হ্যারি গ্লেব সিগারেট ধরিয়ে দেশলাইটা অস্বাভাবিক রকম জোরে ছুঁড়ে ফেলে দিল। ধারালো গলায় বলল, আমার ওপর চেঁচিয়ে লাভ নেই। জুলি থাকবে না বলেছে। আমি অনেক চেষ্টা করেছি, কোন লাভ হয়নি। ও কাল কাজ ছেড়ে দেবে।
মিসেস ফ্রেঞ্চ ওকে শক্ত শীতল মুখে তাকিয়ে দেখলো।
–ওকে রাজী করাতেই হবে। ও বাড়িতে আর একটা মেয়ে ঢোকানোর সুযোগ আমরা পাবনা। জুলি যদি কাজ ছেড়ে দেয়, আমরা গেছি।
হ্যারি অসহায় ভাবে বলল, আমি তো যা করার করেছি। এখন ও যদি কাজ ছেড়ে দিতে চায়, তবে আমি ওকে থাকতে বাধ্য করতে পারি না। পারি কি?
মিসেস ফ্রেঞ্চ রুক্ষ গলায় বললেন, তুমি বড় নরম মনের মানুষ। তোমার উচিত ছিল কুত্তীটার ঘাড় ধরে রামধোলাই দেওয়া। ও তাই চাইছে। ঠিক মত ম্যানেজ করতে পারলে তুমি যা বলতে ও তাই করত।
হ্যারির বিরক্তি ভরা মুখ।
–আমি মেয়েছেলেদের মেরে ও সব চাইছি না। আমাদের অন্য উপায় ভেবে বের করতে হবে।
মিসেস ফ্রেঞ্চ খেকি কুকুরের মত ঘ্যাঁক করে বললেন, আমাদের আর কিছু করার নেই তা তোমার মাথায় ঢুকছে না? আমি কথা বলব ওর সঙ্গে।
–না। তাতে লাভ হবে না। জ্বালিও না ওকে। হ্যারি খ্যাক করে উঠল।
মিসেস ফ্রেঞ্চ বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললেন, তুমি ওকে দেখে গলে পড়ছ না তো হ্যারি?
হ্যারি চায় না মিসেস ফ্রেঞ্চ ওকে সন্দেহ করুক। ওর নিরাপত্তার দিক থেকে ভাবলে উনি ওর বিষয়ে বড় বেশী জেনে ফেলেছেন। তাই ওঁকে ভয় পায় হ্যারি।
মিসেস ফ্রেঞ্চ আসা করছেন হ্যারি ওঁর মেয়ে ডানাকে বিয়ে করবে। উনি যদি এখন সন্দেহ করে বসেন যে হ্যারি জুলির প্রেমে পড়েছে তাহলে ঝামেলা পাকিয়ে ওকে পুলিসের হাতে তুলে দিতেও কসুর করবেন না।
–ছেঁড়া কথা বলো না, হ্যারি বলল, ও আমার কাছে কিছুই নয়, আমি শুধু কোনরকম মারধোর চাই না। তুমিও তা জান!
মিসেস ফ্রেঞ্চ বলল, মারধোরের দরকার পড়বে না। আমি শুধু ওর সঙ্গে কথা বলে ওকে একটু ভয় দেখাতে চাই, বাস্, ওই পর্যন্তই। তাহলেই ও সমঝে যাবে।
প্রস্তাবটা হ্যারির মনোমত হল না, আবার প্রতিবাদও করতে পারল না।
–ঠিক আছে, তবে ওর গায়ে হাত দেবে না কিন্তু। সাবধান করে দিচ্ছি, আমি সহ্য করব না।
মিসেস ফ্রেঞ্চ কাটছাট গলায় বললেন, বেশ! তুমি এখন কেটে পড় দেখি। দরকার পড়লে ডেকে পাঠাব। কাজটা হাসিল করতে আমাদের যেমন প্ল্যান ছিল তেমনি হবে, ওকে যা বলা হবে ও তাই করবে।
–ঠিক আছে। ওর অস্বস্তি হতে থাকল। ও দরজার দিকে যেতে যেতে বলল, কিন্তু মনে থাকে যা বললাম, ওর গায়ে হাত দিও না।
মিসেস ফ্রেঞ্চ কোন জবাব না দিয়ে কি যেন ভাবতেই থাকলেন। তারপর টেলিফোন তুলে একটা নম্বর ডায়াল করলেন। থিও টেলিফোন ধরল।
কে? থিও নাকি? কাঁদুনে গলায় জিজ্ঞেস করলেন।
এখনি চলে এস। একটা কাজ করতে হবে। কড়া গলায় কুম দিলেন ফ্রেঞ্চ।
–হল কি? রাত হয়েছে। আমি ঘুমতে যাচ্ছিলাম।
–হ্যারি ওই হল্যান্ড মেয়েটার সঙ্গে বেড়িয়েছে। মেয়েটা বেগড়বাই করছে। আমি চাই তুমি ওর সঙ্গে কথা বলে দেখ।
–ও এই কথা? থিও রীতিমত খুশী হল, এটা কাজ নয়, এ হল আরাম করা। আমি এখনি আসছি। ও রিসিভার রেখে দিল।
.
থিও পার্কওয়ের উল্টোদিকের একটা বেঞ্চে গিয়ে বসল। হাত দুটো প্যান্টের পকেটে, টুপিটা মাথার পেছন দিকে ঠেলে দেওয়া। মুখের স্যাঁতসেঁতে সিগারেটের ধোঁয়াটা কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে বলে থিওর একটা চোখ কুঁচকে আছে।
নটা বাজতে ক-মিনিট বাকি। পথের এদিকটায় লোকজন বিশেষ নেই। মাঝে মাঝে বাস যাচ্ছে। রোদে বসে থাকতে বেশ ভালই লাগছে থিওর। জীবনের বেশীর ভাগ সময়টাই পথের কোণে দাঁড়িয়ে শরীরকে আরামে রেখে, কোন কিছু না করে কাটিয়ে দিয়েছে। সে কোনরকম নড়াচড়াও অপছন্দ করে। গেরিজ পার্কওয়ে থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠল। ওয়েসলি কিছুক্ষণ বাদে দারোয়ানের সাহায্য নিয়ে গাড়িতে এসে বসল। গাড়িটা চলে যেতে থিও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এখন ওকে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হবে।
সিগারেটটা ঘষে নিভিয়ে পার্কওয়ের বিশাল হলঘরে ও ঢুকতেই দারোয়ান আফিস ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে ওকে তাকিয়ে দেখল।
–কি চাই? দারোয়ানের গলায় সন্দেহ।
–আমার বোনকে দেখতে যাচ্ছি। ৯৭ নম্বর ফ্ল্যাটের চাকরাণী। কোন আপত্তি আছে?
দারোয়ানের সন্দেহ ভাঙাতে থিও আরও বলল, আমার কথা যদি বিশ্বাস না হয় তো ফোন কর। বল ওর ভাই হ্যারি দেখা করতে এসেছে।
দারোয়ান খচখচ্ করে উঠল, আমায় কি করতে হবে বাতলাতে হবে না। মিসেস ওয়েসলি পছন্দ করবেন না।
–তাকেও বল। থিও হেসে বলল, সবাইকে বল। খবরের কাগজে ছাপিয়ে দাও। গাবাতে থাকো দোস্ত, আমার তাড়া নেই, মনের সুখে যা করার কর।
দারোয়ান বুঝল ও বোকামি করছে। বলল, তাড়াতাড়ি যাও তবে। গিয়ে দেখা করে এসো। বেশিক্ষণ থেক না। তোমার মত মাল এখানে দেখতে চাই না আমি।
–ভাবিনি তুমি চাইবে। সেইজন্যই এলাম।
থিও অটোমেটিক লিফটের কাছে গেল, দরজা খুলে ঢুকল, দরজা বন্ধ করে চারতলার বোতাম টিপল।
লিফটের গায়ে দাঁড়িয়ে মনে মনে ভাবল। ঝটপট কাজ সারতে হবে নইলে বুড়োটা দেখতে আসবে কি হলো। সাতানব্বই নম্বর ফ্ল্যাটের ঘণ্টা বাজিয়ে ও দাঁড়িয়ে রইল।
জুলি দরজা খুলল।
–এই যে ময়না। থিও ওর হাতের চেটো দিয়ে চিবুকের নিচে একটা নিদারুণ ঠেলা মারল। জুলি ঘুরতে ঘুরতে ভেতরে গিয়ে পড়ল। থিও ঘরে ঢুকে ঘুষি পাকিয়ে বলল, কেঁই কেঁই কোর না। মিসেস ফ্রেঞ্চের কাছ থেকে আসছি।
জুলি পিছিয়ে গেল। দেখল সামনে একটা বেঁটে, চৌকো, এলোমলো কালো চুল কোটের কলারে ঠেকেছে, গোল মুখটা ক্ষতবিক্ষত, চোখগুলো কাছাকাছি, ঘোটপাকানো, নিষ্ঠুর একটা পৈশাচিক চেহারা।
উত্তেজিত হয়ো না ময়না। থিও হেসে বলল, ভেতরে চলো। আমি বসতে চাই না, ক্লান্ত।
ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে জুলি থিওকে নিয়ে লাউঞ্জে গেল।
–দিব্যি খাসা, তাই না? এরকম জায়গা ছেড়ে যেতেও মন চায়, অ্যাঁ। জুলিকে দেখল ও, তারপর বলল, তুমি ছেড়ে দিতে চাইছ, তাই না?
জুলি ক্ষীণকণ্ঠে বলল, আমি যাবই। কেউ আটকাতে পারবে না আমায়।
–আমি পারব। কাছে বস ময়না। আমরা কথা কইব। থিও ইজিচিয়ারে বসতে বসতে বলল।
জুলি টেলিফোনের দিকে ছুটে যেতে থিও ওকে পাকড়ে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ধরল। জুলি মুখ হাঁ করতে অমনি ওর মুখে চড় মারল। ভয়ে ও যন্ত্রণায় ওর গলা থেকে ক্ষীণ আর্তনাদ বেরোল।
-এরপর আমার হাতের ঘুষি খাবে। ব্যাপার কি? ধোলাই খেতে চাও?
জুলি অসহায় ভাবে কাঁদতে লাগল। ও আর কোন ঝামেলা পাকাবে না নিশ্চিত জেনে থিও বসল। বলল, তোমাকে এ কাজের শেষ অব্দি দেখতে হবে, নইলে কপালে অশেষ দুঃখ আছে জেনে রেখো। আমি তোমার কোন যুক্তি শুনতে চাই না।
না! জুলি ফুঁপিয়ে উঠল, আমি পুলিশকে বলে দেব। আমি একাজ করতে চাই না।
থিও হাসল। বলল, তাই ভাবছ বুঝি! পকেট থেকে স্যাঁতসেঁতে ব্যাগ বের করে ও তিনটে ময়লা ফটো বের করল, দেখ এগুলো। পুলিশের ফটোগ্রাফারের কাছ থেকে ঝেড়েছি। সত্যি ছবি, দেখ না, ভাল লাগবে।
জুলি মুখ ফেরাল।
–আমি কিছু দেখব না। ও উদ্ভান্ত গলায় বলল, তুমি যদি না যাও…
থিও ঝুঁকে পড়ে বলল, আবার ধোলাই খেতে সাধ হয়েছে, হাবা হুঁড়ি? ছবিগুলো দেখবি, নাকি ছাতু করবো তোকে?
থিও উঠে দাঁড়িয়ে বলল, তোল ওগুলো দেখ, আমি তোকে দুবার বলব না।
ধীরে ধীরে ছবিগুলো তুলে দেখে জুলির মুখ ভয়ে বেঁকে গেল।
থিও বলল, ভিট্রিঅলের খেলা। দেখে মনে হয় সত্যি দেখছি। এটার নাম এমি পারসন্স। মাগী বেশ্যা। একটা নিগ্রো ওর এই অবস্থা করে। অ্যাসিড খাবার আগে মাগী দেখতে মন্দ ছিল না। দেখ, দেখতে থাক। ও মাগীটা এডিথ লসন। আরেকজনের খদ্দের ভাগাতে গিয়ে মুখে অ্যাসিড খায়। আর এই মাগীটা লেস্টার স্কোয়ারে একটা কাফেতে কাজ করত তবে গাবাত বড্ড বেশী। একদিন এক খদ্দের এসে কফি চাইল, যেমনি দিতে যাবে মুখে ঝাড় খেল অ্যাসিড। আর এইটে দেখছে ভিট্রিঅলে ওকে ডুবিয়ে ছেড়েছে? দেখতে খাশা ছিল মাগীটা। শোন ময়না, পুলিস জানেও না একাজ কে করেছে। তুমি যদি ঠিক দানের পিঠে ঠিক দান না খেল তবে তোমাকেও অ্যাসিড ঝাড়া হবে!
কাঁপতে কাঁপতে ছবিগুলো দেখে জুলির শরীর ভয়ে হিম হয়ে গেল।
থিও ওর ঘাড়ে টোকা দিল।
–দেখ, এই যে মাল। তর্জন আর বুড়ো আঙুলে একটা ছোট শিশি ধরে বলল, নিয়ে বেড়াই জানলে? ভেবনা পালিয়ে বাঁচবে, আমি মানুষকে খুঁজে বের করতে বেজায় ওস্তাদ। এখন থেকে তোমার একটা চালে ভুল দেখব, অ্যাসিড ঝাড়ব। মুখটি বুজে যা বলা হল কর, বেঁচে যাবে। আমরা যা পছন্দ করি না তেমন একটা ঝামেলা পাকালে, ব্যস রূপের দশা খতম। বুঝেছো?
–হ্যাঁ।
আর কোন বেলেল্লাপনা না করে বুধবারের মধ্যে আমাদের জানাবে আলমারী কেমন করে খোলে। কোন ছুতো করলে আবার এসে ধোলাই দেব। বুধবার আটটায় মে ফেয়ার স্ট্রীটের অফিসে খবর পৌঁছানো চাই। না গেলে পস্তাবে। বুঝলে?
–হ্যাঁ।
–বেশ। বাথরুমটা কোথায়?
