॥ ৩ ॥
আমরা তিন দিন হল লখ্নৌতে এসেছি। প্রথমবারের কথা বার বার মনে পড়ছে। সেই বাদশাহী আংটি, মিঃ শ্রীবাস্তব, বনবিহারীবাবুর আশ্চর্য চিড়িয়াখানা, হরিদ্বার, আর লছমনঝুলার পথে আমাদের অ্যাডভেঞ্চারের শিহরন-জাগানো ক্লাইম্যাকস।
সেবার অবিশ্যি আমরা হোটেলে থাকিনি। খুব সম্ভবত ক্লার্কস-আওয়ধ হোটেল তখনও তৈরিই হয়নি। হোটেলটা সত্যিই ভালো। আমরা পাশাপাশি একটা ডাবল আর একটা সিঙ্গল রুমে আছি। দু’ ঘরের জানালা দিয়েই গুম্তী নদী দেখা যায়। নদীর ওপারে পশ্চিমে যখন সূর্য অস্ত যায়, সে দৃশ্য দেখবার মতো। হোটেলের খাওয়াও দুর্দান্ত ভালো। আমরা অনেক জায়গায় অনেক হোটেলে থেকেছি, কিন্তু এত ভালো খাওয়া কোনও হোটেলে খাইনি।
এই তিন দিনে লালমোহনবাবু লখ্নৌ-এর প্রায় বেশির ভাগ দ্রষ্টব্যই দেখে নিয়েছেন। আমরা প্রথম গেলাম বড়া ইমামবাড়ায়। এর থাম-ছাড়া বিশাল হলঘর দেখে এবারও মাথা ঘুরে গেল। লালমোহনবাবুর মুখ হাঁ হয়ে গেছে, কথা বেরোচ্ছে না, শুধু একবার বললেন, ‘ব্রাভো নওয়াবস অফ লখ্নৌ।’
তারপর ভুলভুলাইয়া দেখে ভদ্রলোকের ভির্মি খাবার জোগাড়। এই গোলোকধাঁধায় নবাবরা তাঁদের বেগমদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলতেন শুনে ওঁর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।
আরও চমক এলো রেসিডেন্সিতে। ‘এ যে ইতিহাস চোখের সামনে ভেসে উঠছে মশাই। গোলাগুলির শব্দ পাচ্ছি, বারুদের গন্ধ পাচ্ছি। সেপাইদের এত এলেম ছিল যে এরকম একটা বিল্ডিংকে একেবারে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল?’
চতুর্থ দিনে সকালে একটু বাজারে গিয়েছিলাম এখানকার বিখ্যাত মিষ্টি ভুনা পেঁড়া কিনতে, হোটেলে ফিরে এসে দেখি ঘরে ছাপানো নেমন্তন্ন চিঠি রয়েছে। পাঠিয়েছেন হেক্টর জয়ন্ত বিশ্বাস। আগামী শুক্রবার, অর্থাৎ পরশু, তাঁদের বিয়ের রৌপ্য জয়ন্তী উপলক্ষে মিঃ অ্যান্ড মিসেস বিশ্বাস আমাদের ডিনারে ডেকেছেন। নেমন্তন্ন চিঠির সঙ্গে একটা আলাদা কাগজে রাস্তার প্ল্যান আর কোনখানে বাড়ি সেটা ছাপা রয়েছে। বাড়িটা যে নদীর ওদিকে সেটা ভদ্রলোক আগেই বলেছিলেন। প্ল্যান দেখে বাড়ি খুঁজে বার করায় কোনওই অসুবিধা হবার কথা নয়।
বিকেলবেলা জয়ন্তবাবু নিজে ফোন করলেন। ফোনের পর ফেলুদাকে জিজ্ঞেস করাতে বলল ভদ্রলোক বলে দিলেন যেন আমরা অবশ্যই যাই। ওখানে অনেকের সঙ্গে আলাপ হবে, তা ছাড়া শকুন্তলার হারটাও দেখা যাবে। ফেলুদা আরও বলল যে ভদ্রলোক বলে দিয়েছেন যে একেবারে ইনফরম্যাল ব্যাপার, কোনও বিশেষ পোশাক পরবার দরকার নেই।
