নিউ ইয়র্কে সারা বছর ধরেই আন্তর্জাতিক ফিলম ফেসটিভাল চলছে বললে বিশেষ অত্যুক্তি হয় না। অসংখ্য সিনেমা হল, তাতে দেখানো হয় সারা পৃথিবীর বাছাই করা চলচ্চিত্র। এ ছাড়া বিভিন্ন মিউজিয়াম ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে থাকে বিখ্যাত পরিচালকদের রেট্রোসপেকটিভ। আর প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে নিজস্ব অডিটোরিয়াম ও সারা বছরব্যাপী নির্বাচিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। সেখানে টিকিটের দাম সস্তা এবং বাইরের লোকেরও সেখানে প্রবেশের কোনও বাধা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা শুধু আমেরিকান ছবি দেখে না, তারা দেখে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রগুলি।
আমেরিকান সিনেমার এখন বেশ খারাপ অবস্থা চলছে। হলিউড একসময় রোমান্স ও হাই ড্রামার পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছিল। সেই সব বিষয়বস্তু এখন আর চলে না। বীভৎস রকমের হিংস্রতা কিংবা যৌনতার বাড়াবাড়ি দেখিয়ে কিছুদিন বাজার মাৎ করার চেষ্টা চলেছিল, এখন তাও পুরোনো হয়ে গেছে। ‘স্টার ওয়ারস’ খুব চলেছিল কল্প-বিজ্ঞানের চাকচিক্যের জন্য, কিন্তু তার পরের ছবি, ‘এম্পায়ার স্ট্রাইকস ব্যাক’ তত বেশি দর্শক টানতে পারেনি। সেই ফর্মুলায় ‘সুপার ম্যান’ বেশ চললেও, ‘সুপার ম্যান টু’ একঘেয়ে লেগেছে। অনেকদিন পর ‘রেইডারস অফ দা লস্ট আর্ক’ নামে একটা ভয়াবহ শিহরণ-জাগানো ছবি আবার বক্স-অফিস ফাটিয়েছে। এর বিষয়বস্তু খানিকটা অলৌকিক, খানিকটা কল্প-বিজ্ঞান আর অনেকটাই হিংস্রতা। যতক্ষণ ছবিটা চলে ততক্ষণ কাঁটা হয়ে বসে থাকতে হয়, আমি তো বেশ কয়েক জায়গায় চোখ বুজে ফেলেছি। মানুষের মুখ মোমের মতন গলে যাচ্ছে, এই দৃশ্য কি দেখা যায়?
হলিউডের ছবির সম্মান বর্তমানে হুহু করে নেমে যাচ্ছে। খুব বড় কোনও পরিচালক নেই, সিরিয়াস ফিলমের সংখ্যা খুবই কম। ‘রেডস’, ‘র্যাগ টাইম’ ইত্যাদি কিছু সিরিয়াস ধরনের চেষ্টা দেখেও মন ভরল না। ‘ফ্রেঞ্চ লিউটেনান্টস উয়োম্যান’ সম্প্রতিকালের একটি বিখ্যাত উপন্যাস, তার চিত্ররূপ দেখেও হতাশ হলুম। এর চিত্রনাট্য লিখেছেন বিখ্যাত নাট্যকার হ্যারলড পিন্টার। পিন্টার অতিরিক্ত কায়দা করতে গিয়ে ছবিটির রস নষ্ট করলেন। গল্পটি গত শতাব্দীর একটি প্রেমকাহিনি, পিন্টার তাঁর চিত্রনাট্যে মাঝে-মাঝে ইন্টার কাট করে এই ফিলমের নায়ক নায়িকাদের ব্যক্তি জীবনের টুকরো দেখিয়ে বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, প্রেমের সমস্যা এ যুগেও একরকম। তবে এই ছবির নায়িকা হিসেবে মেরিল স্ট্রিপ অসাধারণ। মেরিল স্ট্রিপ এই দশকের প্রধান আবিষ্কার। ভারতীয় দর্শকরাও অনেকে মেরিল স্ট্রিপকে চেনেন নিশ্চয়ই, ‘ক্রেমার ভার্সাস ক্রেমার’-এর নায়িকাকে মনে নেই?