–ওইদিকে। জুলির মাথা কাজ করছে না ও কেন বাথরুমের খোঁজ করছে।
চল সেখানে।
–না…
ময়না, এই না বলার অভ্যেস তোমাকে ছাড়তে হবে। নইলে বিপদে পড়বে। চল।
জুলি বুঝতে পারছিল ভয়ঙ্কর কিছু একটা ঘটতে চলেছে এখন, কিন্তু ওর কিছু করার ছিল না। প্যাসেজ দিয়ে টলতে টলতে গিয়ে ও বাথরুম দেখিয়ে দিল।
বাথরুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে থিও বলল, খাসা! এমন বাথরুম সাফ রেখেও সুখ আছে। বেশ ময়না বাথটবের পাশে দাঁড়াও। জুলি কুঁকড়ে সরে গেল।
–আমাকে দয়া করে ছেড়ে দাও। যা বলবে তাই করব। শুধু আমাকে ছুঁয়ো না।
–বোকা ছুড়ির মতো কোর না। আমার টাইমের তিনঘণ্টা আগে তুমি আমায় বিছানা ছাড়িয়ে আমার সকালটা মাটি করেছ। কোন মাগী আমার সঙ্গে এরকম করে না।
দয়া করে… ।
–আর তুমি–কথাটা এত অশ্লীল যে জুলি থমকে গেল।
–দেখ কেমন লাগে। ওর মুখের দিকে ঘুষি ছুঁড়ল। জুলি দু-হাতে মুখ ঢাকতে থিও দারুণ জোরে ওর পেটে ঘুষি চালাল।
থিও হেসে বলল, সুন্দর কার্পেটটা নষ্ট করবে আশা করি নি।
জুলি মেঝেতে ভেঙে পড়ে বমি করতে লাগল, থিও বাথরুমের দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে গেল।
.
সেদিন বিকেল তিনটেয় হ্যারি সেই বেঞ্চটাতেই বসল যেটায় থিও সকালে বসেছিল। অধীর আগ্রহে ওয়েসলির বাড়ির জানলার দিকে চেয়ে অপেক্ষা করল, জুলি এলো না। পৌনে চারটেয় ও রেগে গেল। উদ্বেগও হল।
অস্বস্তিতে ভাবল, কি হলো ওর? ও নিশ্চয়ই অপেক্ষা না করেই চলে যায় নি?
আরো পাঁচমিনিট দেখে ও কাছের একটা বুথ থেকে ওয়েসলির ফ্ল্যাটে ফোন করে কোন জবাব পেল না।
এবার হ্যারি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে ভাবল কোন্ চুলোয় গেল? বোবা জানলাগুলোর দিকে আবার তাকালো।
–ওখানে গিয়ে খোঁজ করার অনেক বিপদ। কিছুক্ষণ কিছু ভেবে না পেয়ে মনে আশঙ্কা হলো মিসেস ফ্রেঞ্চ জুলিকে কিছু করে বসেনি তো? এখানে দাঁড়িয়ে সাতকাহন ভেবে কি হবে। একটা ট্যাক্সি ধরল ও, চেলসীর ঠিকানা বলল। যদি ওরা জুলির কোন ক্ষতি করে হ্যারি ওদের টের পাওয়াবে মজা। জুলি এখন ওর।
ওঁদের ছিমছাম ফ্ল্যাটে মিসেস ফ্রেঞ্চ আর ডানা যাচ্ছিলেন। হ্যারি লম্বা লম্বা পা ফেলে ঢুকলো
–ডানা উঠে এলো।
–একি হ্যারি? আমি তো জানতাম না তুমি আসবে?
হ্যারি ওকে পেরিয়ে মিসেস ফ্রেঞ্চের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মুখে রাগ ফেটে পড়ছে।
রুক্ষ গলায় হ্যারি বলল, জুলির আজ বিকেলে আমার সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল, এলো না। ফ্ল্যাটে ফোন করলাম, কেউ ধরল না। জুলির কি হয়েছে? তুমি কিছু বলতে পারো?
মিসেস ফ্রেঞ্চ পাথরের মতো স্থির দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালেন।
–হ্যারি তুমি যথারীতি গবেটের মতো করছে। ওর কি হলো না হলে তাতে তোমার কি এসে যায়?
অনেক চেষ্টায় হ্যারি নিজেকে সামলে রেখে ভাবল, কিছুতেই এদের জানতে দেওয়া চলবে না জুলিকে ও ভালবাসে। কাজটা হোক, তারপর টাকাটা হাতে পেয়ে এই দুজনকে বোঝাবে ওদের ধারণা সত্যি।
ও কাটাকাটা গলায় বলল, তুমি কি বলতে চাইছ আমি জানি না। সে আমাদের হয়ে কাজ করছে। আমি ওর ওপর চোখ রেখেছি। এখন ও উধাও হয়ে গেছে।
মিসেস ফ্রেঞ্চ বললেন, কাল রাতে তুমি বললে ও আমাদের হয়ে কাজ করছে না। আমার মনে হয় তুমি ওকে নিয়ে অধিক বাড়াবাড়ি করছ হ্যারি। এটা ডানার ওপর সুবিচার হচ্ছে না।
হ্যারি ওঁর দিকে জলন্ত চোখে চাইল।
ডানা ওর সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল, ও তোমার কাছে বিশেষ কিছু কি?
না। কিন্তু আমি জানতে চাই ওর কি হয়েছে?
মিসেস ফ্রেঞ্চ হেসে বললেন, ঠিক আছে শোন। আজ সকালে আমি থিওকে ওর কাছে পাঠিয়েছিলাম। ওদের কথাবার্তার পর জুলি এখন মত বদলেছে। তাই নিয়ে বোধহয় মুখগোমড়া করে বসে আছে এখন।
থিও! তুমি ওই নরকের ইঁদুরটাকে পাঠিয়েছিলে?
–কেন পাঠাব না? তুমিই তো বললে ভয়ানক বেগড়বাই করছে।
থিও! অনেক কষ্টে নিজের রাগ সামলে বলল, ও ওর গায়ে হাত দিয়েছিল?
হঠাৎ এত কৌতূহল কেন? আমি তো শুনলাম তুমি বললে মেয়েটি তোমার কাছে তেমন কিছু নয়।
হ্যারি একবার মিসেস ফ্রেঞ্চের দিকে তারপর ডানার দিকে তাকিয়ে দরজাটা আছড়ে বন্ধ করে বেরিয়ে গেল।
ডানা ওর পেছনে যাচ্ছিল। কিন্তু মিসেস ফ্রেঞ্চ ওকে আটকে বললেন, শীগগির ওর মেয়েটাতে মন ছুটে যাবে। যদি না ছোটে তবে কাজটা হাসিল হলেই আমি মেয়েটাকে নিকেশ করে দেব। বোকার মত করিস না। চিন্তা করিস না।
–চুপ কর, বলে ডানা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।
***
সোমবার সন্ধ্যায় তিতিবিরক্ত মেজাজে ব্লানশ ওয়েসলি বাড়ি ফিরল। ছুটিটা মোটেই জমেনি। বেনটনের মেজাজ কেমন খিঁচড়ে ছিল। ওর কামনার দাক্ট যেন ফুরোচ্ছিল না, হোটেলটাও নরক। হিউ বেপরোয়া জুয়ো খেলে, আকণ্ঠ ধারে ডুবে আছে। ঐ কষটা যদি ভেবে থাকে সেরা সুখ সুবিধা ছাড়া শনি–রবিবার ব্লানশের সঙ্গে কাটাবে, তবে সে ভাবনা বেশিদিন নেই।
পার্কওয়ের বিশাল হলঘরে ঢুকে ঠিক করল এখানে, ওর নিজের বাড়িতে কোনরকম বজ্জাতি বরদাস্ত করবে না ও। এখানে যদি ও আগুন চায়, জ্বেলে দিতে হবে। এখানে টোস্টের সঙ্গে ইচ্ছে হলে এক পাউন্ড মাখন চাইলে যোগাড় করে দিতে হবে। কোনরকম ত্রুটি দেখলেই তুলকালাম ঝগড়া বাধাবে ও।
কিন্তু যেই দারোয়ান ব্লানশকে দেখল অমনি ও ব্লানশকে দারুণ কায়দায় স্বাগত জানালো। ট্যাক্সিকে ভাড়া দেওয়া হল। চিঠিপত্র যত্ন করে বেঁধে দেওয়া হল। ম্যাজিকের মতো একটা জ্বলন্ত দেশলাই চলে এলো ব্লানশের মুখে ধরা সিগারেটের দিকে।
এই সশ্রদ্ধ, মন ভরানো ব্যবহার পেয়ে ব্লানশ গলে গেল।
হাতের দস্তানা খুলে ব্লানশ বলল, হ্যারিস, ফিরে এসে ভাল লাগছে। দুটো দিন জঘন্য কাটলো। এখানকার খবর কি? কেউ এসেছিল?
দারোয়ান জানে এসব প্রশ্নের জবাব দিতে পারলেই হপ্তায় অন্ততঃ পাঁচ পাউন্ড বখশিস পাওয়া যাবে। ব্লানশ সম্পর্কে ওর একান্ত ব্যক্তিগত মতামত পিলে চমকানো অশ্লীল। ও বলল শনিবার রাতে মিঃ ওয়েসলি আর মিঃ গেরিজ ফিরে এসেছিল ম্যাডাম। রবিবার সকালে একটা লোক আপনার চাকরানীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল।
ব্লানশ মধুর হেসে, চোখের পাতা নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো, মিঃ ওয়েসলি কি এ দুদিন এই ফ্ল্যাটেই ছিলেন?
–না ম্যাডাম, শুধু শনিবার রাতটা।
মিঃ গেরিজ ওঁর সঙ্গে ছিলেন?
না ম্যাডাম।
ব্লানশ সিগারেটের ছাই ঝাড়ল।
–মিঃ ওয়েসলির কিছু দরকারে দেখার জন্যে আমার চাকরানী ছিল তো? সে ফ্ল্যাট ছেড়ে যায় নি?
না ম্যাডাম। সে ছিল।
ব্লানশ মহোল্লাসে মাথা নাড়লো। একখানা জব্বর ঝগড়ার মশলা জুটেছে বটে। দারোয়ান ভাবল, গরুটা এ থেকে নিশ্চয় প্রলয় বাধাবে। বাধাক গে!
–কে আমার চাকরানীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল?
দারোয়ান মুখটা কাঁচে, গোমড়া করে বলল, বলল তো চাকরানীর ভাই হয়, কিন্তু ওকে দেখেই টের পেলাম ছোকরা একদম বাজে টাইপের। ওর চেহারা আমার পছন্দ হয় নি মোটেই।
ব্লানশের হাসি মিলিয়ে গেল। ঝঝনে গলায় বলল, তবে ওকে যেতে দিয়েছিলে কেন? তোমাকে পইপই করে বলে যাইনি ও যেন ফ্ল্যাটে কোন পুরুষ মানুষ না ঢোকায়? এতদিনে নিশ্চয় তুমি বুঝেছো ছুকড়িগুলো বেশ্যার চেয়ে ভালনয়? তুমি কি চাও আমি যখন থাকবনা, তখন আমার ফ্ল্যাট বেশ্যালয় হয়ে ওঠে?
দারোয়ান নিজে বিপাকে জড়িয়ে পড়েছে ভেবে বলল, কাল সকাল নটায় ছোকরা এসেছিল ম্যাডাম। বেশিক্ষণ থাকে নি। কয়েক মিনিটের মধ্যে চলে গেছে। বেশি থাকলে আমি নিশ্চয় ওকে নামিয়ে দিতাম। আমার বিশ্বাস কোনরকম বদমাইশি করার ফুরসতই পায় নি ওরা।
ব্লানশ সোজাসুজি চাইল ওর দিকে।
কাটাকাটা তেতো গলায় বলল, রবিবার সকাল নটায় শনিবার রাত নটার মতই বদমায়েশি করা যায়। আমি যা জেনেছি, এই পাঁকের পোকাগুলোর কয়েক মিনিটেই বজ্জাতি সারতে কিছু অসুবিধা হয় না। ওর ভাই থাকতে পারে আমার বিশ্বাসই হয় না। তুমি চিরকালের মুখ, গাধা। মনে হচ্ছে কোন গির্জার কবরখানায় না সেঁধোনো অবধি তুমি গাধাই থেকে যাবে।
–হ্যাঁ ম্যাডাম। দারোয়ান সবিনয়ে মাথা নোয়াল।
সহকারী দারোয়ান মালপত্র নিয়ে লিফটের দিকে গেল।
মূর্তিমতী ক্ষুদ্র একটা ঝড়ের মত ফ্ল্যাটে ঢুকে ব্লানশ প্রাণপণে বেল বাজাতে লাগল।
জুলি ছুটে আসতে ব্লানশ ওকে খুঁটিয়ে দেখল চোখের নীচে কালশিটের দাগ, মুখ ফ্যাকাশে। হবারই কথা, কালরাতে একপলকও ঘুম হয়নি।
জুলি কিছু বলল না।
ব্লানশ হুকুম দিল, ব্র্যান্ডি আন ঝটপট। তোমার চেহারা বিশ্রি হয়েছে।
জুলি এই মুহূর্তটায় ভয়ে কাঁপছে। ও ব্র্যান্ডির বোতল আর গ্লাস এনে দিল। সুটকেশটা তুলে নিল।
ব্লানশ শানিত গলায় বলল, যাবেনা। তোমার সঙ্গে কথা আছে। সামনে এসো, যাতে তোমাকে দেখতে পাই।
ব্র্যান্ডি ঢালল ব্লানশ, আধ বোতল ব্র্যান্ডি নির্জলা খেল, আবার ঢালল, সিগারেট ধরালো।
–এই ছুটিটা কিভাবে কাটালে?
জুলি চোখ নামিয়ে বলল, তেমন কিছু নয় ম্যাডাম, এই সব গোছগাছ করলাম। কিছু সেলাই ছিল।
ব্লানশ ধৈর্য হারিয়ে আঙুল নাচাল।
–সে ছেড়ে দাও। কেউ এসেছিল?
না ম্যাডাম।
ব্লানশ কটমটিয়ে চাইল।
বলতে চাও, তুমি ছাড়া এখানে এ–দুদিন আর কেউ আসেনি বা থাকেনি?