‘এইটেই আমার ভয় ছিল’, বলল ফেলুদা। ‘নেমন্তন্নে আপত্তি নেই, কিন্তু তার জন্য যদি সাহেব কিংবা বাবু সাজতে হয় তা হলেই গোলমাল।’
আমাদের হাতে একদিন সময় ছিল, তার মধ্যে ছোটা ইমামবড়া, ছত্তর মঞ্জিল আর চিড়িয়াখানা দেখে নিলাম। খাঁচার বাইরে বাঘ সিংহ দেখে লালমোহনবাবু ভয়ানক ইমপ্রেস্ড। বললেন কলকাতাতে এরকম হওয়া উচিত।
শুক্রবার একটা ট্যাক্সি নিয়ে আমরা পৌনে আটটায় বেরিয়ে পড়লাম। প্ল্যান দেখে বাড়ি বার করতে কোনও অসুবিধা হল না। একতলা ছড়ানো বাড়ি, সামনে বেশ বড় ফুলের বাগান। তার মধ্য দিয়ে নুড়ি ঢালা পথ চলে গেছে বাড়ির দরজা পর্যন্ত। আমরা দরজায় বেল টিপলাম, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই একজন উর্দি পরা বেয়ারা এসে দরজা খুলে দিল। বাড়ির ভিতর থেকে লোকজনের গলার শব্দ পাচ্ছিলাম, বেয়ারা ভিতরে গিয়ে বলতেই জয়ন্তবাবু চটপট বেরিয়ে এসে আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন।
‘আসুন, আসুন, মিঃ মিত্র, আই অ্যাম সো গ্ল্যাড ইউ হ্যাভ কাম।’
আমরা তিনজন জয়ন্তবাবুর পিছন পিছন বৈঠকখানায় গিয়ে ঢুকলাম। দেখলাম পাঁচ-সাত জনের বেশি লোক নেই। হয়ত পরে আরও আসবে।
এর পর আলাপ পর্ব। প্রথমে জয়ন্তবাবুর স্ত্রী। দেখে বুঝলাম মহিলা এককালে সুন্দরী ছিলেন। তারপর তাঁর দুই ছেলেমেয়ে। মেয়েটি—নাম মেরি শীলা দেখতে সুশ্রী। চোখে মুখে বুদ্ধির ছাপ; ছেলেটির একেবারে পার্ক স্ট্রিট মার্কা চেহারা—দাড়ি, গোঁফ, ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া চুল, তাতে চিরুনি পড়েনি। এরই নাম ভিক্টর প্রসেনজিৎ। তারপর জয়ন্তবাবু বললেন, ‘মিঃ অ্যান্ড মিসেস সাল্ডান্হা।’ অর্থাৎ জয়ন্তবাবুর বড় শালী এবং তাঁর স্বামী। ভদ্রমহিলা মোটা হয়ে গেছেন, ভদ্রলোক আবার তেমনই রোগা, দাড়ি গোঁফ কামানো, ষাটের কাছাকাছি বয়স। এই সাল্ডান্হারই বাজনার দোকান আছে—ইনি গোয়ার অধিবাসী। আপাতত এই কজনই রয়েছেন ঘরে।
ঘরটা বেশ বড়, আর সবচেয়ে আশ্চর্য লাগল দেখে যে ঘরের একদিকে একটা সিনেমা স্ক্রিন টাঙানো রয়েছে আর অন্যদিকে রয়েছে একটা প্রোজেক্টর। জয়ন্তবাবুকে জিজ্ঞেস করাতে বললেন ওঁদের কাছে শকুন্তলা দেবীর শেষ ছবির একটা প্রিন্ট আছে, সেটার একটা রীল নাকি ডিনারের আগে দেখানো হবে। এই ছবিতে নাকি শকুন্তলা দেবী তাঁর বিখ্যাত হারটা পরেছিলেন। গল্পটা কপালকুণ্ডলা, আর শকুন্তলা দেবী সেজেছিলেন লুতফ-উন্নিসা। আমার ত শুনেই মনটা চনমন করে উঠল।
