০৩.
ডেভ ফেনার ডেস্কের উপর পা তুলে দুলতে লাগল। অফিসটা ছোট হলেও বেশ সাজানো গুছানো। আইনের বইগুলো জানালার পাশে সাজানো। ডেভ স্বীকার করলো আইনের বইগুলো দেখবার জন্যে নয়।
অফিসেও ফেনার টুপি পরে থাকে। টুপিটা চোখ ঢেকে রাখে বলে মনে হয় ঘুমাচ্ছে।
অফিসের বাইরের ঘরটা পাটিশান দিয়ে দুভাগ করা। পলা ডোনাল টাইপরাইটারের সামনে বসে পত্রিকা পড়ছে।
কলিং বেল বাজতেই সে ঘরে প্রবেশ করল।
ফেনার বলল, হ্যালো খুকী ভাল আছ তো?
পলা টেবিলের উপর ডেস্কে গিয়ে বসল। তাকে সরিয়ে দিয়ে ফেনার বলল, ভদ্র হওয়ার চেষ্টা কর। এটা বাড়ি নয়।
ডেস্কের এক কোণে বসে পলা বলল, বড় একঘেয়ে লাগছে। কাজ নেই এবার থেকে বাড়িতেই থাকব।
ফেনার বলল খারাপ বলে নি। মনে হয় দেশে কোন অপরাধই ঘটে না।
এই ট্রিবিউন পত্রিকা থেকে যথেষ্ট অর্থ পাচ্ছ। পলা বলল গোয়েন্দাগিরি ব্যবসা প্রাইভেট ভাল না।
আরও এক বৎসর অপেক্ষা করি।
তোমার কথা শুনতে হবে। তুমি আমার বশ। সারাদিন মেসিনের সামনে বসা বড় একঘেয়েমি লাগছে।
শীঘ্র কোন কাজ হাতে না পেলে অন্য অনেক কাজ আছে।
বেশ তুমি বাড়ি যাও।
ফেনার বলল, এখানে কি পড়বার মত পত্রিকা নেই?
পলা একটা পত্রিকা টেবিলের উপর রেখে চলে গেল।
ফেনার পত্রিকার পাতা উল্টাতে লাগল।
পলা হঠাৎ ঘরে ঢুকে একটা ভিজিটিং কার্ড দিল। একজন লোক তোমার সঙ্গে দেখা করতে চান।
ফেনার বলল, জন ব্লানডিস এসেছেন। ওনাকে ভেতরে পাঠিয়ে দাও। আর তোমাকেও দরকার হবে।
পলা গিয়ে দরজা খুলল। জন ব্লানডিসকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে। আপনি মিঃ ফেনার?
হা।
একটা প্রস্তাব নিয়ে আপনার কাছে এসেছি। শুধু জানাবেন হা কি না? কারণ, আমার অনেক কাজ আছে।
আপনার প্রস্তাবটা কি?
আপনি নিশ্চয়ই কাগজে পড়েছেন তিনমাস আগে আমার মেয়ে হরণ হয়েছে।
ফেনার মাথা নাড়ল।
যারা হরণ করেছে তাদের কারুরই হদিশ পাইনি। এই ব্যবসার উৎস আপনি খুঁজে বের করুন। সংশয় থাকলে হাতে নেওয়ার দরকার নেই। আপনাকে আমি সাহায্য করব টাকার জন্য ভাববেন না। কাজ গুছিয়ে আমাকে বোকা বানাবে–আমি কিন্তু পুরানো ঘুঘু।
এফ. বি. আই. এই কেসটা হাতে নিয়েছে। তাদের যথেষ্ট সুনাম আছে। ওরা সাফল্য না হওয়া পর্যন্ত লেগে থাকবে। কিন্তু আমি অপেক্ষা করতে পারব না। তাই নিজেই দেখতে চাই। শুনেছি আপনি কোন কাজ শেষ না করে থামেন না। আমি আপনার মত মানুষকেই খুঁজছি।
ব্লানডিস থামলেন। ফেনার চুপ রইল।
কাজ শুরু করার জন্য পাঁচ হাজার ডলার ও বাকি খরচ দেব।
ফেনার বলল, টাকার অঙ্কটা ভালই।
হা টাকাটার জন্য আপনাকে কষ্ট করতে হবে। অফিসে বসে পরিকল্পনা করলেই চলবে না।
ফেনার ভাবল, পাঁচ হাজার ডলার তো কম নয়।
সে বলল, সব কাজ ফেলে আপনার কাজটা হাতে নেব। স্টেনোকে ডেকে কথাবার্তাগুলো নোট করতে চাইলেন।
ব্লানডিস বললেন, আমার কাজ ছাড়া আর কোন কাজ করতে পারবেন না। কোন খবর পেলে আমাকে জানাবেন। ভুল পথে নেমে আবার নতুন করে শুরু করবেন।
মাপ করবেন, আপনি অন্য লোক দেখুন।
কিন্তু কাজ নিতে আপনি রাজি হয়েছিলেন।
তবে এই শর্তে নয়।
বেশ আপনি যেভাবে খুশী শুরু করুন।
এবার আমরা কেসটা নিয়ে আলোচনা শুরু করতে পারি। ফেনার বলল, আপনার মেয়ে চোদ্দই জুন নিখোঁজ হয়েছে।
ঠিক বলেছেন। পুলিশের বক্তব্য ছোট শহরগুলোতে দলটা ডাকাতি করত। অপরাধ সাব্যস্ত হলেও বড় কিছু করেনি। ডাকাতি করে কিন্তু খুন বা হরণ করেনি।
রিলির মেয়ে বন্ধু হোটেলের যে ঘরে থাকে সেখানেই হেলী খুন হয়েছে।
মনে হচ্ছে আপনি অনেক কিছুই জানেন।
ফেনার পলাকে বলল, ব্লানডিস সংক্রান্ত ফাইলটা দাও।
ফাইলটা পলা দিল। ফেনারব্লানডিসকে বলল, আজ রাতে রিলিকে সনাক্ত করেছেদারোয়ানরা। সেই হেলীকে খুন করেছে। সে আগে কখনও খুন করেনি। সামান্য জিনিসের জন্য খুন–না স্যার, ব্যাপারটা কেমন যেন লাগছে। আমি জানতে চাই, রিলি তাতে বিখ্যাত দলনেতা হল কি করে?
