৩. ইউ হেট উইমেন

ইউ হেট উইমেন।

দ্যাটস নট ট্রু।

আই নো, ইউ হেট গার্লস। অল গার্লস।

তা নয়। বলতে পারেন আমি নিস্পৃহ।

ইউ মিন প্যাসিভ।

অনেকটা তাই। আমি খেটে-খাওয়া মানুষ, নন-রোমান্টিক।

খেটে-খাওয়া মানুষেরা বুঝি রোমান্টিক হতে পারে না?

 তা পারে। কিন্তু আমি বোধহয় মনের দিক দিয়ে শুষ্ক।

আসল কথাটা স্বীকার করলেই তো হয়, ইউ আর অ্যান্টি ফেমিনিন।

অতবড় কথাটা স্বীকার করি কী করে?

কখনও প্রেমে পড়েছেন?

প্রেমে পড়তে দিল কই মেয়েরা? তার আগেই যে মেয়েরা আমাকে ব্যবহার করে ফেলল। ব্যবহৃত হয়ে হয়ে প্রেমটাই গেল হারিয়ে।

ব্যবহার মানে? সেজুয়ালি?

তা ছাড়া আর কী?

আপনি একটু শেমলেস, খোলাখুলি কেউ ওসব বলে?

 ট্রুথফুল হতে গেলে বোধহয় একটু শেমলেস হতেই হয়। না?

আপনি বাজে লোক।

অনেকে তাই বলে বটে।

আপনার নিজের কী ধারণা?

 বোধহয় খুব ভাল লোক নই।

এটা বিনয় নয় তো?

না-না, আমার ডিফেক্টগুলো সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল।

আর কী কী ডিফেক্ট আছে আপনার?

 লম্বা লিস্ট হয়ে যাবে ম্যাডাম। দোষগুলো না দেখলেই হয়।

 এই তো বললেন আপনি ট্রুথফুল, কীরকম সততা আপনার?

অন্তত ডিজঅনেস্ট নই। কিন্তু ম্যাডাম, এই যে রোজ রাত বারোটায় আপনি আমাকে ফোন করে এসব খবর নেন এর পিছনে মতলবটা কী?

অ্যাসেস করা।

নিজের পরিচয়টাও আজ অবধি দেননি।

একটা নাম তো! যা হোক একটা ভেবে নিন না।

আপনি তা হলে কিছুতেই নিজের নাম পরিচয় দেবেন না?

ওটা ইররেলেভ্যান্ট।

আপনি পুলিশের লোক নন তো!

 হলেই বা ক্ষতি কী?

না, ক্ষতি আর কী? যা ক্ষতি হওয়ার তো হয়েই গেছে।

কী ক্ষতি হয়েছে শুনি?

পুলিশ আমাকে মারধর করেছে, অপমানজনক গালাগাল দিয়েছে, তার ওপর মার্ডারের চার্জ চাপিয়ে দিয়েছে।

আপনি কি বলতে চান মিসেস বকশিকে আপনি খুন করেননি?

 বললেই বা বিশ্বাস করছে কে বলুন।

কেউ না করলে জামিন পেলেন কী করে?

শবর দাশগুপ্ত নামে এক ভদ্রগোছের গোয়েন্দার দাক্ষিণ্যে। শেষ রক্ষা হবে কিনা জানি না। জামিন তো আর অ্যাকুইটাল নয়।

শবর দাশগুপ্ত খুব ইন্টেলিজেন্ট গোয়েন্দা।

 হলেই বা। শবর দাশগুপ্ত একা কী করবে? গোটা পুলিশ ফোর্স তো আমার বিরুদ্ধে।

মিসেস বকশি কি আপনাকে ভালবাসতেন?

উনি তো সেরকমই বলতেন।

তার মানে আপনি ওঁর ভালবাসাকে বিশ্বাস করতেন না?

না।

ওমা! কেন? ভালবাসাকে কি বিশ্বাস না করা যায়?

ভালবাসা অনেক সময়েই কতগুলো আবেগ বা স্বার্থকে নিয়ে তৈরি হয়। স্বার্থ আহত হলে বা আবেগ উবে গেলে ভালবাসাও হাওয়া। বুঝলেন ম্যাডাম?

আপনি ভীষণ বাজে লোক। বোধহয় একটু পাষণ্ডও, তাই না?

কী জানি ম্যাডাম। নিজের সম্পর্কে আমার ভাল ধারণা নেই। বেঁচে থাকার জন্য আমাকে নানা কাজ করতে হয়। কাজ নিয়েই সময় কেটে যায়। নিজেকে নিয়ে খুব একটা ভাবি না।

কাজ আমাদের সবাইকেই করতে হয়।

তা তো বটেই।

 বারবার নিজেকে অত কাজের লোক বলে জাহির করছেন কেন?

