৩. কালো রঙের পাথর

 নায়ার সবচেয়ে উঁচু এবং বড় কালো রঙের পাথরটাতে বসে ডাকল, “এই বুদ্ধিজীবী! এখানে আয়। এটা গজদন্তমিনার।” সোমনাথ তার বসার যোগ্য পাথর খুঁজছিল। নীপা ও ক্রিস্নান বসেছে স্রোতের ধারে ঢালু হ্রস্ব একটা চাতালে। জলের শব্দে তাদের কথা শোনা যাচ্ছে না। সুমিত ও ঈশিতা বসেছে তাদের প্রায় দু মিটার ওপরে মসৃণ বেদির গড়ন একটা পাথরে। নীচে নদী, পেছনে উঁচুতে ডাকবাংলো। বেলা নটার সূর্যের আলো নদীর ওপর পড়েছে। কিন্তু এখানে এখনও ছায়া। পশ্চিমের ঢালু লনের শেষে গ্রিলের ছোট দরজাটা কিন্তু এখয়ে গেছে চেকআরকামস্টালে হতে পারে। থিয়া নদীর ছুনো যায়

 ‘আনঅ্যাভয়েডেবল সারকামস্ট্যান্সে’র দরুন দুঃখপ্রকাশ করে বীতশোক গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেছে। ফিরতে দেরি হতে পারে। তার ক্যালকাটা টিম’ ইচ্ছে করলে একটা অ্যাডভেঞ্চার সেরে নিতে পারে। হাথিয়া নদীর একটা প্রপাত আছে মাত্র দেড় কিমি. ভাটিতে এখান থেকে নদীর ধারে-ধারে পৌঁছুনো যায়। তবে পাথর সম্পর্কে সাবধান। ক্রিস্নান এবং নায়ার খুব উৎসাহ দেখিয়েছিল। ঈশিতা, সুমিত এবং সোমনাথ নিমরাজি হয়েছিল। কিন্তু নীপার আপত্তিতে উৎসাহটা কেঁচে যায়। তার নাকি একটু হাঁপের টান আছে। বেশি হাঁটাচলা বা শারীরিক খাটুনি বারণ। অতএব সবাই সহানুভূতিশীল হয়েছে এবং নায়ারের মতে, “এটি বিবেচনাযোগ্য বিষয়।”

সোমনাথ জায়গাটা ভাল করে দেখে নিয়ে বলল, “তো হাঃ। এটা ঠিক ঘাট নয়, অথচ ঘাটের মতো। কেয়ারফুলি কেয়ারলেস টাইপ। গোর্কির লেখায় শেখভের একটা কোট পড়েছি : ‘যে যার নিজের জায়গা সুন্দর করে ফেললে পৃথিবী বাসযোগ্য হয়।”

নায়ার বলল, “তুমি খালি কোটই পড়েছ। মূল কিছু পড়নি!”

সোমনাথের ত্বরিত উত্তর, “হাঃ! আমি অন্যের মুখে পড়ি।”

“অ্যাঁঃ!” নায়ার একটা শব্দ করল। বিস্ময়সূচক। “ব্যাটা বলে কী! অন্যের মুখে পড়ে।”

সোমনাথ তার পছন্দসই পাথর পেল সুমিত এবং ঈশিতার পাথরের নীচে। বসে বলল, “এগেন আ কোট ফ্রম ক্লাসিক স্যান্সক্রিট। ভবভূতি। নিরবধি কাল বিপুলা চ পৃথ্বী এবং হাঃ! দা গ্রেট টিবেটান মংক সং খাপা। “The life you must know as the tiny splash of a raindrop’. 71698 Tato?”

সুমিত তার কাঁধে চপ্পলের ডগা ঠেকিয়ে বলল, “মাইরি লাথি মেরে ফেলে দেব নদীতে। খালি আঁতলামি।”

“তার আগে একটা সিগারেট দে। চৌকিদারকে চারমিনার আনতে পাঠিয়েছি। ততক্ষণ—”

সোমনাথ ঘুরে পিঠের কাছে সুমিতের চপ্পল দেখেই একটু চমকের ভঙ্গি করল। “মাই গুডনেস! রাত্তিরেই কথাটা ভেবেছিলুম। কিন্তু চোখে তখন ঘুমের আঠা। রোজ খাই ৫ মিলিগ্রাম নাইট্রাজেপাম। কাল দরকার ছিল ১০ মিলিগ্রাম। পুরো একটা নাইট্রোসাম। একই ওষুধ।”

সে তার চপ্পল দুটো খুলে খুঁটিয়ে তলা দেখতে থাকল। সবার দৃষ্টি তখন তার দিকে। সুমিত পা গুটিয়ে নিয়ে বলল, “মারবি নাকি রে? তুই পারিস মাইরি। ক্ষমা করে দে। এই নে, সিগারেট নে!”