সে ফাইলের কয়েক পাতায় চোখ বুলিয়ে বলল, আপনার মেয়ে হরণের পরেরদিন সকালে গাড়িতে তেল ভরে যে ছোকরা তাকে খুন করা হলো। ফেলে আসা হয় গোল্ডেন স্লিপার থেকে একশো চল্লিশ মাইল দূরে। ফেডারেল এজেন্ট কি এ ব্যাপারে চিন্তা করেছে?
ব্লানডিস বলল, এ ব্যাপারে কিছুই শুনিনি।
রিলি ও তার দলবলেরা পেট্রোল কিনতে গিয়েছিল। ধরা যাক তারা এখানে থেমেছিল। আপনার মেয়ে চিৎকার করে ওঠে স্বাভাবিকভাবেই, ছোকরাটা খুন হয়। এর পেছনে কোন সত্য লুকিয়ে আছে আমার অনুমান।
একটা বড় ম্যাপ নিয়ে ফেনার বলল। এই জায়গাটায় পেট্রোল পাম্প। এখন প্রশ্ন প্রতিবেশীদের ফেডারাল এজেন্ট কি জিজ্ঞাসা করেছিল।
ব্লানডিস বললেন, ওরা পাতি পাতি করে খুঁজছে কিন্তু কিছু পায়নি। এই ঘটনার পর থেকে দলটার এবং মুক্তোর হারটির কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না, আমার মেয়ের সঙ্গেই যেন ঐ তিনজন উবে গেল।
আপনার ধারণার কথা বলুন।
আমার সন্দেহ মেয়ে বেঁচে নেই কিন্তু লোকগুলো ধরা পড়ুক। ধরা পড়ার চেয়ে খুন হলে বেশী খুশী হব। আজ রাতেই আপনার প্রাপ্য চেক পাবেন।
ওদের ঠিক ধরব। ফেনার বলল, এটা আমার শেষ কাজ হতে পারে।
আধ ঘণ্টা হল ব্লানডিস চলে গেছেন। চিন্তিতভাবে ফেনার পায়চারি করছে। পলা ডেস্কের এক কোণে বসল।
ফেনার বলল, বোর্গ মেয়েটার থেকে কাজটা শুরু করতে হবে। এই মেয়েটাই হচ্ছে যোগসূত্র। স্থানীয় পুলিশ কতটা সাহায্য করবে জানি না। সে ফোনে মিঃ লোসের সঙ্গে যোগাযোগ করলো। আমি ফেনার বলছি-হরণ সম্পর্কে ব্লানডিসের সঙ্গে কথা বলেছি। বোর্গ মেয়েটার সঙ্গে দেখা করবার সুযোগ করছি।
কাজটা ব্রেনান হাতে নিয়েছে তাই না? ধন্যবাদ পরে দেখা হবে। চললাম ব্রেনানের সঙ্গে দেখা করতে।
ফেনার বলল, বোর্গ মেয়েটার খবর কি? কোথায় থাকে? নতুন প্রেমিকের সঙ্গে এ শহর ছেড়েছে মাস খানেক আগে। সেই প্রেমিক এডি সুলজ। মনে করতে পারছ। মা প্রিসনের দলের লোক। রিলির প্রতীক্ষায় থেকে শেষ পর্যন্ত ওকে ধরেছে। বুড়ি নেকড়েটা প্রচুর টাকা রোজগার করছে। কোন অভিযোগ মেলেনি বলে ওকে ধরতে পারছে না।
বোর্গের ওপর কি কেউ নজর রাখছে?
ডোইলে নজর রাখছে। আমার অনুমান সময় অপচয় হচ্ছে। এডি প্রচুর অর্থ যোগাচ্ছে এই মেয়েটার পেছনে। ওই আস্তানায় রিলিকে দেখা যাবে না। তাই ভাবছি ভোইলেকে আর কিছু দিন পরে অন্য কাজে লাগাব।
কেসটা হাতে নিয়ে কি বুঝেছ?
এর আগে আমার হাতে এমন কেস আসেনি। রিলি তার দলবলেরা, মেয়েটা, সেই সঙ্গে মুক্তোর হার কোনটারই হদিশ নেই।
এই বোর্গ মেয়েটা কোথায় কাজ করত?
কসমস ক্লাবে।
কসমস ক্লাব, চিনি। ওর সঙ্গে দেখা করে কথা বলে আসব।
লোকটা ধূর্ত। গিয়েও কোন খবর বের করতে পারিনি।
আমাকে ও পছন্দ করে।
ফেনার কসমস ক্লাবে পিটের অফিসে ঢুকে, হ্যালো পিট–আমায় চিনতে পারছ।
পিট বললনিশ্চয়ই। হঠাৎ এভাবে ঢুকে পড়লে যে–কি ব্যাপার।
ফেনার পিটের মুখে ঘুষি মেরে বলল, কথা আছে। আমরা এবার কথা শুরু করতে পারি। কি বল?
পিটের চিবুক আর নাক দিয়ে রক্ত, বস কি বলবে?
অ্যানা বোর্গকে তুমি চেন?
হ্যাঁ, চিনি।
ওর সঙ্গে রিলির কি সম্পর্ক?
রিলির মেয়েছেলে।
পরস্পরকে পছন্দ করে?
নিশ্চয়ই ওরা প্রেমগুঞ্জনরত প্রেমিক-প্রেমিকার মত। তবুও ব্লানডিস মেয়েটাকে হরণ করে রিলি ভুলে গেল।
হা। মেয়েটা বেশ অসুবিধাতে পড়েছে।
ওর সঙ্গে কি করে পরিচয় হলো এডির?
