ছবিটা কার মিস্টার দাশগুপ্ত?
রিঙ্কু নামে একটা মেয়ের।
ও, সেই বারাসাতের মার্ডার কেসটা না?
হ্যাঁ, ছবিটা কেমন দেখছেন?
মেয়েটা তো দেখতে স্মার্ট অ্যান্ড লাভলি।
আর কিছু? একটু দুষ্ট ছিল বোধহয়?
হ্যাঁ, তা ছিল।
আচ্ছা দাশগুপ্ত, এটা তো রাজ্য পুলিশের ব্যাপার, আপনি কেন ওদের কেসে ফেঁসে যাচ্ছেন? ইউ আর গোয়িং আউট অব ইয়োর বাউন্ডস টু হেলপ দেম, তাই না?
শবর একটু হাসল, হ্যাঁ মিস্টার ঘোষাল, ব্যাপারটা তাই।
এই এক্সট্রা দায়িত্ব নিলেন কেন? মেয়েটা কি আপনার চেনা?
না মশাই, আমি ফ্যাক খাটছি। বলতে পারেন।
কিন্তু কেন?
রজাতদার জন্য।
রজাতদা মানে? ডিআইজি রাজত গুপ্ত?
হ্যাঁ।
আপনাদের বদ্যিতে বদ্যিতে বেশ ভাব, তাই না?
শবর হাসল, ঠিকই বলেছেন। বদ্যিরা অপেক্ষাকৃত স্মল কমিউনিটি, আর একটু বোধহয় ক্ল্যানিশও।
রজতবাবু নিশ্চয়ই আপনার আত্মীয় হন?
দূর সম্পর্কের।
ওই তো, বদ্যিরা সবাই সবার আত্মীয়, আর এ মেয়েটা কি রজতবাবুর কেউ হয়?
না।
তা হলে ওঁর ইন্টারেস্ট কীসের?
ইন্টারেস্ট কেন তা আমি জানি না। আই ওয়াজ আসকড টু হেলপি।
সবই জানেন মশাই, বলবেন না।
শবর হাসল।
ছবিটা স্টাডি করছেন কেন?
ছবি অনেক সময় অনেক কথা বলে।
কেসটা কি খুব জটিল? মার্ডারারকে তো ধরেছেন।
আমি ধরিনি। লোকাল পুলিশ ধরেছে। সময়মতো না ধরলে লোকটা গণপিটুনিতেই খুন হয়ে যেত।
লোকে আজকাল বড্ড বেশি আইন হাতে নিচ্ছে।
হ্যাঁ। তার জন্য ওভার অল পরিবেশটাই দায়ী। লোকে পুলিশের ওপর আস্থা হারিয়েছে। আইনের ওপর বিশ্বাস নেই, দেশে চোর ডাকাত খুনিও তো বাড়ছে।
হুঁ। লোকটার এগেনস্টে কেস দেওয়া হয়েছে?
না, তবে কেস জোরালো। প্রমাণ হয়ে যাবে।
তা হলে আর ভাবনা কী? কেস তো সোজা।
তা ঠিক, কিন্তু লোকটার কনফেশন বের করা গেল না।
তার কি কোনও প্রয়োজন আছে?
শবর একটু আনমনা চোখে ঘোষালের দিকে চেয়ে বলল, আচ্ছা, মানুষ কতটা পেনি সহ্য করতে পারে বলুন তো! আপনি তো এ বিষয়ে স্টাডি করেছেন।
হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?
কারণ আছে।
বিভিন্ন প্ৰজাতির মানুষের বিভিন্ন সহ্যশক্তি। চিনাদের একটু বেশি সহ্যশক্তি আছে। ট্রাইবালদের মধ্যেও ফিজিক্যাল পেন সহ্য করার ক্ষমতা অনেক বেশি। কেন বলুন তো!