একটু ইতস্ততঃ করে বলল জুলি, তাই ঠিক ম্যাডাম।
–আশ্চর্য তো! দারোয়ান বলল, কাল তোমার ভাই এসেছিল?
জুলি তোতলাতে লাগল, আ…আ… আমার ভাই? পরে বুঝল থিও নিশ্চয় দারোয়ানকে ভাই পরিচয় দিয়েছিল। বলল, হ্যাঁ, হ্যাঁ..ম্যাডাম। আমি ভুলে গেছলাম। আমি ওকে বাড়িতে ঢুকতে দিই নি। বেশিক্ষণ থাকে নি। আপনি নিশ্চয়ই দোষ নেবেন না।
ব্লানশ আয়েশ করে ব্র্যাভিতে চুমুক দিল। ধারালো গলায় ব্লানশ বলল, আমি মনে করি তুমি মিথ্যে বলছ। আমি বিশ্বাস করি না তোমার কোন ভাই আছে বা তুমি তাকে বাড়িতে ঢোকাও নি।
জুলি বলল, আমি সত্যি কথা বলছি ম্যাডাম ও বাড়িতে ঢোকে নি। ও জাহাজে কাজ পেয়েছে বিদায় জানাতে এসেছিল।
ব্লানশের চোখে ধিকিধিকি আগুন জ্বলতে লাগল।
–আচ্ছা! তাই বুঝি।
মনে মনে ভাবল, এ বেশ্যা ছুঁড়িটা দেখছি মহা ঘাগী, তবে ওর সঙ্গে ফয়সালা শেষ করিনি এখনো।
ভুরু তুলে জিজ্ঞেস করল, তোমার ভাই ছাড়া তবে আর কেউ আসে নি?
জুলি ভাবতে লাগলো দারোয়ান ব্লানশকে কি বলেছে। জুলিকে ওয়েসলি কিছু বলতে বারণ করেছেন। দাঁড়িয়ে আমতা আমতা করতে লাগলো, কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না।
জবাব দাও।
জুলি ভাবল যা হবার হবে।
না, আর কেউ আসেনি ম্যাডাম।
ব্লানশ হাসল।
–মিঃ ওয়েসলি আসেন নি জুলি? ওর গলা রীতিমত মিষ্টি।
জুলি দেখল ও তো সব জেনে ফেলেছে। এখন আমি কি করি?
ব্লানশ ওকে কোন কিছু বলার সুযোগই দিল না। দুরন্ত রাগে জ্বলে উঠল। চেয়ার ছেড়ে গজরাতে গজরাতে বলল, এই ব্যাপার আঁ? জানি অন্ধরা বাছাবাছি করতে পারে না। কথাই আছে অন্ধকারে সব বেড়ালই একরঙের কিন্তু ওয়েসলি একটা পথের শুটকো বেড়ালকে পছন্দ করলো?
জুলির কথাগুলো প্রথমে গরম তারপর ঠাণ্ডা লাগল। ওর তো কিছুই করার নেই। যতক্ষণ না মিসেস ফ্রেঞ্চ ওকে যেতে না বলছে ওকে এখানে থাকতেই হবে। জুলি মরিয়া হয়ে বলে উঠল, আপনি ভুল করছেন ম্যাডাম।
–ভুল করছি? চেঁচিয়ে কান ফাটিয়ে দিল, কোন্ সাহসে তুমি মিথ্যে কথা বলো? ব্র্যান্ডির গ্লাসটা জুলির দিকে ছুঁড়ল। জুলিকে পেরিয়ে গ্লাসটা দেওয়ালে লেগে ভাঙল।
–বেরিয়ে যাও সামনে থেকে আধা পয়সার বেশ্যা!
জুলি দরজার দিকে ছুটল। আরো কিছু খুঁজতে লাগল ওকে ছুঁড়ে মারবার জন্যে। ওয়েসলি ঢুকছিলেন। ওঁর সঙ্গে জুলির আরেকটু হলে ধাক্কা লাগছিল।
–কি হচ্ছে এখানে? ব্লানশ? কি হচ্ছে?
ব্লানশ চেঁচাতে লাগল, কি হচ্ছে? তোমার আধপয়সার মেয়েমানুষকে বলছি ও কি জাতের মেয়ে।
ওয়েসলি সংযত গলায় বলল, তুমি নিজেকে শান্ত কর ব্লানশ। কি বলছ তা তুমি নিজেই জান না।
–তুমি অস্বীকার করতে পার ঐ ছুড়িটার সঙ্গে তুমি রাত কাটাও নি?
–আমি শুধু শনিবার রাতে এখানে ছিলাম। তাতেই তুমি চটেছ?
–তোমরা যদি বদমায়েশি না করে থাকো তো ও কেন বলল, তুমি মোটেই এখানে আসো নি?
আমিই ওকে এইকথা বলতে বলেছিলাম। ভেবেছিলাম তোমার মত নোংরা, সংকীর্ণ মনের মানুষকে ও কথা বললে একটা বিশ্রী ঝামেলা এড়ানো যাবে। এখন দেখছি আমার ভুল হয়েছিল। খুশি হয়েছ?
ব্লানশ উন্মাদ হয়ে উঠল, সস্তার বদমাশ কোথাকার।
তারপর মারের শব্দ, আসবাব উলটে পড়ার শব্দ শোনা গেল।
ভয় পেয়ে জুলি ঘরে উঁকি দিল।
ওয়েসলি মুখে হাত ঢাকা দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আর ব্লানশ ওঁর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জ্বলছে। চারদিকে টেবিল, ফুলদানি ভেঙে পড়ে আছে। ওয়েসলি শান্ত গলায় বলল, এবার নিশ্চয় তুমি খুশি হয়েছ?
না হইনি! অপদার্থ কোথাকার! ব্লানশ ওঁর মুখে আবার চড় মারলো।
ওয়েসলি পিছিয়ে গেলেন।
যথেষ্ট হয়েছে ব্লানশ। তুমি মাতাল হয়েছ। যাও শুয়ে নেশা কাটাও। তোমায় দেখে আমার ঘেন্না হচ্ছে।
ব্লানশ চেঁচিয়ে উঠল, আমি তোমায় ঘেন্না করি। চারদিকে খ্যাপার মত চেয়ে ও ফায়ার প্লেসের আগুন খোঁচাবার শিকটা তুলে নিল। চোখে খুনীর মত ভয়ঙ্কর দৃষ্টি। ব্লানশের এই রূপ দেখে জুলির রক্ত হিম হয়ে গেল। ব্লানশ শিকটা নিয়ে ওয়েসলির দিকে ছুটতেই জুলি চেঁচিয়ে উঠল, সাবধান! ওর হাতে শিক।
ওয়েসলি ব্লানশের পাশ কাটাবার কোন চেষ্টাই করলেন না। জুলি এসে ব্লানশের কবজি চেপে ধরল।
–ওঁর গায়ে হাত দিও না। উনি অন্ধ না? জুলি চেঁচিয়ে উঠলো।
ব্লানশ হাত ছাড়িয়ে জুলির দিকে তাজ্জব হয়ে চেয়ে রইলেন। ওর রাগ চলে গিয়ে পরম উল্লাসে হাসতে লাগলো।
–ওঃ হাওয়ার্ড। এ একেবারে বেজায় রগড়! হাসতে হাসতে ব্লানশ বলল, বোকাটা ভেবেছিল, আমি তোমায় সত্যি মারবো।
জুলি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ব্লানশের পৈশাচিক হাসি বিমূঢ় হয়ে শুনতে লাগল। ওর মুখ সাদা।
ব্লানশ হাসতে হাসতে বলল, পালাও জুলি। ওকে বাঁচাতে হবে না তোমায়। আমি ওকে কখনোই আঘাত করব না।
জুলি ঢোঁক গিলে ঘর ছেড়ে বেরোতে যাবে এমন সময় সদর দরজায় ঘণ্টা বেজে উঠলো।
হিউ বেনটন টুপি আর দস্তানা জুলির হাতে দিয়ে ওকে দেখলে গম্ভীর হয়ে। জিজ্ঞেস করল, মিঃ আর মিসেস ওয়েসলি বাড়িতে আছেন আশা করি? আমি নিজেই যেতে পারবো।
ভেতরে ঢুকে দাঁড়িয়ে শিকটা, ভাঙা ফুলদানি, কার্পেটে জলের দাগ দেখে ওর হলদে চোখ দুটো ব্লানশের ওপর গিয়ে স্থির হলো।
ব্লানশ হালকা গলায় বলল, এই যে হিউ। এসেছ, ভালই হল। আমি মেজাজ খারাপ করছিলাম।
বেনটন সাবধানে ঘরে ঢুকল, দুঃখের কথা। হ্যালো হাওয়ার্ড। তুমি ফিরেছ? অফিসে ছিলাম না তুমি আসার সময়ে, সেজন্যে দুঃখিত। আমি ব্রাইটনে শনি রবিবারটা লম্বা ছুটি কাটাচ্ছিলাম।
ওয়েসলি বলল, অফিসে তাই বলল। আশা করি তুমি ভালই কাটিয়েছ?
–মন্দ নয়, ধন্যবাদ। আবহাওয়া সুবিধের ছিল না।
ব্লানশ মধুর গলায় বলল, হিউ, তুমি নিশ্চয় কোন ভাল হোটেলে ছিলে? সস্তার হোটেলগুলো এত বাজে, আগুন থাকে না। ব্র্যান্ডি থাকে না, মাখন দেয় না। জঘন্য।
বেনটন ঘরে পায়চারি করতে করতে বলল, জানি তুমি কি বলছ। তবে এখন সময়টা খুব কঠিন, সময়টা ভাল নয়।
ব্লানশ হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠলো, জুলি! জুলি কোথায় গেল। এগুলো সাফ করে ফেল এখনি।
জুলি তাড়াতাড়ি পরিষ্কার করতে লাগল, স্পষ্ট বুঝল বেনটন কৌতূহলী দৃষ্টিতে ওকে দেখছে।
ওয়েসলি হঠাৎ বললেন, একটু মদ খাও হিউ। আজ রাতে আমি বেরোচ্ছি না, বাড়িতেই কাজ করব।
বেনটন বলল, বেজায় আফশোষ! আমি ভাবছিলাম তোমরা দুজন আমার ক্লাবে ডিনার খাবে কি না। আমি একটা হুইস্কি খেতে পারি। কি, মত বদলাবে না কি?
ওয়েসলি সাইডবোর্ডের দিকে যেতেই রাশ বলল, আমায় ব্র্যান্ডি দিও ডার্লিং। হিউ, তোমার ক্লাবে ডিনার খেতে আমার ভাল লাগবে। কি সুন্দর পুরনো ধাঁচের ক্লাবটা। চল না হাওয়ার্ড।
ওয়েসলি আস্তে বললেন, আমার কাজ আছে।
ব্লানশ বলল, তবে তোমাকে ছাড়াই যাব। আমি এখানে সারাদিন বন্ধ থাকবো না কি?
–যা ইচ্ছে। ওয়েসলি দুটো গ্লাস নিয়ে এলেন।
ব্লানশ গ্লাসে হুইস্কি ঢেলে বেনটনকে দিল।
বেনটন বলল, ঠিক আছে, পরে কখনো হবেখন।
–কিন্তু আমি তোমার পুরোন ক্লাবে যেতে চাই বেনটন। হাওয়ার্ড কোথাও যেতে চায় না।
বেশ হাওয়ার্ড যদি কিছু মনে না করে।
–কেন মনে করব? ওয়েসলি হাতড়ে হাতড়ে একটা চেয়ারে গিয়ে বসলেন।
জুলি কাঁচের টুকরোগুলো নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল কিন্তু হঠাৎ ও দাঁড়িয়ে পড়লো দরজার বাইরে। ওর হৃদপিন্ডের স্পন্দন যেন থেমে গেল। শুনল নেটন বলছে, ব্লানশ! তোমার ওই আশ্চর্য আলমারীর কথা আজ স্ট্যান্ডার্ড কাগজে পড়ছিলাম। লিখেছে ওটা নাকি পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য। ঐ আলমারীটা আমি কখনো দেখিনি। তুমি কোনরকম রহস্য না করে ওটা আমাকে দেখাবে? আমি কথা দিচ্ছি আমি চোর নই।
দেওয়ালে লেপটে জুলি শুনতে লাগল।
ব্লানশ বলল, নিশ্চয় দেখাব। আমি ভাবিনি ওটা তুমি দেখতে চাইবে। বেশ মজার জিনিষ। জুলিকে সেদিন আটকে দিয়েছিলাম ওর ভেতরে। ব্লানশ হাসল।
–কেন ও কাজ করেছিলে? ওয়েসলির শানিত গলা।
–তামাশা করে। দেখছিলাম ও কি করে। নেকি মূৰ্ছা গেল।
ওয়েসলি বললেন, কাজটা কি ভাল হয়েছিল? বিপজ্জনকও বটে।
ব্লানশ অবহেলায় বলল, ও তো আর নালিশ করতে আসেনি। আমার ইচ্ছে হলে তামাশা করব। ওর ভাল না লাগলে কাজ ছেড়ে দিতে পারে।
বেনটন মিঠে গলায় বলল, আজকাল তো চাকরাণী মেলা কঠিন। ওকে তত বেশ কাজের বলেই মনে হয়।
দেখতে ফুটফুটিটি আর সস্তার মেম আছে। সেইজন্যে দেখছি তুমি আর হাওয়ার্ড সর্বদা ওর হয়ে ওকালতি করছে। ব্লানশ ধারালো গলায় বলল, হাওয়ার্ড তো এমনই মজেছে কাল রাতে চোরের মত এসে ওর সঙ্গে রাত কাটিয়েছে।
ঘরে সহসা নীরবতা নেমে এলো।
অস্বস্তি কাটাতে বেনটন বলল, না ব্লানশ!