ফেলুদা প্রাইভেট ডিটেকটিভ শুনে সকলের মধ্যে একটা চাঞ্চল্য পড়ে গিয়েছিল। মেরি শীলা এসে বলল, ‘আমি আপনার একজন ভীষণ অ্যাডমায়ারার। দুঃখের বিষয় আমার কোনও অটোগ্রাফ খাতা নেই। আমি আজকালের মধ্যেই একটা খাতা কিনে নিয়ে আপনার হোটেলে গিয়ে সই নিয়ে আসব।’
বাংলার মধ্যে অনেকগুলো ইংরিজি কথা ব্যবহার করছিল শীলা। সেটা এখানে প্রায় সকলের মধ্যেই লক্ষ করছিলাম।
বেয়ারা পানীয় পরিবেশন করছিল। আমরা ত মদ খাই না, তাই তিনজনে তিন গেলাস ফলের সরবৎ নিয়ে মাঝে মাঝে চুমুক দিচ্ছিলাম। স্যামুয়েল সাল্ডান্হা আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বললেন, ‘হজরতগঞ্জে আমাদের মিউজিক শপ। একদিন দোকানে এলে আমি খুব খুশি হব।’
‘আপনার দোকানে দিশি যন্ত্রও বিক্রি হয়?’ ফেলুদা জিজ্ঞেস করল।
‘আমরা এখন সেতারও রাখছি’, বললেন ভদ্রলোক।
এবার একজন ভদ্রলোক এলেন তাঁকে দেখেই বুঝলাম তিনি জয়ন্তবাবুর শালা, কারণ তাঁর চেহারার সঙ্গে সুশীলা দেবীর খুব সাদৃশ্য। ইনি প্রায় সাহেবের মতোই দেখতে, কারণ এঁর চুল আর চোখও কটা।
ইনি একটা হুইস্কির গেলাস তুলে নিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বললেন, ‘আমার নাম রতনলাল ব্যানার্জি। আমি জয়ন্তর ব্রাদার-ইন-ল। আপনাদের পরিচয়…?’
এই সময় জয়ন্তবাবু এগিয়ে এসে আমাদের পরিচয় দিয়ে দিলেন।
‘প্রাইভেট ডিটেকটিভ? রতনলাল ভুরু কপালে তুলে জিজ্ঞেস করলেন। ‘আপনি কি কোনও কেসের ব্যাপারে লখ্নৌতে এসেছেন?’
ফেলুদা হেসে বলে, ‘না, স্রেফ ছুটি।’
এই সময় একজন ভদ্রলোক ঘরে এসে ঢুকলেন বাড়ির ভিতর থেকে। বৃদ্ধই বলা চলে। সম্ভবত ষাটের উপর বয়স নিশ্চয়ই। বুঝলাম তিনিও এই বাড়িতেই থাকেন। ভদ্রলোকের চেহারাটা কী রকম যেন অপরিচ্ছন্ন। এই পার্টিতে তাঁকে মানাচ্ছে না। পোশাক অপরিষ্কার, দাড়িও অন্তত দু’দিন কামাননি, মাথার চুল লম্বা হয়ে কাঁধ পর্যন্ত নেমেছে।
জয়ন্তবাবু ভদ্রলোকের পিঠে হাত দিয়ে আমাদের দিকে নিয়ে এলেন।
‘আপনাদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই’, বললেন জয়ন্তবাবু। জানা গেল ইনি হচ্ছেন একজন চিত্রশিল্পী। নাম সুদর্শন সোম। এককালে খুব নাম করা পোর্ট্রেট পেন্টার ছিলেন, শকুন্তলা দেবীর অনেকগুলো ছবি এঁকেছিলেন। এখন রিটায়ার করে জয়ন্তবাবুর বাড়িতেই গেস্ট হয়ে থাকেন। আর্টিস্টকে এই বয়সে রিটায়ার করতে শুনিনি কখনও, তাই একটু অবাক লাগল। এবার লক্ষ করলাম বৈঠকখানার দেয়ালে একটা ছবি—এক মহিলার, বছর চল্লিশেক বয়স—তার তলার কোণের দিকে লেখা এস. সোম। ইনিই কি শকুন্তলা দেবী? বয়স বেশি হলেও চেহারায় বেশ একটা জৌলুস রয়েছে। তখন অবিশ্যি শকুন্তলা দেবী আর ছবি করেন না। সুদর্শন সোম এবার বেয়ারার ট্রে থেকে একটা হুইস্কির গেলাস তুলে নিলেন। ভদ্রলোককে দেখে কেন জানি কষ্ট হচ্ছিল।
ঘরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কথা বলছিলেন স্যামুয়েল সান্ডাল্হা। ইনি রাজনীতি নিয়ে উচ্চৈঃস্বরে তর্ক জুড়ে দিয়েছেন রতনলাল ব্যানার্জির সঙ্গে। সেই তর্কে দেখলাম সুদর্শন সোমও যোগ দিলেন।
আমি খালি ভাবছিলাম শকুন্তলা দেবীর হারটা কখন দেখা যাবে। দুই গিন্নীকে দেখছি অতিথিদের দিকে দৃষ্টি দিয়ে চলেছেন। জয়ন্তবাবুর স্ত্রী সুনীলা দেবী ফেলুদাকে এসে বললেন, ‘আপনি অরেঞ্জ স্কোয়াশ খাচ্ছেন, ব্যাপার কী—আপনি ড্রিংক করেন না বুঝি?’
ফেলুদা হেসে বলল, ‘না, আমাদের পেশায় মাথাটা সব সময় ঠাণ্ডা রাখাই ভালো।’
‘কিন্তু আমি ত জানতাম প্রাইভেট ডিটেকটিভরা ভীষণ ড্রিংক করে।’
‘সেটা আপনার ধারণা হয়েছে বোধহয় আমেরিকান ক্রাইম উপন্যাস পড়ে।’
‘তাই হবে। আমি ভীষণ গোয়েন্দা কাহিনীর ভক্ত।’
‘ভালো কথা’, ফেলুদা আর না বলে পারল না, ‘আপনার স্বামী বলছিলেন আজ শকুন্তলা দেবীর হারটা একবার আমাদের দেখাবেন।’
‘ও হ্যাঁ—তা ত বটেই—দেখেছেন, আমি একদম ভুলে গেছি। শীলা!’
শীলা তার মা-র দিকে এগিয়ে এল।
‘কী মা?’
‘যাও ত সোনা—তোমার দিদিমার হারটা একবার নিয়ে এস ত। জানো ত চাবি কোথায় আছে। মিঃ মিত্র একবার দেখতে চাইছেন।’
শীলা তক্ষুনি চলে গেল আদেশ পালন করতে।
‘চাবি বুঝি আপনার কাছে থাকে না?’ জিজ্ঞেস করল ফেলুদা।
‘না। ওটা থাকে আমার ড্রেসিং টেবিলের দেরাজে। হারটা থাকে সিন্দুকে। এ বাড়িতে চুরি হবার কোনও ভয় নেই। আমার চাকররা সব পুরোনো। সুলেমান—যে আপনাদের দরজা খুলে দিল—সে আছে আজ ত্রিশ বছর। অন্য চাকরও সব পুরোনো আর বিশ্বস্ত।’
তিন মিনিটের মধ্যে শীলা ফিরে এল—তার হাতে একটা গাঢ় নীল মখমলের বাক্স। মেয়ের হাত থেকে বাক্সটা নিয়ে নিলেন সুনীলা দেবী। তারপর ‘এই যে’ বলে বাক্সটা খুলে এগিয়ে দিলেন ফেলুদার দিকে।
আমি আর লালমোহনবাবু বাক্সটার দু’দিকে দাঁড়ালাম, আর দু’জনের মুখ থেকে একই সঙ্গে একটা বিস্ময়সূচক নিশ্বাস টানার শব্দ বেরিয়ে এল।
এমন অপূর্ব গয়না আমি কখনও দেখিনি। নকশাদার সোনার হার। তাতে হীরে থেকে শুরু করে যত রকম মণিমুক্তো হয় সব বসানো।
‘আশ্চর্য জিনিস’, বলল ফেলুদা। ‘এরকম হার দুটি হয় না। এটার আজকের দর কত হতে পারে তা আন্দাজ আছে আপনার?’