এই মার্ডার কেসের সাসপেক্ট ভজন আচার্য একজন ব্ৰাহ্মণ সন্তান। ব্ৰাহ্মণরা নাকি খুব বেশি ব্যথা সইতে পারে না! মহাভারতে কী একটা গল্প আছে না?
হ্যাঁ, সেই বজকীটের দংশনের গল্প তো! ব্ৰাহ্মণরা বোধহয় পেনি সহ্য করার খুব বেশি সক্ষমতা রাখে না।
এ লোকটা তা হলে একসেপশন।
তার মানে?
দিস ম্যান ওয়াজ ব্রুটালি মলড বাই দি পাবলিক দ্যাট ডে। কিন্তু হি কেপ্ট হিজ কুল কম্পোজার। ইনজুরি ছিল মারাত্মক, তবু কোনওরকম এক্সপ্রেশন ছিল না। হাবু বলে একটা গুল্ডা আছে ওখানে। সে আর লোকাল মস্তানেরাও ওকে বার দুই মেরেছে। একবার প্ৰচণ্ডভাবে, রড পাঞ্চ সবই ব্যবহার করা হয়। হাবু আমাকে বলেছে, ভজন অতি মার খেয়েও গ্যারাজের মুখে দাঁড়িয়ে তাদের আটকেছে। যেদিন ডেডবডি পাওয়া গেল সেদিনও হাটুরে মার খায় লোকটা। হাসপাতালে দিতে হয়েছিল।
হিরো নাকি?
না, হিরো বলা যায় না। তবে অদ্ভুত।
আর পুলিশের থার্ড ডিগ্রি?
হ্যাঁ, সেই কথাতেই আসছিলাম। খুনের আগের রাতে ওর গ্যারেজের ঘরে একটা মেয়ে ছিল। স্ট্রং সাসপিশন, মেয়েটা রিঙ্কু, কিন্তু ভজন আচাৰ্ষিকে দিয়ে সেটা বলানো যায়নি। গত কিছুদিনের মধ্যে লোকটাকে বার কয়েক ইনহিউম্যান টর্চার সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু লোকটার যেন ফিজিক্যাল সেন্স বলে কিছু নেই। এরকম কি হতে পারে?
কারও কারও সহ্যের ক্ষমতা খুব বেশি থাকতে পারে। কিন্তু তা দিয়ে কী প্রমাণ করতে চাইছেন?
বুঝতে পারছি না।
যতদূর শুনেছিলাম, আপনাদের হাতে প্ৰমাণ সব এসে গেছে।
হ্যাঁ। লোকটা রেহাই পাবে না। আপনি বোধহয় জানেন না, লোকটা আবার স্যাডিস্ট। অন্যকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পায়।
তাই নাকি? ইন্টারেস্টিং।
ওর স্ত্রী বলেন, লোকটার সেক্স খুব উগ্র এবং ভায়োলেন্ট, শি লেফট হিম ফর দ্যাট।
মাই গড!
রিঙ্কুকে খুন করার পিছনে এই স্যাডিজম ছাড়া আর কোনও মোটিভ পাচ্ছি না।
কেন, রেপ!
হ্যাঁ, রেপ। কিন্তু লোকটার অত সেক্স সত্ত্বেও সে প্রস কোয়ার্টারে যেত না কেন বলুন তো!
মে বি হি হ্যাড স্টেডি গার্ল ফ্রেন্ড। হাফ গোরস্তও তো আছে। তাদের তো প্রস কোয়াটারে পাওয়া যাবে না। তা ছাড়া রেড লাইট এরিয়া তো বিশাল এবং সংখ্যাও কম নয়। সব কি খুঁজে দেখা সম্ভব?
তা ঠিক, সম্ভাব্য জায়গাগুলিতেই খোঁজ করা হয়েছে।
আপনি এত ব্ৰড অ্যাঙ্গেলে ভাবছেন কেন?