পিট উত্তর দিতে দেরী করলে ফেনার ওর গালে এক চড় কষাল। আর দেরী করলে আমাকে আরও কঠিন হতে হবে।
এখানেই এডির সঙ্গে ওর পরিচয়। মেয়েটাকে ডেকে আনতে আমায় বাধ্য করেছিল। বলেছিল, অ্যানার সঙ্গে কথা বলতে মা প্রিসন পাঠিয়েছিল। নির্জনে কথা বলার সুযোগও করেছিল।
ফেনার অবাক হলো। মা প্ৰিসনের প্রয়োজন হয়েছিল। সে বলল, বেশ বলে যাও।
পিট বলল, তারপর এডি অ্যানার কাছে অনেকবার এসেছে। স্প্রিংফিল্ড ক্লাব খোলার পর আনা চলে গেছে আমাদের কাছ ছেড়ে। আর কিছু জানি না।
পিট যে সত্যি বলছে সেটা ফেনার বুঝল। মা প্রিসনবোর্গের সম্পর্কে আগ্রহী। মেয়েটার সঙ্গে এখুনি কথা বলার দরকার।
ফেনার অফিসের বাইরে এলো।
গলির মুখে প্যারাডাইস ক্লাব। স্টীলের পাত দিয়ে তৈরী প্রবেশ পথের দরজা। বুলেটপ্রুফ কাঁচ লাগান দরজার গায়ে। জানলা দিয়ে আগন্তুকদের মুখ দেখা যাচ্ছে। সভ্যসংখ্যা বেশী নয়। তাদে সঙ্গে বন্ধু বান্ধব আসতে পারে। জোগাড়ী নিয়ে কিছু ট্যাক্সী ড্রাইভার আসে। তারা মেয়েছেলেদের খোঁজে আসে সুতরাং ব্যবসা ভালই চলে।
দোতলায় ক্লাব। পরণে লাল কোট আর ট্রাউজার পরে একটি মেয়ে রিসেপসনে বসে। মা প্রিসন এই ক্লাব চালান। একেবারে দোতলায় প্রবেশ সর্বসাধারণের নিষেধ।
এখানে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করে। এখানে যথেষ্ট রোজগার হয়। এই ক্লাবের সঙ্গে রোকোর সম্পর্ক খারাপ।
রোকোর তিনটে ট্যাক্সী আছে। এই ট্যাক্সীগুলি বিভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িত। বিনিময়ে ভালই রোজগার হয়।
তাছাড়া স্থানীয় দোকানদাররা নিজেদের নিরাপত্তার জন্যে রোকোকে দশ ডলার করে দিত। দিন ভালই চলছিল। মা উল্টোপাল্টা করে দিল।
ট্যাক্সীর ব্যবসায় বাধা পড়তেই নিরাপত্তার রেট বাড়িয়ে দিল। কিন্তু পরের সপ্তাহে টাকা নিতে গিয়ে জানল প্রিসনের দলবলদেরও টাকা দিতে হবে। তারা এবার থেকে তাদের নিরাপত্তার কথা ভাববে।
রোকো উত্তেজিত হয়ে হেস্তনেস্ত করবার জন্য নিজেই প্যারাডাইস ক্লাবে গিয়ে নিজের পরিচয় দিল।
মা প্রিসন তাকে ডেকে পাঠাল। স্লিম আর এডি সঙ্গে ছিল। বোকে দাঁড়াতে মা কিন্তু কোন আগ্রহ দেখাল না।
রোকো বলল, ভেবেছিলাম আপনার সঙ্গে ব্যবসা করা সম্ভব হবে। আমার ড্রাইভাররা জোগাড়ীদের আপনাদের ক্লাবে আসতে উৎসাহ যোগায়। এইভাবে কি আমার ব্যবসা গড়ে উঠতে পারে না।
প্রয়োজনীয় গাড়ি আমাদেরও আছে। আমরা প্রতিযোগিতায় নামতে চাই না। তোমার ট্যাক্সীগুলো পেলে অন্য রাস্তায় চালাবো।
আমার ট্যাক্সীগুলো ভাল।
আমার বক্তব্য শুনেছ, যদি পছন্দ না হয় বল
ভেবেছিলাম কোন সুরাহা হবে না।
না, হবে না।
মনে মনে রোকো প্রতিজ্ঞা করে। সুযোগ এলেই প্রতিশোধ নেবো।
মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের পরের সপ্তাহ থেকে একজন সদস্যরসঙ্গে রোকো প্যারাডাইসক্লাবে যায়। থিয়েটার শেষ হওয়ার পর আসল ব্যবসা শুরু হয়। এখানে পূর্ব পরিচিত একজনের সঙ্গে দেখা হলো।
এডি জিজ্ঞাসা করল অ্যানাকে এখানে দেখেছে কিনা।
রিসেপশনে বসেছিল মেয়েটি, মাথা নাড়ল। সেই মুহূর্তে স্লিমকে সিঁড়িতে দেখা গেল।
এডি স্লিমকে বলল, অ্যানাকে দেখেছ?
না, এসে পড়বে।
–এডি বলল, কয়েকজন ছোকরা জুয়া খেলছে।
শহরের মানুষ।
রোকোকে ওদের সঙ্গে জুয়া খেলতে দেখলাম।
স্লিম বলল, রোকো? ও কি চায়?
রোকো লোক ভাল। ও আমাদের বেশ ভয় করে।
সুবিধের নয়। এখানে ও আসুক তা আমি চাই না।
যথেষ্ট টাকা খরচ করে তাহলে আমাদের আপত্তি কিসের?
স্লিম জুয়া খেলায় রত ছোকরাদের পাশ দিয়ে চলে গেল। রোকো খুশিতে মেতে উঠেছে। স্বর্ণকেশী মেয়েটির সঙ্গে উচ্চকণ্ঠে কথা বলছে। স্লিম মুখভঙ্গি করে। মেয়েটির নজর এড়াল না। সে মেয়েটির দৃষ্টি আকর্ষণ করল।
রোকো বলল, ব্যাপার কি। আমার পা তোমার ল্যাজে পড়েছে নাকি?