সোমনাথ চপ্পল নীচে রেখে পা গলিয়ে বলল, “হাঃ। এটা একটা পয়েন্ট। আরিফ বলছিল, গেটের বাইরে থেকে হলঘর অবধি রক্ত। কিন্তু আমার জুতোর তলায় ছিটেফোঁটাও লাগেনি। কেন? আমি ওই ডিটেকটিভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলব। বডি নাকি পড়ে ছিল নিচু টেবিলের ওপাশে, অ্যাজ পার আরিফ তো আমার চারমিনারের প্যাকেট আর দেশলাইয়ে রক্ত! মৃত্যুর আগে কি লোকটার সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছিল, অথবা আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা। করেছে কিলার? অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। হাঃ! সে সিগারেট বের করতে গিয়ে দৈবাৎ ভেতরকার কাগজটিও একটু ছিঁড়েছে। সিগারেট তিনটেও থাকতে পারে। পেলুম দুটো। মৃত্যুর আগে সে সিগারেট খেয়েছে।”

ক্রিস্নান কথাটা শুনছিল। বলল, “তুমি নতমুখে হাঁটো দেখেছি সোমনাথ! তোমার রক্ত দেখতে পাওয়া উচিত ছিল। উজ্জ্বল আলো ছিল গেটে এবং বাহিরে।”

সোমনাথ জ্বলজ্বলে চোখে তাকিয়ে বলল, “হাঃ! আমি ঠিক ওইরকম হাঁটি। তবে আমি চোখ দিয়ে কিছু দেখি না, মন দিয়ে দেখি।”

নায়ার মন্তব্য করল, “যে অন্যের মুখে পড়ে, সে অন্যের চোখেও দ্যাখে। তার কোনও নিজস্বতা থাকতে পারে না। সে পরনির্ভরশীল। তাকে গুরুবাদী বলা চলে।”

ঈশিতা সুমিতের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট নিল। সোমনাথকে সিগারেট দিয়ে সুমিত নিজেও নিল। তিনটে সিগারেট জ্বালানো হলে ঈশিতা হাঁ করে ধোঁয়া ছেড়ে বলল, “তুমি তখন অন্যমনস্ক ছিলে। তাই রক্ত দেখতে পাওনি।”

“হ্যাঁঃ।” সোমনাথ বলল। “অন্ধকার হলঘরে ওই অদ্ভুত শব্দটার কথা ভাবছিলুম। তা ছাড়া আমি প্রায় চোরের মতো পালিয়ে আসছি। কিন্তু আমার জুতোর তলায় এক ফোঁটাও তো রক্ত লাগবে! এটাই পয়েন্ট। ডিটেকটিভদ্রলোক কোথায় কেউ কি জানো?”

নায়ার আবার বিস্ময়সূচক শব্দ করল, “অ্যাঁঃ! দূরবীক্ষণ! দূরবীক্ষণে আমাদের ওপর নজর রেখেছে ব্যাটা! ওই!”

নায়ার আঙুল তুলেছিল যেদিকে, সেদিকে সবাই তাকাল। নদীটা তত চওড়া নয়। ওপারে একটা ন্যাড়া টিলার ঢালে দাঁড়িয়ে ছিলেন কর্নেল নীলাদ্রি সরকার। এইমাত্র চোখ থেকে বাইনোকুলার নামিয়ে নীচের দিকে হাঁটতে থাকলেন।

সুমিত চাপাস্বরে বলল, “এই! হোমোটা মাইরি আমাদের কাছে আসছে। কেটে পড়া যাক।”

ঈশিতা তার পিঠে কিল মেরে বলল, “সবসময় অসভ্যতা।”

 সুমিত বলল, “নদীটা অবশ্য একটা ডিফেন্সলাইন। দেখা যাক্।”

 নায়ার বলল, “আমরা ওকে পাত্তা দেব না। কারণ আমরা জানি না যে–”।

সোমনাথ বলল, “হ্যাঁঃ। আ কোট ফ্রম সোক্ৰাতেস : I know that I do not know. But you do not know that you do not know. To থেকে বলা। ভুল হতেও পারে। তবে মোদ্দা কথাটা এই। এরকুল পোয়ারো বলেছিলেন, মার্ডার কেসে দেখা যায়, একটা লোক নিজেই জানে না এমন একটা ভাইটাল তথ্য তার কাছে আছে, যা খুনিকে ধরিয়ে দেবে! তো এই অজ্ঞতা–বরং বলা চলে অজ্ঞাতসারে একটা জ্ঞানই তার শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। খুনি তাকে চিরকালের মতো চুপ করিয়ে দেয়। এগেন আ মার্ডার। অথচ বেচারা জানল না কেন তাকে খুন করা হল। সি দা পয়েন্ট, নীপা!”