শবর মাথা নেড়ে বলল, ভাববার কোনও মানে হয় না।
এবার ঘোষালও একটু হাসল, মিস্টার দাশগুপ্ত, আমি আপনাকে চিনি। আপনার কোথাও একটা খিঁচ থেকে যাচ্ছে।
না, খিঁচ নয়। একটা কথা বলবেন?
কী কথা?
ভজন রেপ করে রিঙ্কুকে মার্ডার করল। কিন্তু তারপর সে স্পটে রয়ে গেল কেন? ও তো রাতেই কলকাতায় চলে আসতে পারত।
ইজি। কলকাতায় পালিয়ে এলে ওর ওপর সন্দেহ আরও বাড়ত। হয়তো ভেবেছিল, ভালমানুষটি সেজে থাকলে লোকে সন্দেহ করবে না।
হ্যাঁ, সেটা হতে পারে। সেটাই সম্ভব।
আপনার কোনও জায়গায় গ্যাপ আছে বলে মনে হচ্ছে কি?
শবর একটু চিন্তিতভাবে বলল, না, ঠিক তা নয়। গ্যাপ কিছু নেই। কিন্তু কেসটা বড্ড সোজা আর সরল।
তা তো হতেই পারে। আমাদের দেশের ক্রিমিন্যালরা তো আর মাথা বেশি খাটায় না। তাদের বেশির ভাগ কাজই মোটা দাগের। আপনি অত ভাবছেন কেন?
শবর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ভাবছি। একটা কথা।
কী বলুন তো!
ভজন আচাৰ্ষি রোজ সকালে পাড়ার কুকুরদের ডেকে পাউরুটি খাওয়াত। কলকাতাতেও, বারাসতেও।
সো হোয়াট? হি লাভড ডগাস। এ তো হতেই পারে।
কলকাতায় একবার একটা কুকুর গাড়ি চাপা পড়ে ঠ্যাং ভাঙে। তাকে তুলে নিয়ে ট্যাক্সি করে ভেটারনারি হসপিটালে নিয়ে গিয়ে ভাল করে এনেছিলেন ভজনবাবু। উনি এসপিসিএ-র মেম্বার এবং অ্যানিমাল লাভার।
ঘোষাল একটু থমকাল, তারপর বলল, তা হলে তো ভাবতে হচ্ছে। অ্যানিমাল লাভাররা হোমিসাইড করতে পারবে না তা নয়। সপ্লিট পারসোনালিটি হতে পারে। তবে ইটস এ পয়েন্ট টু পান্ডার। কেসটা ডিটেলসে বলবেন?
শবর বলল।
রিঙ্কুর ছবিটা ভাল করে দেখে ঘোষাল বলল, হাউ ওল্ড ওয়াজ সি? সিক্সটিন?
হ্যাঁ।
ও কি ভজনবাবুকে বিয়ে করতে চেয়েছিল?
হ্যাঁ।
তা হলে একটু ভাবতে হচ্ছে। পুলিশ কি এই অ্যাঙ্গেলটা দেখেনি?
লোকাল পুলিশ এত দেখতে চাইছে না। তাদের কাছে এটা একটা ওপেন অ্যান্ড শাট কেস। ভজন আচার্যি কনভিকটেড হলে তারা বাহবা পাবে। একটা সলভড মার্ডার কেসকে কে কাঁচিয়ে দিতে চায় বলুন।
ঘোষাল একটু হেসে বলল, তা তো বটেই। আপনি কী করতে চান?
বুঝতে পারছি না।
রিঙ্কুর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখেছেন?
হ্যাঁ।
স্টমাকে কিছু পাওয়া গেছে?
কী পাওয়া যাবে?
ধরুন অ্যালকোহল।
হ্যাঁ।
বয়ফ্রেন্ডদের ক্রস করেছেন?
দু’জনকে। দু’জনেরই ফুলপ্রুফ অ্যালিবাই আছে। কেউই সেই রাতে বারাসাতে ছিল না। একজন শিলিগুড়ি গিয়েছিল দু’দিন আগে। অন্য জন আগের দিন মামাবাড়ি কোন্নগর।
আর কেউ?