তীক্ষ্ণ গলায় ব্লানশ বলল, আমি বলছি না কিছু হয়েছে। আর হাওয়ার্ডের সে বয়সও নেই। তবে জুলি ওর পেছু নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।
ওয়েসলি রেগে বলল, আমরা কি এ প্রসঙ্গ থামাবব্লানশ? একদিনের পক্ষে যথেষ্ট আজেবাজে কথা হয়েছে। আমার মনে হয় না এটা তামাশা হিসেবেও উচ্চস্তরের।
বেনটন তাড়াতাড়ি বলল, চল না আলমারীটা দেখি। ঝগড়া বাঁধার আগেই ওর এই অছিলা, দেখতে দেবে আমায়? আমি কারুকে বলতে যাবো না ওটা কেমন করে খোলে।
ওয়েসলি ঠাণ্ডা গলায় বলল, সে ব্লানশ জানে। আমরা ঠিক করেছিলাম যে কম্বিনেশানটা আমরা দুজন ছাড়া কেউ জানবে না।
–ওঃ, তা যদি হয়…।
ব্লানশ বলে উঠল, একবারেই নয়। ও নিশ্চয়ই দেখবে। হিউয়ের কাছে আমাদের গোপন কিছু নেই, আছে কি?
ওয়েসলি বলল, দেখাতে চাও, দেখাও।
বেনটনের গলায় একটা ব্যাঙ্গের সুর, আমি ধন্য হলাম। আগে ড্রিঙ্কটা শেষ করি, তারপর দেখাবে।
ব্লানশ খিলখিলিয়ে হেসে বলল, আমরা সবাই যাব। আলমারীটা আমার শোবার ঘরে। হাওয়ার্ডই বলতে পারবে ওটা কেমন করে খুলতে, বন্ধ করতে হয়।
জুলি এই কথা শুনে তাড়াতাড়ি ব্লানশের ঘরে গেল। কোথায় লুকোবে? কাবার্ডে? না ওখানে লুকিয়ে লাভ নেই। বিছানার নিচে। না বিপদ আছে। তাহলে জানলার সামনে পর্দার আড়ালে। জুলি ছুটে গিয়ে পর্দার ফাঁকে ঢুকে পর্দা টেনে দম আটকে দাঁড়িয়ে রইল।
কয়েক মিনিট বাদে আলো জ্বলল। জুলি পর্দার জোড়ের সরু ফাঁকে চোখ রেখে সব দেখতে পেল।
ব্লানশ আর বেনটন দেওয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে। ওয়েসলি একটা ইজিচেয়ারে বসলেন।
ব্লানশ বলল, এই যে আলমারীটা এই দেওয়ালের পেছনে। আমি এই স্প্রিংটা ছুঁলে দেওয়ালটা সরে যাবে পাশের দিকে। এটা হাওয়ার্ডের বুদ্ধিতে তৈরী। সমস্ত জিনিষটা ও নিজে তৈরী করেছে। অন্ধ হবার আগে ও সব কিছু নিজের হাতে করতে পারতো। এমনই বুদ্ধি ছিল ওর।
ধাতব হাসি হাসল ব্লানশ। সে হাসি শুনে জুলি শিউরে উঠলো। ব্লানশ বেনটনের দিকে একটা অর্থপূর্ণ হাসি হেসে বলল, একটা লুকোনো পয়েন্টার আছে। সেটা একটা বিশেষ নম্বরে ঢুকিয়ে দিলে তবে স্প্রিংটা কাজ করবে, নইলে নয়।
ওয়েসলি জিজ্ঞেস করল, অ্যালার্ম বন্ধ করেছে?
না, ওটা ভুললে চলবে না। ব্লানশ বেনটনের দিকে চাইল, অ্যালার্ম বন্ধ না করে যদি পয়েন্টারটা ছোঁও, তাহলে মুহূর্তের মধ্যে ফ্ল্যাট পুলিশে ভরে যাবে।
বিছানার কাছে এসে মাথার দিকে হাতড়ে একটা ক্লিক শব্দ হলো। অ্যালার্মের গোপন সুইচটা বন্ধ হলো।
–এখন অ্যালার্ম বন্ধ হলো। ব্লানশ বলল।
–ও তাহলে এমনি করে তোমরা চোর ধর। বলে ব্লানশকে কাছে টেনে নিল। ব্লানশ প্রথমে একটু চমকে হাওয়ার্ডের দিকে তাকিয়ে দেখল ও নিশ্চুপভাবে বসে আছে। ও তখন বেনটনের চুমো নিতে মুখ তুলল।
ব্লানশ বেনটনকে ঠেলে দিয়ে আঙুল তুলে সাবধান করে দিল। জুলি ভাবল উনি ঘরে আছেন, কেমন করে ওরা এ কাজ করছে?
এই যে পয়েন্টার। দেওয়াল থেকে লেপের খানিকটা আবরণ সরালো, জুলি দেখল ছোট নম্বরের একটা ডায়াল আছে দেওয়ালের গায়ে।
–আমি পয়েন্টারটা তিন নম্বর অব্দি ঘোরালাম, পা দিয়ে নয়টা টিপলাম, দরজা খুলল।
দেওয়াল সরে, ইস্পাতের দরজা দেখা গেল।
–খাসা, নিখুঁত কাজ। ও ব্লানশকে ধরতে যেতে ব্লানশ ভুরু কুঁচকে ওকে ঠেলে দিল।
ব্লানশ বলল, এই ইস্পাতের দরজায় আরেকটা অ্যালার্ম আছে। ওটা বন্ধ করে দেবে হাওয়ার্ড। ওয়েসলি উঠে দাঁড়ালেন। ব্লানশ বেনটনকে বললো, সুইচটা বাথরুমে এমনি সুইচেরই মতো।
বেনটন শুনল না। ওয়েসলি হাতড়াতে হাতড়াতে বাথরুমের দিকে যেতেই বেনটন ব্লানশকে জড়িয়ে ধরলো। দুজনে দুজনকে পিষে ফেলতে লাগল। বেনটনের ঠোঁট নেমে এলো ব্লানশের ঠোঁটে। আবেগের উন্মত্ততায় ওরা টেরই পেল না ওয়েসলি ফিরে এসেছে।
ওয়েসলি দাঁড়িয়ে আছেন। জুলি দেখল ওর মুঠো শক্ত হয়ে উঠলো। জুলির মনে হল, উনি যেন শুনতে পাচ্ছেন ওরা কি রকম জন্তুর মতো আচরণ করছে।
সহসা বেনটনের আলিঙ্গন থেকে ব্লানশ নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। ওয়েসলিকে দেখে মুখ বেঁকিয়ে দাঁত বের করল ও।
ওয়েসলি নিরুত্তাপ গলায় বলল, অ্যালার্ম বন্ধ করে দিয়েছি।
ব্লানশ একমুহূর্ত কোন কথাই বলতে পারলো না, তারপর বলল, হাওয়ার্ডই বলুক চোর ধরবার ফাঁদটার কথা।
বেনটন তখন রুমাল দিয়ে মুখ মুছছে।
–চোর ধরার ফাদটা কি? ওর স্খলিত গলার স্বর।
জুলি তীক্ষ্ণ নজরে দেখল, ব্লানশ ইস্পাতের দরজাটার পাশের সুইচটা বন্ধ করলো। হঠাৎ বাতাস বেরিয়ে যাবার মত হিসহিস্ আওয়াজ হল। ঘরের আলো কেঁপে উঠল। দরজাটা খুলে গেল।
ওয়েসলি বললেন, যদি বা কোন চোর এত অব্দি পৌঁছতে পারে, এখনো অব্দি হয় নি, তবু আলমারীতে ঢুকলেই ও বন্ধ হয়ে যাবে। ভেতরে দেওয়ালের একদিকে একটা লুকোনো আলো আছে। সেটা আলমারীটার উল্টো দিকের ভেতরে দেওয়ালের গায়ে একটা ফটোজেনিক ইলেকট্রিক সেলে পড়ছে।
বেনটন ঝুঁকে পড়ে ভেতরটা দেখল।
–তারপর? ব্লানশের দিকে চেয়ে ও ভুরু তুলল। ব্লানশ মাথা নাড়ল।
ওয়েসলি বলে চললেন, ভেতরে কোন লোক ঢুকলেই আলোটা বাধা পায়। ফলে সেলের ভেতর দিয়ে যে কারেন্টটা বইছে সেটা বাধা পায়, ফলে কমে যায়। ফলে ট্রায়োড ভাবের গ্রিড ভেস্তালটেজ বেড়ে যায়। তার ফলে দরজা বন্ধ করবার জিনিষটায় বিদ্যুৎ তরঙ্গ এসে ধাক্কা দেয়।
বেনটন বলল, আশ্চর্য বুদ্ধির খেলা। আমি যদি আলমারীতে ঢুকি, তাহলে বন্ধ হয়ে থাকবো?
ওয়েসলি বললেন, হ্যাঁ, যতক্ষণ না কেউ খুলে দেয়, তুমি দমবন্ধ হয়ে মরবে।
বেনটন অসহায় হাসি হেসে বলল, আমার মনে হয় না আমি সে চেষ্টা করব। দরজাটাকে কন্ট্রোল করার কোন উপায় নিশ্চয় আছে!
–নিশ্চয়। সেলে যে আলোটা পড়ছে সেটা নিবিয়ে দাও। ব্যস, তুমি নিরাপদ।
–কিন্তু এত খুঁটিনাটি, এত বিরাট ব্যাপার করার দরকারটা কি ছিল? খরচও তো প্রচুর লেগেছে এটা বানাতে?
–এটা খেলনা নয়। ওয়েসলি বললেন, ইনস্যুরেন্স থেকে আমি এটা তৈরির খরচ তুলে নেব। ইনস্যুরেন্স কোম্পানী এটা দেখে মুগ্ধ হয়ে ওদের রেট কমিয়ে দেয়। ফারগুলোই তো তিরিশ হাজার পাউন্ডে ইনস্যুরেন্স করা। তাছাড়া ব্লানশের গয়নাগাটি তো আছেই।
বেনটন বলল, সাংঘাতিক জিনিষ! তবে ইনস্যুরেন্সের কথাটা আমি ভেবে দেখি নি। আমায় এটা দেখানোর জন্যে ধন্যবাদ।
ব্লানশ বলল, এখন তোমার আদ্যিকালের ক্লাবে চল। চল না হাওয়ার্ড?
ওয়েসলি আচমকা বললেন, আমি দুঃখিত। আমার ডিকটেশান দেবার আছে, তুমি যাও।
বেনটন বলল, যদি তাই বল…। যেমন আছে তেমন চলো ব্লানশ, পোশাক পাল্টাবার দরকার নেই।
ব্লানশ সিল্ক কোটটা হ্যাঁঙার থেকে টেনে নিয়ে গায়ে পরল।
–আলমারীটা বন্ধ করে দেবে হাওয়ার্ড?
–হ্যাঁ। ওয়েসলির কাটছাঁট গলা।
পর্দার ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসবে ভাবল জুলি। অপেক্ষা করতে লাগল ব্লানশ যদি ওকে খোঁজে। কিন্তু ও তখন বেনটনকে নিয়ে বেজায় মত্ত।
বাইরের দরজা বন্ধ হওয়ার আওয়াজ পেয়ে জুলি ধড়ে প্রাণ পেল। এরপর পর্দার ফাঁক দিয়ে যা দেখল তাতে ও দাঁড়িয়ে জমে গেল একেবারে।
দেখল হাওয়ার্ড কালো চশমা খুলে ঘরের মধ্যে দিব্যি হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে। যেরকম চটপট উনি আলমারীটা বন্ধ করলেন, জুলি বুঝল উনি অন্ধ নন। ও এত চমকে গেল গলা দিয়ে একটা অস্ফুট আওয়াজ বেরোল। ওয়েসলি শুনতে পেলেন। ঘুরে দাঁড়িয়ে ও যেখানটায় লুকিয়ে আছে, পর্দার ঐ জায়গাটার দিকে তাকালেন।
এখন জুলি বুঝল চশমা জোড়া ওঁর মুখোশ। চশমা ছাড়া ঝকঝকে একজোড়া চোখ দেখতে পেয়ে ওর ভয় করল।
উনি নিচু গলায় বললেন, তুমি বাইরে আসতে পার জুলি।
.
ওর স্টাডির বড় ইট বাঁধানো ফায়ার প্লেসের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন হাওয়ার্ড ওয়েসলি। বিভ্রান্ত, বিহ্বল জুলি সামনের একটা ইজিচেয়ারে বসেছিল।
উনি যে দেখতে পান জুলি একথা জেনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। ওনার কথানুযায়ী ওঁর পেছন পেছন স্টাডিতে এসেছে।
যদিও উনি বেশ স্বাভাবিক আছেন তবুও ওঁকে বেশ চিন্তিত, ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে। কেউই কোন কথা বলল না।
হঠাৎ ওয়েসলি বললেন, ভেব না আমি:তোমার ওপর রেগে আছি। ভয় পাবার কিছু নেই।
জুলি মুখ তুলল। ওঁর চোখ দুটো সাংঘাতিক যেন হীরক দীপ্ত চাউনি। যেন ওঁর সমস্ত সত্তা কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে ঐ চোখদুটোয়।
ওয়েসলি আস্তে আস্তে ধীর গলায় বললেন, আমার চোখে দৃষ্টি থাকার কথা তুমি কাউকে বলবে না, এমন কি মিসেস ওয়েসলিকেও নয়। আমি কে তা বলতে পারব না। তবে তুমি আমায় কথা দাও যে তুমি কাউকে কিছু বলবে না। আমি কি তোমাকে বিশ্বাস করতে পারি?
জুলি অবাক হল যে উনি ওর কাছ থেকে জানতে চাইলেন না পর্দার ওপাশে জুলি কি করছিল। আর তখনি ওর নিজের ওপর বিশ্বাস ফিরে এল।
ও বলল, নিশ্চয়ই। আমি কিছু বলব না।
আমার দিকে চাও জুলি।
জুলি মুখ তুলে চাইতে উনি হাসলেন। বললেন, তুমি কি সত্যিই আমাকে কথা দিচ্ছো? এর ওপর আমার সাফল্য ও ব্যর্থতা নির্ভর করছে, এটুকুই খালি বলতে পারি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে।
জুলি ভাবল, তাই যদি হয়, তবে আমি কোন না কোন কাজে এটাকে কাজে লাগাতে পারি। হয়তো এজন্যই উনি আমার থেকে জানতে চান নি কেন আমি ওখানে লুকিয়েছিলাম।
–কথা দিচ্ছি। জুলি বলল।
কথা দেওয়ার কি কোন দাম আছে? জুলি দেখবে ঘটনা কোন দিকে যায়, সেইমত কাজ করবে।
–ধন্যবাদ। ওয়েসলি প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললেন, তুমি কোন বিপদের মধ্যে আছো, তাই না?