তোমার বেশ্যাটাকে বলল, আমার দিকে না ঝুঁকতে।
কি বললে?
স্লিম আবার বলল–তোমার বেশ্যাটা আমার দিকে যেন না ঝোঁকে।
রোকো দাঁড়াল। উচ্চতায় সে স্লিমের অর্ধেক। স্লিমের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তার মনে ভয়ের সঞ্চার করতে পারেনি। মা প্রিসন ঘরের শেষ প্রান্তের দরজা খুলে বন্দুক হাতে ঢুকল।
তিনি চিৎকার করে বললেন, তুমি মেয়েটাকে নিয়ে চলে যাও রোকো। স্লিম তুমি উপরে যাও। এখানকার পরিবেশ দূষিত হোক আমি চাই না।
রোকো মেয়েটাকে নিয়ে চলে গেল।
স্লিম উপরে গিয়ে দেখে মিস ব্লানডিস আয়নার সামনে বসে নখ কাটছে। মূল্যবান জিনিস দিয়ে ঘরটা অগোছালো ভাবে সাজানো। স্লিমকে ঘরে ঢুকতে দেখে সে তাকাল না।
স্লিম বলল, আজ তোমার সঙ্গে মা দেখা করতে আসবে।
আচ্ছা।
কাছে এস।
মিস ব্লানডিস স্লিমের সামনে এসে দাঁড়াল। তাকে টেনে বিছানায় বসাল। স্লিম পুতুলের মত মেয়েটার গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করতে লাগল। মেয়েটি প্রতিবাদ করল না।
স্লিম বলল, আমি নিচে আছি। তুমি সব পেয়েছে তো?
মিস ব্লানডিস শুধু মাথা নাড়ল।
কথা বলতে ভাগ লাগে না, শুধু স্বপ্ন দেখতে ভাল লাগে।
ঘুমোও গে। আজ রাতে আর তোমার কাছে আসব না। আমি খুব ক্লান্ত।
বিছানায় শুয়ে ব্লানডিস স্লিমের দিকে তাকাল। স্লিম মুখ ঘুরিয়ে নিল যেন কোন মৃতের সামনে সে দাঁড়িয়ে আছে।
স্লিম নিচে এলোনরনারীরা ক্লাবে নাচছে। সে লক্ষ্য করলো এডি বিমর্ষ মুখে রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে এলো।
সে স্লিমকে বলল, অ্যানাকে দেখেছ?
রিসেপশনিস্ট মেয়েটি বলল, এখুনি উপরে আসবে।
অ্যানা ঠিক তখনি উপরে এলো। তাকে উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। সে হাঁপাচ্ছে।
এডি বলল, এক ঘণ্টা হলো অপেক্ষা করছি। কি করছিলে?
অ্যানা বলল, ভেবেছিলে পালিয়ে গেছি।
বলছি, দেরি করেছ তাই।
অ্যানার উদ্ধত ভঙ্গি, তাতে কি হয়েছে?
ঠিক আছে। ভিতরে এসে একটু পান কর।
তুমি একা পান করো। আমাকে নাচের জন্য প্রস্তুত হতে হবে বলে অ্যানা চলে গেল।
স্লিম বলল, মেয়েটার ফাট আছে তো।
এডি বলল, তা হবে। ঘুমের ওষুধ খাওয়াতে হয় না আমার সঙ্গে ঘুমোবার জন্য।
ফ্লিমের মনে ঘা লাগল। এডি রেস্তোরাঁয় মদ্যপানে রত একটা দলের সঙ্গে যোগ দিল।
স্লিম লক্ষ্য করল একটা লোক তাকে কৌতুক দৃষ্টিতে দেখছে। রিসেপশনিস্ট মেয়েটার সঙ্গে কথা বলছে। স্লিমের দিকে দেখে সে রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়ল।
স্লিম বলল, লোকটা কে?
মেয়েটি বলল,নতুন সভ্য।নাম লিখিয়েছে ফ্লাগারটি, দিন কয়েক হলো। ম্যাসন ওকে এনেছে।
টিকিটিকির মত দেখতে লোকটি। মা অফিসে আছেন?
মেয়েটা বলল, লোকটা মনে হয় খারাপ নয়।
যে তোমায় টাকা ঘুষ দেয় তাকেই তোমার ভাল লোক বলে মনে হয়, তাই না!
অফিসে ঢুকে দেখল মায়ের মুখে সিগারেট। তিনি লেজারের যোগফল পরীক্ষা করছেন।
মা বললেন, ব্যস্ত আছি এখন যাও।
ফ্লাগারটি নামে লোকটির পরিচয় কি?
মা রেগে বললেন, দেখছ না আমি এখন ব্যস্ত আছি?
ফ্লাগারটি লোকটি কে?
আমি কি করে জানব? ম্যাসনের চেনা লোক।
শোন মা, লোকটাকে মনে হয় একজন টিকটিকি।
ওর উপরে নজর রাখ।
বেশ তাই হবে।
স্লিম রেস্তোরাঁয় এলো। ফ্লাগারটি মদে চুমুক দিচ্ছে আর একটি যুবতীর সঙ্গে কথা বলছে। স্লিম ইশারা করতেই ডক কাছে এলো।
লোকটাকে পুলিশের লোক মনে হয়।
ডক ঘাবড়ে, গেল, ভিতরে ঢুকল কি করে?
