৩৭ম অধ্যায়
রজোগুণের কাৰ্য্য
‘ব্রহ্মা বলিলেন, “হে মহর্ষিগণ! এক্ষণে আমি তোমাদিগের নিকট রজোগুণের বিষয় সবিস্তর কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর। সন্তাপ, রূপদর্শন, আয়াস, সুখদুঃখ, শীতগ্রীষ্মের অনুভব, ঐশ্বৰ্য্য, নিগ্রহ, সন্ধি, হেতুবাদ, রতি, ক্ষমা, বল, শৌর্য্য, মদ, দোষ, ব্যায়াম, কলহ, ঈর্ষা, ইচ্ছা, খলতা, অতিমমতা, পরিবারপোষণ, বধ, বন্ধন, ক্লেশ, ক্রয়, বিক্রয়, ভেদ, ছেদ ও বিদারণের চেষ্টা, মর্ম্মপীড়ন, নিষ্ঠুরতা, হিংসা, আক্রোশ, পরচ্ছিদ্রানুসরণ, ইহলোক ও পরলোকের চিন্তা, মাৎসর্য্য, মিথ্যাবাক্যপ্রয়োগ, লাভপ্রত্যাশায় দান, বিষয়ানুরাগ, নিদ্রা, স্তুতি, প্রশংসা, প্রতাপ, আক্রমণ, পরিচৰ্য্যা, আজ্ঞা পালন, সেবা, বিষয়তৃষ্ণা, পরাশ্রয়গ্রহণ, ব্যবহার, রচনাকৌশল, নীতি, প্রমাদ, পরিবাদ, স্বীকার [দারপরিগ্রহ—বিবাহ করা], স্ত্রী, পুরুষ, দ্রব্য ও গৃহের সংস্কার, সন্তাপ, অবিশ্বাস, ব্রত, নিয়ম, পুষ্করিণীপ্রতিষ্ঠাদি ফলজনক কাৰ্য্য, স্বাহাকার, নমস্কার, স্বধাকার, বষট্কার, যজন, যাজন, অধ্যয়ন, অধ্যাপনা, দান, প্রতিগ্রহ, প্রায়শ্চিত্ত, মাঙ্গল্যকৰ্ম্ম, বিষয়াভিলাষ, অনিষ্টাচরণ, মায়া, প্রবঞ্চনা, গৌরব, চৌর্য্য, হিংসা, পরিতাপ, রাত্রিজাগরণ, দম্ভ, দর্প, অনুরাগ, ভক্তি, প্রীতি, প্রমোদ, অক্ষক্রীড়া, অখ্যাতি, স্ত্রৈণতা [স্ত্রীতে অত্যন্ত আসক্তি] এবং নৃত্যগীতাদিতে আসক্তি এই সমুদয় গুণ রজোগুণ হইতে সমুৎপন্ন হইয়া থাকে। যেসমুদয় ব্যক্তি ধৰ্ম্ম, অর্থ ও কাম এই ত্রিবর্গে অনুরক্ত হইয়া সৰ্ব্বদা ভব্য ও বর্ত্তমান বিষয়ের চিন্তা করে এবং যাহারা নিরন্তর কামনাযুক্ত হইয়া বিবিধ বিষয়ভোগ দ্বারা ইন্দ্রিয়সমুদয় চরিতার্থ করে, তাহাদিগকেই রাজস বলিয়া নির্দ্দেশ করা যায়। উহারা বারংবার ইহলোকে জন্মগ্রহণ করিয়া ঐহিক ও পারত্রিক মঙ্গলকামনায় দান, প্রতিগ্রহ, তর্পণ ও হোম প্রভৃতি কার্য্যের অনুষ্ঠান করিয়া থাকে।
“এই আমি তোমাদিগের নিকট রজোগুণের কার্য্যসমুদয় সবিস্তর কীৰ্ত্তন করিলাম। ঐ সমুদয় বিশেষরূপে পরিজ্ঞাত হইতে পারিলে আর কখনই ওই সমুদয়ে লিপ্ত হইতে হয় না।”