বর্তমান কালের ছবির যখন এরকম দৈন্য দশা চলে, তখন হঠাৎ-হঠাৎ পুরোনো আমলের কিছু-কিছু ছবি আবার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পুরোনো কোনও অভিনেতা বা অভিনেত্রীকে নিয়ে হুজুগ ওঠে। যেমন, দু-এক বছর ধরে খুব শোনা যাচ্ছে, হামফ্রি বোগার্ট অসাধারণ অভিনেতা ছিলেন, তাঁর জীবৎকালে তাঁর প্রতিভার ঠিক সম্মান দেওয়া হয়নি। সমস্ত শহরগুলিতে দেখানো হচ্ছে হামফ্রি বোগার্টের পুরোনো ছবি। আফ্রিকান কুইন, কাসাব্লাঙ্কা, স্যাব্রিনা ইত্যাদি। ছেলে ছোঁকরারা বোগার্টের অনুকরণে কথা বলছে ঠোঁট চেপে। আমি হামফ্রি বোগার্টের ভক্ত, এই সুযোগে তাঁর অনেক পুরোনো ছবি দেখে নিলুম। জন ওয়েন-কেও এইভাবে এখন সম্মান দেখানো হচ্ছে। সেই তুলনায় চার্লি চ্যাপলিন আর তেমন জনপ্রিয় নেই মনে হল। চার্লির ‘লাইম লাইট’ দেখতে গিয়ে দেখি হল ফাঁকা।
ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড, চেকোশ্লোভাকিয়া, জাপান, সুইডেন, ইটালি ইত্যাদি যেসব দেশের চলচ্চিত্রের বিশেষ খ্যাতি আছে, সেসব দেশের ভালো-ভালো ছবি আমেরিকায় বসে অনায়াসেই দেখা যায়। চলচ্চিত্রের ওপর এ দেশে কোনোরকম সরকারি নিয়ন্ত্রণই নেই, এমনকী সেনসরশিপও নেই, তাই এখানকার প্রদর্শকরা পৃথিবীর যেকোনও দেশ থেকেই ভালো ছবি এনে দেখাতে পারে। এমনকী, চিন ও রাশিয়ার ফিলমও দেখার সুযোগ আছে।
একটি রাশিয়ান ফিলমের কথা এখানে বলতে চাই। আইজেনস্টাইন পুডভকিনের যুগ কেটে গেছে কবে, সম্প্রতিকালের রুশ চলচ্চিত্র সম্পর্কে আমাদের খুব একটা উচ্চ ধারণা নেই। কারণ, ভারতে বসে আমরা যেসব রাশিয়ান ফিলম দেখি, সেগুলি হয় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ঘটনা, নয় হালকা-অ্যাডভেঞ্চার ধরনের এবং কয়েকটি শেকসপিয়রের পুননির্মাণ। কিন্তু আমেরিকায় বসে আমি একটি অসাধারণ রুশ ছবি দেখলুম।
ছবিটি বছর দশেকের পুরোনো, নাম সোলারিস। আন্দ্রেই টারকোভস্কি পরিচালিত কল্প বিজ্ঞান কাহিনি। আমার মতে, এ যাবৎ আমেরিকা যতগুলো বিজ্ঞানভিত্তিক চলচ্চিত্র তুলেছে, তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হল স্ট্যানলি কুবরিক পরিচালিত ‘স্পেসঅডিসি’। আর এই ‘সোলারি’ যেন সেই ‘স্পেস অডিসি’রই যোগ্য প্রত্যুত্তর। মহাকাশ অভিযানে রাশিয়া অনেক এগিয়ে থাকলেও এই ছবিতে সেসব নিয়ে কোনও বাড়াবাড়ি করা হয়নি। চোখ ধাঁধানো কৃত্রিম রকেট-ফকেটও নেই, বরং এই ছবিতে মিশেছে বিজ্ঞানের সঙ্গে দর্শন। দূর মহাশূন্যে সোলারিস নামে অজ্ঞাত ভয়ঙ্কর সমুদ্রের কাছাকাছি এক শূন্যযানে বসে কয়েকজন মানুষ অভিভূত হয়ে যাচ্ছে তাদের মনের রহস্যময় শক্তি অনুভব করে।