শুধু নীপা তার দিকে তাকিয়ে ছিল। তাই তাকেই বলা। ক্রিন ভিউফাইন্ডারে নদীর ওপারটা দেখছিল। সুমিত ও ঈশিতার দৃষ্টিও নদীর পারে। নায়ার গোল চোখে একহাতে গোঁফ ঢেকে তাকিয়ে ছিল নদীর ওপারে। কর্নেল নদীতে পড়ে থাকা পাথরগুলোতে পা রেখে জল ডিঙিয়ে-ডিঙিয়ে এপারে আসছেন। একখানে দাঁড়িয়ে গেলে ক্রিস্নান দ্রুত ক্যামেরা বের করেকয়েকটা ছবি নিল। ওখানে জলটা চওড়া এবং জল গুঁড়িয়ে সাদা হয়ে যাচ্ছে জোরালো স্রোতে।

সুমিত বলল, “দ্যাখ রে দক্ষিণী! বাঙালির ছেলে হেলায় লঙ্কা করিল জয়।”

 নায়ার চটে গিয়ে বলল, “ধুর ব্যাটা! আমার কাছে শোন। পবনপুত্র হনুমান ছিলেন একজন দক্ষিণী। বাজি রেখে বলতে পারি, ভদ্রলোক মাইসোরের কোনও অভিজাত ব্যক্তির বংশধর। বাঙালি মায়ের গর্ভজাত সন্তান। পবনপুত্রের গায়ের রঙ ছিল তপ্ত কাঞ্চনবর্ণ। আধুনিক ঐ আধুনিক ঐতিহাসিক তত্ত্ব আমার কাছে। জেনে নে। পবনপুত্র ছিলেন মাইসোরের অধিবাসী।”

সুমিত খ্যা-খ্যা করে হাসল। “মরেছে রে! মাইরি ওই কর্নেল ভদ্রলোককে হনুমান বানিয়ে ছাড়ল। বলছি থাম্।”

নায়ার ফিক করে হেসে গোঁফে হাত ঢাকল। বলল, “আমরা সবাই কিন্তু হনুমানের মতোই বসে আছি।”

ঈশিতা বলল, “অবিশ্বাস্য! এ বয়সে লোকটা অতটা জাম্প দিয়ে পেরুল। সার্কাসে ছিল নাকি?”

সোমনাথ বলল, “নাহ্। মিলিটারি ট্রেনিং। এগুলো ওঁদের করতে হয়–পারতে হয়।”

ক্রিস্নান ঝকঝকে দাঁতে হাসল। এতক্ষণে তার ও নীপার ওপর রোদ্দুর পড়েছে। সে বলল, “তোমরা দেখতে চাও কি? আমিও পারি।”

নায়ার বলল, “তুমি পারো। তুমি ডেনিশ যুবতী। ভদ্রলোক বৃদ্ধ বাঙালি।”

সুমিত বলল, “বেশি মাল খেলে কম বয়সেই চুলদাড়ি অমন সাদা হয়ে যায়। বয়সচোরা লোক। এই! উঠে পড়ো সব। এসে জেরা শুরু করবে। গিয়ে চা-ফা খাই। নায়ার! হারি আপ!”

কেউ উঠল না। শুধু নায়ার নেমে এসে নীচের ছায়ায় আর একটা পাথরে বসল। কর্নেল হাত পঁচিশ-তিরিশ তফাতে বাংলোর হাতার দিকে উঠে যাচ্ছিলেন। সোমনাথ উঠে দাঁড়িয়ে ডাকল, “ও মশাই! আমরা আপনার জন্য প্রতীক্ষা করছি। হাঃ! ‘ওয়েটিং ফর গোডো’। শুনুন! আমি জানি যে, কালকের হত্যা রহস্যের একটা ফ্লু আমার কাছে আছে। খুনি টের পাওয়ার আগেই জানিয়ে দেওয়া উচিত। হাঃ! তারপর আমাকে খুনি মারুক, যদিও এরপর তার চান্সের অনুপাত ১: ৯৯ পয়েন্ট। আমার জুতো! বুঝলেন কি? আসুন, জুতো দেখে যান।”

কর্নেল কথাগুলো শোনার পর শুধু হাত নাড়লেন। তারপর ওদিকে অদৃশ্য হলেন।

 সোমনাথ দু-হাত কোমরে রেখে বলল, “যা বাব্বা! অফারটা কেঁচে গেল। লোকটা কি সত্যি ডিটেকটিভ? হিজ লিটল গ্রে সেলস আর ড্রাই। ড্রাই সেল! ফুঃ!”

ঈশিতা হেসে কুটিকুটি হয়ে বলল, “তুমি জুতো দেখালে ভদ্রলোককে! জুতো দেখিয়ে ডাকলে কেউ কি আসে? বরং তুমি নতমুখে গিয়ে কুটা দিয়ে এসো। ন-ত-মুখে। তাই না কৃষ্ণা?”

ক্রিস্নান বলল, “দৃষ্টি করলে তুমিও দেখবে, সে সত্যই নতমুখে হাঁটে।” নায়ার বলল, “দৃষ্টি রাখলে বা দৃষ্টিপাত করলে। কৃষ্ণা, তোমাকে বাংলা ইউসেজ শেখাব।”

সুমিত হাতে তালি বাজিয়ে সবাইকে থামিয়ে বলল, “তার আগে জানা দরকার, নীপা কথা বলছে না কেন?”