না।
আচ্ছা, ডাক্তারি রিপোর্টে রোপ-এর রিপোর্টটা কীরকম? সিঙ্গল রেপ না গ্যাং রেপ?
সিঙ্গেল।
ফোর্স অ্যাপ্লাই করা হয়েছিল?
অ্যাপারেন্টলি।
ওয়াজ ইট হার ফাস্ট টাইম?
হ্যাঁ, মেয়েটা উড়নচণ্ডী হলেও সেক্সটা আগে হয়নি।
আপনাকে জিজ্ঞেস করা উচিত নয়, তবু বলি, মেয়েটা নখ দিয়ে কাউকে খামচে দিয়েছিল কি না বা রেপিস্টের লালা বা লোম বা চুল কিছু পাওয়া গেছে কি না তা দেখেছেন?
হ্যাঁ। নখে দু-একটা হিউম্যান টিসু পাওয়া গেছে।
ভজনের সঙ্গে মিলেছে?
মেলানোর চেষ্টা হচ্ছে। স্টিল আন্ডার প্রসেস। তবে আমি যতদূর জানি, লোকাল পুলিশ আমাকে মুখে বললেও কাজে টিসু পরীক্ষা করা হচ্ছে না। ওরা এত ডিপে যাবেই বা কেন?
অর্থাৎ ভজনকে ওরা ঝোলাবেই?
হ্যাঁ।
দেন লেট দেম। হ্যাঙ হিম।
তাই তো দিচ্ছি মিস্টার ঘোষাল। লোকটা হয়তো সত্যিই কাণ্ডটা করেছে কিন্তু সন্দেহাতীত ভাবে ব্যাপারটা প্ৰমাণ হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না। আমার মনে হচ্ছে জিঙ্গসটা একজন ভাঙলেও ভাঙতে পারে। কিন্তু সেই বিশেষ একজন খুবই স্টাবোর্ন।
কে লোকটা?
ওর স্ত্রী।
কীভাবে? ওঁর স্ত্রী তো ওঁকে ঘেন্না করে শুনলাম।
হ্যাঁ তা করে।
তা হলে?
ভজনবাবু তার স্ত্রীকে ঘেন্না করেন না।
তা হলে কী দাঁড়াল?
ডিফিকাল্ট ব্যাপার।
ভজনবাবুর্তার স্ত্রী সম্পর্কে কী বলেন?
তেমন কিছু নয়। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম ওঁর স্ত্রী কেন চলে গেলেন? ভজন সংক্ষেপে বলেছেন, আমার দোষে। শত চাপাচাপিতেও দোষটা অবশ্য কবুল করেননি। স্ত্রীর প্রতি অ্যাটিচুড কেমন তা জিজ্ঞেস করায় বলেছেন, ও ভাল মেয়ে, আমি খারাপ।
ব্যস?
হ্যাঁ।
তা হলে ওঁর স্ত্রী কী করবেন?
ভজনবাবুকে ঘিরে একটা রহস্য রয়েছে। ওঁর ওই চুপচাপ থাকা, জেদি মনোভাব আর মার খাওয়ার ক্ষমতা আমাকে সমস্যায় ফেলেছে।
তাই তো দেখছি।
আমি যদি বিভাবরীকে রাজি করাতে পারতাম এবং উনি যদি লোকটার সঙ্গে একটু কথা বলতেন তা হলে একটা কিছু বেরিয়ে আসতে পারত।
এটা কী করে বলছেন?
জাস্ট এ হানচ।
ও।
আরও একজন মহিলা ভজনবাবুর সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন।
তিনি কে?
রিঙ্কুর মা। শ্যামলী।
তিনি কেন দেখা করবেন?