ম্যাসন ঢুকিয়েছে। ম্যাসন সম্পর্কে সন্দেহ নেই তবে লোকটি সম্পর্কে জানতে চাই..নজরে রাখ। দেখবে যেতে না পারে।
ডক মাথা নেড়ে রেস্তোরাঁয় ঢুকল। ভেতরের পরিবেশ কেশ শান্ত। একটু আগে বাজনা থেমে গেছে। মাইক হাতে একজন ঘোষণা করল অ্যানা বোর্গ এবার কামোচ্ছাস পূর্ণ নাচ দেখাবেন।
বাজনার তালে তালে অ্যানের নগ্ননৃত্য শুরু হল। মেয়েটা ভালই তবে বিশেষ শ্রেণীতে ফেলা যায় না। যে টেবিলে ফ্লাগারটি বসেছিল সেখানে কেউ নেই।
ফেনার চোখে ঘুম নিয়ে সকালে স্প্রিংফিল্ডে ফিরল। রাতভোর গাড়ি চালিয়ে চেহারা উস্কেখুস্কো।
পলা বলল, বেসরকারী গোয়েন্দাদের ঘুমতে নেই।
ফেনার হাসল। পলা নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। ঘরে ঢুকে দশটা পর্যন্ত ঘুমিয়ে হাত মুখ ধুয়ে গলায় পানীয় জল ঢেলে গ্যারেজে এল।
ব্রেনানের ঠিকানা খুঁজে বের করল মিনিট দশেক পরে। খুশি মনে তাকে উপরের তলায় নিজের ঘরে নিয়ে এলো।
সে বলল, এই ঘটনাটি নজরে রাখার জন্য এখানে ফ্লাগারটি নামে পরিচিত।
ব্রেনার ফেনারকে বলল, তুমি বোর্গের উপর নজর রাখছ। মনে হয় তোমাকে যুক্ত করে আমার যথেষ্ট উপকার হবে।
তোমরা বেসরকারী গোয়েন্দারা কাজ কর অর্থের জন্য আর আমরা কাজ করি সুনামের জন্য।
কেসটা বেশ কঠিন। কেমন বুঝছ?
অনেক জোচ্চুরি কারবার চলে প্যারাডাইসে। মা প্রিসনরাও এর সঙ্গে জড়িত। গতকাল রাতে অ্যানা বোর্গেরনগ্ননৃত্য চলাকালীন সকলের অলক্ষ্যে আমি উপরে উঠেছিলাম। দেখলাম প্রত্যেকটা ঘর এখানে ব্যবসার জন্য চলে। করিডোরের শেষ ঘরটা লক করা মনে হয় গোলমেলে। আলো নিভতেই আমি নিচে নেমে যাই। টাকা দিয়ে রিসেপশনিস্ট মেয়েটাকে হাত করেছি।
বন্ধ ঘরটা রহস্যময়। তুমি এবার থেকে সাবধানে থাকবে।
কাল থেকে আমাকে একাজ থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
মেয়েটার ওপর আমি নিজে নজর রাখবো। ওকে কোথায় পাব?
শহরের শেষ প্রান্তে ওর একটা ফ্ল্যাট আছে। এডি সুলজ ওখানে যায়। লোকটা সুবিধের নয়।
ফ্লাগারটি একটুকরো কাগজে অ্যানার ঠিকানা লিখে ফেনারকে দিল। ফেনার চলে গেল।
ফেনার অ্যানার ফ্ল্যাট খুঁজে পেয়ে জানতে পারল মেয়েটা পাঁচতলায় থাকে। বন্দুক হাতে, উপরে এসে কলিংবেল বাজাতে একজন দরজা খুলে দিল।
ফেনার বলল, মিস বোর্গ আছেন?
এখন দেখা হবে না।
তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেনার ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।বসবার ঘর শূন্য।হলঘরে আসতে করিডোরের শেষ মাথা থেকে কথাবার্তার আওয়াজ ভেসে এলো। সে, সেই ঘরের দরজায় কান পেতে এক ধাক্কায় দরজা খুলে ফেলল।
এডি বিছানায় বসে অ্যানার সঙ্গে কথা বলছে। ফেনার ঘরে ঢুকতেই বন্দুক দেখে কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে গেল।
ফেনার বলল, সুপ্রভাত বন্ধু। প্রেমকুঞ্জে ঠিক সময়ে এসে গেছি। তবে দরকারী কাজ আগে করা উচিত।
ঘরের চারিদিকে এডি তাকালো। জানালার পাশে একটা চেয়ারে জামাকাপড় পাকার করা আছে। এডি জামাকাপড়ের দিকে তাকাল। ফেনার বলল, ওগুলো বসে বসে হাতে পাওয়া যাবে না। তোমরা ঝামেলা কর না। তাহলে আমাকেও করতে হবে।
অ্যানা বলল, তুমি কে? ফেনার বন্দুক হাতে বলল, তোমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছি।
ফেনার জামাকাপড়ের কাছে গেল। এডির পোশাকে একটা বন্দুক পেল। ফেনার সেই চেয়ারে বসল।
এডি জিজ্ঞাসা করল, কি চাই?
ফেনার অ্যানাকে বলল, তোমার বন্ধুকে তোমার প্রেমিককে বিদায় নিতে বল। তুমি আর আমি কথা বলব।
এডি ফেনারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তেই এডির চোয়ালে ঘুষি এসে পড়ল। প্রথমে হাঁটুর ভর দিয়ে বসে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।
অ্যানা আগ্নেয়াস্ত্র হাতে বিছানায় বসে। সে বিছানা থেকে নেমে রুদ্ধ কণ্ঠে বলল, বস।
ফেনার বলল, আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছি বসতে আসি নি।
বস বলছি।
ফেনার বন্দুকটা বের করে বিছানায় ছুঁড়ে দিল। এডির কাছে গিয়ে দেখল তখনো জ্ঞান ফেরেনি।
আরও কিছুক্ষণ অজ্ঞান থাকবে।
অ্যানা বল, কে তুমি?
রিলির খোঁজ করছি।
তুমি কি পুলিশের লোক?
ন্না। খবরের কাগজের লোক। রিলিকে ভীষণ দরকার, তুমি ওর খবর দিতে সাহায্য করবে?