খেটে খাই তো, সে কথাটাই বোঝাতে চাইছি।

দুনিয়ায় সবাই খেটে খায়, কেউ মাথা খাটিয়ে, কেউ শরীর খাটিয়ে।

আজ্ঞে হ্যাঁ।

তা হলে আপনি তো আর পাঁচজনের চেয়ে আলাদা কিছু নন।

না, তা নই বটে।

 যারা খেটে খায় বা জীবন সংগ্রাম করে তাদের তো হৃদয়বৃত্তি মরে যায় না।

আমি কি বলেছি, যে আমার হৃদয়বৃত্তি মরে গেছে?

সেরকমই তো বোঝাতে চাইছেন। যেন এত কাজ যে প্রেম পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে।

 ম্যাডাম, আমি তা বলতে চাইনি। আমি তো বলেছি মেয়েরা আমাকে বড্ড বেশি স্থূলভাবে ব্যবহার করেছে।

আপনি ব্যবহৃত হলেন কেন?

বললে আপনি চটে যাবেন।

 তবু বলুন।

বায়োলজিক্যাল প্রয়োজন তো আমারও আছে।

 ইস আপনি ভীষণ অসভ্য।

এই তো চটে গেলেন। এসব আপনার না শোনাই ভাল।

আর এ বিষয়ে একটাই প্রশ্ন।

বলুন।

জনা কে?

সুব্রত বকশির বোন।

 কেমন মেয়ে?

ভাল মেয়ে।

সুন্দর?

 সুন্দরও নয়, কুৎসিতও নয়। ওই একরকম। খুব গম্ভীর।

জনা নাকি আপনার প্রেমে হাবুডুবু?

 আপনি তো সবই জানেন দেখছি।

জানি।

 তা হলে আর জিজ্ঞেস করছেন কেন?

আপনার মুখ থেকে শোনার জন্য।

কী আর শুনবেন ম্যাডাম। চেষ্টা করেও জনার প্রেমে পড়তে পারিনি।

আপনার কি একজন মার্কিন স্ত্রী ছিল?

না। স্ত্রী আমার ছিল না। মেয়েটি ছিল লিভ ইন গার্লফ্রেন্ড।

এমাঃ। আপনি তো জঘন্য লোক।

ম্যাডাম, এটাই তো অর্ডার অফ দ্য ওয়ার্ল্ড।

 মোটেই নয়। সুবিধেবাদীরা ওসব কথা বলে।

 আমি যে সুবিধেবাদী তাতে অবশ্য সন্দেহ নেই।

 সেই মেয়েটি কি খুন হয়েছিল?

মাই গড, আপনার নেটওয়ার্ক তো দারুণ।

খুন হয়েছিল, না?

 হ্যাঁ।

তাকে খুন করলেন কেন আপনি?

ম্যাডাম আমার যে দু-একটা গুণকে আমি নিজেই অ্যাপ্রিসিয়েট করি তা হল আমি খুনখারাপি করতে অক্ষম।

তার মানে কী?

ওই একটা জিনিস আমি বোধহয় পারি না। আজ অবধি পারিনি।

সত্যি বলছেন? বিশ্বাস করা বা না করা আপনার হাতে।

 দু-দুটো মেয়ে আপনার সংস্পর্শে আসার পর খুন হল, এটা কি কাকতালীয় বলতে চান?

আমি কিছুই বলতে চাই না। শুধু বলি, দুশ্চরিত্র হলেও আমি খুনি নই।

দুশ্চরিত্র কথাটা কিন্তু আমি বলিনি।

না। আপনি বেশ ভদ্র। বললেও কিছু মনে করতাম না।

 আচ্ছা আপনি দুশ্চরিত্রই বা কেন?

 ম্যাডাম, ওখানেও গণ্ডগোল আছে। আমি লম্পট হিসেবে কারও কারও কাছে চিহ্নিত বটে, কিন্তু সেটাও আমার চারিত্রিক তারল্যের ব্যাপার নয়। বরং বলতে পারেন ভিকটিম অফ সারকামস্ট্যান্সেস।

অর্থাৎ আপনি সাধুপুরুষ, মেয়েরাই আপনাকে নষ্ট করেছে, এই তো?

আকাড়া সত্যি কথা বলতে গেলে তাই বলতে হয়।

দেখুন মশাই, আপনার মধ্যে নষ্ট হওয়ার ইচ্ছে না থাকলে কোনও মেয়ে কি আপনাকে নষ্ট করতে পারত?

আপনি বেশ পিউরিটান আছেন। ব্যাপারটাকে নষ্ট হওয়া বলছেন কেন বলুন তো? বিদেশে ফিজিক্যাল নিডটাকে ওরা টয়লেটে যাওয়ার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় না। তবে মরালিটি বা পিউরিটানিজমকে আমি অশ্রদ্ধা করি না। ওরও দাম আছে।

দামটা কি আপনি দেন?

দিই ম্যাডাম, দিই।

তবে নিজে ঠিক থাকেন না কেন?

ওই যে বললাম, আমি কেবল খেলার পুতুল হিসেবে কাজ করেছি।

 এদেশে এসে ক’জন মেয়ের সর্বনাশ করেছেন?

গত এক বছরে আমার জীবনে নারীসঙ্গ বলতে কিছু নেই তেমন। মিথ্যে বলব না, দু চারটে কেস হয়ে গেছে।

রোমান্টিক ইনভলভমেন্ট না ফিজিক্যাল?