বোধহয় ভজনবাবুকে নিজের হাতে খুন করতে চান।
আপনি রাজি হয়েছেন নাকি?
হয়েছি।
কেন?
ভজনবাবুকে শক দেওয়ার কোনও চেষ্টাই আমি ছাড়ছি না।
ও। আপনি সবসময়ে ডেনজার নিয়ে খেলা করেন।
অ্যান্ড হোয়াই নটী?
ঘোষাল হাসল, ইটস ওকে ইফ ইট পেজ। কিন্তু এসব তো পণ্ডশ্রম।
মনে হচ্ছে তাই।
বাই দি বাই, রেপ করার সময় যদি রিঙ্কু ভজনবাবুকে বাধা দিয়ে থাকে তা হলে ভজনবাবুর গালে বা গলায় বা পিঠে বা হাতে নখের দাগ থাকার কথা।
নিশ্চয়ই। তবে গণপ্ৰহারে ভজনবাবুর সারা শরীর এমনই ক্ষতবিক্ষত ছিল যে রিঙ্কুর নখের দাগের মতো সূক্ষ্ম জিনিস খোঁজা খড়ের গাদায় ছুচ খোঁজার সামিল।
তাও তো বটে।
আরও একটা কথা।
কী বলুন তো!
রিঙ্কু যদি ভজনের প্রেমেই পড়ে থাকে তা হলে সেক্সের সময় বাধা দেবে কেন?
কিন্তু আপনিই তো বললেন যে ভজন ভায়োলেন্ট লাভার।
হ্যাঁ।
সেক্ষেত্রে বাধা দিতে পারেই।
সেটা ঠিক। তবু সব দিক ভেবে দেখতে হচ্ছে।
চার্জশিট তো নিশ্চয়ই ফাইল করা হয়নি?
না।
ভজনবাবু উকিল নিয়েছেন?
হ্যাঁ। ওর পরিবার জামিন চেয়েছে।
এখন আপনার অ্যাঙ্গেল অফ থটটা কী?
মাথা নেড়ে শবর বলল, আই অ্যাম ইন কনফিউশন।
শবর দাশগুপ্তর মুখে এ কথা শুনব বলে ভাবিনি।
শবর মৃদু হেসে বলল, ঘটনাবলি নয়, আমাকে কনফিউজ করছে লোকটা। ভজন আচার্য।
লোকটাকে কি আপনার ক্রিমিন্যাল বলে মনে হচ্ছে না?
তা বলছি না। হতেই পারে।
রজাতদা আসলে কী চাইছেন বলুন তো!
রজাতদা ভেঙে কিছু বলেননি। তিনি আমাকে শুধু বলেছেন, এ কেসটািয় আমার একটা পারসোনাল ইন্টারেস্ট আছে। তুমি প্যারালেল ইনভেস্টিগেশন করো। আমি লোকাল থানাকে বলে দিচ্ছি। তোমার সঙ্গে কো-অপারেট করতে।
ওঁর ইন্টারেস্টটা কোন দিকে তা বুঝতে পেরেছেন? ভিকটিম না। সাসপেক্ট?
সম্ভবত সাসপেক্ট।
মাই গড! তাই আপনি মুশকিলে পড়েছেন।
অনেকটা তাই। ছবিটা আবার দেখুন তো দাদা।
ঘোষাল রঙিন ছবিটা তুলে নিয়ে দেখল। গায়ে একটা পোলকা ডটওলা টিলা কামিজ, পরনে নীল জিনস, একখানা সাইকেলে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো, পিছনে একটা মাঠ। মেয়েটার মুখে একটু হাসি।
কিছু মনে হয়?
না। ছবি তো স্থির জিনিস। একটা এক্সপ্রেশন মাত্র। এ থেকে কী বোঝা যাবে বলুন!
ইজ শি সেক্সি?
