৩৯ম অধ্যায়
যুদ্ধক্ষেত্রে কর্ণের পুরস্কার ঘোষণা
সঞ্জয় কহিলেন, “হে মহারাজ! তখন মহাবীর কর্ণ পরমপ্রীত হইয়া সেই ব্যাঘ্রচর্ম্মাবৃত রথে আরোহণ ও পাণ্ডবসৈন্যমধ্যে গমন করিয়া আপনার সৈন্যগণকে আহ্লাদিত করিয়া পাণ্ডবপক্ষীয় সৈন্যগণকে একাদিক্রমে জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন, ‘হে বীরগণ! আজ তোমাদিগের মধ্যে যিনি আমাকে মহাত্মা ধনঞ্জয়কে দেখাইয়া দিবেন, তিনি যাহা প্রার্থনা করিবেন, আমি তাঁহাকে তাহাই প্রদান করিব। যদি তিনি তাহা প্রাপ্ত হইয়াও সন্তুষ্ট না হয়েন, তাহা হইলে তাঁহাকে শকটপূর্ণ রত্ন প্রদান করিব। যদি তিনি তাহাতেও আহ্লাদিত না হয়েন, তাহা হইলে কাংস্যনির্ম্মিত দোহনপাত্রসমবেত একশত দুগ্ধবতী গাভী, একশত গ্রাম এবং অশ্বতরীযুক্ত, সুকেশী যুবতীগণ-সমবেত শ্বেতবর্ণ রথ প্রদান করিব। যদি তাহাতেও তাঁহার সন্তোষ না জন্মে, তাহা হইলে তাঁহাকে ছয় মাতঙ্গ, সুবর্ণনির্ম্মিত রথ ও নিষ্ককণ্ঠ [স্বর্ণালঙ্কার-শোভিত কণ্ঠ], গীতবাদ্যাদিনিপুণ, অজাতপুত্র [যাহাদের সন্তান হয় নাই—পূর্ণ যুবতী] একশত কামিনী প্রদান করিব। যদি তাহাও তাঁহার সন্তোষকর না হয়, তাহা হইলে একশত কুঞ্জর, একশত গ্রাম, একশত সুবর্ণরথ গুণবৃদ্ধ সুশিক্ষিত দশসহস্র অশ্ব এবং সুবর্ণশৃঙ্গযুক্ত চারিশত সবৎসা ধেনু প্ৰদান করিব। যদি তাহাতেও তাঁহার প্রীতি না জন্মে, তাহা হইলে তাঁহাকে সুবর্ণমণ্ডিত, মণিময়ভূষণধারী, শ্বেতবর্ণ, সুদন্তযুক্ত, অষ্টাদশবিধ পঞ্চশত অশ্ব এবং কাম্বোজদেশীয় অশ্বযুক্ত ও সুন্দর ভূষণবিভূষিত কনকময় রথ প্রদান করিব। যদি তাহাতেও তিনি সন্তুষ্ট না হয়েন, তাহা হইলে তাঁহাকে সুবর্ণভূষণবিভূষিত পশ্চিমদেশসম্ভূত সুশিক্ষিত ছয়শত হস্তী প্রদান করিব। যদি তাহাতেও তাঁহার সন্তোষ না জন্মে, তাহা হইলে মগধদেশসম্ভূত একশত নবযৌবনুসম্পন্ন নিষ্ককণ্ঠী দাসী ও প্রভূত ধনশালী, ভয়শূন্য, নদী ও বনের সমীপবর্তী, রাজভোগ্য চতুর্দ্দশ বৈশ্যগ্রাম প্রদান করিব। যদি ইহাতেও তিনি সন্তুষ্ট না হয়েন, তাহা হইলে তিনি আমার পুত্র, কলত্র ও বিহারসামগ্রীসমুদয়ের মধ্যে যাহা প্রার্থনা করিবেন, আমি তাঁহাকে তাহাই অৰ্পণ করিব এবং পরিশেষে কৃষ্ণ ও ধনঞ্জয়কে বিনাশ করিয়া তাহাদিগের যে সমস্ত অর্থ থাকিবে, তৎসমুদয়ই তাঁহাকে প্রদান করিব।’
“হে মহারাজ! মহাবীর কর্ণ বারংবার এইরূপ বাক্য উচ্চারণ করিয়া সাগরসম্ভূত সুস্বর শঙ্খ প্রাধ্নাপিত করিতে লাগিলেন। মহাবীর দুৰ্য্যোধন সূতপুত্রের সেই সকল বাক্য শ্রবণ করিয়া হৃষ্টচিত্তে তাঁহার অনুগামী হইলেন। তখন আপনার সৈন্যমধ্যে সিংহনাদমিশ্রিত বৃংহিতধ্বনি এবং দুন্দুভি ও মৃদঙ্গের নিঃস্বন সমুত্থিত হইল। হে মহারাজ! এইরূপে আপনার সৈন্যগণ একান্ত আহ্লাদিত হইলে, মদ্ররাজ শল্য, রণচারী, আত্মশ্লাঘানিরত, মহারথ সুতপুত্রকে সম্বোধনপূর্ব্বক হাস্য করিয়া কহিতে লাগিলেন।”