ঈশিতা বলল, “সত্যি তো। নীপু কথা বলছে না। কেন নীপু?”

 নীপা বলল, “ও কিছু না। তোমরা বলছ, শুনছি। আমি কী বলব?”

“বা রে! তুমিও কিছু বলো।” ঈশিতা ফের আস্তে বলল, “শরীর খারাপ করছে নাকি?”

“নাহ্।” নীপা একটু হাসল। “আসলে আমি এনজয় করছি।”

নায়ার বলল, “ইভনিং ভিলায় আজ সন্ধ্যায় ককটেল ডিনার। তখন এনজয় কোরো। আ লট অব ফান–এইসব পার্টি। এখন তুমি আমাদের রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনাও। আসার পথে গাইছিলে, ‘তুমি রবে নীরবে–”

 “নীরবেই তো আছি।” নীপার মুখে সেই হাসিটা এখনও’ লেগে আছে। “সরব হলে হাঁপেন টান ওঠার চান্স আছে। প্লিজ, ইনসিস্ট কোরো না।”

“দুঃখিত।” বলে নায়ার গানটা গুন গুন করে গাইতে থাকল।

সোমনাথ বলল, “তো ড্রাই সেল কথাটার অনুষঙ্গে ব্যাটারি এসে গেল। মাই গুডনেস!” সে এতক্ষণে ধুপ করে বসল। সিগারেটটা একটানে ফিলটার টিপে ঠেকিয়ে ফেলে দিল সে। “হাঃ! ড্রাইসেল ব্যাটারি। আসলে নাইট্রাজেপামের একটা ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া আছে স্মৃতি চোট খায়। যেমন, খুব চেনা লোকের নাম আজকাল মনে থাকে না। চেনা দরকারি জিনিসের নামও মনে থাকে না। তো একটা ড্রাইসেল ব্যাটারি আমি দেখেছিলুম। অথবা ওইরকম কোনও জিনিস। আমার ভুল হতেও পারে। তোমরা কেউ কি দেখেছিলে?”

নায়ার মন্তব্য করল, “বুদ্ধিজীবীর অসম্বদ্ধ প্রলাপ!”

সোমনাথ বলল, “সুমিত! ঈশিতা! কৃষ্ণা! নীপা! নায়ার!”

সবাই তাকিয়ে রইল ওর দিকে। তারপর শুধু নীপা বলল, “কোথায়।”

“কোথায় সেটাই ঠিক মনে পড়ছে না।” সোমনাথ দু’হাত দুই গোল চেপে ধরল। এতে তার মুখের আদল বদলে গেল। লম্বাটে নাক ঠেলে বেরিয়ে এল। ঠোঁট গোল হয়ে গেল। হাত সরিয়ে নিয়ে বলল, “হ্যাঁ! ড্রাইসেল ব্যাটারি অথবা ওইরকম কোন জিনিস। আচ্ছা, ওই হলঘরে আমরা ফায়ারপ্লেস দেখেছিলুম, তাই না?”

নীপা বলল, “দেখেছি। কেন?”

সোমনাথ হঠাৎ আবার উঠে দাঁড়াল। “তো হাঃ। এক মিনিট! চৌকিদার আমায় চারমিনার দিয়ে গেল না। সাইকেলে যাবে আর আসবে। ছ’ মিনিটের বেশি দেরি হওয়া কখনই উচিত নয়। আসছি।”

সে হন্তদন্ত উঠে গেল গ্রিলের দরজার দিকে এবং দরজাটা জোরে ঠেলে চলে গেল। গ্রিলটা অদ্ভুত যন্ত্রণাকাতর শব্দ করল। নড়তে থাকল।

নায়ার বলল, “উন্মাদ! বুদ্ধিজীবী!”

 ক্রিস্নান তার ক্যামেরায় ছবি তুলতে ব্যস্ত হল।

সুমিত হাসতে হাসতে বলল, “ও আবার রক্ত-উক্ত মেখে ফিরে না আসে। কাল রাত্রির থেকে সোমনাথ সম্পর্কে আমার ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে।”

নীপা জলে পা দুটো বাড়িয়ে দিল। ইভনিং ভিলার হলঘরের ফায়ারপ্লেসটি তার মনে ভেসে এল। তার ওপর একটা স্টাফ করা চিতাবাঘ। বোস সায়েব বলছিলেন, ব্ল্যাক প্যান্থার। মাত্র পনের বছর বয়সে নাকি মানুষখেকো এই ভয়ংকর জন্তুটিকে মেরেছিলেন। নায়ার ঠিক বলছিল, লোকটি উদ্ধত প্রকৃতির। কণ্ঠস্বর কর্কশ। সোমনাথ বলছিল, ড্রাকুলা–ভ্যাম্পায়ার। নীপা শিউরে উঠল। বোস সায়েবের মুখ থেকে দুটো বাড়তি তীক্ষ্ণ দাঁত বেরিয়ে এসেছে! অবিকল দেখতে পেল সে। মিসেস বোসের গায়ের রঙ ফ্যাকাসে সাদা, পাণ্ডুর, নীরক্ত!