জুলি কিছু বলল না।
–দেখ জুলি, তুমি সব খুলে বল। তুমি যা মনে করছে আমি তার চেয়ে বেশীই জানি। এখানে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কাজে ঢুকেছো তাই না?
জুলি ভাবল কেমন করে উনি টের পেলেন, আর ওর সম্বন্ধে কতটাই বা জানেন উনি?
–উদ্দেশ্য? কি বলছেন আপনি?
–এটা পড়ে দেখ। কাল এসেছে। ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে ওকে দিলেন।
লেখাটা দেখে ভয়ে কাঠ হয়ে গেল ও। হিউয়ার্ট ওয়েসলিকে একটা ছোট্ট চিঠি লিখেছে। পড়ে ওর মুখে এক ঝলক রক্ত উঠে এল?
প্রিয় মহাশয়,
সাবধান হোন। হ্যারি গ্লেব ফার চোর। জুলি হল্যান্ড আর গ্লেব পরস্পরের বন্ধু। চোখ না খোলা রাখলে আপনার ফারগুলো খোয়া যাবে।
— [জনৈক বন্ধু]
বুড়ো জন্তুটা বলেছিল শোধ নেবে। ও নিশ্চয়ই জুলির ওপর নজর রেখেছিল।
ওয়েসলি খুব আস্তে জিজ্ঞেস করলেন, একথা কি সত্যি তুমি আর গ্নেব দুজনেই ফার চুরি করতে চাও?
জুলি এক মুহূর্ত ইতস্ততঃ করলো। তারপর ওঁকে সমস্ত কথা বলবে ঠিক করল। উনি তো চান জুলি ওঁর গোপন কথা চেপে রাখুক। উনি ওর কোন ক্ষতি করবেন না বলে ভরসা আছে। থিও, ওর সঙ্গে যা ব্যবহার করে গেছে, তার থেকে বাঁচতে ওদের কথা ফাস করে দিতে আপত্তি কোথায়? ওদের হাত থেকে বাঁচার একমাত্র সুযোগ!
–ওরা আমাকে বাধ্য করেছে। বলে রুমাল বার করে কান্নার ভান করতে করতে বলল, আপনি জানেন না ওরা কি রকম। আমাকে ভিট্রিয়ল দেখিয়ে ভয় দেখিয়েছে, মেরে এ কাজ করতে বাধ্য করেছে। আমি একাজ করতে চাইনি।
ওয়েসলি বসলেন।
–এত ভেঙে পড়ো না। গোড়া থেকে শুরু কর। কে এই চিঠি লিখেছে।
রুমালে মুখ ঢেকে জুলি বলল, স্যাম হিউয়ার্ট। আমি ওর হ্যামারস্মিথের কাফেতে চাকরি করতাম। আমি জানতাম ওর কাফে গুণ্ডাদের দেখা করার জায়গা। তবু আমি ওদের হাত এড়িয়ে চলতে পারি নি।
আমি টাকাটা এত চাইছিলাম! আমি কোনদিন অর্থসুখ পাইনি। আপনি জানেননা গরীবহওয়ার কি দুঃখ।
একটা দীর্ঘ বিরতির পর ওয়েসলি বলল, তুমি এরকম কোর না বুঝলে? আমাকে যদি তোমাকে সাহায্য করতেই হয় করবো। তবে আমাকে সবকিছু ভোলাখুলি বলতে হবে। এই গ্লেবের সঙ্গে তোমার কি ঐ কাফেতে আলাপ হয়?
–হ্যাঁ।
এবার জুলি ওর দুঃখের কথা বলে গেল। কেমন করে হ্যারি ওর সঙ্গে প্রেম করে, ও বিয়ে করবে বলেছে সে কথা, কেমন করে হ্যারি ওকে এই কাজটা জুটিয়ে দিল, থিও এখানে এসেছে সে কথা, সব কিছু বলল।
শেষে বলল, আমি জানি আমার এখানে কাজ নেওয়া উচিত হয়নি। মুখটা এমনভাবে ঘুরিয়ে রাখল যাতে ওয়েসলি ওর কান্নার ভানটা বুঝতে না পারে। বলল, আমি শপথ করে বলছি, আলমারীটা দেখার আগে আমি বুঝিনি, ওরা কি করতে চাইছে। যখন চলে যেতে চাইলাম, তখন ঐ থিও আমাকে ভয় দেখিয়ে বলল, একাজ না করলে মুখে ভিট্রিয়ল ছুঁড়ে মারবে। আমায় ভয় ধরিয়ে দিল।
ওয়েসলি সব কথা মন দিয়ে শুনলেন।
চিন্তা করবার কিছু নেই। উনি হেসে বললেন। আমরা একটা উপায় বের করবো। দেখ দেরী হয়ে যাচ্ছে। তোমার কথা জানি না, আমার ভীষণ খিদে পেয়েছে। তুমি রেস্টুরেন্টে বলে দেবে দুজনের খাবার পাঠাতে? এ-সব কথা ভাবতে আমি একটু সময় চাই। তুমি খাবারের ব্যবস্থা কর। আমরা খেতে খেতে কথা বলব।
মদের আলমারীটার দিকে হেঁটে গেলেন। বললেন, এখন তুমি একটু মদ নাও। অত চিন্তার কিছু নেই। তোমার সব কথা শুনে আমি মনে করি না তোমার কোন দোষ আছে।
দুজনের মদ ঢালতে ঢালতে উনি বললেন, যখন তোমায় প্রথম দেখি তখন সঙ্গে কে ছিল গ্নেব?
জুলি লজ্জায় মাথা নিচু করল।
–আমি তখন ভাবতেই পারিনি, আপনি দেখতে পাচ্ছেন আমায়। ও রকম পোশাক পরেছিলাম বলে আমি লজ্জা পাচ্ছি।
উনি হাসলেন।
–তোমায় খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল, ওর দিকে মদ এগিয়ে ধরে বললেন, আর একদিন এবার আমার জন্যে ওরকম সাজবে।
জুলি চমকিত চোখে চাইল। ওঁর মুখে একথা শুনবে বলে আশা করে নি।
–কে ছিল গ্লেব?
–হ্যাঁ।
–বেশ, তোমার গ্লাসটা নিয়ে যাও। আমি ভেবে দেখতে চাই। খাবার দিতে যেন দেরী না হয়, কেমন?
জুলি রেস্টুরেন্টে দুজনের খাবারের জন্যে ফোন করল। তখন জুলির মনে একেবারে অন্য ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে। খাবার আসতে যেটুকু সময় লাগল, তার মধ্যে ও কালো পোশাকের ওপর লাল বেল্ট পরে, মাথায় একটা লাল স্কার্ফ বাধল। আয়নায় নিজেকে মিষ্টি লাগলো দেখে ও খুশী হল। ভাবল যতদিন এই চেহারা আছে, ততদিন আশা আছে ওর।
রান্নাঘরে এসে ও মদ শেষ করে বেশ ফুর্তি অনুভব করলো। এত ভালভাবে সহজে ও সব বিপদ থেকে উৎরে যাবে তা ও ভাবেনি।
জুলি মনে মনে ভাবল, আমার ওপর মিঃ ওয়েসলির চোখ পড়েছে। যদি সাবধানে, চোখ কান খোলা রেখে ওঁকে খেলাতে পারি, তবে আমার জন্যে এমন কাজ নেই যা উনি করতে পারেন না। প্রচুর টাকা আছে ওনার। যা চাইব তাই পাবো। ওই মিসেস ফ্রেঞ্চ, থিও, আর হ্যারির হাত থেকে বাঁচতে পারব আর ওদের শায়েস্তা করতে পারব। এখন আমার ওয়েসলি আছে। ওদের আর দরকার হবে না।
খাবার ট্রে নিয়ে যখন ও গেল তখন উনি পায়চারি করছেন।
–সব তৈরী? একটা ট্রে নিতে নিতে বললেন, খাসা দেখাচ্ছে তোমায়। তুমি ওখানে বস, যাতে আমি তোমায় ভালভাবে দেখতে পাই।
টেবিলে মুখোমুখি বসল ওরা। ওঁর দুটি সহৃদয় চোখ দেখে জুলির সব রকম ভয়, অস্বস্তি কেটে গেল।
ওয়েসলি বললেন, খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কাজের কথা বলব না। তুমি যতটা বিপদ বলে ভাবছ, অতটা কঠিন বিপদ নয়, কিন্তু সে কথা পরে হবে। এখন তুমি খুশী তত?
না।
জুলির মনে কোন দুঃখ নেই, খারাপও ওর লাগছে না। তবু ওয়েসলির মন বোঝার জন্যে বলল, আমার এখানে বসা উচিত হচ্ছে না। মিসেস ওয়েসলি ভীষণ চটে যাবেন।
লক্ষ্য করল ওয়েসলির মুখ কঠিন হয়ে উঠল।
শানিত গলায় বললেন, ওঁর নালিশ করবার কোন অধিকার নেই। নিজের ব্যবহারেই তিনি সে অধিকার খুইয়েছেন। তুমি দেখেছিলে কি করছিলেন ঘরে?
–হা জঘন্য কাণ্ড।
ওয়েসলি বললেন, তবে ওঁর প্রসঙ্গ থাকুক। আমি তোমায় আরেকটু মদ দিই।
উনি আরো মদ ঢালতে লাগলেন। ঘরে এক মুহূর্তের নীরবতা। তারপর উনি ফিরে এসে জুলির দিকে চেয়ে হাসলেন।
–এতে আমি খুব খুশী হয়েছি জুলি। ইদানিং বড় বেশি একাকিত্ব অনুভব করছিলাম। বহুবছর সুন্দরী মেয়েদের সঙ্গে একসঙ্গে খাওয়া হয়নি। আমার খুব ভাল লাগছে।
জুলি ওয়েসলির আগ বাড়িয়ে কথা বলা দেখে অবাক হলো।
ওয়েসলি ওর বিস্ময় লক্ষ্য না করেই বললেন, তুমি যা বলছিলে আমি তা ভেবে দেখছিলাম। সেই যে জীবনে আনন্দ না পাওয়ার কথা। জুলি, আনন্দ বলতে তুমি কি বোঝ?
জুলি ঝটপট জবাব দিল, যা করতে চাই তাই করতে পারা।
–কি করতে চাও তুমি?
জুলি কোন ইতস্ততঃ না করেই বলল, টাকা চাই, ভাল পোশাক, নাচ গান করব। সবচেয়ে ভাল রেস্টুরেন্টে খেতে যাব। গাড়ি থাকবে আমার, যা খুশী কিনবো। এইসব।
ওয়েসলি হাসলেন।
জুলি সে সব দিয়ে হবেটা কি? তুমি দেখছি অতীতের মধ্যে ডুবে আছে। ওসব জিনিষে আর আজকাল মজা নেই। জীবনের সহজ জিনিষগুলো যেমন ধরো, ভাল বই পড়া, সুন্দর একটা বাগান, হেঁটে বেড়াতে যাওয়া, বাজনা শেখা, এইসব এখন আনন্দ দিতে পারে।
জুলি মনে মনে ভাবল সে আপনি ভুল ভেবেছেন। মুখে বলল, পয়সা থাকলে আমি যা চাই তা সহজে পেতে পারি, আর আমি আনন্দে সময় কাটাতে পারি।
–বেশ দেখা যাবে। তারপর ঐ কাফেতে জুলির অভিজ্ঞতা নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চাইলেন। কাফেতে যারা যারা আসতো তাদের বর্ণনা খুব মন দিয়ে শুনলেন।
খাওয়া যখন শেষ হল ততক্ষণে জুলি ওঁর সঙ্গে সহজ হয়ে উঠেছে।
–ঠিক আছে, এই ট্রে-গুলো আগে বিদায় করা যাক তারপর কাজের কথা হবে। ঘড়ির দিকে চেয়ে বললেন, তবে বেশি সময় দিতে পারব না, কারণ শুতে যাবার আগে আমার অনেক কাজ আছে।
রান্নাঘরে ট্রে-গুলো রেখে জুলি ফিরে আসতে ওয়েসলি ওকে চেয়ারে বসতে বললেন আর নিজে ফায়ার প্লেসের সামনে দাঁড়ালেন।
নিচু গলায় বললেন, আমরা এখন একটা কাজই করতে পারি, পুলিশের কাছে যেতে হবে।
জুলি ভয় পেয়ে বলল, না, তা করতে পারবো না।
–তুমি ওদের দলকে ভয় পাচ্ছো, তাই তো? কিন্তু আর তো কোন উপায়ও দেখছি না এছাড়া। পুলিশের সাহায্যে আমরা ওদের জন্য ফাঁদ পাতবো, আর সকলকে ধরে ফেলব। তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো।
জুলি শিউরে উঠে বলল, কিন্তু যদি ওরা জেনে যায়? যদি থিও পুলিশের হাত ছাড়িয়ে পালায়?
আমাদের এখন দেখতে হবে, যাতে ওরা না পালায়, ওরা যাতে জেনে না যায়। বুধবার ওদের সঙ্গে দেখা করে তুমি বল কেমন করে আলমারী খুলতে হয়। আমি তোমাকে সব খুঁটিয়ে লিখে দেব, তুমি ওটা নকল করে নেবে। গ্লেব যদি তোমার সাহায্য চায় তুমি সাহায্য করবে। আমি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করব। তবে আমরা যে ওদের জন্যে অপেক্ষা করছি এটা ওরা যেন ঘুণাক্ষরেও জানতে না পারে। তারপর সব দায়িত্ব আমার।
ওঁর কথা শুনে জুলিও মনে জোর পেল।
জুলি অস্বস্তির সঙ্গে বলল, কিন্তু আমার যদি কিছুনা হয়, তাহলে তো ওরা বুঝে যাবে আমিই ওদের ধরিয়ে দিয়েছি।
তখন ওরা পাল্টা কিছু করার সময়ই পাবেনা। দেখ জুলি তুমি কি বুঝছনা, এটাই তোমার বাঁচার একমাত্র রাস্তা?
