলো ও’রিলে। পর্দায় ভেসে উঠল ফ্রেড হিক্সনের মুখ।–আমার লেখা রিপোর্টটা পুরো পড়ে শোনাল। আমি চললাম, বলে ও’রিলে উঠল।
কোথায়? রিয়া জিজ্ঞেস করল।
মাল সামলাতে। এয়ারপোর্ট গিয়ে এক্ষুনি অ্যাটাচি ছাড়িয়ে আনতে হবে।
না ওসব যাওয়া-টাওয়া বাদ দাও।
তার মানে? সব তুলে দেবো, পুলিশের হাতে?
এছাড়া কোনো উপায় নেই।
রিয়া, তুমিই অ্যাটাচিটা ছাড়িয়ে আনন।
না। আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
রিয়া চোয়াল শক্ত করলো, ও রিলে। কথার অবাধ্য হয়ো না।
পারবো না।
গেলে ভালোই করতে, টেপের বান্ডিলটা রয়েছে অ্যাটাচিতে।
তার মানে?
মানে যা তাই। বাকরের দেওয়া টেপের বান্ডিল আমি অ্যাটাচিতেই রেখেছি।
সে কি, তুমি যে সেদিন বললে–টেপ তুমি পুড়িয়ে ফেলেছো?
না। মিথ্যে কথা বলেছিলাম।
কেন?
তোমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ সবনষ্ট করে বসে থাকবো, আর টাকা পয়সা হাতিয়ে আমাকে দূর করে তাড়িয়ে দেবে, তা চলবে না। আগে আমাকে বিয়ে করবে, তারপর….
তুমি, একটা আস্ত নির্বোধ। পুলিশকে ফোন করে সব ঘটনা আমি বলবো। বলবো, বার্কর কোনো দোষ করেনি, ওদেতকে খুন করেছো তুমি। তোমারই প্ররোচনায় আমি এসব করেছি। আমাকে লেখা তোমার গাদাগাদা প্রেমপত্র তাদের নাকের সামনে ছুঁড়ে দেব।
আমাকে তুমি ভয় দেখাচ্ছো?
তোমার মতো জানোয়ারকে
কথা শেষ হলো না তার। ও’রিলের হাতে কালো একটা ছোট্ট রিভলবার।
বরং বলি কি, ভয় দেখানো, পুলিশ ডাকা, এয়ারপোর্টে গিয়ে অ্যাটাচি নিয়ে আসা–এসব থাক। এসবের চেয়ে সহজ যে কাজটা–যেমন ধরো, তোমার কপাল তাক করে মাত্র একটিবার ট্রিগার টেপাব্যস, ফুরিয়ে গেল ঝাট।
তুমি…আমাকে খুন করে নিস্তার পাবে না শয়তান। বার্কর সব জানে, সব।
রাখো তোমার বাৰ্কর। আর দেরি কোরো না। হাত তুলে দেওয়ালের কাছে গিয়ে দাঁড়াও।
আমাকে এক ধাক্কায় সরিয়ে জানলাটপকে ঘরে ঢুকলো রেনিক। হাতে তার ৩৮ বোরের পুলিশ স্পেশ্যাল। ও’রিলের পিঠে রিভলবার তাক করে সে হুঙ্কার দিলোখবরদার ও রিলেসাবধান।
ক্ষিপ্র হায়নার মতো ঘাড় ফিরিয়ে ট্রিগার টিপলো ও’রিলে। তার রিভলবারের শব্দকে ছাপিয়ে গর্জে উঠলো রেনিকের পুলিশ-স্পেশ্যাল। মুঠো আলগা হয়ে রিভলবার গড়িয়ে পড়লো মেঝেয়, ও’রিলের জ্ঞানহীন দেহ লুটিয়ে পড়লো রিয়ার পায়ের কাছে।
দুহাতে মুখ ঢেকে হঠাৎ আকুল কান্নায় ভেঙে পড়লো রিয়া…।
পুলিশ হাসপাতালে মারা গেল ও’রিলে। জবানবন্দি দিয়ে গেল, ওদেতকে খুন করার মতলবটা আসলে রিয়ার। আমাকে দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করার মূলেও সে। রিয়ার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল, ও’রিলে। ভালবাসার প্রতিদান হিসেবে সে এসব করেছে।
আবার সেই হাজতবাস। তিনদিনের দিন দেখা করতে এল রেনিক।
একটা সুখবর শোনাতে এলাম। এই মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে তোমার নাম প্রস্তাব করেছেন বড়কর্তা। রাজী?
হ্যাঁ, আমি রাজী।
যাক, তোমার শাস্তি মকুব করার ব্যবস্থাও বড়কর্তা করেছেন। তবে তোমার এ-শহরে বোধহয় আর জায়গা হবে না।
ভালো কথা, নিনা কেমন আছে?
ভালো, বলল আজ থেকেই বাড়ি বিক্রির চেষ্টায় সে উঠে পড়েছে। শহরটার ওপর তার ঘেন্না ধরে গেছে।
আজই তোমাকে সাক্ষী দিতে হবে। নিনাও কোর্টে হাজির থাকবে।
চলো তাহলে।
রিয়ার হয়ে পাঁচ, পাঁচজন দুদে ব্যারিস্টার লড়লো। ধোপে কোনো যুক্তিই টিকলো না। টেপ বজিয়ে শোনানো হল আদালতে। রায় দিলেন বিচারক। পনেরো বছরের জেল হল রিয়ার। আর আমার পাঁচ বছরের নির্বাসন। নির্বাসন বলতে এ শহর ছেড়ে অন্য যেকোন জায়গায়। এই পাঁচ বছর এ শহরে আসতে পারবো না। না, আর না। শহরটার ওপর আমারও ঘেন্না ধরে গেছে। এখন শুধু নিনা,নতুন করে বাঁচা। আদালতের বিরাট হলঘর পেরিয়ে বাইরে এলাম। দরজার কাছে প্রতীক্ষা করছিলো নিনা। চোখ ভর্তি জল।
আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। তার হাসিতে প্রতিশ্রুতির দৃঢ় অঙ্গীকার। হাত ধরে তুলে চুমু খেলাম। নতুন জীবনের পথে এগিয়ে গেলাম।