এবং ওইরকম একটা ক্যা-গড়নের পুরনো বাড়ি!

 নীপা আনমনে হাসল। মনে মনে বলল, মাঝে মাঝে আমি একেবারে বালিকা হয়ে পড়ি। গতরাতে বার বার ঘুম ছিঁড়ে যাচ্ছিল। কী একটা অস্বস্তি, চোখ বুজলেই মনে হয় বোস সায়েব তার বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ক্রিস্নান একবার বাথরুমে গেল। চমকে উঠেছিল নীপা। তারপর পাশ ফিরে শুয়ে আবার সেই অন্ধ ভদ্রলোককে দেখতে পেয়েছিল। আশ্চর্য! একজন অন্ধ মানুষ বাগানে গাছপালার ভেতর অমন দাঁড়িয়ে থাকেন কেন প্রতিমূর্তি হয়ে?

সোমনাথ ফিরে এল। হাতে চারমিনারের প্যাকেট, দেশলাই। আগের জায়গায় বসে নিষ্ঠার সঙ্গে একটা সিগারেট বের করে ধরাল। বলল, “তো হাঃ! ড্রাইসেল ব্যাটারি। গাড়িতে যেগুলো ব্যবহার করা হয়। আমি দেখেছি। ইভনিং ভিলার ফায়ারপ্লেসের মাথায়।”

নীপা বলল, “ওখানে একটা ব্ল্যাক প্যান্থার ছিল।”

“ছিলঃ!” সোমনাথ ধোঁয়ার মধ্যে বলল। “চিতা বাঘটার সামনের এক পা বাড়ানো, আরেক পা পিছোনো তার মধ্যিখানে। সামথিং অড। হ্যাঁঃ! সেই জন্য আমার চোখে পড়েছিল। নায়ার বলল, তুই তো মন দিয়ে দেখিস! আমরা দেখিনি। কেউ দেখছ?”

সুমিত ও ঈশিতা পরস্পরের কাঁধে হাত রেখেছিল। সুমিত তার হাত নামাল। ঈশিতা নামাল না। একটু চাপ দিয়ে বলল, “সুমিতকে স্টাফ করে ফায়ারপ্লেসের ওপর রাখলে মন্দ হয় না। এ-ও একটি চতুষ্পদ প্রাণী।”

সুমিত বলল, “সোমনাথ! বাঘটা মেল না ফিমেল রে?”

সোমনাথ বলল, “মেল ফিমেল কোনও ব্যাপার নয়। একটা চিতাবাঘ। দ্যাট মাছ। তো ওটা কি ড্রাইসেল ব্যাটারি, না অন্য কিছু? এটাই একটা পয়েন্ট।”

“অত চিন্তা না করে তুই গিয়ে দেখে আয়।” নায়ার বলল। “চলে যা! মিসেস বোস তোকে পাত্তা দেবেন বলে আমার ধারণা। তুই তাকে ম্যাডাম ম্যাডাম করছিলি।”

“হ্যাঁঃ! ইনগ্রিড বার্গম্যান।” সোমনাথ বলল। “ইনগ্রিড যখন তরুণী ছিলেন, তখনকার চেহারার সঙ্গে অসাধারণ মিল মিসেস রত্না বোসের। ঠিক এই কথাটা আমি ওঁকে বলার চেষ্টা করছিলুম।”

নায়ার ফিক করে হেসে গোঁফে হাত রাখল। “ব্যাটা নামও জেনে নিয়েছে। আমরা জানি না। ঈশিতা, তুমি জানতে? চালাকি কোরো না। তুমি জানতে না।”

“না।” ঈশিতা বলল। “তবে মিঃ বোসের নাম জানি। জে এন বোস। জগদীন্দ্রনারায়ণ। কিন্তু আমি ভেবে পাচ্ছি না, সোমনাথ একটা ড্রাইসেল ব্যাটারি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে কেন?”

সোমনাথ বলল, “কারণ জিনিসটা অড। ব্ল্যাকপ্যান্থারের পায়ের ফাঁকে একটা ওইরকম জিনিস থাকা উচিত নয়। কেন থাকবে? যে ঘর অমন ভিক্টোরিয়ান রীতিতে সাজানো এবং সৌন্দর্যের প্যাটার্নে একটা ছন্দ আছে সিমেট্রি আছে।… তো ওটা অ্যাসিমেট্রিক্যাল। ছন্দপতন যাকে বলে। সেই জন্যই আমার চোখে পড়েছিল।”

“মনে।” নায়ার মন্তব্য করল। “তুই ওটা আরোপ করেছিস। পেটিবুর্জোয়াটিক ঈর্ষাবশত তুলনা করছিলি–”।

সোমনাথ চিন্তামগ্ন ভঙ্গিতে বলল, “মে বি! কিয়ের্কেগার্দ বলেছেন, “The source of all unhappiness is comparison.’ হয় তো আমি মনে মনে নিজের ঘরটা কথা ভাবছিলুম। আমার ঘরে ব্ল্যাক প্যান্থার নেই। বই আছে। ওয়াল্টার বেঞ্জামিন–”