ফিজিক্যাল।

তারা কারা?

শুনবেন?

শুনিই না।

একজন এয়ার হোস্টেস, একজন বড়লোকের বয়স্কা স্ত্রী, একজন বয়স্কা অ্যাকট্রেস এবং একজন মধ্যবয়স্কা বিধবা।

সবাই বয়স্কা?

কপালে আমার দেখছি বয়স্কাই জোটে।

আপনি সত্যিই ভীষণ খারাপ।

তা তো বলাই যায়। কিন্তু এর প্রত্যেকটারই প্রয়োজন ছিল, তা কি জানেন?

না। আপনার প্রফেশনাল প্রয়োজন?

হ্যাঁ। ট্রেড লাইসেন্স, কন্ট্রাক্ট, পুলিশের ঝামেলা এইসব নানা স্বার্থে আমাকে আপনার ভাষায় নষ্ট হতে হয়েছে।

নষ্ট হতে তো আপনি ভালই বাসেন দেখছি।

তা ম্যাডাম, খারাপও কিছু লাগে না।

আবার মরালিটিকেও পছন্দ করেন।

তাও করি। আমি নিজে বিশুদ্ধ নই বলে বিশুদ্ধতাকে অস্বীকার করব কেন?

 বিশুদ্ধ হতে ইচ্ছে করে না?

কোনও ফল পচতে শুরু করলে আর কি বাঁচানো যায়?

ফলে ইচ্ছাশক্তি নেই, মানুষের তো তা আছে।

ভাল বলেছেন। তবে ফের ওই কথা বলতে হয়, আমি নিমিত্ত মাত্র।

ওটা অজুহাত। আসলে আপনি একজন প্লেবয়। প্লে

বয় হতে যোগ্যতা লাগে। আমার সোশ্যাল স্ট্যান্ডিং কই? সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গে আমার দেখা সাক্ষাৎ হওয়ার স্কোপ কম। বিশেষ করে হাই সোসাইটির। আমাকে যারা ব্যবহার করে তাদের অধিকাংশই হল বয়স্কা, সেক্স স্টাভার্ড, ফ্রাস্ট্রেটেড বা সিনিক মহিলা। ওরা আমাকে কাজে লাগায়, আমি ওদের কাজে লাগাই।

ছিঃ ছিঃ, আপনি একটা কী বলুন তো?

বলেছি তো, নিজেকে নিয়ে আমার গৌরব হয় না।

নিজেকে ঘেন্না হয় না?

না ম্যাডাম, তাও হয় না। কারণ মস্তিষ্কহীন হওয়ার ফলে আমার কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনার বালাই নেই। আর আমি তো রেপিস্ট নয়।

রেপিস্টের চেয়ে ভালও কিছু নন।

 ভাল কথা রেপিস্ট শব্দটা আমার মতে একটা ভুল শব্দ। ওটা হওয়া উচিত রেপার।

ওমা। তা কেন?

যে অর্থে কমিউনিস্ট, লিরিসিস্ট, আইডিয়ালিস্ট সেই অর্থে তো রেপিস্ট হওয়া উচিত নয়। কমিউনিজম, আইডিয়ালিজম, লিরিসিজমের মতো তো রেপিজম বলে কিছু নেই। আছে কি?

না।

তা হলে রেপিস্ট হয় কী করে?

সেটা একটা প্রশ্ন বটে।

 আপনি কি ইংরেজির ছাত্রী?

 নিজের সম্পর্কে আমি আপনাকে কোনও কথাই বলব না।

আপনি শুধু একটি কণ্ঠস্বর হয়েই থাকতে চান?

মন্দ কী?

রহস্যময়ী হয়ে থাকতেই কি আপনি পছন্দ করেন?

হ্যাঁ।

আপনি কি জানেন যে আমি ইচ্ছে করলেই আপনার নম্বর ট্রেস করতে পারি?

নিশ্চয়ই পারেন। কিন্তু কষ্ট করে যে নম্বরটা আপনি খুঁজে পাবেন সেটা একটা পাবলিক কল বুথ।

আপনি কি বলতে চান এত রাতে আপনি একটা পাবলিক কল বুথে এসে ফোন করছেন?

তা তো বলিনি? আমি আমার বাড়ি থেকেই ফোন করছি, তবে সরাসরি নয়। একটা কল বুথের থ্রু দিয়ে। আর ওই বুথ কিছুতেই আপনাকে আমার নম্বর দেবে না।

আচ্ছা মানুষ আপনি। এত গোপনীয়তা আর সাবধানতার কী দরকার ছিল?

ছিল। আমি চাই না আপনি আমাকে ট্রেস করুন।

আপনি কি আমাকে ভয় পান না কি ঘেন্না করেন?

কোনওটাই না।

নিছক কৌতূহল?

যা হোক একটা কিছু হবে।

একজন অচেনা মহিলা আমাকে রাত বারোটায় কেন ফোন করেন তার কারণটা কি আমার জানা উচিত নয় বলে মনে করেন?