–হ্যাঁ। জুলির গলায় অনিচ্ছা।
–ঠিক আছে। বুধবার তুমি গ্নেবের সঙ্গে দেখা করে জানতে চেষ্টা কর ওরা কখন আলমারী ভাঙার কথা ভাবছে। এটা জানা খুবই জরুরী। আমরা তৈরী থাকব। তোমার কি মনে হয় তুমি শেষ অব্দি চালিয়ে নিতে পারবে?
হ্যাঁ। থিওর চিন্তায় জুলির গলা ক্ষীণ।
এক দীর্ঘ মুহূর্ত ওয়েসলি জুলির দিকে চেয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি মনে চিন্তা হচ্ছে এসব চুকে গেলে কী করবে?
–জানি না। আমি কিছু ভাবতে পারছি না, জানি না কি করব।
ওয়েসলি আস্তে বললেন, চিন্তার কিছু নেই। আমি তোমায় একটা সুযোগ দিয়ে দেখতে চাই, তুমি যা বললে ঠিক সেইভাবে আনন্দ পেতে পার কিনা, সেইসব জিনিষ থেকে।
জুলির দিকে অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন ওয়েসলি। বললেন, আমার ছ-বছরের বিবাহিত জীবনে আমি ভালবাসা বা মমতা কিছুই পাইনি। তিনবছর আগে অন্ধ হয়ে যাবার পর আমার জীবন নিরানন্দ হয়ে ওঠে। এখন যখন চোখ ফিরে পেয়েছি, আমি এখন নতুনভাবে জীবন শুরু করতে চাই। তোমারই মত একজনকে আমার দরকার। নারীবর্জিত জীবন কাটিয়ে আমি ক্লান্ত। তুমি খুবই সুন্দর। আমি কি বলতে চাইছি আশা করি বুঝেছো?
জুলি যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। ওর মুখ রক্তের ঝলকে লাল হয়ে উঠল।
উনি বলে চললেন, আমি দ্বিতীয়বার আর বিয়ে করতে চাই না তবে তোমাকে আমি নিরাপত্তা, একটা বাড়ি, বছরে হাজার পাউন্ড দিতে পারি। তোমাকে খুব একটা জ্বালাতন আমি করব না, তবে আমরা হয়ত সুখীই হবে।
এখন জুলি বুঝল উনি কি বোঝাতে চাইছেন। বছরে হাজার পাউন্ড আর বাড়ি দিয়ে উনি ওর মুখবন্ধ রাখার চেষ্টা করছেন, আর তারই দাম দিয়ে উনি নিশ্চিত হতে চাইছেন যাতে জুলি কারুকে বলে না দেয় উনি দেখতে পান।
তা জুলি বুঝল। ওর মনে তো এই কামনাই ছিল, স্বপ্নেও ভাবে নি ওর প্রত্যাশা পূর্ণ হবে। উত্তেজনার বহর চেপে রাখতে ওকে রীতিমত চেষ্টা করতে হল।
উনি বলে চললেন, ভেবে দেখ জুলি। আমি আমার মনোভাব তোমাকে জানালাম। সময় হাতে আছে প্রচুর। আমাদের অন্যান্য কাজ আগে করতে হবে। তোমাকে দেখার পর থেকেই আমি এ কথাই ভাবছি।
জুলি ভাবল এ উনি মিথ্যে বলছেন। তাতে আমার কি? উনি চান তো আমি চুপ করে থাকবো। উনি দাম দেবেন তার।
জানি না কি বলব…জুলি কি যেন বলতে যাচ্ছিল, ওয়েসলি ওকে হাত নেড়ে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
তবে এখন বলতে হবে না। ভেবে দেখ। সব চুকেবুকে গেলে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলব।
ঘর থেকে বেরোতে পেরে জুলি যেন বাঁচল।
.
ওয়েসলির প্রস্তাবের প্রথম চমক কেটে যাবার পর জুলির কাছে আর সবই গৌণ হয়ে গেল। অপ্রীতিকর দুঃস্বপ্নের থিওর প্রসঙ্গ ওর মনের তলায় চাপা পড়ে গেল।
ওয়েসলি চান ও তার রক্ষিতা হয়ে থাকে। জুলি ওঁর শর্তে রাজী। নীরব থাকার পরিবর্তে ও পাবে নিরাপত্তা, নিজের ফ্ল্যাট, হাজার পাউন্ড, বছরে পোশাক। ওয়েসলি কি অগাধ ধনী নন? উনি তো বিশ্রি মোটা বুড়োগুলোর মত নন। উনি চমৎকার লোক। উনি প্রথম থেকে জুলির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। সাত মাস আগে একটা সম্ভার লাইব্রেরীতে জুলি কাজ করছিল, আর এখন নিজের বাড়ি, বছরে হাজার পাউন্ড পাবে।
হঠাৎ ব্লানশ ঘণ্টা বাজিয়ে ওর দিবাস্বপ্ন ভঙ্গ করল।
ব্লানশের ঘরে যেতে যেতে জুলি ভাবল, আর বেশিদিন নেই, তখন আমারই একটা চাকরানী থাকবে।
— ব্লানশ বিষ মেজাজে, কাটাকাটা গলায় বলল, স্নানের জল ভর। হাতির মত দুদ্দাড় করে আওয়াজ কোর না। আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে।
জুলি কিছু না বলে বাথরুমে গিয়ে টবে জল ভরল না। শোবার ঘরে এসে দেখল ব্লানশ পায়চারি করছে।
ব্লানশ ঘ্যাচ করে উঠল, এই হপ্তা ফুরোলেই তুমি চলে যাবে। আমি কোন কথা শুনতে চাই না।
জুলি ওর নতুন জীবন শুরুর আগে এখানেই থাকতে চায়–এই ভেবে হেসে ফেলছিল।
–হ্যাঁ, ম্যাডাম, ও এমন খুশী হয়ে কথাটা বলল যে ক্ষুব্ধ ব্লানশ বিস্ময়ে ওর মুখের দিকে তাকাল।
–যদি কোন বজ্জাতি করার চেষ্টা কর তো পাবে। এখন বেরোও আমার সামনে থেকে।
কিছুক্ষণ পর ব্লানশ বেরিয়ে যেতে ও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। লাউঞ্জে গিয়ে একটা ইজিচেয়ারে বসে কাগজ পড়তে লাগল।
ও নিজেই নিজেকে শোনাল, কিছুদিন বাদে এটাই হবে তোমার স্বাভাবিক রুটিন। এখন থেকে অভ্যেস করা যাক।
কিছুক্ষণের মধ্যে ও অস্থির হয়ে একখানা উপন্যাস পড়ার চেষ্টা করল, ভাল লাগল না, রেডিও খুলেও যুদ্ধের বাজনা শুনে বিরক্তিতে বন্ধ করে দিল।
ফাঁকা বাড়িটা যেন ওর বুকে চেপে বসতে লাগল।
নিজেকে ভরসা দিয়ে বোঝাল, যখন নিজের বাড়ি হবে, তখন অন্যরকম লাগবে। ঘন্টার পর ঘণ্টা আমি পোশাক পরব, ছাড়ব আর সাজব।
দুপুরের মধ্যে কিছু একটা করতে হবে বলে ও রুপোর জিনিষগুলো সাফ করতে বসল।
আশ্চর্য, কি তাড়াতাড়ি সময় কেটে গেল।
নিজেকে ধমক দিল, এরকম চাকরাণী সুলভ অভ্যাস আমায় ছাড়তে হবে। বিশি!
পাঁচটার ক-মিনিট বাদে ব্লানশ ফিরে এলো। ওঁর অস্থির চলাফেরায় জুলি টের পেল ব্লানশের বিরক্তি ধরে যাচ্ছিল।
জুলি ভাবল, আমার ভবিষ্যৎনীতির বিরোধী এই অর্থহীন চাকরি আমি চাই না। টাকা থাকলে আমি বরাজ সিনেমা দেখে, নাচের আসরে গিয়ে, গান শুনে সময় কাটিয়ে দিতে পারব। কিন্তু ব্লানশ এই টাকার পাঁজায় বসে কি করবে তা ভেবে পায় না, আমিও কি এই অবস্থায় পড়বে।
জুলি ভাবতে লাগলো, মিঃ ওয়েসলি ওঁর চোখের দৃষ্টি নিয়ে কেন ভান করে চলেছেন উনি অন্ধ? জুলির বিশ্বাস হয় না ওঁর কারখানার কাজের সঙ্গে কোন যোগ আছে।
হঠাৎ ওর খেয়াল হল ব্লানশ টেলিফোনে বেনটনের সঙ্গে কথা বলছে। জুলি দরজায় কান পাতল।
পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছে ব্লানশের গলা, কাল রাতে পারছি না ডার্লিং। হাওয়ার্ডের সঙ্গে এভরিটে সেই জঘন্য ডিনারে যেতে হচ্ছে। ইচ্ছে হচ্ছে চেঁচাতে। তুমি টাকা পয়সার ব্যাপারটা গুছিয়ে নিলেই আমি ডিভোর্স করবো। যাহোক কিছু কর।
–তুমি তো শুধু আমার টাকাতেই দিন কাটাতে চাও। তাই না? আমাকে দেখতে হবে না। তুমি নিজে চলবার মতো টাকা যোগাড় কর সোনা। যোগাড় করলেই আমি তোমায় বিয়ে করে ফেলব।
আবার কিছুটা থেমে ব্লানশ বলল, ভগবান, আমি দরজাটা খুলে রেখেছি। সেই ছুঁড়িটা বোধহয় সব শুনল।
জুলি তাড়াতাড়ি রান্নাঘরের দরজা বন্ধ করলো।
পরে জুলি ওয়েসলির ঢোকার আওয়াজ পেল। জুলি ওঁর কাছে গেল।
ওয়েসলি ওর দিকে না তাকিয়ে এমন ভাব দেখালেন যেন উনি অন্ধ। ওয়েসলি বলল, জুলি ঠিক আছে সব। পুলিশ বলছে যেন কিছুই হয়নি এইভাবে তুমি এগিয়ে যাও। কাল ওদের সঙ্গে দেখা করে জানিয়ে দাও আলমারী কিভাবে খোলে।
পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে ওকে দিয়ে বললেন, এটা নকল করে নাও। এতে সব বুঝিয়ে দেওয়া আছে। ওদের যাতে কোন সন্দেহ না হয় সেইভাবে তুমি ওদের থেকে জেনে নাও কখন ওরা ফার চুরি করতে আসবে। পুলিশ ওদের হাতেনাতে ধরবে আর তোমার কোন ভয় নেই।
–আচ্ছা!
জুলি ওদের দুজনের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানার আশায় দাঁড়িয়ে রইল।
ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওয়েসলি বলল, কি ভয় করছে? পারবে তো?
–হ্যাঁ পারবো।
ওয়েসলি বলল, মিসেস ওয়েসলিকে চুরির কথা কিছু বোল না। উনি যেন কোনভাবে জানতে না পারেন।
জুলি মনে মনে খেপে গিয়ে ভাবল, চুলোয় যাক চুরি। মুখে বলল, বলবো না।
–ঠিক আছে। আমরা দুজনে কথা বলছি এটা প্রকাশ না হওয়াই ভালো। বেশিদিন এভাবে সাবধানে চলতে হবে না আমাদের।
জুলি বলল, মিসেস ওয়েসলি আমাকে হপ্তা ফুরোলেই চলে যেতে বলেছেন। তার আগেই কি সব হয়ে যাবে?
–গ্লেবকে যদি শুক্রবার রাতের কথায় রাজীকরাতে পার তবে হবে। আমরা সেদিন বাইরে। থাকব।
জুলি ভাবল, এই হতভাগা চুরি ছাড়া কি আমার কথা একটুও ভাববেন না?
–আমি তো ওদের রাজী করাব। কিন্তু আমার কি হবে? এখান থেকে গেলে তো আমার থাকার জায়গা চাই।
উনি অধীর হয়ে হাত নাড়লেন।
–সে ঠিক হয়ে যাবে জুলি। তুমি এখন পালাও কেমন। উনি হাসলেন।
জুলি বলল, কিন্তু আমাদের হাতে যে বেশি সময় নেই। আপনি আমাকে একটা ফ্ল্যাট দেবেন বলেছিলেন? জুলি ভাবল, উনিযদি এসব চিন্তা না করে থাকেন, তবে বাধ্য করব এই চিন্তা করতে।
নিশ্চয়। তোমার ফ্ল্যাট হবে। আমাদের দেখতে হবে তাই না?
একটু ভাবলেন ওয়েসলি। বললেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে একবার আমার সঙ্গে দেখা করতে পারবে? দেখব কি করা যায়। এখন পালাও জুলি। আবার বেরুবার আগে আমার কাজ আছে।
জুলি ওঁর অনিচ্ছা আঁচ করতে পেরেছে। কিন্তু করবারও তো কিছু নেই। তাও কিছুক্ষণের জন্যেও তো ওর কথা ভাবতে বাধ্য করেছে।
–ঠিক আছে হাওয়ার্ড…নিশ্বাস আটকে, লাল হয়ে ও বলল, আ…আমি তোমাকে হাওয়ার্ড বলতে পারি তো?
–ওয়েসলির মুখ আড়ষ্ট, কঠিন হয়ে গেল।
রুক্ষ গলায় বললেন, যা ইচ্ছে তাই ডেক আমায়। এখন যাও।
দরজার কাছে গিয়ে জুলি ঘুরে ওর দিকে তাকাল।
ওর নিশ্চল শরীরে একটা মায়ু ও শিরা ছেঁড়া টানটান উত্তেজনা। মনে হয় লোকটা কোন বোমা বিস্ফোরণের জন্যে তৈরী হয়ে বসে আছে।
.