নায়ার ভুরু কুঁচকে বলল, “ফের কোট করলে মারব।”

“হ্যাঁঃ! কোট। কী আর করা যাবে? ওয়াল্টার বেঞ্জামিন তার ঘরের টেন পার্সেন্ট বইও পড়েননি।”

“তুই কিয়ের্কেগার্দ কার মুখ দিয়ে পড়েছিস?” নায়ার অদ্ভুত শব্দে হাসতে থাকল।

ঈশিতা বলল, “দেখ, দেখ! কৃষ্ণা কোথায় গিয়ে ছবি নিচ্ছে আমাদের! এম্মা! কী দস্যি মেয়ে!”

ক্রিস্নান প্রায় নদীর মধ্যিখানে একটা পাথরে দাঁড়িয়ে ক্যামেরা তাক করেছে। সুমিত চাপা স্বরে বলল, “আচ্ছা নীপু! ক্রিস্নানের বয়ফ্রেন্ড কেন ওকে ফেলে চলে গেছে, জানো?”

নীপা বলল, “সজোৰ্ড চলে যাবে কেন? কলকাতায় ডেনিশ কনসুলেট নেই। তাই দিল্লি গেছে। ওদের পেপারে কী একটু গণ্ডগোল আছে। পুলিশ ঝামেলা করছিল। তাই ক্রিস্নানকে হোটেল থেকে আমার কাছে রেখে গেছে।”

নায়ার জিজ্ঞেস করল, “সে বাংলা জানে?”

“সজোৰ্ড?” নাপা একটা হাসল “নাহ্। ক্রিস্নান সুইডেনের স্টকহোলমে থাকার সময় বাংলা শিখেছিল। ওখানে আমার দাদার ফ্যামিলিতে এক মাস ছিল। আমার বউদির আবার ভীষণ বাংলাপ্রেম। রাজ্যের লোককে বাংলা শেখায়। বউদির চিঠি নিয়ে কলকাতায় আমাকে মিট করল ক্রিস্নান।”

সোমনাথ চোখ বুজে সিগারেট টানছিল। চোখ খুলে বলল, “হ্যালুসিনেসান? ড্রাইসেল ব্যাটারিটা এই বাংলোতেও দেখছিলুম যেন। কখন দেখছিলুম, মনে করতে পারছি না। হ্যাঁঃ! সেইটাই। কারণ ইভনিং ভিলায় যেটা দেখেছি, সেটার গায়ে–ঠিক ক্রস নয়, ঢ্যারা বলা চলে। সাদা দুটো কাটাকাটি লাইন ছিল। ঠিক সেইরকম একটা জিনিস এই বাংলোতে–মাই গুডনেস! সকালে বাথরুমে জানালার মাথায় দেখেছি। আমি আসছি!”

সে আবার হন্তদন্ত চলে গেল। গ্রিলের দরজায় এবার জোরালো শব্দ এবং কঁপন।

নায়ার বলল, “ঈশিতা! এই উন্মাদ বুদ্ধিজীবীকে সঙ্গে আনা উচিত হয়নি। আমাদের ঘরের বাথরুমে তেমন কোনও জিনিস আমি দেখিনি। ভোর ছটায়। উঠে বাথরুমে গিয়েছি।”

সুমিত বলল, “আমি সাতটায় গেছি। তেমন কোনও জিনিস দেখিনি।”

নীপা আস্তে বলল, “শোবিজনেস। সোমনাথ দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে। কফি হাউস-আঁতলামির একটা এক্সটেনশন। বাইরে এলে এটা দেখা যায়। একবার কোনারকে–” সে থেমে গেল।

ঈশিতা চোখ নাচিয়ে হাসল। “হ্যাঁ রে নীপু! তোরা লিভিং টুগেদার পার্টি নোস তো?”

নীপা তার চোখে নিষ্পলক চোখ রেখে বলল, “সোমনাথ একবার প্রোপোজ করছিল বটে।”

“তারপর? তারপর?” ঈশিতা সাবধানে নেমে তার কাছে গেল। “সুমিত! নায়ার! কেটে পড়ো তোমরা।”

নীপা একই কণ্ঠস্বরে বলল, “আমি এই ব্যাপারটাতে ভীষণ সেকেলে। মন্ত্রপাঠ, অগ্নিসাক্ষী, সপ্তপদী এবং ফাইনালি বাসরঘর পছন্দ করি।”

“নীপা তেজস্বিনী মহিলা!” নায়ারের মন্তব্য। তার মুখে সিরিয়াস ভাব।

সুমিত ফিক করে হাসল। “নীপা! সাবধান! ঈশু তোমাকে নিয়ে খেলছে।”

 ক্রিস্নান এসে গেল লাফাতে লাফাতে। “শোনো তোমরা! এখানে বসে থাকার তুলনায় আমরা বনের ভিতর যেতে পারি। সকলকে অনুরোধ করছি। সোমনাথ কোথায় গেল?”