আপনার কি খারাপ লাগছে? তা হলে বলুন ছেড়ে দিই।

আরে না, ইনফ্যাক্ট আপনার গলার স্বরটা এত ভাল যে আই ফিল অ্যাট্রাক্টেড টু ইট। আর আপনি বেশ ইন্টেলিজেন্টও বটে। সেইজন্য আমি আজকাল আপনার ফোনের জন্য অপেক্ষাই করি।

আপনার কি মনে হয় আমি আপনার বিবেকের ভূমিকা নিচ্ছি?

তা একটু মনে হয়। তবে সেটা খারাপই বা কী বলুন! আমার বিবেক জাগ্রত নেই। তাই আর কেউ বিবেকের বিকল্প হতে চাইলে তা ভালই।

আপনার ঘুম পাচ্ছে না তো।

না। আমি সারাদিনে কাজের ফাঁকে ফাঁকে দু-পাঁচ মিনিট করে ঘুমিয়ে নিই। আমার অনেক কালের অভ্যেস। ওভাবেই আমার চার-পাঁচ ঘণ্টা ঘুম হয়ে যায়। অ্যান্ড দ্যাট ইজ এনাফ।

যাক, তা হলে বিরক্ত হচ্ছেন না?

না, বরং বেশ ভাল লাগছে। আপনি কি রবীন্দ্রসংগীত বা ওরকম কিছু গান নাকি?

কেন বলুন তো?

বেশ মিউজিক্যাল ভয়েস।

গাইলেই কি বলব নাকি?

ও, আপনি তো আবার পণ করেছেন নিজের সম্পর্কে কিছু আমাকে বলবেন না।

না। এবার বলুন তো, মিসেস বকশি আপনাকে কেন ডেকেছিলেন?

এমনি। পুরনো চেনার সূত্রে।

এড়িয়ে যাচ্ছেন তো?

 কথাটা কি আগে হয়নি?

হয়েছে, কিন্তু আপনি ভাঙছেন না।

আসলে ভসভসে আবেগ ভালবাসার কথাই বলছিলেন তিনি সেদিন। আমাকে বিয়ে করারও প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

রাজি হননি বলেই কি রেগে গিয়েছিলেন?

হ্যাঁ।

আপনাকে কি উনি কোনও লোভ দেখাননি?

তাও দেখিয়েছিলেন। কী করে জানলেন আপনি?

সিম্পল লজিক।

আপনি খুব বুদ্ধিমতী।

বলুন না।

হ্যাঁ, উনি আমাকে সেদিন অনেক টাকা অফার করেছিলেন। টাকাটা নিলে তিনটে ট্রেলার কেনার সব ব্যাঙ্ক লোন আমার শোধ হয়ে যেত।

কত টাকা?

ওঁর যা অফার ছিল তা দু-আড়াই কোটি টাকা তো হবেই।

আপনি রিফিউজ করলেন। বোকা নাকি?

ম্যাডাম, একজন ভদ্রলোককে এক জায়গায় তো থামতেই হয়। লাইন অফ কন্ট্রোল। তা নইলে যে নিজের মুখ আয়নায়ও দেখা যাবে না।

হঠাৎ মরালিটি জেগে উঠল নাকি আপনার?

তাও বলতে পারেন। আমার মনে হল এই ভদ্রমহিলাকে যদি এখনই আমি সত্যি কথাটা বলে না দিই তা হলে পৃথিবীর আহ্নিক গতি থেমে যাবে।

যাঃ। আপনি তো আর গঙ্গাজলে ধোয়া তুলসীপাতা নন মশাই।

না, তা নই। তবু আই কনফেসড।

কী বললেন ভদ্রমহিলাকে?

 আপনার প্রশ্নগুলো ঠিক পুলিশের মতোই।

হয়তো আমি পুলিশেরই লোক। বলতে আপত্তি আছে?

আরে না। আমি হলাম খোলা বই। আপত্তির কী আছে? আমি খুব বিনয়ের সঙ্গেই বললাম, আমার টাকাপয়সা রোজগার করতে ভাল লাগে ঠিকই, কিন্তু অযথা অর্থপ্রাপ্তিতে আমার আনন্দ হয় না। দ্বিতীয়ত, খুব বেশি টাকাও আমাকে আনন্দ দেয় না এবং আত্মবিক্রয় করার মধ্যেও আর আমি এন্টারটেনমেন্ট খুঁজে পাই না।

বাঃ বেশ বলেছেন তো! লাইক এ কারেজিয়াস ম্যান? লাইক এ ম্যান অফ স্ট্রং ক্যারেক্টার।

ঠাট্টা করছেন? তা করতেই পারেন। আমার রেকর্ড তো ভাল নয়।

 ঠাট্টা করলাম বুঝি?

তা হলে?

কমপ্লিমেন্টই দিলাম তো?

তা হলে অন্যরকম শোনাল কেন? একে ব্যাজস্তুতি বলে না?

আমি অত বাংলা জানি না। ভদ্রমহিলা কী করলেন?