‘তা দুই আড়াই লাখ হবে নিশ্চয়ই।’
‘থাক—এটা আর বেশিক্ষণ বাইরে রাখা ভালো না। নাও, শীলা, এটা আবার রেখে দিয়ে এস।’
শীলা হারটা নিয়ে চলে গেল।
একটা জিনিস লক্ষ করছিলাম যে জয়ন্তবাবুর ছেলে আমাদের দিকে বেশি ঘেঁসছে না। দেখে মনে হল ছেলেটি মিশুকে নয়। আর পার্টিটাও যেন সে বিশেষ উপভোগ করছে না। অবিশ্যি এই টাইপের এই বয়সী ছেলেরা এরকমই হয়, এটা কলকাতাতেও লক্ষ করেছি। এরা নিজেরা দল ছাড়া কোনও দলের সঙ্গেই মিশতে পারে না।
ড্রিংকসের পর্ব বোধহয় শেষ হল, কারণ এবার একজন ভদ্রলোক এসে এক রোল ফিল্ম নিয়ে প্রোজেক্টরে চাপাতে শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পরে ভদ্রলোক বললেন, ‘আমি রেডি আছি।’
জয়ন্তবাবু এবার ঘোষণা করলেন যে শকুন্তলা দেবী অভিনীত কপালকুণ্ডলা ছবির একটা রীল দেখানো হবে। ‘সুলেমান, ঘরের বাতিগুলো নিবিয়ে দাও ত।’
ঘর অন্ধকার হয়ে গেল। তারপর ঘর্ঘর শব্দ তুলে প্রোজেক্টর চলতে শুরু করল। পর্দায় ছবি নড়ে উঠল। সেই আদ্যিকালের ছবি। জয়ন্তবাবু বললেন, ‘এটা ১৯৩০ সালের ছবি। ভারতবর্ষে টকি আসার ঠিক আগে।’
আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম শকুন্তলা দেবীকে। দেখলে মেমসাহেব মনে হয় না। চেহারা সত্যি খুবই সুন্দর—আজকের দিনেও পর্দায় এত সুন্দরী বড় একটা দেখা যায় না। কিন্তু সাইলেন্ট ছবির যা দোষত্রুটি আর থিয়েটারি অভিনয় সেটাও যে নেই এই কপালকুণ্ডলায় তা নয়। তবুও জানা গেল শকুন্তলা দেবীর পপুলারিটির খানিকটা কারণ। মহারাজা থেকে শুরু করে পানবিড়িওয়ালা পর্যন্ত সকলকেই মুগ্ধ করেছিলেন তিনি। সকলেই তাঁর ছবি দেখত আর বাহবা দিত।
দশ মিনিট চলে ছবি বন্ধ হল।
ঘরের বাতি জ্বলে উঠল। সকলে আবার কথাবার্তা শুরু করল।
এই অন্ধকার অবস্থাতেই যে আরেকজন ঘরে ঢুকেছে তা টের পাইনি। এঁকে আমরা চিনি। ইনি হলেন মিঃ সুকিয়াস। ইনি ক্ষমা প্রার্থনা করলেন পার্টির দিনে এসে পড়ার জন্য। অর্থাৎ ইনি নিমন্ত্রিত হননি—এমনি বোধহয় জয়ন্তবাবুর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন।
বেয়ারা এসে খবর দিল পাত পড়েছে—ডিনার ইজ সার্ভড।
চমৎকার মোগলাই রান্না খেয়ে আমরা যখন হোটেলে ফিরলাম তখন বেজেছে সোয়া এগারোটা। পার্টি যে আরও কিছুক্ষণ চলেছিল তাতে সন্দেহ নেই।