নায়ার বলল, “আবার একটা মৃতদেহ দেখতে।”

ক্রিস্নান মাতৃভাষায় কী একটা বলল। মুখে চমক। সবাই হেসে উঠল। তারপর ঈশিতা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “চলো। দেখি, সোমনাথ ড্রাইসেল ব্যাটারিটা পেল নাকি।”

ক্রিস্নান বলল, “কী তা?”

 “চলো দেখবে।” তার হাত ধরে টানল ঈশিতা।

ওরা বাংলার লন-এ ঢুকল। চৌকিদার একটা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল। গ্রিলের দরজায় তালা আটকাতে এল।

বাংলোর বারান্দায় কর্নেল এবং সোমনাথ মুখোমুখি বসে ছিলেন। টেবিলে সত্যি ড্রাইসেল ব্যাটারির মতো জিনিস। কর্নেল ঈশিতাকে ‘হাই’ করলেন এবং অন্যদের প্রতি মাথা ঝুঁকিয়ে ঈষৎ বাও। ঈশিতা ছটফটিয়ে বলল, “এটা কী? কী এটা?”

সোমনাথ বলল, “হ্যাঁ। এটাই সেই জিনিস, যেটা দেখেছিলুম। তবে জিনিসটা ইনি কুড়িয়ে পেয়েছেন নদীতে। কেউ বাংলার বাউন্ডারি ওয়াল পার করে ছুঁড়ে ফেলেছিল। তো স্রোতে ভেসে গিয়ে আটকে ছিল। ইনি পেয়েছেন। ইনি ডিটেকটিভ। এঁর এটা চোখে পড়া উচিত ছিল। পড়েছে। তবে এটা ড্রাইসেল ব্যাটারি নয়। অথচ অবিকল সেইরকম মনে হবে। তো ভেতরটায় অসহ্য দুর্গন্ধ! আর রঙিন কাগজের কুচিঠাসা! কিন্তু হ্যাঁ! ইনি যা বলছেন, আই এগ্রি। কিছু মূল্যবান জিনিস ছিল এর মধ্যে। যে হাতিয়ে নেবার নিয়ে ফেলে দিয়েছে। দা পয়েন্ট ইজ : কে এটা নিয়ে এল ইভনিং ভিলা থেকে? আমার বিশ্বাস, আমরা কেউই এটা আনিনি। এনেছিলুম কি?”

নায়ার বলল, “অবাস্তব চিন্তা। আমাদের কারও হাতে কোনও জিনিস ছিল না।”

ঈশিতা বলল, “আমার যে হ্যান্ডব্যগটা ছিল, দেখাচ্ছি। এত বড় জিনিস ধরবে না। অশোকের ব্রিফকেস ছিল। ওতেও ধরবে না।”

ক্রিস্নান বলল, “আমার বড় ব্যাগ ছিল। ওতে আনা সম্ভব ছিল। কিন্তু আমি আনিনি। দেখাচ্ছি।”

কর্নেল হাত তুলে বললেন, “দরকার নেই আনার। আপনারা বসুন।”

 ক্রিস্নান ফুঁসে উঠল। “আমি বিদেশী। আমার প্রতি সন্দেহ হতে পারে। আপনি আরিফকে ডাকুন। অনুসন্ধান করবে পুলিশ। কারণ এ একটা গুরুতর ঘটনা।”

ঈশিতা সায় দিল। সেও রাগে ফুঁসছিল। “নাহ্। সার্চ করা হোক। আমিই টেলিফোনে থানায় খবর দিচ্ছি।”

সে পা বাড়ালে নীপা বাধা দিল। “সিন ক্রিয়েট করে লাভ কী? লেট আস সিট টোগেদার অ্যান্ড সলভ দা মিসট্রি।”

“হ্যাঁঃ! মিসট্রি।” সোমনাথ বলল। মুঠোয় সিগারেট, “আসলে নাট্রাজেপাম ‘লিটল গ্রে সেলস’-কে ঘষে ভোতা করে দেয়। ক্রমশ আমি স্মরণশক্তি হারিয়ে ফেলছি। তো মশাই! আমার সিগারেট-দেশলাইয়ে রক্তের ছাপ এবং আমি যে ঘরে উঠেছি–সুমিত, নায়ার এবং আমি, সেই ঘরের বাথরুমে এই জিনিসটা এনে রেখে কেউ আমাকেই ইনক্রিমিনেট করতে চাইছে কি না, দ্যাটস আ পয়েন্ট। তাই নয় কি? নায়ার তুমি কটায় বাথরুমে গেছ। বলছিলে?”