খবরের কাগজের লোকদের আমি ঘৃণা করি। এখান থেকে ভেগে পড়।
সুন্দরী এত কঠিন হয়ো না।
এখান থেকে যাও।
ফেনার বলল, চললাম, তবে ফিরে এসে রিলি যখন তোমার উপর প্রতিশোধ নেবে তখন ব্যাপারটা সুখকর হবে না।
চলে যাও বলছি।
ওর পথ চেয়ে তুমি আর সে ফুর্তি করছ ভাবলে খারাপ লাগে।
আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে যে আমি ওর প্রতীক্ষায় দিন গুনছি?
লোকের কথা শুনে বলছি।
সব মিথ্যে। পুলিশের কাছে হাত মিলিয়ে এলে আমার কাছে পাত্তা পাবে না।
ফেনার হঠাৎ তার থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিল। অ্যানা বিছানায় পড়ে থাকা বন্দুকটার দিকে ছুটে গেল। ফেনার অ্যানার পিঠে চেপে চিৎ করে ফেলে দুহাত হাঁটু দিয়ে চেপে ধরল যাতে বন্দুকটা না নিতে পারে।
ফেনার অ্যানার মুখে চড় মেরে বলল, বল রিলির সঙ্গে শেষবার তোমার কোথায় দেখা হয়েছিল?
বলব না। নিজে খোঁজ করগে।
নিশ্চয়ই করব। তোমার মত অনেক মেয়েকে দেখেছি।
ফেনার কোমরের পাজামার দড়ি খুলে দিল। তারপর তার বুক থেকে নীচে নেমে দাঁড়াল।
অ্যানা বিছানায় উঠে পাজামা চেপে ধরে। সে রেগে বলল, এর উপযুক্ত শাস্তি তুমি পাবে।
আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
রিলি জনির আস্তানায় ছিল।
মাতাল জনি?
অ্যানা ঘাড় নাড়ল।
পাজামার দড়িটা অ্যানার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে রলল, দুর্ব্যবহার করার জন্য দুঃখিত।
অ্যানা গালাগাল দিতে লাগল। ফেনার বেরিয়ে গেল।
.
হিংস্র দৃষ্টিতে এডি ও অ্যানার দিকে স্লিম তাকাল।
এডির দিকে তাকিয়ে স্লিম বলল, হা ঈশ্বর! তুমি কি দুর্বল হয়ে যাচ্ছ? একটা লোক এসে তোমাদের নাস্তানাবুদ করে চলে গেল।
লোকটা যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল।
কি উদ্দেশ্যে লোকটা এসেছিল? কি জানতে চেয়েছিল আর শেষ ফোন কখন করেছিল?
তারপর?
ভয় পেয়ে বলে ফেলেছি।
নিস্তব্ধ হয়ে গেল। অ্যানা ভেবে পেল না তারা এমন করছে কেন?
স্লিম জানোয়ারের মত চিৎকার করে উঠল।
অ্যানা বলল, রিলিকে নিয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছ কেন?
এডি বলল, চুপ কর। আমাদের মাথা ব্যথা রিলিকে নিয়ে নয়।
স্লিম অ্যানার দিকে এগিয়ে গেল। এডি বলল, ভগবানের দিব্যি, ওকে কিছু বল না।
শোন, চিরকালের মত ওকে সরিয়ে দিতে হবে এ ধরনের কথা বললে।
এডি বলল, ওর গায়ে হাত দেবেনা। তোমারও মেয়েছেলে আছে আর আমারও আছে। অ্যানার সঙ্গে থাকি, ও এসব ব্যাপারে কিছুই জানে না।
স্লিম বলল, বেশ, মা এর বিচার করবেন। এডি ও স্লিম বেরিয়ে গেল।
এডির কথা শুনে মা প্রিসন ও স্লিম চিন্তায় পড়লেন।
ডক আর ক্লিন ঘাবড়ে গেছে।
মা বললেন, তোমরা সবই শুনলে। লোকটা কথা আদায় করতে জনির কাছে যাবে।
এডি বলল, জনি কিছু ফাস করবে না।
জনি মাতাল। ও সব বলে ফেলবে। আমাদের বাঁচা মুস্কিল হয়ে পড়বে।
তারা পরস্পরের দিকে তাকাল।
মা বললেন, জনিকে সরিয়ে দেওয়া দরকার। স্লিম তুমি, ডক আর ক্লিন গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়। কাজ শেষ করে কাল সকালের মধ্যে ফেরা চাই।
তিনজন এয়ারফ্লো গাড়িতে চেপে যাত্রা করল।
রোকো তিনজনের যাওয়া দেখে ভাবল কেন তিনজনে এভাবে গেল। ক্লাবের দিকে তাকাতেই দেখল এডি বেরিয়ে এলো।
তাঁর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল। ঘড়িতে একটা বাজছে। ধীর গতিতে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত ডগ। রোকো রেস্তোরাঁয় ঢুকল। প্যারাডাইস ক্লাবে রিসেপশনিস্ট মেয়েটা একটা টেবিলে বসে খেতে ব্যস্ত। কাছে গিয়ে মেয়েটার সঙ্গে আলাপ জমিয়ে নিল। মেয়েটার নাম মেইজি।
রোকো বলল, একসঙ্গে দুশো ডলার রোজগার করতে চাও নাকি?
মেইজির চোখ চকচক করল। দুশো ডলার! আমি দুশো ডলারের বিনিময়ে অনেক কিছু। করতে পারি।
তাহলে আমার ঘরে এসে টাকাটা রোজগার করো।
ইতস্ততঃ করে মেইজি বলল, আমি ওই ধরনের মেয়ে নই।
আমায় ভুল বুঝলে। আসলে তোমার সঙ্গে কথা বলে কিছু খবর জানতে চাই।
মতলব কি বলতো?
ভয় নেই। আসবে?