বুধবার।
সকালটা যেন কাটতে চাইছিল না। ব্লানশ ওয়েসলির সঙ্গে রাতে ডিনারে যেতে চায় নি, মেজাজের ঝাল ঝেড়েছে জুলির ওপর।
ব্লানশের রাগের সঙ্গে জুলির মনে হয়েছে আজ মিসেস ফ্রেঞ্চের সামনে ওকে দাঁড়াতে হবে, মনে হতেই ওর পিলে চমকে গেছে। নিজেকে অসুস্থ মনে হয়েছে।
ব্লানশ লাঞ্চে বেরিয়ে যেতে টেলিফোন বাজলো।
হ্যারি ফোন করছে।
জুলি। রবিবার থেকে তোমায় ধরার চেষ্টা করছি। যতবার ফোন করেছি ঐ ওয়েসলির বউটা ধরেছে। তোমার কথা ভেবে ভেবে আমার মাথা খারাপ হতে চলেছে। থিও তোমায় কি করেছিল?
জুলির সারা শরীর রাগে জ্বলে উঠল।
–তোমার সঙ্গে কোন কথা বলতে চাই না। ভীরু কোথাকার। তুমি ঐ শুয়োরের বাচ্চাটাকে আমাকে মারতে পাঠিয়েছিলে? আমি তোমাকে ঘেন্না করি। মুখ দেখতে চাই না তোমার, বলে রিসিভারটা দুম করে রেখে দিল।
আবার ফোন বেজে উঠে, বেজে বেজে থেমে গেল।
প্রথম দেখা হবার পর জুলি হ্যারিকে একটু ভালবেসেছিল। এখন ওয়েসলিকে পেয়ে ওর দিকে ফিরেও তাকাবে না জুলি।
সামনের দরজায় ঘণ্টা বাজতে ও গিয়ে খুলে দিল। ডিটেকটিভ ইনসপেকটার ডসন।
–আফটারনুন, ডসনের রুক্ষ গলা। ডসন টুপি ছুঁয়ে বলল, আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই।
জুলি ডসনকে দেখবে বলে আশা করেনি। ও সরে দাঁড়ালো, ডসন ঢুকল।
চারিদিকে তাকিয়ে ডসন বলল, ব্রিজ কাফের পর বেশ মুখবদল, কি বল? তুমি তো এখানে উঠেছে, তাই না?
–হ্যাঁ। জুলির গলা ক্ষীণ।
–দেখলাম মহারাণী বেরোলেন। এখন কিছুক্ষণ তো আসছেন না, তাই না?
–আসবেন না এখন।
–ঠিক আছে। চল কথা বলা যাক।
ওকে লাউঞ্জে নিয়ে এলো জুলি। চারিদিকে চেয়ে ডসন বলল, চমৎকার। একটি কাজের জিনিষও নেই। বেশ বেশ, সকলের ভাগ্যি সমান হয় না। বস তুমি।
জুলি বসল। ওর পা কাঁপছে।
মিঃ ওয়েসলি চান না ওঁর স্ত্রী এসব কথা জানুক। মনে করেন মহিলা নার্ভাস হয়ে পড়বেন। দেখে তত মনে হয় না মহিলা নার্ভাস টাইপের। তাই কি?
না
ডসন মাথা নেড়ে বললেন, স্বামীরা হচ্ছে আজব লোক। নাকি উনি ভাবছেন মহিলা তোমায় ছেচবেন।
জুলি চমকে উঠে বলল, আমি বুঝতে পারছি না, আপনি কি বলছেন।
যাকগে। এখন শোনা যাক সব। মিঃ ওয়েসলি তোমার কথা আমাদের সব বলেছেন। তবু ভাবলাম তোমার মুখ থেকে সরাসরি শোনা যাক। হ্যারি গ্লেবের সঙ্গে দোক্তিটা তাহলে হঠাৎ হল, তাই না? তখন যখন জিজ্ঞেস করেছিলাম, তুমি তো ওকে চিনতেই পারলে না।
জুলি আবার মুখের রা পালটাল।
–আপনার সঙ্গে…তারপরে…ওর সঙ্গে আমার…।
–তাই বুঝি? বেশ বেশ। আমি তোমায় ওর কথা বলে সাবধান করে দিয়েছিলাম। কি দিই নি? যাক ওয়েসলিকে সব কিছু বলে সুবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে। আগে বা পরে, ওদের আমরা ধরতামই, তোমাকেও ধরতাম।
জুলি চুপ করে সব শুনল। বুঝল কি বাঁচান টা না বেঁচেছে।
ডসন বলল, গ্লেবের সঙ্গে তোমার দোস্তি হবার পর থেকে সব কথা, কোন কিছু না লুকিয়ে বলে যাও।
জুলির ঘোর অনিচ্ছা থাকলেও, ও ওয়েসলিকে যা যা বলেছিল ডসনকে তার সবই বলল।
ডসন শুনতে শুনতে কোন বাধা দিল না, সমানে ওকে লক্ষ্য করে যেতে লাগল।
থিওর কথা বলতে ডসন একটু নরম হল। ডসন হেসে বলল, থিও বড় ভাল ছেলে। দুবছর আগে একটা মেয়ের মাথা ফাটাবার জন্যে ওর ছমাস জেল হয়। আর একটা মেয়েকে ভিট্রিয়ল ছোঁড়ার মামলায় ওকে ধরেছিলাম, কিন্তু মেয়েটা বোকা ওকে সনাক্ত করতে ভয় পেল। যাই হোক, তুমি সতর্ক থেকো, আমরা ওর ওপর নজর রাখবে।
জুলি ভয়ে কেঁপে উঠল।
ডসন বলল, মিসেস ফ্রেঞ্চের ওপরেও আমরা নজর রেখেছি। ডোমেস্টিক এজেন্সী চালাবার ফলে ও বড়লোকদের ভেতরের খবর জেনে যায়। তবে এই প্রথম দেখছি বুড়ি খোজিয়াল ফিট করলো। খুব সতর্ক থেকো, একটি চালেও ভুল কোর না। ওদের সঙ্গে রাতে দেখা হবে?
জুলি ঘাড় নাড়লো।
তোমাকে ভয় দেখাতে চাইছিনা, কিন্তু যদি ওরা আঁচ করতে পারে তুমি ওদের ধরিয়ে দিচ্ছো, তবে ওরা বেজায় শয়তানী করবে।
আমি জানি।
চল দেখি, আলমারীটা তুমি খুলতে পার কিনা রিহার্সাল দিয়ে দেখাও। ওরা চাইবে, আলমারী খোলার সময়, তুমি ওদের সঙ্গে থাকো।
জুলি ওকে ব্লানশের ঘরে নিয়ে গেল।
দেখেশুনে ডসন বলল, ওয়েসলির সঙ্গে ওর স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন?
জুলি সতর্ক হল, জুলি ভাবল, ওর কোন মতলব আছে নাকি?
বলল, বোধহয় ঠিকই আছে। আপনি ওঁকেই জিজ্ঞেস করবেন।
ডসন নিজের নাকে টোকা মারল। শুকনো হেসে বলল, মনে হয় না আমায় বলবেন। আলমারীটা কোথায়?
জুলি দেখালো।
–দেখি, তুমি খোল ওটা। অ্যালার্ম বন্ধ করে দিতে ভুলো না। আমি মিছে লোকজন নিয়ে হুড়মুড়িয়ে উপস্থিত হতে চাই না।
জুলি অ্যালার্ম বন্ধ করল। বাথরুমে গিয়ে সেখানকার সুইচ বন্ধ করল। ডায়াল ও পয়েন্টার দেওয়ালের যেখানে আছে সে জায়গাটা খুঁজে পেতে ওর দেরীহল। পয়েন্টারের কাটা তিননম্বরে ফিট করে চাবি টিপে ও প্রথমে দরজাটা খুলল।
ভাল, তারপর?
জুলি সুইচ টিপে ইস্পাতের দরজা খুলল। ফটো ইলেকট্রিক সেলে যে আলো পড়ে সেটা নেভাল, সরে দাঁড়াল।
–এমনি করে খুলতে হয় জুলি বলল। ডসন ফারগুলো দেখে শিস্ দিল।
–ভাল! বোঝা গেল সব। এবার বন্ধ কর।
জুলি আলমারী বন্ধ করে সুইচ টিপে দিল। ডসন বলল, আমরা জানতে চাই কখন ওরা আসছে। যদি সাবধানে থাক, তাহলে কোন ভয় নেই। থিওর ওপর নজর রেখো। ওটা হচ্ছে মূর্তিমান বিপদ।
জানি।
ডসন ওকে ভাল করে লক্ষ্য করতে করতে জিজ্ঞেস করল, এসবের পর কি করবে, আবার কোথাও ঝামেলা পাকাবে?
জুলি আড়ষ্ট হয়ে গেল। ঠাণ্ডা গলায় বলল, না।
–ভাল। ডসনের নীল চোখ দুটো কিসের সন্ধানে যেন ঘুরছে, ডসন জিজ্ঞেস করল, মিঃ ওয়েসলি কি তোমার কোন ব্যবস্থা করে দেবেন? ওঁর তোমার ব্যাপারে বেশ আগ্রহ আছে দেখছি।
— জানি না। আমাকে ভাবতে হবে। আশা করি আবার চাকরী পাব।
–সে বরং ভাল। এ–পর্যন্ত তুমি বুদ্ধির পরিচয় দাওনি বরং শিক্ষা হয়েছে তোমার। পরের বার হয়ত কোন ধনী লোক এভাবে তোমায় সাহায্য করবেন না, তাই সামলে চলতে বলছি।
দরজা খুলে ডসন বেরিয়ে গেল।
.
মিসেস ফ্রেঞ্চ অস্থিরভাবে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন, যে কোন মুহূর্তে ওই ছুঁড়ি এসে পড়বে। থিওর নজরে আছে, গণ্ডগোল কিছু হবে না মনে হয়।
হ্যারি গ্লেব উদ্বিগ্ন হলেও সহজ ও স্বাভাবিক ব্যবহার করার চেষ্টা করছে।
হ্যারি বলল, থিওকে দলে নেবার জন্যে একদিন তুমি পাবে। ওকে আমি পছন্দ করি না।
কেন? কি হয়েছে? তুমি সব সময় ওর কথা বল। তোমার গজগজানি শুনতে শুনতে আমি বিরক্ত হয়ে গেছি।
হ্যারি বলল, ওকে বিশ্বাস করা চলে না। ও বিপজ্জনক। ইঁদুরের স্বভাব, কোণঠাসা করলেই কামড়াবে।
–কোণঠাসা করবে কে? ও বেজায় চালাক।
হ্যারি হেসে বলল, থিও চালাক? আমায় হাসিও না। ওর মাথায় পাথর পোরা আছে। শুধু মারজখমই জানে। একদিন ও ঠিক খুনের দায়ে ধরা পড়বে। আমি ওর সঙ্গে থাকতে চাই না।
–মিসেস ফ্রেঞ্চ রেগে বললেন, তুমি বুড়িদের মত কথা বলছে। থিও ঠিকই আছে।
হ্যারি বলল, ও একটা মেয়ের মাথা ফাটিয়ে জেল খেটেছে। পুলিসের কাছে ওর আঙুলের ছাপ আছে। একটা ভুল করে পুলিসের প্যাদানি খেলে ও প্যাক প্যাক করবে। তুমি আমি তখন কি করব?
আমি ওর কথা ভাবছি না। আমি ঐ হল্যান্ড মেয়েটার কথা ভাবছি। নজরে না রাখলে ও মুখ হাসাবে।
হারি মুখ ঘষলো, এগিয়ে বসলো।
-এরপর আমি আমেরিকা কেটে পড়ছি। শহর খুব গরম হয়ে গেছে। এখানে সব ঠাণ্ডা হলে দেখা যাবে।
মিসেস ফ্রেঞ্চ ধারালো গলায় বলল, ব্যাপারটা কি? ভয় পেয়ে গেলে না কি? না ভাল ছেলে হয়ে যাচ্ছ?
হ্যারি খোলাখুলিই বলল, অবাক হলো কেন? এতদিন যা জমিয়েছি ভালই চালিয়েছি। আর এ কাজেও ভালই পাবো। যদ্দিন পারি ফুর্তি করে মৌজ করে নেব।
মিসেস ফ্রেঞ্চ ওকে মনে করিয়ে দিলেন, কাজ এখনো হাসিল হয়নি।
অফিসের দরজা খুলে গেল, ডানা ঢুকল।
ডানা ওর পাতলা আঙুল হ্যারির চুলে বুলিয়ে বলল, মেয়েটা এখনো তো এল না। কি হ্যারি আমায় মনে আছে তো?
হ্যারি মাথা ঝাঁকিয়ে সরিয়ে নিয়ে বলল, ছাড় ও সব। পকেট থেকে চিরুণী বার করে চুল আঁচড়ে নিল ও।
মিসেস ফ্রেঞ্চ ডানার দিকে তাকিয়ে বলল, এই কাজটার পর হ্যারি এসব ছেড়ে দিচ্ছে, ও আমেরিকা যেতে চাইছে।
ডানা বলল, আমিও তোমার সঙ্গে যাব হ্যারি। তাই না হ্যারি?
ডানার দিকে চেয়ে ধূর্তের হাসি হাসল হ্যারি।
তারপর হ্যারি বলল, হতে পারে, তবে আমি এখনো মনস্থির করি নি।
বাইরের দরজায় কে করাঘাত করল।
এসেছে, ডানা বলল, আমি যাচ্ছি।
জুলি অন্ধকার প্যাসেজে দাঁড়িয়ে।
–এস, ডানা, বলল, দেরি করে ফেল নি?
করেছি কি? জুলি কাটাকাটা গলায় বলল, আমি জানি না। জুলির গলা শুকিয়ে গেছে, বুক ধড়াস ধড়াস করছে, তবু নিজেকে শাসনে রেখেছে।
–এই যে ময়না! একটা বিদঘুঁটে গলা শুনে জুলি পিছন ফিরে তাকাল।
অন্ধকার থেকে থিও বেরিয়ে এল।
সারা পথ তোমার পেছনে ঘুরছি, পাছে মত বদলাও। থিওর মুখের দুর্গন্ধ জুলির মুখে ঝাপটা মারল।
ডানাও থিওকে অপছন্দ করে। ও জুলিকে বলল, ভেতরে এসো।
জুলি অফিসের ভেতরে এল। থিও জুলির পা মাড়িয়ে দিয়ে বলল, তুমি আমাকে দুঃস্বপ্নে দেখেছ, আমি হলফ করে বলতে পারি। ঘাম ছুটিয়ে দিয়েছি তোমার।
হ্যারি ওর চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।
মুখ বন্ধ কর বাঁদর, তোমাকে কে কথা বলতে বলেছে?