নায়ার গুরুগম্ভীর স্বরে বলল, “ছটায়। এটা দেখিনি।”

“আমি সাতটায়।” সুমিত ঝটপট বলল। “এরকম কোনও জিনিস ছিল না।”

সোমনাথ বলল, “তারপর আমি গেছি। সাড়ে সাত হতে পারে, আটটা হতে পারে। মোট কথা, আমি পরে গেছি, তখন সবাই ডাইনিংয়ে ছিলিস তোরা। তারপর ডাইনিংয়ে আর্লি ব্রেকফাস্ট করলুম আমরা। হাঃ। তখন কেউ ওটা ফেলে দিয়েছিল নদীতে।”

ঈশিতা বলল, “তা হলে আমরা কেউ তা করিনি, এটা সিওর। আর অশোক সাতটায় বেরিয়ে গেছে।”

“হাঃ!” সোমনাথ মুঠো খুলে সিগারেটে টান দিন। “এগেন দা আউটসাইডার এসে পড়ছে। এবং এগেন কেউ আমাকেই ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। তার রিয়াল টার্গেট সম্ভবত আমি। এবার ডিটেকটিভ কর্নেল সরকার বলুন। ইউ অলরেডি নো দা ব্যাকগ্রাউন্ড। হাঁঃ! আপনি বলুন। তোমরা বসছ না কেন? তোমরা আমার বন্ধু। তোমরা বুঝতে চেষ্টা করো ব্যাপারটা। ম্যাথু! ব্রাদার! আমরা সবাই চা খাবো!” সোমনাথ মুখ ঘুরিয়ে কিচেনের দিকে তাকাল। “ব্রাদার ম্যাথু! হারি আপ প্লিজ!”

এবার সবাই বসল। কর্নেলের হাতে কফির পেয়ালা। অন্য হাতে জ্বলন্ত চুরুট। বললেন, “ব্ল্যাক প্যান্থার রেয়ার স্পিসিজ। কাজেই কাছে গিয়ে ভাল করে দেখার জন্য আপনাদের কৌতূহল জাগতে পারে। কেউ কি গিয়েছিলেন?”

ক্রিস্নান বলল, “হ্যাঁ আমি গিয়েছিলুম। শরীরে হাত দিয়েছিলুম। কিন্তু এই জিনিসটা দেখিনি।”

নায়ার বলল, “আমিও গিয়েছিলাম। কারণ ব্ল্যাকপ্যান্থার সাউথ ইন্ডিয়ার জঙ্গলের প্রাণী। নর্থের জঙ্গলে ব্যাকপ্যান্থার পাওয়া গিয়েছিল। অবশ্যই দ্রষ্টব্য আমার পক্ষে। কিন্তু আমি এটা দেখিনি।”

কর্নেল বললেন, “আর কেউ?”

সুমিত, ঈশিতা ও নীপা মাথা নাড়ল। তবে তারা তাকিয়ে দেখেছে কালো চিতাটাকে। কারণ ঘরে ঢুকলেই প্রথমে ওটা চোখে পড়ে। অবশ্য ঘরে আলো তত উজ্জ্বল ছিল না।

কর্নেল ক্রিস্নানকে বললেন, “আপনি নিশ্চয় ফটো তুলেছেন?”

ক্রিস্নান হকচকিয়ে গেল। মাতৃভাষায় কী একটা বলে হাসল একটু। বলল, “ছবি তোলার যোগ্য অনেক কিছু ওই ঘরে ছিল। বাইরেও ছিল। অনেক ছবি তুলেছি। কিন্তু এখনও ফিল্ম শেষ হয়নি।”

সে ক্যামেরা তুলে দেখে নিয়ে ফের বলল, “আর চার বা পাঁচটা ছবি তোলা যায়। আমি এখনই শেষ ছবি তুলে রোলটা আপনাকে দিচ্ছি। আপনি স্টুডিওতে দিন এবং দেখুন।”

ক্রিস্নান লনে নেমে বারান্দায় বসে-থাকা দলটির ছবি তুলল। তারপর পিছিয়ে গিয়ে ডাকবাংলো এবং লনের ছবি তুলে এনে ক্যামেরা থেকে ফিল্মের রোলটা বের করল। কর্নেলকে দিল।

কর্নেল বললেন, “ধন্যবাদ কৃষ্ণা!”

ক্রিস্নানের মুখে ঘামের ফোঁটা। সে শব্দ করে বসল। নায়ার বসল। নায়ার বলল, “সোমনাথ! যদি দেখা যায়, ছবিতে ব্ল্যাক প্যান্থারের পায়ের তলায় ওটা ছিল না, তাহলে আমরা পালাক্রমে তোমাকে মারব।”

সে ফিক করে হেসে গোঁফে হাত রাখল। কর্নেল জ্যাকেটের ভেতর হাত ভরে সবুজ রঙের একটা ছোট্ট পাথর বের করে বললেন, “হ্যাভারস্যাকের মধ্যে এটা ছিল। দৈবাৎ এই একটা থেকে গিয়েছিল কি না জানি না।”

“অ্যাঃ?” নায়ার নড়ে উঠল। “কী ওটা?”

কর্নেল একটু হেসে বললেন, “পান্না নামে রত্ন আছে। তার রঙ সবুজ। এটা সম্ভবত পান্না।…”