শি ওয়াজ অন হার নিজ। হাঁটু গেড়ে বসা যাকে বলে।

এতটা? শুনেছিলাম উনি বেশ ব্যক্তিত্বওয়ালা মানুষ।

তাই ছিলেন। ক্ষুরধার বুদ্ধি, চমৎকার মেধা, স্ট্রং লাইকস অ্যান্ড ডিসলাইকস। কিন্তু কোনও কারণে আমার ওপর অবসেশনটা একটা অপটিমামে পৌঁছেছিল। দেখলাম উনি প্রায় পাগলামি করছেন।

কেন যে অ্যাকসেপ্ট করলেন না?

সেটা যে মিথ্যাচার হত ম্যাডাম। ওঁর সঙ্গে আমার শরীরের সম্পর্ক ছিল ঠিকই, মনের সম্পর্ক কখনও নয়। আর একটা কথা হল, ওঁর এই ম্যাডনেস দীর্ঘস্থায়ী ব্যাপার নয়। ওঁর প্যাশনটা ছিল অস্থির এবং উৎকেন্দ্রিক।

আপনি খুব শক্ত শক্ত বাংলা বলেন, তাই না?

না ম্যাডাম, বাংলা কী করে জানব? আমি ঘোর অশিক্ষিত।

অশিক্ষিত কেন?

মাধ্যমিক পাশ করার পরই সার্কাস দলে চলে যাই বাড়ি থেকে পালিয়ে। তারপর কসরত করে করেই তো সময় পার হয়ে গেল। এখন মনে হয়, পড়াশোনা করলে বোধহয় জীবনটা অন্যরকম হত।

কেন, এই জীবনটা কি আপনার ভাল লাগে না?

ব্যাবসা মানেই হচ্ছে প্রতিদিন অসতের সঙ্গে আপস করে চলা। তিনটে বিশাল ট্রেলার আছে আমার। এগুলোকে খাটিয়ে পয়সা রোজগার করতে এদেশে কালঘাম ছুটে যায়। কত দেবতার যে প্রণামী দিতে হয় ভাবতে পারবেন না। পুলিশ, প্রশাসন, ইন্টারন্যাশনাল বর্ডার সিকিউরিটি থেকে গুন্ডা, মস্তান–কে কার চেয়ে কম যায় বলুন। তা ছাড়া রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো তো আছেই, অ্যাক্সিডেন্ট, ডাকাতি, চুরি। ব্যাবসা মানেই হল কনস্ট্যান্ট হেডেক অ্যান্ড টেনশন।

অন্য ব্যাবসা করুন না। যেখানে এত টেনশন নেই?

আমি যেটা ধরি সেটার শেষ অবধি দেখতে চেষ্টা করি। এটা ফেল করলে অন্য রাস্তা ধরতে হবে।

ফেল করছে কি?

না না, তা বলিনি। আয় মোটামুটি ভালই হয়।

আমি তো শুনেছি আপনি বেশ পয়সাওয়ালা লোক।

তা বললে বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। পয়সা আসে যায়। আমার দুঃখ কিছু নেই অবশ্য। বেশি বড়লোক হতে আমি কখনও চাইনি।

মদ খান না?

শরীর সচেতন ছিলাম তো, তাই নেশাটেশা করতাম না। অভ্যাসটা তাই হয়ে ওঠেনি। তবে পার্টিটার্টিতে ভদ্রতার খাতিরে এক-আধ সিপ খেয়েছি, প্রেজুডিস নেই। কিন্তু এসব প্রশ্ন কেন? মদ্যপান আজকাল ভাইসের মধ্যে পড়ে না। সবাই খায়।

আপনি খুব শক্তপোক্ত লোক, তাই না? গায়ে ভীষণ জোর?

গায়ের জোর ফালতু জিনিস। ও দিয়ে কিছু হয় না।

আপনি কি একটু গুন্ডা গোছের লোক?

বরং ঠিক উলটো। আমি ভীষণ ঠান্ডা মাথার লোক। রাগ নেই। শুনলে অবাক হবেন, আমি মারপিট করিনি কখনও। ঝগড়াঝাটির উপক্রম দেখলে পালিয়ে আসি।

তার মানে কি কুল কাস্টমার?

তা বলতে পারেন। আমার সম্পর্কে আপনার সোর্স অফ ইনফর্মেশনটা কে বলুন তো?

 সেসব কিছুই বলা যাবে না।

 আপনিও একজন কুল কাস্টমার, তাই না?

হ্যাঁ। মিসেস বকশিকে কে খুন করেছে বলে আপনার মনে হয়?

নো আইডিয়া।

বাড়িতে তো লোকজন আছে। দুপুরবেলা কী করে খুনটা করল বলুন তো?

সেটা নিয়ে পুলিশ তো ভাবছেই।

আপনার সিক্সথ সেন্স কী বলে?

ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে আমার কিছু নেই। খুনটা নিয়ে আমাকে প্রচণ্ড হ্যারাস করেছে পুলিশ। হাতজবাসও করতে হয়েছে। শবর দাশগুপ্ত এসে না পড়লে কী যে হত কে জানে।

আপনার অ্যালিবাই নেই?

