দ্রৌপদী বলেন, হেন কভু নাহি শুনি।
রাজপুত্র হারিয়াছে আপন গৃহিণী।।
যুধিষ্ঠির ধীর বুদ্ধি, কভু মত্ত নয়।
এ কর্ম্ম দ্যূতেতে, হেন মনে নাহি লয়।।
প্রতিকামী বলে, দেবী মিথ্যা কভু নয়।
গ্রহবশে খেলিলেন ধর্ম্মের তনয়।।
একে একে সর্ব্বস্ব হারিয়া নরবর।
আপনারে হারিলেন সহ সহোদর।।
পশ্চাতে তোমারে হারিলেন নৃপমণি।
এত শুনি বলিলেন দ্রুপদ-নন্দিনী।।
যাহ প্রতিকামী গিয়া জিজ্ঞাস রাজারে।
প্রথমে আপনা কিবা হারিলা আমারে।।
হারিয়া থাকেন যদি প্রথমে আপনা।
তবে গিয়া জিজ্ঞাসহ সভাসদ্ জনা।।
তবে যদি সভাতলে সবে যেতে কয়।
আপন ইচ্ছায় তবে যাইব তথায়।।
এত শুনি প্রতিকামী চলিল সত্বরে।
সভায় জিজ্ঞাসে গিয়া ধর্ম্ম-নৃপবরে।।
পাঠাইল দ্রৌপদী আমারে জিজ্ঞাসিতে।
কোন্ পণ প্রথমে করিলা রাজা দ্যূতে।।
প্রথমে আপনা কি হারিলা যাজ্ঞসেনী।
শুনি মুগ্ধ হইলেন ধর্ম্ম-নৃপমণি।।
রহিল নীরবে বসে, নাহি সবে বাণী।
মনে বুঝি কিছু না বলিল প্রতিকামী।।
প্রতিকামী প্রতি ক্রোধে বলে কুরুবরে।
যাহ প্রতিকামী কিবা জিজ্ঞাস উহারে।।
সভামধ্যে লইয়া আইস দ্রৌপদীরে।
আসিয়া করুক ন্যায় সভার ভিতরে।।
আসি জিজ্ঞাসুক সেই, যেই লয় মনে।
করুক আসিয়া ন্যায় লয়ে সভাজনে।।
এত শুনি প্রতিকামী হইল দুঃখিত।
পুনঃ দ্রৌপদীর স্থানে চলিল ত্বরিত।।
করযোড়ে প্রতিকামী বলে সবিষাদ।
অবধান মহাদেবি হইল প্রমাদ।।
অস্ত হৈল কুরুকুল, বুঝিলাম মনে।
সভাতে তোমারে লৈতে বলিলা যখনে।।
দ্রৌপদী বলিল, শুন সঞ্জয়-নন্দন।
ধর্ম্মরাজ কি বলেন, কিবা দুর্য্যোধন।।
প্রতিকামী বলে, রাজা কিছু না বলিল।
সভাতে লইতে দুর্য্যোধন আজ্ঞা দিল।।
দ্রৌপদী কহিল, তুমি বলিলা প্রমাণ।
বংশ-নাশ-হেতু বিধি করিল বিধান।।
যাহ প্রতিকামী গিয়া জিজ্ঞাস রাজায়।
নিশ্চয় কি তার মন লইতে সভায়।।
এত শুনি প্রতিকামী চলিল সত্বর।
রাজারে কহিল যত কৃষ্ণার উত্তর।।
তবে যুধিষ্ঠির রাজা ভাবিয়া অন্তরে।
দুর্য্যোধন-যত্ন দেখি কৃষ্ণা অনিবারে।।
বিচারিয়া কহিলেন, কহ দ্রৌপদীরে।
দৈবের নির্ব্বন্ধ কর্ম্ম কে খণ্ডিতে পারে।।
সত্য বিনা মম চিত্তে অন্য নাহি ভয়।
ধর্ম্ম রক্ষা করুক সে আসি এ সভায়।।
প্রতিকামী প্রতি তবে দুর্য্যোধন বলে।
ক্রোধে দুই চক্ষু যেন অগ্নি হেন জ্বলে।।
ভাল তোরে পাঠানু আনিতে দ্রৌপদীরে।
পুনঃ পুনঃ আইসহ দ্রৌপদী-বচনে।।
যাহ শীঘ্র দ্রৌপদীরে আনহ এস্থানে।
এত শুনি প্রতিকামী ভীত হৈল মনে।।
পুনরপি ইন্দ্রপ্রস্থে চলিল সত্বরে।
কতেক দূরেতে গিয়া ভাবিল অন্তরে।।
কি ক্ষণে আইনু আজি রাজার নিকটে।
সে কারণে পড়িলাম এমন সঙ্কটে।।
পাছে ক্রোধ করে কৃষ্ণা দেখিলে এবার।
পাণ্ডব করিলে ক্রোধ নাহিক নিস্তার।।
কদাচিৎ কৃষ্ণা যদি এবার না আইসে।
দুর্য্যোধন মহাক্রোধ করিবে বিশেষে।।
বিচারিয়া বাহুড়িল সঞ্জয়-নন্দন।
করযোড়ে বলে দুর্য্যোধনের সদন।।
তব আজ্ঞাবশে যাই কৃষ্ণ আনিবারে।
না আইলে কি করিব, আজ্ঞা কর মোরে।।