শিশুপালবধ পৰ্ব্বাধ্যায়
তদনন্তর রাজা যুধিষ্ঠির সাগরসদৃশ রাজমণ্ডলকে রোষপ্ৰচলিত দেখিয়া প্ৰজ্ঞতম পিতামহ ভীষ্মকে সম্বোধন করিয়া কহিতে লাগিলেন, “হে পিতামহ! এই মহান রাজসমুদ্র সংক্ষোভিত হইয়া উঠিয়াছে, এক্ষণে যাহা কৰ্তব্য হয়, অনুমতি করুন। যাহাতে যজ্ঞের বিঘ্ন ও প্ৰজাগণের অহিত না হয়, তাহার উপায়বিধান করুন।” কুরুপিতামহ ভীষ্ম কহিলেন, “যুধিষ্ঠির! ভীত হইও না, কুকুর কখনও সিংহকে হনন করিতে পারে না, আমি পূর্ব্বেই ইহার কল্যাণকর উপায় স্থির করিয়াছি। যেমন সিংহ প্রসুপ্ত হইলে কুকুরগণ সমাগত ও মিলিত হইয়া চীৎকার করিয়া থাকে, সেইরূপ প্রসুপ্ত বৃষ্ণি-সিংহ বাসুদেবের সম্মুখে এই কুপিত রাজ-মণ্ডল চীৎকার করিতেছে। সিংহ স্বরূপ অচ্যুত যাবৎ জাগরিত না হইতেছেন, ততক্ষণ নৃসিংহ চেদিরাজ এই সকল মহীপালকে সিংহ করিয়া তুলিতেছে। পার্থিবিশ্রেষ্ঠ শিশুপাল অচেতন হইয়া পার্থিবদিগকে যমালয়ে লইয়া যাইবার কামনা করিতেছে। কিন্তু নারায়ণ শিশুপালের তেজ অবিলম্বেই প্রত্যাহরণ করিবেন। হে প্ৰজ্ঞতম! চেদিরাজের এবং সমস্ত মহীপতির মতিচ্ছন্ন ঘটিয়াছে। এই নরোত্তম নারায়ণ যখন যে যে ব্যক্তিকে পৃথিবী হইতে গ্রহণ করিতে ইচ্ছা করেন, তখন চেদিরাজের ন্যায় তাহাদিগের বুদ্ধি এই প্রকার বিপ্লাবিত [বিভ্রংশ—মতিচ্ছন্ন] হইয়া থাকে। ত্ৰিলোকীমধ্যে রমাপতি চতুর্বিধ জীবের স্রষ্টা ও সংহর্ত্তা।” ভীষ্মের এই বাক্য শ্রবণ করিয়া রাজা শিশুপাল তাহার প্রতি অতি কঠোর বাক্য-প্রয়োগ করিতে আরম্ভ করিলেন।