একেবারে নেই যে তা নয়, কিন্তু খুব দুর্বল অ্যালিবাই, পুলিশ বিশ্বাসই করছে না।

শবর দাশগুপ্ত কি আপনাকে বিশ্বাস করে?

বিশ্বাস? হাসালেন ম্যাডাম। শবর দাশগুপ্তর চোখ দেখেছেন? বাঘের চোখ, বিশ্বাস করার ধাত নয়। তবে মনে যা-ই থাক, লোকটা মুখে ভদ্র এবং লজিক্যাল। হয়তো আমাকে বেনিফিট অফ ডাউট দিয়েছে।

আপনার জামিন কে দিলেন?

 আমার উকিল সদাশিব মজুমদার।

খুনি যদি ধরা না পড়ে তা হলে কি আপনাকে আবার ধরে নিয়ে যাবে?

সেটাই তো স্বাভাবিক।

আপনি ভয় পাচ্ছেন না?

ভয় না হলেও উদ্বেগ তো আছেই। তবে আমার তো কেউ নেই। বুড়ো বাবা আর মা। তবে তারা একটা জীবন আমার জন্য এত উদ্বেগ পুইয়েছেন যে, তাঁদের গা-সওয়া হয়ে গেছে।

আপনার ব্যাবসার কী হবে?

উড়ে-পুড়ে যাবে। হিসেব করে দেখেছি, চোদ্দো বছর হাজতবাস করলে যখন বেরোব। তখন আমার বয়স হবে চুয়াল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ। জীবন ফের শুরু করা যাবে। আর যদি ফাঁসিতে লটকে দেয় তো ল্যাটা চুকেই গেল।

ফাঁসি।

তাও হতে পারে, এদেশে মৃত্যুদণ্ড এখনও বহাল আছে। আমি অবশ্য আইনকানুন তেমন জানি না।

খুনটা আপনি কি করেননি?

 কেন করব বলুন তো! মিসেস বকশিকে মেরে আমার কী লাভ? কোনও প্রতিশোধস্পৃহা নেই, ওঁর সম্পত্তি পাব না, জেলাসি নেই। খুনটা তবে করব কেন?

মোটিভ? সে তো কতরকমের থাকে। আপনি হয়তো সাইকোপ্যাথ।

আপনি যা খুশি ডিডাকশন করতেই পারেন। তার ওপর তো আমার হাত নেই।

আপনার উচিত পুলিশের কাজে খুশি না থেকে নিজেও একটু তদন্ত করা।

ও বাবা! আপনি তো ডোবাবেন দেখছি।

কেন? নিজের স্বার্থেই তো আপনার একটু উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

পাগল নাকি? পুলিশ আমার ওপর চব্বিশ ঘণ্টা নজর রাখছে। থানায় রেগুলার হাজিরা দিয়ে আসতে হয়। একটু বেচাল দেখলেই ফের খপ করে নিয়ে যাবে।

আহা, আমি বলছি আপনি বসে বসে তো একটু ডিডাকশনও করতে পারেন। কে মারতে পারে তা আন্দাজ করা আপনার পক্ষেই সবচেয়ে সহজ। কারণ, আপনি ভদ্রমহিলাকে চিনতেন, তার স্বভাব-চরিত্র এবং দুর্বলতা সবই আপনার জানা। এখানে ওঁর পরিচিত কারা আছেন তাও আপনার জানা থাকার কথা।

সব মানছি। চিন্তা যে করিনি তাও নয়। আমার ডিডাকশন করার ক্ষমতা খুব সীমাবদ্ধ। আমার কেন যেন মনে হয় এটা প্রফেশনালদের কাজ।

তার মানে?

মানে খুব সোজা। কেউ চুরি বা ডাকাতি করার মতলবে ঢোকে। মিসেস বকশি বাধা দেওয়ায় খুন করে রেখে যায়।

ডাকাতি কি কিছু হয়েছে?

 পুলিশ বলতে পারছে না।

আলমারি বা সুটকেস কি ভাঙা ছিল?

না ম্যাডাম, ভাঙার তো দরকার ছিল না। মিসেস বকশিকে খুন করে ওরা ওঁর চাবি দিয়েই সবকিছু খুলেছে। কাজ সেরে ফের চাবি দিয়ে বন্ধ করে দিয়ে গেছে।

বড্ড সরল ডিডাকশন।

আমার মাথায় এর চেয়ে বেশি কোনও সম্ভাবনার কথা আসেনি যে!

আরও ভাবুন।

ভেবে মাথা ভারাক্রান্ত করা কি ঠিক হবে? বরং আমার শবর দাশগুপ্তকে খুব এফিশিয়েন্ট বলে মনে হয়। উনি হয়তো কিনারা করে ফেলতেও পারেন।

ওঁর ওপর খুব ভরসা আপনার!