বাজে কিছু করবে না বলে দিলাম।
দুজনে রোকোর ফ্লাটে এলো। মেইজিকে এক গ্লাস পানীয় দিয়ে নিজে একগ্লাস নিল।
রোকো বলল, তুমি প্রিসনদের দলে আছ? ওরা আসবার পর আমার ব্যবসা লাটে গেছে। এমন বুদ্ধিমতী মেয়ের খোঁজে আছি যে খবরাখবর দিতে পারবে।
মেইজি এক ডোক মদ গিলে বলল, কি জানতে চাও?
ক্লাবের ভিতরে কি ঘটে?
তেমন না, টাকা কামায়।
অদ্ভুত ব্যাপার ঘটে নাকি?
একটা ক্লাবে যে ব্যবসা চলতে পারে আর কি
ওরা আজ বিকেলে কোথায় গেলো?
জানি না।
দশ ডলারে এর চেয়ে বেশি খবর দিতে হয়।
তোমাকে সাহায্য করতে পারছি না।
যথেষ্ট করেছ।
মেইজি তোতলিয়ে বলল, তুমি যে স্লিমের মেয়েছেলেটার ব্যাপারে আগ্রহী তা জানব কি করে?
স্লিমের প্রেমিকা আছে তা জানি।
প্রেমিকা নেই। একটা মেয়েকে উপরের ঘরে আটকে রেখেছে, রাত্রে থাকে।
রোকো ভ্রূ কুঁচকে, মেয়েটা কে?
জানি না। তবে স্লিম ওর জন্য পাগল, মেয়েটা তিনতলায় থাকে। রোজ ভোরে স্লিম ওর সঙ্গে বাইরে যায়। ক্লাব তখন বন্ধ। মাথা নিচু করে মেয়েটা স্নিমের পাশে হেঁটে যায়। দেখে একটা মরা মানুষ মনে হয়।
মেয়েটাকে দেখার সুযোগ পেলে তোমায় কিছু উপহার দিতাম।
বেশ তো, ক্লাবে রাত তিনটে পর্যন্ত থাকলেই দেখতে পাবে।
রোকো দুশ ডলার দিয়ে দিল।
মেইজি উঠে দাঁড়াল। রোকো তার হাত ধরে ডিভানের কাছে নিয়ে গেল। মেইজি বোকা হাসি হেসে শুয়ে পড়ল।
সে সতর্ক করে দিল–কোন খারাপ কাজ করবে না। একটা চাদর ঢেকে দিতেই সে হাত পা ছড়িয়ে দিল।
ফেনার সতর্ক হয়ে ঝোঁপের মধ্যে গাড়িটা নিয়ে গেল। আগাছার আড়ালে ঢেকে রাখল। তারপর ফিরে এসে প্রতীক্ষা করল রাস্তা থেকে দেখা যায় কিনা। তার ধারণা প্ৰিসনের সঙ্গীরা পিছনে আসছে। চটপট কাজ সারতে হবে।
সে বন্দুক হাতে জনির আস্তানায় পা চালাল। জনি স্টোভে কিছু ভাজছে। ফেনারের প্রবেশ তার নজরে পড়লনা। একটা শটগান দেয়ালে দাঁড় করালো। বন্দুক উঁচিয়ে জনির নাম ধরে ডাকল। ফেনারকে দেখে সে চমকে উঠল।
অসহায় ভাবে জনি বলল, কি চাই?
ফেনার বলল, বোসো।
জনি বসতে পেয়ে খুশি হল।
শোন জনি, তোমার কাছে কিছু খবর চাই। মিথ্যে বললে তোমাকে ফল ভোগ করতে হবে। হাতে বেশী সময় নেই।
রিলি আর তার সঙ্গীরা ব্লানডিস মেয়েটাকে নিয়ে এখানে এসেছিল?
জনি বলল, হ্যাঁ।
তারপর কি হলো?
সাহস না পেয়ে ওদের চলে যেতে বলি।
কতক্ষণ এখানে ছিল?
খেতে যতক্ষণ সময় লাগে।
শোন মাতাল তুমি এর বেশি জান খুলে বল। কোথায় গেছে?
সত্যি বলছি এর বেশি জানি না।
ফেনার ঘুষি মারতেই উল্টে পড়ল, এবার লাথি মারল।
মুখ খোল, তারপর কি হয়েছে?
আমাকে ছেড়ে দাও। আমি এর বেশি কিছু জানি না।
ফেনার বলল, তপ্ত ফ্রাই প্যানে গলা চর্বি মুখে ঢেলে দেবো না বললে।
আমাকে এসব করো না। প্রিসনরা সব জানে ওদের বলো।
জানালার কাঁচ ভাঙার শব্দ হতেই ফেনার দেখল স্টেনগানের নল। শুয়ে পড়ে জনির কাছে সরে গেল। প্রিসনের দলবল এসে গেছে, সে একটা লোহার ট্যাঙ্কে লুকিয়ে পড়ল।
শটগানের দিকে তাকিয়ে জনি মেঝেতে পড়ে রইল। হঠাৎ বন্দুকের গুলি জনির বুকে এসে বিধল। তারপর এক ঝাঁক গুলি লোহার ট্যাঙ্কে এসে লাগল।
একজন চিৎকার করে বলল-ঘর থেকে না বেরিয়ে এলে তোমার শরীর ঝাঁঝরা করব।
ফেনার মরার মত পড়ে রইল। গোলাকৃতি কিছু একটা ঘরের মধ্যে এসে ফাটতেই ছাদ সমেত ঘরটা তার উপর ভেঙ্গে পড়ল।
ধ্বংসস্তূপ থেকে অনেক চেষ্টায় ফেনার দুটো শরীরের ছায়া দেখল। তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।
একজন বলল, কি করে বেরিয়ে এলে?
ফেনার বলল আমাকে সাহায্য কর। তাদের সাহায্যে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, কাউকে দেখছ?
কিছুক্ষণ আগে তিনজনকে গাড়ি করে চলে যেতে দেখেছি। আমরা বিস্ফোরণের শব্দে এসেছি।
আমি একজন পুলিশ অফিসার। তিনজন এখুনি একজনকে খুন করে পালিয়েছে। আমি তোমাদের সাহায্য চাই।
ফেনার বলল, তোমরা কোথায় থাক?