ফরাসি ছবি প্রায় সবই দেখা যায় এদেশে। বোধহয় ফরাসিরা প্রত্যেক ছবিতেই ইংরেজি সাব-টাইটল বসিয়ে দেয় এ দেশের বিশাল বাজার পাওয়ার জন্য। ফরাসি ফিলম মাত্রই ভালো নয়। কিছু ছবি বেশ বাজে। তবে মাঝারি ধরনের ঝকঝকে তকতকে ছবি তুলতে ফরাসিরা বেশ দক্ষ। সেই সব ছবির বেশ চাহিদা আছে এদেশে। এর পাশাপাশি ত্রুফো, গদার, রেনে’র ছবিও বেশ চলে। ফোর ‘গার্ল নেকসট ডোর’ ছবির জন্য একমাস আগে থেকে টিকিট কাটতে হয়।
কায়দাকানুনের ব্যাপারে ফরাসি পরিচালকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টেক্কা দেন অ্যালাঁ রেনে। এর একটি ছবি দেখলুম, যার নামটিতে বেশ মজা আছে। নকল দা মেরিক অর্থাৎ ‘আমার আমেরিকান কাকা’। আমেরিকার দর্শকদের কথা ভেবেই এইরকম নাম দেওয়া কি না, সেরকম সন্দেহ জাগতে পারে। কারণ এ ছবিতে আমেরিকার ছিটেফেঁটাও নেই, আমেরিকান কাকার কোনও চরিত্রও নেই, ফরাসি নারী-পুরুষদেরই গল্প, শুধু একটি লোক বারদুয়েক বলেছে যে তার এক কাকা আমেরিকায় গিয়ে খুব উন্নতি করেছে। ফিলমটি প্রায় প্রবন্ধ ঘেঁষা, এমনকী এতে ফরাসি জীববিজ্ঞানী আঁরি লেওরি-র কয়েকটি তত্ব এবং পরীক্ষাও দেখানো হয়েছে। সাদা ইঁদুর ও খাঁচার বন্দি বাঁদরের সঙ্গে মানুষের যে কত মিল, তা ফুটে উঠেছে এক একটা সংকট মুহূর্তে। ছবিটি শেষ পর্যন্ত সার্থক হয়ে ওঠে পরিচালকের মুনশিয়ানায়। এই ধরনের ছবি দেখলে একরকমের আরাম হয়, মনে হয়, চলচ্চিত্র জগতে তবু কেউ-কেউ এখনও নতুন ধরনের চিন্তা করছে।
কিছু-কিছু ছবি দেখলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে হয়, এইসব ছবি অন্তত বিংশ শতাব্দীর মধ্যে ভারতবর্ষে দেখাবার কোনও সম্ভাবনাই নেই। কোনও-কোনও চলচ্চিত্র-উৎসবে দু-চারটে দেখানো হতে পারে। সেইসব সময় টিকিটের জন্য হুড়োহুড়ি ও হ্যাংলামির কথাও সবাই জানে। সাধারণ ভারতীয় দর্শক এইসব ছবি দেখার যোগ্য নয়, কারণ, এর মধ্যে নগ্ন নারী ও পুরুষেরা আছে, সুতরাং আর সব গুণ নষ্ট। এইরকমই একটি ফিলম হল ‘টিন ড্রাম’। যদিও আমেরিকায় অস্কার পেয়েছে, তবু চলচ্চিত্র হিসেবে খুব উচ্চাঙ্গের বলে আমার মনে হয়নি। কিন্তু এর আকর্ষণ অন্য, এটি গুনটার গ্রাস-এর নোবেল পুরস্কারজয়ী উপন্যাসের চিত্ররূপ। পরিচালক ভলকার শ্লোনড্রফ মোটামুটি বর্ণনামূলক চিত্ররূপ দিয়ে গেছেন।