হ্যাঁ, ভরসা একটু আছে। খুব স্ট্রং ভরসা নয়, তবে সামান্য একটু নির্ভর করতে পারছি। ভদ্রলোক ফেল করলে আমার কপালে কষ্ট আছে। তবে ভাগ্য ভাল যে, বিয়েটিয়ে করিনি। আমার একার ওপর দিয়ে যাবে।

মা-বাবাও তো কষ্ট পাবেন।

 তা পাবে। তবে দেয়ার ডে’জ আর নাম্বারড। আমার মা-বাবা জীবনে সুখে থাকেনি। আমি যৌবনকালে কষ্ট দিয়েছি, এখন আমার দাদারা দেয়।

আপনি তো এখনও কষ্ট দিচ্ছেন।

না ম্যাডাম, এই খুনজনিত ঝামেলা আমার ইচ্ছাকৃত নয়। আমি বিদেশ থেকে ফিরে এসে মা-বাবার অর্থকষ্টজনিত সমস্যা নির্মূল করেছি। কাজের লোক রেখে দিয়েছি। মাবাবা এখন আরামেই আছে। শ্রীঘরে যেতে না হলে আমি তাদের ছেড়ে যে আর কোথাও যাব না তাও তাদের কাছে শপথ করেছি।

 ওরা হয়তো আপনাকে সংসারী দেখলেই বেশি খুশি হতেন।

তা আর বলতে! মা তো বিয়ে বিয়ে করে পাগল করে তুলেছে আমায়। গোটা দশেক পাত্রী দেখেও ফেলেছে। দেখার জন্য আমাকেও টানাহ্যাঁচড়া কম করা হয়নি। খুনের কেসটায় ব্যাপারটা ধামাচাপা পড়েছে।

আপনি কি বিবাহবিরোধী?

তা কেন? আসলে ওসব নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করে না। আর দাদাদের তো দেখছি। মা বাবার খোঁজ অবধি নেয় না।

সেটা কি তাদের বউদের দোষ?

তা জানি না। তবে বিয়ের পরেই তাদের মানসিক পরিবর্তন হয়েছে।

 সেইজন্য বউরা দায়ী হবে কেন? আপনার দাদারাই দায়ী।

ঠিকই বলেছেন। বউদিদের দায়ী করা আমার ঠিক হয়নি।

আজকাল মা-বাবার সঙ্গে থাকলে খটাখটি, অশান্তি বেশি হয়।

আমি সংসার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নই। তবে আপনি যা বলছেন তা হতেও পারে।

হ্যাঁ মশাই, ছেলেরা বউ নিয়ে আলাদা থাকাই ভাল।

তা হলে আর আমার বিয়ে করা হবে না।

ওমা! কেন?

আমি বুড়ো মা-বাবাকে ছাড়তে পারব না। একটা জীবন অনেক কষ্ট দিয়েছি। দু-তিন বছর নাপাত্তা ছিলাম। ভেবে ভেবে আমার মায়ের হার্টের অসুখ হয়েছে।

তা হলে বোবা-কালা মেয়ে বিয়ে করুন। না হলে গাঁ-গঞ্জের একটু হাবাগোবা মেয়ে।

আমার তো বউয়ের দরকারই নেই।

ও! তা হলে সেই ফুলে ফুলে মধু খেয়ে বেড়ানো!

বলেছি তো, ওটাও আমার হাতে নেই। ফুলেরা মধু বিতরণ করতে চাইলে বেচারি মৌমাছির দোষটা কোথায়?

আপনি ভীষণ খারাপ লোক।

তা তো আগেও বলেছেন।

 আবার বলছি।

বেশ তো, মেনেও নিচ্ছি। আমি খারাপ লোক।

.

ফোন ছেড়ে দিলেন নাকি?

.

ম্যাডাম, তা হলে কি গুড নাইট?

ফোন ছাড়িনি মশাই।

 তা হলে চুপ করে ছিলেন কেন?

 আপনার ওপর রাগ হচ্ছিল।

সে তো বুঝতেই পারছি। আমাকে অনেকেই পছন্দ করে না।

আচ্ছা, যদি সেরকম মেয়ে পান তা হলে বিয়ে করবেন।

 আপনাকে তো আমার মায়ের মতোই বিয়েতে পেয়েছে দেখছি।

আহা বলুন না।

 কীরকম মেয়ের কথা বলছেন।

যে আপনার মা-বাবার যত্নআত্তি করবে?

সে কি আর পাওয়া যাবে? আমার মা-বাবা তো তোর মা-বাবা নয়। সে কি আর আমার চোখ দিয়ে আমার বাবা-মাকে দেখবে? ওসব শরৎচন্দ্রের নভেলে হয়।

কেন হবে না?

এখনকার মেয়েরা তাদের অন্যরকম আইডেন্টিটি খুঁজে পেয়েছে। তারা কেন শ্বশুর শাশুড়ি নিয়ে পড়ে থাকবে?