টিন এজাররা সবাই বয়সের গুণেই অ্যাট্রাকটিভ। যৌবনে কুক্কুরী ধন্যা।
আমি মহিলাদের ব্যাপারে একটু অনভিজ্ঞ, তাই জিজ্ঞেস করলাম।
অনভিজ্ঞ থাকার দরকারটা কী? বয়স তো বোধহয় একত্রিশ-বত্ৰিশ হল।
ওরকমই।
তা হলে টোপরটা এবেলা পরে ফেললেই তো হয়।
ঘোষালদা, নিজের কথা ভুলে যাচ্ছেন। বছর খানেক আগেও আপনি ফ্যামিলি লাইফ নিয়ে আতঙ্কিত ছিলেন।
হ্যাঁ দাশগুপ্ত, সেবার আপনি আমার পাশে না দাড়ালে মরতে হত।
ফ্যামিলি লাইফকে আমি একটু ভয় পাই।
ভয়ও আছে, ভরসাও আছে।
আমার এরকমই ভাল লাগে। সিঙ্গল, অ্যাকটিভ, ফ্রি।
দাঁড়ান। আমার বউকে আপনার পেছনে লাগাব। সে খুব ভাল ঘটকী।
সর্বনাশ! আমি ওর কাছে যাব। একটা রেপিস্ট, খুনির কাছে আমি যাব কেন শবরবাবু? আমার তো ওর সঙ্গে কোনও সম্পর্কই নেই।
জানি, সব জানি। আমি শুধু একটা জিনিস জানতে চাই।
কী সেটা?
সেদিন রাতে উনি সত্যিই রিঙ্কুর সঙ্গে কথা বলছিলেন কি না।
অবভিয়াসলি রিঙ্কু। আর কে হবে!
মানছি। কিন্তু তবু সন্দেহের কোনও অন্ধুর আমি রাখতে চাইছি না।
এটা আপনার বাড়াবাড়ি।
কোনও কিছুই বাড়াবাড়ি নয়। সত্যের শিকড়ে পৌঁছানো সবসময়েই কঠিন।
সত্যকে আপনি স্বীকার করতে চাইছেন না।
সত্য হলে অবশ্যই স্বীকার করব।
কিন্তু আমাকে টানাটানি করছেন কেন?
জেরা বা রুটিন প্রশ্ন করে ভজনবাবুর কাছ থেকে কিছুতেই কথাটা বের করা যাচ্ছে না। আপনি হয়তো জানেন না লোকটার সহ্যশক্তি অসীম। আমি কাউকে এত ফিজিক্যাল টর্চার সহ্য করার পরও এত শান্ত থাকতে দেখিনি।
তাতে কী হ’ল?
লোকটাকে ক্র্যাকডাউন করাটাই আমার স্বার্থ। কেসটার যা অবস্থা ভজনরাবুর রেহাই পাওয়ার কোনও উপায় নেই। আমি ওঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি না। লোকটার ফাঁসি হোক কি যাবজ্জীবন আমার কিছু যায় আসে না। কিন্তু লোকটার কাছ থেকে কথাটা বের করা यGद ब्न्मा 6दङन्म?
এটা কি আপনার জেদ বা প্রেস্টিজ ইসু?
না একেবারেই তা নয়।
মেয়েটা যে রিঙ্কুই তা আপনার মনে হচ্ছে না কেন?
মনে হচ্ছে। আবার হচ্ছেও না।
বড্ড হেঁয়ালি করেন। আপনি। আমার তো মনে হচ্ছে ভজন আপনাকে ঘুষ দিয়েছে।
শবর হাসল, মনে রাখবেন ভজনবাবু গুল্ডা বদমাশদের হাতে মার খেয়েও তাদের চাদা দেননি। ঘুষ দেওয়ার লোক নন।
আমাকে কী করতে হবে?
জাস্ট মিট হিম।
মিট করে কথাটথা বলতে হবে তো!
তা হবে।
কী বলব। তখন?