টিন ড্রামের গল্প নিশ্চয়ই অনেকেই জানেন। তিন বছরের একটি পোলিশ ছেলে অস্কার বড়দের জগৎ যৌন-লাম্পট্য, হিংস্রতা ও হিটলারের নাজিবাদের উত্থান দেখে তিক্ত হয়ে আর বড় হয়ে উঠতে চায়নি। তার শরীর সেখানেই থেমে ছিল। ক্রমে তার বয়েস বাড়ল কিন্তু তার শরীরটা তিন বছরেই রয়ে গেল। তার গলায় ঝোলে একটা টিনের ড্রাম, মন খারাপ হলে সেটা সে বাজায়, মন খারাপ হলে সে এমন একটা চিৎকার করে যাতে সব কাঁচ ভেঙে যায়। তার মা ও বাবা দুজনেই ব্যভিচারী। হিটলারের দাপটে সমস্ত জার্মান জাতটাই মানসিক রোগী। অস্কার এর মধ্যে দিয়ে রেখে যাচ্ছে তার নিজস্ব বামন-প্রতিবাদ। কাহিনির অভিনবত্বই মনকে দারুণ স্পর্শ করে এবং পরিচালক এর সাহিত্যরূপটা যথাযথ রাখবার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এর যৌন দৃশ্যগুলো দেখলে গা শিউরে ওঠে। তিন বছরের ছেলের ভূমিকা তো প্রায় ওই বয়েসি কোনও শিশুকে দিয়েই করানো হয়েছে, সেই শিশু যখন একটি সতেরো বছরের মেয়ের সঙ্গে যৌন সহবাস করতে যায়, তখন আমি মনে-মনে আতঙ্কিত হয়ে ভাবি, সত্যিই কি সবটা দেখাবে? আভাসে সারবে না? কিন্তু এরা সবটাই দেখিয়ে দেয়।
আমাদের দেশের সাধারণ সিনেমা-দর্শকদের ধারণা আছে যে আমেরিকান সিনেমায় বুঝি খুব অসভ্য ব্যাপার থাকে। এটা এক সময়ে হয়তো সত্যি ছিল, কিন্তু এখন নেই, আমেরিকানরা এ ব্যাপারে বেশ পিছিয়ে পড়েছে। আমেরিকানরা ভেতরে-ভেতরে আসলে রক্ষণশীল ও গোঁড়া, খানিকটা ভণ্ডও বটে। আমরা এক সময় নিরামিষ বাংলা ছবির পাশাপাশি আমেরিকান ছবিতে চুম্বন, খানিকটা নগ্ন বুক ও উরুর ঝলক দেখে রোমাঞ্চিত হতুম, বেশিরভাগ আমেরিকান ছবি এখনও সেই স্তরেই আছে। কিন্তু জার্মান, ইটালিয়ান, ফরাসিরা এখন আর কিছুই বাদ রাখছে না। সেইসঙ্গে যোগ দিয়েছে জাপানিরা। হাঙ্গেরিয়ান ছবিতেও নগ্নতা জল-ভাত। এক হাঙ্গেরিয়ান লেখক দম্পতি সত্যজিতের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ দেখে মহাবিস্ময়ে আমাকে বলেছিল, সে কি এতগুলো ছেলে-মেয়ে এতক্ষণ একসঙ্গে রইল, কেউ কারুকে চুমু খেল না, একবারও জড়িয়ে ধরল না?
আমেরিকায় সরকারি সেন্সরশিপ উঠে গেলেও প্রযোজকদের নিজস্ব একটা স্তরবিন্যাসের ব্যবস্থা আছে। প্রযোজক সংস্থা ছবিগুলো সম্পর্কে আগে থেকে জনসাধারণকে জানিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে। অর্থাৎ কোন ছবি সপরিবারে দেখার যোগ্য, কোন ছবি নয়। বিভিন্ন স্তরের ছবির নির্দেশ দেওয়া থাকে। যেমন, কোনও ছবির পরিচয় পত্রে লেখা থাকে পি জি, অর্থাৎ পেরেন্টাল গাইডেন্স, অর্থাৎ সে ছবি বাচ্চাদের দেখা উচিত কি না তা বাবা-মা বুঝবেন। ‘আর’ মার্কা অর্থাৎ রেসট্রিকটেড। ষোলো বছরের কম ছেলেমেয়েদের এই ছবি না দেখাই কাম্য। এর পরেরটি হল ‘এক্স’, তা অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। শুধু যৌন দৃশ্যের জন্যই নয়, বিষয়বস্তুর জন্যও।