মাইল কয়েক দূরে।
কাছাকাছি কোথাও ফোন আছে?
আমাদের ফোন আছে।
বেশ আমার সঙ্গে এসো।
গাড়ি চালিয়ে কিছু দূরে যেতেই ফেনার একটা পুলিশের গাড়ির মুখোমুখি হল। গাড়িতে সাদা পোশাকের একজন অফিসার আর ব্লানডিস।
ফেনার বলল ব্লানডিসকে, যা অনুমান করেছি যদি সত্যি হয় তাহলে হরণকারীরা শীঘ্র ধরা। পড়বে।
ব্লানডিস বলল, কি হয়েছে বলুন তো মনে হচ্ছে আপনি কোন বিপদে পড়েছিলেন।
রোম যুদ্ধকে যদি বিপদ বলেন তবে আপনি ঠিকই ধরেছেন।
ব্রেনান বলল কি ঘটেছে?
পরে শুনবে সে কথা, তোমার কর্মচারীদের কাজের কথা বলতে পারি?
নিশ্চয়ই।
ফেনার অফিসারদের বলল, কবরের সন্ধান পান কিনা খুঁজে দেখুন। মনে হয় খুঁজতে বেশী সময় লাগবে না।
ব্রেনান কর্মচারীদের অনুসরণ করল।
ব্লানডিস বললেন, মনে হয় আপনি কিছু কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
হ্যাঁ।
আপনার কাজ কতটা এগিয়েছে সফল না হওয়া পর্যন্ত বলবেন না?
ঠিক ধরেছেন।
সহসা একটা উচ্চকণ্ঠ শোনা গেল।
ফেনার বলল, মনে হচ্ছে ওরা কিছু আবিষ্কার করেছে।
ওরা দুজনে গিয়ে দেখলো। ব্রেনান আর অফিসারেরা একটা আগাছা পরিষ্কার জায়গায় বসে আছে। ব্রেনান একটা জায়গা দেখিয়ে বলল, এটা আগে খোঁড়া হয়েছিল বোঝা যাচ্ছে।
ফেনার বলল, একটা বেলচা চাই।
বেলচার সাহায্যে একটা গর্ত দেখা গেল। দুর্গন্ধে ফেনারের বমি এলো। এক গোছা চুল তার নজরে এলো।
মৃতদেহ। ফেনার ব্লানডিসকে বলল, এখানে সময় নষ্ট করতে চাই না। ব্রেনান স্প্রিংফিল্ড মর্গে খবর পাঠিয়ে দেবে।
ঘণ্টা তিনেক পরে সকলে একসঙ্গে আলোচনায় বসল। ফ্লাগারটিও যোগ দিল।
ফেনার ব্লানডিসকে বলল, ম্যাকগনকে হত্যা করে আপনার মেয়েকে রিলি ও তার সঙ্গীরা হরণ করেছে। তাকে নিয়ে ওরা জনির আস্তানায় যায়। অর্থের বিনিময়ে জনি তাদের থাকতে দিত। কিন্তু যে কোন ভাবেই হোক প্রিসনের দল খবর পেয়ে তাদের উপর চড়াও হয়। রিলিকে হত্যা করে আপনার মেয়েকে নিয়ে চলে যায়। আপনি টাকা দিয়েছেন রিলিকে নয় প্রিসনদের। সেই টাকায় তারা নাইট ক্লাব তৈরী করে টাকা ও মজা লুটছে আর পুলিশ খুঁজছে রিলিকে।
ব্রেনান ফোনের রিসিভার তুলে নিল।
ফেনার বলল কি করছ?
এ ঘটনা গাড়িতে বললে ওদের মাল সমেত ধরে আনতাম।
ফেনার ব্রেনানের হাত থেকে ফোন রেখে দিল। বসে থাকো চুপ করে। পুলিশের মাথায় গোবরপোড়া আছে।
ব্রেনান নিজের চেয়ারে বসে পড়ল।
ফেনার বলল জানিনা অনুমান সত্যি কিনা।প্রমাণকই আমাদের হাতে? তাছাড়া মেয়েটা ওদের কজায় আছে।
জন ব্লানডিস চমকে উঠল। প্রিসনরা একটা ঘরে তাকে চাবি দিয়ে রেখেছে।
ব্লানডিস বলল, তাহলে তোকজন নিয়ে ঘেরাও করছেন না কেন?
প্যারাডাইস ক্লাব ইস্পাতের তৈরী দুর্গের মত। ঘেরাও করলে ভিতরে ঢোকার আগেই ওরা আপনার মেয়েকে খুন করবে। তাই আমাকে চিন্তা করতে দিন কি করব।
ফ্লাগারটি বলল, ফেনার ঠিকই বলেছে।
পুলিশ মোতায়েন করে প্রতি কোণে তারপর ঘেরাও করতে চাই। ওরা মেয়েটাকে নিয়ে পালাবার চেষ্টা করতে পারে।
ব্রেনান হেড কোয়ার্টারে নির্দেশ পাঠাল। অ্যানা বোর্গকে হেড কোয়ার্টার্সে নিয়ে যাও। পারলে এডিকেও নিও। এই মেয়েটা সবকিছুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। সে আমাদের একমাত্র সাক্ষী যে জানে প্রিসনরা জানত রিলি মিস ব্লানডিসকে হরণ করেছে। ওরা মিস ব্লানডিসকে খুন করতে পারে খুব সাবধানে এগোতে হবে।
ফোন বাজল, ফেনার কথা বলে রিসিভার নামিয়ে রাখল। সেজানাল পুলিশ কবর খুঁড়ে তিনটে মৃতদেহ পেয়েছে। রিলির আঙুলের ছাপ একটি মৃতদেহের আঙুলের ছাপের সঙ্গে মিলেছে। মনে হচ্ছে আমরা ঠিক পথেই এগোচ্ছি।