থিও হ্যারির দিকে বিষাক্ত চোখে চেয়ে মিসেস ফ্রেঞ্চকে বলল, এ মর্কেলটাকে আমাকে ঘাঁটাতে বারণ করে দাও। বিরক্তি ধরে যাচ্ছে আমার।
হ্যারি ভীরু হাসি হেসে বলল, এই যে জুলি। এস, আমার কাছে বস।
থিও হাসলো।
–বেশ হয়েছে। এবারে ময়নার পেছনে লাথি মার।
মিসেস ফ্রেঞ্চ দুজনকেই চুপ থাকতে বললেন। জুলির দিকে চেয়ে বললেন, বস, আলমারীটা কি করে খোলে তুমি জেনে নিয়েছ?
–হ্যাঁ। জুলি বলল।
থিও বলল, আমি ভাবছিলুম তোমায় সিধে করব ময়না।
হ্যারি উঠতে যাচ্ছিল, মিসেস ফ্রেঞ্চ ওকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
–বেশ বেশ। বস, আমাদের বল।
জুলি হ্যারির কাছ থেকে চেয়ার টেনে নিয়ে বসল।
–আমি লিখে এনেছি। পড়ে নিন। জুলি বলল।
থিও সামনে ঝুঁকে পড়লো।
–ঠিক হয় যেন। যদি কায়দা করার চেষ্টা কর, তবে পস্তাবে।
হ্যারি হাতের চেটোর উল্টো পিঠ দিয়ে থিওর মুখে মারল। থিও চেয়ার শুদ্ধ পড়ল। রাগে। গালাগালি করতে করতে ও একটা ছোট অটোমেটিক পিস্তল বের করল। হ্যারি তৈরীই ছিল, লাথি মেরে থিওর হাত থেকে পিস্তলটা ফেলে কুড়িয়ে টেবিলে রাখল।
থিওর দিকে জ্বলন্ত চোখে চেয়ে হ্যারি বলল, তোমায় একবার সাবধান করে দিয়েছি। বলেছি যখন চুপ কর, জবান বন্ধ, তখন বন্ধ থাকবে। আমাকে বন্দুক দেখাবে না, তিন পয়সার বেঁটে মান কোথাকার?
থিও আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়িয়ে জানলার নিচের সোফাটায় গিয়ে বসল।
মিসেস ফ্রেঞ্চ পিস্তলটা তুলে নিয়ে ব্যাগে পুরলেন।
কতবার তোমায় বলেছি বন্দুক সঙ্গে রাখবে না? রাগে ঝকঝকে চোখে বললেন, হ্যারি কি বন্দুক রেখেছে?
হ্যারি জ্বলন্ত চোখে থিওর দিকে তাকিয়ে বলল। না, আমি ওই ডরপোকের বাচ্চা নই। আমি কোনদিন বন্দুক রাখি না, রাখবোও না। আমার মগজ আলুভাতে হয়ে যায় নি।
মিসেস ফ্রেঞ্চ গর্জে উঠলেন থিওকে, তোমার সঙ্গে পরে কথা বলবো।
থিও ছাতের দিকে চেয়ে ঠোঁট ওল্টালো। ওর চোখে ঘৃণা জ্বলছে।
জুলির ভয়ে, বিস্ময়ে, বন্দুক দেখে হাড় হিম হয়ে গেছে।
মিসেস ফেঞ্চ বলেন, ঠিক আছে, এবার কাজের কথা হোক, সে কাগজটা কোথায়?
পরিষ্কার অক্ষরে লেখা একটা কাগজ জুলি মিসেস ফ্রেঞ্চের সামনে রাখল।
মিসেস ফ্রেঞ্চ এবং হ্যারি কাগজটা পড়ে দেখলেন।
–দুটো অ্যালার্ম! হ্যারি শিস দিয়ে উঠলো। ওরা দেখছি সবরকমে সাবধান হয়েছে। আমি আগেই ভেবেছি ওখানে ফোটো ইলেকট্রিক সেল আছে। ঠিক আছে, আমরা যা চাই, ঠিক তাই।
মিসেস ফ্রেঞ্চ জুলির দিকে অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে চাইলেন।
ঠিক বলছ ওটা খুলতে পারবে?
জুলি মাথা নাড়ল।
জুলি বলল, মিসেস ওয়েসলি ওঁর এক বন্ধুকে খুলে দেখাচ্ছিলেন, আমি ঘরে লুকিয়ে থেকে সব দেখেছি।
–ঠিক আছে, মিসেস ফ্রেঞ্চ কাগজটা নামিয়ে রাখলেন। এবার আমরা কাজে হাত দিতে পারি। আজ বুধবার। এই হপ্তার শেষ নাগাদ আমি সবকিছু তোড়জোড় শেষ করতে পারবো। ওরা শনিবার কি করছে? কি জান?
জুলি বলল, আমি শনিবার কাজ ছেড়ে দিচ্ছি। মিসেস ওয়েসলি আমায় নোটিশ দিয়েছেন।
সকলে এমনকি থিও-ও ওর মুখের দিকে তাকাল।
–কেন? মিসেস ফ্রেঞ্চ রুক্ষ গলায় জানতে চাইলেন।
উনি আমায় পছন্দ করেন না। আমার কোন দোষ আছে বলে উনি আমায় ছাড়াচ্ছেন না।
–আমরা যখন কাজ হাসিল করবো ওখানে তোমাকে থাকতে হবে। এতে তুমিও জড়িয়ে পড়েছ এখন। তাহলে শুক্রবারেই ঠিক রইল। মিসেস ফ্রেঞ্চ বলল।
জুলির মনে হল একটু অনিচ্ছা দেখানো বুদ্ধির কাজই হবে। বলল, আমাকে আপনারা রেহাই দিচ্ছেন না কেন? আমি তো আলমারী কেমন করে খোলে বলেছি, আর কিছু করতে পারবো না।
এখন আমার কথানুযায়ী চলতে হবে তোমায়। এ জাল কেটে বেরোবার উপায় নেই তোমার। হ্যারি ওখান থেকে বেরিয়ে আসার আগে তোমাকে বেঁধে রেখে আসবে। যতটা সম্ভব মাথা ঠাণ্ডা রেখে চললে আমরা তোমায় দেখব, ওরা তোমায় কিছু করতে পারবে না। তোমার ভাগের আন্দাজ পাঁচশো পাউন্ড তুমি পাবে। পলিশ জেরা করলে বলবে, তিনটে নোক সামনের দরজা দিয়ে ঢুকে তোমায় বেঁধে রাখে, তুমি শুধু ওদের ওভারকোট আর মুখঢাকা টুপি ছাড়া আর কিছুই দেখার সুযোগ পাও নি। যা বলবে বানিয়ে টানিয়ে বোল, তবে শেষপর্যন্ত তাই বলে যেও। তুমি তো কচি খুকিটি নও! বুঝলে?
জুলি ক্ষুব্ধ স্বরে বলল, হ্যাঁ।
–বেশ। এবার হ্যারির দিকে চেয়ে বললেন, তোমার কাজ হচ্ছে জুলির সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ হাসিল করা। ফারগুলো নিয়ে চাকরদের লিফটে ওগুলো তুলে দেওয়া। থিও নিচ থেকে ওগুলো নামিয়ে নেবে। পেছনের গলিতে গাড়ি থাকবে।
একটু থেমে আবার বললেন, বাড়ির নিচতলা থেকে গলি মাত্র এক-পা রাস্তা। ফারগুলো লিফটে তুলে দিয়েই ফিরে গিয়ে গয়নাগুলো নেবে। জুলিকে বেঁধে ফেলে চাকরদের লিফটে নিচে চলে যাবে। সময়টা আমরা পরে ঠিক করে নেব। জুলির দিকে কঠিন দৃষ্টিতে চেয়ে বললেন, ওয়েসলিরা শুক্রবার বেরোবে বলে মনে হয়?
জুলি বলল, আমি শুনেছি ঐদিন ওঁরা রাতে বাইরে খাবেন, থিয়েটারে যাবেন।
–ঠিক আছে। হ্যারির দিকে চেয়ে মিসেস ফ্রেঞ্চ বললেন, শুক্রবার সন্ধ্যা আটটা।
হ্যারি মাথা নাড়ল। মুখে বলল, ঠিক আছে। কিন্তু ওর চোখে একটা অস্বস্তি উঁকি দিতে লাগলো।
মিসেস ফ্রেঞ্চ জিগ্যেস করলেন, কোন প্রশ্ন আছে?
হ্যারি বলল, জুলিকে ওখানে ফেলে আসাটা আমার ভাল লাগছে না। পুলিশ ঠিক বুঝতে পারবে ভেতর থেকে খোঁজ- খবর নিয়ে একাজ করা হয়েছে। ও যদি মাথা ঠিক রাখতে না পারে, যদি সাহস হারিয়ে ফেলে, আমরা ফেঁসে যাবো।
থিও হঠাৎ উঠে বসল।
বলল, সাহস হারাবে না। সাহস হচ্ছে শেষ জিনিষ যা খোয়া যাবে। থিও ওর তীক্ষ্ণ গলায় বেসুরো পৈশাচিক হাসি হাসতে লাগল।
হ্যারি ওর দিকে জ্বলন্ত চোখে চেয়ে বলল, এতে মজার কি আছে রে?
–চুপ কর! মিসেস ফ্রেঞ্চ হ্যারির দিকে চেয়ে বললেন, ও আজ ভয়ানক বাঁদরামি করছে। ওর কথায় কান দিও না। জুলি মাথা ঠিক রাখতে পারে কিনা সে ঝুঁকি আমাদের নিতেই হবে। আমরা ওকে সঙ্গে নিয়ে এলে, পুলিশ ওর খোঁজ করতে গিয়ে আমাদের ধরে ফেলবে।
হ্যারি অস্বস্তি নিয়ে বলল, ঠিক আছে। জুলির দিকে চেয়ে বলল, তোমার কি মনে হয় জুলি? শেষ অবধি পারবে?
জুলি খেঁকিয়ে উঠল, পেছনে গুতো দিয়ে এর মধ্যে টেনে নামিয়ে, এখন ভালবাসা দেখানো হচ্ছে?
হ্যারি লাল হয়ে গেল। বলল, বেশ তাই যদি বল। মুখ ফিরিয়ে, আর কিছু আছে কি?
মিসেস ফ্রেঞ্চ বললেন, খুঁটিনাটি সব আজ আর শুক্রবারের মধ্যে বলে কয়ে নেব। তাহলে ঐ ঠিক রইল, শুক্রবার, সন্ধ্যা আটটা।
আমি চলি তাহলে। হ্যারিকে যেতে দেখে ডানাও ওর সঙ্গে যেতে চাইল। হ্যারি ওকে বলল, খুবই দুঃখিত। একটা লোকের সঙ্গে দেখা করতে হবে। আচ্ছা গুডনাইট। ও বেরিয়ে গেল।
ডানাকে এভাবে অপদস্থ হতে দেখে জুলি মনে মনে খুশী হল। ও অবশ্য এখন আর ঐ চিটিং বাজ, গুণ্ডা হ্যারিকে ভালবাসে না।
জুলি উঠে দাঁড়িয়ে জিগ্যেস করল, আমি এবার যেতে পারি?
মিসেস ফ্রেঞ্চ মাথা নেড়ে বললেন, জুলি সাবধান! কোনরকম চালাকি করতে যেও না। থিও নজর রেখেছে তোমার ওপর।
জুলি কারোর দিকে না তাকিয়ে বেরিয়ে গেল। ভয়ের সঙ্গে মনে একটা জয়ের উল্লাস। এখন শুধুই অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। দায়িত্ব এখন ওর ঘাড় থেকে পুলিশের ঘাড়ে চলে গেছে।
নির্জন রাস্তা দিয়ে দ্রুতপদে হেঁটে ও নিউ বন্ড স্ট্রীট পেরোল, বার্কলি স্কোয়ারের দিকে এগোল।
সহসা ছায়ার আড়াল থেকে হ্যারি বেরিয়ে এসে ওর কনুই ধরে পাশে পাশে চলতে লাগলো। জুলি হাত ছাড়াতে চেষ্টা করলো।
হ্যারি বলল, খেপে যেও না সোনা। আমি জানি ঐ থিওটা তোমার উপর হামলা করেছে, কিন্তু আমি জেনেছি অনেক পরে, আর তখন আমার কিছু করারও ছিল না। আমার কোন দোষ নেই।
জুলি হাত ছাড়িয়ে ঘুরে দাঁড়াল। বলল, চলে যাও আমার কাছ থেকে। আমি তোমার সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখতে চাই না।
হ্যারি বিব্রত হয়ে বলল, ওরকম কোর না জুলি। শোন, এ ব্যাপারটা চুকে গেলে আমরা বিয়ে করে আমেরিকা চলে যাবো। এ জীবনে ঘেন্না ধরে গেছে আমার। একটু হাসো। বল, আমার সঙ্গে যাবে।
জুলি বলল, চলে যাও! তোমায় আমি ঘেন্না করি। তুমি একটা চিটিংবাজ, আর কিছু নও। পেছন ফিরে তাড়াতাড়ি হাঁটতে থাকলো।
হ্যারি ওকে জাপটে ঘুরিয়ে ধরে বলল, কি হয়েছে জুলি? আমি সত্যিই দুঃখিত। আমি জানি আমিই তোমাকে এর মধ্যে জড়িয়েছি কিন্তু সে ক্ষতি আমি পুষিয়ে দেবই।
–আমাকে ছাড়ো। তোমার মুখ দেখতে চাই না।
–তুমি আমেরিকা যেতে চাও না? আমি তোমায় দুনিয়ার সব মজা লুটে এনে দেব। এস সোনা, একটা চুমু দাও।
ও হাত বাড়ালো। হ্যারির এই অসীম আত্মবিশ্বাসে ঘা দেবার জন্যে জুলি ওর মুখে চড় মারলো। আমার পেছন ছাড়ো। বুঝলে? চেঁচিয়ে পেছন ফিরে জুলি অন্ধকারে দৌড়ে গেল।
হ্যারি স্তব্ধ হয়ে মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
.