এর পরেও আছে ‘ডবল এক্স’। সেগুলো একেবারেই হার্ড কোর পর্নোগ্রাফি। আমি আগেই বলেছি, এদেশের ভদ্র-শিক্ষিত লোকরা তো বটেই, এমনকী ছাত্র-ছাত্রীরাও ওইসব ছবি দেখা পছন্দ করে না। সেই জন্যই ডবল এক্স ছবির বাজার মোটেই ভালো নয়। তবু যে ওইসব ছবি তৈরি হচ্ছে, তার কারণ ওগুলো তোলার খরচ খুব কম। পাহাড়, সমুদ্র বা ঘোড়া ছোটানোর আউটডোর শুটিং তো দরকার হয় না, কয়েকখানা শরীর পেলেই কাজ চলে যায়। ওইসব ছবির বেশিরভাগ দর্শকই নাকি বিদেশি টুরিস্টরা। বিদেশে গিয়ে অনেকেই একটু-আধটু দুষ্টুমি করতে চায়।
এক বিশ্ববিদ্যালয়ের রত্ন রঙ্গালয়ে (বিজু থিয়েটার) একই দিনে দুটি ছবি ছিল। ইটালির পাওলো পাসোলিনির ‘অ্যারেবিয়ান নাইটস’ আর গ্রিফিথ-এর বহু পুরোনো ছবি বার্থ অব আ নেশান। পাসোলিনির অ্যারেবিয়ান নাইটস এক্স মার্কা ছবি, তা ছাড়াও এর রগরগে যৌন দৃশ্যের কথা অনেক পত্র-পত্রিকায় লেখা হয়েছে। সুতরাং ধরেই নিয়েছিলুম, অ্যারেবিয়ান নাইটসের টিকিটের জন্য বিরাট লাইন পড়বে, এমনকী মারামারিও হতে পারে। টিকিট কাটতে গিয়ে আমি অবাক। গ্রিফিথ-এর ছবির জন্যই লাইন অনেক বড়। বার্থ অফ আ নেশান ১৯১৫ সালের ছবি, তা দেখার জন্য একালের যুবক-যুবতিদের এত উৎসাহ সত্যি বিস্ময়কর। একটি যুবককে আমি জিগ্যেস করলুম, তোমরা অ্যারেবিয়ান নাইটস দেখতে আগ্রহী হলে না? সে বলল, ওই ছবিটা সম্পর্কে আগেই কাগজে পড়েছি, বুঝেছি, এমন কিছু দেখবার মতন নয়।
এই রকমই অভিজ্ঞতা হয়েছিল আরেকবার। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, তার বাইরে।
পাশাপাশি দুটো সিনেমা হলের একটিতে হচ্ছে ‘বডি হিট’, অন্যটিতে ‘ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট লাইক ডে অ্যান্ড নাইট’। প্রথম ছবিটির অনেকখানি পরিচয় আছে তার নামের মধ্যে। এক ধনী ব্যবসায়ী তরুণী স্ত্রী তার শরীরের অত্যধিক উত্তাপের তাড়নায় গোপন প্রেমিককে নিয়মিত শয়ন কক্ষে নিয়ে আসে। তারপর তারা দুজনে মিলে স্বামীটিকে খুন করে ইত্যাদি। অর্থাৎ যৌনতা ও রহস্যকাহিনি মেশানো। এক্স মার্কা ছবি। আর দ্বিতীয়টি একটি জার্মান ছবি, বিশ্ব দাবা প্রতিযোগিতার এক অংশগ্রহণকারীর মানসিক ঝড় ও অতিরিক্ত আত্মগরিমার বিশ্লেষণ। এই দ্বিতীয় ছবিটি লোকে উৎসাহ নিয়ে দেখছে, আলোচনা করছে। আর প্রথম ছবিটির হলে মাত্র পঁচিশ-তিরিশজন দর্শক, টিকিটের দাম কমিয়ে দিয়েও তারা লোক টানতে পারছে না।
সেন্সর ব্যবস্থা তুলে দিয়ে এই একটা লাভ হয়েছে, নিষিদ্ধ দৃশ্য বলতে এখন আর কিছু নেই, সেইজন্যই শুধু ওই ধরনের দৃশ্য দেখবার জন্যই কেউ এখন আর সিনেমা হলে যাওয়ার আগ্রহ বোধ করে না।