যেমন মনে হয় বলবেন! প্ৰস্পট করার বা শিখে পড়ে যাওয়ার দরকার নেই।
আমি যে ওর ওপর ভীষণ রেগেও আছি।
তা থাকুন না। কী যায় আসে তাতে?
কোন লাইনে কথা বলতে হবে তা তো বুঝতে পারছি না।
নানা ধরনের কথা হতে পারে। বুদ্ধি খাটিয়ে বলবেন। বলার চেয়েও শোনাটা বেশি জরুরি।
ও আমাকে সব বলবে কেন?
উনি কারও সঙ্গেই কথা বলছেন না বিশেষ। আপনার সঙ্গেও না বলতে পারেন। তবে আমার একটা ধারণা, উনি আপনার ওপর টর্চার করেছেন বলেই একটু অপরাধবোধ থাকতে পারে।
নরপশুদের অনুতাপ থাকে না। রিঙ্কুকে মেরে কি ও অনুতপ্ত?
এ প্রশ্নের জবাব আমার কাছে নেই। আপনি লোকটাকে দেখে বুঝতে চেষ্টা করুন।
আমার কী দরকার?
দরকারটা তো আপনার নয়, আমার।
আপনি আমাকে বড্ড মুশকিলে ফেললেন। আচ্ছা, একটা শর্তে দেখা করব।
কী শর্ত?
আমি আপনার কথা মানছি, বদলে আমাকে সাক্ষী হওয়া থেকে রেহাই দেবেন।
শর্তটা বেশ কঠিন। আমি চেষ্টা করব।
আপনি কি জানেন যে আপনি খুব নাছোড়বান্দা লোক?
জানি। আমার কাজটাই আমাকে আনপপুলার করে তোলে।
আমি কিন্তু আপনাকে ডিজলাইক করিনি। বরং আপনি হেটো মেঠো পুলিশের মতো নন বলে ফ্রিলি কথাও বলেছি।
তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
কবে যেতে হবে?
আজ এবং এখনই।
আমার যে ভয় করছে।
ভয় কী? লোকটা শোওয়ার ঘরে নরপশু হলেও এমনিতে এ সিক ম্যান।
তবু নার্ভাস লাগছে।
আমি কাছাকাছি থাকব।
গরাদের ভিতর দিয়ে দেখা হবে তো!
শবর হেসে বলল, আপনি চাইলে তাই হবে। তবে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে যদি চিন্তিত না হন তা হলে আমার ইচ্ছে আপনাদের দেখাটা হোক পুলিশ কাস্টডির বাইরে কোথাও।
সে কী। পুলিশ ওকে ছেড়ে দেবে?
আইনত ছাড়বে না। তবে আমার আন্ডারটেকিং-এ ছাড়বে। চলুন।
ঠিক আছে। সব রিস্ক কিন্তু আপনার।
নিশ্চয়ই।
আপনার খুব আত্মবিশ্বাস, তাই না?
না মিস ভট্টাচাৰ্য, আত্মবিশ্বাস নয়। শুধু লজিক্যাল।
ঠিক আছে চলুন। আমি পোশাকটা পালটে আসছি। গাড়ি আছে?
আছে। পুলিশের জিপ।
ওতেই হবে।
শবর যখন বিভাবরীকে নিয়ে বেরোল তখন বেলা দুটো। পথে বিভাবরী তেমন কথাটথা বলল না। শবর জিজ্ঞেস করল, স্টিল ফিলিং নার্ভাস?
হ্যাঁ।
ওর প্রতি আপনার ঘেন্নার ভাবটা এখনও আছে?
থাকবে না? আমি ভুলতে পারি না।
আপনাদের দেখা হবে।
আপনি খুব রিস্ক নিচ্ছেন। কিন্তু। থানাই ভাল ছিল। আমি সেফ ফিল করতাম।
আপনি সেফটি নিয়ে ভাববেন না। ইউ উইল বি সেফ।
বিভাবরী চুপ করে রইল।