তা থাকতে হবে কেন? আপনি তো তাদের জন্য লোক রেখে দিয়েছেন। বউ একটু দেখাশোনা করবে, ভাল ব্যবহার করবে।

সেটা তো দুরাশা। হয়তো আমার মাকে বা বাবাকে সে পছন্দ করতে পারবে না। তারা তো আর পারফেক্ট হিউম্যানবিয়িং নয়। না ম্যাডাম, ওসব আমার দ্বারা হবে না।

তা হলে মা কি খুশি হবেন?

 তা হবে না। তবু বিয়ে না করা লেসার ইভিল।

আপনার ঘুম পাচ্ছে না তো!

 না ম্যাডাম, আমার ইচ্ছা-ঘুম।

এখন কটা বাজে জানেন?

 রাত একটা।

আপনার কথা বলতে খারাপ লাগছে না তো?

আরে না ম্যাডাম, সারাদিন তো আড্ডা মারার সময়ও পাই না, মানুষও পাই না। এখন যাহোক একটু আড্ডা দেওয়ার সুযোগ হচ্ছে।

আমি মোটেই আড্ডা দিচ্ছি না।

 তা হলে কী করছেন?

আমি আপনাকে অ্যাসেস করছি।

 ওঃ হ্যাঁ, তা তো বটে।

ইয়ারকি হচ্ছে?

না তো! তবে অ্যাসেস করে কী লাভ? আমি সামান্য মানুষ।

 একটা মার্ডার কেসে আপনি প্রাইম সাসপেক্ট। খবরের কাগজে আপনার নাম উঠেছিল, মনে নেই?

হ্যাঁ, তা বটে। আমি কুখ্যাত লোক।

যা বলেছি তা মনে থাকবে?

অনেক কথাই তো বলেছেন। কোনটা বিশেষ করে মনে রাখতে হবে?

 মার্ডারটা নিয়ে ভাবুন।

ভাবছি তো।

ওরকম এলোমেলো ভাবনা নয়।

তা হলে?

সেদিন মিসেস বকশির সঙ্গে আপনার যা যা কথা হয়েছিল সেগুলোর ওপর কনসেনট্রেট করুন।

সেগুলোও তো মাঝে মাঝে ভাবি।

আপনি ভীষণ ক্যালাস লোক।

তা হয়তো হবে।

সেদিন মিসেস বকশিত্র কোনও কথার কোনও আলাদা অর্থ হয় কি না ভেবে দেখুন। খুব ডিপলি ভাবুন। আমি কাল আবার রাত বারোটায় ফোন করব।

ধন্যবাদ ম্যাডাম। আপনি আমার জন্য ভাবছেন বলে ধন্যবাদ।

আপনার জন্য ভাবছি কে বলল?

তা হলে?

জাস্ট একটা নাগরিক কর্তব্য হিসেবে পরামর্শ দিচ্ছি।

সেটাই বা কে দেয় বলুন?

এখন ইয়ারকি ছেড়ে ভাবুন তো। এক্ষুনি ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোতে হবে না। রাতে–বিশেষ করে গভীর রাতে ভাবনাচিন্তা খুব শার্প হয়। এখন বসে বসে কিছুক্ষণ মাথাটাকে খাটান তো! আমিও ভাবছি।

আপনার ঘুম পায়নি তো।

না। বিবেক কি ঘুমোয়? ছাড়ছি।

আচ্ছা ম্যাডাম। কাল আবার

 টুক করে ফোনটা কেটে গেল।

মহিলা যে কে তা কিছুই বুঝতে পারছে না মিহির, দিন-চারেক আগে প্রথম ফোনটা আসে৷ রহস্যময় কথাবার্তা, কিছুতেই পরিচয় না দেওয়া। তারপর প্রতি রাতেই ফোন। মেয়েটা কে হতে পারে তা কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে না সে। এদেশের খুব বেশি মেয়েকে চেনেও না মিহির। গলার স্বর থেকে অনুমান হয়, বয়স কম। আঠেরো, উনিশ, কুড়ি হতে পারে। মিহির সম্পর্কে মেয়েটির দুর্বার কৌতূহল এবং বোধহয় হৃদয়ের একটু দ্রব ভাব। কিন্তু এসব কী করে হয়? মিহির একটু হি-ম্যান গোছের আছে ঠিকই। বেশ লম্বাচওড়া এবং সুপুরুষ, কিন্তু তা বলে সব মেয়েই ঢলে পড়বে এমন নয়।

কোনও চিন্তাই বেশিক্ষণ মাথায় থাকে না মিহিরের। ঘুম আসছিল না। সারাদিন আসুরিক খাটুনির পর ঘুম। আধো তন্দ্রার মধ্যে হঠাৎ সে চমকে উঠল। না, তেমন কনসেনট্রেট না করেও হঠাৎ তার মনে পড়ল, অরুণিমা সেদিন হঠাৎ এক সময়ে খুব অন্যমনস্ক ভাবে বলেছিল, আমি মরে গেলে ও সব পাবে। আমি একদম তা চাই না, একদম না। আমি চাই এসব তোমার হোক। কত টাকার সম্পত্তি আমার জানো! ভাবতেই পারবে না।

এটা কি ইম্পর্ট্যান্ট কথা? কে জানে।

 মিহির ঘুমিয়ে পড়ল।